মানুষের চুলের দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ পাতলা, অথচ ষ্টীলের চেয়ে ২০০ গুণ বেশী শক্তিশালী। একটি দশাসই গ্রান্ড পিয়ানোকে এই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পাতলা বস্তুটি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা যাবে অনায়াসে! পৃথিবীর প্রথম দ্বিমাত্রিক পদার্থ যা একই সাথে স্বচ্ছ ও নমনীয়। এতই অভেদ্য যে একটা ছোট্ট হিলিয়াম কণাও যেতে পারবে না একে ভেদ করে; অন্যদিকে বিদ্যুৎ পরিবাহিতায় পৃথিবীর যে কারো থেকে (এমনকি সিলিকনের থেকেও) বেশী পারদর্শী। এমনকি বিদ্যুৎ অপরিবাহী বলে এতদিন জেনে এসেছি যাকে, সেই প্লাস্টিকের সাথেও যদি মাত্র ১ শতাংশের মতো মিশিয়ে দেওয়া যায়, তো সেই প্লাস্টিকও হয়ে উঠবে বিদ্যুৎ পরিবাহী। তাপ পরিবাহিতায় (কক্ষ তাপমাত্রায়) কপারকে ছাড়িয়ে যাওয়া এই ন্যানো লেভেলের পদার্থটির নাম গ্রাফিন, যার ফলিত প্রয়োগের বাস্তবায়নে শত শত কোটি ডলার খরচ করতেও কার্পণ্য করছে না বর্তমান বিশ্ব। গ্রাফিনের কার্যকরী ব্যবহার সভ্যতার চালচিত্র বদলে দেবে। এক লাফে পৃথিবী তথা মানবজাতি চলে যাবে শত-সহস্র যোজন অগ্রে অপেক্ষমাণ প্রযুক্তি ও প্রগতির কাছে। সাধে তো আর বিজ্ঞানীরা বলেননি, আগামী পৃথিবী চলবে গ্রাফিনের নানাগুণে গুণান্বিত বহুধা বিভক্ত বৈশিষ্ট্যে।
কিন্তু গ্রাফিন কী?
গ্রাফাইট বা ডায়মন্ডের মতো গ্রাফিনও কার্বনের এক রূপভেদ (Allotrope)। ¹ গ্রাফিন নামটি এসেছে গ্রাফাইট থেকে, নামটি এনেছেন জার্মান রসায়নবিদ হান্জ পিটার বুম। তিনি Graphite শব্দের শেষ তিন অক্ষরের জায়গায় -ene প্রত্যয় যোগ করে Graphene নামকরণ করেন। ² অর্থাৎ গ্রাফাইট থেকে গ্রাফিনের উৎপত্তি। অন্যভাবে বললে, গ্রাফিনের একটা স্তরকে আরেকটার উপর বসিয়ে বসিয়ে তৈরি হয় কার্বনের ত্রিমাত্রিক রূপভেদ গ্রাফাইট। গ্রাফিন ষড়ভুজাকৃতির এক দীর্ঘ জালিকা। গ্রাফিনকে বলা হয় পৃথিবীর প্রথম দ্বিমাত্রিক পদার্থ যে কিনা মাত্র এক পরমাণু (Atom) পুরুত্ব নিয়েও সারা বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর এই দ্বিমাত্রিক বৈশিষ্ট্য গ্রাফিনকে বিদ্যুৎ পরিবাহিতার ক্ষেত্রে করেছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। সিলিকনের কথা তো উল্লেখ করেছি আগেই; কপারের থেকেও গ্রাফিন লক্ষ লক্ষ গুণ বেশি বিদ্যুৎ পরিবাহী। ³ বলা হয়ে থাকে, গ্রাফিনের এক গ্রামেরও কম ভরের এক পরমাণু পুরু একটি স্তর (Single Sheet) দিয়ে পুরো একটা ফুটবল মাঠকে ঢেকে দেওয়া যাবে। শুধু এগুলোই নয়, গ্রাফিন বেশ হালকা ধরণের পদার্থ; ১ বর্গ সেন্টিমিটার গ্রাফিন এরোজেল প্রায় ০.১৬ মিলিগ্রাম ভরের মতো। এটি এতই হালকা যে, একটা ফুলের উপরও তাকে অনায়াসে রেখে দেওয়া যাবে!
আজ থেকে প্রায় পাঁচশত বছর আগে রানী প্রথম এলিজাবেথের সময় ইংল্যান্ডের বরোডেল উপত্যকার রাখালেরা গ্রাফাইট আবিষ্কার করেছিল। এই নরম, কৃষ্ণ পদার্থটি দিয়ে না পারা যেত ঘর বানানো, না করা যেত যন্ত্রপাতি তৈরি। তাদের কাছে ধরলেই হাত কালো করে ফেলা গ্রাফাইট ছিল কেবল ভেড়া গুণে রাখার মাধ্যম। 4 কালের পরিক্রমায় এই গ্রাফাইটই হয়ে ওঠে জ্ঞানের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ; পেন্সিলের মাধ্যমে সে ঘুরে বেড়ায় হাজারো জ্ঞানের সান্নিধ্যে। প্রায় অর্ধ সহস্র বছর আগে যে গ্রাফাইটকে খুঁজে পায় কিছু ‘অশিক্ষিত’ রাখাল বালক, এই শতকের আদিভাগে সেই যুক্তরাজ্যেই আবিষ্কৃত হয় আরেক যুগান্তকারী পদার্থ- গ্রাফিন। ২০০৪ সালে ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির দুই প্রথিতযশা বিজ্ঞানী অধ্যাপক স্যার আন্দ্রে গেইম ও অধ্যাপক স্যার কন্সটান্টিন নভোসেলভ প্রথমবারের মতো গ্রাফিনকে পৃথক (Isolate) করতে সক্ষম হন। এই আবিষ্কার ২০১০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে তাঁদের নোবেল পুরষ্কার এনে দেয়।
গ্রাফিন: অবসরে গবেষণার ফসল
নভোসেলভ ও গেইম (প্রায়ই) শুক্রবার রাতে এমন কিছু বিষয়ের উপর গবেষণা করতেন যা তাঁদের দৈনন্দিন গবেষণাকার্যের বাইরে ছিল। আর এভাবেই ২০০৪ সালের এক রাতে তাঁরা আবিষ্কার (মূলত পৃথক করা) করে বসেন আগামী সভ্যতার অন্যতম মাপকাঠিকে। তাঁরা দুজনে মিলে একটা স্বচ্ছ সেলোফেন স্কচটেপ দিয়ে একখণ্ড গ্রাফাইটের টুকরা থেকে কার্বনের কিছু স্তর (Flakes) আলাদা করতে সক্ষম হলেন। তাঁরা লক্ষ্য করলেন, কিছু স্তর অন্যগুলো থেকে বেশ পাতলা। এক পর্যায়ে তাঁরা গ্রাফাইট থেকে এমন এক স্তর আলাদা করে ফেললেন যেটি মাত্র এক কার্বন পরিমাণ পুরু! ব্যস, পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আন্দ্রে ও নভোসেলভ গ্রাফিন পৃথক করতে সক্ষম হলেন। বাকিটুকু তো এক ইতিহাস। এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ দিয়ে বিজ্ঞান শুরু করে এক প্রগতির যাত্রা।
গ্রাফিনের বহুমুখী উপযোগিতা
- মেমব্রেন ফিল্টারঃ গ্রাফিন অক্সাইড মেমব্রেন দিয়ে খুবই কার্যকরভাবে এবং বিস্ময়কর মাত্রায় পানি থেকে জৈব দ্রবণ, গ্যাস মিশ্রণ থেকে পানিকে আলাদা করা যায়। এমনকি হিলিয়াম, যে গ্যাসকে আটকানো (Block) সবচেয়ে কঠিন বলে বিবেচনা করা হয়, সেও গ্রাফিনের দুর্ভেদ্যতায় পরাস্ত হয়ে যায়। পচনশীল খাবার আর ওষুধের দীর্ঘ সংরক্ষণে গ্রাফিন হতে পারে এক উৎকৃষ্ট মাধ্যম। কারণ একে ভেদ করে অক্সিজেন ও পানির মোড়কের ভেতরে প্রবেশ প্রায় দুঃসাধ্য। এমনকি শিল্প-কারখানা থেকে ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিরাপদ নিঃসরণ আজও পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। গ্রাফিন করতে পারে এই অসম্ভবকে সম্ভব।
- ক্রীড়ার বিজয়ী অনুষঙ্গঃ খেলাধুলার বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির বিখ্যাত ডাচ কোম্পানি হেড ২০১৩ সাল থেকে গ্রাফিন দিয়ে টেনিস র্যাকেট তৈরি করে আসছে। আর এই প্রযুক্তি কোর্টে আসার সাথে সাথে সাফল্যও দেখাতে শুরু করে দিয়েছে। অ্যান্ডি মারে, নোভাক জকোভিচের সাম্প্রতিককালে গ্র্যান্ড স্ল্যামসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি তুলে ধরার আগে ছিল গ্রাফিন দিয়ে তৈরি র্যাকেটের জাদু। শুধু টেনিসেই নয়, গ্রাফিনের ভেলকি স্কি থেকে শুরু করে ফর্মুলা ওয়ান পর্যন্ত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
- শক্তির আধার গ্রাফিনঃ চিন্তা করুন তো, একটা স্মার্টফোনের ব্যাটারি কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে শতভাগ রিচার্জ করে ফেলা যাচ্ছে কিংবা ধরুন একটা ইলেকট্রিক গাড়ির কথা, যেটিকে পুরোপুরি রিচার্জ করতে মাত্র কয়েকটি মিনিট ব্যয়িত হচ্ছে। এগুলো সবই সম্ভব গ্রাফিন দিয়ে। ব্যাটারি যদি খুবই হালকা ও নমনীয় (Flexible) বৈশিষ্ট্য নিয়ে বানানো যায় তাহলে তাকে খুব সহজেই আমাদের পরিধেয় কাপড়ের সাথে সেলাই করে বহন করা সম্ভব হবে। যুদ্ধক্ষেত্রে একজন সৈনিকের ইউনিফর্মে এরকম দীর্ঘস্থায়ী, হালকা ও নমনীয় ব্যাটারি বসিয়ে দিতে পারলে তার বহন করা ভারী জিনিসের তালিকা থেকে ১৬ পাউন্ড ভরের ব্যাটারিটি খুব সহজেই বাদ দেওয়া যাবে। শুধু তা-ই নয়, গ্রাফিনের কারণে উইন্ডমিল ও সোলার প্যানেলেও আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
- চিকিৎসাবিজ্ঞানে গ্রাফিনঃ আমাদের চুলের দশ লক্ষ ভাগের একভাগ ব্যাসের গ্রাফিন চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী ন্যানো পার্টিকেল। ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের মিশন বলেন আর মাথার একদম সঠিক কিন্তু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অসুস্থ স্থানে ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার কাজই বলেন- গ্রাফিন তার নানামুখী বৈশিষ্ট্যের ঝলকে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের আশার আলো যোগাচ্ছে। ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির অক্লান্ত গবেষকেরা গ্রাফিনের মতো আরো অনেক দ্বিমাত্রিক পদার্থ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন যেগুলো চিকিৎসা সেবায় অসামান্য ভূমিকা রাখবে।
- গ্রাফিন সেন্সরঃ গ্রাফিন বিজ্ঞানীদের মাইক্রোমিটার (১, ০০০ মাইক্রোমিটার = ১ মিলিমিটার) আকারের সেন্সর তৈরির দুয়ার খুলে দিয়েছে যেটা অণু-পরমাণু পর্যায়ের সামান্য পরিবর্তনকেও শনাক্ত করতে পারে। পচনশীল খাদ্যের দীর্ঘকালীন সংরক্ষণ ও তার মানের অবনমন শনাক্তকরণ, রাসায়নিক যুদ্ধের মোকাবিলা, কৃষিক্ষেত্রে যেকোনো ক্ষতিকর গ্যাসের সামান্য থেকে সামান্যতম উপস্থিতিও কৃষককে জানিয়ে দেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন রকম কাজে গ্রাফিন সেন্সর কাজে লাগতে পারে।
- ইলেকট্রনিক্স জগতেও গ্রাফিনের দাপটঃ গ্রাফিনের কল্যাণে বিজ্ঞানীরা এখন স্মার্টফোনকে ঘড়ির মতো কবজিতে নিয়ে আসা কিংবা ট্যাবলেট ডিভাইসগুলোকে কাগজের পত্রিকার মতো ভাঁজ করে রাখার চিন্তা করতে পারছেন। ইতোমধ্যে ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা গ্রাফিন দিয়ে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম ট্রানজিস্টর তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। সেমিকন্ডাক্টর দুনিয়ায় দীর্ঘদিন রাজত্ব করে আসা সিলিকনের এখন সময় হয়েছে রাজ্য ও রাজত্ব দুই-ই গ্রাফিনের ‘হাতে’ সঁপে দিয়ে বিদায় নেওয়ার।
২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল বিখ্যাত বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল নেচারে একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে। ড. রাহুল নায়ারের নেতৃত্বে একদল ব্রিটিশ গবেষক এমন এক জালিকা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন যেটা দিয়ে লবণাক্ত পানি থেকে প্রায় ৯৭% লবণ আলাদা করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁরা এই জালিকাটি তৈরি করেছেন গ্রাফিন অক্সাইড দিয়ে। 5 জাতিসংঘের মতে, ২০২৫ সালের ভিতর পৃথিবীর ১৪ শতাংশ মানুষ খাবার পানির সংকটে পড়বে। জাতিসংঘের সতর্কবাণীর সাপেক্ষে এই আবিস্কার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
গ্রাফিনের ব্যবহার নেই কোথায় এই তালিকা তৈরি করা বোধহয় অপেক্ষাকৃত সহজ কাজ। বিমানের কাঠামো, পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে মহাশূন্যে পর্যন্ত গ্রাফিনের প্রয়োগ নিয়ে পৃথিবীব্যাপী বিজ্ঞানীরা চিন্তা-ভাবনা করছেন। শুধু গ্রাফিন ও গ্রাফিনের মতো স্বজাতিদের উপর গবেষণা করার জন্যে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ন্যাশনাল গ্রাফিন ইন্সটিটিউট।
২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করা এই ইন্সটিটিউটের গবেষণার ফসল গ্রাফিন লাইট বাল্ব। এটি বর্তমান বাজারে প্রচলিত এলইডি লাইট থেকে অধিক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও টেকসই।
যদিও প্রথমদিকে গ্রাফিনের বাণিজ্যিক উৎপাদন বেশ কম হারে হয়েছিল। ব্যাপকভিত্তিক উৎপাদনে অনেক বেশী খরচ পড়তো। বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আস্তে আস্তে গ্রাফিনের প্রয়োগ বাড়ছে। 6 স্যার আন্দ্রে গেইম তাই ঠিকই বলেছেন,
“It is probably fair to say that research on ‘simple graphene’ has already passed its zenith.”
ম্যানচেস্টারকে এখন বলা হয় গ্রাফিন সিটি। ২০১৮ সালে এই শহরেই গ্রাফিন ইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন সেন্টার নামে আরেকটি গবেষণাগার অপেক্ষায় আছে উদ্বোধনের। শুধু ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারই নয়, সমগ্র বিশ্ব এখন গ্রাফিন নিয়ে মাতোয়ারা। ভবিষ্যৎ সভ্যতার ইতিহাস লিখার সময় যেসব পদার্থের নাম মানুষের মুখে মুখে থাকবে তার ভিতর গ্রাফিন থাকবে নিঃসন্দেহে। ছোট্ট এক পেন্সিলের (গ্রাফাইটের) ভিতর লুকিয়ে আছে ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রার পাঞ্জেরী- ভাবতেও তো অবাক লাগে! 7
ফিচার ইমেজ- wallup.net
ফুটনোট
- Hoffmann, R., Kabanov, A. A., Golov, A. A., & Proserpio, D. M. (2016). Homo citans and carbon allotropes: for an ethics of citation. Angewandte Chemie International Edition, 55(37), 10962-10976.
- Boehm, H. P., Setton, R., & Stumpp, E. (1994). Nomenclature and terminology of graphite intercalation compounds (IUPAC Recommendations 1994). Pure and Applied Chemistry, 66(9), 1893-1901.
- Moser, J., Barreiro, A., & Bachtold, A. (2007). Current-induced cleaning of graphene. Applied Physics Letters, 91(16), 163513.
- Palermo, V. (2013). Not a molecule, not a polymer, not a substrate… the many faces of graphene as a chemical platform. Chemical communications, 49(28), 2848-2857.
- Abraham, J., Vasu, K. S., Williams, C. D., Gopinadhan, K., Su, Y., Cherian, C. T., … & Carbone, P. (2017). Tunable sieving of ions using graphene oxide membranes. Nature Nanotechnology, 12(6), 546-550.
- Zurutuza, A., & Marinelli, C. (2014). Challenges and opportunities in graphene commercialization. Nature nanotechnology, 9(10), 730-734.
- Geim, A. K., & Novoselov, K. S. (2007). The rise of graphene. Nature materials, 6(3), 183-191.