Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হঠাৎ বিপজ্জনক প্রাণীর মুখোমুখি হলে আপনার কী করা উচিত?

ধরুন, হুট করে কোনো বন্যপ্রাণী লোকালয়ে চলে আসলো এবং সেটি ঠিক আপনার সামনেই এসে পড়লো। কিংবা ধরুন, আপনি এডভেঞ্চারের খোঁজে কিংবা ভ্রমণ করতে কোনো বন বা প্রাকৃতিক পরিবেশে গিয়ে কোনো বন্যপ্রাণীর এলাকায় উপস্থিত হলেন। বলুনন তো, তখন কী করবেন? হয়তো এর উত্তর আপনার জানা নেই, কিংবা হয়তো এর উত্তর আপনার জানার দরকারও নেই। কারণ আপনি ভাবছেন, আপনি কখনো এরকম কোথাও যাবেন না। অবশ্য বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আপনার ভাবনাটা অনেকটাই সঠিক। কেননা, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের কয়েকটি অঞ্চল ও সুন্দরবন বাদে সাধারণত এরকম পরিস্থিতিতে কাউকে পড়তে হয় না। তবুও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিন্তু নানা ধরনের বিপজ্জনক প্রাণীর দেখা কম-বেশি পাওয়া যায়।

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে এক ব্যক্তি পাহাড়ি রাস্তা ধরে দৌঁড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি কুগার বা মাউন্টেইন লায়নের আক্রমণের শিকার হন। তিনি খুবই ভাগ্যবান যে, সেই কুগারটির সাথে লড়াই করে সেটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তিনি জীবিত ফিরে আসতে পেরেছিলেন, যদিও তিনি খানিকটা আহত হয়েছিলেন।

কুগার বা মাউন্টেন লায়ন বাঘ ও সিংহের চেয়ে আকারে অনেক ছোট হলেও এরা প্রাণঘাতী; Image source: Getty via complex.com

এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়া মানুষের জন্য অস্বাভাবিক নয়। পৃথিবীর অনেক অঞ্চলের মানুষের বসতি ভয়ংকর সব বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থলের পাশাপাশিই। এছাড়া সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেও কেউ এরকম আক্রমণের শিকার হতে পারেন। আবার বিদেশ ভ্রমণে গিয়েও অনেকে অচেনা কোনো ভয়ানক প্রাণীর মুখোমুখি হতে পারেন।

বেশিরভাগ বিপজ্জনক প্রাণীদের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। কিছু কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে তারা একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়। তখনই আপনি আক্রমণের শিকার হতে পারেন। যেমন:

  •  যদি হঠাৎ এদের বসবাসের এলাকায় ঢুকে পড়েন।
  •  যদি সেই প্রাণীটি আপনাকে তার নিজের কিংবা তার বাচ্চার নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে।
  •  যদি আপনার কাছে কোনো খাবার থাকে কিংবা আপনার গায়ে খাবারের ঘ্রাণ লেগে থাকে, তাহলে খাদ্য লাভের আশায় এরা আপনাকে তাড়া করতে পারে।
  •  আপনার তাবুর ভেতর খাবার রাখলে সেটির ঘ্রাণ পেয়ে এরা আপনার তাঁবুর ভেতরে ঢুকে পড়তে পারে।
  •  হঠাৎ এদের আশেপাশে উপস্থিত হয়ে এদেরকে চমকে দিলে।
  •  কোনো কারণে এরা রাগান্বিত বা ক্ষুধার্ত থাকলে।
  •  কোণঠাসা হয়ে পড়লে।

যেহেতু বেশিরভাগ বন্যপ্রাণীই মানুষের তুলনায় শক্তিশালী, কিংবা শক্তিশালী না হলেও কয়েকটা দিক থেকে বিপজ্জনক, তাই তাদের আক্রমণ থেকে বেঁচে ফেরাটা খুবই কঠিন ব্যাপার। তবুও এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ার আগে ও পরে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যায়, যার ফলে রক্ষা পেতে পারে একজন মানুষের মূল্যবান জীবন। তাই, সেগুলো জেনে রাখা ভালো।

ভাল্লুক

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরনের ভাল্লুক থাকলেও এদেরকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়- (১) কালো ভাল্লুক, (২) খয়েরী বা গ্রিজলি ভাল্লুক ও (৩) মেরু ভাল্লুক। রঙ ও গঠনের পাশাপাশি এদের আচরণ ও স্বভাবে ভিন্নতা রয়েছে। ভাল্লুকেরা মূলত মাংসাশী। তবে এরা সর্বভূকও হতে পারে। ভাল্লুকের আক্রমণ থেকে বাঁচতে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

কালো ভাল্লুক। মায়ের সাথে শাবকেরা; Image source: wiseaboutbears.org

সতর্কতা: ভাল্লুক আক্রমণ করার পূর্বেই সাবধান থাকতে হবে যেন ভাল্লুকের আক্রমণের শিকার কিংবা ভাল্লুকের মুখোমুখি হতে না হয়। ভাল্লুকের সাথে সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে আপনি যা যা করতে পারেন-

১. বন্য পরিবেশে তাবুর ভেতর বা আপনার কাছাকাছি খাবার বা খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ রাখবেন না। রাখলেও এমনভাবে রাখতে হবে, যেন তার সামান্যতম ঘ্রাণও ছড়িয়ে পড়তে না পারে। ভাল্লুকের ঘ্রাণ শক্তি কল্পনাতীত প্রখর। যেকোনো কিছুর সামান্য ঘ্রাণও ভাল্লুক অনেক দূর থেকে টের পায়।
২. হাঁটার সময় ঘন্টা বা কোনোকিছুর মাধ্যমে অনবরত শব্দ করে যান, অথবা কথা বলতে থাকুন যেন আশেপাশে ভাল্লুক থাকলেও দূর থেকেই সে বুঝতে পারে যে, কেউ আসছে। কেননা, হঠাৎ তাকে চমকে দিলে প্রায় নিশ্চিতভাবেই সে আক্রমণ করে বসবে।
৩. একাকী কোনো ভাল্লুকের ছানা দেখলেই বুঝে নেবেন, আশেপাশেই তার মা আছে। সেক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করে যত দ্রুত সম্ভব সে এলাকা ত্যাগ করুন আর মৃদু শব্দ করতে থাকুন, যেন বোঝা যায় আপনি সেই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
৪. যে এলাকায় ভাল্লুক থাকার সম্ভাবনা আছে, সেখানে একা চলবেন না। কমপক্ষে তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বা তার চেয়ে বড় দল গঠন করে চলুন।
৫. মৃত কোনো প্রাণীর আশেপাশে যাবেন না। ভাল্লুক সেটাকে খাবার হিসেবে বিবেচনা করে থাকলে, সে ভাববে আপনি তার খাবারে ভাগ বসাতে এসেছেন।
৬. বন্যপ্রাণীদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য জন্য একধরনের বিশেষ স্প্রে রয়েছে। ভাল্লুকের আক্রমণের কথা মাথায় রেখে সম্ভব হলে সেটি সাথে নেওয়া উচিত।

গ্রিজলী ভাল্লুক নিজেকে বা নিজের বাচ্চাকে রক্ষা করতে গিয়ে অত্যন্ত আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে © ISTOCK via Montana Public Radio

যদি মুখোমুখি হন বা আক্রান্ত হন: বেশিরভাগ ভয়ানক প্রাণীর মুখোমুখি হওয়ার পর মানুষের যে সহজাত প্রবণতা কাজ করে, তা হলো দৌঁড়ে পালানো। কিন্তু ভাল্লুকসহ প্রায় সকল মাংসাশী প্রাণীর গতিই মানুষের চেয়ে বেশি। তাই ভাল্লুক যদি আপনাকে একবার দেখে ফেলে, তাহলে কোনো অবস্থাতেই দৌঁড় দেওয়া যাবে না। দৌঁড় দিলে সে তার সহজাত প্রবৃত্তি থেকেই আপনাকে শিকার হিসেবে তাড়া করবে। হঠাৎ ভাল্লুকের সামনে বা দৃষ্টিতে পড়ে গেলে একদম স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যান। তখন একইসাথে আরো কয়েকটা কাজ করতে হবে আপনাকে।

১. নিজেকে যথাসম্ভব বড় দেখানোর জন্য গায়ের কাপড়টি সম্ভব হলে ছড়িয়ে ধরুন। সাথে ব্যাগ থাকলে তা মাথার উপর ধরে রাখুন। আপনার আকৃতি যতটা বড় ও উঁচু মনে হবে, ভাল্লুকের আক্রমণের ইচ্ছা ততটাই কমবে।

২. ভাল্লুকের চোখের দিকে সরাসরি তাকাবেন না। চোখের দিকে না তাকিয়ে কথা বলার চেষ্টা করুন। এতে ভাল্লুক বুঝতে পারে যে, আপনি তার শিকার নন। তবে ভুলেও জোরে চিৎকার বা তর্জন-গর্জন করতে যাবেন না।

৩. ভাল্লুকের দিকে মুখ রেখে, খানিকটা মাথা নুইয়ে ধীরে ধীরে পিছনে অথবা পাশের দিকে হেঁটে এলাকা ত্যাগ করার চেষ্টা করুন। তাকে বুঝতে দিন যে, আপনি তার জন্য হুমকি না, এটা তারই এলাকা এবং আপনি তার আধিপত্য মেনে নিয়েছেন। ভাল্লুকের দিকে পিঠ ঘোরাবেন না।

৪. আপনার প্রতিটি নড়াচড়া ধীরস্থির হতে হবে। সেই সাথে সম্ভব হলে হাত দুটো মাথার উপর নিয়ে আস্তে আস্তে নাড়তে থাকুন।

৫. আপনার সাথে কুকুর থাকলে ভাল্লুক দেখামাত্রই সেটা চেঁচানো শুরু করতে পারে। তাকে শান্ত করার চেষ্টা করুন।

৬. সাথে ছোট বাচ্চা থাকলে প্রথমেই তাকে ধীরে ধীরে কোলে তুলে নিন।

৭. তাঁবুর ভেতর ভাল্লুক ঢুকে পড়লে, যথাসম্ভব স্থির থাকার চেষ্টা করুন, এবং ধীরে ধীরে এমন কোনোদিকে সরে যান, যেন ভাল্লুকটি চাইলেই তাঁবু থেকে বের হয়ে যাওয়ার রাস্তা খুঁজে পায়। নিজেকে রক্ষা করার জন্য ভাল্লুকের দিকে কোনো খাবার ছুঁড়ে দেবেন না।

৮. আশেপাশে ভাল্লুকের ছানা থাকলে, সেটির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ধীরে ধীরে দূরে সরে যান। যদি আপনার মনে হয় ভাল্লুকের একাকী কোনো বাচ্চা তার মাকে হারিয়েছে, তাহলে তার কাছে না গিয়ে অথবা তাকে খাবার না দিয়ে বনবিভাগের সাথে যোগাযোগ করুন।

৯. যদি ভাল্লুক তার পেছনের পায়ে ভর করে দাঁড়িয়েছে বলে মনে হয়, তাহলে খুব সম্ভবত সে আক্রমণ করবে না। তবে আপনাকে ধাওয়া দিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া দেখতে চাইতে পারে। সেক্ষেত্রেও দৌঁড়াবেন না; সে হয়তো আপনাকে পরীক্ষা করছে।

১০. যদি ভাল্লুক তার চারপায়েই ভর করে দাঁড়ায় এবং তার কানগুলো পেছনের দিকে খাঁড়া হয়ে যায়, তাহলে সতর্ক হোন; এটা আক্রমণের পূর্ব লক্ষণ। ভাল্লুক আক্রমণাত্মকভাবে আপনার দিকে এগোলে, হাতে কোনোকিছু থাকলে সেটা ব্যবহার করে জোরালো শব্দ তৈরির চেষ্টা করুন।

মেরু ভাল্লুক আপনাকে আক্রমণ করলে ভয় দেখানোর জন্য নয়, আপনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্য নিয়েই আক্রমণ করবে © Ondrej Prosicky/Shutterstock

১১. যদি ভাল্লুক আক্রমণ করেই বসে, তাহলেও দৌঁড়াবেন না। কেননা, এতে কোনো লাভ নেই, শুধু আপনার মূল্যবান শক্তিই অপচয় হবে। শুধুমাত্র খুব কাছাকাছি কোনো বাড়ি, গাড়ি বা নিরাপদ আশ্রয় থাকলেই কেবল প্রাণপণে দৌঁড় দিন।

১২. শুধুমাত্র গ্রিজলী বা খয়েরী রঙের ভাল্লুক আক্রমণ করলে পেট মাটিতে লাগিয়ে শুয়ে পড়ুন, পা দুটো ছড়িয়ে দিন যেন ভাল্লুক আপনাকে উল্টাতে না পারে এবং মরার মতো পড়ে থাকুন। হাত দুটো দিয়ে ঘাড় ঢেকে রাখুন। কেননা, ভাল্লুকের লক্ষ্য হবে মূলত আপনার ঘাড়। কিছুক্ষণ পর আপনার তরফ থেকে সাড়া না পেয়ে সে এমনিতেই চলে যেতে পারে।

১৩. পূর্বোক্ত উপায় অবলম্বন করার পরও যদি গ্রিজলী ভাল্লুকের আক্রমণ থামার কোনো লক্ষণ না দেখা যায়, কিংবা কালো ভাল্লুক অথবা মেরু ভাল্লুক আপনাকে আক্রমণ করে, তাহলে আপনার জীবন রক্ষার্থে শেষ শক্তিটুকু পর্যন্ত ব্যবহার করে লড়াই করুন। হাতের কাছে যা পান তা দিয়ে, কিংবা খালি হাতের মুষ্ঠি, কনুই, হাঁটু অথবা পা ব্যবহার করে যথাসম্ভব জোরে ভাল্লুকের চোখ ও নাকে-মুখে মারণাঘাত হানার চেষ্টা করুন এবং করতে থাকুন। ভাগ্য ভালো থাকলে ভাল্লুক আহত হয়ে পালিয়ে যেতে পারে এবং আপনি প্রাণে বেঁচে যেতে পারেন।

১৪. স্প্রে সাথে থাকলে, ভাল্লুক মোটামুটি কাছাকাছি আসার পর তার চোখ ও নাক বরাবর স্প্রে করুন। সে কিছুক্ষণের জন্য দৃষ্টি ও ঘ্রাণশক্তি হারাবে। এ সুযোগে আপনি দ্রুত পালাতে পারবেন।

হাঙর

হাঙরের আক্রমণ খুব বেশি দুর্লভ নয়। সমুদ্রের তীরে নেমে গোসল করার সময় এই রাক্ষুসে জলচর দানব যেকোনো মুহূর্তে হামলে পড়তে পারে।

সতর্কতা:

১. খোলা সমুদ্রে মাছ ধরা নৌকা বা ট্রলারের আশেপাশে থাকবেন না। এগুলোতে মাছের গন্ধ লেগে থাকে বলে এগুলোর আশেপাশে হাঙর থাকার সম্ভাবনা বেশি।
২. যেখানে হাঙরের আনাগোনা বেশি, সেখানে গভীর সমুদ্রে যাওয়া উচিত হবে না। গেলেও আগে থেকেই কাউকে জানিয়ে রাখবেন, যেন প্রয়োজন হলেই সাথে সাথে আপনাকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকে।
৩. সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময় পানির উপর অনুভূমিক হয়ে বা পুরো শরীর ভাসিয়ে সাঁতার কাটা বিপজ্জনক। এমনভাবে ভাসতে হবে বা ধীরে ধীরে সাঁতার কাটতে হবে, যেন মনে হয় পানির মধ্যে উল্লম্বভাবে দাঁড়িয়ে আছেন বা হেঁটে চলেছেন।
৪. মাছ ধরা হচ্ছে, মাছ তোলা হচ্ছে কিংবা গাঙচিল মাছ শিকার করছে- সমুদ্রের এমন জায়গায় সাঁতার কাটতে নামবেন না।
৫. ভুলেও সমুদ্রের পানিতে প্রস্রাব করবেন না। আপনার শরীরে যদি কোনো কাঁচা ক্ষত, অর্থাৎ এখনো শুকায়নি এমন ক্ষত থাকে, তাহলেও সমুদ্রের পানিতে নামা উচিত হবে না।
৬. আলোতে ঝলমল করে, এমন কোনোকিছু, বিশেষ করে অলংকার পরে পানিতে নামবেন না।

হাঙরদের মধ্যে ‘গ্রেট হোয়াইট শার্ক’ মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি; Image source: REX/Shutterstock via NewScientist

যদি মুখোমুখি বা আক্রান্ত হন: মানুষ হাঙরের স্বাভাবিক শিকার নয়। তাই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে হাঙর আপনাকে আক্রমণ করার সম্ভাবনা কম। কিন্তু তবুও যদি হঠাৎ হাঙরের সামনে পড়েই যান, কিংবা আক্রমণ করে বসে তাহলে আপনার করণীয় হবে-

১. হাঙর দেখামাত্রই একদম স্থির হয়ে যান। পানির নিচে মুখ ডুবিয়ে হাঙরের গতিবিধি লক্ষ্য করুন, সরাসরি হাঙরের চোখের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করার চেষ্টা করুন এবং হাত-পা খানিকটা ছড়িয়ে উল্লম্বভাবে ভেসে থাকুন; হাঙরকে আপনার আকৃতি বুঝতে দিন। হাঙর সাধারণত মানুষ শিকার করে অভ্যস্ত নয়, তাই আপনাকে মানুষ হিসেবে চিনতে পারলে সে আক্রমণ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
২. আপনি একদম স্থির থাকলে হাঙর শান্ত ভঙ্গিতে আপনার একদম কাছে এসে আপনার গায়ে গেঁষে নাক দিয়ে আপনার ঘ্রাণ শুঁকতে পারে। তখনও স্থির থাকুন।
৩. হাঙরের দিকে দৃষ্টি রেখে ধীরে ধীরে হাত-পা নেড়ে তীরের দিকে সাঁতরে আসুন। হাত-পা বেশি নাড়াচাড়া করে কিংবা বেশি পানি ঝাপটে হাঙরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সমস্যা। এতে সে উত্তেজিত হয়ে আক্রমণ করতে পারে।
৪. হাঙর বেশ খানিকটা দূরে থাকলে তীরের দিকে ইশারা করে হাত নাড়ুন এবং স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করে ‘শার্ক’ বা ‘হেল্প’ বলে ডাকতে থাকুন; দূর থেকে আপনার গলার স্বর শোনা না গেলেও দূরবীন দিয়ে দেখলে যেন আপনার মুখের ভাষাটা বোঝা যায়।
৫. হাঙর যদি আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে আপনার দিকে তেড়ে আসে, তাহলে তার নাক বরাবর ঘুষি মারার চেষ্টা করুন। যদিও পানির নিচে ঘুষির ততটা জোর হবে না, তবুও আপনার সাধ্যমতো চেষ্টা করুন। সফল হলে, কিছুক্ষণের জন্য হাঙর আপনাকে ছেড়ে দেবে। এই সময়ে তীরের দিকে ধীরে ধীরে এগোতে থাকুন।
৬. যদি হাঙর আপনাকে কামড়ে ধরে, তাহলে তার চোখে বা কানকোতে হাতের আঙুল দিয়ে জোরে খামচে বা আঁচড়ে দিন, কিংবা আঙুল ঢুকিয়ে আঁকড়ে ধরে টানা হেঁচড়া করুন, যেন সে ব্যাথা পায়। এ অবস্থায় সে আপনাকে ছেড়ে দেবে।
৭. যদি হাঙরের ঝাঁক আপনাকে ঘিরে ধরে, তাহলে বুঝতে হবে অবস্থা খুব খারাপ। সেক্ষেত্রে বাইরে থেকে কোনো সহায়তা না পেলে আপনি মোটেও সুবিধা করতে পারবেন না। তাই তখন মূল লক্ষ্য হবে, পানির নিচে আপনার শরীর যথাসম্ভব স্থির রেখে, পানির উপর হাত নেড়ে তীরবর্তী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং সাহায্য চেয়ে চিৎকার করা।


হাঙরের আক্রমণ থেকে বেঁচে আসা এক সার্ফার।

নেকড়ে, বাঘ ও সিংহসদৃশ শিকারী

এই ভাগে আরও রয়েছে হায়েনা, কয়োট, কুগার বা মাউন্টেইন লায়ন (পুমা বলেও ডাকা হয় একে), জাগুয়ার, লিওপার্ড, চিতাবাঘসহ বড় আকৃতির বিড়াল গোত্রের প্রাণী। এদের মধ্যে বাঘ, সিংহ, চিতা ও হায়েনারা মনুষ্যবসতি থেকে সাধারণত অনেক দূরে গভীর জঙ্গলে বসবাস করে থাকে। বাকিরা কেউ কেউ গভীর বা অগভীর বন থেকে শুরু করে মনুষ্য বসতির আশেপাশেও বসবাস করতে পারে। তবে এদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এরা সবাই পুরোদস্তুর মাংসাশী শিকারী।

বিড়াল গোত্রীয় বৃহৎ প্রাণীগুলোর মধ্যে বাঘ সবচেয়ে শক্তিশালী; Image source: wildfor.life

সতর্কতা: এসকল প্রাণীরা সাধারণত মানুষ শিকার করে থাকে না। কিন্তু কোনো কারণে সুযোগ পেলে কিংবা খাদ্যের অভাব থাকলে এরা মানুষকে হত্যা করতে কিংবা খেয়ে ফেলতেও দ্বিধাবোধ করবে না। বিড়াল গোত্রের যেসব প্রাণীরা আকারে বড়, গঠন ও স্বভাবগত কারণে তাদের পেশীগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী ও ক্ষিপ্র হয়। ফলে এদের সাথে লড়াই করে একাকী একজন মানুষ সুবিধা করতে পারার সম্ভাবনা খুব কম। তাই যেন এদের মুখোমুখি হতে না হয়, সে ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।

১. বনবিড়াল ও কুগার আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকালয়ের আশেপাশের বনজঙ্গল বা পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করে থাকে এবং ঘরের উঠোনে পর্যন্ত এদের দেখা মিলতে পারে। তাই এ ধরনের এলাকায় বিশেষ করে অন্ধকারে বাইরে বের হওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে।
২. কুগার ও বনবিড়াল আকারে তুলনামূলক ছোট বলে সাধারণত পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষকে আক্রমণ করতে চায় না। তবে ছোট শিশুরা এদের লক্ষ্য হতে পারে। তাই বাচ্চাদের সাবধানে রাখতে হবে।
৩. কয়োট কখনো কখনো গৃহপালিত কুকুরের উপর হামলা করে থাকে। তাই কুকুরসহ পোষা প্রাণীদেরকে চোখে চোখে রাখতে হবে।
৪. চিতা, জাগুয়ার ও লিওপার্ড পূর্বোক্ত প্রাণীদের তুলনায় আকারে বড় এবং অধিক শক্তিধর। এরা সাধারণত একাকী জীবনযাপন করে এবং সুযোগ পেলে বা বাধ্য হলে পূর্ণবয়স্ক মানুষকেও আক্রমণ করে বসে। খালি হাতে যুদ্ধ করে এদের সাথে পেরে ওঠাটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তাই লোকালয় থেকে দূরে কোনো বন্য পরিবেশে গেলে এদের কথা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া উচিত। বিশেষ করে গাছের দিকে নজর রাখা উচিত, কেননা এরা গাছ বেয়ে ওঠায় বিশেষ পারদর্শী।

সিংহেরা দলবেঁধে থাকে © Emma Dunston / Lateral

৫. বাঘ, সিংহ বা হায়েনার সাথে কোনো প্রকার অস্ত্র ছাড়া যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া একদমই অসম্ভব ব্যাপার। বাঘ যদিও একাকী জীবনযাপন করে থাকে করে, কিন্তু বাঘ অত্যন্ত শক্তিশালী। প্রকৃতপক্ষে স্থলভাগের মাংসাশী শিকারীদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সে। আপনি যতই বলবান হোন না কেন, কৌশল অবলম্বন না করে কিংবা কোনো অস্ত্রের সহায়তা ছাড়া শুধুমাত্র শক্তি দিয়ে একটি বাঘের সাথে আপনি কখনোই পেরে উঠবেন না। সিংহ আর হায়েনার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য, তদুপরি তারা দলবেঁধে থাকে। তবে এরা যেহেতু লোকালয়ের বাইরে গভীর বনে বসবাস করে, তাই ধরে নেওয়া যায় যে, আপনি কোনো প্রকার প্রস্তুতি ছাড়াই এদের এলাকায় বেড়াতে যাবেন না।
৬. বরফাচ্ছাদিত বনাঞ্চলে চলাচলের ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে। নেকড়েরা এ ধরনের পরিবেশেই বেশি বাস করে এবং এরা দলবেঁধে চলে। এরকম পরিবেশে খাদ্যের অভাব থাকে বলে নেকড়ের একটা পাল আপনাকে একা পেলে মুহূর্তের মধ্যেই ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে খেয়ে ফেলতে চাইবে।
৭. উপরোক্ত প্রাণীদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সম্ভব হলে ৪-৫ জন বা তার চেয়ে বড় দলবেঁধে চলাফেরা করুন।
৮. কোনো অবস্থাতেই এসব প্রাণীদের বাচ্চার কাছাকাছি যাবেন না।

নেকড়ের পালে একটি দলনেতা থাকে এবং সকল ধরনের চ্যালেঞ্জ বা বিপদ আপদে সে সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে; Image source: ecocompanion.com

যদি মুখোমুখি বা আক্রান্ত হন: উপরোক্ত প্রাণীদের আচরণে কিছু মিল রয়েছে। ফলে তাদের মোকাবেলা করতে গিয়েও সাধারণ কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
১. প্রথমেই আসা যাক সেই প্রাণীগুলোর ক্ষেত্রে, যারা একাকী বসবাস করে অভ্যস্ত। এমন কোনো প্রাণীর সামনে হঠাৎ পড়ে গেলে ভুলেও দৌঁড়াবেন না। এতে তারাও আপনাকে শিকার ভেবে তাড়া করবে। তাছাড়া এদের সাথে দৌঁড়ে আপনি পারবেনও না; মুহূর্তের মাঝেই ধরাশায়ী হয়ে যাবেন। বরং স্থির হয়ে এদের ভাবভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করুন। যদি মনে হয়, প্রাণীটি তেমন আক্রমণাত্মক নয়, তাহলে ধীরে সুস্থে কথা বলতে থাকুন।
২. সেটির দিকে তাকিয়ে থাকুন, চোখ সরাবেন না। সে যদি চলে না যায় এবং আপনাকে পর্যবেক্ষণ করে, তাহলে তর্জন-গর্জন করতে থাকুন বা জোরে শব্দ করতে থাকুন। জোর গলায় কথা বললে ভাল্লুক সেটা ভালোভাবে নেয় না। কিন্তু উপরোক্ত প্রাণীরা কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে যায়। তারা ভাবে আপনি নিশ্চয়ই কোনো শক্ত প্রতিপক্ষ হবেন, যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য এবং লড়াই করতে প্রস্তুত। এরা সাধারণত শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে এড়িয়ে যেতে চায়। তাই নিজেকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রদর্শন করুন।
৩. গায়ের কাপড় বা ব্যাগের সাহায্যে নিজেকে বড় ও লম্বা দেখানোর চেষ্টা করুন। ভুলেও এদের সামনে নুয়ে বা বসে পড়বেন না কিংবা সেরকম ভঙ্গি করবেন না। প্রাণীটি দূরে থাকলেও আপনার উচিত হবে না কোনো গাছে উঠে পড়া। কারণ এদের মধ্যে কয়েকটি আবার গাছে উঠায় বিশেষ পারদর্শী। পুরোপুরি গাছে উঠতে না পারলেও খানিকটা গাছ বেয়ে আপনাকে খামচে বা আঁচড়ে গাছ থেকে ফেলে দেবে।
৪. চোখের দিকে সরাসরি তাকালে সাথে সাথে যদি সেটি চোখ সরিয়ে নেয়, তাহলে বুঝতে হবে সেটি চ্যালেঞ্জ নিতে ততটা আগ্রহী না। কিন্তু যদি দৃষ্টি সরিয়ে না নেয়, তার মানে সে এখনো আপনাকে আক্রমণ করার সম্ভাবনা যাচাই করে দেখছে। সেক্ষেত্রে ধীরে ধীরে চোখ সরিয়ে নেওয়াই ভালো হবে।

হায়েনারা সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী, এরা শিকারকে পুরোপুরি না মেরেই জীবন্ত ছিঁড়ে খাওয়া শুরু করে; Image source: iStockphoto via abc.net.au

৫. আপনার হুমকি-ধামকি ও তর্জন-গর্জন শুনেও যদি সে পিছু না হটে, তাহলে হাতের কাছে পাথর বা লাঠি কিংবা অন্য শক্ত যা কিছু পান, তা তুলে নিয়ে এদের দিকে জোরে ঢিল ছুঁড়ে মারুন। তবে এদের গা লক্ষ্য করে না, একটু আশেপাশে যেন গিয়ে পড়ে। ভয়ে এরা স্থান ত্যাগ করতে পারে। এক্ষেত্রে নিশ্চিত করুন যে, সেটির পালানোর পথ রয়েছে এবং আপনি তা আগলে দাঁড়াননি।
৬. আপনার সাথে পোষাপ্রাণী থাকলে সেটিকে আপনার পেছনে আড়াল করুন এবং ধরে রাখুন; কোনোভাবেই যেন এটি দৌঁড় না দেয়। বাচ্চা থাকলে তাকে কাঁধে তুলে নিন এবং তাকেও হাত উঁচিয়ে চিৎকার করতে বলুন। এসব প্রাণীদের মধ্যে মধ্যে কেউ কেউ আপনাকে পরীক্ষা করার জন্য আপনার দিকে তেড়ে আসতে পারে, সেক্ষেত্রে ঘাবড়ে না গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন এবং আরও বেশি শব্দ করুন। সিংহ হলে তার চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে থাকুন।
৭. যদি সেটি আপনার দিকে এগিয়ে আসে, তাহলে আরও জোরে একে শাসান এবং এর উদ্দেশ্যে চিৎকার করতে থাকুন। সেই সাথে খুঁজতে থাকুন একে মোকাবেলা করার মতো হাতের কাছে কিছু পান কি না। অথবা ব্যাগে কোনো অস্ত্র থাকলে সেটা ধীরে ধীরে বের করে হাতে নিন এবং তাকে দেখান। এনিমেল স্প্রে থাকলে কাছাকাছি আসামাত্রই স্প্রে করুন। এসব শিকারী যদি মাথাকে শরীরের সমান্তরালে নিয়ে আসে এবং কান পেছনের দিকে খাঁড়া করে থাকে, তাহলে সেটা আক্রমণের পূর্ব লক্ষণ। নেকড়ে আক্রমণ করার পূর্বে তার ঘাড়ের লোম খাঁড়া হয়ে যাবে।
৮. যদি সে আপনার উপর হামলে পড়ে, তাহলে প্রাণপণ লড়াই করা ছাড়া আপনার হাতে আর কোনো উপায় নেই। এদের ক্ষেত্রেও চোখ এবং নাক-মুখকে টার্গেট করুন এবং যত ক্ষিপ্রভাবে সম্ভব একের পর এক আঘাত করে চলুন। এক্ষেত্রে জীবন বাঁচাতে আপনাকে সর্বোচ্চ পরিমাণ নৃশংস হতে হবে।

জাগুয়ার; Image source: sciencing.com

৯. আঘাত করার পাশাপাশি নিজেকেও আপনার রক্ষা করতে হবে। এই ধরনের প্রাণীদের প্রধান লক্ষ্য হবে আপনার ঘাড়ে মরণ-কামড় বসিয়ে আপনার স্পাইনাল-কর্ড ভেঙে দেওয়া কিংবা আপনার গলায় কামড়ে শ্বাসনালী ছিঁড়ে দেওয়া। তাই কাঁধ দুটো উঁচু করে ঘাড়টাকে কাঁধের ভেতর সেঁধিয়ে ফেলুন যেন সুবিধামতো ঘাড়ে কামড় বসাতে না পারে। এ অবস্থাতেই যুদ্ধ চালিয়ে যান।
১০. কোনো অবস্থাতেই মাটিতে পড়ে যাওয়া চলবে না। নিজেকে দাঁড় করিয়ে রেখে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যেতে হবে। কোনো কারণে পড়ে গেলে এক মুহূর্তও দেরী না করে আবার উঠে দাঁড়াতে হবে।
১১. নেকড়ে আক্রমণ করলে এদের পাল থেকে প্রথমে একটি বা দুটি নেকড়ে আপনাকে প্রথমে আক্রমণ করার সম্ভাবনা খুব বেশি। এটিই সেই পালের নেতা ও সবচেয়ে শক্তিশালী। এর মূল লক্ষ্য হবে আপনার পায়ে সুবিধামতো কামড় বসিয়ে আপনাকে অচল করে দেওয়া। আপনি পড়ে গেলে পালের বাকিরা এসে আপনাকে সাবাড় করবে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে যদি আপনি প্রথম নেকড়েটাকে অত্যন্ত ভয়ানক কয়েকটা আঘাত হেনে ফেরত পাঠাতে পারেন, তাহলে পালের অন্যরা আপনার উপর আক্রমণ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। তাই প্রথমেই যে নেকড়েটির দ্বারা হামলা শিকার হলেন, সেটিকে ভালোভাবে প্রতিহত করার চেষ্টা করুন।
১২. যদি আপনাকে কয়েকদিক থেকে নেকড়ে, সিংহ বা হায়েনার পাল ঘিরে ফেলে, তাহলে অবস্থা খুবই বেগতিক। সাথে রাইফেল বা স্প্রে থাকলে তা ব্যবহার করতেই হবে এ অবস্থায়। যদি আপনার দলে কয়েকজন মানুষ থাকে, তাহলে এ অবস্থায় একজন আরেকজনের পিঠে পিঠ লাগিয়ে সবদিকে দৃষ্টি রেখে হাতে লাঠি, ছুরি বা অন্য কোনো অস্ত্র নিয়ে জোরে জোরে শব্দ করতে থাকুন।

Image source: erindi.com

বাইসন ও বুনো মহিষ

এই প্রাণীগুলোকে বিরক্ত না করলে কিংবা হুমকি মনে না করলে এরা সাধারণত মানুষকে আক্রমণ করে না। কিন্তু আক্রমণ করলে কখনো কখনো এরা পূর্বোক্ত মাংসাশী শিকারীদের চেয়েও ভয়াবহ রূপ প্রদর্শন করে।

বাইসন © Rick Wilking/U.S. Forest Service via Reuters

সতর্কতা:

১. দূর থেকে যদি এদের কোনো একটিকে দেখতে পান, তাহলে ভুলেও কাছে যাবেন না।
২. কোনোভাবে এদের আশেপাশে উপস্থিত হয়ে গেলে কোনো শব্দ না করে ধীরে ধীরে সরে পড়ুন।
৩. এদেরকে শখ করে খাবার দিতে যাবেন না।
৪. যখন বাইসন বা বুনো মহিষের ঝাঁক কোনো রাস্তা পার হয়, তখন গাড়ি থামিয়ে ফেলুন। কোনো হর্ণ দেবেন না। পুরো ঝাঁকটা রাস্তা পার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

বুনো মহিষের শিং অত্যন্ত ভয়ানক এক অস্ত্র © Sasil Sirivadhanakul / Pixels

যদি মুখোমুখি বা আক্রান্ত হন:

১. বাইসন বা বুনো মহিষ কোনো প্রকার পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই আপনাকে আক্রমণ করবে। তাই হঠাৎ করে যদি তাদের কাছাকাছি এসে পড়েন, তাহলে আগে বোঝার চেষ্টা করুন, তারা আপনাকে দেখে ফেলেছে কি না। না দেখলে ধীরে ধীরে সরে পড়ুন। এরা শুধুমাত্র আপনাকে হুমকি মনে করলেই আক্রমণ করবে। তাই দূরত্ব বজায় রাখাই শ্রেয়।
২. যদি মনে হয় আপনাকে দেখে ফেলেছে, তাহলে একটু করে সরে যেতে থাকুন, আবার একটু স্থির দাঁড়িয়ে থাকুন। ভাগ্য ভালো থাকলে এভাবে আপনি সটকে পড়তে পারবেন।
৩. যদি কোনোক্রমে বাইসন বা বুনোমহিষ আপনাকে তাড়া করে, তাহলে সেটা গুরুত্বের সাথে নিন। শরীরের সবটুকু শক্তি সঞ্চয় করে দৌঁড়াতে থাকুন। যদিও সোজা পথে দৌঁড়ে আপনি এদের সাথে পারবেন না। তাই যতদ্রুত সম্ভব কোনো আড়াল খুঁজে বের করুন। মনে রাখবেন যতক্ষণ আপনি এদের চোখের আড়ালে থাকবেন, এদের রাগ কমতে থাকবে।
৪. দৌঁড়ানোর সময় উঁচু গাছ খুঁজুন, যেটা আপনি দ্রুত বেয়ে উঠে যেতে পারবেন। কিংবা উঁচু কোনো টিলা খুঁজুন, এরা উঁচু জায়গায় উঠতে আগ্রহী নয়। তাই উঁচু কোনো কিছুতে উঠে গেলে আপনি বেঁচে যেতেও পারেন। তবে বুনো মহিষ মাঝেমধ্যে অনেক ধৈর্যের পরিচয় দেয়। সে অনেকক্ষণ পর্যন্ত আপনার গাছ থেকে নেমে আসার জন্য অপেক্ষা করতে পারে।
৫. যদি ধরাশায়ী হয়ে যান, তাহলে আপনার কিছুই করার নেই। এদেরকে আপনি কিছুতেই থামাতে পারবেন না। তাই শরীরটাকে যথাসম্ভব জমিয়ে, গোলাকাল হয়ে, মাথাটাকে হাত দিয়ে ঢেকে নিথর হয়ে পড়ে থাকুন এবং তাকে ইচ্ছামতো তান্ডব চালাতে দিন। যদি ভাগ্য খুব ভালো থাকে, তাহলে সে একসময় আগ্রহ হারিয়ে চলে যাবে। আপনি তার চোখে আঘাত করতে পারেন, তাকে ছুরি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করতে পারেন- কিন্তু তবুও সে হার মানবে না, শরীরের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে হলেও আপনাকে খতম করতে চাইবে।


ভিডিওটি দেখে ধারণা করা যায় বুনো মহিষেরা কতটা দুঃসাহসী।

এরা উভয়েই অত্যন্ত জেদী ও নাছোড়বান্দা প্রাণী, সহজে হার মানতে চায় না। এমনকি ভয়ংকর সব মাংসাশীদেরকেও ঠিকমতো আঘাত করলে তারা পালিয়ে যায়, কিন্তু এরা তাদের চেয়েও ভয়ানক। কোনো আঘাতই তাদের হটাতে পারে না। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে বুনো মহিষকে গুলি করা হলেও সেই গুলির ক্ষত নিয়েই এদের মানুষকে তাড়া করার রেকর্ড আছে। সুতরাং এদের ধারেকাছে না যাওয়াই সবচেয়ে ভালো অপশন।

কুমির ও অ্যালিগেটর

যেসব অঞ্চলে কুমির ও অ্যালিগেটরদের আনাগোনা বেশি, সেসব অঞ্চলে যেকোনো প্রকার জলাশয়ের আশেপাশে খুব সাবধানে থাকতে হবে এবং নিশ্চিত না হয়ে কোনো জলাশয়ে গোসল করতে বা সাঁতার কাটতে নামাটা উচিত হবে না। জলাশয়ের আশেপাশের ভেজা মাটিতেও থাকতে পারে এরা।

কুমির বা অ্যালিগেটর খুব বেশি দ্রুতগামী নয়। তাই যদি এরা কখনো তাড়া করে, তাহলে জোরে সোজা দৌঁড় দিলেই হবে। অনেকেই ধারণা করেন, কুমির বা অ্যালিগেটরের হাত থেকে বাঁচতে আঁকাবাঁকা পথে দৌঁড়াতে হয়। তবে এ ধারণার সত্যতা পাওয়া যায়নি। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ যে বেগে দৌঁড়ান, তা এদের হাত নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। তাছাড়া, এরা বেশিক্ষণ দৌঁড়াতেও পারে না; একটু দৌঁড়েই ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

এমনিতেই কুমিরের চোয়াল সবচেয়ে শক্তিশালী, তার উপর কয়েক জাতের কুমিরের আকৃতি হয়ে থাকে অতিকায়!; Image source: reptilegardens.com

কুমির বা অ্যালিগেটর মানুষকে সাধারণত শিকার করে খাওয়ার জন্য তাড়া করে না, নিজের এলাকার জন্য হুমকি মনে করলে তবেই তাড়া করে। তবে এদের সাথে দৌঁড়ে আপনি চ্যাম্পিয়ন হতে পারলেও পানিতে নেমে কিন্তু আপনি তাদের সাথে কিছুই করতে পারবেন না। তাই জলাশয়ের কিনারা থেকে অন্তত ২০-৩০ ফুট দূরে থাকুন। কেননা, জলাশয়ের ধারে থাকলে এরা এতই দ্রুত ও ক্ষিপ্রভাবে আপনাকে বা আপনার পাশে থাকা সঙ্গীকে টান দিয়ে পানির নিচে নিয়ে যাবে যে আপনি টেরই পাবেন না। আর এরা যদি কোনোভাবে শিকারকে পানির নিচে নিয়ে যেতে পারে, তাহলে তার বেঁচে থাকার আশা বাদ দেওয়াই সম্ভবত একমাত্র পথ।

কুমির বা অ্যালিগেটরদের দেহের আবরণ অত্যন্ত শক্ত, তাই এদেরকে সহজে আঘাত করা যায় না। তাই এরা কামড়ে ধরলে একমাত্র উপায় হচ্ছে চোখে আঘাত করা বা জোরে খোঁচা দেওয়ার চেষ্টা করা। যদি ভাগ্য ভালো থাকে, তাহলে এতেই এদের মুখ খুলে যাবে। এছাড়া আপনি যতোই চেষ্টা করেন না কেন, তাদের কামড় থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। কারণ এদের চোয়াল পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী চোয়াল!

সাপ ও বিষাক্ত মাকড়সা

সাপ ও মাকড়সার অসংখ্য প্রজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে বহুসংখ্যক প্রজাতি বিষাক্ত।

সতর্কতা:

১. মাকড়সার জালের কাছে যাবেন না, কিংবা না জেনে কোনো মাকড়সা হাতে নেবেন না।
২. বন-জঙ্গলে হাঁটতে যাওয়ার সময় বিষাক্ত এসব প্রাণীর কথা ভেবে ফুলহাতা শার্ট, ফুল প্যান্ট ও হাইকিং বুট পড়ে যাওয়া উচিত। তাহলে বিষাক্ত প্রাণীর আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সুযোগ কমে যায়।
৩. হাঁটার সময় শব্দ করে হাঁটুন কিংবা মাঝেমধ্যে মাটিতে পা দিয়ে সজোরে আঘাত করুন। এতে আশেপাশে সাপ থাকলে সতর্ক হয়ে দূরে চলে যাবে।
৪. সাপ সাধারণত ঝোপঝাড়, উঁচু বা মাঝারি উচ্চতার ঘাসের আড়ালে, গাছের ডালে কিংবা বড় পাথরের ছায়ায় অবস্থান করে। এসবের পাশ দিয়ে চলার সময় সাবধান।
৫. সতর্কতা হিসেবে আপনার ব্যাগে বা সাথে রশি বা শরীরের কোনো অংশ বেঁধে নেওয়ার মতো লম্বা কাপড়ের টুকরা অথবা কম্প্রেশন ব্যান্ডেজ সাথে রাখুন।
৬. রাতে তাঁবু করে থাকলে তাঁবুর ভেতর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিন। তাঁবুতে পোকামাকড়, ব্যাঙ, ইঁদুর ইত্যাদি ঢুকলে তাদেরকে খাওয়ার জন্য সাপও আসতে পারে।

বিভিন্ন প্রকার মাকড়সা; Image source: dropdeadpest.com.au

যদি মুখোমুখি হন বা আপনাকে কামড়ে দেয়:

১. আপনি জানেন না কোন মাকড়সা বা সাপটি বিষাক্ত। তাই যেকোনো কামড়কেই গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।
২. সাপের মুখোমুখি হলে তাকে পালিয়ে যাবার পথ করে দিন। সাপ সাধারণত অপ্রয়োজনীয় ঝামেলায় যেতে চায় না। তবে নিজেকে কোনঠাসা বা অনিরাপদ মনে করলে আক্রমণ করতে পারে। তাই আপনি ধীরে ধীরে এবং চুপচাপ দূরে সরে যান, এবং তাকে কোথাও পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিন।
৩. যদি সাপটিকে আক্রমণাত্মক মনে হয়, তাহলে আপনি সাপের দিকে মুখ রেখে পিছনের দিকে হাঁটা ধরুন। বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন, তবে দ্রুত হেঁটে নিরাপদ দূরত্বে চলে যাওয়া ভালো হবে।
৪. অজগর বা এনাকোন্ডা প্রজাতির সাপেরা বিষাক্ত হয় না , তবে এরা আকৃতিতে বড় ও শক্তিশালী হয় এবং শিকারকে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মারার চেষ্টা করে। এরা সাধারণত বাধ্য না হলে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে টার্গেট করে না। তবে বাচ্চারা এদের সহজ শিকার হতে পারে। আপনার বাচ্চাকে শিখিয়ে রাখুন যেন এ ধরনের বড় সাপের কবলে পড়লে জোরে চিৎকার করে সাহায্য চায়। আর এরা যদি আপনাকে অপ্রস্তুত অবস্থায় পেঁচিয়ে ধরার চেষ্টা করে, তাহলে প্রথম থেকেই লড়াই করুন। তাকে কোনোভাবেই আপনার শরীরকে ঘিরে কুন্ডলী পাকাতে দেবেন না। সে একদিক থেকে পেঁচানোর চেষ্টা করলে আপনি তার মুখ চেপে ধরে চোয়াল বন্ধ করে প্যাঁচ খোলার চেষ্টা করুন। একসময় সুযোগ বুঝে তাকে ছুঁড়ে ফেলে পালিয়ে যান। যদিও কাজটা খুব সহজ হবে না।
৫. যদি সাপ কামড়ায় তাহলে কী করবেন, তা বিস্তারিত জানার জন্য রোর বাংলার এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেন।
৬. বিষাক্ত মাকড়সা বা বিছা কামড়ালে বা হুল ফোটালেও একই ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। তবে যে বিষাক্ত প্রাণীটি কামড়ালো সেটির গঠন, আকৃতি, রঙ ইত্যাদি মনে রাখা উচিত, কিংবা সম্ভব হলে ছবি তুলে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।

অ্যানাকোন্ডা সাপের আকৃতি এতটাই বড় হতে পারে যে, একজন মানুষের পক্ষে তার কবল থেকে বেঁচে আসা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার; Image source: Tamandua Expedition

হাতি ও গন্ডার

হাতি স্থলভাগের সবচেয়ে বিশালাকার প্রাণী। এরপরেই রয়েছে গন্ডার। এদেরকে সাধারণত কোনো প্রাণীই শিকার করে না, শুধুমাত্র মানুষ বাদে। তাই এদের যদি কোনো শত্রু থেকে থাকে, তাহলে সেগুলোর মধ্যে মানুষ অন্যতম। তবে হাতি অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রাণী। তারা মানুষের চেহারা মনে রাখতে পারে।

সতর্কতা:

এ দুটি প্রাণীর আক্রমণের শিকার না হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে এদের কাছে না যাওয়া। তবে দক্ষ গাইডের নির্দেশনায় খুব কাছ থেকে হাতি দেখা যায়। কিন্তু গন্ডারের কাছে যাওয়া কোনো হিসেবেই ভালো বুদ্ধি নয়। গন্ডার অত্যন্ত রগচটা প্রাণী।

© David Clode on Unsplash

মুখোমুখি বা আক্রান্ত হলে:

১. গন্ডারের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। অনেক দূর থেকে আপনাকে দেখবে না। শুধুমাত্র কাছে গেলেই প্রায় নিশ্চিতভাবে আক্রমণ করবে।
২. হাতির আচরণ যদি বন্ধুসুলভ মনে না হয়, তাহলে ভালো করে তাকে পর্যবেক্ষণ করুন। হাতি প্রায়ই দুয়েকবার মানুষকে হালকা ধাওয়া দিয়ে পরীক্ষা করে। তাই হাতি ধেয়ে আসলে নিজের জায়গায় অনড় দাঁড়িয়ে থাকুন এবং তার উদ্দেশ্যে জোর গলায় কথা বলুন। হাতের কাছে মাঝারি আকারের গাছ থাকলে সেটি ঝাঁকানোর চেষ্টা করুন। সে থেমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। হাতি যদি কান নাড়াতে থাকে, তাহলে খুব সম্ভবত সে আপনাকে ধাওয়া দিয়ে পরীক্ষা করবে। কিন্তু তার কান দুটো যদি পেছনের দিকে স্থির বাঁকানো থাকে এবং তার শুঁড় যদি ভেতরের দিকে পেঁচিয়ে রাখে, তাহলে সেটা সত্যিকারের আক্রমণের লক্ষণ। যদি সত্যিই আক্রমণ করে বসে, তাহলে প্রাণপণে দৌঁড় দিন। হাতি বেশ গতি তুলতে পারলেও অনেক ভারী বলে সহজে দিক বদলাতে পারে না। তাই আঁকাবাঁকা পথে দৌঁড়ান, হাতি বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। বড় কোনো আড়াল খুঁজে বের করুন এবং সম্ভব হলে সেটার পেছনে গা ঢাকা দিন।
৩. যদি আপনি গন্ডারের খুব কাছে চলে যান এবং সেটিকে আক্রমণাত্মক মনে হয়, তাহলে নিজেকে বড় দেখানোর চেষ্টা করুন এবং জোরে জোরে চিৎকার করে কথা বলতে থাকুন। এতে কাজ না হলে, অর্থাৎ গন্ডার আপনাকে তাড়া করলে জোরে দৌঁড় দিন। আঁকাবাঁকা পথে দৌঁড়ালে সে বেশিক্ষণ আপনাকে অনুসরণ করবে না। চেষ্টা করুন গাছপালা বা বড় কোনো পাথর বা ঝোপঝাড়ের পাশ ঘেঁষে আঁকাবাঁকা পথে দৌঁড়ানোর, এতে গন্ডার খেই হারিয়ে ফেলবে। দৌঁড়ানোর সময় গন্ডার আর আপনার মাঝে যেন বড় কোনো বস্তু থাকে, সে চেষ্টা করুন। সবশেষে বিশাল আকৃতির কোনোকিছুর আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করুন। গন্ডার সহজে আপনাকে খুঁজে বের করতে পারবে না।


ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে হাতি মানুষকে মিছেমিছি ধাওয়া দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে চায়। Video credit: dailymail.co.uk

মৌমাছি ও বোলতা

এরা সাধারণত বিরক্ত না হলে কাউকে কামড়াতে যায় না। হয়তো বা আপনি মৌচাক বা বোলতার ডিবির পাশ দিয়ে যাচ্ছেন, এমন সময় অন্য কেউ বা অন্য কোনো প্রাণী তাদের বাসস্থানে হামলা করলে সেটার জন্য আপনাকে খেসারত দিতে হতে পারে।

সতর্কতা:

১. কালো বা গাঢ় রঙের জামা পড়নে থাকলে এরা বেশি আকৃষ্ট হয়। কিংবা আপনার গায়ের পারফিউমের ঘ্রাণ অথবা পরনে থাকা অলংকারের চাকচিক্য তাদেরকে আপনার দিকে আকর্ষণ করতে পারে
২. যদি বুঝতে পারেন আপনি তাদের আবাসস্থলের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন কিংবা যদি তাদের বাতাসে উড়ে বেড়ানোর শব্দ কানে আসে, তাহলে সেই পথ পরিহার করুন।

উপর্যুপরি কিছু বোলতার কামড়ে একজন মানুষের মৃত্যু পরযন্ত হতে পারে © Kathy Jones / Wikimedia Commons. CC BY-SA 2.5

ঘিরে ধরলে বা আক্রমণ করলে:

১. শান্ত ও নীরব থাকুন। নড়াচড়া করলে বা শব্দ করলে এরা আকৃষ্ট হবে। মৌচাক ভেঙে সব মৌমাছি যদি ছড়িয়ে পড়ে আর আপনি এদের মাঝে পড়ে যান, তাহলে ধীরে ধীরে শরীর কুঁচকে শুয়ে পড়ার চেষ্টা করুন এবং কাপড় দিয়ে যথাসম্ভব শরীর ঢেকে রাখুন।
২. গায়ে একটি-দুটি মৌমাছি বা বোলতা পড়লে এবং কামড় দিলে সেটিকে টোকা দিয়ে ফেলে দিন। আঘাত করে পিষে ফেলবেন না, পিষে ফেললে এদের দেহ থেকে যে নির্যাস বের হয়, তা অন্যদেরকে আপনার দিকে আকৃষ্ট করবে।
৩. যদি খুব কাছাকাছি কোনো আশ্রয়ের সন্ধান পান, দ্রুত দৌঁড়ে গিয়ে সেখানে আশ্রয় নিন।
৪. যদি মোটামুটি বাতাস থাকে, তাহলে বাতাসের বিপরীত দিকে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
৫. যথাসম্ভব আপনার চোখ-মুখ ও ঘাড় রক্ষা করুন। কামড়ানোর পর হুল ফুটে থাকলে সেটি ত্বক থেকে বের করে নিন।
৬. কিছু কিছু প্রজাতির মৌমাছির হুলে বিষ তুলনামূলক কম থাকলেও অধিক পরিমাণ কামড় খেলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তবে বোলতা বা ভীমরুলের কামড় অত্যাধিক বিষাক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক। বেশ কয়েকটা বোলতার কামড়ে আপনার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই দেরি না করে, ঘরোয়া চিকিৎসার উপর পুরোপুরি ভরসা না করে আপনার উচিত হবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।

বুনো শূকর

পৃথিবীতে বুনো শূকরের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে বিশ্বের নানা অঞ্চলে মানুষ প্রায়ই এদের মুখোমুখি হচ্ছে। এরা বেশ হিংস্র। তবে আশার কথা হচ্ছে, এরা কোণঠাসা হলে, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে বা ভয় পেলেই শুধু আপনাকে আক্রমণ করবে।

বুনো শূকর পারতপক্ষে আপনাকে আক্রমণ করতে চাইবে না, কিন্তু আক্রমণ করে বসলে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে; Image source: animals.mom.me

যদি মুখোমুখি বা আক্রান্ত হন:

১. চেষ্টা করুন শূকরটির দিকে মুখ রেখে পাশের দিকে হেঁটে চলে যাওয়ার।
২. তর্জন-গর্জন করবেন না, একদম মৃদু গলায় কথা বলতে থাকুন এবং সরে যেতে থাকুন। সেটিকেও কোণঠাসা না করে সরে যাওয়ার পথ করে দিন।
৩. ধাওয়া করলে চেষ্টা করুন কোনো গাছে উঠে যেতে কিংবা কোনো বিশাল পাথর বা গাড়ির ছাদে উঠে যাওয়ার।
৪. যদি শূকরের আশেপাশে তার বাচ্চা থাকে, তাহলে ধরে নিন সে আপনাকে দারুণভাবে আহত করার চেষ্টা করবে। সেক্ষেত্রে কোনো আশ্রয়ের সন্ধান না পেলে প্রবলভাবে লড়াই করার প্রস্তুতি নিন।
৫. লড়াই করার সময় ধারালো কিছু হাতে থাকলে সবচেয়ে সুবিধা হবে। শূকরের ধাক্কায় মাটিতে যেন পড়ে না যান, সেদিকে খেয়াল রাখুন, এতে সে আরও উৎসাহিত হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বুনো শূকরেরা মানুষকে আক্রমণ করার মিনিটখানেকের মধ্যে আবার তাকে ছেড়ে চলে যায়।
৬. বন্য শূকরদের ধারালো দাঁত থাকে, সেটি থেকে যথাসম্ভব নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করুন।

কুকুর ও বন্যকুকুর

কুকুর খুবই প্রভুভক্ত প্রাণী বলে ভাববেন না যেন সব ধরনের কুকুরই প্রভুভক্ত। কিছু কিছু কুকুর অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করতে পারে আপনাকে।

সতর্কতা:

১. যেসব সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে, সেগুলোতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সাবধান থাকুন। না জেনে বা অনুমতি ছাড়া নিজ থেকে প্রবেশ করতে যাবেন না।
২. কুকুরের প্রজনন মৌসুমে (বিশেষ করে বাংলাদেশে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত) কুকুর অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে। এ সময়টাতে কুকুর থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাই শ্রেয়।
৩. যদি শুনে থাকেন এলাকায় জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুর দেখা গেছে, সেটি উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়া বা বন্দি হওয়ার আগপর্যন্ত আপনার প্রয়োজন ছাড়া বাইরে ঘোরাঘুরি করা উচিত হবে না।

কুকুরের কয়েকটা প্রজাতি খুব বিপজ্জনক; Image source: floridapolitics.com

যদি মুখোমুখি বা আক্রান্ত হন:

১. অপরিচিত কোনো কুকুর আপনাকে চ্যালেঞ্জ করলে দৌঁড় দেবেন না। কর্তৃত্বের স্বরে কুকুরের সাথে কথা বলুন এবং সরে যেতে নির্দেশ দিন।
২. কুকুর যদি খুব আক্রমণাত্মক ও ভয়ানক প্রজাতির হয়, তাহলে সে আপনাকে আক্রমণ করে বসতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকে লড়াই করতে হবে।
৩. লড়াই করার সময় শব্দ করে জোরে কথা বলতে থাকুন যেন আশেপাশের মানুষ শুনতে পেয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। সম্ভব হলে কুকুরের চোখে সজোরে ঘুষি মারুন। যদি তারা সংখ্যায় বেশি হয় এবং আপনাকে মাটিতে ফেলে দিতে সক্ষম হয়, তাহলে হাত ও কাঁধের সাহায্যে মাথা, মুখ ও ঘাড় রক্ষা করার চেষ্টা করুন।
৪. বন্য কুকুরেরা (আফ্রিকান বন্য কুকুর) ঝাঁক বেঁধে চলে। তবে এরা সাধারণত মানুষ শিকার করে অভ্যস্ত নয়। কিন্তু যদি আপনাকে শিকার করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আপনি একা ও নিরস্ত্র হলে আপনার করার মতো তেমন কিছু থাকবে না। মাত্র কয়েক মিনিটে এদের একটা দল আপনাকে ঘায়েল করে ফেলবে। তাই তাদের এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। তাদের একটা দলের সামনে পড়ে গেলে স্থির হয়ে যান এবং তাদের দিকে দৃষ্টি রেখে অত্যন্ত ধীরেসুস্থে সরে পড়ার চেষ্টা করুন। তবে সরাসরি চোখের দিকে তাকাবেন না এবং শুধু শুধু তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে যাবেন না। আপনার ভাগ্য ভালো হলে তারা আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে।

বন্য কুকুরেরা হামলে পড়লে নিমেষেই তারা আপনাকে টুকরো টুকরো করে ফেলবে; Image source: Harnas Wildlife Foundation

পূর্ব প্রস্তুতি

বন্যপ্রাণীরা এমন স্বভাবের হয় যে, তাদেরকে অস্ত্র হাতে মোকাবেলা করার চেয়ে এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে আপনি অচেনা কোনো পরিবেশে গেলে কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখা ভালো। উপরোক্ত লেখাগুলো পড়ে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, বেশিরভাগ বন্যপ্রাণীকে মোকাবেলা করতে গিয়ে একইধরনের কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। সেগুলো হতে পারে:

  • আত্মরক্ষার্থে ছুরি, লাঠি বা রাইফেল বহন করা।
  • এনিমেল স্প্রে সাথে রাখা।
  • বন্যপ্রাণীদের আদর করে খাবার না দেওয়া।
  • ছবি তোলার সময় ক্যামেরার ফ্ল্যাশ তাদের উত্তেজিত করে তুলতে পারে। তাই সাবধানে ছবি তোলা।
  • ফার্স্ট এইড কিট বা প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম সাথে রাখা।
  • ঢিলেঢালা জামা পড়া, যেন আপনার আকৃতি বড় মনে হয়। সকল অবস্থায় নিজেকে বড় ও লম্বা দেখানোর চেষ্টা করতে হবে।
  • বনে-বাঁদাড়ে যেখানে সেখানে প্রস্রাব-পায়খানা না করা। এগুলোর গন্ধে শিকারী প্রাণীরা আকৃষ্ট হতে পারে।
  • তাঁবু খাটানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক থাকা এবং তাঁবুর ভেতরে খাবার না রাখা।
  • বন্যপ্রাণী দেখলে কোনো অবস্থাতেই দৌঁড়ানো শুরু করা যাবে না। যথাসম্ভব স্থির থাকতে হবে এবং মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবেলা করলে বাঁচার সম্ভাবনা শতকরা পঞ্চাশ ভাগ। আর মাথা গরম করলে সে সম্ভাবনা শূন্যতে নেমে আসতে পারে।
  • বেশিরভাগ প্রাণীর ক্ষেত্রেই সরাসরি চোখের দিকে তাকানো পরিহার করা উচিত। কেননা, একে তারা হুমকি বা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়।
  • মনে রাখতে হবে, বাচ্চা সাথে থাকলে কোনো প্রাণী তার জীবনের পরোয়া করবে না। এ অবস্থায় সে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হিংস্রতা প্রদর্শন করতে পারে। তাই বন্য প্রাণীর বাচ্চা দেখামাত্রই সাবধান হয়ে যেতে হবে।
  • প্রয়োজনে গাছের ওঠার প্রস্তুতি রাখতে হবে।
  • গাড়ি নিয়ে গেলে গাড়ির কাছাকাছি থাকতে হবে।
  • যেসব শিকারী প্রাণীরা শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই এড়িয়ে যেতে চায়, তাদেরকে শক্তি প্রদর্শন করতে হবে। প্রয়োজনে চিৎকার করে ও ঢিল ছুঁড়ে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নিজেকে শক্তিশালী প্রমাণ করতে হবে।
  • লড়াই শুরু করলে সর্বোচ্চ পরিমাণ নৃশংস হতে হবে এবং জীবন বাজি রেখে লড়তে হবে। মাটিতে পড়ে গেলে চলবে না এবং আপনার প্রধান লক্ষ্য হবে প্রাণীটির চোখ। কেননা, সকল প্রাণীর ক্ষেত্রেই এটি একটি দুর্বল অঙ্গ।

উপরোক্ত কৌশলগুলো যে শতভাগ কাজে দেবে, তার নিশ্চয়তা নেই। তবে এগুলো শত শত বছর ধরে মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া। এরকম কিছু কৌশল জানা থাকলে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠান্ডা মাথায় সেগুলো প্রয়োগ করতে পারলে হয়তো বেঁচেও যেতে পারে এক বা একাধিক প্রাণ।

This article is in bengali language. It is about the tactics to survive dangerous animal attack. Necessary sources of information have been hyperlinked inside the article.

More references:

1. 5 Simple Tips to Handle a Wild Animal Encounter on Vacation - The New York Times

2. Staying Safe Around Bears - National Park Service

3. How to Survive Wild Animal Attacks - OutDoorLife

4. How to survive attacks from Australia’s most deadly animals - news.com.au

5. How to survive 10 random (but common) animal attacks - Animalogic

6. What to Do When a Wild Animal Attacks - The New York Times

7. What To Do If You Encounter A Wild Animal - OutDoorRevival

8. What To Do If You Encounter A Wild Animal While Walking Your Dog - DogTime

9. What to Do When You Come Across a Wild Animal When Camping or Hiking - FamilyFunCanada

10. What to do if a shark is headed straight for you - Business Insider

11. How to survive a shark attack - CNN

12. How to Survive an Attack from Africa’s Most Dangerous Animals - BookAllSafaris

13. How To Prevent A Snake Bite - OutDoorRevival

14. Wild Pigs are a Growing Threat to Hikers on the Trail - Backcountry Attitude

Featured Image © Marcus Obal / Wikimedia Commons, CC BY-SA 3.0

Related Articles