বিশ্বকাপের কয়েকশ’ ম্যাচ থেকে ক’টি স্পেল বেছে নেয়ার ঝক্কি হলো এই যে, গ্রীষ্মের ভয়াবহ তাপদাহে ঘামটা না বেরোলেও এই কাজটা করতে গিয়ে ঘাম ঠিকই আঁচড় কেটেছে। গলদঘর্ম অবস্থার সার্থক উদাহরণ। এ কি মুখের কথা? বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে সুন্দরতম মঞ্চে কে না ঢেলে দিতে চায় সবটুক? সেখানে সফল যারা, তাদের নিয়ে গল্প শোনাতে হবে? তাও আবার সম্ভব নয় এক এক করে সব্বাই, সেখান থেকে বেছে নিতে হবে হাতে গুণে কয়েকজন! এই করতে গিয়ে মন রক্ষা হয় না সবার।
তাহলে? তাহলে আর কী!
চিরন্তন সেই ইংরেজী শব্দটা… স্যরি! ভদ্র ভাষায় অক্ষমতার চমৎকার চাদর। চাদরের ফোঁকর গলে যে ক’জন বেরিয়েছেন, তাদের নিয়েই খোলা হবে আমাদের আজকের গল্পের ঝাঁপি। বাকিরা না হয় অন্যদিন!
গল্পের চরিত্র
পাঁচ ঘটনার পাঁচজন থাকছেন আজকের আয়োজনে। ইডেন পার্ক রূপকথার মহান দুই যোদ্ধা ট্রেন্ট বোল্ট আর মিচেল স্টার্ক নেই এবারে। নেই উইনস্টন ডেভিস, লাসিথ মালিঙ্গা, আশিষ নেহরা, টিম সাউদি, শেন ওয়ার্ন কিংবা রিচার্ড হ্যাডলির মতো অনেক মহাতারকাও। আয়োজনের পরিসরস্বল্পতা, আর গল্পের আসরের কলেবর সীমাবদ্ধতায় বন্দী আমরা। চাইলেও আয়েশ করে হাত-পা ছড়িয়ে আসর জমিয়ে আলাপ জমানোর সুযোগ নেই। তাহলে নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতর গল্পের ডালপালা ছড়িয়ে দেখাই যাক না, ছড়ায় কতটা!
গ্যারি গিলমোর: ৬/১৪, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, বিশ্বকাপ ১৯৭৫
সেই বিশ্বকাপে তখন পর্যন্ত একটা ম্যাচও খেলেননি গিলমোর। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো খেলতে নামেন। প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল, এদিকে আবার স্বাগতিক, প্রত্যাশার বিশাল জগদ্দল পাথরই হয়তো চেপে বসেছিল। তাই আর মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ হয়নি। নাকি প্রশ্নটা ছিল সিলেবাসের বাইরে?
জেফ থমসন আর ডেনিস লিলি। অস্ট্রেলিয়ার অহংকারের ধন। তাবৎ বিশ্ব ক্রিকেট ওদের দেখে সমীহের চোখে। দুই প্রান্ত থেকে দুইজন এমনভাবে ধেয়ে আসেন, ছুঁড়ে মারেন এমন সব দ্রুতগতির গোলা, স্ট্যাম্প বাঁচাবেন কী, নিজেদের বাঁচানোই যে দায় হয়ে ওঠে! ইংলিশ ক্রিকেটের সমস্ত প্রস্তুতিও হয়তো সেদিন ঐ দু’জন ঘিরে ছিল। সেখানে আচমকা চলে এলেন গ্যারি গিলমোর। বাঁহাতি সুইং ও মিডিয়াম ফাস্ট বোলার। ইংলিশ গ্রীষ্মের সহায়ক কন্ডিশন পেয়ে তার আপাতনিরীহ পেস আর সুইংটাই হয়ে উঠল খেলার অযোগ্য আর ভয়াবহ। তার চমৎকার লাইন-লেংথ আর মিতব্যয়ী আঁটসাঁট বোলিং তার হয়ে উঠল ভীষণ বিভীষিকা। ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা এলেন আর গেলেন। আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দিতে বাদ রইলেন না, বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান ডেনিস অ্যামিস, টনি ক্রেইগ, এমনকি কিংবদন্তি উইকেটকিপার অ্যালান নটও! ইংলিশ দর্শক-সমর্থক আর অনুরাগীদের চূড়ান্ত হতাশ করে গিলমোর ধ্বসিয়ে দিলেন ইংলিশ টপ অর্ডার। আরো বিশেষ করে বললে, ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপ।
তার ভয়াবহ বোলিংয়ে ৩৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসল ইংল্যান্ড। গিলমোর একাই নিয়েছেন ছয়টি!
১২ ওভার (৬০ ওভার ম্যাচ ছিল তখন, একজন সর্বোচ্চ ১২ ওভার।) বোলিং করে ১৪ রান বিলিয়ে ৬ উইকেট পকেটে পুরে গিলমোর যতক্ষণে বিরাম নিলেন, ততক্ষণে যা সর্বনাশ হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। অধিনায়ক মাইক ডেনিসে ভর দিয়ে তারপরও কোনোমতে ৯৩ পর্যন্ত পৌঁছায় ইংল্যান্ড।
ব্যাটিংয়ে নেমে আবারও গিলমোর-মহাকাব্য। ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া দিশা পায় গিলমোরে। তার ২৮ বলে অপরাজিত ২৮ রানে ভর দিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করতে সমর্থ হয় অস্ট্রেলিয়া, প্রথম ফাইনালে সবার আগে পৌঁছতে হয় সক্ষম।
গিলমোরের উপর সেদিন কী ভর করেছিল, কে জানে! নাকি গিলমোর ভর করেছিলেন ইংল্যান্ডের উপর?
কে বলে অস্ট্রেলিয়া হারিয়েছিল ইংল্যান্ডকে? আসলে তো গিলমোরের কাছেই হারতে হয়েছিল স্বাগতিকদের, অস্ট্রেলিয়া নয়!
গ্লেন ম্যাকগ্রা: ৫/১৪, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বিশ্বকাপ ১৯৯৯
নিউ জিল্যান্ড ও পাকিস্তানের কাছে হেরে সংশয়ে পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দৌঁড়ের ভবিষ্যৎ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচটা জিততেই হবে, নইলে সুপার সিক্সে জায়গা মেলার সুযোগ নেই। ধরতে হবে বাড়ির পথ। ম্যাকগ্রা বাড়ির জন্য কেনাকাটা করবেন কী, উল্টো দিলেন হুমকি! নিজের লেখা কলামে ম্যাচের আগে পরিষ্কার জানিয়ে রাখলেন, তিনি পাঁচ উইকেট নেবেন, এবং তার সঙ্গে প্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারার উইকেটটাও চাই তার।
বুঝুন অবস্থা! কোথায় নিজেদের কোণঠাসা ভেবে নত থাকবেন, কথায় ফোটাবেন বিনয়, তা নয়! তিনি প্রতিপক্ষের প্রতি যেন নিশ্চিত বার্তা দিয়ে রাখলেন, ‘মাঠে এস বাছাধন! স্রেফ পুঁতে ফেলব।’
শেরউইন ক্যাম্পবেল আর জিমি অ্যাডামসকে পরপর দুই বলে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক বলের সম্মুখীন করলেন লারাকে। সেই যাত্রায় লারা সামলে নিলেও পরেরবার আর পারেননি। তার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে স্ট্যাম্পের বেল ছিটকে দেয় ম্যাকগ্রার বল। নিজের সামর্থ্যের প্রতি এমন সুনিশ্চিত আস্থা, আর নিজের কথার প্রতি এমন অটুট দৃঢ়তা তার আগে-পরে আর দেখেনি ক্রিকেট। নিজের কথার পক্ষে জোরালো প্রমাণ হাজির করেন পরের স্পেলেও। প্রথম স্পেলে তিনটি, পরের স্পেলে আরো দুইটি, মোট পাঁচ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তো পুঁতলেনই, সাথে বিশ্ব ক্রিকেটকেও যেন জানিয়ে দিলেন, ম্যাকগ্রা যা বলেন, সেটাই করেন!
ম্যাকগ্রার বাক্যের একচুল নড়চড় হওয়ার সুযোগ নেই। তাই ২০০৭ বিশ্বকাপের ঠিক আগে যখন তিনি ঘোষণা দিলেন, বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হওয়াই তার লক্ষ্য, প্রতিপক্ষের কাল ঘাম বেরিয়ে গিয়েছিল। আশ্চর্য হচ্ছে, ম্যাকগ্রা ঠিক ঠিক ওয়াসিম আকরামকে দ্বিতীয়তে ঠেলে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে গিয়েছিলেন!
কলিন্স ওবুইয়া: ৫/২৪, প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা, বিশ্বকাপ ২০০৩
সেবারের আশ্চর্য বিস্ময় ছিল কেনিয়া!
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আফ্রিকায় বিশ্বকাপ, কালো মানুষের দেশে বিশ্বকাপ, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসরের আয়োজক মানবদরদী নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা, এবং সহআয়োজক জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়া। শুরুটা হলো ভয়ংকর। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পচেফস্ট্রুমে ভুলে যাওয়ার মতো বিশ্বকাপ সূচনা হলো কেনিয়ার। অবশ্য পরের ম্যাচে কেপটাউনে কানাডার বিপক্ষে পেল প্রথম জয়ের দেখা। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় জয়, প্রথমটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সেই পুনের নেহেরু স্টেডিয়ামে, ১৯৯৬ বিশ্বকাপে। তারপর সত্যিকার স্বাগতিক হওয়ার সুযোগ মিলল, খেলা পড়ল নাইরোবির সুবিখ্যাত জিমখানা ক্লাব গ্রাউন্ডে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত ম্যাচটি দেখল না আলোর মুখ। কেনিয়া পেল ওয়াকওভার। রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে নিউ জিল্যান্ড শেষমেশ কেনিয়া যেতে রাজি হয়নি। ফলে কাগজে-কলমে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় জয়ও মিলে গেল কেনিয়ার।
পরের ম্যাচটিও নাইরোবিতে, তারপর আর নেই। বাকি দুই ম্যাচ খেলতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকায়। সাকুল্যে এই দু’টি ম্যাচই পড়েছিল কেনিয়ার ভাগ্যে। তার মধ্যে আবার একটি মাঠেই গড়ায়নি। শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচটি তাই হয়ে গেল কেনিয়ার মাঠে একমাত্র বিশ্বকাপ ম্যাচ!
কি আশ্চর্য, কেনিয়া সেই এক ম্যাচেই গড়ে ফেলল ইতিহাস! আরো বিশেষ করে যদি বলি, ইতিহাস গড়লেন কলিন্স ওবুইয়া!
স্কোরবোর্ডে মোটামুটি একটা স্কোরই দাঁড় করিয়েছিল কেনিয়া। ২১০ রান, খুব বড় কিছু নয়। শ্রীলংকার ব্যাটসম্যানদের নামগুলো দেখলে হয়তো আপনার আরো নগণ্য মনে হবে স্কোরটা। মারভান আতাপাত্তু, সনাৎ জয়াসুরিয়া, অরবিন্দ ডি সিলভা, হাশান তিলকারত্নে, মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা, রাসেল আরনল্ড – কেউ একজন দাঁড়িয়ে গেলেই শেষ। আর দু’জন দাঁড়িয়ে গেলে তো হেসেখেলেই হেরে যাবে কেনিয়া।
অথচ সেই দুর্দান্ত ব্যাটিং লাইনআপ কি না তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল কলিন্স ওবুইয়ার সামনে। তার লেগব্রেকের কোনো জবাবই দিতে পারল না শ্রীলংকা। ক্ল্যুলেস হয়ে ফিরলেন দুঃস্বপ্নের মতো বিশ্বকাপ কাটানো মাহেলা জয়াবর্ধনে, সাঙ্গাকারাও লেগব্রেকে বেসামাল হয়ে ক্যাচ দিলেন ওবুইয়ার আরেক ভাই উইকেটকিপার কেনেডি ওবুইয়ার হাতে। চামিন্দা ভাসও ওবুইয়াতে পথ হারালেন, হাশান তিলকারত্নেও ছিলেন ওবুইয়ার শিকার। শ্রীলংকার ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে অবাক ব্যতিক্রম হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অরবিন্দ ডি সিলভার হন্তারকও ছিলেন ওবুইয়া। তার দুরন্ত ফাইফার কেবলমাত্র শ্রীলংকাকে হারায়নি, কেনিয়ার সুপার সিক্সে উত্তরণও নিশ্চিত করে। আরো একটু সুদূর চিন্তা করলে, কেনিয়ার সেমিফাইনাল পর্যন্ত স্বপ্নময় অভিযাত্রার বিজয়লেখাও নিশ্চিত করে তা।
অ্যান্ডি বিকেল: ৭/২০, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, বিশ্বকাপ ২০০৩
অ্যান্ডি বিকেলের উপর সেবার কী ভর করেছিল, কে জানে! অদ্ভুত কোনো এক শক্তিবলে বারবার ত্রাণকর্তা হয়ে উদ্ধার করেছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। যখনই মনে হয়েছে অস্ট্রেলিয়া কিঞ্চিৎ পশ্চাৎপদ, খানিক বেকায়দায়, ঠিক তখনই কোনো ভীষণ শক্তিবলে ত্রাতা হয়ে দেখা দিয়েছিলেন তিনি।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে খানিকটা নয়, অনেকটাই বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ব্যাটিংয়ে-বোলিংয়ে, দুই বিভাগেই। দুই বিভাগেরই ত্রাণকর্তা হয়ে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের মহারথে চড়িয়ে কক্ষপথে রেখেছিলেন তিনিই।
মার্কাস ট্রেসকোথিক আর নিক নাইটের ব্যাটে প্রায় ৭ রানরেটে ইংলিশ আক্রমণে যখন ব্যতিব্যস্ত অস্ট্রেলিয়া, ঠিক তখনই তার প্রথম আঘাত। নাইটকে বিদায় বললেন বিকেল। তারপর একে একে মাইকেল ভন, নাসের হুসেইন আর পল কলিংউডকে পর্যদুস্ত করে ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডের চেহারা বানিয়ে দিলেন ৬৬/০ থেকে ৮৭/৫!
বিকেলের তোপে তখন ইংলিশ ব্যাটিংয়ে যেন ঘনিয়েছে আঁধার। অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ আর অ্যালেক স্টুয়ার্ট সে যাত্রা খানিক সামলে যেই ভদ্রস্থ একটা লক্ষ্যের পথে যাত্রা করছিলেন, তখন আবার এলেন তিনি। ফ্লিনটফ-স্টুয়ার্ট-জাইলস তিনজনই ফিরলেন তার পরপর তিন ওভারে। ইংল্যান্ড ২০৪-এর বেশি যাওয়ার আর সুযোগ পেল না। অ্যান্ডি বিকেল শেষ করলেন ১০ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৭ উইকেট, এই বোলিং ফিগারে!
ইংল্যান্ডের ৮ উইকেটের ৭টিই ছিল তার। ট্রেসকোথিকের উইকেটটাই কেবল ম্যাকগ্রার জন্য ছেড়েছিলেন সেদিনের ইংল্যান্ড-ঘাতক বিকেল। ব্যাটিংয়েও ছিলেন তিনি। ১৩৫ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা অস্ট্রেলিয়াকে বেভানের সঙ্গে জুটি বেঁধে হারতে দেননি তিনিই। ৩৬ বলে অপরাজিত ৩৪ করে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে তবেই মাঠ ছেড়েছিলেন।
শেন বন্ড: ৬/২৩, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, বিশ্বকাপ ২০০৩
তিনি জেমস বন্ড নন, শেন বন্ড। গতিকে ভালোবাসা, গতির জন্য সবটুক উজার করা একজন ফাস্ট বোলার।
অস্ট্রেলিয়া সেবার ফুৎকারে স্রেফ উড়িয়ে দিচ্ছিল সবাইকে। অস্ট্রেলিয়ার চোখে চোখ রেখে দু’কথা বলবে, তেমন কেউ নেই যেন। গ্রুপপর্বে সবগুলো ম্যাচজয়ের সঙ্গে বিশাল নেট রানরেটও ছিল তাদের দাপটের সার্থক প্রমাণ। সুপার সিক্সের প্রথম ম্যাচে ফুঁ মেরে হাওয়া করে দিল শ্রীলংকাকে।
পরের ম্যাচ ছিল নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই প্রথম খানিক কেঁপে উঠল অস্ট্রেলিয়া, আরো বিশেষ করে বললে, অজি-অহংয়ের সাম্রাজ্য নাড়িয়ে দিলেন শেন বন্ড। অস্ট্রেলিয়ার দোর্দণ্ড প্রতাপে দাঁত বসালেন তিনি, যেন চোখে চোখ রেখে জানালেন, ‘তোমাদের স্তব্ধ করে দেয়ার মতো লোক পৃথিবী থেকে এখনো লোপ পায়নি!’
প্রথম স্পেলে ৬ ওভারে কুড়ি রান দিয়ে ধ্বসিয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়ান টপ অর্ডার। গিলক্রিস্ট-হেইডেন-পন্টিং, অস্ট্রেলিয়া ৩১ রানে হারালো তিনজনকেই। বন্ডই নিলেন সবক’টা। প্রথম স্পেল শেষে তার বোলিং ফিগার দাঁড়াল এরকম: ৬-০-২০-৩।
খানিক বিরতি দিয়ে অধিনায়ক আবার ডাকলেন তাকে, হতাশ করেননি মোটেও। মাইকেল বেভান ও ডেমিয়েন মার্টিনের জুটিটা তো ভাঙলেনই, অস্ট্রেলিয়াকে পরিণত করলেন ৮৪/৭ ধ্বংসস্তুপে। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে প্রথম ওভারে দিয়েছিলেন মোটে ১ রান। পরের ওভারে মার্টিন ও হগকে ফিরিয়ে, নিলেন ডাবল উইকেট মেইডেন। পরের ওভারে আবার আঘাত তার, ইয়ান হার্ভের স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলে আবারও উইকেট মেইডেন। শেষ ওভারে দুই রান দিলে তার বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ১০-২-২৩-৬! দ্বিতীয় স্পেলে ৪ ওভারে ৩ রান দিয়ে দুই মেইডেনসহ মোট ৩ উইকেট!
অনুমান করতে পারেন, বন্ড কতটা বিধ্বংসী আর মেজাজি ছিলেন সেদিন?
অবশ্য ঐ বোলিং ফিগার হয়তো আপনাকে ঠিকঠাক বন্ডের মেজাজের প্রকাশ বোঝাবে না। আপনি যদি ম্যাচটা চাক্ষুষ করে থাকেন, তবেই নিশ্চিত হবেন, ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা একটি স্পেল ছিল সেটা!
যদিও ম্যাচের ফলাফল মোটেই নিউ জিল্যান্ডের অনুকূল ছিল না। কিন্তু তাতে কী? বন্ড তো আর মিথ্যে হয়ে যান না, মিথ্যে হয়ে যায় না সেদিনকার তার ঐ দাপুটে স্পেলটাও।
খেলাধুলার চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/
ক্রিকেট সম্পর্কে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলোঃ