নব্বইয়ের দশকের নড়বড়ে রাশিয়া তার আপাদমস্তক খোলনলচে পালটে ফেলেছে। আবির্ভূত হয়েছে বৈশ্বিক ক্ষেত্রে এক শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। স্বভাবতই তার নজর পড়েছে ঘরের আঙ্গিনা অর্থাৎ ইউরোপের উপর। আর রুশ ভল্লুকের ভয়ে কাতর হয়ে পড়েছে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো। দেদারসে কিনছে মার্কিন অস্ত্র। এই দেশগুলোর মধ্যে আছে সুইডেন, ফিনল্যান্ড, রোমানিয়া এবং পোল্যান্ড।
গত বুধবার ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় যে, সুইডিশ সরকার ১০০টি প্যাট্রিয়ট মিসাইল কিনতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। ড্রোন আর স্বল্প-মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল ধ্বংসের জন্য এগুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সম্প্রতি লিথুয়ানিয়া আর পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী কালিনিনগ্রাদ অঞ্চলে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পাল্টা জবাব হিসেবে সুইডেন এই কেনাকাটা শুরু করেছে।
সিএনএন-কে দেয়া এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, রাশিয়া বাল্টিক অঞ্চলে শক্তিশালী সব ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করায় প্রতিবেশী দেশগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তাই ওই অঞ্চলে মার্কিন অস্ত্রের বাজার বড় হচ্ছে।
শুধু সুইডেনই না, আরেক দেশ পোল্যান্ড সম্প্রতি প্যাট্রিয়ট মিসাইল কেনার জন্য ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাস নাগাদ এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত চুক্তি করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। আরেক প্রাক্তন সমাজতান্ত্রিক দেশ রোমানিয়াও এই মিসাইল সিস্টেম কেনার তোড়জোড় শুরু করেছে। উল্লেখ্য, পোল্যান্ড আর রোমানিয়া উভয়েই ন্যাটোর সদস্য।
গত শতাব্দীর ত্রিশের দশক এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় সোভিয়েত বাহিনীর হাতে চরমভাবে হেনস্থা হওয়ার স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে আরেক স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ ফিনল্যান্ডকে। মার্কিন সরকারের সাথে কোটি কোটি ডলার অর্থমূল্যের সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য কথাবার্তা শুরু করেছে দেশটি। ফিনল্যান্ডের নৌবাহিনী ইতোমধ্যেই হার্পুন আর সি স্প্যারো মিসাইল কেনার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক আটলান্টিক কাউন্সিলের একজন ডিরেক্টর, ম্যাগনাস নর্ডেনমানের ভাষ্য হলো, এই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্যের আর্থিক লেনদেন ইউরোপীয় দেশগুলোকে রুশ আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দীর্ঘস্থায়ী এক উপকারী সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ছদ্মবেশী রুশ সেনাবাহিনী এবং রুশপন্থী মিলিশিয়ারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের অনেক এলাকা দখল করে নেয়। এছাড়াও ক্রিমিয়া নামক অঞ্চলটি ইতোমধ্যে রাশিয়ার সাথে যোগ দিয়েছে। ফলে অস্তিত্ব নিয়ে মারাত্মক দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো।
ফিচার ইমেজ: The National Interest