Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.
“অ্যামাজন এত বড় কোনো কোম্পানিও নয় যে তার পক্ষে ব্যর্থ হওয়া অসম্ভব। প্রকৃতপক্ষে, আমি ভবিষ্যদ্বাণী করছি, অ্যামাজন ব্যর্থ হবে।”
হ্যাঁ পাঠক, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানিটির ব্যাপারে এমনই অবিশ্বাস্য একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এক লোক। আপনার হয়তো মনে হচ্ছে, লোকটার মাথায় নির্ঘাত ছিট আছে। তা না হলে অ্যামাজনের মতো একটি কোম্পানির ব্যাপারে কেউ এমন কথা বলতে পারে!
তবে আপনি আরো একবার বিস্মিত হবেন, যখন জানতে পারবেন যে, অ্যামাজনের সম্পর্কে এই ভবিষ্যদ্বাণীটি যিনি করেছেন, তিনি যেন তেন কেউ নন, তিনি স্বয়ং কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, জেফ বেজোস! ২০১৮ সালে অ্যামাজনের একটি অল-হ্যান্ডস মিটিংয়ে নিজের কর্মচারীদের উদ্দেশে এমন ভয়াবহ একটি কথা বলেন তিনি।
Image Credit: Alyson Shontell/Business Insider
এরপর তিনি যা বলেন, তা আরো আঁতকে ওঠার মতো,
“অ্যামাজন কেবল ব্যর্থই হবে না, এটি দেউলিয়া হয়ে যাবে। আপনারা যদি বড় বড় কোম্পানিগুলোর দিকে তাকান, সেগুলোর আয়ুষ্কাল কিন্তু ৩০ বছরের মতো হয়ে থাকে, ১০০ বছর নয়।”
শুনতে অদ্ভুত ঠেকতে পারে, কিন্তু বেজোস যা বলেছেন, তাতে বিন্দুমাত্র মিথ্যে নেই। আজকাল যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক কোম্পানিগুলো অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত নিজেদের শেষ দেখে ফেলছে, ৩০ বছরের মতো বয়সে। বেজোসের কথার স্বপক্ষে এই অনুমোদনটি যিনি দিয়েছেন, তিনিও কোনো যে-সে ব্যক্তি নন। তার নাম মার্টিন রিভস। পেশায় তিনি একজন কৌশলী। টেড টকে How to build a business that lasts 100 years শীর্ষক একটি বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
Image Credit: Alyson Shontell/Business Insider
সেখানে তিনি আরো একটি চোখ কপালে ওঠার মতো পরিসংখ্যান দেন: আজ থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ৩২% বড় কোম্পানির ব্যবসাই লাটে উঠবে।
অন্য কেউ হলে হয়তো এসব পরিসংখ্যানকে আমলেই নিত না। কিন্তু বেজোস তো আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো নন। তা-ই যদি তিনি হতেন, তাহলে কি আর তার পক্ষে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হওয়া সম্ভব ছিল? ছিল না। বেজোস তাই পরিসংখ্যানটিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। তিনি জানেন, অ্যামাজনের বয়স ইতিমধ্যেই ২৪ বছর। অতি সত্বর তিনি যদি কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেন, তাহলে অ্যামাজনের পরিণতিও ওই ৩২% কোম্পানির মতো হতে পারে।
বেজোস খুব ভালো করেই জানেন তিনি কী চান। তার লক্ষ্য অ্যামাজনকে সঞ্জিবনী সুধা পান করিয়ে, চিরকালের জন্য অমর করে তোলা নয়। কারণ মানুষের মতো যেকোনো কোম্পানিকেও একদিন না একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। তিনি স্রেফ চান, অ্যামাজনের মৃত্যু যেন তার নিজের জীবদ্দশায় না হয়। আর তা নিশ্চিত করতে, তিনি অনুসরণ করছেন নিজস্ব উদ্ভাবিত একটি দর্শন, যার নাম তিনি দিয়েছেন “ডে ওয়ান”।
“ডে ওয়ান” বেজোসের জন্য কোনো নতুন দর্শন বা চিন্তা নয়। দীর্ঘদিন যাবত তিনি এই “ডে ওয়ান” দর্শনের কথা আউড়ে চলেছেন। এমনকি অ্যামাজনের হেডকোয়ার্টারে তিনি যে ভবনটিতে কাজ করেন, সেটিরও নাম রেখেছেন “ডে ওয়ান”। তার মতে, অ্যামাজন যতদিন ভালোমতো বেঁচেবর্তে থাকবে, তিনিও “ডে ওয়ান”-এ থাকবেন। যেদিন অ্যামাজনের অধঃপতন শুরু হবে, তার ঠিকানা হবে “ডে টু”-তে।
Image Credit: Alyson Shontell/Business Insider
“ডে টু” কী? সেটি বেজোস খোলাসা করে বলতে চান না। কারণ কোনো কোম্পানির সিইও-ই “ডে টু”-র কথা চিন্তাও করতে চায় না। বেজোসের মাথায় এখন কেবল একটিই চিন্তা, আর তা হলো, যেভাবেই হোক “ডে ওয়ান”-এ থাকা। আর সেজন্য তিনি নির্ধারণ করেছেন চারটি এমন কৌশল, যা কেবল অ্যামাজনকেই নয়, বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম যেকোনো বড় কোম্পানিকেই।
চলুন, জেনে নিই কী সেই চারটি কৌশল।
ভোক্তাকে খুশি করা
বেজোসের মতে, যেকোনো ব্যবসায়ীরই ধ্যান-জ্ঞান হওয়া উচিৎ তার ভোক্তাকে খুশি করা। কারণ ভোক্তার মন জুগিয়ে চলতে পারলেই তার পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব। আর তাই তাকে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিতে হবে ভোক্তাকে খুশি করার ক্ষেত্রে। যদি তা সম্ভব হয়, তাহলেই একজন ব্যবসায়ী এমন এমন সব নতুন উদ্ভাবন নিয়ে হাজির হতে পারবে, যা তার ভোক্তারা ভালোবাসবে, খুশি মনে গ্রহণ করবে।
“কোনো ভোক্তাই অ্যামাজনকে বলেনি প্রাইম মেম্বারশিপ প্রোগ্রাম চালু করতে। কিন্তু যখন আমরা তা চালু করলাম, তখন কিন্তু প্রমাণ হয়ে গেল যে এতদিন ধরে তারা মনে মনে এমন কিছুই চাইছিল। এবং আমি আপনাদেরকে এমন আরো অসংখ্য উদাহরণ দিতে পারব।”
এমন বিশ্বাস শুধু বেজোসই নন, প্রায় সকল উদ্ভাবকের মধ্যেই বিদ্যমান। যেমন অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের ফোকাস গ্রুপের প্রতি বিতৃষ্ণা সর্বজনবিদিত। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষজন প্রায় সময়ই আসলে জানেই না তারা কী চায়। কেবলমাত্র তাদের সামনে সেই জিনিসটি হাজির করা হলেই তারা বুঝতে পারে যে, হ্যাঁ, এটাই তো আমরা চাইছিলাম।
প্রক্রিয়ার হাতে নিয়ন্ত্রিত না হওয়া
বেজোসের দ্বিতীয় কৌশলটি হলো কোনো প্রক্রিয়াকেই শেষ কথা বলে মেনে না নেয়া। যখনই কোনো ব্যবসায়ী মনে করবে, আমরা তো সবসময় এভাবেই কাজটা করে এসেছি, তখনই বুঝতে হবে প্রক্রিয়া ওই ব্যবসায়ীকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে দিয়েছে।
Image Credit: Alyson Shontell/Business Insider
একজন ব্যবসায়ীকে নিজের প্রক্রিয়ার ব্যাপারে সবসময়ই খুঁতখুঁতে হতে হবে। ক্রমাগত তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে, অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় কাজটি আরো ভালোভাবে করা সম্ভব কি না।
এ ব্যাপারে বেজোস লিখেছিলেন,
“একটি ভালো প্রক্রিয়া আপনাকে সাহায্য করে যাতে করে আপনি ভালোভাবে ভোক্তাদেরকে খুশি করতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি আগে থেকেই সতর্ক না হন, তাহলে ভোক্তাকে খুশি করার চেয়ে প্রক্রিয়া মেনে চলাই বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে। বড় সংগঠনগুলোতে খুব সহজেই এমনটা ঘটতে পারে। তাই আপনাকে সবসময় খতিয়ে দেখতে হবে, আপনি প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছেন, নাকি প্রক্রিয়া আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ডে টু-তে পৌঁছে যাওয়া কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টি দেখা যায়।”
অতীতকে আঁকড়ে ধরে না থাকা
সবসময় যেভাবে সবকিছু হয়ে এসেছে, সেটিকেই আঁকড়ে ধরে বসে থাকা খুবই বাজে একটি কৌশল। ব্যবসার জগতে কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। তাই বেজোস মনে করেন, একজন ব্যবসায়ীকে সবসময় চোখ-কান খোলা রেখে দেখতে হবে ইন্ডাস্ট্রিতে এই মুহূর্তে ঠিক কী হচ্ছে, এবং সেই অনুযায়ী তার নিজেকে অভিযোজিত করতে হবে।
“বাইরের পৃথিবী আপনাকে ডে টু-তে ঠেলে দেবে, যদি আপনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন ট্রেন্ডসমূহের সাথে মানিয়ে নিতে না পারেন। আপনি যদি নতুন ট্রেন্ডগুলোকে অস্বীকার করতে চান, তার মানে আপনি নিজের ভবিষ্যতকেই অস্বীকার করতে চাচ্ছেন। তার চেয়ে নতুনের আগমনকে মেনে নিন, এতে করে বাতাস আপনার অনুকূলেই বইতে থাকবে।”
Image Credit: Alyson Shontell/Business Insider
এক্ষেত্রে বেজোস সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন আধুনিক প্রযুক্তিকে। প্রযুক্তিই আজকাল সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছে, যেকোনো ব্যবসার গতিপথ পরিবর্তন করে দিতে পারছে। তাই তিনি মনে করেন, বড় কোম্পানিগুলোকে নিজেদের ঐতিহ্যের কথা ভুলে, নতুন নতুন প্রযুক্তিকে আলিঙ্গন করে নিতে হবে।
দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ
বেজোসের সর্বশেষ কৌশলটি হলো দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এ ব্যাপারে তিনি তার সিদ্ধান্ত প্রণয়নকারী দলকে সবসময় একটি কথা বলেন, “Disagree and commit.”, কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অহেতুক কাল বিলম্ব করলে কোনো লাভ হয় না। তার চেয়ে সিদ্ধান্তের সাথে শতভাগ একমত না হওয়া সত্ত্বেও সেটি গ্রহণ করে, সে অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করে দেয়া ভালো।
“বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই কেবল ৭০% নিশ্চিত তথ্য পাওয়ার পরই গ্রহণ করা উচিৎ। আপনি যদি ৯০% নিশ্চিত হতে চান, তার মানে আপনি অনেক দেরি করে ফেলছেন। চিন্তা করায় সময় নষ্ট করার চেয়ে ভুল করা শ্রেয়। পিছিয়ে পড়লে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হবে।”
Image Credit: Alyson Shontell/Business Insider
যখন একজন নেতা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তখন সে পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজটি করতে পারে। কিন্তু ব্যবহারিকভাবে তা অসম্ভব। কেউ যদি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে শতভাগ নিশ্চিত হতে চায়, তাহলে অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে, আর ততক্ষণে আগত সুযোগটি হাত ফসকে বেরিয়ে যেতে পারে।
বেজোসের মতে, মাঝেমধ্যে ভুল করা মন্দ নয়। ভুল করা বা ব্যর্থ হওয়া বরং শিক্ষণীয় হতে পারে। একজন ব্যবসায়ী বুঝতে পারে কোথায় তার খামতি ছিল, এবং সে অনুযায়ী ভবিষ্যতে সে তার কর্মপরিকল্পনা সাজাতে পারে।
“ডে টু” এলে কী হবে?
Image Credit: Alyson Shontell/Business Insider
অ্যামাজন, কিংবা অন্য যেকোনো বড় কোম্পানিই, যত চেষ্টাই করুক না কেন, একদিন “ডে টু”-র আগমন ঘটবেই। সেদিন আসলে কী হবে, বেজোসের কাছে এ প্রশ্ন করেছিল তার অধস্তন কর্মচারীরা। বেজোস তখন বলেছিলেন, “ডে টু” হলো সমাপ্তির সূচনা।
“নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে ডে টু খুবই ধীরে ধীরে ঘটবে। একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে কয়েক দশক ধরে ডে টু-র বীজ রোপিত হতে পারে, কিন্তু একসময় না একসময় শেষ ফলাফলটি আসবেই।”
চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/