- ডিপিএলের চলতি মৌসুমে তৃতীয় শতক হাঁকালেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
- মোহামেডানের বিপক্ষে ১২৭ রানের ইনিংসটি লিস্ট-এ ক্রিকেটে তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
- আজ লিস্ট-এ ক্রিকেটে নিজের ২৫০তম ম্যাচ খেলেছেন আশরাফুল।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে উজ্জ্বল নক্ষত্রদের তালিকা করতে গেলে একদম প্রথম সারিতেই মোহাম্মদ আশরাফুলের নাম জ্বলজ্বল করবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক ঐতিহাসিক মুহূর্তের নায়ক তিনি। আবার বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিং করে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম খলনায়কও তিনি।
গত দশকে বড় দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় পাওয়া ম্যাচগুলোতে আশরাফুলের অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার সেই ঐতিহাসিক শতক তো অবিস্মরণীয়। ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে ভক্তদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন আশরাফুল।
তবে মোহাম্মদ আশরাফুল নিজের প্রতিভার সদ্ব্যবহার করতে পারেননি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে নিজের অভিষেক টেস্টেই শক্তিশালী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শতক হাঁকিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা আশরাফুলের ৬১টি টেস্টে ব্যাটিং গড় মাত্র ২৪.০০! ওয়ানডে ক্রিকেটের পারফর্মেন্স আরও হতাশাজনক, ১৭৭টি ওয়ানডেতে তার ব্যাটিং গড় মাত্র ২২.২৩! তার মতো প্রতিভাবান একজন ক্রিকেটারের নামের পাশে এমন পরিসংখ্যান বড্ড বেমানান।
তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল ধারাবাহিকতার অভাব। একটি ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলার পরবর্তী ম্যাচেই নিজের উইকেট উপহার দিয়ে আসতেন তিনি। সাকিব, তামিম এবং মুশফিকরা আসার পর তার দলে তার জায়গা নিয়েও টানাটানি পড়েছিল। দলে নিজের জায়গা যখন যায় যায় করত, সেই মুহূর্তে দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলে দলে নিজের জায়গা বহাল রাখতেন তিনি।
সবকিছুর পরেও আশরাফুল ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রিয়মুখ। প্রথম ভালোবাসার মতো। কথায় আছে, প্রথম ভালোবাসা সহজে ভোলা যায় না। অনিয়মিতভাবে রান করে দলে টিকে গেলেও, বিপিএলে ফিক্সিং করে রেহাই পাননি আশরাফুল। তিন বছরের জন্য সবধরনের ক্রিকেট থেকে এবং পাঁচ বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও নিষিদ্ধ মোহাম্মদ আশরাফুল। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়েছেন ২০১৬ সালে ১৩ই আগস্ট। চলতি মৌসুমের ডিপিএলে কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের হয়ে খেলছেন তিনি।
ব্যাট হাতে সময়টা বেশ ভালো কাটাচ্ছেন আশরাফুল। ২০০০-০১ মৌসুমে লিস্ট-এ ক্রিকেটে অভিষেক ঘটা মোহাম্মদ আশরাফুল ক্যারিয়ারের প্রথম ২৩৯টি লিস্ট-এ ম্যাচে মাত্র পাঁচটি শতক হাঁকিয়েছিলেন। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১১ ম্যাচে হাঁকিয়েছেন তিনটি শতক।
আজকে মোহামেডানের বিপক্ষে ১২৪ বলে ১৩টি চার এবং তিনটি ছয়ের মারে ক্যারিয়ার সেরা ১২৭ রানের ইনিংস খেলেছেন আশরাফুল। ডিপিএলের চলতি আসরে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি তিনটি শতক হাঁকিয়েছেন তিনি। তবে তিনটি শতক হাঁকানোর পরেও তার আক্ষেপ থেকে যাবে।
ডিপিএলে ১১ ম্যাচে তিনটি শতকের বিপরীতে তিন ইনিংসে তিনি ফিরেছেন খালি হাতে। আসরের প্রথম ম্যাচে প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে ১৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন আশরাফুল। পরের ম্যাচে শক্তিশালী আবাহনীর বিপক্ষে ২৫ রানের ইনিংস খেলার পর প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে আসরের প্রথম শতক হাঁকিয়ে ১০৪ রানে থামেন।
পরবর্তী তিন ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে যথাক্রমে আট, শূন্য এবং শূন্য।
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ১০২* রানের ইনিংস খেলার পর আবারও রানের খাতা খোলার আগে সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন আশরাফুল। আজকের ম্যাচে ১২৭ রানের ইনিংস খেলার আগের দুই ম্যাচে শেখ জামালের বিপক্ষে ১৬ রান এবং রূপগঞ্জের বিপক্ষে ৬৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।
তিনটি শতক হাঁকানোর পরেও ডিপিএলে এখন পর্যন্ত ১১ ম্যাচে ৪৬.০০ ব্যাটিং গড়ে আশরাফুল করেছেন ৪৬০ রান।
ফিচার ইমেজ: AFP