১.
‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পর স্বাধীনতা আন্দোলন ক্রমশ দানা বাধতে শুরু করছিল। পাকিস্তানি শাসক নামের শোষকদের শোষণে কালো হয়ে উঠছিল দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। অপেক্ষা ছিল কেবল কালবৈশাখী ঝড়ের। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগমুহূর্তে, ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল দেশের উপকূলীয় অঞ্চল।
পাহাড়সমান ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণ হারালো ৫ লক্ষ মানুষ। সেই ঘটনাটিই বদলে দিয়েছিল একজন মানুষের জীবন। সেসময়েই মোটা অঙ্কের টাকার চাকরি ছিল তার। সেটা করতে করতেই দেশের মানুষের জন্য কাজ করার প্রথম সিঁড়িটা পার করেছিলেন। কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ‘হেল্প’ নামের একটি সংগঠন করে নিজেদের অর্থায়নে শুরু করেছিলেন ত্রাণ বিতরণ। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মনপুরা দ্বীপের অধিবাসীদের ঘরে ঘরে গিয়ে সাধ্যমতো ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলেন। সেই যে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তখন থেকেই শুরু হলো নতুন এক যাত্রা। দারিদ্র্য বিমোচনের লড়াই, আর এই লড়াইয়ের নায়কের নাম স্যার ফজলে হাসান আবেদ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা।
এই সময়টা তখন, যখন স্যার ফজলে হাসান আবেদ বহুজাতিক তেল কোম্পানি শেলের ফাইন্যান্স বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আর দেশে থাকেননি। অস্ত্র হাতে নিজে দেশের জন্য কতটা করতে পারবেন, তা নিয়ে তার সংশয় ছিল। তাই চলে গেলেন ইংল্যান্ডে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘুরলেন, শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত তৈরি করতে, তহবিল সংগঠন করতে। করতেও পেরেছিলেন। বেশ সফলও হয়েছিলেন। সেখানে কাজ করতে গিয়ে লন্ডনে নিজের বাড়ি বিক্রি করে দিলেন। ভেবেছিলেন, টাকার কমতি হতে পারে। কিন্তু যখন দেখলেন, মাত্র ৯ মাসের মধ্যেই যুদ্ধ শেষ হলো, টাকাগুলোও রয়ে গেল; তখন দেশে ফিরে এলেন।
২.
মাত্র জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ তখন যুদ্ধবিদ্ধস্ত। এক বছর আগে যে দেশে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবলীলায় ৫ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছিল, সেই একই দেশে ৯ মাসের ব্যবধানে আরও ৩০ লক্ষ লোক শহীদ হলেন। আর স্যার ফজলে হাসান আবেদ সেই বাড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে শুরু করলেন দেশ গড়ার কাজ।
ঝূর্ণিঝড়ের পুনর্বাসন কার্যক্রম চালাতে গিয়েই টের পেয়েছিলেন, শুধুমাত্র ত্রাণ বিতরণ করে মানুষের জীবন বদলানো যাবে না। এর চেয়ে কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে তাদের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটিয়ে, তাদের মাধ্যমেই তাদের নিজেদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব, যা হবে টেকসই এবং দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ফলপ্রসূ।
১৯৭২ সালে যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশটাকে মেরামত করার কাজে নেমে পড়লেন তিনি। শুরুটা করেছিলেন সুনামগঞ্জের শাল্লা থানায়। এটি মূলত হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। এর পিছনে দুটি কারণ ছিল। প্রথমত, হিন্দু এলাকা বলে পাক হানাদার বাহিনী বেশি পরিমাণে অত্যাচার চালিয়েছে। এই এলাকার বেশিরভাগ লোকই ভারতে শরণার্থী হিসেবে ছিল। যখন ফিরলো, তাদের কিছুই ছিল না। আর দ্বিতীয়ত, এখানে সরকারি সাহায্য পৌঁছানোর সুযোগ অনেক কম ছিল; বিশেষত খুব কঠিন ছিল।
এক সাক্ষাতকারে স্যার ফজলে হাসান আবেদ সেই দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলেন,
‘ওখানে ২০-২৫ জন যুবক, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে বা পাস করেছে, তাদের নিয়ে জরিপ করলাম। কত ঘরবাড়ি নাই? কয়টা গরু নাই? ওখানে একটাই ফসল হয়, বোরো ফসল। ওই সময়ের মধ্যে যদি ওরা ফসল ফলাতে না পারে, তাহলে অনাহারে থাকবে। আমরা দেখলাম, ওদের গরু নেই। এত গরু এনে যে চাষ করব, তার সময়ও ছিল না। তাই যেখানে যেখানে পাওয়ার টিলার পাওয়া যায়, তা এনে কর্ষণ করা হলো জমি। বোরো ধান যাতে হতে পারে। বোরো ধান যদি মার্চের দিকে না লাগানো হয়, তাহলে আর হয় না। আশপাশের গ্রাম থেকে জলি ধানের বীজ সংগ্রহ করে ওদের সরবরাহ করা হলো, যেন প্রথম একটা ফসল আসে। তারপর মাছ ধরার নাইলন জাল নিয়ে এলাম জাপান থেকে, নৌকা বানানোর কাঠ নিয়ে এলাম আসাম থেকে, কুশিয়ারা নদী দিয়ে ভাসিয়ে। বাঁশ আনা হলো ২২ লাখ, যেন ঘর বানানো যায়। সিআই শিট নিয়ে এলাম জাপান থেকে, ১,২০০ টন। এগুলো নিয়ে এসে ১৮,০০০ ঘর বানানো হয়েছিল।’
স্বাধীন বংলাদেশে এটাই ছিল ব্র্যাকের প্রথম প্রকল্প। পরবর্তীতে অক্সফাম লন্ডনের হাত ধরে অর্থ পাওয়া এবং প্রকল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ব্র্যাকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল ডায়রিয়ায় দেশব্যাপী খাবার স্যালাইন তৈরি করার বিষয় নিয়ে। মূলত এটা দিয়েই দেশব্যাপী, এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পরিচিত পায় ব্র্যাক। এখানেই এগিয়ে যায় সংস্থাটি। ১০ বছর ধরে ১ কোটি ৩ লাখ পরিবারের সাথে কাজ করতে গিয়ে সংস্থাটি টের পায়, চাইলেই অন্য কোনো কর্মসূচি নিয়েও তারা পুরো বাংলাদেশের কাছে খুব সহজেই পৌঁছতে পারবে।
তারপর শুরু হলো দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি।
স্যার ফজলে হাসান আবেদ সেই থেকে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একচ্ছত্র কাজ করে গিয়েছেন, জীবনের শেষপর্যায় পর্যন্ত। শিখিয়েছেন দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কীভাবে নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য বদল করা যায়। শুরু করলেন ঋণ বিতরণ, প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার জন্য নৈশ বিদ্যালয়। উদ্যোগের সবগুলোতেই ব্র্যাক সফল হয়েছিল এমনটা নয়। কিন্তু নিজেদের কর্মসূচিকে প্রসারিত করতে যতটুকু দরকার ছিল, তার শতভাগ সফল হয়েছিল।
৩.
বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে স্যার ফজলে হাসান আবেদ শুরু থেকেই শিকড়ের মানুষ, মাটির মানুষ হয়ে কাজ করেছেন সবার সাথে। ঘুরেছেন পথে পথে। খুব কাছ থেকে দেখতে চেয়েছেন দেশের সমস্যাগুলো। কীভাবে তা সমাধান করা যায়, তা নিয়ে আলাপ করেছেন, ভেবেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, শুনেছেন সবার ভাবনা। সেই ধারাবাহিকতাতেই দেখেছেন, কীভাবে ৪-৫ বছরের বাচ্চা মেয়েগুলো তাদের চেয়ে ছোট ভাইদের কোলে নিয়ে ঘুরছে, কীভাবে মাকে গৃহস্থালি কাজে সাহায্য করছে। অথচ, সেই বাচ্চা মেয়ের ২-৩ বছরের বড় ভাইগুলো কীভাবে খেলে বেড়াচ্ছে। অর্থাৎ, মেয়েরা যে খুব ছোট থেকেই পারিবারিক রীতিগুলো বুঝতে পারে, বাড়ির কাজগুলো গোছাতে পারে; এমনকি অভাবের সময়েও যে নারী কোনো না কোনোভাবে পরিবারের সবার মুখে খাবার তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে তা তিনি টের পাচ্ছিলেন। উন্নয়নখাতে যাকে বলা হচ্ছে ‘ম্যানেজমেন্ট অব পোভার্টি’।
যেহেতু ব্র্যাক তখন দারিদ্র্য বিমোচনের কাজই করছে, তাই স্যার ফজলে হাসান আবেদের মনে হয়েছিল এই নারীদের মাধ্যমেই কাজটি আরও সহজ হতে পারে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, এদেশের নারীরা সুশৃঙ্খল, সঞ্চয়ী এবং পারিবারিক। যেহেতু দারিদ্র্যের ভোগান্তিটা নারীরাই বেশি টের পেয়ে থাকেন, তাই তাদের মাধ্যমেই দারিদ্র্য ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু করলেন তিনি।
ব্র্যাক শিশু ও নারীদের নিয়ে বিস্তর কাজ করেছে। শিশু ও নারীর স্বাস্থ্য, গর্ভবতী নারীদের নিয়ে কাজ করেছে, এখনও করে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে যত কথা হয়, সেই কথার চেয়ে কাজে বেশি এগিয়েছে ব্র্যাক। গৃহিণী নারীর মাধ্যমে কীভাবে পরিবারে সচ্ছলতা আনা যায়, তা আড়ংয়ের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছে ব্র্যাক।
সরকারের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করেছে ব্র্যাক। শুধু করেনি, নিয়ে এসেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। শিশুমৃত্যুর হার কমানো নিয়ে যতই সরকারি উদ্যোগ থাকুক না কেন, ব্র্যাকের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই ১০ বছর প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে খাবার স্যালাইন কীভাবে বানাতে হয়, সেই বিষয় নিয়ে ব্র্যাক কী পরিমাণ পরিশ্রম করেছে তা আগেই বলা হয়েছে। শিশুমৃত্যুর হার কমাতে সামান্য এই স্যালাইন আকাশছোঁয়া প্রভাব ফেলেছিল।
দেশে এখন টিকাদানের হার ৯৬ শতাংশেরও কিছু বেশি। অথচ, ১৯৮৬ সালে এই সংখ্যাটা ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। সরকার ও ব্র্যাক পুরো বাংলাদেশকে নিজেদের কর্মসূচির জন্য দুভাগে ভাগ করেছিল। কিন্তু নিজেদের এলাকাগুলোতে ৮০% সফল হয়েছিল ব্র্যাক, যেখানে সরকার পেরেছিল ৬১ শতাংশ। এছাড়া স্বাস্থ্যকর পয়ঃনিস্কাশন, পানি নিয়ে অনেক কাজ করেছেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ ও তার ব্র্যাক। মাতৃমৃত্যুর হার ৮০০ থেকে নামিয়ে ১৭৫ এ আনতে ব্র্যাকের অবদান অনস্বীকার্য। সেটাকে আরও কমিয়ে আনতে কী কী করা যায়, তা নিয়ে এখনও বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি।
৪০ লাখ মেয়েশিশুসহ মোট ৭০ লাখ শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের কাজ করেছে ব্র্যাক। রয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, যারা পুরো দেশব্যাপী গবেষণায় প্রথমসারিতে। এছাড়া কৃষিক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্র; সব ধরনের পর্যায়ে স্যার ফজলে হাসান আবেদ কাজ করেছেন। তারই দেখানো পথে ব্র্যাক হেঁটে চলেছে।
শুধু বাংলাদেশ নয়। বিশ্বের মোট ১২টি দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা; পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, শিক্ষা, কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা, সমন্বিত উন্নয়ন, ক্ষুদ্রঋণ, উদ্যোগ ও বিনিয়োগ, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ, আইনি সহায়তা প্রদান প্রভৃতি বিষয় নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে ব্র্যাক। আর হ্যাঁ, কর্মক্ষেত্রে নারীদের সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে ব্র্যাক।
জীবনের পুরোটা সময়ে তিনি মানুষের উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। রেখে গেছেন লাখো গুণগ্রাহী। তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে আগামীর ব্র্যাক। হয়তো একদিন পূর্ণ হবে তার অধরা স্বপ্নও। সাধারণ মানুষ সবকিছু পারুক আর না পারুক, তাদের পাওয়ার অধিকারটুকু বারবার নিশ্চিত করতে চেয়েছেন তিনি। নিজের সবচেয়ে প্রিয় কবির ব্যাপারটিকে সামনে এনেই রূপক অর্থে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সেটা,
‘রবীন্দ্রনাথকে আমরা ভালোবাসি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে পড়ে, বুঝে চিন্তা করার লোক, আনন্দ পাওয়ার লোক কত শতাংশ আছে বাংলাদেশে? নিরক্ষর বাঙালি তো বেশি। যত দিন পর্যন্ত বাংলার প্রতিটি মানুষ সংস্কৃতির আওতায় না আসবে, তত দিন পর্যন্ত এই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে, যেন শিক্ষিত হয়।’
৪.
এক নজরে ফজলে হাসান আবেদ
১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেভাল আর্কিটেকচারে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু অধ্যয়নরত অবস্থাতেই তার মনে হলো, এই বিষয়ে পড়াশোনা করে দেশে ফিরে তিনি চাকরি পাবেন না। তাই বদলে ফেললেন বিষয়। লন্ডনের চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টসে ভর্তি হলেন, ১৯৬২ সালে শেষ করলেন পেশাদার কোর্স।
পুরস্কারসমূহ
২০১৯ সালে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে কয়েক দশকব্যাপী অনবদ্য ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ নেদারল্যান্ডসের নাইটহুড ‘অফিসার ইন দ্য অর্ডার অব অরেঞ্জ-নাসাউ’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। একই বছরে শিক্ষা উন্নয়ন বিষয়ে অত্যন্ত মর্যাদাসূচক এবং অর্থমূল্যের দিক থেকে সবচেয়ে বড় পুরস্কার ইদান প্রাইজ লাভ করেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। হংকংভিত্তিক ইদান প্রাইজ ফাউন্ডেশন এই পুরস্কার ঘোষণা করে। সেখান থেকে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা পাওয়ার কথা ছিল তার। তখনই জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই অর্থ কাজে লাগাবেন বাচ্চাদের শিক্ষার জন্য। ২০১৮ সালে প্রি-স্কুলিং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ লেগো ফাউন্ডেশন, ডেনমার্ক প্রদত্ত লেগো পুরস্কারে ভূষিত হন।
২০১৭ সালে দারিদ্রপীড়িত লক্ষ-কোটি মানুষের সম্ভাবনা বিকাশে সুযোগ সৃষ্টির জন্য লুডাটো সি অ্যাওয়ার্ড। ২০১৬ সালে গ্লোবাল লিডারশিপ ফোরাম অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ, ওয়াশিংটন ডিসি প্রদত্ত হোসে এডগারডো ক্যাম্পোস কোলাবোরেটিভ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। সে বছরেই জনস্বাস্থ্যে অবদান রাখায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত টমাস ফ্রান্সিস জুনিয়র মেডেল অব গ্লোবাল পাবলিক হেলথ পুরস্কার পান। ২০১৫ সালে লাভ করেন ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ। খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিসস্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে। ২০১৪ সালে রাশিয়ান চিলড্রেন ফান্ড কর্তৃক লেভ তলস্তয় স্বর্ণপদক এবং স্পেনের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা অর্ডার অব সিভিল মেরিট (অর্ডেন ডেল মেরিটো সিভিল) লাভ করেন। একই বছরে নারীর ক্ষমতায়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ট্রাস্ট উইমেন হিরো অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
২০১৩ সালে ওপেন সোসাইটি পুরস্কার লাভ করেন। ২০১১ সালে কাতার ফাউন্ডেশন প্রবর্তিত শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ পুরস্কার ওয়াইজ পুরস্কার পান। ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মানজনক নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত হন। দ্য ওয়ার্ল্ড অন্ট্রাপ্রেনারশিপ ফোরামের পক্ষ থেকে অন্ট্রাপ্রেনার ফর দ্য ওয়ার্ল্ড লাভ করেন ২০০৯ সালে। ডেভিড রকফেলার ব্রিজিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড এবং ফেলোশিপ অব এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ লাভ করেন ২০০৮ সালে। ২০০৭ সালে যথাক্রমে হেনরি আর. ক্রাভিস প্রাইজ ইন লিডারশিপ এবং ক্লিনটন গ্লোবাল সিটিজেনশিপ অ্যাওয়ার্ড এবং গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) কর্তৃক আজীবন সম্মাননা লাভ করেন। এর আগে ২০০৪ সালে মানব উন্নয়ন বিষয়ক পুরস্কার মাহবুবুল হক অ্যাওয়ার্ড, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের সেন্টার ফর পাবলিক লিডারশিপ প্রদত্ত গ্লেইটসম্যান ফাউন্ডেশন পুরস্কার, ২০০২ সালে দ্য শোয়াব ফাউন্ডেশন সোশ্যাল অন্ট্রাপ্রেনারশিপ প্রতিষ্ঠান থেকে ‘আউটস্ট্যান্ডিং সোশ্যাল অন্ট্রাপ্রেনার’ স্বীকৃতি, ২০০১ সালে ওলফ পামে অ্যাওয়ার্ড এবং ১৯৮০ সালে র্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।