মানুষ মাত্রই বুদ্ধিমান প্রাণী। কিন্তু প্রত্যেক মানুষের বুদ্ধি সমান হয় না। প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে বুদ্ধি বেশি, আবার কিছু ক্ষেত্রে কম। সেটি অন্যদের সাথে মিলতেও পারে, আবার না-ও পারে। আবার প্রত্যেকের বুদ্ধিমত্তা অর্জনের প্রক্রিয়াও স্বতন্ত্র ও ভিন্ন। কেউ হয়তো জন্মগতভাবে বুদ্ধিমান। কেউ অন্য কারো সান্নিধ্যে থেকে বুদ্ধিমান হয়েছে। কেউ বই পড়ে বুদ্ধিমান হয়েছে। আবার কেউ বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বুদ্ধিমান হয়েছে।
দুই ধরনের বুদ্ধিমত্তা
মানুষের বুদ্ধিমত্তা নানা ধরনের হলেও, একে প্রধানত দুটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন মনোবিদ রেমন্ড বি ক্যাটেল। পরবর্তীতে তার তত্ত্বকে আরো এগিয়ে নিয়ে গেছেন তারই ছাত্র জন হর্ন। ক্যাটেলের শ্রেণীবিভাগ করা দুই ধরনের বুদ্ধিমত্তা হলো: ক্রিস্টালাইজড ইন্টেলিজেন্স বা স্ফটিক বুদ্ধিমত্তা, এবং ফ্লুইড ইন্টেলিজেন্স বা তরল বুদ্ধিমত্তা।
স্ফটিক বুদ্ধিমত্তা হলো সেসব বুদ্ধিমত্তা যা আপনি আপনার সারা জীবন ধরে শিখেছেন বা অভিজ্ঞতা নিয়েছেন। আর তরল অভিজ্ঞতা হলো আপনার অন্তর্নিহিত সমস্যা সমাধানের বুদ্ধিমত্তা বা স্বতঃলব্ধ জ্ঞান।
কেন এ ধরনের নামকরণ?
১৯৮৭ সালে প্রকাশিত বই Intelligence: Its Structure, Growth, and Action-এ এমন নামকরণের ব্যাখ্যা দিয়েছেন ক্যাটেল। তিনি সেখানে লিখেছেন, তরল বুদ্ধিমত্তা হলো তরল, কেননা তরল পদার্থ যেমন যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের আকৃতি ধারণ করে, অনুরূপভাবে তরল বুদ্ধিমত্তাকেও নতুন ধরনের যেকোনো সমস্যা সমাধানের কাজে লাগানো যায়।
অপরদিকে স্ফটিকের নিজস্ব আকৃতি আছে, তাই যে পাত্রেই রাখা হোক না কেন, সেটি নিজের আকৃতিই অক্ষুণ্ন রাখবে। আবার অনেক পাত্রে সেটি প্রবেশ করতেও পারবে না। স্ফটিক বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে তাই নির্দিষ্ট কিছু সমস্যায় একই ধরনের সমাধানই করা যায়, এবং অনেক সমস্যায় এরা বিন্দুমাত্র কাজেও আসতে পারে না।
তরল বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা
তরল বুদ্ধিমত্তার একটি সুন্দর সংজ্ঞা দিয়েছেন লেখক ও প্রশিক্ষক ক্রিস্টোফার বার্গল্যান্ড।
“তরল বুদ্ধিমত্তা হলো যেকোনো অভিনব পরিস্থিতিতে যৌক্তিকভাবে চিন্তা করা ও সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা, যা পূর্বলব্ধ জ্ঞানের থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন। তরল বুদ্ধিমত্তার অন্তর্ভুক্ত থাকে অভিনব সমস্যার নকশা শনাক্ত করা এবং সেগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক খুঁজে বের করা, এবং যুক্তির সাহায্যে বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণের ক্ষমতা।”
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, তরল বুদ্ধিমত্তা হলো আপনার ভেতরের অদৃশ্য জ্ঞান ভাণ্ডার, যেটির বিকাশ কখনো চোখে পড়ে না, কিন্তু প্রয়োজনের সময় সেগুলোর উপস্থিতি ঠিকই অনুভূত হয়। স্ফটিক বুদ্ধিমত্তাকে যেমন শুধু বই পড়া, অনুশীলন করা, নতুন জায়গা দর্শন, দক্ষতা অর্জন প্রভৃতির মাধ্যমেই শাণ দেয়া যায়, তরল বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। একে শাণ দেয়ার প্রক্রিয়া জটিল, যা পরে বর্ণিত হবে।
বৈশিষ্ট্য
অভিনব পরিস্থিতিতে যেসব বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে তরল বুদ্ধিমত্তা পরিলক্ষিত হয়:
- বিচার
- যুক্তি প্রয়োগ
- সমস্যার সমাধান
- নকশা শনাক্ত
- অপ্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত ছাঁকা
- ‘আউট অভ দ্য বক্স’ চিন্তা
তরল বুদ্ধিমত্তা বনাম স্ফটিক বুদ্ধিমত্তা
তরল বুদ্ধিমত্তা ও স্ফটিক বুদ্ধিমত্তার পার্থক্য নিরূপণে গণিতের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।
মনে করুন, পরীক্ষায় একটি গাণিতিক সমস্যা এসেছে। এখন যদি ওই একই ধরনের গাণিতিক সমস্যা সমাধানের চর্চা আপনি আগেও করে থাকেন, এবং সমাধানের সূত্র আপনার জ্ঞাত থাকে, তাহলে সহজেই বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে এবং সূত্র প্রয়োগের মাধ্যমে আপনি সমাধান বের করে ফেলতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার পূর্বলব্ধ জ্ঞানেরই প্রয়োগ ঘটাবেন। সুতরাং, এটি আপনার স্ফটিক বুদ্ধিমত্তা।
কিন্তু গাণিতিক সমস্যাটি যদি নতুন ধরনের হয়, তার সাথে আপনার পূর্ব পরিচয় না থাকে, তখন আপনি কী করবেন? তখন আপনাকে সমস্যাটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে হবে, বিভিন্ন সম্ভাবনা অনুমান করতে হবে, সমস্যার একটি সাধারণ ছাঁচ খুঁজে বের করতে হবে, এবং সবশেষে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক সম্ভাবনাটিকে কাজে লাগিয়ে উত্তর বের করতে হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, আপনি এক্ষেত্রে আপনার পূর্বলব্ধ জ্ঞান নয়, বরং নিজের অন্তঃস্থিত বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগের মাধ্যমে সমাধানটি করলেন। তাই এটিই আপনার তরল বুদ্ধিমত্তা।
তরল বুদ্ধিমত্তা কি স্থিতিশীল?
স্ফটিক বুদ্ধিমত্তা যেহেতু জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা হয়, তাই এ ধরনের বুদ্ধিমত্তার কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই। আপনি ২০ বছর বয়সে যেমন নতুন কোনো জ্ঞান লাভের মাধ্যমে আপনার স্ফটিক বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি করতে পারেন, তেমনই ৮০ বছর বয়সেও চাইলেও নতুন কোনো জ্ঞান লাভের মাধ্যমে স্ফটিক বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি করতে পারেন।
অন্যদিকে তরল বুদ্ধিমত্তার অবস্থান মানুষের অবচেতন মনে। অবচেতন মনকে কাজে লাগানোর জন্য মস্তিষ্কে প্রয়োজন খালি জায়গার, এবং প্রচুর পরিমাণ মনোযোগের। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মস্তিষ্কের খালি জায়গা ও মনোযোগ, দুই-ই কমতে থাকে। তাই তরল বুদ্ধিমত্তাও স্থিতিশীল থাকে না, ক্রমশ এটি নিম্নগামী হয়। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, বয়ঃসন্ধিকালের পর থেকেই মানুষের তরল বুদ্ধিমত্তা একটু একটু করে কমতে থাকে।
তরল বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন কি সম্ভব?
তরল বুদ্ধিমত্তাকে ধরে রাখা, কিংবা এর উন্নয়ন ঘটানোর কোনো উপায়ই কি নেই? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে ২০০৮ সালে একটি পরীক্ষা চালান মনোবিদ সুসান এম জেগি ও তার সহকর্মীরা।
পরীক্ষার জন্য তারা বেছে নেন স্বাস্থ্যবান ও তরুণ অংশগ্রহণকারী চারটি দল। এরপর তাদেরকে বিভিন্ন অভিনব সমস্যা সমাধান করতে দেয়া হয়, যেখানে প্রচুর মাথা খাটানোর প্রয়োজন আছে। চারটি দল যথাক্রমে ৮, ১২, ১৭ এবং ১৯ দিন ধরে কাজগুলো করে।
প্রত্যেক দলের কাজ শেষ হলে দেখা যায়, যে দল যত বেশি সময় ধরে কাজগুলো করে গেছে, তাদের মাঝে তত বেশি তরল বুদ্ধিমত্তার উপস্থিতি দেখা গেছে। গবেষকরা প্রতি দিনের কাজকে এক একক প্রশিক্ষণ বিবেচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, যে দল যত বেশি প্রশিক্ষণ নিয়েছে, তাদের তরল বুদ্ধিমত্তা তত বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ প্রশিক্ষণ বা চর্চার মাধ্যমে চাইলে তরল বুদ্ধিমত্তা বাড়ানো সম্ভব।
সুতরাং, আমরাও ধরে নিতেই পারি যে তরল বুদ্ধিমত্তা কেবল জন্মগতভাবে লাভ করা কোনো বিষয়ই নয়, বরং চাইলে আমরাও বিভিন্নভাবে নিজেদের তরল বুদ্ধিমত্তাকে আরো শাণিত করতে পারি।
কীভাবে বাড়াবেন তরল বুদ্ধিমত্তা?
চলুন দেখা যাক কী কী কাজের মাধ্যমে নিজের তরল বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি সম্ভব।
সৃজনশীল চিন্তা: সৃজনশীল চিন্তা মানে হলো জাগতিক আটপৌরে চিন্তার বাইরে বিভিন্ন ‘আউট অভ দ্য বক্স’ চিন্তা করা, অর্থাৎ যে ধরনের চিন্তা সচরাচর কেউ করে না, এবং যেসব চিন্তার মাধ্যমে নতুন কিছু আবিষ্কার বা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। চিন্তা কখনো এক জায়গায় স্থির থাকে না। তাই কেউ যখন একটি নতুন বিষয় নিয়ে চিন্তা করবে, তারই সূত্র ধরে নতুন নতুন আরো নানা চিন্তার আগমন ঘটবে। বিভিন্ন সমস্যাও এসে উপস্থিত হবে, এবং সেসব সমস্যা সমাধানের জন্য মস্তিষ্ককে লেলিয়ে দেয়াও যাবে। এভাবেই সৃজনশীল চিন্তার মাধ্যমে সক্রিয় রাখা যাবে তরল বুদ্ধিমত্তাকে।
নতুন কাজের সন্ধান: মানুষ এক কাজ দিনের পর দিন করতে করতে হাঁপিয়ে পড়ে। এ কথা সত্য যে বারবার করার মাধ্যমে সে ওই কাজে দক্ষ হয়ে ওঠে। কিন্তু যখন দক্ষতার পরিমাণ এতটাই বেড়ে যায় যে তার নিজের আর সচেতনভাবে কোনো চেষ্টাই করতে হচ্ছে না, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কাজটি হয়ে যাচ্ছে, তখন ওই কাজের মাধ্যমে আর আত্মোন্নয়নের সুযোগ থাকে না। তাই সব সময় নতুন নতুন কাজ করতে হবে। যেমন: শুধু একই বিষয়ের বই না পড়ে নতুন কোনো বিষয় বেছে নিতে হবে, অবসর সময়ে শুধু একটি শখ নিয়েই মেতে না থেকে মাঝেমধ্যে ভিন্ন কিছুও করতে হবে, এমনকি স্মার্টফোনে শুধু একটি গেমসই সারাদিন না খেলে নতুন নতুন গেমসও খেলতে হবে, বিশেষত বিভিন্ন মাইন্ড গেমস যাতে মাথা খাটানোর প্রয়োজন পড়ে। সোজা কথায়, একঘেয়েমির মাধ্যমে মস্তিষ্ককে ঝিমিয়ে পড়ার সুযোগ দেয়া যাবে না।
চ্যালেঞ্জ গ্রহণ: আগের পয়েন্টটিরই পুনরাবৃত্তি বলতে পারেন একে। ধরুন, আপনার সামনে দুটি কাজের অপশন আছে। একটি কাজ আপনি আগেও করেছেন, কিংবা কাজটি পুরোপুরি আপনার নখদর্পণে। আর অন্য কাজটি আপনি আগে কখনো করেননি, এবং কাজটি আপাতদৃষ্টিতে যথেষ্ট কঠিন বলেও মনে হচ্ছে। এখন আপনি কোন কাজটিকে বেছে নেবেন? যদি রক্ষণশীল মানসিকতার অধিকারী হন, তাহলে প্রথম কাজটিকেই আপনার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হবে। কারণ সেখানে আপনার ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি নেই, যা দ্বিতীয়টিতে আছে। কিন্তু এখন একটি বিষয় ভেবে দেখুন, কোনো কাজের উদ্দেশ্য কোনটি হওয়া উচিত, কিছু না হারানো, নাকি কিছু পাওয়া? নিশ্চয়ই কিছু পাওয়া। সহজ কাজটি করলে আপনি কিছু হারাবেন না বটে, কিন্তু এমন কিছুও পাবেন না, যা ইতিমধ্যেই আপনার নেই। তাই আপনার উচিত হবে নতুন ও কঠিন কাজটিকেই বেছে নেয়া। সম্ভাব্য প্রাপ্তির সবটুকু যদি না-ও পান, যেটুকু পাবেন, সেটুকুও তো লাভ।
নতুন মানুষের সাথে মেশা: যখন আপনি নতুন কোনো মানুষের সান্নিধ্যে আসেন, তখন আপনার মাঝে একধরনের উত্তেজনা কাজ করে। কারণ আপনি তার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন না। তাই নিজের মনেই আপনি তার সম্পর্কে বিভিন্ন অনুমান করতে থাকেন, এবং নতুন একেকটি তথ্য জানার মাধ্যমে আপনি ঠিক তেমন মানসিক প্রশান্তিই পেয়ে থাকেন, যেমনটি পাওয়া যায় কোনো গোয়েন্দা গল্পের শেষাংশে রহস্যের উন্মোচনকালে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই একজন মানুষের সাথে মিশতে মিশতে তার সম্পর্কে প্রায় সবকিছুই আপনার জানা হয়ে যায়। তখন মানুষটি আপনার খুব অন্তরঙ্গ হয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু সেই মানুষটি ও তার ধারণাগুলো সম্পর্কে অবগত হয়ে যাওয়ায় আপনি তার ব্যাপারে প্রাথমিক আগ্রহটা হারিয়ে ফেলেন। আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগে এই আগ্রহটা খুবই প্রয়োজন। তাই আপনার উচিত হবে শুধু পরিচিত ও নির্দিষ্ট কিছু মানুষের সাথেই সম্পর্ক না রেখে, মাঝেমধ্যে নতুন মানুষের সাথেও মেশা।
প্রযুক্তির উপর অতি-নির্ভরশীল না হওয়া: আচ্ছা, বলুন তো, ১৩৪৫ এর সাথে ২৩৫ যোগ করলে কত হয়? উত্তরটি বের করার জন্য আপনি সম্ভাব্য দুটি কাজ করতে পারেন। প্রথমত, নিজের মনেই হিসাব করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, ক্যালকুলেটরে যোগটি করে ফেলতে পারেন। একবিংশ শতকের মানুষ হিসেবে আপনি হয়তো ক্যালকুলেটরে হিসাব করাকেই বেশি প্রাধান্য দেবেন। কারণ তাতে আপনার সময় বাঁচবে, আর শতভাগ সঠিক হওয়ার নিশ্চয়তাও মিলবে। কিন্তু আমি বলব, এটি এমন কঠিন কোনো গাণিতিক হিসাব নয়, যেটি করার জন্য আপনাকে মস্ত বড় গণিতজ্ঞ হতে হবে। একটু মনোযোগী হলে সর্বোচ্চ দশ সেকেন্ডেই আপনার পক্ষে উত্তরটি বের করে ফেলা সম্ভব। অর্থাৎ এমন কিছু সময়ও নষ্ট হবে না। আর শতভাগ সঠিক হওয়ার নিশ্চয়তা চাইছেন? সেটিই বা কেন? এমন সহজ একটি হিসাবেও আপনার ভুল যেতে পারে, নিজের প্রতি এতটা অনাস্থা থাকলে জীবনে বড় কিছু করবেন কীভাবে! তাই এখন থেকে শুধু গাণিতিক হিসাবই নয়, দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আগে নিজের মস্তিষ্ককেই কাজ করতে দিন। যদি না পারেন, তাহলে প্রযুক্তি তো আছেই আপনাকে সাহায্য করতে। কিন্তু শুরুতেই প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে যাবেন না, এতে করে একদিন পুরোপুরি প্রযুক্তির দাসে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়া মস্তিষ্ক কোনো বিলাসদ্রব্য নয় যে ব্যবহার করলে তাড়াতাড়ি নষ্ট হবে। বরং এটি সেই নিত্যব্যবহার্য জিনিস, অব্যবহারে যাতে জং ধরে যায়।
* একই কারণে অভিন্ন কাহিনীর উপর রচিত বই ও নির্মিত চলচ্চিত্র দুই-ই যদি থাকে, বইটিই পড়া উচিত। কারণ বই পড়লে নিজের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগানো যায়, যা চলচ্চিত্র দেখার সময় সম্ভব না।
স্ফটিক বুদ্ধিমত্তার উপর অতি-নির্ভরশীল না হওয়া: এ কথা অনস্বীকার্য যে বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধির জন্য জ্ঞান ও শিক্ষা লাভের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু তাই বলে সবকিছুতে পুঁথিগত বিদ্যা বা অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগ করতে যাওয়া হবে অনুচিত। এতে তরল বুদ্ধিমত্তা হ্রাস পেতে পারে। বাস্তব জীবনে এমন অনেক সমস্যাই সামনে আসে, যেগুলোর ব্যাপারে হয়তো কোনো বইতে লেখা নেই, কেউ আপনাকে সেগুলোর কথা বলেওনি। তাই এসব সমস্যার সমাধানেও আপনি যদি পূর্বলব্ধ জ্ঞানেরই সন্ধানে থাকেন, কিংবা নতুন করে জ্ঞানের অন্বেষণেই অনেকটা সময় ব্যয় করেন, তার ফল কখনো ভালো হবে না। রেডিমেড সমাধানের আশায় বসে না থেকে নিজের সহজাত প্রবৃত্তিকেও কিছুটা গুরুত্ব দিন। আপনার এতদিনের অর্জিত স্ফটিক বুদ্ধিমত্তা যদি মজবুত হয়, এবং তরল বুদ্ধিমত্তার দিক থেকেও যদি আপনি শক্তিশালী হন, তাহলে আপনার প্রবৃত্তিও আপনাকে সঠিক সমাধান দিতে পারে। তা দিক বা না দিক, চেষ্টা তো আপনাকে করতেই হবে। হয় আপনি জিতবেন, আর নয়তো শিখবেন। আর এই শিক্ষার ফল আপনি ভবিষ্যতে পাবেন।
বিজ্ঞানের চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কেঃ roar.media/contribute/