Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বাংলাদেশের বিখ্যাত কিছু পিঠার গল্প

পিঠা খেতে কে না ভালবাসে? বাঙালি ঐতিহ্যের এক বড় অংশ জুড়ে আছে এ পিঠা। বিশেষ করে বাংলাদেশের গ্রামের দিকে এ ঐতিহ্য এখনও অনেকাংশেই টিকে আছে। শীতকালে বাংলাদেশে পিঠা-পুলি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবার প্রিয় খাবার এ পিঠা। পিঠার আবার বিভিন্ন রকম স্বাদ থাকে। কোন পিঠা মিষ্টি, কোনটিবা ঝাল আবার কোন কোন পিঠা টকও হয়ে থাকে। আজ আমরা বাংলাদেশের বিখ্যাত কিছু পিঠার গল্প শুনব।

শরীয়তপুরের বিবিখানা পিঠা

Source: shajgoj.com

Image Courtesy: shajgoj.com

শরীয়তপুরের এক বিখ্যাত খাবারের নাম বিবিখানা পিঠা। এ পিঠা মূলত তালের জ্বাল দেয়া ঘন রস দিয়ে তৈরি হয়। চালের গুড়া, ময়দা, গুঁড়াদুধ, ঘন তরল দুধ, চিনি, তেল, ডিম, এলাচগুঁড়া এর প্রধান উপাদান। চালের গুঁড়া, ময়দা, গুঁড়াদুধ, এলাচগুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে তাতে ডিম ফাটিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এ মিশ্রণে আবার দুধ, চিনি, তেল দিয়ে সেগুলো মিশিয়ে নিতে হয়। এ মিশ্রণে চিনির রস গলে গেলে তাতে তালের রস মেশানো হয়। এ পিঠা অত্যন্ত সুস্বাদু।

নোয়াখালির বিখ্যাত খোলাজা পিঠা

Source: forum.projanmo.com

Image Courtesy: forum.projanmo.com

ফেনী ও নোয়াখালি অঞ্চলে এই পিঠা সবচেয়ে বেশি পরিচিত। শীতকাল আসলে এই পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। বেশিরভাগ মানুষের মতে মাটির খোলায় এ পিঠা বানানো হয় বলে এর নাম খোলাজা পিঠা। এই পিঠা অনেক সুস্বাদু। ঢেঁকি ছাটা চালের গুঁড়া, ডিম, লবণ, পানি এই পিঠার প্রধান উপকরণ। প্রথমেই চালের গুঁড়া, পানি ও লবণ পরিমাণ মত মিশিয়ে পাতলা করে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। মিশ্রণটি পাতলা করে তৈরি করতে হবে যাতে তরলের মত গড়িয়ে যায়। এরপর এ মিশ্রণে ডিম ফেটে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার মাটির খোলাটি চুলায় গরম করে নিতে হবে। খোলার উপড়িভাগে হালকা তেল মাখিয়ে নিতে হবে। এবার মিশ্রণটি খোলায় ঢেলে চারদিকে হালকা পুরু করে ছড়িয়ে দিয়ে একটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। কিছুক্ষণ পর হালকা শক্ত হয়ে গেলে পিঠাটি খুন্তি দিয়ে উঠিয়ে ফেলতে হয়। পিঠাটি দেখতে রুটির মত। এর উপড়িভাগে অনেক ছোট ছোট ছিদ্র থাকে।

নোয়াখালির ম্যাড়া পিঠা

এ পিঠার উপকরণ চালের গুঁড়া, লবণ ও পানি। প্রথমেই চালের গুঁড়া সামান্য ভেজে নিতে হবে। এবার ভাজা চালের গুড়ার মধ্যে গরম পানি ও লবণ দিয়ে মিশিয়ে কাই তৈরি করতে হবে। এর আকৃতি হয় গোল গোল বা, লম্বা লম্বা।

ভৈরবের নকশী পিঠা

Source:

Image Courtesy: facebook.com/rakamariRannaSikhun/

নকশী পিঠা কয়েক ধরণের হলেও ভৈরবের নকশী পিঠা বেশ বিখ্যাত। নবাব শায়েস্তা খাঁর আমলেও এ পিঠা প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়। এ পিঠায় ভাজার আগেই নকশা করে ফেলা হয়। সাধারণত চালের গুঁড়া, মুগ ডাল, লবণ, তেল, ডিম, এলাচ, দারুচিনি এ পিঠার প্রধান উপাদান। টুথ পিক, সূচ বা, ছুরি দিয়ে এই পিঠার নকশা করা হয়। কখনোবা বাজার থেকে নকশা কিনে এনে ছাঁচে ফেলেও পিঠার নকশা করা হয়। এ পিঠাগুলো বিচিত্র নকশার হয়ে থাকে। এ পিঠায় অনেক সময় ঘিও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ পিঠা দুধে ভিজিয়ে রাখলেও বেশ মজাদার হয়।

যশোরের খেজুর রসের ভেজা পিঠা

Source: dailyajkal.com

Image Courtesy: dailyajkal.com

এ পিঠাটি শীতকালের একটি জনপ্রিয় পিঠা। শীতকালে খুব ভোরে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এর মাঝে দুধ, চিনি বা, গুড়ের সঙ্গে চিতই পিঠা ভিজিয়ে রেখে এ পিঠা তৈরি করা হয়। তবে এ পিঠা এখন শুধু যশোরেই নয়, সারা দেশেই বিখ্যাত।

ভাপা পিঠা

এটি একটি মুখরোচক পিঠা। শীতকালে এ পিঠাতো গ্রামের ঘরে ঘরে তৈরি হয়। আর শহরে বিক্রি হয় রাস্তার মোড়ে-মোড়ে। এর প্রধান উপাদান চালের গুঁড়া। মিষ্টি করার জন্য এতে দেয়া হয় গুড়। নারকেলের শাঁস ব্যবহার করে এর স্বাদ বাড়ানো হয়।

Source: mirrorbangla.com

Image Courtesy: mirrorbangla.com

চালের গুড়ায় সামান্য লবণ ও পানি মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। তারপর মাখানো চালের গুঁড়াকে চালুনি দিয়ে চেলে নেয়া হয়। এরপর নারিকেলের চাঁছা এবং গুড় মিশিয়ে জ্বাল দিতে হয়। এটি তৈরি করা অত্যন্ত কৌশলের ব্যাপার। জলীয় বাষ্পের আঁচের সাহায্যে এ পিঠা তৈরি করা হয়। তাই এর স্বাদে আসে অনন্যতা।

চিতই পিঠা

Source: ajkerrannaghor.com

Image Courtesy: ajkerrannaghor.com

চিতই পিঠার উৎপত্তিস্থল হিসেবে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ উভয় স্থানেরই নাম শোনা যায়। এ পিঠা আকৃতিতে গোলাকার এবং চ্যাপ্টা। এ পিঠা খুব সাধারণ হলেও বানাতে কিন্তু অসাধারণ দক্ষতা লাগে। চালের গুঁড়া এর প্রধান উপাদান। প্রথমেই চালের গুঁড়া, লবণ আর পানির মিশ্রণ তৈরি করতে হয়। মাটির খোলা চুলায় দিয়ে গরম করে নিতে হয়। এবার খোলায় কিছু তেল মাখিয়ে নিতে হবে। এবার এক চামচ তরল মিশ্রণ নিয়ে খোলায় ঢেলে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ঢাকনার উপড় খুব সামান্য পানির ছিটা দিতে হবে। ৪ থেকে ৫ মিনিট অপেক্ষা করে পিঠা তুলে ফেলতে হয়। এই পিঠা গুড় বা, খেজুরের রস দিয়ে খেতে বেশ মজা।

এছাড়াও রয়েছে পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, পানতোয়া, কুলশি, খেজুরের পিঠা, ক্ষীর কুলি, গোলাপ ফুল পিঠা, তেলের পিঠা, সেমাই পিঠা। এরকম অসংখ্য পিঠার দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ। সবগুলো পিঠা নিয়ে বলতে গেলে লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। তাই বাকি পিঠাগুলোর গল্প না হয় আরেক দিনের জন্যই তোলা থাকল। ধন্যবাদ।

Related Articles