আজ থেকে প্রায় নব্বই বছর আগেকার কথা। ইংরেজ শাসিত ভারতের গুজরাট রাজ্যের ছোট এক শহরের নাম ছিলো বান্তওয়া। এই বান্তওয়ারই মেমন সম্প্রদায়ের এক মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয় এক ছেলে, নাম তার আব্দুল সাত্তার ইধি।
একটি শিশু বড় হয়ে কেমন মানসিকতার হবে, কোন পথে চলবে ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার উৎসস্থল তার পরিবার। ছোট্ট ইধির বেলাতেও এর ব্যতিক্রম ঘটে নি। ছেলেবেলায় মায়ের কাছ থেকে চমৎকার একটি বিষয়ে শিক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। তার মা তাকে প্রতিদিন ১ পয়সা দিতেন নিজের উদরপূর্তির জন্য। আর সেই সাথে সমপরিমাণ অর্থ দিতেন গরীব-দুঃখীদের মাঝে দান করার জন্য। শৈশবে মায়ের কাছ থেকে পাওয়া এই ১ পয়সার শিক্ষা যে তার পরবর্তী জীবনকে কীভাবে, কতটা বৃহৎ পরিসরে প্রভাবিত করেছিলো তা দেখবো আমরা লেখার পরবর্তী অংশে।
দুর্ভাগ্যই বলতে হবে ইধির। তার বয়স যখন ১১ বছর, তখনই স্ট্রোক করেন তার মা। ফলে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যান তিনি। অবশেষে আট বছর কষ্ট করে পরপারে পাড়ি জমান ইধির জীবনে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার বীজ বুনে যাওয়া এ নারী। অসুস্থ মায়ের সেবাযত্ন করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছিলো, তা যেমন একদিকে তরুণ ইধিকে করে তুলেছিলো মানবদরদী, তেমনি তার অভিজ্ঞতার ঝুলিকে করে তুলেছিলো সমৃদ্ধ।
একসময় এলো দেশভাগের পালা। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে দেশভাগের ফলে জন্ম হলো ভারত ও পাকিস্তান নামক পৃথক দুই রাষ্ট্রের। দেশভাগের ছয়দিনের মাথায় পাকিস্তানে পাড়ি জমান আব্দুল সাত্তার ইধি, এসে নামেন করাচিতে। তার বয়স তখন কেবল ২০ বছর।
জীবিকার তাগিদে তখন ফেরিওয়ালার পেশাকেই বেছে নেন তিনি। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বিক্রি করতে থাকেন ম্যাচ, পেন্সিল ও তোয়ালে। এরপর তিনি নাম লেখান পান বিক্রেতার খাতায়। কিছুদিন পর এ পেশাকেও বিদায় জানিয়ে যোগ দেন বাবার ব্যবসায়। কিন্তু এবারের কাজেও কেন জানি ঠিকমতো মন বসাতে পারছিলেন না তরুণ ইধি।
সমাজের নানা দুর্নীতি, অত্যাচার ব্যথিত করতো তরুণ ইধির মনকে। সবসময়ই তিনি চাইতেন মানুষের জন্য কিছু করতে, মানবসেবায় নিজেকে পুরোপুরি সপে দিতে। এ লক্ষ্যে তিনি তার মেমন সম্প্রদায়ের পরিচালিত এক সেবামূলক কাজে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু যখন তিনি দেখলেন যে, সেখানে আমজনতার পরিবর্তে শুধুমাত্র মেমনদের জন্যই সেবার দরজা খোলা, তখন বেশ আঘাত পেলেন তিনি।
তবে তার মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটে যায় সমকালীন আরেকটি দুর্ঘটনা যাতে এক মা তার ছয় সন্তানকে নিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। নিজেদের দুর্দশা কাটানোর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন সেই নারী। এরপর ইধির জনদরদী মন আর বসে থাকতে পারলো না।
নিজের কিছু টাকা-পয়সাকে সম্বল করেই ছোটখাট একটি ফার্মেসী দিয়ে বসলেন ইধি। জনগণের ওষুধের মূল্য পরিশোধের সক্ষমতা আছে কিনা, তা ইধির মূল বিবেচ্য বিষয় ছিলো। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দটাই তার কাছে মুখ্য ছিলো। এভাবেই জোদিয়া বাজার এলাকায় নিজের বাড়ির সামনের এক তাঁবুতে যাত্রা করেছিলো আব্দুল সাত্তার ইধি নামক এক অখ্যাত তরুণের সাদামাটা এক মানবসেবা কেন্দ্র। কিন্তু উপরওয়ালা যে এই গোবরেই তার জন্য পদ্মফুল লুকিয়ে রেখেছিলেন, তা কি তিনি সেই বয়সে অনুমান করতে পেরেছিলেন?
সেই এলাকাতেই রয়েছে ইধির প্রতিষ্ঠিত ইধি ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়। জরাজীর্ণ একটি ভবনের ছোট্ট একটি রুমে বসবাস করে মৃত্যুর আগপর্যন্ত বিশ্বখ্যাত ইধি ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করে গেছেন তিনি। জনগণকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দিতে ডাক্তারদের কাছে অনুরোধ করা হতো সর্বদা। ওদিকে ইধি হেঁটে বেড়াতেন অর্থ সংগ্রহের জন্য যা দিয়ে অসুস্থ মানুষগুলোর জন্য কেনা যাবে ওষুধ। এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও মহৎ হৃদয়ের অধিকারী এই ব্যক্তিকে দেখা গেছে রাস্তার পাশে কোনো পথচারী কিংবা গাড়ি থামিয়ে অর্থ সংগ্রহ করতে।
আব্দুল সাত্তার ইধির কাজকর্মে নতুন মাত্রা যোগ হয় ১৯৫৭ সালে। সেই বছর মহামারী রুপে ছড়িয়ে পড়া এশিয়ান ফ্লুর ছোঁয়া লাগে করাচিতেও। অসুস্থদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে দ্বারে দ্বারে ঘোরা শুরু করেন তিনি। তার এমন মানবদরদী কাজ সবার কাছেই বেশ প্রশংসা কুড়োয়।
ইতিহাস থেকে জেনেছি, মন থেকে কোনো ভালো কাজ একবার শুরু করার পর নাকি স্রষ্টাই সেটা এগিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিলো আব্দুল সাত্তার ইধির বেলাতেও। তার এমন জনদরদী কাজে খুশি হয়ে মেমন সম্প্রদায়ের এক ব্যবসায়ী তাকে বেশ ভালো অঙ্কের অর্থ সাহায্য প্রদান করেন। সেই অর্থ দিয়েই প্রথমবারের মতো একটি অ্যাম্বুলেন্স কিনে নেন ইধি। এরপর তার মানবসেবা যেন ছুটে চলা শুরু করলো দুরন্ত বেগে। আর্তমানবতার সেবায় শহর জুড়ে সেই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এককালে ছুটে বেড়াতেন তিনি। একবার কেউ একজন তার কাছে জানতে চেয়েছিলো কেন তিনি বিধর্মীদেরও সাহায্য করেন সেই ব্যাপারে। তখন তিনি কেবল বলেছিলেন, “কারণ আমার অ্যাম্বুলেন্সটা তোমার চেয়েও বেশি মুসলিম।”
ইধির ডিসপেনসারিতে নার্সের কাজ করতেন বিলকিস বানু। ১৯৬৫ সালে তাকেই জীবনসঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করেন ইধি। সৌভাগ্যই বলতে হবে তার। কারণ স্বামীর মতো স্ত্রীরও ছিলো মানবসেবী মন। তাই দুজন মিলে আরো চমৎকারভাবে চালাতে থাকলেন ইধি ফাউন্ডেশন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় নিহত সাধারণ মানুষদের সঠিক শেষকৃত্যানুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছিলেন তারা স্বামী-স্ত্রী মিলেই। বিলকিস বানু যেমন মৃত নারীদেহগুলোকে কবর দেয়ার জন্য প্রস্তুত করতেন, ইধি তেমনি কাজ করতেন মৃত নরদেহগুলোর বেলায়।
দোলনা থেকে কবর পর্যন্তই বলা যায় বিস্তৃত ছিলো ইধির প্রতিষ্ঠিত ইধি ফাউন্ডেশনের সেবার পরিধি। একসময় তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন পরিবারহারা শিশুদের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব নিবেন। যেমন চিন্তা, তেমন কাজ। এভাবে একে একে ২০,০০০ এরও বেশি বাপ-মা হারা শিশুর নিবন্ধনকৃত অভিভাবক হয়েছেন এ দম্পতি।
আমাদের দেশে মাঝে মাঝেই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের ফলে জন্ম নেয়া কোনো সন্তানকে ডাস্টবিন, রাস্তা ইত্যাদি জায়গায় ফেলে যাওয়ার খবর নাড়িয়ে দিয়ে যায় আমাদের বিবেককে। নিষ্পাপ সেই নবজাতক শিশুদেরকে এ নির্মমতার হাত থেকে বাঁচাতে ইধি ফাউন্ডেশনের অফিসগুলোর বাইরে রাখা ছিলো দোলনা। ফলে কেউ চাইলে এখানে তাদের অবৈধ সন্তানকে রেখে যেতে পারতো। পরে সেই শিশুর দায়িত্ব নিতো ইধি ফাউন্ডেশনই।
বাপ-মা হারা ছেলেমেয়েদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়াও ছিলো বেশ ঝামেলার কাজ। জাতীয় তথ্যকেন্দ্রে তাদের কোনো পরিচয়ই তখন রাখা হতো না। এ নিয়ে আদালত পর্যন্ত যান ইধি। অবশেষে দুর্ভাগা সেই ছেলেমেয়েগুলোর জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করেই আদালত প্রাঙ্গন ত্যাগ করেন তিনি।
এবার ইধি ফাউন্ডেশন নিয়ে কথা বলা যাক।
১৯৫১ সালে আব্দুল সাত্তার ইধির হাত ধরে পাকিস্তানে যাত্রা শুরু করে অলাভজনক সমাজ সেবামূলক ইধি ফাউন্ডেশন। আমৃত্যু এর প্রধানের দায়িত্ব পালন করে গেছেন তিনি।
চব্বিশ ঘন্টা জরুরি স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে চলেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। দুর্গতদের আশ্রয় প্রদান, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ত্রাণ সরবরাহের কাজও করে থাকে ইধি ফাউন্ডেশন।
প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ঠিকঠাক মতো পরিচালনার জন্য ১৯৫৭ সালে ৫,০০০ রুপি দিয়ে গঠন করা হয় ইধি ট্রাস্ট। করাচিতে মাত্র একটি রুমে যাত্রা শুরু করা এই ফাউন্ডেশনের আজ সারা পাকিস্তানের বিভিন্ন ছোট-বড় শহর ও পল্লী এলাকা জুড়ে রয়েছে ৩০০টি সেবা কেন্দ্র। এখানে রয়েছে স্বাস্থ্য সেবা, পরিবার পরিকল্পনা ও জরুরি সহায়তার ব্যবস্থা। এছাড়া দূরবর্তী অঞ্চলগুলো থেকে রোগী পরিবহনের জন্য রয়েছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সুব্যবস্থাও।
শুধুমাত্র করাচিতেই বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, চোখের চিকিৎসা, ডায়বেটিক সেন্টার, সার্জিক্যাল ইউনিট, ৪ শয্যার ক্যান্সার হাসপাতাল ও ভ্রাম্যমান ডিসপেনসারির সুবিধা সম্বলিত ৮টি হাসপাতাল রয়েছে ইধি ফাউন্ডেশনের। একই সাথে দুটো ব্লাড ব্যাঙ্ক, এমনকি আইন সহায়তাকারী বিভাগও রয়েছে তাদের। নিয়োগকৃত ডাক্তাররা নিয়মিতভাবেই বিভিন্ন জেলখানা পরিদর্শনে যান এবং বন্দীদের খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও রয়েছে ১৫টি ‘আপনা ঘর’ যেখানে দুস্থ শিশু ও মানসিক রোগীদের জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা।
ইধি ফাউন্ডেশনের সার্ভিসগুলোকে মূলত অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতাল ও শিশু পরিচর্যা- এ তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
১) অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসঃ ২০১৬ সালের মার্চ মাসে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী সারা পাকিস্তানজুড়ে তাদের মোট ১,৮০০ এর অধিক অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে! করাচির মতো ব্যস্ত নগরীতে তাদের কাছে দিনে গড়ে ৬,০০০ এর মতো কল আসে। প্রাকৃতিক দুর্যোগাক্রান্ত এলাকায় রোগী পরিবহনের জন্য রয়েছে দুটি প্রাইভেট জেট ও একটি হেলিকপ্টার। এছাড়া নৌপথে রোগী পরিবহনের জন্যও রয়েছে ২৮টি উদ্ধারকারী নৌযান!
২) হাসপাতাল সার্ভিসঃ পাকিস্তানে ইধি ফাউন্ডেশনের রয়েছে বেশ কিছু হাসপাতাল। এছাড়াও রয়েছে ডায়বেটিক সেন্টার, নার্স ট্রেনিং সেন্টার, ইমিউনাইজেশন সেন্টার ও ব্লাড ব্যাঙ্ক। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০,০০০ নার্সের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে ইধি ফাউন্ডেশন।
৩) শিশু পরিচর্যা বিষয়ক সার্ভিসঃ সংগঠনটির নারী ও শিশু বিষয়ক ক্ষেত্রগুলোর দায়িত্বে রয়েছেন বিলকিস ইধি। এখানে শিশুদের দেখাশোনা, বাচ্চা দত্তক নেয়া ও স্বজনহারা শিশুদের দেখভালের ব্যবস্থা রয়েছে। ইধি ফাউন্ডেশনের হাত ধরেই নতুন জীবন খুঁজে পেয়েছে প্রায় ৫০,০০০ এতিম শিশু।
দেশের পাশাপাশি বিদেশেও রয়েছে ইধি ফাউন্ডেশনের মানবসেবার স্বাক্ষর। ২০০৫ সালে ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১,০০,০০০ ডলার সাহায্য পাঠানো হয়েছিলো সংগঠনটির পক্ষ থেকে। এছাড়া আমাদের দেশের ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত জনপদেও সাহায্য এসেছিলো ফাউন্ডেশনটির পক্ষ থেকে। ২০০৩ সালে সুনামি আক্রান্ত জনপদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলো তারা। বিভিন্ন সময়ে আফগানিস্তানেও কাজ করে থাকে তাদের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও রয়েছে তাদের শাখা।
এতভাবে মানুষের সেবা করে যাওয়া আব্দুল সাত্তার ইধিকে কি কোনো রকম বিতর্ক বা বাধার সম্মুখীন হতে হয় নি? অবশ্যই হয়েছে। এখন শোনাচ্ছি সেই কাহিনীই।
১) বিভিন্ন সময়ই মৃত্যুর হুমকি আসতো তার কাছে।
২) দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছে মানবসেবার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা ইধির অ্যাম্বুলেন্সগুলো এবং এ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা।
৩) ২০১৩ সালের অক্টোবরে দুর্বৃত্তরা তার করাচির একটি সেন্টার দখল করে এবং প্রায় ৪,০০,০০০ পাউন্ড ছিনতাই করে নেয়। এরপর জনগণ ইধির প্রতি তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসার পরিচয় দিয়েছিলো। বিভিন্ন দিক থেকে আসা সাহায্যে অল্প সময়ের মাঝেই সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সক্ষম হয় ইধি ফাউন্ডেশন।
৪) বিবাহ বহির্ভূত শিশুদের রক্ষার্থে তিনি যে তার সেন্টারগুলোর বাইরে দোলনা রেখেছিলেন, এটাকেও অনেকে অন্য দৃষ্টিতে দেখেছে। তারা বলতো, এর মাধ্যমে তিনি আসলে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে উৎসাহিত করছেন!
৫) গত শতকের আশির দশকের শুরুর দিকে মানবসেবার ব্রত নিয়ে লেবাননে যাবার পথে ইসরায়েলী বাহিনীর হাতে বন্দী হয়েছিলেন ইধি। ২০০৬ সালে কানাডার টরন্টোতে তাকে ১৬ ঘন্টা আটকে রাখা হয়েছিলো। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মকর্তারা জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে তাকে আট ঘন্টা আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় তার পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্রও কেড়ে নেয়া হয়েছিলো। কেন প্রায় সময়ই তার সাথে এমন করা হয় তা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছিলেন, “এর একমাত্র ব্যাখ্যা হিসেবে আমার দাড়ি ও পোষাকের কথাই আমি ভাবতে পারি।”
২০১৩ সালের ২৫ জুন কিডনির জটিলতায় আক্রান্ত হন আব্দুল সাত্তার ইধি। ডাক্তাররা জানিয়ে দেন যে, যদি কোনো কিডনি দাতা পাওয়া না যায়, তাহলে বাকি জীবনটা তাকে ডায়ালাইসিসের মাধ্যমেই চলতে হবে। অবশেষে এ কিডনির অসুখে ভুগেই ২০১৬ সালের ৮ জুলাই ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মহৎ হৃদয়ের অধিকারী এ জনদরদী ব্যক্তি। তিনি চেয়েছিলেন তার শরীরের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন অসুস্থ ব্যক্তিকে দান করা হোক। তবে শারীরিক অসুস্থতার জন্য শুধুমাত্র তার কর্নিয়াই গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছিলো।
২০১৩ সালে হাফিংটন পোস্ট ইধিকে বলেছিলো ‘The world’s greatest living humanitarian’। মৃত্যুর পরদিন তাকে নিয়ে প্রকাশিত এক লেখায় বিবিসি তাকে উল্লেখ করেছিলো ‘Pakistan’s most respected figure and was seen by some as almost a saint’ হিসেবে। ওদিকে জনতার কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘Angel of Mercy’ ও ‘The Richest Poor Man’ হিসেবে। জীবদ্দশায় বেশ কয়েকবারই নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন তিনি।
তথ্যসূত্র
১) en.wikipedia.org/wiki/Abdul_Sattar_Edhi
২) en.wikipedia.org/wiki/Edhi_Foundation
৩) thefamouspeople.com/profiles/abdul-sattar-edhi-11995.php
৪) timesofislamabad.com/abdul-sattar-edhi-my-life-story/2016/07/09/2/
৫) theguardian.com/world/2016/jul/13/abdul-sattar-edhi-obituary
৬) https://ind.pn/2r4CghW
৭) telegraph.co.uk/technology/2017/02/28/abdul-sattar-edhi-89-birthday-pakistan-angel-of-mercy-father-teresa/
৮) americanpakistan.org/edhi