Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পিঠে ব্যথার সাতকাহন

আজকাল প্রায় আলোচিত শারীরিক জটিলতাগুলোর মধ্যে ব্যাক পেইন বা পিঠে ব্যথা অন্যতম। কাজে অনুপস্থিতি এবং ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার অন্যতম কারণও পিঠে ব্যথা। পিঠে ব্যথা মানে পিঠের যেকোনো জায়গায় ব্যথা। সেটি হতে পারে ঘাড় ব্যথা, পিঠের মাঝখানে ব্যথা কিংবা কটিদেশে ব্যথা। কটিদেশের ব্যথার কথা সবচেয়ে বেশি শোনা যায়। যদিও পিঠে ব্যথা খুবই বেদনাদায়ক এবং অস্বস্তিকর, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি তেমন মারাত্মক কিছু নয়। তাই এ নিয়ে অল্পতেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

Source: globalnews.ca

কাদের হয়?

সাধারণত যেকোনো বয়সেই পিঠে ব্যথা হতে পারে। তবে ৩০ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের মাঝে এর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। প্রাপ্ত বয়স্কদের ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই জীবনের কখনো না কখনো এর ভুক্তভোগী। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আমেরিকার প্রায় ৯৫ শতাংশ ব্যক্তি জীবনের কোনো না কোনো সময়ে পিঠে ব্যথায় কষ্ট পেয়ে থাকেন।

ধরন

রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতির ধরণ অনুযায়ী পিঠের ব্যথাকে নানাভাবে শ্রেণিবিভাগ করা যায়। যেমন-

  • স্বল্পস্থায়ী ব্যথা- যদি ৬-১২ সপ্তাহ স্থায়ী হয়।
  • দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা- ১২ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে।

পিঠে ব্যথার কারণ

মানুষের পিঠ বেশ জটিল গঠনের। এখানে মাংসপেশি, দুই অস্থির মাঝে জোড়ার বন্ধনী, টেন্ডন, ডিস্ক, এবং হাড়ের জটিল সমন্বয় রয়েছে। এর যেকোনো একটিতে সমস্যা হলেই হতে পারে পিঠ ব্যথা। পিঠে ব্যথার সাধারণ কিছু কারণ হলো।

চাপ

এটি হতে পারে মাংসপেশিতে বা সন্ধিবন্ধনীতে। এর পেছনে রয়েছে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ। যেমন-

  • শরীরের অবস্থান উপযুক্তভাবে না রেখে কোনো বস্তু তোলা;
  • খুব ভারি কোনো বস্তু তোলা;
  • আকস্মিক বা অপ্রস্তুত অঙ্গচালনা ইত্যাদি।

গঠনগত জটিলতা

শরীরে কিছু গাঠনিক সমস্যা থাকলে পিঠে ব্যথা হতে পারে। যেমন-

  • ডিস্ক ফেটে যাওয়া– এর ফলে স্নায়ুতে প্রচণ্ড চাপ পড়ে এবং পিঠে ব্যথা হয়।
  • ডিস্ক বড় হয়ে যাওয়া– এর ফলেও স্নায়ুতে চাপ পড়ে।
  • নিতম্ব বেদনা– মাঝে মাঝে নিতম্ব বরাবর চিনচিনে ব্যথা পা পর্যন্ত পৌঁছায় যা ডিস্কের স্ফীতির কারণেই হয়ে থাকে এবং স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে পিঠে ব্যথা হয়।
  • আরথ্রাইটিস– অস্টিও আরথ্রাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় মেরুদন্ডের আশপাশের জায়গা সরু হয়ে আসে।
  • অস্বাভাবিকভাবে মেরুদন্ড বেঁকে যাওয়া
  • অস্টিওপোরেসিস

অন্যান্য জটিলতা

  • মেরুদন্ডের ক্যান্সার– মেরুদন্ডে বা এর আশেপাশে টিউমার থাকলে তা স্নায়ুতে অত্যাধিক চাপ দেয়, ফলে পিঠে ব্যথা হয়।
  • মেরুদন্ডে সংক্রমণ– রোগীর যদি জ্বর হয়ে থাকে এবং পিঠের দিকে তাপমাত্রা খুব বেশি থাকে তাহলে মেরুদন্ডে সংক্রমণ হবার সম্ভাবনা থাকে। এ থেকেও পিঠে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
  • ঘুমজনিত রোগ
  • বসার জন্য বাজে আসন নির্বাচন করলেও পিঠে ব্যথা হতে পারে

দৈনন্দিন কাজের মাঝে অনিয়ম কিংবা ক্ষতিকর অঙ্গভঙ্গি

  • বেঁকে বসা
  • কোনো বস্তু ঠেলা
  • কোনো বস্তু টানা
  • কিছু বহন করা এবং তোলা
  • দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা
  • দীর্ঘক্ষণ ঝুঁকে থাকা
  • কাশি এবং সর্দি
  • পেশিতে টান লাগা
  • বিরতিহীনভাবে দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার চালানো এবং গাড়ি চালানো

রিস্ক ফ্যাক্টর

পিঠে ব্যথা যে কারোই হতে পারে। গবেষকগণ এখনো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন এর পেছনে দায়ী ফ্যাক্টরগুলো খুঁজে বের করতে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নিচের ফ্যাক্টরগুলোকে পিঠে ব্যথার জন্য সর্বাধিক দায়ী বলা যায়-

  • বয়স– বয়স বাড়ার সাথে সাথে পিঠে ব্যথার প্রবণতা বাড়তে থাকে, মোটামুটি ৩০-৪০ বছর বয়স থেকে শুরু হয়।
  • লিঙ্গ– মহিলাদের পিঠে ব্যথায় আক্রান্ত হবার প্রবণতা বেশি।
  • কায়িক পরিশ্রমের অভাব– দুর্বল এবং কম সঞ্চালনকৃত পেশি পিঠে ব্যথা সৃষ্টি করে।
  • স্থূলতা এবং ওজন বৃদ্ধি– ওজন বেড়ে গেলে তা মেরুদণ্ডে তথা পিঠে অত্যাধিক চাপ দেয়।
  • আরথ্রাইটিস এবং ক্যান্সার
  • মানসিক চাপ– ডিপ্রেশন এবং উদ্বিগ্নতায় ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে পিঠে ব্যথা, বিশেষ করে কটিদেশে ব্যথা হবার সম্ভাবনা খুব বেশি।
  • ধূমপান– ধূমপানকারীদের ক্ষেত্রে গ্রহণকৃত পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে মেরুদন্ডের ডিস্ক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না।
  • গর্ভধারণ– গর্ভবতী মহিলাদের পিঠে ব্যথা হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

গর্ভকালীন সময়ে পিঠে ব্যথা হতে পারে; Source: backpainandsciatica.co.uk

প্রতিরোধ ব্যবস্থা

পিঠে ব্যথার কারণগুলো থেকেই এর প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, যেমন-

ব্যায়াম

পিঠে ব্যথা রোধের প্রধান উপায় ব্যায়াম। এতে করে মাংসপেশি সঞ্চালন ঘটে এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ওজন হ্রাস করে এবং দেহের অতিরিক্ত চর্বি কমায়। ব্যায়াম করলে দেহের অস্থির সংযোগস্থলের ফ্লুইড ধরে রাখতে সাহায্য করে। তবে ব্যায়াম মানেই যে কঠিন এবং কষ্টদায়ক কিছু করতে হবে তা কিন্তু নয়। খুবই সাধারণ কছু ব্যায়াম করতে পারেন। যেমন- ৫ মিনিটে ১০ বার ওঠা-বসা করা, সকালবেলা আধা ঘণ্টা হাঁটা ইত্যাদি। এমন হালকা কাজগুলো কিন্তু পেশি সুস্থ রাখতে খুবই কার্যকরী।

পিঠে ব্যথায় কিছু ব্যায়াম; Source: humanhealthgroup.com

সঠিক খাদ্যাভাস

খাদ্যাভাস ঠিক না করলে ওজন কখনোই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন না। খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখার মানে এই নয় যে আপনি খাওয়াই ছেড়ে দিচ্ছেন। প্রতিনিয়ত প্রচুর মসলাযুক্ত খাবার বা ফাস্টফুড খেলে তা স্নায়ুর উপর চাপ ফেলে এবং পিঠে ব্যথা হতে পারে। এর পরিবর্তে যদি প্রতিদিন ফলমূল এবং শাকসবজি খেয়ে থাকেন তাহলে তা পরিপাক ক্রিয়াকে যেমন স্বাভাবিক রাখে, তেমনই স্নায়ুগুলোকেও সুস্থ রাখে তথা পিঠ ব্যথার ঝুঁকি কমায়।

পাশ ফিরে শোয়া

চিত হয়ে শোবেন না, অর্থাৎ পিঠের উপর ভার দিয়ে শোবেন না। শোয়ার সঠিক নিয়ম হচ্ছে পাশ ফিরে শোয়া। যদি উপুড় হয়ে কখনো শুতে হয় তাহলে তলপেটের নিচে একটি বালিশ দিয়ে নিলে পিঠের উপর চাপ পড়বে না।

পাশ ফিয়ে শোয়া পিঠে ব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করে; Source: purple.com

সঠিক অঙ্গভঙ্গি বজায় রাখুন

কম্পিউটার বা মোবাইল চালানোর সময় কেউ খেয়ালই করে না যে অজান্তেই মেরুদন্ডের কত বড় ক্ষতি করে ফেলছেন যার ফলে পরবর্তীতে পিঠে ব্যথা হচ্ছে। কম্পিউটার চালানোর সময় সামনে ঝুঁকে কাজ না করে চেষ্টা করুন পিঠ সোজা রেখে বসুন। এক্ষেত্রে সঠিক চেয়ার নির্বাচন করুন এবং একটানা বসে কাজ না করে কাজের মাঝে মাঝে একটু অবসর নিন। আর মোবাইল চালানোর সময় ঘাড় একদম ঝুঁকে সামনে না নিয়ে হাতকে একটু উপরে তুলে মাথাটা সোজা রাখার চেষ্টা করুন। এভাবে অঙ্গভঙ্গি সম্পর্কে সজাগ থাকতে পারলে মেরুদন্ডের গঠন এবং আকৃতি সঠিক থাকে এবং মজবুতও হয়।

মানসিক চাপ কমানো

মানসিক চাপে থাকলে পেশিতে এবং স্নায়ুতে চাপ পড়ে এবং পিঠে ব্যথা হয়। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন। ইয়োগা, মেডিটেশন, শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ ব্যায়াম, শিথিলায়ন অনুশীলন ইত্যাদি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

ধূমপান বন্ধ করুন

ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো বলার অপেক্ষা রাখে না। সেগুলোর মধ্যে পিঠে ব্যথাও একটি। ধূমপানের ফলে রক্তবাহিকা সরু হয়ে যায়। ফলে রক্ত সরবরাহ তথা অক্সিজেন সরবরাহ হ্রাস পায়। প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান দেহের সর্বত্র পৌঁছায় না, ফলে পিঠে ব্যথা হয়।

পিঠে ব্যথা হলে গরম সেঁক দিন। অনেকে আবার গরম এবং ঠাণ্ডা সেঁক দিতে বলেন একইসাথে। খুব ব্যথা হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। তবুও যদি দেখা যায় ১২ সপ্তাহের বেশিদিন হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ব্যথা সারছে না, তাহলে আর দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা বাঁচাতে পারে অনেক বড় জটিলতা থেকে।

ফিচার ইমেজ- consumersreports.org

Related Articles