Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজি: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সর্বোচ্চ সাফল্যের কৌশল

মনে করুন, আপনি সমুদ্রে নেমেছেন। আপনার লক্ষ্য হলো সাঁতরে সমুদ্র পার হওয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনার রয়েছে প্রচুর প্রতিদ্বন্দ্বী। তারা সকলেই গুনে-মানে প্রায় আপনারই সমতুল্য। তাই প্রতিযোগিতায় আপনিই যে জিতবেন, অর্থাৎ আপনিই সবার আগে সমুদ্র পার হতে পারবেন, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।

তাহলে এখন কি আপনার কেবল নিজের সাঁতারে মনোনিবেশ করলেই চলবে? না। বরং আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীরা যাতে কোনোভাবেই আপনার চেয়ে উপরে উঠে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে তাদেরকে আপনার আক্রমণ করতে হবে। কিংবা যদি এমনও হয় যে, আপনি শান্তিপ্রিয় মানুষ, কাউকে আক্রমণ না করে আপন গতিতে এগিয়ে চলেছেন, তাতেও বিশেষ লাভ হবে না। কারণ সেক্ষেত্রে আপনি হবেন অন্য কারো আক্রমণের শিকার।

এভাবে প্রতিযোগিতায় নেমে লড়াইয়ে আপনাকে সামিল হতেই হবে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সকল পক্ষেরই রক্ত ঝরবে। রক্তে রঞ্জিত হয়ে যাবে সমুদ্রের জল। তারপরও, বাকিরা সবাই পেছনে পড়ে থাকবে, জয়ী হবে মাত্র একজনই। হতে পারে সেই একজনটি আপনি, কিংবা অন্য কেউ। কিন্তু যে-ই জয়ী হোক না কেন, তারও কিন্তু যথেষ্ট রক্ত ঝরেছে। অর্থাৎ জিততে গিয়ে সে হারিয়েছেও অনেক। তাই জয়ের পরও তার সত্যিকারের প্রাপ্তির পরিমাণ খুব বেশি নয়।

প্রতিযোগিতার রক্তে রঞ্জিত রেড ওশান; Image Source: Weiden Hammer Creative

এবার একদমই ভিন্ন একটি দৃশ্যপট কল্পনা করুন। আপনি আবারো একটি সমুদ্রে নেমেছেন। এবারের সমুদ্রটি আগের সমুদ্রটির চেয়ে অনেক বড়। এর গভীরতাও অনেক বেশি। সবচেয়ে বড় কথা, এই সমুদ্র পার হওয়ার পথ আপনার জানা নেই। হতে পারে আগের সমুদ্রটি পার হতে যে সময় আপনার লেগেছিল, এই সমুদ্রটি পার হতে তার দ্বিগুণ বা তিনগুণ সময়ও লাগতে পারে।

তারপরও আশার ব্যাপার হলো, এই সমুদ্রে সাঁতার কাটছেন কেবল আপনি একা। আপনার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তার মানে হলো, আপনাকে সবসময় তটস্থ থাকতে হচ্ছে না, এই বুঝি কেউ আপনাকে আক্রমণ করল। কিংবা আপনাকেও বাধ্য হয়ে অন্য কারো উপর আক্রমণ চালাতে হচ্ছে না।

আপনি আপনার নিজের মতো করে, কাউকে পরোয়া না করে সাঁতরে যেতে থাকবেন। কয়েকবার হয়তো ভুল পথে চলে যাবেন। কিন্তু তাতে কী! যেহেতু আপনার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, তাই আপনার হাতে অঢেল সময়। এবং একসময় না একসময় আপনি এই সমুদ্র পার হবেনই। আরো একটি বিষয় হলো, এই সমুদ্রে যেহেতু আপনার কোনো রক্ত ঝরেনি, তার মানে সমুদ্রের জল নীলই থাকবে, আর সমুদ্র পার হওয়ার মাধ্যমে আপনার প্রাপ্তিও সর্বোচ্চ পরিমাণই হবে।

২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় বইটি; Image Source: Amazon

উপরের এই দুটি দৃশ্যপটের উপর ভিত্তি করেই ২০০৪ সালে অধ্যাপক ডব্লিউ চ্যান কিম ও রেনে মাবর্ন ব্যবসা কৌশলে নিয়ে আসেন এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। “Blue Ocean Strategy: How to Create Uncontested Market Space and Make Competition Irrelevant” বইটির মাধ্যমে তারা পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেন ‘রেড ওশান’ এবং ‘ব্লু ওশান’ ধারণা দুটির সাথে। সহজ কথায়, রেড ওশান মানে যেখানে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি, আর ব্লু ওশান মানে যেখানে প্রতিযোগিতা কম, বা একেবারেই নেই।

ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজি কী?

ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজি বলতে মূলত কোনো পণ্যের এমন একটি বাজারকে বোঝানো হয়ে থাকে, যেখানে কোনো প্রতিযোগিতাই নেই, কিংবা থাকলেও তা খুব কম। এই স্ট্র্যাটেজি বা কৌশলটির সারকথা হলো, কোনো আগ্রহী ব্যক্তিকে এমন কোনো বিশেষ পণ্য বা সুবিধার ব্যবসা খুঁজে বের করতে হবে, যেটির সাথে খুবই স্বল্পসংখ্যক প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত রয়েছে, ফলে মূল্য নির্ধারণের কোনো চাপই নেই।

যেভাবে কাজ করে

ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজি কেবল নির্দিষ্ট কিছু সেক্টর বা ব্যবসাতেই সীমাবদ্ধ নয়। এর প্রয়োগ ঘটানো যেতে পারে সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবসায়িক ধারণাতেই। তার আগে চলুন বুঝে নিই, ব্লু ওশান কীভাবে কাজ করে, এবং কীভাবে এটি রেড ওশান স্ট্র্যাটেজি থেকে আলাদা।

রেড ওশান ও ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজির পার্থক্য; Image Credit: Chan Kim & Renée Mauborgne

একটু খেয়াল করলেই আমরা দেখতে পাব, বর্তমান বাজারে যেকোনো পণ্যের ব্যবসাতেই রয়েছে প্রচুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এমনকি সুঁই, সুতার মতো ছোট ছোট পণ্যও বাজারজাত করছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। ফলে বাজারে সৃষ্টি হচ্ছে সেসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তুমুল লড়াই। সকলেই চায় বাজার দখল করতে। আর বাজার দখলের মূলমন্ত্র হলো পণ্যের মূল্য যথাসম্ভব হ্রাস করা। কেননা যে প্রতিষ্ঠানের পণ্যের দাম কম, অধিকাংশ মানুষ সেই প্রতিষ্ঠানের পণ্যই কিনবে। ফলে বাজারে দাঁড়িয়ে যাবে সেটি।

কিন্তু সকল প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মূল্য হ্রাস করা সম্ভব হয় না। কারণ তাহলে তারা বাজার দখল করতে পারে ঠিকই, কিন্তু তারপরও দিনশেষে লাভের তুলনায় তাদের ক্ষতিই হয় বেশি। আবার যাদের পক্ষে মূল্য হ্রাসের পরও টিকে থাকা সম্ভব হয়, তাদেরও লাভের পরিমাণ অনেক কমে যায়।

এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রধান কারণ হলো অত্যন্ত সংকুচিত বাজার, যেখানে পণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান আর ভোক্তার অনুপাত খুবই কম। আর এমন সংকুচিত বাজারেরই অপর নাম হলো রেড ওশান।

যখন এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন বিদ্যমান বাজার ব্যবস্থায় আর নতুন কোনো সম্ভাবনা থাকে না। ফলে নতুন সম্ভাবনা খুঁজে বের করতে হয়। অর্থাৎ এমন কোনো ব্যবসার ধারণা খুঁজে বের করতে হয়, যা নিয়ে এখনো খুব বেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে না, ফলে সেখানে যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।

এখানে সম্ভাবনা বলতে যে বিষয়গুলোকে বোঝানো হচ্ছে:

  • খুব বেশি কোনো প্রতিষ্ঠান ঐ ব্যবসার সাথে জড়িত নেই বলে, ভোক্তা বা ক্রেতার সংখ্যা বিভাজিত হয়ে যাবে না, বিক্রির পরিমাণ সর্বোচ্চ হবে;
  • খুব বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী নেই বলে পণ্যের দামও যথাসম্ভব বেশি রাখা যাবে, এর মাধ্যমে লাভের পরিমাণও সর্বোচ্চ হবে।

এভাবেই গড়ে উঠবে ব্লু ওশান, যেখানে নতুন পণ্য বা সুবিধা বাজারে নিয়ে আসার মাধ্যমে ক্রেতা বা ভোক্তাদের মধ্যে নতুন চাহিদা সৃষ্টি করা হবে, যেখানে বিক্রি ও লাভের পরিমাণ সর্বোচ্চ হবে, এবং যেখানে প্রতিযোগিতা অর্থহীন বা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে।

রেড ওশানে আছে প্রতিযোগিতা, আর ব্লুয় ওশানে উদ্ভাবন; Image Source: Blue Ocean Strategy

ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজির চ্যালেঞ্জ

নতুন কোনো পণ্য বা সুবিধা বাজারে আনলেই যে সেটি ব্লু ওশান তৈরি করে ফেলবে, সেরকমটা কিন্তু না-ও হতে পারে। কারণ বিদ্যমান বাজারব্যবস্থায় নেই এমন কিছু যদি আমরা নতুন করে বাজারে নিয়ে আসিও, তারপরও কিন্তু কোনো নিশ্চয়তা নেই যে ক্রেতা বা ভোক্তারা সেটি গ্রহণ করবেই। যাতে তারা সেটি গ্রহণ করে, সেজন্য আগে তাদেরকে নতুন পণ্য বা সুবিধাটির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। যখন তাদের মধ্যে এই উপলব্ধি আসবে যে, হ্যাঁ, আমাদের আসলেই এই জিনিসটি দরকার, তখনই তারা সেটি গ্রহণ করবে।

যেমন ধরুন, ভোক্তারা নির্দিষ্ট এক ধরনের চা পান করেই অভ্যস্ত ও সন্তুষ্ট। এখন বাজারে নতুন কোনো চা আনলেই তারা সেটি কেন কিনবে? আগে তো তাদেরকে বোঝাতে হবে যে নতুন চা আগেকার সকল চায়ের তুলনায় বেশি মানসম্পন্ন, এবং এর উপকারিতাও বেশি।

অর্থাৎ নতুন কোনো পণ্য বা সুবিধা বাজারে আনলে, সেটি তার বিকল্পসমূহের চেয়ে গুণে-মানে শ্রেয়তর হতে হবে, এবং যথাসম্ভব সেটির প্রচার-প্রচারণাও চালাতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ সেটির গুণাগুণ সম্পর্কে অবগত হয়ে সেটি কেনার ব্যাপারে প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে।

ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজির উদাহরণ

ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজির অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। তেমনই একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায় অ্যাপলের আইটিউনসের কথা।

২০০১ সালে প্রাথমিকভাবে অ্যাপল বাজারে নিয়ে আসে তাদের ডিজিটাল মিউজিক সুবিধা আইটিউনস। এর আগপর্যন্ত সংগীতপ্রেমীদেরকে কোনো একটি গানের অ্যালবামের ক্যাসেট বা সিডি পুরোটা কিনতে হতো। কিন্তু অনেকক্ষেত্রে এমন দেখা যেত যে, কোনো ব্যক্তি পুরো অ্যালবামটি নয়, নির্দিষ্ট একটি বা দুটি গান শুনতে আগ্রহী। তাহলে তার জন্য পুরো অ্যালবামটি কেনা হয়ে পড়ত অনেক বেশি খরচসাপেক্ষ ব্যাপার।

ব্লু ওশান স্ট্র্যাটেজির একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ অ্যাপলের আইটিউনস; Image Source: Apple

তাই অনেকেই ইন্টারনেট থেকে অবৈধভাবে ঐ একটি বা দুটি গান ডাউনলোড করে নিত। কাজটি যে অনৈতিক, সে বিষয়ে তাদেরকে অবগত করলেও তারা পুরো অ্যালবাম কেনার মতো আর্থিক সংগতি নেই, এমন অজুহাত দেখাত। এর ফলে অবৈধ ডাউনলোডের পরিমাণ বাড়তে থাকায়, অডিও ইন্ডাস্ট্রি ক্রমশ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিল, আর সংগীতশিল্পীরাও তাদের প্রাপ্য সম্মানী থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। অন্যদিকে ইন্টারনেট থেকে অবৈধভাবে ডাউনলোড করা গানের অডিও কোয়ালিটি খুব একটা ভালো না হওয়ায়, সংগীতপ্রেমীরাও বঞ্চিত হচ্ছিল গানের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন থেকে।

এসব সমস্যার সমাধান নিয়ে আসে আইটিউনস। এর মাধ্যমে অ্যাপলের ডিভাইস ব্যবহারকারীরা চাইলেই যেকোনো অ্যালবামের একটি একক গান ন্যূনতম অর্থের বিনিময়ে কিনতে পারে। এতে করে গ্রাহকদের খুব বেশি খরচও হয় না। আবার তারা সর্বোচ্চ অডিও কোয়ালিটির গানও পেয়ে যায়। তাছাড়া অর্থের বিনিময়ে এসব ডাউনলোড আইনতও বৈধ, এবং এ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ প্রযোজক ও সংগীতশিল্পীরাও পান। অর্থাৎ আইটিউনসের মাধ্যমে সকল দিকেই উইন-উইন পরিস্থিতি তৈরি হয়।

আর সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় অবশ্যই আইটিউনস। ঐ সময় যেহেতু তারা বাজারে এক ও অদ্বিতীয় ছিল, তাই কেবল প্রথম কয়েক বছরেই তারা সীমিত বিনিয়োগে বিপুল পরিমাণ অর্থ কামিয়ে নিতে পেরেছে। আবার এমন অনেক ক্রেতাও আছে যারা কেবল আইটিউনস সেবার কারণেই সেসময় অ্যাপলের ডিভাইস কিনেছে। ফলে আইটিউনসের কল্যাণে অ্যাপলের বিভিন্ন ডিভাইসের বিক্রিও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়।

অর্থাৎ প্রথম কয়েক বছর ডিজিটাল মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে তারা ব্লু ওশান হিসেবে ব্যবহার করতে পেরেছে। তাছাড়া বর্তমান সময়ে বাজারে অনুরূপ অনেক প্রতিদ্বন্দ্বীর আগমন ঘটলেও, সূচনাটা আইটিউনসের হাত ধরেই হয়েছিল বলে, প্রযোজক-সংগীতশিল্পী থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রাহক, সকলের পছন্দের তালিকায় আইটিউনসই এখনও শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে।

চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It is about the marketing theory called Blue Ocean Strategy. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © Medium

Related Articles