Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রাচীনকালের দৈত্য দানো (পর্ব-৪)

গত পর্বে ট্রায়াসিক যুগের কিছু ডাইনোসর সম্বন্ধে জেনেছি। এবার জানা যাক মেসোজোয়িক মহাযুগের দ্বিতীয় ধাপ জুরাসিক সম্পর্কে।

এ যুগের ব্যাপ্তি ছিল প্রায় ৫৪ মিলিয়ন বছর এবং সূত্রপাত হয়েছিল অন্তত দু’শ মিলিয়ন বছর পূর্বে। একে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

১. প্রাক জুরাসিক (২০১.৩ মিলিয়ন বছর পূর্ব থেকে ১৭৪.১ মিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত)
২. মধ্য জুরাসিক (১৭৪.১ মিলিয়ন বছর পূর্ব থেকে ১৬৩.৫ মিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত)
৩. শেষ জুরাসিক (১৬৩.৫ মিলিয়ন বছর পূর্ব হতে ১৪৫ মিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত)

এ তিনটি যুগকে যথাক্রমে লায়াস, ডগার এবং মাম বলা হত। এদেরকেও আবার বেশ কিছু স্টেজে ভাগ করা হয়েছে। প্রাক জুরাসিকের ৪টি পর্যায় ছিল- হেটাঙ্গিয়ান, সিনেমুরিয়ান, প্রিন্সবেশিয়ান এবং টর্শিয়ান। মধ্য জুরাসিকেরও ছিল ৪টি পর্যায়- অ্যালেনিয়ান, বেজোশিয়ান, বেথোনিয়ান এবং ক্যালোভিয়ান। শেষ জুরাসিকের ছিল আবার ৩টি পর্যায়- অক্সফোর্ডিয়ান, কিমেরিডগিয়ান ও টিথোনিয়ান।

ভৌগলিক অবস্থা

জুরাসিক যুগের শিলা সারা পৃথিবীতেই বেশ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত, যার মধ্যে রয়েছে পাললিক, আগ্নেয় এবং রূপান্তরিত শিলা। সমুদ্রগর্ভে নিয়মিত পরিবর্তন এবং বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের ফলে পলি জমতে থাকে এবং এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে পুরোনো পাললিক শিলার যে অস্তিত্ব গভীর সমুদ্রে পাওয়া যায় তা এই জুরাসিক যুগেরই। জুরাসিক যুগে টেকটোনিক প্লেটও অনেক বেশি সচল ছিল, এবং পৃথিবীর যেসব জায়গায় এর পরিমাণ বেশি ছিল, সেখানে আগ্নেয় শিলারও ব্যাপক অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। আর রূপান্তরিত শিলা মোটামুটি সব মহাদেশেই সমুদ্রগর্ভে এবং স্থলে ভূগর্ভ আকরিক আকারে পাওয়া যায়।

এক্সমাউথ সৈকতে জুরাসিক পাথর; Image Source: tripadvisor.com

 

জুরাসিক আমলে মহাদেশ, সমুদ্র এবং জীবজগতের ব্যাপক পরিবর্তন হয়। এসময় প্যানজিয়া ধীরে ধীরে ভাঙতে শুরু করে। টেকটোনিক প্লেটের ব্যাপক কার্যকলাপের কারণে অগ্ন্যুৎপাত হয় এবং সমুদ্রগর্ভে দ্বীপ জেগে ওঠে। একের পর এক শিলার স্তর জমা হতে থাকে এবং জুরাসিক যুগ উৎপাদন করে স্বর্ণ, কয়লা, পেট্রোলিয়ামসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ।

জুরাসিক যুগের খনিজ সম্পদ; Image Source: researchgate.net

 

প্যানজিয়ার ভাঙন ট্রায়াসিক যুগের শেষের দিকেই শুরু হয়ে যায় এবং গোটা জুরাসিক জুড়েই চলতে থাকে। প্রাক জুরাসিকের সময়েও প্যানজিয়ার অঞ্চলগুলো মোটামুটি কাছাকাছিই ছিল। উত্তরাঞ্চলে লরেশিয়া, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল বর্তমান উত্তর আমেরিকা ও ইউরেশিয়া এবং দক্ষিণাঞ্চলে গন্ডোয়ানা যার অন্তর্ভুক্ত ছিল বর্তমান দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, ভারত, এন্টার্কটিকা এবং অষ্ট্রেলিয়া। এ দুটো বিশাল অঞ্চল টেথিস নামক এক উষ্ণপ্রধান পূর্ব-পশ্চিমব্যাপি বিস্তৃত সমুদ্রপথ দ্বারা আলাদা ছিল। 

জুরাসিক যুগে উত্তর আমেরিকা ও ইউরেশিয়ার মাঝে, উত্তর আমেরিকা ও গন্ডোয়ানার মাঝে এবং গন্ডোয়ানার মধ্যে প্রচুর সামুদ্রিক চিড় দেখা দেয়, এবং কেন্দ্রগুলো ছড়িয়ে যেতে থাকে। সামুদ্রিক বেসিনের প্রভাবে নিয়মিতভাবেই অঞ্চলগুলো বন্যায় প্লাবিত হতে থাকে। জমতে থাকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বর্জ্য, যেমন- লবণ, খনিজ তেল ইত্যাদি যা আজ অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। পুরো জুরাসিক যুগ ধরে মহাদেশীয় ভাঙন চলতে থাকে এবং ধীরে ধীরে এন্টার্কটিকা, ভারত ও মাদাগাস্কার থেকে  আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা আলাদা হয়ে যায়, সৃষ্টি হয় ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ।

জুরাসিক যুগের মানচিত্র; Image Source: britannica.com

 

জলবায়ু

জুরাসিক যুগের বিভিন্ন ফসিল এবং খনিজ পদার্থের ওপর ভিত্তি করে সে আমলের জলবায়ুর ব্যাপারে একটা মোটামুটি ধারণা করা হয়েছে। পৃথিবী তখন বেশ উষ্ণই ছিল, মধ্যরেখার সাথে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের তাপমাত্রার ততটা পার্থক্যও ছিল না, যতটা আজ রয়েছে। লবণ সমৃদ্ধ এলাকায় যেমন শুষ্কতা বিরাজ করত, পক্ষান্তরে কয়লা সমৃদ্ধ এলাকায় হত ভারি বৃষ্টিপাত। প্যানগিয়ার পশ্চিমাংশ বেশ শুষ্ক ছিল, পূর্বাংশ ছিল বেশ আর্দ্র। সমুদ্রের পানির উপরিভাগে তাপমাত্রা ছিল ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গভীর পানির তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মধ্য জুরাসিক যুগে জলবায়ু বেশ ঠান্ডা ছিল যেখানে শেষ জুরাসিক যুগে জলবায়ু ছিল উষ্ণ। তবে জুরাসিক-ক্রিটেশাস সময়ে তাপমাত্রা হঠাৎ করেই কমে আসে।

শেষ জুরাসিক যুগে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা দায়ী করেছেন অগ্ন্যুৎপাত এবং সাগরতলের ভাঙনকে। এর ফলে বাতাসে প্রচুর কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং গ্রীন হাউজ গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। টেথিস সাগরও এক্ষেত্রে কিছুটা অবদান রেখেছে, উষ্ণমন্ডলীয় এলাকার পানি সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়ে। সমুদ্রের পানির স্রোত বেশ কম ছিল, কারণ সম্ভবত উষ্ণ তাপমাত্রা, সামুদ্রিক উপাদানের ঘনত্বের অভাব এবং বাতাসের প্রবাহের স্বল্প উপস্থিতি। আগেই বলা হয়েছে, কোনো বরফের অস্তিত্ব ছিল না, এর কারণ ধরে নেওয়া হয় মেরু অঞ্চলে স্থলের অভাব অথবা স্বাভাবিক উষ্ণ তাপমাত্রাকে। মোট কথা, এক্ষেত্রে কোনো একটা কারণ দর্শানো সত্যিই মুশকিল!

জুরাসিক বিলুপ্তি

ট্রায়াসিক জুরাসিক সীমারেখা নির্ধারণ করে পাঁচটি বৃহৎ গণবিলুপ্তির মধ্যে একটি। এসময় প্রায় অর্ধেক সামুদ্রিক অমেরুদন্ডী প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। স্থলজ মেরুদন্ডী প্রাণী ও গাছপালার কী পরিমাণ ক্ষতিসাধন হয়েছিল তা অবশ্য অস্পষ্ট, তবে এটা পরিষ্কার জুরাসিক যুগের শুরুতে এবং শেষের দুটো গণবিলুপ্তিতে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সামুদ্রিক প্রাণীরাই। এছাড়াও ব্র্যাকিওপডরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল এবং সেই সাথে প্রায় ৮৪% প্রজাতি। সমুদ্রে অক্সিজেনের অভাবকে মূলত এ বিলুপ্তির জন্য দায়ী করা হয়। এর ধাক্কা সামলে উঠতে প্রাণীকূলকে মধ্য জুরাসিক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

নিউ ইয়র্কের নেভাদা রাজ্যে আবিষ্কার হওয়া জুরাসিক যুগের প্রবাল; Image Source: astrobio.net

 

জুরাসিক জীবন

আধুনিককালের বহু জীবজন্তুর প্রথম আগমন ঘটে কিন্তু জুরাসিক যুগে, আর এর সাক্ষী জুরাসিক শিলার স্তর। মধ্য জুরাসিকে সমুদ্রগর্ভে প্রাচুর্য ছিল মলাস্ক এবং প্রবাল প্রাচীরের। এছাড়াও প্রাচুর্য ছিল আধুনিক মাছের। মাছেরা সহাবস্থান করত অ্যামোনিটস এবং অন্যান্য স্কুইড সদৃশ প্রাণীদের সাথে, এছাড়াও ছিল বৃহৎ সরীসৃপ যারা সকলেই আজ বিলুপ্ত। স্থলজ গাছপালার মধ্যে আধিক্য ছিল জিমনোস্পার্মের, যারা প্রাক্তন বাস্তুসংস্থানকে নিয়ন্ত্রণ করত। একইভাবে স্তন্যপায়ী, উভচর এবং সরীসৃপেরা, যাদের বংশধরেরা আজও বেঁচে রয়েছে, তারা প্রাক্তন প্রাণীদের জায়গা নিয়ে নিয়েছিল, যারা শেষ ট্রায়াসিক যুগে বিচরণ করত। সবচেয়ে পুরোনো পাখির জীবাশ্মও পাওয়া গিয়েছে এই জুরাসিক যুগেই। এককথায়, যেসব প্রাণী আমরা আজকে দেখতে পাই, সেই একই গোত্রের প্রাণীরা জুরাসিক যুগেও চলে-ফিরে বেড়াত। তবে জুরাসিক যুগের সাথে আধুনিক যুগের সবচেয়ে বড় পার্থক্য ছিল একটা জায়গায়, সেই যুগে প্রাধান্যবিস্তারকারী প্রাণীটি ছিল ডাইনোসর।

জুরাসিক সমুদ্রে মেরুদন্ডী প্রাণীদের বেশ বিশাল এক গোত্র চষে বেড়াত। অস্থি ও তরুণাস্থিময় মাছের আধিক্য ছিল প্রচুর। বড় মাছ এবং সামুদ্রিক সরীসৃপও ছিল। এসময় সমুদ্রে ছিল সবচাইতে বড় অস্থিময় মাছ। আর ছিল প্লিসিওসর, যারা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচাইতে বড় মাংসাশী সরীসৃপ। প্ল্যাংকটনের মধ্যে ছিল ভাসমান, এককোষী, আণুবীক্ষণিক প্রাণীরা, যার মধ্যে দুটো গ্রুপ উল্লেখযোগ্য, কোকোলিথোফোরস এবং ফোরামিনিফেরা। এছাড়াও কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াটমেরও উদ্ভব শেষ জুরাসিকে এবং ক্রিটেশাস যুগেও এদের আধিক্য ছিল। তবে সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের ওপরের স্তরে ছিল মলাস্ক।

প্লিসিওসর; sciencephoto.com

 

জুরাসিক যুগে স্থলজ প্রাণীদের ক্ষেত্রে বেশ বড় একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। শেষ ট্রায়াসিক যুগে সিনাপসিড ওবং থেরাপসিডদের প্রাধান্য ছিল, যাদের বলা যায় আজকের স্তন্যপায়ীদের আদিপুরুষ। এদেরকে স্তন্যপায়ী সদৃশ সরীসৃপও বলা হত। তবে জুরাসিক যুগের শুরুতে এদের সংখ্যা বেশ কমে যায়। বরং এসময় আর্কোসরাসদের (ডাইনোসর, টেরোসর, কুমির) প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। এটা স্পষ্ট নয় যে কেন হঠাৎ পরিবেশ ‘সিনাপসিড প্রধান’ থেকে ‘আর্কোসরাস প্রধান’ হয়ে উঠল। 

টেরোসররা পুরো জুরাসিক জুড়েই রাজত্ব করেছে। তাদের হালকা হাড় এবং পাখার গঠনের জন্য তারা উড়তে এবং ভাসতে পারত। শেষ জুরাসিক যুগে যেমন প্রচুর সামুদ্রিক অমেরুদন্ডী প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে, তেমনি প্রচুর স্থলজ মেরুদন্ডী প্রাণিরাও তাদের বৈচিত্র্য হারিয়েছে। যদিও প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে কারণটা এখনও মীমাংসাহীন।

এই সিরিজের পূর্ববর্তী পর্ব:

১ম পর্ব

২য় পর্ব

৩য় পর্ব

This article is about a short history of Jurassic Era

Feature Image Source: io9.com

Reference:

britannica.com

Related Articles