দলবদলের বাজারে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে তরুণ উঠতি ভালো খেলোয়াড়দের প্রতি। তাই বড় বড় ক্লাবগুলো ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করে অনেক চড়া দামে এইসব তরুণদের নিতে দ্বিতীয়বার ভাবেন না। শুধু দলে নিয়েও স্বস্তিতে থাকা সম্ভব নয়। টাকার গরমে অনেক ধনকুবেরের ক্লাব মুহূর্তেই ছিনিয়ে নিতে পারে সেই খেলোয়াড়টিকে। তাই একইসাথে অনেক বেশি বেতন দিয়েও ধরে রাখতে হয় খেলোয়াড়দের। আর তাতেই দেখা যায়, টিনএজার অনেক ফুটবলারের আয়ই পিলে চমকানোর মতো।
আজ আমরা দেখবো ক্লাব ফুটবলে সবচেয়ে বেশি আয় করা দশ টিনএজ ফুটবলার।
১০. তাকেফুসা কুবো, রিয়াল মাদ্রিদ (সপ্তাহে ১৭ হাজার ইউরো)
‘জাপানিজ মেসি’-খ্যাত কুবো প্রথম নজরে আসেন ২০১১ সালে। সেইসময় বার্সেলোনার বিখ্যাত একাডেমি লা মাসিয়ায় নিজের প্রথম মৌসুমেই ৩০ ম্যাচে ৭৪ গোল করে সবাইকে চমকে দেন কুবো। কিন্তু আন্তর্জাতিক দলবদলের নিয়ম ভঙ্গ করায় কুবোকে ধরে রাখতে পারেনি বার্সেলোনা। তাই বাধ্য হয়েই জাপানে ফিরে যেতে হয় কুবোকে।
তবে তার প্রতিভা বেশিদিন চাপা থাকেনি। তাই কুবোর পেছনে টাকার বস্তা নিয়ে বড় বড় ক্লাবগুলো দৌঁড়াতে শুরু করে। অবশেষে এই বছরের জুন মাসে রিয়াল মাদ্রিদের সাথে ৫ বছরের চুক্তি করেন কুবো। মাত্র ১৮ বছর বয়সী কুবোর এই চুক্তির ফলে সাপ্তাহিক আয় দাঁড়ায় ১৭ হাজার ইউরো।
৯. ক্যালাম হাডসন-ওডোই, চেলসি (সপ্তাহে ২২ হাজার ইউরো)
গত মৌসুমেই ক্যালাম হাডসন-ওডোই চলে এসেছেন বড় বড় ক্লাবগুলোর রাডারে। বিশেষ করে বায়ার্ন মিউনিখে যাওয়ার জোর গুঞ্জন ছিল বাতাসে। আর তাতে চেলসিও ধরে রাখার জন্য নতুন চুক্তিও করে ক্যালাম হাডসনের সাথে। ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচের চেলসি সপ্তাহে ২২ হাজার ইউরো করে বেতন দিচ্ছে এই প্রতিভাবান তরুণকে। মাত্র ১৮ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় তাতেই নয় নাম্বার স্থান দখল করেছেন। গুঞ্জন রয়েছে, সামনের মৌসুম থেকে প্রতি সপ্তাহে ২ লাখ ইউরো করে পেতে পারেন ক্যালাম হাডসন।
৮. রিজ নিলসন, আর্সেনাল (সপ্তাহে ৩০ হাজার ইউরো)
গত মৌসুমে ধারে জার্মান ক্লাব হফেনহাইমে খেলে নজর কাড়েন এই তরুন উইঙ্গার। তাই এই মৌসুমেই উনাই এমেরি নিলসনকে মূল দলে অন্তর্ভুক্ত করেন। আর্সেনালে ফিরে এসে নতুন চুক্তিও করেন নিলসন। আর তাতে তার পারিশ্রমিক দাঁড়ায় সপ্তাহপ্রতি ৩০ হাজার ইউরো।
মাত্র ১৯ বছর বয়সী এই উইঙ্গারকে অবশ্য তারপরও মূল দলে জায়গা পেতে লড়তে হবে। সদ্যই রেকর্ড ট্রান্সফার ফি’তে আর্সেনালে যোগ দিয়েছেন নিকোলাস পেপে। নিলসনের লড়াইটা হবে তার সাথেই।
৭. ফিল ফোডেন, ম্যানচেস্টার সিটি (সপ্তাহে ৩০ হাজার ইউরো)
সিটির তারকাসমৃদ্ধ দলের মধ্যেও নিজেকে ভালোভাবেই চিনিয়েছেন ১৯ বছর বয়সী ফিল ফোডেন। বিশেষ করে স্বয়ং পেপ গার্দিওলাই মুগ্ধ এই তরুণের পারফরম্যান্সে। যদিও নতুন মৌসুমেও খুব একটা খেলার সময় পাচ্ছেন না ফোডেন।
ইংল্যান্ডের অন্যতম প্রতিভাবান ফুটবলার হিসেবে আগমন ফোডেনের। আর তাই গত ডিসেম্বরে দ্রুতই তার সাথে চুক্তি সেরে ফেলে সিটিজেনরা। চুক্তি অনুযায়ী, সপ্তাহে ৩০ হাজার ইউরো করে পেয়ে থাকবেন ফোডেন।
৬. মইসে কিন, এভারটন (সপ্তাহে ৫৩ হাজার ইউরো)
এই তরুণ উঠতি ইতালিয়ান তুর্কিকে এই গ্রীষ্মেই গুডিসন পার্কে এনেছে এভারটন। ৩৭ মিলিয়নের বিনিময়ে এই ১৯ বছর বয়সী বালককে জুভেন্টাস থেকে কিনে নেয় মার্সিসাইড বাহিনী। গিলফি সিগুর্ডসনের পর এভারটনের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে দামী সাইনিং। মার্কো সিলভার দলে মইসে কিন কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, তা সময়ই বলে দেবে। আপাতত সপ্তাহে ৫৩ হাজার ইউরো করে পাওয়া কিনের এপর এভারটন সমর্থকদের বিশ্বাস আকাশ-সমান।
৫. জোয়াও ফেলিক্স – অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ (সপ্তাহে ৫৮ হাজার ইউরো)
চলতি মৌসুমের দলবদলের বাজারে সবচেয়ে আলোচিত নাম ছিল জোয়াও ফেলিক্স। ১৯ বছর বয়সী এই পর্তুগীজ ফরোয়ার্ডের জন্য ১১৫ মিলিয়নের মোটা অঙ্ক খরচ করতেও দ্বিধাবোধ করেনি অ্যাটলেটিকো। গ্রিজমানের ফেলে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণ করতে বেনফিকা থেকে উড়িয়ে আনা হয় তাকে। সর্বশেষ মৌসুমে ১৫ গোল ও সাত অ্যাসিস্ট করা ফেলিক্সের দামটা চড়া মনে হলেও নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন ইতঃমধ্যেই। প্রি-সিজন ম্যাচেও দেখিয়েছেন ঝলক। আর অ্যাটলেটিকোর সাথের নতুন চুক্তিতে জোয়াও ফেলিক্সের বেতন সপ্তাহে ৫৮ হাজার ইউরো। আর তাতেই টিন-এজারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়ার লিস্টে ৫ নাম্বার স্থান দখল করেন এই পর্তুগিজ।
৪. রায়ান সেসেনিয়ন, টটেনহ্যাম (সপ্তাহে ৭০ হাজার ইউরো)
রায়ান সেসেনিয়নের প্রতি প্রথম থেকেই আগ্রহ থাকলেও বেতন-সংক্রান্ত ঝামেলার জন্যই চুক্তিটি হয়ে উঠছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত সপ্তাহে ৭০ হাজার ইউরো করে পারিশ্রমিক দিতে রাজি হওয়ার পরই স্পার্স দলে আগমন ঘটে সেসেনিয়নের। ফুলহ্যাম থেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা ক্লাব টটেনহ্যামে এসে নিজেকে ঠিক কতটুকু মেলে ধরতে পারবেন তিনি, তা সময়েই বলে দেবে। তবে পারিশ্রমিক দেখেই আন্দাজ করা যায় যে, সেসেনিয়নের নিজেকে প্রমান করার সব সামর্থ্যই রয়েছে।
৩. রদ্রিগো, রিয়াল মাদ্রিদ (সপ্তাহে ৭৬ হাজার ইউরো)
এই তালিকার তৃতীয় স্থানে আছেন ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন রদ্রিগো। ১৮ বছরের এই তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলারকে এই বছরের জুনেই সান্তোস থেকে দলে ভেড়ায় রিয়াল মাদ্রিদ। তার পূর্বসূরী নেইমারের পদক্ষেপ অনুসরণ করে স্পেনে পাড়ি জমালেও ক্লাব হিসেবে বেছে নিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদকে।
১৮ বছর বয়সী এই ফুটবলারের জন্য ৪০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে হয়েছে লস ব্লাঙ্কোসদের। এর পাশাপাশি রদ্রিগোর পারিশ্রমিকও পিলে চমকানোর মতো। রিয়াল মাদ্রিদে সপ্তাহে ৭৬ হাজার ইউরো করে পাবেন এই ব্রাজিলিয়ান। রিয়াল মাদ্রিদের সাথে তার রয়েছে ছয় বছরের চুক্তি। তবে বেনজেমা-জোভিচদের মতো খেলোয়াড়দের পেছনে ফেলে আক্রমণভাগে মূল দলে জায়গা করে নিতে রদ্রিগোকে যে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই উপহার দিতে হবে, সেটা বলাই বাহুল্য।
২. ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রিয়াল মাদ্রিদ (সপ্তাহে ১৯০ হাজার ইউরো)
তালিকায় একই পারিশ্রমিক নিয়ে এক নাম্বার স্থানে যৌথভাবে রয়েছেন দুইজন। তার মধ্যে একজন ব্রাজিল তারকা ভিনিসিয়ুস, যিনি এরই মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদের মূল দলের হয়ে ঝলক দেখিয়েছেন, ডাক পেয়েছেন ব্রাজিল জাতীয় দলেও। সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া টিনএজ হিসেবে একটা চাপ অনুভূত হলেও সেসব পাশ কাটিয়ে নিজেকে মেলে ধরেছেন ভিনিসিয়ুস। ফ্ল্যামেঙ্গো থেকে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর প্রথম সিজনে করেছেন চার গোল। ভবিষ্যতে এই সংখ্যাটি যে আরো বড় হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
১. জ্যাডন সাঞ্চো, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড (সপ্তাহে ১৯০ হাজার ইউরো)
তরুণ তুর্কি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জুড়ি নেই জার্মান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের। তাদেরই মধ্যে একজন হলেন জ্যাডন সাঞ্চো। এই ইংলিশ ফুটবলার আগের মৌসুমের চুক্তি অনুযায়ী পেতেন সপ্তাহে ৭৫ হাজার ইউরো। কিন্তু টানা পারফর্ম করে বড় বড় ক্লাবগুলোর রাডারে ধরা পড়েন সাঞ্চো। তাই তাকে ধরে রাখতে নতুন চুক্তির প্রস্তাব দেয় ডর্টমুন্ড। আর তাতে সাঞ্চোর বেতন বেড়ে দাঁড়ায় ১৯০ হাজার ইউরোতে।
পরের মৌসুমেই ৩৪ ম্যাচে ১২ গোল ও ১৪ অ্যাসিস্ট করে সাঞ্চো বুঝিয়ে দেন, কেন তাকে এত বেতন দিয়ে ধরে রেখেছে ডর্টমুন্ড। ভবিষ্যতেও ডর্টমুন্ডের প্রধান কারিগর হয়ে উঠবেন এই ইংলিশ ফুটবলার, এমনটা ভাবতে তাই দোষ নেই বৈকি।