“যখন কোনো ঘটনা সমসাময়িকভাবে সংঘটিত হয় অন্য কোনো ঘটনার সরাসরি ফলাফল হিসেবে, আমরা সেটাকে ‘কজ অ্যান্ড ইফেক্ট’ নাম দিই। যদি কোনো কাজের প্রতিক্রিয়া হিসেবে অন্য কোনো ঘটনা সংঘটিত হয়, সেটাকে আমরা বলি ‘রিঅ্যাকশন’। আর যদি আমাদের কাছে মনে হয়, কোনোরকম সম্পর্ক নেই দুটো ঘটনার, তবু মিলে গেছে অনেকটাই, আমরা সেটিকে নিছক কাকতালমাত্র বলে উড়িয়ে দিই।”
মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই নানারকম অলৌকিক এবং উদ্ভট ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে। কখনও সে ঘটনার ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে, কখনও সেটাতে স্রেফ ‘কাকতালীয়’ আখ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আজ তেমন কিছু ঘটনা নিয়েই সাজানো আমাদের এই আয়োজন।
১. ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন!
১৮৮৩ সাল, হেনরি জিগল্যান্ড তখন তাগড়া যুবক। কিন্তু সেই বয়সেই মস্ত বড় একটা ভুল করে ফেলেছিলেন, তবে ভাবতে পারেননি সেই ঘটনা তাঁকে তাড়া করে বেড়াবে এতগুলো বছর পরও! নিজের প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করায় তাঁর প্রেমিকা অবসাদগ্রস্থ হয়ে আত্মহত্যা করে বসেন। ফলে ঐ প্রেমিকার বড় ভাই ক্ষিপ্ত হয়ে ধেয়ে আসেন হেনরিকে খুন করবেন বলে, খুঁজে খুঁজে শেষ পর্যন্ত গুলিও করেন তাঁকে। এরপর হেনরিকে মৃত ভেবে নিজের মাথায়ও বন্দুক ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান হেনরি, গুলিটা তাঁর মুখ ঘেঁষে বেরিয়ে যায়, বিদ্ধ হয় পেছনেরই একটি গাছে। নিশ্চিতভাবেই ভাবলেন, “বড্ড ভাগ্যবান আমি, খুবজোর বেঁচে গেছি!” কিন্তু বিধাতার খেয়াল হয়তো ছিলো অন্যরকম।
অনেকগুলো বছর কেটে গেছে এরপর, হেনরিও ততদিনে যৌবনকাল পিছনে ফেলে এসেছেন। একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন, বাড়ির সামনের বিশালকায় গাছটি কেটে ফেলবেন। ততদিনে ভুলেই গেছেন তিনি, গাছটিতে তখনও বিদ্ধ হয়ে আছে সেই গুলিটা। স্বাভাবিক, এতগুলো বছর পর আর কে-ই বা মনে রাখবেন এত খুঁটিনাটি!
গাছটি কেটে ফেলার ঝামেলায় যেতে চাইলেন না হেনরি, সিদ্ধান্ত নিলেন ডিনামাইট দিয়েই উড়িয়ে দেবেন সেটাকে। যেই ভাবা, সেই কাজ। গাছের নিচে ডিনামাইট স্থাপন করে তিনি চুপচাপ বসে রইলেন কাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায়। আর ঠিক তখনই ডিনামাইট ফাটলো বিকট শব্দে, আর গাছে বিদ্ধ সেই বুলেট ছিটকে এসে বিদ্ধ হলো হেনরির মাথায়। তৎক্ষণাৎ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি। এতগুলো বছর পরেও বুলেটের সেই আঘাতটাকে এড়াতে পারলেন না হেনরি জিগল্যান্ড! [1]
২. যমজবৃত্তান্ত
হুবহু যমজ দুই ভাইয়ের জন্মটাই কিছুটা বিস্ময় জাগানিয়া, কিন্তু ওহাইও’র এই দুই ভাইয়ের জীবন থেকে নাটকীয় এবং বিস্ময়কর যে নয়, সেটা বাজি ধরেই বলে দেওয়া যায়!
জেমস লুইস এবং জেমস স্প্রিঞ্জার – দুই যমজ ভাই। তবে জন্মগ্রহণ করার পর দু’জনই ছিলেন একটি এতিমখানায়, যেখান থেকে জন্মের পরই দুটি আলাদা পরিবার তাদেরকে দত্তক নিয়ে চলে যায় দুটো আলাদা দেশে। ফলে জন্মের পর একটিবারের জন্যও দেখা হয়নি দুই সহোদরের, এমনকি কেউ কারও কথা জানতোই না! অথচ গোটা জীবনটাই তারা যেন সাজিয়েছিলেন একই সূত্রে! বলা বাহুল্য, দু’জনের মধ্যে কোনোরকম যোগাযোগও ছিলো না।
দত্তক নেওয়ার পর দুই পরিবারই নতুন সন্তানের নামকরণ করে ‘জেমস’, যাকে আরও ছোট করে ডাকা হতো ‘জিম’। দু’জনই ল-এনফোর্সমেন্ট প্রশিক্ষণ নেয়, দু’জনই মেকানিক্যাল ড্রয়িং এবং কার্পেন্টার হিসেবে দক্ষ ছিলেন। এরপর তারা বিবাহযোগ্য হন, দুজনই বিয়ে করেন ‘লিন্ডা’ নামের আলাদা দু’জন নারীকে। মজার ব্যাপার, দু’জনেরই একটি করে পুত্রসন্তান হয় এবং পুত্রসন্তান দু’জনের নামই রাখা হয় জেমস অ্যালান!
তবে বিধি বাম, প্রথম বিয়ে দু’জনেরই টিকলো না, ডিভোর্স হয়ে যায় খুব দ্রুতই। পরে দু’জনই আরেকটা বিয়ে করে – এবার দু’জনের স্ত্রীর নামই বেটি! আর দুই ‘বেটি’-র একটি করে পোষা কুকুর ছিল, যার নাম ছিল টয়!
অতঃপর ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ – দীর্ঘ ৩৯ বছর পর তাঁরা পরস্পরের সাথে পরিচিত হয় এবং দুজন জানতে পারে, তাদের দুজনের জীবনধারাটা একইভাবে চলে আসছে সেই অনেকদিন ধরেই।
৩. একই সুতোয় গাঁথা
জন্ম যেমন একটি পরিবারকে একই সূত্রে গেঁথে দেয়, সৃষ্টিকর্তার আশ্চর্য এক খেয়ালে মৃত্যুও যেন একই সুতোয় গেঁথে নিয়েছিলো ইতালিয়ান এক পরিবারকে। ১৮৯৯ সালে ইতালির টারান্টোতে একজন ব্যক্তি বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করেন। ত্রিশ বছর পর… ঠিক সেই জায়গায় একইভাবে সেই ব্যক্তিরই ছেলে বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করেন।
ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু ১৯৪৯ সালের ৮ই অক্টোবর, প্রথম ব্যক্তির নাতি এবং দ্বিতীয় ব্যক্তির পুত্র ‘রোল্যা প্রিমার্দা’ ঠিক সেই একই জায়গায় একইভাবে সেই বজ্রপাতেই মারা যান!
৪. টাইটানিক-রহস্য
জেমস ক্যামেরনের চলচ্চিত্রটির সৌজন্যে ‘টাইটানিক’ নামক জাহাজটির কথা অনেকেরই জানা। সেদিন থেকে আজ অবধি জাহাজটির ডুবে যাওয়া নিয়ে জল্পনাকল্পনার বিশেষ অভাব হয়নি, আজ অবধি নানারকম ষড়যন্ত্রতত্ত্বের কথাও শুনতে পাওয়া যায় কান পাতলে। তবে টাইটানিকের সবচেয়ে অদ্ভুতুড়ে কাকতালটি সম্ভবত লুকিয়ে আছে একটি বইয়ের মধ্যেই।
১৮৯৮ সাল, মানে টাইটানিক ডুবে যাওয়ার ঠিক ১৪ বছর পূর্বে ফ্যান্টাসি-লেখক মরগান রবার্টসন একটি উপন্যাসিকা লেখেন, যাতে পুরো গল্পটিই আবর্তিত হয়েছিলো একটি জাহাজকে কেন্দ্র করে। বইটির পুরো নামটাও বেশ চমকপ্রদ, ‘Futility, Or The Wreck Of The Titan’!
‘টাইটান’ শব্দটিতেই শুধু কাকতাল, সেটা ভাবলে ভুল করবেন। ওই উপন্যাসিকায় বর্ণিত ওই জাহাজটি ছিলো ‘অনিমজ্জনীয়’, একই রকম কারিগরী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, লাইফবোট ছিলো একইরকম অপ্রতুল, এমনকি সেই জাহাজটিও ডুবেছিলো নর্থ আটলান্টিকের একটি হিমশৈলের সাথে সংঘর্ষের কারণেই!
‘একই রকম কারিগরী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন’ শব্দগুচ্ছে কৌতুহল মেটার কথা নয়। তাই সকলের জ্ঞাতার্থেই একটু ব্যাখ্যা রাখা ভালো। ‘টাইটানিক’ জাহাজের দৈর্ঘ্য ছিলো ৮৮২ ফুট, যেখানে বইয়ের ‘টাইটান’ জাহাজের দৈর্ঘ্য ছিলো ৮০০ ফুট। শুধু তাই নয়, দুর্ঘটনার রাতে টাইটানিকের ২২০০ যাত্রী এবং ক্রু’দের অর্ধেকেরও বেশি মারা যায় আটলান্টিকের বরফজমা ঠান্ডাতে ; অন্যদিকে কল্পনার ‘টাইটান’ জাহাজটিতেও ২৫০০ যাত্রী এবং ক্রু’দের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মৃত্যুবরণ করেন।
অদ্ভুতভাবে মরগানের সেই উপন্যাসিকার প্লট মেনেই যেন ১৪ বছর পর ‘অনিমজ্জনীয়’ হিসেবে তৈরি করা টাইটানিক শেষ পর্যন্ত ডুবে যায়।
৫. প্রেসিডেন্সিয়াল কো-ইনসিডেন্স!
আব্রাহাম লিংকন এবং জন এফ. কেনেডি, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম দুই সাবেক প্রেসিডেন্ট, দুজনই যুক্তরাষ্ট্রে সমধিক জনপ্রিয় আজও। তবে দুজনের মধ্যে মিল এখানেই শেষ নয়, বরং কিছু কিছু মিল রীতিমত চমকপ্রদ!
দুজনই আততায়ীর গুলিতে মারা গিয়েছিলেন, দু’জনের গুলিই লেগেছিলো মাথার ঠিক পিছনের দিকে। দু’জনই মারা গিয়েছিলেন শুক্রবারে, উৎসবের ঠিক পূর্বমুহূর্তে। লিংকন মারা গিয়েছিলেন ইস্টারের আগে, আর কেনেডি থ্যাংকসগিভিং-এর আগে। দুজনের পাশেই ছিলেন নিজের স্ত্রী এবং সঙ্গী হিসেবে ছিলেন আরও এক জুটি স্বামী-স্ত্রী। দু’জনেরই চারটি সন্তান ছিলো, দুজনকেই একজন করে সন্তান হারানোর বেদনা সইতে হয়েছিলো। দুজনের ক্ষেত্রেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে এক বোনের মৃত্যুশোক সহ্য করতে হয়েছে। দুজনেরই বিলি গ্র্যাহাম নামক একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। দুজনের ক্ষেত্রেই ভাইস-প্রেসিডেন্টের নাম ছিলো জনসন।
শুধু কি তাই? কেনেডির একজন সেক্রেটারির নাম ছিলো মিসেস লিংকন, অন্যদিকে লিংকনের দুইজন সেক্রেটারির নামও ছিলো জন!
কাকতাল কি তবে এখানেই শেষ? না, একদম নয়! লিংকনের হত্যাকারী বুথ তাঁকে গুলি করেছিলেন থিয়েটারে, এরপর পালিয়ে গিয়েছিলেন একটি ওয়্যারহাউজে। অন্যদিকে কেনেডির আততায়ী অসওয়াল্ড গুলি ছুড়েছিলেন একটি ওয়্যারহাউজ থেকে, এরপর পালিয়ে গিয়েছিলেন একটি থিয়েটারে!
৬. প্রেসিডেন্সিয়াল কো-ইনসিডেন্স রিটার্নস!
‘দ্য সিম্পসনস’ নামের বেশ জনপ্রিয় একটি অ্যানিমেশন সিরিজ রয়েছে, যেখানে ২০০০ সালে কৌতুক করে দেখানো হয়েছিলো ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে ঠিক কেমন হতে পারে ব্যাপারটা।
সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপারটা ছিলো, ‘দ্য সিম্পসনস’ নামক শো-টিতে ট্রাম্পের নির্বাচনপূর্ব প্রচারণাকে যেভাবে দেখানো হয়েছিলো, বাস্তবে সেটা রীতিমত হুবহু মিলে গেছে! কেউ কি আদৌ ভাবতে পেরেছিলো, সেই ট্রাম্পই একদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে বসবেন?
৭. ফ্যামিলি ক্রিসমাস
১৯৯৪ সাল, ক্রিসমাস চলে এসেছে দ্বারপ্রান্তে। ঠিক এমন সময়ে শহরের দুই প্রান্তে বসবাসকারী দুই সহোদর সিদ্ধান্ত নিলেন, এবারের ক্রিসমাসটা তারা কাটাবেন নিজেদের পরিবারের সঙ্গেই। যেই ভাবা, সেই কাজ। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে জম্পেশ একটি উপহার কিনে নিয়ে যাত্রা করলেন ভাইয়ের বাসার উদ্দেশ্যে, তবে ভাইকে বিন্দুমাত্র না জানিয়েই। উদ্দেশ্য, হুট করে ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়ে ভাইকে ভড়কে দেওয়া!
কিন্তু বিধি বাম, মাঝপথে মারাত্মক দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হলো দু’জনকেই। দু’জনেই দারুণ অবাক হয়ে হঠাৎ আবিষ্কার করলেন, তার ভাইও ভর্তি হয়েছেন সেই একই হাসপাতালে! ইতিমধ্যেই তাদের বাবাও সেই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন, তিনি একটি সার্জারির পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলেন। ক্রিসমাসটা তারা একদম পরিবারের সঙ্গেই কাটালেন বটে, তবে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে!
৮. রিচার্ড পার্কার!
এডগার অ্যালান পো ছিলেন প্রখ্যাত একজন সাহিত্যিক, কবি, সাহিত্য সমালোচক এবং যুক্তরাষ্ট্রের রোমান্স আন্দোলনের অন্যতম নেতা; ইংরেজি সাহিত্যের রহস্য গল্প জগতে তার তুলনা নেই। হঠাৎই একবার চারদিকে রটে যায়, তার নাকি একটি টাইম মেশিন ছিলো! কিন্তু কেন?
১৮৩৮ সালে প্রকাশিত হয় তার উপন্যাস ‘The Narrative of Arthur Gordon Pym of Nantucket’, যেখানে এক জাহাজের বিদ্রোহী ৪ নাবিকের কথা লেখা হয়েছিলো। গল্পটিতে সেই চারজন নাবিককে শাস্তিস্বরূপ সাগরে একটি নৌকায় করে ভাসিয়ে দেয়া হয়। সেই চারজন নাবিকের একজনের নাম ছিলো রিচার্ড পার্কার। গল্পটা ছিলো এমন- খাবার পানির অভাবে চারজনই যখন মরণাপন্ন, তখন রিচার্ড এক নিদারুণ প্রস্তাব করে বসেন। টস হবে; সেই টসে যে হারবে, তাকে খাবে বাকিরা। অন্যদের প্রাণরক্ষার্থে পার্কার ইচ্ছে করেই সেই টস হেরে বসলো এবং পরে তাকে হত্যা করে তার মাংস খেয়েই ক্ষুধানিবৃত্ত করলো বাকিরা। পো দাবি করেন, গল্পটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা।
বইটি প্রকাশিত হওয়ার ৪৬ বছর পর ঠিক এই ঘটনাটিই ঘটলো, সাউদাম্পটন থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পথে ডুবে গেলো একটি ইয়ট। লাইফবোটে আশ্রয় নেওয়াতে কোনোক্রমে সে যাত্রায় প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হন চারজন, কাকতালীয়ভাবে এদের মধ্যে একজনের নাম ছিলো রিচার্ড পার্কার! ১৭ বছর বয়সী এই যুবককে হত্যা করে তার মাংস খেয়ে ক্ষুধানিবৃত্ত করেছিলো তার সঙ্গীরাও!
পো যে দাবি করেছিলেন, গল্পটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে? অথচ সেই একই ঘটনা ঘটলো কিনা বইটি প্রকাশিত হওয়ার ৪৬ বছর পর! তবে কি এডগার অ্যালান পো’র কাছে সত্যিই টাইম মেশিন ছিলো? নাকি নিছক কাকতালীয় ঘটনা? পো’র কাছে টাইম মেশিন থাকুক বা না থাকুক, গল্প ও বাস্তবের দুই রিচার্ড পার্কারকে সম্মান জানাতে উপন্যাসিক রিচার্ড মার্টেল ২০০১ সালে প্রকাশিত ‘লাইফ অফ পাই’ ছবিতে অন্যতম প্রধান চরিত্র রয়েল বেঙ্গল টাইগারটির নাম রেখেছিলেন ‘রিচার্ড পার্কার’।
৯. মর্ত্য থেকে চন্দ্রযাত্রা
১৮৬৫ সালে জুল ভার্ন রচনা করেন তার অনবদ্য এক সৃষ্টি, বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস ‘ফ্রম দ্য আর্থ টু দ্য মুন’, যেখানে লেখক চন্দ্রাভিযানের খুঁটিনাটি বর্ণনা দিয়েছিলেন। সেখানেই লিখেছিলেন, ‘কলাম্বিয়াড’ নামক একটি মহাকাশযানে করে চন্দ্রযাত্রা করেছিলেন তিনজন নভোচারী। তিনজনই বহাল তবিয়তে ফিরে আসার মনোমুগ্ধকর এক বর্ণনা দিয়েছিলেন জুল ভার্ন, এমনকি এটাও বলেছিলেন যে নভোযানটি অবতরণের সময় প্রশান্ত মহাসাগরে আছড়ে পড়ে।
এর প্রায় এক শতক পর ১৯৬৯ সালে পৃথিবী থেকে অ্যাপোলো-১১ নভোযানে করে চন্দ্রাভিমুখে যাত্রা করেন তিন নভোচারী, নীল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স এবং এডউইন অলড্রিন জুনিয়র। তারাই প্রথম চন্দ্রবিজয়ী হিসেবে ফিরে আসেন পৃথিবীতে, এমনকি তাদের নভোযানটিও প্রশান্ত মহাসাগরেই আছড়ে পড়েছিল!
১০. পারমাণবিক বোমা এবং এইচ.জি. ওয়েলস
১৯১৪ সালে সায়েন্স ফিকশন জগতের অন্যতম রূপকার এইচ. জি. ওয়েলসের ‘দ্য ওয়ার্ল্ড সেট ফ্রি’ নামক একটি বিখ্যাত গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটিতে পারমাণবিক বোমার অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কুপ্রভাবে সারা বিশ্বে নিদারুণ ধ্বংসযজ্ঞের হৃদয়ছোঁয়া বর্ণনা দেন ওয়েলস। নিশ্চিতভাবেই ওয়েলসের লক্ষ্য ছিলো পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার করা হলে এর ভয়াবহ দিকগুলো সম্পর্কে জানিয়ে সকলকে সতর্ক করে দেওয়া। বলা বাহুল্য, তখনও পারমাণবিক বোমা নিয়ে সেভাবে গবেষণা শুরুই হয়নি।
কিন্তু হলো ঠিক এর উল্টোটা। ১৯৩২ সালে ওয়েলসের এই বইটি পড়ে অনুপ্রাণিত হন লিও জিলার্ড এবং ১৯৩৪ সালের মধ্যেই ‘চেইন অফ রিঅ্যাকশন’ আবিষ্কার করে প্যাটেন্ট করে ফেলেন। এরপরের কাহিনী তো সকলেরই জানা!
১১. জন্মান্তর, নাকি নিছক কাকতাল?
এনজো ফেরারির নাম সকলে না শুনলেও তার প্রতিষ্ঠিত ‘ফেরারি’ কোম্পানির নাম সকলেরই জানা। এনজো ফেরারি মৃত্যুবরণ করেন ১৯৮৮ সালে, আর ঠিক এর এক মাস পরই জন্মগ্রহণ করেন জার্মানির প্রখ্যাত ফুটবলার মেসুত ওজিল। দু’জনের ছবি দেখলে ধাঁধায় পড়ে যেতে হয়, তারা একই ব্যক্তি কিংবা যমজ ভাই কিনা!
একইভাবে মিসরীয় অভিনেত্রী জুবাইদা থারওয়াত এবং আমেরিকান অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্সের চেহারাতেও আশ্চর্য মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্র
[1] Ripley’s 100th Anniversary Series: Strange Coincidences, by Ripley Entertainment, Inc., 1990 TOR Books, New York City, New York, USA. ISBN: 0-812-51286-3. Pg. 11
[2] Reader’s Digest Magazine, January 1980, Page 158
Featured Image Credit: Obobrali.ru