আমাদের সকলেরই হয়ত জানা যে, ব্যর্থতাই সফলতার চাবিকাঠি। কারণ ব্যর্থতাই আমাদের সামনের দিকে আরও প্রজ্ঞাবান হওয়ার শিক্ষা দেয়। বিশ্বের মনীষীদের জীবনী খুঁজতে গেলে দেখা যাবে প্রত্যেকের জীবনই অনন্য অভিজ্ঞতায় ভাস্বর। আর এই বিপুল অভিজ্ঞতাই হয়ত তাদের সাফল্যের পথকে মসৃণ করেছে।
সত্য বলতে কি, আসলে একজন নেতা হলেই যে আপনাকে সবাই মেনে নেবে কিংবা আপনার কথা মতো কাজ করবে তা কিন্তু নয়। অনেক ক্ষেত্রে এর ভিন্ন কিছুও ঘটতে পারে যা আপনার খারাপ ব্যতীত ভালো কিছু আনবে না। তবে নেতা হলেই যে আপনাকে সুপারম্যান হতে হবে তা-ও কিন্তু নয়। মূলত সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদানের পাশাপাশি বাড়তি কিছু কাজের মাধ্যমে নিজেকে সক্রিয় করে তোলার সাথে সাথে ক্ষেত্রবিশেষে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথ সুগম করার একটি বাড়তি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া লাগবে।
নিম্নোক্ত এই অনুপ্রেরণামূলক উক্তিগুলো নেওয়া হয়েছে “ইয়াং প্রেসিডেন্টস অর্গানাইজেশন”-এর নয়জন তরুণ নেতার অভিজ্ঞতার আলোকে। এখানে উল্লেখিত অনেক বিষয়ের সাথে একমত-দ্বিমত থাকতে পারে, কিন্তু এটি সর্বজনীন যে, যে বাধা অতিক্রম করে সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে তার উক্তি অবশ্যই অনুপ্রেরণা যোগাবে।
মেধার ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ
“আপনাকে কর্মীদের উৎসাহিত করতে হবে এবং তাদের কাজের পরিধি প্রসারিত করতে দিতে হবে। কারণ যখন আপনি একা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে যাবেন, তখন অতিরিক্ত চাপ বোধ করবেন এবং দীর্ঘদিন সেটি ধরে রাখতে পারবেন না। তাই কর্মীদের ভুল করতে দিতে হবে যাতে তারা সেখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে।“- জেসন রবিন্স – সিইও এবং প্রেসিডেন্ট, ইপ্রমোস প্রমোসনাল প্রোডাক্টস
শৃঙ্খলা ও সমন্বয়
“শৃঙ্খলা ও সমন্বয় এই দুটো জিনিস যা আমাদের ব্যবসা এবং জীবনে সাফল্য অর্জন করতে সাহায্য করে। সেটি হলো কঠোর পরিশ্রম (এবং একটু বিচক্ষণতা) যা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। আমাদের কর্মজীবনেও এটি একইভাবে কাজ করে। যখন আমরা নিয়মিত আমাদের কাজ শেষ করব, সর্বদা প্রস্তুত থাকব এবং ভালো সেবা দিতে পারব এমন আত্মবিশ্বাস থাকবে, তখনই আমরা সাফল্যের মুখ দেখতে পারব।”- টিমথি কসুলিচ – ডিরেক্টর ও বোর্ড মেম্বার, ফ্রাটেলি কসুলিচ অ্যান্ড ট্রাইয়াথলন অ্যান্ড আয়রনম্যান কম্পিটিটর
ব্যর্থতাকে স্বাগত জানানো
“আমরা জানি ব্যর্থতাই সফলতার চাবিকাঠি। আর তাই চেষ্টা না করে সফল হওয়া যায় না। আপনি যা চান তা সব সময় না-ও পেতে পারেন। কিন্তু প্রতিটি চেষ্টা থেকে আপনি নতুন কিছু শিখবেন এবং লক্ষ্য পুনঃপুনঃ আরও সুচারুরূপে নির্ধারণ করতে পারবেন।”- কিউয়ান চেলিন – প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট, সুপার ব্রান্ডস গ্রুপ
ব্যর্থতাকে দূরে ঠেলে, নতুন উদ্যমে নতুনের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে কাজ করুন, অচিরেই আপনার হাতে সফলতা ধরা দেবে। সময়ের পরিক্রমায় নিজেকে আড়াল করে না রেখে নিজেকে আবিস্কার করুন আরো ভিন্ন আঙ্গিকে।
সর্বদা সজাগ থাকুন
“প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর আমরা মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করতে যাই যে আমাদের অন্যান্য প্রতিযোগীরা কি করছে এবং ফিরে এসে সেই ব্যাপারে আলোচনা করি। ওই সময়ে কি করণীয় সেটি আমারা এখানে নির্ধারণ করি। আমারা আমাদের স্টুডিও ভেঙ্গে পুনরায় স্থাপন করি না, বরং আমাদের ব্রান্ডের সাথে সামঞ্জস্য জিনিসগুলো যুক্ত করি।”- জেনিফার মানাভি – প্রতিষ্ঠাতা, ফিসিক৫৭
মানুষকে মূল্যায়ন করুন
“সেবামূলক ব্যবসা পুরোপুরিভাবে গঠিত হয় মানুষকে কেন্দ্র করে। তাই যদি আপনি ভুল মানুষ বাছাই করেন তাহলে আপনার অর্থ ও পরিশ্রম দুই-ই অপচয় হবে। আর যদি সঠিক ব্যক্তি বাছাই করতে পারেন তাহলে সেটি স্বর্ণের সমান মূল্যবান হবে।”- জন অয়াং – সিইও, এইচএফএস কনসেপ্টস৪
তবে মানুষ এবং তার কাজ দুটোকেই মূল্যায়ন করতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার কাজের জন্য সঠিক মানুষকে খুঁজে বের করতে হবে এবং তাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। সেই সাথে এদের প্রাপ্য সঠিকভাবে মিটিয়ে দেয়া আবশ্যক। নিজের চারদিকে তাদেরকে রাখতে হলে অবশ্যই কাজের বিনিময়ে কিছু না কিছু করতে হবে।
নিজের বিশ্বাসের প্রতি আস্থা রাখুন
“অধিকাংশ উদ্যোক্তারা তাদের ক্রেতাদের চাহিদার সাথে নিজেদের মতের অমিলের দ্বন্দ্বে ভোগেন। ১৯৮৭ সালে যখন আমি প্রথম এঙ্কর স্টিম (সান-ফ্রান্সিস্কোর ঐতিহাসিক হাতে তৈরি বিয়ার) পান করলাম, আমার মনে হলো আমি এতদিন জানতাম না এরকম বিয়ার থাকতে পারে। এটি অন্য যেকোনো কিছু থেকে আলাদা এবং আমার কাছে নতুন এক অভিজ্ঞতার জন্ম দিল। তাই তখনই আমি এবং স্টিভ সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের মতো যারা নতুন কিছু খোঁজে তাদের জন্য এই বিয়ার বাজারজাত করব।” – গ্রেগ কচ – প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও, স্টোন ব্রিউয়ারি কোম্পানি/ স্টোন ওয়ার্ল্ড ব্রিস্টো
যদিও আমাদের দেশে এ ধরনের ব্যবসা নিয়ে আইনত ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ আছে, তবে এখানে বিয়ারের বদলে অন্য কোনো প্রোডাক্টের কথা চিন্তা করলেও হবে।
চিরছাত্র হতে হবে
“শেখার সবচেয়ে লাভজনক উপায় হলো প্রতি সপ্তাহে একবার পরামর্শ নিতে যাওয়া। নিজের কোম্পানির কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে যে বিষয়টি অজানা মনে হয় সেটি অন্য কারও কাছ থেকে পরামর্শ নিন। এরপর পরবর্তীতে ওই পরামর্শের আলোকে নিজেকে সামলে নিয়ে ব্যবসায় সেই নির্দিষ্ট দিকটির উপর গুরুত্ব দিন।”- লাইজেন ফালসেটো – সিইও এবং প্রেসিডেন্ট, থিঙ্ক থিন
হয়তোবা আপনার নিশ্চয়ই এমন কেউ আছেন যার সৎ পরামর্শ আপনার সব সময় কাজে লেগেছে। অথবা এমন একজন পরামর্শকের দ্বারস্থ হন যাকে আপনার যোগ্য বলে মনে হয় এবং সেটা যে কারো কাছেই হতে পারে। বলা তো যায় না, আপনার এগিয়ে যাওয়ার পথে তার পরামর্শ বেশ কাজেও দিতে পারে।
প্রতিদান
“সমৃদ্ধি অর্জনের সর্বোত্তম পথ হলো ব্যক্তি উদ্যোগ যা সামাজিক উন্নয়নের একটি প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করে। সমাজকে প্রতিদান হিসেবে সেবা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো একটি সফল ও সমাজ সচেতন ব্যবসা করা এবং নিজের প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসে সমাধান করা।”- জুলি স্মলিয়ান্সকি – প্রেসিডেন্ট এবং সিইও, লাইফওয়ে ফুডস
কঠোর পরিশ্রম
“পরিস্থিতি কতটা নিজের অনুকূলে তার থেকে বড় বিষয় হলো নিষ্ঠার সাথে কঠোর পরিশ্রম করে যাওয়া।“- সামির কায়ালি – সিইও, ইউরোএমিকাসার
সফলতা সাধারণত দুটো প্রধান দিক থেকে আসে। এক, ভাগ্য এবং দুই, পরিশ্রম। ধরুন, আপনি সফল হয়েছেন। কিন্তু আপনাকে আরো এগিয়ে যেতে হলে সমান তালে পরিশ্রম করে যেতে হবে। মূল ব্যাপারটি হলো আপনি যতটুকু পরিশ্রম করবেন ঠিক সেই পরিমান ফলাফল ভোগ করবেন। এক কথায় আপনার পরিশ্রম আপনার ধারক ও বাহক। কোন কাজগুলোতে আপনার বেশি সময় দিতে হবে অথবা কোনগুলোতে আপনার কম সময় দিতে হবে সেটা নির্ধারণ করে কাজে নামতে হবে। যখন মনে হবে আপনি মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করছেন, তখন দেখবেন আপনি এগিয়ে যাচ্ছেন।
উপরের নয়টি বিষয় যেকোনো তরুণ উদ্যোক্তার পথকে আমূল প্রসারিত করতে সক্ষম। যেহেতু বিষয়গুলো প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া, তাই এটি ফলপ্রসূ উপায় হিসেবে গ্রহণের দাবি রাখে। তবে সর্বোপরি যে বিষয়টি আবেদন রাখে সেটি হলো পরিশ্রম, নিষ্ঠা আর আত্মবিশ্বাস।
তথ্যসূত্র
১) success.com/article/9-things-every-aspiring-leader-should-know
২) betterlifecoachingblog.com/2016/12/12/10-things-every-leader-should-know/
৩) jerrystrom.com/research/js_focal-points.html