জাপান কেন রাশিয়ার কাছ থেকে দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ ফেরত চাচ্ছে? এর উত্তর হচ্ছে, দক্ষিণ কুরিলে, বা জাপানি দৃষ্টিকোণ থেকে, উত্তরাঞ্চলীয় ভূমিতে জাপানের নিজস্ব বহুবিধ স্বার্থ রয়েছে।
প্রথমত, জাপানে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ খুবই সীমিত। খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন খনিজ দ্রব্যাদি জাপানকে আমদানি করতে হয়। দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ নানারকম খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এবং সেখানে হাইড্রোকার্বনের মজুদ থাকার সম্ভাবনা প্রবল। তদুপরি, দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জে পর্যটন শিল্পের বিকাশের সম্ভাবনা ব্যাপক। এজন্য জাপান দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জকে ফিরে পেতে আগ্রহী।
দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ইস্যুটি জাপানে একটি খুবই আবেগপূর্ণ বিষয়। ১৯৪৮ সালে সোভিয়েতরা কুরিল দ্বীপপুঞ্জ থেকে যে ১৭,০০০ জাপানিকে বহিষ্কার করেছিল, তাদের অনেকেই এখনো জীবিত এবং তারা ও তাদের বংশধররা এখন জাপানে বসবাস করে। এরা এই দ্বীপগুলো ফিরে পেতে বদ্ধপরিকর এবং জাপানি সরকার যাতে দ্বীপগুলোর ওপর অধিকার ছেড়ে না দেয় সেজন্য তারা জাপানের অভ্যন্তরে শক্তিশালী লবিং গ্রুপের সৃষ্টি করেছে। ফলে জাপানি সরকার সহজে দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ওপর থেকে দাবি ছেড়ে দিতে পারবে না।
তৃতীয়ত, জাপানি জাতীয়তাবাদীরা কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ওপর থেকে তাদের দাবি প্রত্যাহার করতে নারাজ। কুরিল দ্বীপপুঞ্জকে তারা জাপানের মূল ভূখণ্ডের অংশ মনে করে এবং কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ইস্যুতে কোনোরকম ছাড় দিলে এরা জাপানি সরকারের ক্ষমতায় থাকা কঠিন করে তুলতে পারে।
চতুর্থত, জাপানের সঙ্গে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ারও বেশ কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে বিরোধ রয়েছে এবং কোনো ক্ষেত্রেই জাপান ছাড় দিচ্ছে না। এমতাবস্থায় জাপান যদি দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ওপর তার দাবি ছেড়ে দেয়, তাহলে জাপানের অন্যান্য আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলো বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে তাদের একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহিত হবে।
সর্বোপরি, জাপানি অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ইস্যুটিকে তারা ব্যবহার করছে যুদ্ধবিমুখ জাপানি জনসাধারণের মাঝে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগিয়ে রাখার জন্য। স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের ভয় জাপানি জাতীয়তাবাদকে টিকিয়ে রেখেছিল। ১৯৯০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের এবং চীনে পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিকাশ লাভের পরিপ্রেক্ষিতে এই জাতীয় ঐক্যের উপাদানটির গুরুত্ব লোপ পায়। এমতাবস্থায় জাপানি জনসাধারণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা টিকিয়ে রাখার জন্য টোকিও কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ইস্যুকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করতে শুরু করে।
বস্তুত জাপানি সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকে দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ইস্যুটি যতটা না রুশ–জাপানি দ্বন্দ্বের সাথে সংশ্লিষ্ট, তার চেয়ে জাপানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে ইস্যুটি বেশি সম্পর্কযুক্ত। যে দল বা যে নেতা দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জকে ফেরত আনতে পারবে, সেই দল বা নেতার টোকিওতে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা সুনিশ্চিত হবে। জাপানের রাজনীতি তুলনামূলকভাবে অস্থিতিশীল হওয়ায় যেকোনো জাপানি নেতার জন্য এটি অত্যন্ত কাম্য। উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ জাপানের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ব্যাপারে ঠাট্টা করে বলেছিলেন যে, তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে কমপক্ষে ৮ জন জাপানি প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেছেন এবং চলে গেছেন!
দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে টোকিও মস্কোকে নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়েছে। জাপান রাশিয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সাইবেরিয়ার দুর্গম অঞ্চল ও উত্তর মেরু থেকে খনিজ সম্পদ আহরণের জন্য জাপান রাশিয়াকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করতে চেয়েছে। বিনিময়ে তারা দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ রাশিয়ার কাছ থেকে ফিরে পেতে চায়। কিন্তু মস্কো টোকিওর সবগুলো প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করেছে। দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ভূরাজনৈতিক তাৎপর্য মস্কোর কাছে এতটাই বেশি যে অর্থনৈতিক স্থবিরতা সত্ত্বেও তারা এই দ্বীপগুলো অন্য কোনো রাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করতে রাজি নয়।
১৯৫৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন কুরিল দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত শিকোতান দ্বীপ ও হাবোমাই দ্বীপপুঞ্জ জাপানের নিকট হস্তান্তর করে কুরিল সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিল, কিন্তু একটি বহিঃশক্তির চাপে জাপান তাতে সম্মত হয়নি। ২০১৯ সালে রাশিয়া আবার ১৯৫৬ সালের প্রস্তাবের পুনরাবৃত্তি করেছিল, কিন্তু এবারও একটি বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের কারণে সেই প্রস্তাব সাফল্য পায়নি। সেই বহিঃশক্তিটি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
কুরিল দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে রুশ ভাল্লুকের সঙ্গে জাপানি সামুরাইয়ের দ্বন্দ্বে মার্কিন ঈগল তৃতীয় পক্ষ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জাপানে মার্কিন সৈন্য মোতায়েনকৃত রয়েছে এবং জাপানি পররাষ্ট্রনীতির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব অত্যন্ত শক্তিশালী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জাপান প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সঙ্কটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষ অবলম্বন করেছে। এজন্য মস্কোর হর্তাকর্তাদের অনেকেই টোকিওকে ওয়াশিংটনের একটি ‘আশ্রিত রাজ্য’ হিসেবে বিবেচনা করে, যদিও বাস্তবে ওয়াশিংটন ও টোকিওর সম্পর্ককে এত সরলভাবে আখ্যায়িত করা যায় না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় কুরিল দ্বীপপুঞ্জের সম্পূর্ণ অংশ কিংবা অন্ততপক্ষে দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ জাপানের হস্তগত হোক। এর পেছনে পেন্টাগনের নিজস্ব হিসেব–নিকেশ রয়েছে।
প্রথমত, এই নিবন্ধের ১ম পর্বে কুরিল দ্বীপপুঞ্জ রাশিয়ার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু রাশিয়ার কাছে ছিল অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ এবং যেহেতু মস্কোকে হোয়াইট হাউস আবার তাদের ‘এক নম্বর দুশমন’ হিসেবে দেখতে আরম্ভ করেছে, কাজেই এই অঞ্চলটি যাতে রাশিয়ার হাতছাড়া হয়ে যায় সেটিই ওয়াশিংটনের কাম্য।
দ্বিতীয়ত, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা এশীয়–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে (Asia-Pacific Region) ভূরাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করছে এবং এই অঞ্চলে এতদিন তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল চীন। সম্প্রতি মস্কোও এই অঞ্চলে তাদের শক্তি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে, যা ওয়াশিংটনের জন্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। আর এতদঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের জন্য কুরিল দ্বীপপুঞ্জ মস্কোর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাভাবিকভাবেই, পেন্টাগন চেষ্টা করছে কুরিলকে রুশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখার।
তৃতীয়ত, মার্কিন সেনা কর্মকর্তারা ২০১৯ সালে জানিয়েছেন যে, দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ জাপানের নিয়ন্ত্রণে এলে সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র–বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা স্থাপন করবে। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই ব্যবস্থাটি উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করবে। ইতুরুপ দ্বীপ এরকম একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিরাপত্তা (Missile Defense) ব্যবস্থা মোতায়েনের জন্য আদর্শ স্থান বলে তাঁরা মত প্রকাশ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র যদি দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জে এই ব্যবস্থা মোতায়েন করে তাহলে তাদের লাভ কী? একদিকে, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়া বা উত্তর কোরিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে এই অঞ্চল থেকে নিক্ষিপ্ত রুশ বা উত্তর কোরীয় ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন আকাশসীমায় পৌঁছাতেই পারবে না, কারণ দক্ষিণ কুরিলে থাকা মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র–বিধ্বংসী ব্যবস্থা সেগুলোকে মাঝপথেই ধ্বংস করে দেবে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই দ্বীপগুলো থেকে ইচ্ছেমতো রাশিয়া বা উত্তর কোরিয়ার ওপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারবে এবং সেগুলো আগের চেয়ে কম সময়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারবে।
ক্রেমলিন খুব ভালো করেই জানে যে দক্ষিণ কুরিলে যুক্তরাষ্ট্র যেসব ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে চায়, তার মূল লক্ষ্য উত্তর কোরিয়া নয়, বরং রাশিয়া। সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনা জানার মস্কো আগে দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ব্যাপারে টোকিওকে যতটা ছাড় দিতে চাচ্ছিল, সেটা আর দেবে না। অর্থাৎ, ভাগ্যের পরিহাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা তার মিত্ররাষ্ট্র জাপানের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে রুশ–জাপানি বিরোধ যে একেবারেই সমাধান সম্ভব নয়, বিষয়টা সেরকম নয়। রাশিয়ার সঙ্গে চীনেরও এরকম সীমান্ত সমস্যা ছিল এবং ১৯৬৯ সালে এ কারণে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু রক্তক্ষয়ী সীমান্ত যুদ্ধও হয়েছিল। ১৯৯১ ও ২০০৪ সালে স্বাক্ষরিত দুটি চুক্তির মাধ্যমে মস্কো ও বেইজিং তাদের সীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে ফেলে এবং মস্কো সাইবেরিয়া ও দূরপ্রাচ্যের রুশ–চীনা সীমান্তে ৭২০ বর্গ কি.মি. ভূমি বেইজিং–এর নিকট হস্তান্তর করে। হস্তান্তরিত ভূমির মধ্যে ছিল উসুরি নদীতে অবস্থিত বলশয় উসুরিওস্কি দ্বীপের একাংশ। ৩৫০ বর্গ কি.মি. আয়তনবিশিষ্ট দ্বীপটির ১৭৪ বর্গ কি.মি. এখন চীনের অন্তর্গত। এই দ্বীপটি রুশ দূরপ্রাচ্যের অন্যতম প্রধান শহর খাবারোভস্কের নিকটে অবস্থিত এবং শহরটির নিরাপত্তার জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবুও মস্কো এই দ্বীপটির অর্ধাংশ–সহ আরো প্রায় ১,২০০টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ চীনের কাছে হস্তান্তর করেছে। এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মস্কো সীমান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য ভূমি হস্তান্তর করতে রাজি।
তাহলে দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ জাপানের কাছে হস্তান্তর করতে মস্কোর এত আপত্তি কেন? এর উত্তর হচ্ছে, চীন রাশিয়ার কাছ থেকে ৭২০ কি.মি. ভূমি লাভ করেছে ঠিকই, কিন্তু বিনিময়ে ১৮৫৮–১৮৬০ সালে রাশিয়া দূরপ্রাচ্যের যে ১০,০০,০০০ বর্গ কি.মি.–এর চেয়েও বেশি ভূমি চীনের কাছ থেকে দখল করে নিয়েছিল, তার ওপর থেকে বেইজিং সকল দাবি পরিত্যাগ করেছে। এটি মস্কোর জন্য একটি বড় রাজনৈতিক লাভ। জাপানকে দক্ষিণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ হস্তান্তর করলে মস্কো এরকম কোনো রাজনৈতিক সুবিধা পাবে না। তারচেয়ে বড় কথা, চীনের পররাষ্ট্রনীতি জাপানের পররাষ্ট্রনীতির মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবাধীন নয়।
দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত ফকল্যান্ড (বা মালভিনাস) দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে ব্রিটেন এবং আর্জেন্টিনার মধ্যে যে বিরোধ রয়েছে, কুরিল দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে রাশিয়া ও জাপানের মধ্যে যে বিরোধ সেটিও একই ধাঁচের। ১৯৮২ সালে আর্জেন্টিনার সামরিক জান্তা দক্ষিণ আমেরিকায় ব্রিটেনের দুর্বল সামরিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে বিরোধপূর্ণ দ্বীপপুঞ্জটি দখল করার প্রচেষ্টা করেছিল, কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক অবস্থানও দুর্বল ছিল এবং মস্কোর নীতিনির্ধারকদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, জাপান আর্জেন্টিনার মতোই সামরিক শক্তির মাধ্যমে কুরিল সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালাবে। মস্কোর সৌভাগ্য এই যে, সেসময় টোকিও যুদ্ধের জন্য আগ্রহী ছিল না এবং বর্তমানে টোকিও যদি সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে কুরিল দ্বীপপুঞ্জ দখল করতে চায়ও, রুশ সামরিক পুনরুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের জন্য সেটি কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
রুশ–জাপানি ও রুশ–মার্কিন দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কুরিল দ্বীপপুঞ্জ যে মস্কো তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেবে না, সেটি বলাই বাহুল্য। অন্যদিকে, টোকিও তার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থে কুরিল দ্বীপপুঞ্জের ওপর থেকে তার দাবি কখনোই প্রত্যাহার করে নেবে না। সুতরাং, বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে কুরিল দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে রাশিয়া ও জাপানের যে বিরোধ, সেটির নিষ্পত্তির আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই।