মানুষ কেন মারা যায়?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে সভ্যতার প্রথম দিন থেকেই। ধর্ম আর সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে চোখের সামনে একের পর এক প্রিয়জনকে হারাতে দেখে মানুষ কাঁদে। কোনো গোধুলিতে আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে হারানো মানুষটির মুখ দেখার চেষ্টা করে। তারপর ব্যাখ্যা করতে চায়, মানুষকে কেন মরতে হয়। সৃষ্টি হয় সেই সংস্কৃতির লালিত বিশ্বাস। পরে যাকে আখ্যা দেয়া হয় মিথ বলে।
১৮৮৬ সালে এন্ড্রু ল্যাঙ মৃত্যুর উৎস নিয়ে প্রচলিত মিথগুলোকে সামনে আনেন। ১৯১৭ সালে ফ্রাঞ্জ বোয়াস উত্তর আমেরিকার রেড ইণ্ডিয়ানদের মিথগুলো নিয়ে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ১৯৩৬ সালে হারম্যান বোম্যান এবং ১৯৫১ সালে হ্যান্স আব্রাহামসন আফ্রিকান মিথ নিয়ে কাজ করে তা প্রকাশ করেন। যদিও মৃত্যু সম্বন্ধে দুটি আলাদা সংস্কৃতির ধারণা প্রায়শ ভিন্ন। তথাপি বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের দরুণ এবং তুলনামূলক অধ্যয়নের সুবিধার জন্য এদেরকে শ্রেণীকরণ করা হয়।
মৃত্যু: ঈশ্বরের ইশতেহার
আধুনিক বিজ্ঞান বলছে মানুষের জৈবিক গঠন এবং সীমাবদ্ধতার কারণে মূলগতভাবেই মৃত্যু অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুকে প্রায়শ দেখা হয়েছে ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে। পূর্ব আফ্রিকার লুগবারা সংস্কৃতিতে যদিও পূর্বপুরুষদেরকে দৈনন্দিন জীবনের নিয়ন্তা বলে বিশ্বাস করে। তথাপি মৃত্যুকে মনে করে ঈশ্বরের কাজ। ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের বিশ্বাস, দেবতাদের একপাল গরু আছে। স্বর্গে দেবতারা যখন একটা গরু জবাই করে, পৃথিবীতে তখন একজন মানুষের মৃত্যু ঘটে।
প্রাচীন গ্রিসে মহাকবি হোমার তার ইলিয়াডে মৃত্যুকে রূপায়িত করেছেন শৈল্পিকভাবে। মৃত্যুকে তুলনা করা হয়েছে গাছের পাতার সাথে। যখন শীতকাল আসে, সমস্ত পাতা একে একে ঝরে যায়। স্থান করে নেয় নতুন পাতা। মানুষের প্রত্যেকটি প্রজন্ম এভাবে ঝরে পড়ে পরবর্তী প্রজন্মকে জায়গা করে দেবার জন্য।
গিলগামেশ প্রাচীন ব্যবিলনের চিহ্নস্বরূপ সবচেয়ে প্রাচীন মহাকাব্য। প্রিয় বন্ধু এনকিদুর মৃত্যুর পর গিলগামেশ তাকে পুনরায় জীবিত ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। উতনা পিশতিমের সাথে কথা বলে নিয়ে আসেন জীবনলতা।
কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে একটি সাপ কোথা থেকে এসে তা খেয়ে ফেলে। সেজন্যই সাপের মৃত্যু হয় না। কেবল খোলস বদল করে বেঁচে থাকে। গিলগামেশ দেবতাদের ইচ্ছাকে মেনে নিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। মহাকাব্য বলছে-
Gilgamesh, where are you roaming?
You shall not find the life you search for!
When the gods created mankind,
They destined death for man,
But life they kept firmly in their own hands.
প্রাচীন মিশরে ধারণা করা হতো, আগে মৃত্যুর অস্তিত্বই ছিলো না। কিন্তু তারপর মানুষ, পৃথিবী, এমনকি দেবতাদেরও মৃত্যুর নিয়তি মেনে নিতে হলো। তাহিতির সংস্কৃতিতে প্রচলিত মিথ একটু অন্যরকম। মানুষের ভাগ্য রচনা নিয়ে দেবতা হিনা এবং তেফাতুওর মধ্যে মতানৈক্য হয়। হিনার দাবি ছিলো মানষের মৃত্যু হবে এবং পুনরায় জীবিত করা হবে। কিন্তু তেফাতুও গোঁ ধরেছিলো। যেহেতু পৃথিবীটাই ধ্বংস হয়ে যাবে, মানুষেরও একই পরিণতি বরণ করা উচিৎ। পরে হিনাকে তৃপ্ত হতে হলো চাঁদকে নিয়েই। এজন্যই চাঁদ মারা যায় এবং আবার ফিরে আসে।
ঈশ্বরের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে মৃত্যুর ধারণা সমস্যাও তৈরি করেছিলো কিছু সংস্কৃতিতে। দক্ষিণ আমেরিকার পাটাগোনিয়াদের কথাই ধরা যাক। তারা ভাবতো মৃত্যুর জন্য দায়ী দেবতা ওয়াইতাওনিয়া। কিন্তু তারা একে সহজভাবে মেনে নেয়নি। বরং প্রিয়জনের মৃত্যুতে তারা প্রায়ই ক্রোধান্বিত হয়েছে। প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে ওই দেবতার পশু হত্যার মধ্য দিয়ে। অনুরূপ ঘটেছে অন্য অনেক সংস্কৃতিতেও।
মৃত্যুর উত্তরাধিকার
এ মতে প্রথম মৃত্যুটা কোনো স্বর্গীয় সত্তা কিংবা পৌরাণিক সত্তার। যার ফলাফল হিসেবে মানুষের মৃত্যুর সূত্রপাত। এখানে মানুষের কোনো ভুল কিংবা দায় জড়িত না। জার্মান নৃবিজ্ঞানী এডলফ ই. জেনসন ডেমা হিসেবে একে নামকরণ করেন। ডেমা বলতে সেই পৌরাণিক সত্তাকে বোঝায়, যার সাথে সংশ্লিষ্ট করা হয় মানুষের উৎপত্তি এবং বিশেষ সময় পরে মারা যেতে হয়। কিছু কিছু মিথে ডেমাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু কিছু মিথের দাবি ডেমা স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নেয়। ডেমার জীবন এবং মৃত্যু পরে মানুষের নিয়তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। ডেমার বাইরেও উদাহরণ আছে। উত্তর আমেরিকার সুস্বাপ ইণ্ডিয়ানদের মধ্যে বলা হয়, আদিতে মৃত্যু ছিলো না। প্রথমে এক স্বর্গীয় প্রধানের ছেলে মারা যায়। তারপর থেকে মানুষেরও মৃত্যু হতে থাকে।
সংঘর্ষের পরিণাম হিসাবে মৃত্যু
মানুষের মৃত্যুকে মাঝে মাঝে দেখা হয়েছে আদিম দেবতাদের কোনো সংঘর্ষের পরিণাম হিসেবে। মজার একটি মিথ আছে পূর্ব ইন্দোনেশিয়ায়। পাথর এবং কলার মধ্যে ঝগড়া হচ্ছিলো কীভাবে মানুষকে তৈরি করা যায়, তা নিয়ে। একপর্যায়ে পাথর কলাকে হত্যা করে ফেললো। কিন্তু পরের দিন কলার সন্তানেরা পাথরের মুখোমুখি হলো এবং পিতার পক্ষে ঝগড়ায় লিপ্ত হলো। শেষমেশ বাধ্য হয়ে পাথর পরাজয় মেনে নিতে রাজি হলো। শুধু একটি শর্ত। কলা যেভাবে চেয়েছে, মানুষের সৃষ্টি সেভাবেই হবে। কিন্তু মানুষকে মরতে হবে, কলা যেমনটা মারা গেলো। সেই থেকে মৃত্যুর সূচনা।
নীলনদের দক্ষিণের উঁচু ভূমিতে শিল্লুক সংস্কৃতিতে মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে অন্যভাবে। এখানে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় দেবতা নিকাং এবং তার ভাই দুয়াত। নির্বাচন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে দুয়াত রাজা হলো। কিন্তু নিকাং সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারলো না। রাজদণ্ডের অংশবিশেষ চুরি করে অনুসারীদের নিয়ে পৃথক হয়ে গেলো। দুয়াত ভাইকে ধরার জন্য বের হলেও পারলেন না। তাই ভাইয়ের দিকে লাঠি উচিয়ে বললেন,
Take this stick to bury your people!
পৃথিবীতে মৃত্যু আসার সূত্রপাত এভাবেই।
কঙ্গোর নিম্নভূমিতেও স্বর্গীয় সংঘর্ষের মিথ প্রচলিত। মালির দোগন সংস্কৃতিতে যে সংঘর্ষের কথা বলা হয়, তাতে আহত হয় দেবতা ওগো। যার ফলাফল ছিলো দেবতা স্বয়ং এবং সেই সাথে মানুষের মৃত্যু। উত্তর আমেরিকার ব্ল্যাকফিট ইণ্ডিয়ানদের মাঝে প্রচলিত আছে বুড়ো-বুড়ির মিথ। তাদের ভেতর ঝগড়া হয় মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়া নিয়ে। মানুষের জীবন কী হবে তা নিয়েও। এর সমাপ্তি যথারীতি আগের মতোই। মানুষের মৃত্যু নিয়ে ঐক্যে পৌঁছায় তারা। কিছু মিথে অবশ্য ঝগড়াকারীরা যমজ হয়।
অন্যরূপে এই সংঘর্ষ দেখা যায় চন্দ্র ও সূর্যের মাঝে। বিশেষত আফ্রিকায়। অবশ্য চন্দ্র ও সূর্য এখানে পৌরাণিক সত্তা। ফিজি দ্বীপে প্রচলিত মিথে সংঘর্ষ হয় চন্দ্র আর ইঁদুরের মধ্যে। চন্দ্র চায় মানুষ বুড়ো হোক। তারপর অদৃশ্য হয়ে যাক। তারপর ফিরে আসুক তরুণ অবস্থায়। যেমনটা চাঁদের ক্ষেত্রে ঘটে। কিন্তু ইঁদুর চাচ্ছিলো মানুষ মারা যাক। যেমনটা ইঁদুরের ক্ষেত্রে ঘটে। দিনশেষে ইঁদুরের সিদ্ধান্তেরই জয় হয়।
ক্যারোলিন দ্বীপে মিথ বলে, গোড়াতে মানুষ চাঁদের মতোই ছিলো। সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি এবং তারপর পুনরায় তারুণ্যে ফিরে আসা। কিন্তু এক অপদেবতা মানুষকে প্রতারিত করে। বুদ্ধি দেয় এই চক্রে আর জেগে না ওঠার। মানুষ তা-ই করে। এভাবেই মৃত্যুর প্রথম আগমন। ইন্দোনেশিয়াতেও কাছাকাছি ধরণের মিথ দেখা যায়।
ঈশ্বরের চালাকি কিংবা অসতর্কতা
মাঝে মাঝে মৃত্যুকে চিহ্নিত করা হয় ঈশ্বরের চালাকি হিসেবে। ক্যালিফোর্নিয়ার আদি অধিবাসী সংস্কৃতির মাঝেই এই ধরনের মিথ প্রচলিত। প্রায়শ সে ভালো-মন্দের মিশেল হিশেবে উপস্থাপিত হয়। পশ্চিম ভারতীয় ভুডু ধর্মে মৃত্যুর দেবতা জেদে। প্রকৃতপক্ষে সে একজন ষড়যন্ত্রকারী। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, ধনী থেকে গরীব সবাইকে সমান পরিণাম ভোগ করতে হবে। এভাবে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
দোগন মিথে বলা হয়, প্রথম আনদুমবুলু মৃত্যুবরণ করেনি। বরং সাপে পরিণত হয়ে গেছে। একবার দেবতা আম্মা এক তরুণীর কাছে গরু বিক্রি করতে চাইলেন। তরুণীটি দাম জানতে চাইলো। দেবতা জানালেন, কেবলমাত্র মৃত্যুই এই আকর্ষণীয় গরুর দাম হতে পারে। তরুণী কিনলো তবু। গরু নিয়ে ঘরে ফিরে আসার অল্প সময়ের মধ্যেই তার স্বামী মারা গেলো। সে দেবতাকে ধিক্কার দিতে গেলে আম্মা স্মরণ করিয়ে দিলেন মূল্য বিনিময়ের কথা। এবার তরুণী গরুটি ফেরত দিতে চাইলো। কিন্তু দেবতা ফেরত নিতে অস্বীকার করে চলে গেলেন। এভাবেই মানুষের মাঝে প্রথম মৃত্যুর আগমন।
কিছু মিথে মৃত্যুকে পৌরানিক সত্তার অসতর্কতা বা নির্বুদ্ধিতাকে ঈঙ্গিত করা হয়েছে। বোম্যান এই ধরনের মিথের নাম দেন ‘ব্যর্থ সংবাদ’। পশ্চিম আফ্রিকার একটা মিথের কথা এই প্রসঙ্গে আনা যেতে পারে। ঈশ্বর মানুষের কাছে গিরগিটি মারফত সংবাদ পাঠান, মানুষ চিরকাল বাঁচবে। গিরগিটির কোনো তাড়া ছিলো না। মাঝপথে একটু দেরি করতে করতে দুই সপ্তাহ লাগিয়ে দেয়। ইতোমধ্যে একটা সাপ গিয়ে ঈশ্বরের সংবাদ শিখে ফেলে। আর মানুষের কাছে খবর পৌছে দেয়, মানুষকে মৃত্যুর কাছে বন্দী ঈশ্বরের বিধান। এই ঘটনার পর ঈশ্বর গিরগিটি আর সাপ উভয়কেই অভিশাপ দেন। মানুষ তাদের দেখামাত্র হত্যা করবে। কিন্তু মানুষকে দেয়া খবর আর পরিবর্তন করা যায়নি।
মানুষের ভুল আর তার পরিণাম
কিছু মিথে দেখা যায় মানুষের মারাত্মক ভুলের খেসারত হিসেবে মৃত্যুকে নিয়তির সাথে বেঁধে দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকায় তামানাকো গোত্রের মধ্যে এর উদাহরণ। পৃথিবী সৃষ্টি হয় মূলত দুই ভাইয়ের হাতে। তাদের একজনের নাম আমালিভাকা। একসময় তিনি মানুষের সাথে বসবাস করতেন। যখন পৃথিবী ছেড়ে স্বর্গের পথে রওনা হবেন তখন সবাইকে শরীরের চামড়া খুলতে বললেন। যদি মানুষ এমনটা করে তবে যৌবন ফিরে আসবে। সবাই তার কথা শুনলো। কেবল এক বৃদ্ধা মানলো না। দেবতার কথায় সন্দেহ করার কারণে তাকে অভিশাপ দেয়া হলো। সেটাই মানুষের মাঝে মৃত্যু আনার প্রথম কারণ।
মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে ঈশ্বরের আদেশ লঙ্ঘনকে দায়ী করা হয় বিভিন্ন মিথে। সবচেয়ে জনপ্রিয় উদাহরণ বাইবেলে আদমের ঈশ্বরের কথা অমান্যকরণ। স্বর্গে থাকা অবস্থায় আদম ও ইভ শুধু মৃত্যু না, সকল প্রকার মন্দ প্রভাব থেকে মুক্ত ছিলো। ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করার কারণে প্রায়শ্চিত্য হিসেবে বরণ করতে করুণ পরিণতি।
শুধু একটা সিদ্ধান্ত
মৃত্যু মাঝে মাঝে মানুষের মাধ্যমে ভুল কিছু বেছে নেয়ার ফলাফল হিসেবে আসে। হলোহলোদের মাঝে এমন মিথ দেখা যায়, যেখানে ঈশ্বর মানুষের সামনে হাজির হয়। দুই হাতে তার দুটি বাদাম। একটি জীবনের নির্দেশক আর অন্যটা মৃত্যুর। মানুষ ভুলটা বেছে নেয়, ফলে তার জন্য মৃত্যুকে বরাদ্দ করা হয়। অন্যদিকে সাপ এই পরীক্ষায় যথাযথভাবে উত্তীর্ণ হয় বলে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যায়।
সুলাওয়েসির তোরাজা মিথে দেখা যায়, একবার ঈশ্বর আকাশ থেকে পাথর ফেলেন মানুষের জন্য উপহার হিসেবে। মানুষ বুঝতে না পারার কারণে তা প্রত্যাখ্যান করে। পরের দফায় ঈশ্বর উপর থেকে কলা ফেলেন। এবারও মানুষ বুঝতে না পেরে গ্রহণ করে। পরে জানা যায়, পাথর ছিলো জীবনের জন্য আর কলা মৃত্যুর। মানুষ বুঝতে পারে না জানার দরুণ কত বড় ভুল করে ফেলেছে সে। এরকম মৃত্যুগুলোতে মানুষ বুঝে বা না বুঝে এমন কিছু বেছে নেয়, যার ফলাফল হিসেবে আসে মৃত্যু।
মৃত্যু মানে মুক্তি
মৃত্যু সম্পর্কে যত মিথ গড়ে উঠেছে, তার মধ্যে মানুষের ইচ্ছার প্রাধান্য অন্যতম। এই ধরনের মিথে দেখা যায় জীবনের একঘেয়েমি, অসুখ, দুশ্চিন্তা এবং অন্যান্য বিরক্তি থেকে মুক্তির জন্য মানুষ নিজে মৃত্যুকে আহবান করেছে। ক্যামেরুনের মিথে দেখা যায় ঈশ্বর প্রথম বুঝতে পারেন না, কেন মানুষ এতটা নির্জীব। সহসা মৃত্যু তাকে দেখিয়ে দেয় প্লেগের মতো ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষের চিৎকার। একঘেয়েমির কারণে মানুষের অস্তিত্বহীন হবার আকাঙ্ক্ষা। গালা মিথে বলা হয়, পৃথিবীতে বিদ্যমান অনাচার, অত্যাচার ও অন্যায় থেকে মুক্তির জন্য মানুষ মৃত্যু চেয়ে নিয়েছে। নীলনদের উচ্চভূমির দিকে মৃত্যুর জন্য জনসংখ্যাকে বৃদ্ধিকে দায়ী করা হয়।
মৃত্যুবিহীন জীবন নেই, আর জীবনবিহীন মৃত্যু অর্থহীন। মৃত্যুর দুয়ার দিয়ে জীবন প্রবেশ করে অন্য এক জীবনে। ইসলাম এবং খ্রিস্টধর্মের মতো কিছু ধর্ম মনে করে মৃত্যুর পরে অনন্ত জীবন। অন্যদিকে ভারতীয় সংস্কৃতির মতো কেউ কেউ জন্ম আর মৃত্যুকে আপেক্ষিক বলে উপস্থাপন করে। সত্তার দুটি ভিন্ন অবস্থা মাত্র। তারপরেও মৃত্যু এক রহস্যময় দুর্বোধ্য কিছু হিসেবেই থেকে গেছে। মানুষ থেকে গেছে অন্ধকারে। সেই গহবরে সাহায্যের জন্য, সাময়িকভাবে আশ্বস্ত করার জন্য জন্ম নিয়েছে মিথ। মিথের সফলতা এখানেই।