বিরাট কোহলি, কেন উইলিয়ামসন, জো রুট এবং স্টিভেন স্মিথকে এই দশকের সেরা চার ব্যাটসম্যান হিসাব ধরা হয়। স্টিভেন স্মিথ বর্তমানে নিষেধাজ্ঞা কাটাচ্ছেন। জো রুট এবং কেন উইলিয়ামসন নিয়মিত রানের দেখা পেলেও তাদের থেকে বেশ বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছেন বিরাট কোহলি৷ বিশেষ করে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিরাটের ধারেকাছেও নেই রুট এবং উইলিয়ামসন। বিরাটের লম্বা ইনিংস খেলার সক্ষমতা তাকে নিয়ে গেছে সমসাময়িক প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে অনেক উপরে। তাইতো টানা দুইবার স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স ট্রফি জিততে তার কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। ঠিক সমসাময়িক না হলেও ওয়ানডে ক্রিকেটে তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। গত বছর তিনিও সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালে এই ফরম্যাটেও তাকে আটকানোর আর কেউ রইলো না।
২০১৮ সালে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বিরাট কোহলি আইসিসির বার্ষিক অ্যাওয়ার্ডের মধ্যে বড় তিনটি অ্যাওয়ার্ড জিতে নিলেন। তিনি ২০১৮ সালে স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স ট্রফি (বর্ষসেরা ক্রিকেটার) জেতার পাশাপাশি বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার এবং বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের পুরস্কারও জিতেছেন। আইসিসির ৩৬ সদস্যের ভোটিং প্যানেল বিরাট কোহলিকে সেরা হিসাবে নির্বাচিত করে। বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার হওয়ার দৌঁড়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা এবং ওয়ানডেতে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আফগানিস্তানের রশিদ খান।
বিরাট কোহলি ২০১৮ সালে ১৩টি টেস্ট ম্যাচে পাঁচটি এবং পাঁচটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৫৫.০৮ ব্যাটিং গড়ে ১,৩২২ রান সংগ্রহ করেছেন। ২০১৮ সালে টেস্ট ক্রিকেটে তার সিংহভাগ রান এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। তাই ২০১৮ সালের বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার নির্বাচিত হন তিনি।
ওয়ানডে ফরম্যাটেও দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন বিরাট কোহলি। এই ফরম্যাটে অবশ্য ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলছেন তিনি। ২০১৮ সালে তিনি ১৪ ম্যাচে ছয়টি শতক এবং তিনটি অর্ধশতকের সাহায্যে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং গড়ে (১৩৩.৫) মোট ১,২০২ রান সংগ্রহ করেছেন। এরই সুবাদে টানা দ্বিতীয়বার এবং সাকুল্যে তৃতীয়বার বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতেছেন তিনি।
বিরাট কোহলি ২০১৮ সালে বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার এবং বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের অ্যাওয়ার্ড জেতার পাশাপাশি স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স ট্রফিও জেতেন। তিনিই প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে এই তিনটি অ্যাওয়ার্ড একসাথে জেতেন। এছাড়া বর্ষসেরা টেস্ট এবং ওয়ানডে দলের অধিনায়কও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে তিনি টেস্ট ক্রিকেটে ১,৩২২ রান, ওয়ানডেতে ১,২০২ রান, এবং টি-টোয়েন্টিতে ২১১ রান সংগ্রহ করেছেন। যার ফলে দ্বিতীয়বারের মতো স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স ট্রফি জেতেন বিরাট কোহলি।
এর আগে ২০১৭ সালেও স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স ট্রফি জিতেছিলেন বিরাট কোহলি। ২০১৭ সালে টেস্ট ক্রিকেটে ১০ ম্যাচে পাঁচটি শতক এবং একটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৭৫.৬৪ ব্যাটিং গড়ে ১,০৫৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। এছাড়া ওয়ানডেতে ২৬ ম্যাচে ছয়টি শতক এবং সাতটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৭৬.৮৪ ব্যাটিং গড়ে ১,৪৬০ রান করেছিলেন। টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন দশ ম্যাচ, এই দশ ম্যাচে ৩৭.৩৭ গড়ে ২৯৯ রান সংগ্রহ করেছেন। তিন ফরম্যাটেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করার বদৌলতে স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স ট্রফি জেতেন তিনি। এছাড়া বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের অ্যাওয়ার্ডও জেতেন তিনি। তবে বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের অ্যাওয়ার্ড স্টিভেন স্মিথ জিতে নেন।
আইসিসি বার্ষিক অ্যাওয়ার্ড দেওয়া শুরু করে ২০০৪ সাল থেকে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত বিরাট কোহলিসহ মোট তিনজন ক্রিকেটার দুইবার করে স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। বাকিরা হলেন: অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক রিকি পন্টিং এবং বাঁহাতি পেসার মিচেল জনসন। এছাড়া আর কোনো ক্রিকেটার একাধিকবার এই ট্রফি জেতেননি।
রিকি পন্টিং: ২০০৬ এবং ২০০৭ সাল
অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক এবং বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান রিকি পন্টিং প্রথমবারের মতো ২০০৬ সালে স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স ট্রফি জেতেন। ঐ বছর তিনি টেস্ট ক্রিকেটে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন। ১০ টেস্টের ১৮ ইনিংসে ব্যাট করে সাতটি শতক এবং চারটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৮৮.৮৬ ব্যাটিং গড়ে ১,৩৩৩ রান করেছিলেন। ২০০৬ সালে টেস্ট ক্রিকেটে দুর্দান্ত ব্যাটিং করার ফলে বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের অ্যাওয়ার্ডও জিতেছিলেন তিনি।
একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন ২৩টি। সেখানে অবশ্য স্বরূপে ছিলেন না, দু’টি শতক এবং ছয়টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৬.২৭ ব্যাটিং গড়ে ৭৯৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। টেস্ট এবং ওয়ানডে মিলিয়ে ২০০৬ সালে বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়ে স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স ট্রফি জেতেন তিনি।
২০০৭ সালে আলাদাভাবে বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার এবং বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের অ্যাওয়ার্ডের মধ্যে কোনো অ্যাওয়ার্ড জিতেননি রিকি পন্টিং। কিন্তু ঐ বছর অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ জেতানোর পাশাপাশি সীমিত ওভারের ক্রিকেটের দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে রিকি পন্টিং মাত্র চারটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। এই চার ম্যাচের মধ্যে ছয় ইনিংসে ব্যাট করে দুটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৮.৪০ ব্যাটিং গড়ে ১৯২ রান করেছিলেন তিনি। সাদা পোশাকে খুব বেশি ম্যাচ না খেললেও রঙিন পোশাকে ২০০৭ সালে ২৭টি ওয়ানডে এবং ছয়টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন পন্টিং।
২০০৭ সালে রিকি পন্টিং ২৭টি ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে ২৪ ইনিংসে ব্যাট করে পাঁচটি শতক এবং আটটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৭৯.১১ ব্যাটিং গড়ে ১,৪২৪ রান সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া ছয়টি টি-টোয়েন্টিতে ৩৬.৮০ ব্যাটিং গড়ে ১৮৪ রান করেছিলেন। এতে করে টেস্ট ক্রিকেটে ভালো না করলেও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দ্বিতীয়বারের মতো স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স অ্যাওয়ার্ড জেতেন তিনি।
মিচেল জনসন: ২০০৯ এবং ২০১৪ সাল
অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসার মিচেল জনসন তার নয় বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে দুইবার স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স ট্রফি জেতেন। ২০০৭ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটা এই বিধ্বংসী পেসার ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো বর্ষসেরা ক্রিকেটারের অ্যাওয়ার্ড জেতেন। এরপর ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন তিনি। এর এক বছর পরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন তিনি।
মিচেল জনসন ২০০৮ সালে ১৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৬৩ উইকেট শিকার করেছিলেন। ঐ বছর কোনো পুরস্কার না জিতলেও ২০০৯ সালে ১৩ টেস্টে ৪৭.৮ স্ট্রাইক রেটে এবং ২৭.৪২ বোলিং গড়ে ৬৩ উইকেট শিকার করেছিলেন, ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছিলেন দুইবার। স্বীকৃতিস্বরূপ স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স ট্রফি জিতে নেন তিনি। তিনি ২০০৯ সালে ওয়ানডেতেও দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন। ৩০টি ওয়ানডেতে ৩০.০৬ বোলিং গড়ে শিকার করেছিলেন ৪৬ উইকেট।
ব্যাটসম্যান হিসাবে মিচেল জনসনের খুব বেশি নামডাক না থাকলেও তার হাতে বেশ কিছু আক্রমণাত্মক শট ছিল। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং স্টাইল দিয়ে তিনি নিজের দিনে যেকোনো বোলিং লাইনআপকে সামলাতে পারতেন। ২০০৯ সালে তারই ঝলক দেখেছিল ক্রিকেট বিশ্ব। ঐ বছর ১৩ টেস্টের ১৭ ইনিংসে ব্যাট করে অপরাজিত ১২৩ রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি তিনটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৩৩.৩৩ ব্যাটিং গড়ে ৫০০ রান করেছিলেন। ওয়ানডে ফরম্যাটেও ২০০৯ সালে ব্যাট হাতে রান পেয়েছিলেন তিনি। ২০ ইনিংসে ব্যাটিং করে ৯৭.৩০ স্ট্রাইক রেটে এবং ১৯.২৬ ব্যাটিং গড়ে ২৮৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন।
মিচেল জনসন দ্বিতীয়বারের মতো স্যার স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স ট্রফি জিতে নেন ২০১৪ সালে। ঐ বছর গোঁফ রেখে সম্পূর্ণ নতুনরূপে আবির্ভাব হয় তার। ঐ বছর তিনি নয় টেস্টেই ২৩.২৫ বোলিং গড়ে ৪৭ উইকেট শিকার করেছিলেন। ম্যাচে একবার দশ উইকেট এবং ইনিংসে দুইবার পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন। ব্যাট হাতে নয় ম্যাচের ১৫ ইনিংসে ব্যাট করে ২৪.০৭ ব্যাটিং গড়ে দু’টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এতে করে ঐ বছর বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের অ্যাওয়ার্ডও জেতেন তিনি। মিচেল জনসন ২০১৪ সালে খুব বেশি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেননি, মাত্র দশটি ওয়ানডে খেলে ১৪ উইকেট উইকেট শিকার করেছিলেন। এতে করেই বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়ে স্যার গারফিল্ড সোবার্স ট্রফি জিতে নেন তিনি।
ক্রিকেট সম্পর্কে আরও জানতে পড়ে নিন এই বইগুলো
১) শচীন রূপকথা
২) নায়ক
৩) সাকিব আল হাসান – আপন চোখে ভিন্ন চোখে