Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফেসবুকে বেগুনী পায়রার মাথা ঝাঁকানোর কাহিনী কী?

গত সপ্তাহখানেকের মধ্যে আপনি যদি ফেসবুকে একবারও ঢুঁ মেরে থাকেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় একটা অনবরত মাথা ঝাঁকিয়ে চলা ছোট্ট বেগুনী পায়রা আপনার চোখে পড়েছে। ফেসবুকের কমেন্টে কোনো অনুভূতি বোঝানোর জন্য ইমোজি দেয়ার যে চল আছে, সেটাতে ইতোমধ্যেই কিংবদন্তির পর্যায়ে চলে গেছে এই পাখিটি। কী এমন উন্মাদনা ভর করল এই ছোট্ট পাখির মাথায়, যা ছড়িয়ে পড়ল লাখ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে? সেই কাহিনীই জানাবো আজকের লেখায়।

ফেসবুক জুড়ে দেখা যাচ্ছে ‘ট্র্যাশ ডাভ’। সূত্র: fossbytes.com

নিউজফিড ভাসিয়ে দেয়া এই পাখিটির নাম ‘ট্র্যাশ ডাভ’। কেন যে এই বেগুনী পালকের পাখিটা অমন করে মাথা ঝাঁকাচ্ছে তা কেউ না জানলেও, এর মধ্যেই অজস্রবার এই ইমোজিটি কমেন্ট করা হয়েছে ফেসবুকের হাজার হাজার পোস্টে।

‘ট্র্যাশ ডাভস’ নামক স্টিকার প্যাক থেকে আগমন বেগুনী পায়রার। বিভিন্ন সময়ই ফেসবুক ‘স্টিকার প্যাক’ নামে বিভিন্ন অনুভূতি প্রকাশকারী একই মডেলের কতগুলো ইমোজি ছাড়ে কমেন্ট কিংবা চ্যাটবক্সে ব্যবহারের জন্য। যেমন, টুজকি হলো একটা ছোট্ট খরগোশ যে কিনা রাগ, আনন্দ, অট্টহাসি কিংবা মন খারাপ ইত্যাদি নানান রকমের অনুভূতি প্রকাশ করে। আবার মাগসি হলো একটা কুকুরছানা, হ্যাচ হলো মাত্রই ডিম থেকে বের হওয়া ছোট্ট একটা মুরগীছানা। আবার বিভিন্ন সুপারহিরো, সিনেমা বা কার্টুনের চরিত্র ইত্যাদি নিয়েও তৈরি হয় এমন সব স্টিকার প্যাক। এই স্টিকার প্যাকে থাকা ইমোজিগুলো দুনিয়ার তাবৎ অনুভূতি বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয় ফেসবুকের সর্বত্র।

টুজকি, মাগসি ও হ্যাচ। সূত্র: quora.com

‘ট্র্যাশ ডাভস’ও এমনই একটা স্টিকার প্যাক যেটা এ বছরের ৩১ জানুয়ারি ফেসবুক নিয়ে আসে এর ব্যবহারকারীদের জন্য। এই বেগুনী পায়রার ছবিটির মূল আঁকিয়ে হলেন ফ্লোরিডার শিল্পী সিড ওয়েইলার, যিনি ছবি আঁকা ও অ্যানিমেশন নির্মাণের কাজ করেন।

সিড ওয়েইলার। সূত্র: sydweiler.com

ফেসবুকের আগে ট্র্যাশ ডাভ ছাড়া হয়েছিল অ্যাপল এর নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম ‘আইওএস ১০’ এ, যেখানে শুধুমাত্র আইফোন, আইপ্যাড কিংবা আইপড টাচ ব্যবহারকারীরাই এই মাথা ঝাঁকানো পাখির ইমোজিটা ব্যবহার করতে পারতেন। এরপর ট্র্যাশ ডাভকে স্টিকার প্যাক আকারে নিয়ে এল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।

ট্র্যাশ ডাভের বিভিন্ন স্টিকার। সূত্র: knowyourmeme.com

থাইল্যান্ড থেকে ট্র্যাশ ডাভের ইমোজির সাথে একটা বিড়ালের অ্যানিমেশন মিলিয়ে একটি ভিডিও ছাড়া হয়। খানিকটা অশ্লীলতার ছোঁয়া থাকলেও ভিডিওটা ভাইরাল হয়ে যায় মুহূর্তের মধ্য। মাত্র ৫ দিনে ৪০ লক্ষ বারেরও বেশি দেখা হয় এটি। আর এই ভিডিও থেকেই ট্র্যাশ ডাভ হয়ে উঠে তুমুল জনপ্রিয়।

থাইল্যান্ডে পাখির প্রতিশব্দ হলো ‘নক’। থাই ভাষায় এই শব্দটি দিয়ে এমন ব্যক্তিকেও বোঝানো হয় যে কিনা প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে বড্ড একাকী জীবন কাটাচ্ছেন। এই শব্দের এমন ব্যাখ্যার কারণেও বেগুনি পাখিটি থাই ভিডিওতে আসার পর ভাইরাল হতে পারে বলে মনে করেন কেউ কেউ।

কেমন করে এল এই বেগুনি কবুতর আঁকার আইডিয়া? শিল্পী ওয়েইলার জানিয়েছেন সেই গল্প। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা শহরের মিনিয়াপোলিসে এক পুকুরের ধারে একদিন বসে ছিলেন ওয়েইলার। সেখানে চারপাশে শুধু কবুতর আর কবুতর। ছোট্ট এই পাখিগুলোর রোদে জ্বলজ্বল করে ওঠা পালকে রঙধনুর মতো রঙের খেলা দেখে মুগ্ধ হন তিনি। এগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছিল এদিক ওদিক আর বিভিন্ন জনের দেয়া খাবার খাচ্ছিল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। ওয়েইলার বলেন, “এগুলো ছিল ঠিক ঘুঘু পাখির মতো কিন্তু এরা ময়লা খাবার খায়”। সেই ময়লা-আবর্জনার ইংরেজি শব্দ ‘ট্র্যাশ’ আর ঘুঘুর ‘ডাভ’ মিলিয়েই হলো ট্র্যাশ ডাভ।

শিল্পীর আঁকা প্রথম ট্র্যাশ ডাভের ছবি। সূত্র: সিড ওয়েইলারের ফেসবুক পেজ

এরপর তিনি পাখিটির কতগুলো ছবি এঁকে সেগুলোর ডিজিটাল রূপ দিয়ে অ্যাপল স্টোরে দিলেন। কীভাবে স্টিকারগুলো বানিয়েছেন সেটারও প্রায় ১৪ ঘণ্টার লাইভ ভিডিও দিলেন দু’দিন ধরে। অ্যাপল স্টোর থেকে সেগুলো চলে এল অ্যাপল ব্যবহারকারীদের হাতে হাতে। জানুয়ারির শেষ দিকে এগুলো এল ফেসবুকে, এরপরের ইতিহাস সবার জানা। কমেন্টবক্স সয়লাব হয়ে গেছে বেগুনী পায়রার মাথা ঝাঁকানো ছবি দিয়ে।

“ট্র্যাশ ডাভ বানানো হয়েছে মানুষকে হাসানো আর মজা দেয়ার জন্য। সবাই এটা পছন্দ করেছে দেখে আমি সত্যিই অনেক খুশি”, একথা বলেছেন ওয়েইলার, সাথে ধন্যবাদ জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের মানুষদের যাদের কল্যাণে এটি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। অবশ্য ফেসবুকে ওয়েইলারের নিজের পোস্টগুলোও এখন ভেসে যাচ্ছে হাজার হাজার ট্র্যাশ ডাভ দিয়ে!

ফেসবুকের কমেন্ট ইন্টারনেট জুড়ে আরও নানা ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ট্র্যাশ ডাভের উন্মাদনা। এটি নিয়ে তৈরি হচ্ছে নানান রকমের ভিডিও আর ছবি। কেউ মেটাল গানের সাথে ‘হেডব্যাং’ দেয়া অর্থাৎ প্রচণ্ড গতিতে মাথা ঝাঁকানোর যে চল আছে সেটা দিচ্ছেন ট্র্যাশ ডাভের পোশাক গায়ে চড়িয়ে। কেউবা আবার এই ঝাঁকুনিতে পাগল হয়ে যাবার ভিডিও দিচ্ছেন।

ট্র্যাশ ডাভের পোশাক বানিয়ে মাথা ঝাঁকাচ্ছেন একজন। ভিডিও থেকে নেয়া, লিংক: http://bit.ly/2ldDIuM

আবার কেউ কেউ ট্র্যাশ ডাভের ইমোজি দেখেই রেগে ভাঙচুর শুরু করার ভিডিও কিংবা ছবি দিচ্ছেন! অনেকে বিরক্ত হয়ে ফেসবুকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন এই ইমোজিটি উঠিয়ে নেয়ার জন্য।

ফেসবুকে ট্র্যাশ ডাভ দেখতে দেখতে ইনি পাগল হয়ে হ্যালুসিনেশন দেখছেন। ভিডিও থেকে নেয়া, লিংক: http://bit.ly/2m19CtP

এদিকে শুধুমাত্র মজা করার জন্য ব্যবহৃত এই ইমোজি নিয়ে নানান প্রোপাগান্ডাও শুরু হয়েছে পশ্চিমা ইন্টারনেট বিশ্বে। সেখানে ‘ফোরচ্যান’ বলে পরিচিত একটি গ্রুপ যারা কিনা সরাসরি রক্ষণশীলতা, নব্য-নাৎসিবাদ ও শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠতা দাবি করে বর্ণবাদের চর্চা করে; তারা এই ইমোজিটি নিজেদের মতবাদ প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

ট্র্যাশ ডাভকে বানানো হয়েছে নাৎসিবাদের প্রতীক। সূত্র: dailydot.com

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কঠিন সমর্থক এই গ্রুপটি ইতোমধ্যে স্বস্তিকা চিহ্ন, যুদ্ধের ট্যাঙ্কের ছবি ইত্যাদি নানান জায়গায় বেগুনি রঙের কবুতর যুক্ত করে ছড়িয়ে দিয়েছে। তাদের প্রোপাগান্ডা এতই প্রবল আকারে ছড়িয়ে পড়েছে যে, কেউ কেউ সত্যি সত্যিই বিশ্বাস করছেন, ট্র্যাশ ডাভ হলো নব্য নাৎসিবাদের প্রতীক!

অনেকেই বিশ্বাস করছেন ট্র্যাশ ডাভ নিয়ে প্রোপাগান্ডা। সূত্র: dailydot.com

আমাদের এদিকে অবশ্য এখন পর্যন্ত নাৎসিবাদ কিংবা বর্ণবাদের কোনো ছোঁয়া এসে লাগেনি ট্র্যাশ ডাভের গায়ে। কেবলই আনন্দের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে এই ছোট্ট পায়রার ছবি। অবশ্য কেউ কেউ একটু বিরক্ত হচ্ছেন এটা দেখলেই। আসলে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় এমন অনেক বিষয়ই আসে, কিছুদিন তুমুল উন্মাদনা তৈরি করে, আবার হারিয়ে যায়। মানুষের কমেন্টের খায়েশ মিটে গেলে বেগুনী পায়রাটিও হয়তো এমন করেই আবার হারিয়ে যাবে ক’দিন পর, তখন নতুন কোনো বিষয় এসে ভাসিয়ে দেবে ফেসবুকের নিউজফিড।

This article is in Bangla language. It's about a facebook sticker called trash dove.

References: 

1. mashable.com/2017/02/14/trash-dove-meme/#lSyTFdkEvPqK
2. theguardian.com/technology/shortcuts/2017/feb/15/trash-dove-how-a-purple-bird-took-over-facebook
3. knowyourmeme.com/memes/trash-doves
4. youredm.com/2017/02/15/trash-dove-means-became-symbol-alt-right/

Featured Image: deviantart.com

Related Articles