তথ্য, এই মুহুর্তে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য-ই পৃথিবীর সবচেয়ে দামী জিনিস। গত বছর এই তথ্যের মূল্য, তেলের মূল্যকেও ছাড়িয়ে গেছে। ট্রিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি চলছে কেবল এই তথ্যে ভর করে।
নভেম্বর ৮, ২০১৬। পৃথিবীর সব মানুষকে চমকে দিয়ে অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটে গেলো। হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে গেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অথচ হিলারি ৪৮.২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন, আর ট্রাম্প ৪৬.১ শতাংশ। বাকি ৫.৭ শতাংশ মানুষ ভোট দিতেই যায়নি। ভোট বেশি পেয়েও ইলেক্টোরাল ভোটের মারপ্যাঁচে হেরে গেছেন হিলারি ক্লিনটন। এই হলো আমাদের জানা গল্প।
যে গল্পটা আমরা তখনও জানতাম না, সেটা বেরিয়ে এসেছিল কিছুদিন পরে। জানা গিয়েছিল, নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। একই কোম্পানি কলকাঠি নেড়েছিল ব্রেক্সিটের পেছনেও। কীভাবে করলো তারা এসব? কীভাবে ফাঁস হলো তাদের গুমর? এইসব কিছু নিয়েই সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে নেটফ্লিক্সের মৌলিক ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র দ্য গ্রেট হ্যাক।
১
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলেকজান্ডার নিক্স এবং একদল দক্ষ তথ্য বিশ্লেষকের হাত ধরে ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার। ইংরেজির ভারিক্কি শব্দে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার পরিচয়- পলিটিক্যাল কনসাল্টিং অ্যান্ড ডেটা ফার্ম। খাঁটি বাংলায় বললে, তাদের উদ্দেশ্য একটিই- নির্বাচনের বাজার নিয়ন্ত্রণ।
গণতন্ত্র যে সবার নিজস্ব পছন্দ, এটি তারা বিশ্বাস করতো না। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কিত তথ্য দিয়ে একটি মানুষকে বিশ্লেষণ করার জন্য পাঁচ হাজার করে ডেটা পয়েন্ট ছিল তাদের কাছে! একটু ভেবে দেখুন তো, নিজের ব্যাপারে পাঁচ তথ্য আপনি নিজেই জানেন কিনা?
এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে ও নানা হিসেব কষে তারা বের করতো, একটি নির্দিষ্ট এলাকার কোন কোন মানুষ, কাকে ভোট দেবে- সেই প্রশ্নে এখনো দ্বিধায় ভুগছে। এই মানুষদেরকে তারা বলতো, পারস্যুডেবলস। অর্থাৎ, ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে এদেরকে চাইলেই ব্যবহার করা যাবে। এদের দিয়ে ইচ্ছেমতো প্রার্থীকে ভোট দেওয়ানো যাবে, কিংবা বিপরীত দলের ভোটারদের ভোট দিতেও এদের নিরুৎসাহিত করা যাবে!
যেমন, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাকোর কথা ধরা যাক। দেশটিতে দুটি মূল দল ছিল। একদলের মূল ভোটার হলো কৃষ্ণাঙ্গরা। আরেকদলের মূল ভোটার হলো ত্রিনিদাদে বসবাসরত ভারতীয়রা। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা এই দ্বিতীয় দলটির হয়ে কাজ করছিল।
ক্যাম্পেইনের মূল ‘টার্গেট’ ছিলেন তরুণ-তরুণীরা, যারা সেবারই প্রথম ভোটার হয়েছেন। ক্যাম্পেইনটিকে সাজানো হয়েছিল একদমই অরাজনৈতিক, খুবই আকর্ষণীয় এবং ‘ট্রেন্ডি’ ধাঁচে। কারণ, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ভাষ্যমতে, সদ্য এই ভোটাররা রাজনীতি নিয়ে যেমন মাথা ঘামায় না, তেমনি তারা খুবই অলস। তাই ট্রেন্ডের ছোঁয়া না থাকলে, বা আকর্ষণীয় না হলে, তারা কিছুতেই অংশ নিতে চাইবে না।
ভারতীয়দের হয়ে কাজ করলেও ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা টার্গেট করলো প্রতিপক্ষের ভোটারদের। সেই পুরনো প্রবাদটির মতো- “ঘোড়দৌড়ে বাজি কখনো ঘোড়ার ওপরে ধরতে হয় না। ধরতে হয় প্রতিপক্ষের জকির উপরে।”
ডু সো– নামের একটি ক্যাম্পেইনে নামলো তারা। ক্যাম্পেইনের কাজ হলো দলীয়ভাবে নাচ, গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা, এবং এগুলোতে অংশ নেওয়াকে ‘কুল’ বা আকর্ষণীয় হিসেবে দেখানো! প্রতিপক্ষের সদ্য এই ভোটারদেরকে বলা হলো, ভোট দেয়ার চেয়ে অরাজনৈতিক এসব কাজে অংশ নেওয়া ভালো। কাজেই, “ডু সো। ডোন্ট ভোট!”
বিলিয়ন ডলার খরচ করে এলাকায় এলাকায় ক্যাম্পেইন করা হলো। ক্যাম্পেইনের মুখ হিসেবে নেওয়া হলো কিছু কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে। কাজেই দেখা গেলো, ভোটের দিন এই কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর-কিশোরীরা ভোট দিতে যায়নি। কারণ, ‘দে আর কুল’! এদিকে, ভারতীয় বাবা-মায়েদের কথামতো তাদের ছেলে-মেয়েরা সবাই ভোট দিয়েছে। ফলে, ৬ শতাংশ ভোট ব্যবধানে দ্বিতীয় দলটি জিতে গেল! এই হলো কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা।
কথা হলো, তারা ভোটারদের বিশ্লেষণের জন্য এত এত তথ্য পেলো কোথায়? উত্তর- আমাদের কাছ থেকেই। এক ফেইসবুকের কাছ থেকেই তারা ৩০ মিলিয়ন মানুষের ৫৭০টি ডেটা পয়েন্টের তথ্য পেয়েছিল! মানুষের লাইক, কমেন্ট, শেয়ার, স্ট্যাটাস, বিজ্ঞাপনে ক্লিক ইত্যাদি ব্যবহার করে এসব তথ্য পেয়েছিল তারা।
একইভাবে ইনফোগ্রুও নামে এক কোম্পানি থেকে ৬০ মিলিয়ন এবং ডাটা ট্রাস্ট থেকে ২৬ মিলিয়ন মানুষের তথ্য নিয়েছিল তারা। তাদের গর্বিত স্লোগান-ই ছিল এমন: “Our Data Makes Us Different” অর্থাৎ, “আমাদের তথ্যই আমাদেরকে অনন্য করে তুলেছে!”
তাদের সাবেক অপারেশন চিফ জুলিয়ান হুইটল্যান্ড এরকম বেশ কিছু ভয়াবহ এক্সপেরিমেন্টের কথা বলেছিলেন। বিভিন্ন দেশে, বাস্তবিক অর্থেই মানুষের উপর বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি পরীক্ষা করে দেখেছেন তারা। এবং মোটামুটি বেশ কিছু পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর, সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় দুটি ঘটনার নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নেয় কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা- ব্রেক্সিট এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, ২০১৬।
২
ফেইসবুক থেকে ৩০ মিলিয়ন মানুষের তথ্য কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা পেল কেমন করে?
২০১৪ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাশিয়ান-আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী আলেক্সান্দার কোগান ফেসবুকের জন্য ‘দিস ইজ ইওর ডিজিটাল লাইফ’ (thisisyourdigitallife)- নামে একটি কুইজ অ্যাপ তৈরি করেন। মানুষ সানন্দেই এই কুইজে অংশ নেয়। এর মাধ্যমে প্রায় দুই লক্ষ সত্তর হাজার ফেইসবুক ব্যবহারকারী সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তারা।
ব্যবহারকারীদেরকে জানানো হয়, এ তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে গবেষণার জন্য। উদ্দেশ্য- ‘কেমন করে ব্যবহারকারীদেরকে আরো ভালো সেবা দেওয়া যায়’। টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন না পড়ায় কিংবা সচেতন না থাকার কারণে মানুষ বুঝতেই পারেনি, তাদেরকে আসলে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সে সময় ফেইসবুকের মাধ্যমে থার্ড-পার্টি, মানে ফেইসবুকের বাইরের আর কোনো অ্যাপ ব্যবহার করলে, অ্যাপটি সেই মানুষটির বন্ধুদের তথ্যও সংগ্রহ করতে পারতো। এটা তার বন্ধুরা জানতেও পারত না! এভাবে কোগান ব্যবহারকারীদের অনুমতি ছাড়াই প্রায় পাঁচ কোটি ফেইসবুক ব্যবহারকারী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে ফেলেন।
গবেষণার কথা বলা হলেও, বাস্তবে এই সব সংগৃহীত তথ্য তিনি বিক্রি করে দেন কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে। সে সময়ের এই পাঁচ কোটি প্রোফাইল ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের এক-তৃতীয়াংশ এবং মোট ভোটারের এক-চতুর্থাংশ। অর্থাৎ এক ঢিলে প্রায় ৫০ মিলিয়নের মতো মানুষের তথ্য হাতে পেয়ে যায় কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা।
ফেইসবুক তাদের বিবৃতিতে পরে জানিয়েছে, এটা নাকি তারা জানতোই না! যদিও কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার প্রাক্তন কর্মী ব্রিটনি কাইজারের বক্তব্য, জাকারবার্গ এসব জানতেন। এ কথা অবশ্য সরাসরি আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি বলেননি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে যে এমনটা বলেছিলেন, সেটির প্রমাণ আছে নেটফ্লিক্সের সেই ডকুমেন্টারিতেই।
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার তথ্য থেকে দেখা যায়, পাঁচ কোটির মাঝে প্রায় তিন কোটি মানুষের তথ্য তারা নিয়মিতহারে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেছে।
৩
গুমর ফাঁসের গল্পটি শুরু হয় মূলত ডেভিড ক্যারলের হাত ধরে। ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর কিছু খোঁজ-খবর করে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার কথা জানতে পারেন তিনি। যথেষ্ট সচেতন ছিলেন আগে থেকেই। তাই, মার্কিন নাগরিক হয়েও যুক্তরাজ্যের আদালতে প্রথম কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।
কাজটিতে ছিল হাজারো বাধা। সেসব তিনি সমাধান করেছিলেন নিজের উদ্যোগে। তার বক্তব্য ছিল সরল। তার যেসব ডেটা পয়েন্ট ওদের কাছে আছে, সেটা তিনি দেখতে চান। এর আগে কেউ এ ব্যাপারে এত গুরুত্ব দিয়ে ভাবেনি। এবারে সবাই সচেতন হয়ে উঠল। নোটিশ দেয়া হলো কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাকে।
তারা প্রথমে মানুষের তথ্য এভাবে ব্যবহারের কথা অস্বীকার করলো। এরকম সময় ভয়াবহ আঘাত হয়ে এল তাদেরই প্রাক্তন কর্মী ক্রিস উইলি। তার কথার সূত্র ধরে জানা গেলো, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ আছে ব্রিটনি কাইজারের কাছে। মুখ খুললেন কাইজার।
এরকম সময়ে একটি ভয়াবহ ভিডিওচিত্র ফাঁস হয়ে যায় আলেকজান্ডার নিক্সের। সেখানে তিনি নিজে স্বীকার করেছেন, হিলারিকে নিয়ে কীভাবে ‘ক্রুকড হিলারি’ ক্যাম্পেইন করা হয়েছে এবং কীভাবে এই সবকিছুর পেছনে তারাই কলকাঠি নেড়েছেন।
সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, প্রত্যেক পারস্যুডেবল ভোটারের জন্য তারা কাস্টোমাইজড আলাদা ভিডিও বানিয়েছে, তৈরি করেছে বিজ্ঞাপন। সেই বিজ্ঞাপন মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। আর সবচেয়ে বেশি টাকা তারা খরচ করেছে ফেইসবুকের পেছনে!
একই কাজ তারা ব্রেক্সিটের সময়েও করেছে। দ্বিধান্বিত মানুষকে ম্যানিপুলেট করেছে। বুঝিয়েছে, এ পথে নয়, ও পথে যেতে হবে। এবং এ জন্য প্রত্যেকের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে যিনি যা অপছন্দ করেন, প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থী তা-ই করতে পারেন বলে দেখিয়েছে তারা।
ডেভিড ক্যারল, ক্রিস উইলি, ব্রিটনি কাইজারের হাত ধরে কেমন করে এতসব তথ্য বেরিয়ে এলো, এত এত ক্ষমতাবান মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তারা কীভাবে এগিয়ে গেছেন, এর পেছনে কতটা মহৎ উদ্দেশ্য ছিল, আর কতটা ছিল ব্যক্তিস্বার্থ- এই সব কিছুই এদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে উঠে এসেছে চলচ্চিত্রটিতে।
সেইসঙ্গে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সাবেক চিফ অফ অপারেশন্স ডেভিড হুইটল্যান্ডের বক্তব্য থেকে জানা যাবে, তারা সে সময় কী ভেবেছেন এবং কীসের মধ্যে দিয়ে গেছেন।
শেষ পর্যন্ত কী হলো কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার পরিণতি? কেউ কি চাইলেই এভাবে ফেইসবুক থেকে মানুষের তথ্য নিয়ে যেতে পারবে? এ নিয়ে ফেইসবুক কী ভাবছে বা কী করতে চাইছে? আমরা নিজেরা-ই বা এ ব্যাপারে কী করতে পারি? এইসব কিছুই উঠে এসেছে ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্রটিতে।
আমাদের ডিজিটাল জীবন, সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভরতা ইত্যাদির ভেতরের কুৎসিত সত্যগুলোর কিছুটা আঁচ পেতে চাইলে দ্য গ্রেট হ্যাক একবার হলেও দেখা আবশ্যক।
৪
চলচ্চিত্র পর্যালোচনায় অবধারিতভাবেই গল্প, অভিনয় এবং বলার ধরন নিয়ে কথা আসে।
এখানে গল্পের মাঝে বানানো কিছু নেই। অর্থাৎ এটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত কোনো ফিকশন নয়, বরং এটি নিজেই পুরোপুরি সত্য ঘটনা। দ্য গ্রেট হ্যাক ডকুমেন্টারিতে দেখানো সব কিছু শতভাগ সত্যি। প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি ঘটনা- সবকিছু। কাজেই, তাদের অভিনয় কেমন হয়েছে- এ প্রশ্ন এখানে আসবে না। কথা হলো, গল্প বলার ধরন, মানে এক্সিকিউশন কেমন?
এক কথায় উত্তরটি হলো- চমৎকার! শুরুর অংশ দেখে বরং শতভাগ চলচ্চিত্র বলেই মনে হবে। ধীরে ধীরে গল্পের গভীরে যেতে যেতে বেরিয়ে আসতে থাকবে সত্য। ঘটনার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন চরিত্রের সাক্ষাৎকার যুক্ত করা হয়েছে। মার্ক জাকারবার্গ যখন মার্কিন আদালতে হাজির হয়েছেন, কথা বলছেন তথ্য-কেলেঙ্কারি নিয়ে, তখন ব্রিটনি কাইজার ও ডেভিড ক্যারল রুপালি পর্দার সামনে বসে দেখছেন, প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। সঙ্গে রয়েছে ভিএফএক্সের দারুণ ব্যবহার, যা দর্শককে মুগ্ধ করবেই।
যে বুদবুদের মাঝে আমাদের বসবাস, সেই বুদবুদের বাইরে তাকানোর একটা ভালো সুযোগ এই চলচ্চিত্র। এ প্রসঙ্গে জুলিয়ান হুইটলারের একটা কথা উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেছেন,
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার মতো কোম্পানি যুগ যুগ ধরেই থাকবে। আমার দুঃখ, আমাদের কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সাথেই এমন হলো!
এ কথার সত্যতা পাওয়া যায় সাম্প্রতিক সময়ের ফেইস-অ্যাপ ব্যবহারের রমরমা থেকে। এই অ্যাপটিও এখন তদন্তের মুখে পড়েছে। অনেকেই সরলমনে ভাবেন, আমার তথ্য আর এমনকি দামি, নিলে নিলো, কী আর হবে! তারা বোঝেন না, এর ফলেই ব্রেক্সিট হয়, ক্ষমতায় আসে ট্রাম্পের মতো মানুষেরা। অর্থনীতির বাজার হয়ে যায় এলোমেলো, হাজার হাজার মানুষ হয়ে পড়ে গৃহহীন। হ্যাঁ, ব্রেক্সিট, মার্কিন নির্বাচন আমাদেরকে এর বাস্তবতা দেখিয়েছে।
এসবের হাত ধরে শুধু বর্তমান গ্রহীতা বা ব্যবহারকারীরাই নয়, বরং একটা দেশের অনাগত ভবিষ্যত প্রজন্মকে কীভাবে ব্যবহার করা যাবে, এরও একটা সাধারণ ধারণা পেয়ে যায় কোম্পানিগুলো। আপনার কাছে মূল্যহীন মনে হওয়া একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য কাজ করে ট্রিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রির জ্বালানী হিসেবে। ফলে জিতে যায় কোগান-ফেসঅ্যাপ-কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। হেরে যাই আমি-আপনি-আমরা।
দ্য গ্রেট হ্যাক দেখলে এই সত্যটি মর্মে মর্মে অনুভব করা যাবে।