দর্শকদের কাছে এক যুগ আগেও ক্রিকেটীয় উন্মাদনা বলতে ছিল অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ সিরিজ, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের দ্বৈরথ আর ৪ বছর পরপর অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ। এই উন্মাদনায় শামিল হওয়ার জন্য মাঠে ভিড় জমাতেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। এছাড়া অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ততোটা ব্যবসা সফলও ছিল না। ক্রিকেটীয় উন্মাদনায় নতুন মাত্রা যোগ করার জন্য ২০০১ সালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের মার্কেটিং ম্যানেজার স্টুয়ার্ট রবার্টসন বিশ ওভারের ম্যাচ আয়োজনের প্রস্তাব দেন কাউন্টি চেয়ারম্যানকে। প্রস্তাবটি ১১-৭ ভোটে বিবেচনাধীন ছিল। ২০০২ সালে বেনসন এন্ড হেজেস কাপ শেষ হওয়ার পর ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড আরেকটি লিমিটেড ওভার টুর্নামেন্ট আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেন। দর্শকদের মাঠমুখো এবং তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ১৩ জুন ২০০৩ সালে টি-টুয়েন্টি কাপ আয়োজন করা হয়।
এক বছরের মধ্যেই বিশ্ব ক্রিকেটে টি-টুয়েন্টি ম্যাচের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। ১৫ জুলাই ২০০৪ সালে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রথম টি-টুয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্টির দুই দল মিডলেসেক্স এবং সারির মধ্যে অনুষ্ঠিত টি-টুয়েন্টি ম্যাচে ২৭,৫০৯ জন দর্শক মাঠে বসে খেলা দেখেন। ঐ ম্যাচটি কাউন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দর্শক একসাথে বসে খেলা দেখার পূর্ব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ে। নিউজিল্যান্ড বনাম ইংল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলের ম্যাচের মধ্য দিয়ে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত পায় ৫ আগস্ট ২০০৪ সালে।
২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া পুরুষ দলের মধ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। অল্প কয়েক বছরের মধ্যে বেশ কয়েকটা টেস্ট খেলুড়ে দেশ তাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। ২০০৬ সালের মধ্যে টেস্ট খেলুড়ে সব দেশ আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করে। পরের বছরের শুরুতে সব দলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ওয়ানডে ক্রিকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ক্রিকেটের সবধরনের বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের বড় আকর্ষণ ভারত-পাকিস্তানের দ্বৈরথ। কিন্তু ঐ বিশ্বকাপে ভারত বাংলাদেশের কাছে হেরে এবং পাকিস্তান আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বাদ পড়ে যায়। আসরের বড় দলগুলোর মধ্যে দুই দল ভারত আর পাকিস্তান তাদের প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার কারণে ঐ আসরের জনপ্রিয়তা অনেক হ্রাস পেয়েছিল।
ওয়ানডে ফরম্যাটের বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর তড়িঘড়ি করে আইসিসি টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। আশ্চর্যজনক ভাবে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরের ফাইনালে উঠে কিছুদিন আগে ওয়ানডে ফরম্যাটের বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়া ভারত এবং পাকিস্তান। পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসর জিতে নেয় ভারত। তখন থেকেই ভারতীয়দের মধ্যে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮৩ সালের পর কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট জিততে পারেনি ভারত, তাই তাদের কাছে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের মুকুটটি ছিল সোনায় সোহাগা।
তুমুল জনপ্রিয়তা দেখে ঐ বছর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিনা অনুমতিতে ‘জি এন্টারটেইনমেন্ট এন্টারপ্রাইজের’ অর্থায়নে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগ (আইসিএল) আয়োজন করে টুর্নামেন্টের কমিটিরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল থেকেও ঐ টুর্নামেন্ট বৈধতা আনতে পারেনি। পরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পাশাপাশি ঐ আসরে অংশগ্রহণ করা ক্রিকেটারকে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে সাময়িক নিষিদ্ধও ঘোষণা করেছিল। তবে আইসিএলের জনপ্রিয়তা দেখে টনক নড়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের। ২০০৮ সালের শুরুতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিগ বাজেটের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) আয়োজন করে। ৮ দলের অংশগ্রহণে ১৮ এপ্রিল ২০০৮ সালে আইপিএলের পর্দা উঠে। কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ম্যাচ দিয়ে আইপিএলের যাত্রা শুরু হয়। লেখার মূল বিষয়বস্তু টি-টুয়েন্টি কিংবা আইপিএলের আদি ইতিহাস নয়। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম আর সেই ১৮ এপ্রিল নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের লেখা।
১৮ এপ্রিল ২০০৮ সাল। আইপিলের প্রথম আসর। জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আইপিএলের যাত্রা শুরু। প্রথম ম্যাচে মোকাবেলা করবে সৌরভ গাঙ্গুলীর কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং রাহুল দ্রাবিড়ের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। তারকা ক্রিকেটারদের সমন্বয়ে দুই দলই শক্তিশালী। ফরম্যাট চেঞ্জ করে টি-টুয়েন্টির বদলে টেস্টে পরিণত করলে ঐদিন বেঙ্গালুরুর সামনে কলকাতাকে জয়ের মুখ দেখতে হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু এটা যে টি-টুয়েন্টি ফরম্যাট। দেখেশুনে খেলার চেয়ে দ্রুত রান তোলার দিকেই মনোযোগী ব্যাটসম্যানরা। রাহুল দ্রাবিড় টসে জিতে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানালেন কলকাতাকে। ওপেনিংয়ে অনেকেই ক্রিস গেইলকে আশা করছিলেন। ২০০৭ সালের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ৫৭ বলে ১১৭ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলা ক্রিস গেইল মুখিয়ে ছিলেন আইপিএলে বাজিমাত করার জন্য। কিন্তু শেষপর্যন্ত তার খেলা হয়নি। তার অবর্তমানে সৌরভের সাথে ইনিংসের গোড়াপত্তন করেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।
প্রথম ৬ বল দেখে-শুনে খেলার পরে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম পুরো ম্যাচে আর ক্রিস গেইলের শূণ্যতা বুঝতে দেননি। জহির খানের করা পরের ওভারের প্রথম ৪ বলে নিলেন ১৮ রান। এরপর থেকে স্পিনার, পেসার সবধরনের বোলারদের উপর চড়াও হন ম্যাককালাম। পুরো ইনিংস জুড়েই পুল, স্কুপ, কাভার ড্রাইভসহ দুর্দান্ত সব শটে ভরপুর ছিল। ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ট্রেডমার্ক শট ছিল পেসারদের বিপক্ষে ডাউন দ্য উইকেটে এসে সজোরে ব্যাট চালানো। যার ফলাফল বেশিরভাগ তার পক্ষেই আসে। ঐদিনটা ছিল এমনই একদিন। অনায়াসে তার মিস হিটেও বল সীমানা ছাড়া হচ্ছিল। ৩২ বলে অর্ধশতক হাঁকানোর পর ৫৩ বলে ৮টি চার এবং ৭টি ছয়ের মারে শতক পূর্ন করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৭৩ বলে ১০টি এবং ১৩টি ছয়ের মারে ১৫৮* রানে অপরাজিত ছিলেন। তার ১৫৮* রানের ইনিংসটি তৎকালীন টি-টুয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ছিল। ৫ বছর পর ২০১৩ সালে ক্রিস গেইলের ১৭৫* রানের ইনিংসের আগ পর্যন্ত টি-টুয়েন্টিতে এটি ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল। ঐদিন একাই বেঙ্গালুরুর বোলারদের উপর তাণ্ডব চালান ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। তার ১৫৮* রান বাদে কলকাতার হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ছিল রিকি পন্টিংয়ের, ২০ বলে ২০ রানের ইনিংসটি।
কলকাতার দেওয়া ২২৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বেঙ্গালুরুর ইনিংস উদ্বোধন করেন ‘দ্য ওয়াল’ রাহুল দ্রাবিড় এবং টেস্ট স্পেশালিষ্ট ওয়াসিম জাফর। কলকাতার বোলারদের সামনে ঐদিন বেঙ্গালুরুর কোনো ব্যাটসম্যান দাঁড়াতে পারেননি। মাত্র ৮২ রানে অল আউট হয়ে আইপিএলের প্রথম ম্যাচে কলকাতার কাছে ১৪০ রানে পরাজিত হয় বেঙ্গালুরু।
ঠিক ৩ বছর পর। ১৮ এপ্রিল ২০১১ সাল। আইপিএলের চতুর্থ আসর। ঐ আসরে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম কোচি টাস্কার্স কেরালার হয়ে খেলেন। চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে কোচি টাস্কার্স কেরালার সামনে ১৩৬ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায়। জবাবে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ৩৩ বলে ৪টি চার এবং ৩টি ছয়ে সাজানো ৪৭ রানের ইনিংসের সুবাদে নির্ধারিত ১৭ ওভার থেকে ২ ওভার বাকি থাকতেই জয় তুলে নেয় কোচি। ম্যাককালাম তার ৪৭ রানের অনবদ্য ইনিংসের সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নেন।
এরও ঠিক ৩ বছর পর। ১৮ এপ্রিল ২০১৪ সাল। আইপিএলের সপ্তম আসর। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ২০১১ সালে কোচি টাস্কার্স কেরালা ছেড়ে পরের আসরে পুনরায় কলকাতা নাইট রাইডার্সে যোগ দেন। ২০১৪ সালে আইপিএলের সপ্তম আসরে তিনি খেলেন চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। আবুধাবিতে আসরের তৃতীয় ম্যাচে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে মুখোমুখি হয় চেন্নাই সুপার কিংস। চেন্নাইয়ের দুই ওপেনার ডুয়াইন স্মিথ এবং ব্রেন্ডন ম্যাককালাম উড়ন্ত সূচনা করেন। ১২.৪ ওভারে ১২৩ রান যোগ করেন চেন্নাইয়ের দুই ওপেনার। ম্যাককালাম ৪৫ বলে ৪টি এবং ৫টি ছয়ের মারে ৬৭ রান করেন। অপর ওপেনার ডুয়াইন স্মিথ করেন ৬৬ রান। দুই ওপেনারের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে চেন্নাইয়ের স্কোরবোর্ডে ৪ উইকেটে যোগ হয় ২০৫ রান। জবাবে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ৯৫ রানের সুবাদে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ৭ বল বাকি থাকতেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।
ঠিক ৩ বছর পর আবারও। ১৮ এপ্রিল ২০১৭ সাল। আইপিএলের দশম আসর। চেন্নাই সুপার কিংস নিষিদ্ধ হওয়ার পর ব্রেন্ডন ম্যাককালাম নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি গুজরাট লায়ন্সের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। ২০০৮ সালে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যখন আইপিএলের প্রথম আসর খেলেন তখন তার দলে থাকা সৌরভ, পন্টিংরা খেলা ছেড়েছেন অনেকদিন আগেই। তার প্রতিপক্ষ দল বেঙ্গালুরুর হয়ে খেলা দ্রাবিড় এবং ক্যালিস এখন আইপিএলের কোচ। সদ্য অনুর্ধ্ব-১৯ খেলা বিরাট কোহলি বর্তমান সেরা ব্যাটসম্যান। চারপাশের এতো পরিবর্তনের পরেও ম্যাককালামের বয়স ছাড়া আর কিছুই বদলায়নি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও এখনো ডাউন দ্য উইকেটে এসে সজোরে ব্যাট হাঁকাতে ভুলেননি। আইপিএলের দশম আসরেও তার ব্যাট হেসেছে আগে মতোই। ১৮ এপ্রিল ২০০৮ সালে যেমনটা ছিলেন ৯ বছর পর তেমনটাই আছেন। দৃশ্যপট একই, প্রতিপক্ষ হিসাবে পেয়েছেন বেঙ্গালুরুকেই। ঐদিনের ছোট্ট বিরাট কোহলি এখন বেশ পরিণত। ওপেনিং পার্টনার ক্রিস গেইল বেঙ্গালুরুর তুরুপের ত্রাস। গুজরাট লায়ন্সের অধিনায়ক সুরেশ রায়না টসে জিতে বেঙ্গালুরুকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান। দীর্ঘদিন অফ ফর্মে থাকা ক্রিস গেইল ৩৮ বলে ৫টি চার এবং ৭টি ছয়ের মারে ৭৭ রান করেন। অধিনায়ক বিরাট কোহলির ৬৪ রান ও হেড এবং কেদার যাদবের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২ উইকেটে ২১৩ রান করে বেঙ্গালুরু।
ক্রিস গেইল তার ৭৭ রানের ইনিংস খেলার পথে টি-টুয়েন্টিতে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে ১০,০০০ রান পূর্ণ করেন। টি-টুয়েন্টির জায়ান্ট ক্রিস গেইল ২৯০ ম্যাচে ৪০.৬২ ব্যাটিং গড়ে ১০,০৭৪ রান করেন। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় দ্বিতীয়তে থাকা ব্রেন্ডন ম্যাককালামের রান সংখ্যা ৭,৫৯৬। শতক হাঁকানোর দিক দিয়েও গেইল অনেকটা এগিয়ে আছেন। ক্রিস গেইল টি-টুয়েন্টিতে ১৮টি শতক হাঁকিয়েছেন, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ৭টি শতক হাঁকিয়ে তালিকায় দ্বিতীয়তে আছেন। গেইল এবং কোহলির ব্যাটে চড়ে ২১৩ রান যোগ করে বেঙ্গালুরু। বেঙ্গালুরুর দেয়া বড় টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে নিজের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ইনিংস শুরু করেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। সতীর্থদের সমর্থন পেলে দলকে জয়ও এনে দিতে পারতেন। চাহালের বলে আউট হওয়ার আগে ৪৪ বলে ২টি চার এবং ৭টি ছয়ের মারে করেন ৭২ রান। শেষ পর্যন্ত গুজরাট ২১ রানে পরাজিত হয়। ১৮ এপ্রিলে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ম্যাচ মানেই তার ব্যাটে ঝড়, সেটা যেনো অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। এই তারিখে অনুষ্ঠিত আইপিএলের ৫ ম্যাচের মধ্যে প্রতিটিতেই ব্যাটে ঝড় তুলেছেন ম্যাককালাম।
এই নয় বছরে বদলেছে অনেক কিছুই। ভারত ওয়ানডে ফরম্যাটের বিশ্বকাপ জিতেছে। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটই বর্তমানে দর্শকদের প্রথম পছন্দ। ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলছে না বহু বছর ধরে। অ্যাশেজের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করছে আইপিএল। আর এখানে এক চিরসবুজ ব্যাটসম্যান হয়ে খেলে যাচ্ছেন ম্যাককালাম।
ব্রেন্ডন ম্যাককালামের বর্তমান বয়স ৩৫ বছর, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর আর কয় বছর ঘরোয়া টি-টুয়েন্টি খেলা চালিয়ে যাবেন সেটা সময়ই বলে দেবে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তার ব্যাটিং স্টাইল বদলায়নি একটুও, সময়ের সাথে সাথে হয়েছে আরো পরিণত। ১৮ এপ্রিল আর তার ব্যাটের তুলকালাম ক্রিকেট ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় কাকতাল হয়েই রয়ে যাবে চিরদিন।