Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

না, ট্রাম্পের কাছে কোনো বোতাম নেই, আছে ফুটবল!

এই খাদ্য সংকট ও অনাহার পিড়ীত প্রশাসনের কেউ কি তাকে জানাবেন যে, আমারও একটি পারমাণবিক বোতাম আছে, কিন্তু আমারটা তারটার চেয়ে আরও বড় এবং আরও বেশি শক্তিশালী, এবং আমার বোতামটা কাজও করে!

না, এটি কোনো চলচ্চিত্রের খল চরিত্রের সংলাপ না, কোনো সাহিত্যিকের কল্পনা মিশ্রিত বর্ণনাও না, অথবা কোনো বিদ্রুপাত্মক ওয়েবসাইটের ছড়ানো ভুয়া সংবাদও না। অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু এটি সত্যি সত্যিই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে উদ্দেশ্য করে লেখা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইট বার্তা। গত মঙ্গলবার কিম জং উনের এক বক্তব্যের বিপরীতে তিনি এই টুইট করেন।

কিম জং উনের সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাকযুদ্ধ নতুন না, এর আগেও তারা পরস্পরকে বক্তব্য এবং টুইটারের মাধ্যমে হুমকি-ধামকি দিয়েছিলেন। সর্বশেষ ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষ্যে গত সোমবার এক বক্তৃতায় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুমকি দিয়ে বলেন, সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক আক্রমণের পাল্লার মধ্যে আছে। আর সেই পারমাণবিক হামলার বোতামটি আছে কিমের টেবিলেই।

কিমের এই হুমকির পরেই পাল্টা টুইট করে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তার কাছেও পারমাণবিক বোতাম আছে এবং সেটি উত্তর কোরিয়ার বোতামের চেয়ে আরও বড় এবং শক্তিশালী। কিন্তু আসলেই কি তাই? উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া খুবই কঠিন। তাই কিমের টেবিলে আসলেই কোনো বোতাম আছে, নাকি ওটা নিছকই হুমকি, সেটা জানার কোনো উপায় নেই। কিন্তু হোয়াইট হাউজের একাধিক সাবেক কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে আসলে কোনো পারমাণবিক বোতাম নেই। বোতাম শব্দটা ট্রাম্প সম্ভবত প্রতীকিভাবেই ব্যবহার করেছেন।

নববর্ষের বক্তৃতা দেওয়ার সময় কিম জং উন; Source: AP

সত্যিকার অর্থে কোনো লাল রংয়ের বোতাম মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে না থাকলেও তার ক্ষমতা আছে কারো অনুমতি বা পরামর্শ ছাড়াই বিশ্বের যেকোনো দেশের উপর পারমাণবিক হামলা করার নির্দেশ দেওয়ার। সম্ভবত এটাকেই ট্রাম্প প্রতীকিভাবে বোতাম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর যেহেতু উত্তর কোরিয়ার তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা তৈরির ইতিহাস অনেক বেশি সমৃদ্ধ, তাদের পারমাণবিক বোমার সংখ্যা এবং শত্রুপক্ষকে ধ্বংস করার সক্ষমতাও উত্তর কোরিয়ার তুলনায় অনেক অনেক বেশি, সেকারণেই হয়তো তিনি বোতামটিকে বড় বলে উল্লেখ করেছেন। তা না হলে বোতামের আকার যত বড় বা ছোটই হোক, সেটার কোনো গুরুত্ব থাকার কথা না। তবে হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের কাছে কোনো বোতাম না থাকলেও পারমাণবিক হামলা করার জন্য তার কাছে একটি পারমাণবিক ফুটবল! কী এই ফুটবল? আর কীভাবেই বা এর মাধ্যমে পারমাণবিক হামলা করা সম্ভব?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে ‘নিউক্লিয়ার কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টম’। যেকেনো সময় তারা যদি মনে করে পরমাণু যুদ্ধ আসন্ন, অর্থাৎ তারা যদি বুঝতে পারে কোনো রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাহলে তারা সাথে সাথে তা প্রেসিডেন্টকে অবহিত করবে। সংবাদ পাওয়ামাত্রই প্রেসিডেন্ট তার সামরিক উপদেষ্টাদের সাথে জরুরী বৈঠকে বসবেন এবং তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। অবশ্য প্রেসিডেন্ট ইচ্ছে করলে কারো পরামর্শ ছাড়াই, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের উপর কোনো হুমকি না থাকা সত্ত্বেও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যেকোনো রাষ্ট্রের উপর পারমাণবিক হামলার নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।

পারমাণবিক আক্রমণের বিভিন্ন ধাপ; Source: shawglobalnews.wordpress.com

পারমাণবিক আক্রমণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর পেন্টাগনকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্টকে তার ‘নিউক্লিয়ার ফুটবল’টি ব্যবহার করতে হবে। না, এটি আসল ফুটবল না, বরং এটি একটি ব্রিফকেসের সাংকেতিক নাম। এবং স্বাভাবিকভাবেই এই ব্রিফকেসের মধ্যেও বিশেষ কোনো বোতাম নেই, যা চাপলে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হবে। ২৩ কেজি ওজনের এই ব্রিফকেসে আছে পেন্টাগনের ন্যাশনাল মিলিটারি কমান্ড সেন্টারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য একটি অত্যন্ত শক্তিশালী রেডিও এবং নিউক্লিয়ার কোড সম্বলিত কিছু নির্দেশমালা, যার মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের পক্ষে পেন্টাগণকে পারমাণবিক হামলার নির্দেশ প্রদান করা সম্ভব হবে। নিউক্লিয়ার ফুটবল নামের এই ব্রিফকেসটি সার্বক্ষণিকভাবে প্রেসিডেন্টের সাথে সাথে থাকে। প্রেসিডেন্ট যেখানেই যান না কেন, পাঁচ জন সামরিক কর্মকর্তার একটি দল ব্রিফকেসটি নিয়ে তার কাছাকাছি অবস্থান করেন।

ব্রিফকেসটি সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে থাকলেও একমাত্র প্রেসিডেন্ট ছাড়া অন্য কেউ তার মধ্যে থাকা ‘নিউক্লিয়ার কোড’ ব্যবহার করে পারমাণবিক হামলার নির্দেশ দিতে পারে না। কারণ নির্দেশ দেওয়ার জন্য প্রথমেই পেন্টাগনের সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত করতে হয় যে, যোগাযোগকারী ব্যক্তি স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এবং পারমাণবিক হামলার নির্দেশ দেওয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি।

এজন্য প্রেসিডেন্টের সাথে সব সময় একটি আইডি বা পরিচয় নির্দেশক কার্ড থাকে, যাকে সাংকেতিক ভাষায় ‘বিস্কুট’ বলা হয়। এই বিস্কুটে কিছু অনন্য কোড দেওয়া আছে, যে কোড পড়ে শোনানোমাত্রই পেন্টাগণের কর্মকর্তারা নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারবে যে, তিনিই প্রেসিডেন্ট এবং তিনি কোনো দেশের উপর বড় ধরনের কোনো হামলা করতে চাইছেন। এই বিস্কুট সার্বক্ষণিকভাবে প্রেসিডেন্টের সাথে থাকার কথা, যদিও সাবেক জয়েন্ট চীফ অফ স্টাফের চেয়ারম্যানের লেখা আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন একবার বিস্কুটটি সাময়িকভাবে হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং সেই হারানোর কথা কয়েক মাস পর্যন্ত গোপন করে রেখেছিলেন।

‘নিউক্লিয়ার ফুটবল’ নামক প্রেসিডেন্টের সার্কক্ষণিক সঙ্গী ব্রিফকেস; Source: Reuters

বিস্কুটের মাধ্যমে পেন্টাগনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার পর প্রেসিডেন্টকে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিতে হবে, ঠিক কোন দেশের কোন স্থাপনার উপর তিনি কী ধরনের আক্রমণ করতে চান। বিভিন্ন ধরনের আক্রমণের নির্দেশের নিয়মাবলি ফুটবলটির ভেতরে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা আছে। নির্দেশ নিশ্চিত করার সাথে সাথেই পেন্টাগন থেকে হামলার প্রস্তুতি শুরু হবে এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যবস্তুর উদ্দেশ্যে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড সম্বলিত ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলো নিক্ষেপ করা সম্ভব হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থান জুড়ে মোট ৮০০টির মতো নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০০টি আছে স্থলভূমিতে, যেগুলো নির্দেশ পাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই শত্রুদেশের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করা সম্ভব। আর বাকি প্রায় সম সংখ্যক মিসাইল আছে সাবমেরিন ভিত্তিক, যেগুলো নিক্ষেপ করতে প্রায় ১৫ মিনিট সময় লাগবে। একবার নিক্ষেপের পর তা আর ফিরিয়ে আনার কোনো উপায় থাকবে না।

নিউক্লিয়ার ফুটবলের ভেতরে যা যা থাকে; Source: newsofbahrain.com

নিক্ষেপ করার পর লক্ষ্যবস্তুর দূরত্বের উপর নির্ভর করে মিসাইলগুলোর আঘাত হানতে আরো ১৫ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কিন্তু প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, যদি নিক্ষেপ করা হয়, তা হলে তা ব্যর্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সাধারণ মিসাইলকে শূন্যস্থানেই ধ্বংস করে দেওয়ার প্রযুক্তি থাকলেও আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলোকে ব্যর্থ করে দেওয়ার প্রযুক্তি খুব কম দেশের কাছেই আছে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রই এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র শূন্যে ধ্বংস করার মতো সাফল্য অর্জন করতে পারেনি

দীর্ঘদিন ধরেই পারমাণবিক হামলার ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্টের একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিষয়টি নতুন করে আলোচিত হচ্ছে। এরকম বিধ্বংসী একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এককভাবে প্রেসিডেন্টের খেয়াল-খুশির উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত কিনা, সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি গত নভেম্বরে একটি শুনানির আয়োজন করেছিল। বিষয়টি নিয়ে এখনও বিতর্ক চলমান। হয়তো অচিরেই এই ক্ষমতা হ্রাস করা হতে পারে। আর সেরকম হলে হয়তো বিশ্ববাসী আকস্মিক কোনো পারমাণবিক হামলার উদ্বেগ থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।

ফিচার ইমেজ- The Plantain

Related Articles