‘প্রথম প্রহর’ দিয়ে নাট্যজগতে আবির্ভাব, আর জনপ্রিয়তার তুঙ্গে চলে যাওয়া ‘এইসব দিনরাত্রি’র মাধ্যমে। নির্মাতা হুমায়ুন আহমেদ ধারাবাহিক নাটকের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেলেও পরবর্তীকালে তাকে একক নাটকেই বেশি দেখা গেছে। এই এক পর্বের নাটকগুলোর ক্ষেত্রে তিনি নিয়ে আসেন এক অন্যরকম বিপ্লব। দারুণ সব হাস্যরসের মাধ্যমে কীভাবে সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সব বার্তা মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে দেওয়া যায়, সেটিরই অনবদ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিনি।
অসাধারণ সেসব এক পর্বের নাটকের মধ্য থেকে সেরার তালিকা করা একটু কঠিনই। আরো কঠিন হচ্ছে অল্প কয়টি নামে সে তালিকাকে সীমাবদ্ধ রাখা। তারপরও হুমায়ূন আহমেদের ঐ নাটকসমূহ থেকে তিনটি নাটককে বেছে নিয়ে, সেই নাটকগুলোর ব্যাপারে কিছু তথ্য দিতেই আজকের এই লেখা।
একদিন হঠাৎ
কালজয়ী ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’-এর অভাবনীয় সাফল্যের পর হুমায়ূন আহমেদ পৌঁছে যান জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখরে। তাই স্বাভাবিকভাবেই টিভি পর্দায় আবারও তার রচিত নাটক দেখার জন্য দর্শকমহল মুখিয়ে ছিল। এমনই এক সময়ে ১৯৮৬ সালের ঈদ উপলক্ষ্যে একটি একক নাটক রচনা করেন হুমায়ূন আহমেদ। এইসব দিনরাত্রির মতো এই নাটকেও নির্দেশনার দায়িত্বে ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান।
এক ঘণ্টার এই নাটকের মূল গল্প আবর্তিত হয়েছিলো চিকিৎসক ফরিদের পরিবারকে ঘিরে। পরিবারে আছেন ফরিদের স্ত্রী সোমা, এক পাঁচ বছরের ছেলে, অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ বাবা, ছোট বোন মিলা আর এক আধপাগল মামা। পরিবারের মূল-কর্তা ফরিদের বাবা, সবাই তার ভয়ে তটস্থ থাকে। চিকিৎসক হিসেবে যথেষ্ট সফল হওয়া সত্ত্বেও বাড়িতে একদমই চুপচাপ থাকে ফরিদ। স্বামীর এহেন নিস্পৃহায় স্ত্রী কিছুটা হলেও বিরক্ত।
তবু সবকিছু বেশ ভালোই চলছিলো। কিন্তু সংবাদপত্রের একটা নিরীহ পরিসংখ্যানই হুট করে পরিবারটিতে এক ঝামেলার সৃষ্টি করে। ফরিদের বাবা সংবাদপত্র পড়ে জানতে পারেন যে, ঢাকা শহরে যতজন মানুষ গাড়িচাপা পড়ে মারা যান তার ৩৭% ই হচ্ছে স্কুলের শিক্ষার্থী। এই পরিসংখ্যানে আতঙ্কিত হয়ে তিনি তার নাতি কাজলকে আর স্কুলে যেতে দেবেন না বলে ঘোষণা দেন।
এদিকে ফরিদের বোন মিলা বিএসসি ফাইনাল পরীক্ষার এক মাস আগে ঘোষণা দেয়, সে এবার পরীক্ষা দেবে না; কারণ তার নাকি কোনো পড়াই মনে থাকছে না! পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে দেন ফরিদের মামা। তিনি সবাইকে বলেন যে, বাসার কিছু সদস্যের এমন অদ্ভুত আচরণের একমাত্র কারণ পরিবারের মেয়ে সদস্যের সংখ্যা কমে যাওয়া। আর তাই তিনি পরিবারের ভারসাম্য রক্ষায় এই বুড়ো বয়সে বিয়ে করার ঘোষণা দিয়ে বসেন!
এমন পরিস্থিতিতে কাজল যাতে স্কুলে না গিয়ে বাসায় বসেই পড়তে পারে সেই লক্ষ্যে কাজলের জন্য এক লজিং মাস্টার ঠিক করে ফরিদের বাবা। এই মাস্টার সমাজের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় বিশ্বাসী নয়, তিনি সৃজনশীল উপায়ে শিক্ষাপ্রদানে বিশ্বাসী। কাজলকে সৃজনশীল পদ্ধতিতে শেখানোর পাশাপাশি তিনি মিলার সমস্যা সমাধানেও ভূমিকা রাখতে শুরু করেন, সেলফ হিপনোটিজমের মাধ্যমে তিনি এই সমস্যার সমাধানে চেষ্টা করেন।
এইসব ঘটনায় বিরক্ত হয়ে ফরিদের স্ত্রী সোমা এই বাড়ি ছেড়ে অন্য বাসা ভাড়া করার জন্য ফরিদকে চাপ দিতে থাকে। এমনই এক সময়ে মাস্টারের জীবনমুখী এক শিক্ষার অংশ হতে গিয়ে কাজল হারিয়ে যায়। পুরো বাসায় শোকের মাতম শুরু হয়। মাস্টারের পরীক্ষা সফল করে কাজল কি একা একা বাসায় ফিরতে পারবে? নাকি ছোট বাচ্চা কাজল অন্য কোনো বিপদে পড়বে?
এমন নানা ধরনের মজার ঘটনা নিয়েই আবর্তিত হয়েছে ‘একদিন হঠাৎ’ এর গল্প। সাধারণ একটা চিত্রপটে বিভিন্ন হাস্যরসাত্মক ঘটনার মাধ্যমে সমাজের জন্য বেশ কিছু বার্তা দিয়েছিল এই নাটক। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কাজী খুরশিদুজ্জামান উৎপল, ডলি জহুর, আরিফুল হক, আলী যাকের, অরুণা বিশ্বাস, হুমায়ূন ফরীদির মতো শক্তিমান অভিনেতারা।
অভিনেতারা যে যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন, সেটিকে কাজে লাগিয়ে সবাই নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন। তবে আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হয় দুইজন অভিনেতার কথা। একজন তো অবশ্যই হুমায়ূন ফরীদি, কাজলের মাস্টার চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন তিনি। চরিত্রটির বেশকিছু ভিন্ন রূপ এই নাটকে ছিল। কাজলের সাথে যখন ছিলেন, তখন মাস্টার ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। আবার আধপাগল মামার সামনে তাকে ভীষণ ভীতু একজন মানুষ হিসেবে মনে হয়েছে। মিলার সাথে কথা বলার সময়ে তার প্রেমিক ভাবটি বেশ ভালোভাবে ফুটে উঠেছিল। আর ফরিদের বাবাকে তিনি যেভাবে নিজের শিক্ষাপদ্ধতির ব্যাপারে বুঝিয়েছেন, তাতে তাকে যথেষ্ট যুক্তিবান মানুষ হিসেবে মনে হয়েছে। চরিত্রটির সবগুলো রূপই দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এই অভিনেতা।
আরেকজন হচ্ছেন, আধপাগল মামা চরিত্রে অভিনয় করা আলী যাকের। পুরো নাটকজুড়ে তার হাস্যকর সব কর্মকাণ্ড ছিল নাটকটির অন্যতম বড় আকর্ষণ। ফরিদের বাবা চরিত্রে অভিনয় করা আরিফুল হকের সাথে তার রসায়নটা ছিল দেখার মতো। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় একটি সংলাপের কথা, ফরিদের মামার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বেশ কয়েকবারই ফরিদের বাবা বলেছেন, “উন্মাদ, বদ্ধ উন্মাদ”। আর প্রতিবারই ফরিদের দুলাভাই বলেছেন, “আপনার এই কথাটা ঠিক না দুলাভাই”।
এই নাটকের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে হুমায়ূন আহমেদ-মুস্তাফিজুর রহমানের জুটি পরবর্তীকালে এর সিকুয়েল হিসেবে নির্মাণ করেন ‘যার যা পছন্দ’। তবে ওই নাটকটি এতটা সাড়া ফেলতে পারেনি। সবমিলিয়ে ‘একদিন হঠাৎ’-কে হুমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠ এক ঘণ্টার নাটক বললেও হয়তো অত্যুক্তি হবে না। এই নাটকের মাধ্যমেই ঈদের মৌসুমে হুমায়ূন আহমেদের নাটক দেখাটা দর্শকের একটা অপরিহার্য চাহিদায় পরিণত হয়, যা হুমায়ূন আহমেদের প্রস্থানের আগপর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
নীতু তোমাকে ভালোবাসি
বিটিভির প্রযোজনায় বেশ কয়েক বছর নাটক নির্মাণের পর একটা সময় হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠা করলেন নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘নুহাশ চলচ্চিত্র’। এরপর সেখান থেকেই শুরু করেন নাটক-নির্মাণ। বিটিভি প্রযোজিত নাটকে হুমায়ূন আহমেদ থাকতেন শুধুমাত্র রচয়িতার ভূমিকায়। কিন্তু নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে আসার পর পরিচালনার দায়িত্বটাও নিজ কাঁধে তুলে নেন তিনি। এমনই একটি কাজ হলো ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’। এটি আসলে এক ঘণ্টার কোনো নাটক ছিল না, দুই ঘন্টা ব্যাপ্তিকালের টেলিফিল্ম ছিল এটি।
নাম দেখেই বুঝা যাচ্ছে টেলিফিল্মটির মূল গল্প আবর্তিত হয়েছে নীতু ও তার পরিবারকে ঘিরে। নীতুর বাবা ভীষণ বইপাগল একজন মানুষ, সারাদিন বই নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। পরিবারের অনেকের ধারণা, তার মাথায় কিছুটা গণ্ডগোলও আছে। এ কারণে পরিবারটির মূল-কর্তা নীতুর দাদু; তার কথাতেই হয় সবকিছু।
এই দাদু নীতুর পাত্র হিসেবে আমেরিকা প্রবাসী সাব্বিরকে ঠিক করেন। কিন্তু নীতু ভালোবাসে চালচুলোহীন বেকার কায়েসকে। দাদুর সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে সে পালিয়ে কায়েসকেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। শেষপর্যন্ত বহু ঘটনার পর তারা বিয়ে করেও ফেলে। কিন্তু বিয়ে করে বাসায় ফিরে নীতু দেখে যে, তার জন্য ঠিক করা পাত্র সাব্বির আমেরিকা থেকে চলে এসেছে এবং তার দাদু সেই রাতের মাঝেই তার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে!
দাদুকে নিজের বিয়ের কথা কীভাবে বলবে, সেটি ভেবে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় সে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়, যখন নীতু আর কায়েসের বিয়ে পড়ানো সেই কাজীই নীতুদের বাসায় তার সাথে সাব্বিরের বিয়ের জন্য আসে। এদিকে ভাড়া বাকি থাকায় বাড়ি ছাড়তে হওয়া কায়েস নিজের মালপত্র নিয়ে রাস্তায় ঘুরছিল। নীতু কি শেষ পর্যন্ত তার পালিয়ে বিয়ে করার কথা দাদুকে বলতে পারবে? নাকি সাব্বির সাহেবকে বিয়ে করে আমেরিকা চলে যাবে?
নীতুর বিয়েকে ঘিরে মূল গল্প আবর্তিত হলেও পার্শ্বচরিত্রদের ভূমিকাও অনেক শক্তিশালী ছিল। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় নীতুর বড় বোন মীরা ও তার স্বামীর কথা। নীতুর বিয়েতে এসে হুট করে মীরার স্বামী জানতে পারে যে, মীরা এর আগে দুইবার পালিয়ে গিয়েছিল। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা ধরনের মজার ঘটনা ঘটে। এছাড়া নীতুর বাড়ির কাজের মেয়ে রহিমা একই সাথে বাড়ির দুই কাজের ছেলে মোবারক ও কাদেরের সাথে প্রেম করতো। মোবারক যখন এই সত্য জানতে পারে, তখন সে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়, আর এই নিয়ে পুরো বাড়িতে লঙ্কাকাণ্ড বেঁধে যায়।
এমন নানা মজার ঘটনার মধ্য দিয়ে টেলিফিল্মটি এগিয়ে গেছে। ১৯৯৯ সালে নির্মিত এই টেলিফিল্মে রীতিমতো তারার মেলা বসেছিল। টেলিফিল্মটির বিভিন্ন চরিত্রে গোলাম মুস্তাফা, আলী যাকের, দিলারা জামান, শমী কায়সার, জাহিদ হাসান, মাহফুজ আহমেদ, আব্দুল কাদের, শান্তা ইসলাম, ডাঃ এজাজ, শামীমা নাজনীন, ফারুক আহমেদ, হুমায়ূন ফরীদির মতো শক্তিমান সব অভিনেতারা অভিনয় করেছেন।
প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ চরিত্রে অনবদ্য ছিলেন। তবে বিশেষভাবে আবারও উল্লেখ করতে হয় হুমায়ূন ফরীদির কথাই। তার কাজী সাহেব চরিত্রটি মূল চরিত্র না হয়েও দর্শককে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিয়েছে। বিশেষ করে মোবারকের আত্মহত্যা তদন্তে পুলিশ আসার পর নার্ভাস হয়ে তিনি যেসব করেছেন, তা দেখে কেউ হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লেও বাড়াবাড়ি হবে না। একটা সংলাপের কথা তো উল্লেখ করতেই হবে; কায়েস সময়মতো না আসায় যখন নীতু চিন্তিতমুখে কাজী অফিসে অপেক্ষা করছিলো তখন তিনি বলেছিলেন,
আপনি চলে যান, ছেলে আসবে না। এরকম কেস দু-চারটা প্রায়ই হয়। ছেলে এসে দাঁড়াইয়া থাকে, মেয়ে আসে না আবার মেয়ে এসে দাঁড়াইয়া থাকে, ছেলে আসে না। আবার এরকমও হয়, সাক্ষী দুইজন চলে এসেছে, অথচ ছেলেও আসে নাই, মেয়েও আসে নাই!
আজকালকার যুগে হাসির নাটক মানেই গল্প ছাড়া কিছু অভিনেতার অহেতুক ভাঁড়ামো, অথচ একটা নির্দিষ্ট গল্প ও অভিনেতাদের সুনিপুণ অভিনয়ের মাধ্যমে কীভাবে একটা হাসির নাটক প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে পারে, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’।
যমুনার জল দেখতে কালো
সিনেমার শ্যুটিংয়ে যেসব ঘটনা ঘটে, সেই প্রেক্ষাপট নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেন ‘যমুনার জল দেখতে কালো।’ নাটকটিতে দেখা যায় ‘দুর্ধর্ষ মধু গুণ্ডা’ নামক একটা সিনেমার শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত ছিল সেই সময়ের জনপ্রিয় দুই নায়ক-নায়িকা রাজু ও বৃষ্টি। বৃষ্টিকে সারাক্ষণ কড়া পাহারায় রাখছিলেন তার মা, তাই অনেক চেষ্টা করেও তার সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে পারছিলো না রাজু। এমন সময়ে শ্যুটিংয়ে স্পটে উপস্থিত হন সাংবাদিক মিজান, এসেই সে বৃষ্টি ও রাজুকে বেশ চাপের মধ্যে ফেলে দেয়। সে জানায় যে, রাজু ও বৃষ্টি যে গোপনে বিয়ে করেছে, সেই খবর তার কাছে আছে এবং সেই বিয়ের কাবিননামার এক কপিও সে যোগাড় করে ফেলেছে!
সাংবাদিক মিজান এই খবর ছড়িয়ে দিলে কী ঘটবে, তা নিয়ে তারা দুইজনেই চিন্তিত হয়ে পড়ে। এদিকে মিজান শুধু রাজু-বৃষ্টিকেই চিন্তিত করেনি, পরিচালক শামসু ভাইকেও বিপদে ফেলে দেয়। শামসু ভাই নিজে পরিচালনার কিছুই পারে না, তার সহকারী সব কাজ করে দেয়। এই কারণে মিজানের কাছে যাতে সাক্ষাৎকার না দেওয়া লাগে, সেজন্য নানা ধরনের টালবাহানা শুরু করে দেয় সে। শেষপর্যন্ত মিজান কি শামসু ভাইয়ের সাক্ষাৎকার নিয়ে তার জারিজুরি ফাঁস করতে পারবে? বৃষ্টি আর রাজুই বা কী করবে? তারা কি বিয়ের ব্যাপারটি লুকিয়ে রাখার জন্য মিজানের সাথে কোনো চুক্তিতে যাবে? নাকি নিজেরাই সবাইকে বিয়ের কথা জানিয়ে দেবে?
এমন নানা ধরনের মজার ঘটনা নিয়ে এগিয়ে গেছে ‘যমুনার জল দেখতে কালো।’ হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিয়াজ, মাহফুজ আহমেদ, শাওন, চ্যালেঞ্জার, ডা. এজাজ, ফারুক আহমেদ, মুনীরা মিঠু, স্বাধীন খসরু প্রমুখ।
পুরোদস্তুর হাস্যরসাত্মক নাটক হলেও বেশ ভালো একটা বার্তা পরিচালক হুমায়ূন ঠিকই দিয়ে গেছেন। মিডিয়ায় নায়ক-নায়িকারা তাদের প্রেম আর বিয়ে নিয়ে খুব বেশি লুকোচুরি খেলে, এবং এই লুকোচুরি খেলার ফলটাও যে খুব ভালো হয় না, সেটা এই নাটকে খুব ভালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া কিছু অসাধু পরিচালক কীভাবে নিজের সহকারীর উপর সব দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে নিজেকে পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে, সেটিও দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এই তিনটি নাটক ছাড়াও ‘হাবলংগের বাজারে’, ‘তারা তিনজন’, ‘প্যাকেজ সংবাদ’, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘আজ জরীর বিয়ে’-এর মতো দুর্দান্ত সব একক নাটক হুমায়ূন আহমেদ আমাদের উপহার দিয়েছেন। একটা সময়ে ঈদ মানেই ছিল হুমায়ূন আহমেদের নাটক, ঈদে সেমাই খাওয়ার মতো তার নাটক দেখাটাও মানুষের একটা ধরাবাঁধা রুটিন হয়ে গিয়েছিল।
আজ সাত বছর হয়ে গেলো, এই কিংবদন্তি নির্মাতা আমাদের মাঝে নেই। অথচ এখনো প্রতি ঈদে অবচেতন মন অপেক্ষা করে হুমায়ূন আহমেদের নাটকের জন্য। বাংলা নাটককে অন্য এক মাত্রায় নিয়ে গেছেন যে মানুষটি, তার মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের তরফ থেকে রইলো গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আরো দেখুন- হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমূহ