Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রিয়ালের জিদান, জিদানের রিয়াল

জিদানকে যখন ২০০১ সালে জুভেন্টাস থেকে ৭৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে রিয়ালে আনা হয়েছিল, তখনকার সময়ে প্লেয়ারদের এই দাম অস্বাভাবিক ছিল। ৭৫ মিলিয়ন দিয়ে একটা ক্লাসিক টিম বানানো যেত অনায়াসে। স্বভাবতই সমালোচনা ছিল এই দাম দিয়ে। ২০১৮-তে দাঁড়িয়ে কোনো রিয়াল ফ্যান কি বলতে পারবেন এর একটি টাকাও ক্ষতি হয়েছে? কেন তা নিয়েই আসা যাক।

২০০১ সালে যখন জিদানকে সাইন করানো হয়

যদি রিয়ালে খেলোয়াড়ি জীবনের কথায় আসা হয়, তবে বাজিমাত প্রথম সিজনেই। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ সেমিফাইনালে বার্সার মাঠ ক্যাম্প ন্যুতে গিয়ে তারই দারুণ এক গোলে ২-০ তে হারিয়ে ফাইনালে আসে মাদ্রিদ। ফাইনালে বেয়ার লেভারকুসেনের সাথে খেলা ১-১ এ থাকা অবস্থায় দারুণ এক ভলিতে রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতান। এই গোলটিকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা গোল ভাবা হয়।

ফাইনালে সেই বিখ্যাত গোলের ভলি

এরপরের সিজনে রিয়ালকে জেতান লীগ ট্রফি। যদি গোল বা এসিস্টের পরিসংখ্যান দেয়া হয়, তবে চোখ মাথায় তোলা কিছু না, তবে কী সেই এক্স ফ্যাক্টর? জিদান যেদিন রিয়ালের স্টেডিয়াম বার্নাব্যুতে তাঁর শেষ ম্যাচ খেলেন, ৮০,০০০ দর্শকের স্লোগান ছিল- “থ্যাংক ইউ ফর দ্যা ম্যাজিক।” আসলে মূল খেলা পরিচালনাই হত তাঁর পায়ে। জমাট ডিফেন্স ভাঙ্গা থ্রু বলা বা সিল্কি স্কিল কোনোটারই কোনো পরিসংখ্যানগত কাগুজে মূল্য নেই, চর্মচোখে না দেখলে বোঝা যেত না।

রিয়ালে জিদানের আসল অবদানের কাহিনী তো তাঁর রিয়ালে খেলা ছাড়ার পরে শুরু! সেটা কিভাবে? ক্লাবে খেলা ছেড়েছিলেন, কিন্তু ছাড়েননি ক্লাবের সাথে সম্পর্ক। কোনো অফিশিয়াল পদে না থেকেও সম্ভাব্য সকল উপায়ে রিয়ালকে সাহায্য করে যাচ্ছিলেন। কেমন?

এই ধরা যাক, ইস্কো বা ভারানের ট্রান্সফারের কাহিনী। ইস্কো তখন মালাগায় আলো ছড়াচ্ছে আর ভারানে লেন্সে উঠতি তরুণ প্রতিভা। রিয়াল ভারানেকে চায়, তবে সাথে স্যার ফারগুসনও ম্যানইউতে তাকে চান। পেরেজের কথায় পার্সোনাল ওয়েতে ভারানেকে সাইন করান জিদান যে এখন রিয়ালের মূল দলের সেন্টার ব্যাক। ইস্কোকে কেনার ব্যাপারে বাঁধা ছিল ম্যানসিটি, এখানেও ডিলটা সারেন জিদানই। ২০১১ তে জোসে মরিনহোর কথায় বিশেষ উপদেষ্টা নামক এক পদ নিয়ে জিদানকে রিয়ালে আনা হয় যার আসল কাজ ছিল খেলোয়াড়দের কাছাকাছি থাকা, তাদের ইন্সপায়ার করা। বিশ্বের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ৫ জনের একজন ড্রেসিংরুমে থাকলে যা হয় আর কি! ২০১৩-তে তাকে স্পোর্টিং ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও আঞ্চেলত্তি কোচ হিসেবে এসেই তাকে সহকারী হিসেবে চান। এবার সহকারী কোচ হিসেবে ডাগআউটে আসেন জিদান।

মরিনহো পরবর্তী রিয়ালে শান্তি ফিরিয়ে আনা আঞ্চেলত্তির নাম উঠলেও নেহায়েত এতে জিদানের ভূমিকাও বড় ছিল। আঞ্চেলত্তি প্রেসে প্রায়ই একটা কথা বলতেন, “জিদান’স প্রেজেন্স ইজ এনাফ ফর এ টিম।” ২০০২ এর ফাইনালে জিদানের সেই গোলে জয়ের পর রিয়াল পুরো এক দশক আর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতেনি। ডাগআউটে ফিরলেন আর প্রথম সিজনেই রিয়াল জিতলো আকাঙ্ক্ষিত দশম চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ট্রফি। তাঁর পরের বছর আঞ্চেলত্তি স্যাকড হলে জিদান রিয়ালের যুব দলে ফিরে যান মেইন কোচ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য। আর রিয়াল সিনিয়র টিমের কোচ হন রাফা বেনিতেজ।

জিদান ও আঞ্চেলত্তি

এবার আসল পর্ব একটু ঘুরিয়ে শুরু করা যাক। যদি বলা হয় বিশ্বের সর্বকালের সেরা একজন স্প্যানিশ কোচ যিনি সম্ভাব্য সকল প্রকার ট্রফি ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন তিনি কে? বা যদি বলা হয় রিয়ালের সর্বকালের সেরা একজন মাদ্রিদিস্তা কোচ এর নাম? দুই প্রশ্নেই মোস্ট কমন উত্তর স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ ও রিয়ালের হয়ে দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতা কোচ দেল বস্ক। খেলোয়াড়ি জীবনেও পুরো মাদ্রিদিস্তা, কোচিং করাচ্ছিলেন রিয়ালেরই বি টিমে। ১৯৯৯ সালের দিকে টালমাটাল এক রিয়াল দলের ভার চলে আসে মাঝ সিজনে তাঁর উপর। দায়িত্ব নেয়ার প্রথম সিজনেই দলকে জেতান চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। চার বছরে দুটি লীগ আর দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ দিয়ে যান দেল বস্ক। তো জিদানের চিত্রনাট্যে দেল বস্ক কেন?

রাফা বেনিতেজের রিয়াল ধুঁকছিলো, বার্সার কাছে হোমে ৪-০ তে হেরে তাঁর জনপ্রিয়তা তলানিতে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ গ্রুপ পেরোলেও লীগে ১০ পয়েন্ট পিছিয়ে আর লাল কার্ড পাওয়া ব্যানড প্লেয়ার ভুলে খেলানোয় কাপ থেকে প্রথমেই ডিসকোয়ালিফাইড। জনপ্রিয়তা শুন্যের কোটায় ও ক্লাবের খেলা খেই হারিয়ে ফেলায় বরখাস্ত হন তিনি। অন্তর্বর্তী কোচ হিসেবে আসেন যুব দলের কোচ জিদান। এবার সেই ৭৫ মিলিয়নের প্রতিটি টাকার হিসেবের উপাখ্যান!

রাফা বেনিতেজ লিজেন্ডারি ট্যাকটিশিয়ান, কিন্তু রিয়ালে দরকার ছিল এমন একজনের যিনি নিজে শান্ত আর শান্তিও ফেরাতে পারেন। সন্দেহ ছিল জিদানের উপর, খেলোয়াড়ি জীবনে গুঁতো দেয়ার কাহিনী করেছেন তিনবার, মাথা গরম প্লেয়ার ট্যাগ ছিলই। কোচ হিসেবে পুরো আঞ্চেলত্তির কপি হয়ে এলেন। একদম শান্ত, প্রেসে মরিনহোর মতো টি-টোয়েন্টি খেলার অভ্যেস নেই, একদম দ্রাবিড়ের মোত শান্ত খেলার ধরণ। যা-ই প্রশ্ন আসুক, উত্তর প্রেডিক্টেড, কোনো মসলা নাই। আর স্কোয়াড কন্ট্রোল? পুরো ড্রেসিংরুমে এমন কোনো প্লেয়ার নেই যার খেলোয়াড়ি অর্জন জিদানের চেয়ে বেশী! তিনিই নেতা, অনেকটা বিগ ব্রাদার টাইপ।

১৩ পয়েন্ট ফারাক চলে লীগে, রিয়াল পিছিয়ে। সবাই পরবর্তী কোচ ঠিক করা নিয়ে ব্যাস্ত। দুই মাস পরে গ্যাপটা চলে আসে ১ এ! ততদিনে রিয়াল চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টার ফাইনালে। বার্সাকে হারিয়ে এসেছেন ক্যাম্প ন্যু-তে। দলে হারমোনি ফিরে এসেছে ততদিনে। দলও ফুল ফ্লোতে। লীগে বাকি পাঁচ ম্যাচ আর বার্সা হারেনি। তাই ১ পয়েন্টে লীগ হেরে যায় জিদানের দল। তবে ততদিনে রিয়াল চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে। বার্সা, বায়ার্নকে হারিয়ে আসা নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এতলেটিকোর সাথে ফাইনালে টাইব্রেকে হারিয়ে কোচ হিসেবে দলকে জেতান ১১তম ট্রফি। ১টা প্লেয়ার হিসেবে, ১টা এসিস্ট্যান্ট আর ১টা কোচ হিসেবে। এমন একটা সিজনে রিয়াল চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতে যে সিজনে নভেম্বরেও কথা হতো নতুন সিজনে কোচ কে হবেন বা তাড়াতাড়ি এই অভিশপ্ত সিজন শেষ হোক। শুরু করেছিলেন ক্যাস্তিয়া যুবদলে কোচিং শেখার জন্য আর সিজন শেষ করলেন কোচদের পরম আরাধ্য চ্যাম্পিয়ন্স লীগ দিয়ে।

২০১৬ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ট্রফি হাতে জিদান

কন্ট্রাক্ট পেয়ে গেলেন, এবার আর অন্তর্বর্তী না, মূল কোচ হয়েই এই সিজনটা শুরু করলেন। সিজন শুরু করেন সেভিয়াকে সুপার কাপের ফাইনাল হারিয়ে। লক্ষ্য ততদিনে সেট করা হয়ে গেছে, চার বছর লীগ ট্রফি বঞ্চিত রিয়াল সমর্থকরা ও বোর্ড চায় লীগ ট্রফি। আবার তাকে প্রমাণ করতেও হবে যে তিনি এক সিজনের চমক নন, থাকতেই এসেছেন। অনেক চড়াই পেরিয়ে ২২ মে রিয়াল লীগ জিতে নেয়।

জিদানকে নিয়ে প্লেয়ারদের সেলিব্রেশন

খেলার স্টাইল বা সিলেকশন বিতর্ক যা-ই থাক, প্রেস ব্রিফিং এ তাঁর কোনো আঁচই থাকতো না। নিরেট পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রেডিক্টেড ওয়ার্ডের ব্রিফগুলোর মতো। আধুনিক চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ইতিহাসে তিনিই প্রথম কোচ হিসেবে টানা তিনবার শিরোপা জয় করেছেন। এখনবধি তাঁর চলা পুরোটাই দেল বস্কের আদলেই, বরং আরো দৃঢ়। পুরোদস্তুর একজন মাদ্রিদিস্তা মাদ্রিদকে তলানি থেকে যেভাবে সেরার আসনে আসীন করালেন, সেটা গত দশকের অস্থির, টালমাটাল মাদ্রিদকে দেখে অভ্যস্ত হওয়া ফ্যানদের কাছে মহার্ঘ্য বৈ আর কিছু না। সবচেয়ে বড় কথা, জিদান রিয়ালকে বড় যেটা দিয়েছে তা হল- স্ট্যাবিলিটি, যেটা গত দশকে রিয়ালের ছিলই না।

তবে সেদিনের সেই ৭৫ মিলিয়ন কি আসলেই বেশী কিছু ছিল?

তথ্যসূত্র

১। en.wikipedia.org/wiki/Zinedine_Zidane

২। goal.com/en/people/france/1229/zinedine-zidane

৩। bbc.com/sport/football/40010063

৪। fifa.com/fifa-tournaments/players-coaches/people=163331/index.

৫। realmadrid.com/en/about-real-madrid/history/football-legends/zinedine-zidane

৬। kickoff.com/news/75503/zinedine-zidane-revels-in-real-madrids-la-liga-triumph

Related Articles