সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রচারিত হয়েছে, এবং সেটি একটি পুরনো ইস্যু নিয়ে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সংবাদটি হচ্ছে– একজন প্রাক্তন সোভিয়েত গোয়েন্দা কর্মকর্তা দাবি করেছেন, ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে একজন সোভিয়েত/রুশ গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছেন! উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে রাশিয়ার সঙ্গে সংযোগ নিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা দাবি করেছেন যে, ২০১৬ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রুশ হ্যাকাররা হস্তক্ষেপ করেছে এবং তাদের হস্তক্ষেপের কারণেই ট্রাম্প জয়যুক্ত হয়েছেন!
ট্রাম্পকে রুশরা নির্বাচনে বিজয়ী হতে সহায়তা করেছে, এই অভিযোগটিই যথেষ্ট গুরুতর। এর ওপর যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে, তিনি ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে সোভিয়েত ইউনিয়ন/রাশিয়ার গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছেন, সেটি আরো গুরুতর হয়ে দাঁড়ায়। এর অর্থ এটা দাঁড়ায় যে, সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা ‘কেজিবি’ প্রায় চার দশক ধরে ট্রাম্পকে ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে নিজেদের স্বার্থোদ্ধার করেছে, এবং পরবর্তীতে রুশরা তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত করেছে! এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে এটি ছিল কেবল কেজিবির ইতিহাসে নয়, বরং বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ইন্টেলিজেন্স অপারেশন! কিন্তু এই অভিযোগটি কতখানি সত্যি?
এক্ষেত্রে দুটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। প্রথমত, গোয়েন্দা কার্যক্রমের জগৎ প্রকৃতপক্ষে এতটাই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন যে, এই জগতের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে বাইরে থেকে এর সত্য–মিথ্যা যাচাই করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। প্রচুর গবেষণা ও অনুসন্ধানের পরেও এই জগৎ সম্পর্কে সঠিক তথ্য উদঘাটন করা কঠিন, কারণ এই জগৎ সম্পর্কে প্রাপ্ত প্রায় সমস্ত তথ্যই আসে সেকেন্ডারি বা মাধ্যমিক সূত্র থেকে। কোনো গোয়েন্দা সংস্থার মূল আর্কাইভ সাধারণত অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে সংরক্ষণ করা হয়, এবং এই আর্কাইভগুলো ব্যবহারের সুযোগ গবেষক বা অনুসন্ধানকারীদের জন্য অত্যন্ত সীমিত। এই কথা প্রযোজ্য কেজিবি, সিআইএ, সিআইএস বা অন্য যেকোনো গোয়েন্দা সংস্থার ক্ষেত্রে। এমতাবস্থায় এই জগৎ সম্পর্কে প্রকাশিত কোনো তথ্য অন্ধভাবে বিশ্বাস/অবিশ্বাস করার সুযোগ নেই।
দ্বিতীয়ত, যেকোনো অভিযোগকে সত্য বা মিথ্যা হিসেবে ধরে নেয়ার পূর্বে সেই সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকা জরুরি। প্রাক্তন কেজিবি কর্মকর্তারা এই বিষয়ে একটি শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করত, ‘নাম, ঠিকানা, নম্বর’। অর্থাৎ, সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ব্যতিরেকে কোনো অভিযোগ, সেটি যতটাই বস্তুনিষ্ঠ মনে হোক না কেন, গ্রহণযোগ্য নয়। এবং কোনো অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু তদন্ত।
এবার ট্রাম্প একজন সোভিয়েত/রুশ এজেন্ট – এই অভিযোগটির প্রসঙ্গে আসা যাক। ট্রাম্পের শাসনামলে তার নীতির সাফল্য এবং ব্যর্থতা দুটোই রয়েছে। ট্রাম্পের গৃহীত বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ নীতির কারণে তিনি কঠোরভাবে সমালোচিত হয়েছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ট্রাম্পের কট্টর অভিবাসীবিরোধী অবস্থান, মার্কিন–মেক্সিকান সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের ঘোষণা, কোভিড–১৯ মহামারী মোকাবেলার ক্ষেত্রে তার ব্যর্থতা এবং তার অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উগ্র বর্ণবাদের পুনরুত্থান। ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মতে, ট্রাম্পের শাসনকাল ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘খুবই খারাপ’। কিন্তু একজন ‘খারাপ রাজনীতিবিদ’ আর একজন ‘বিদেশি গুপ্তচরে’র মধ্যে বিস্তর পার্থক্য।
ট্রাম্প বিগত ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে একজন সোভিয়েত/রুশ এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন – এই তত্ত্বটি প্রদান করেছেন মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক ক্রেইগ আঙ্গার। ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক থেকে তার লিখিত একটি বই ‘American Kompromat: How the KGB Cultivated Donald Trump, and Related Tales of Sex, Greed, Power and Treachery’ প্রকাশিত হয়েছে, এবং এই বইয়ে তিনি ট্রাম্প সম্পর্কে তার এই অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। উল্লেখ্য, আঙ্গার ইতিপূর্বে ‘দ্য নিউ ইয়র্ক অবজার্ভার’ পত্রিকার উপ–সম্পাদক এবং ‘বোস্টন ম্যাগাজিন’–এর প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালে তিনি ট্রাম্প সম্পর্কে আরেকটি বই প্রকাশ করেছিলেন, এবং সেটির শিরোনাম ছিল ‘House of Trump, House of Putin: The Untold Story of Donald Trump and the Russian Mafia’। এই বইয়ে তিনি দাবি করেছিলেন, ট্রাম্পের বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যের সঙ্গে রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন এবং রুশ মাফিয়ার ঘনিষ্ঠ সংযোগ রয়েছে। সদ্য প্রকাশিত ‘আমেরিকান কম্প্রোমাৎ’ (American Kompromat) বইকে আঙ্গারের পূর্ববর্তী বইয়ের ‘যৌক্তিক পরিবর্ধন’ (logical extension) হিসেবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে।
‘আমেরিকান কম্প্রোমাৎ’ বইয়ের ভূমিকা যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে পাঠকের মনে হতে পারে যে, এটি কোনো ডিস্টোপিয়ান ফিকশনের বর্ণনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র বিপন্ন, মার্কিন গৃহযুদ্ধের পর আর কখনো যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এত খারাপ সময় আসেনি, যুক্তরাষ্ট্র গৃহযুদ্ধ সন্নিকটে– এই ধরনের একটি প্রেক্ষাপট দিয়ে আঙ্গার তাঁর বইয়ের সূচনা করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রাক্তন সিআইএ কর্মকর্তা জন সাইফার এই বইটি সম্পর্কে প্রখ্যাত মার্কিন পত্রিকা ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’–এ একটি রিভিউ দিয়েছেন, এবং সেটিতে তিনি মন্তব্য করেছেন, আঙ্গারের বইয়ে শুরু থেকেই ধরে নেয়া হয়েছে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খারাপ, এবং এই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই পুরো বইটি লেখা হয়েছে।
বইয়ের প্রথমদিকেই আঙ্গার ট্রাম্প যে আসলেই একজন রুশ এজেন্ট, তার প্রমাণ হিসেবে ৪টি ঘটনা তুলে ধরেছেন। ঘটনাগুলো হচ্ছে:
(১) ২০১৮ সালে ট্রাম্প ও পুতিনের হেলসিঙ্কি বৈঠকের পর ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন, রুশরা ২০১৬ সালের নির্বাচনে তাকে বিজয়ী করার জন্য হস্তক্ষেপ করেনি;
(২) ট্রাম্প ‘রাশিয়ার ইচ্ছে অনুযায়ী’ সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করেছেন;
(৩) ট্রাম্প জার্মানিতে মোতায়েনকৃত মার্কিন সৈন্য সংখ্যা হ্রাস করেছেন এবং
(৪) আফগানিস্তানে মোতায়েনকৃত মার্কিন সৈন্যদের খুন করার জন্য রুশরা তালিবানকে অর্থ প্রদান করছে, এই তথ্য জেনেও ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
আঙ্গারের মতে, এরপরও কি ট্রাম্প যে একজন রুশ এজেন্ট, এই বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকতে পারে?
বাস্তবে অবশ্য আঙ্গারের তত্ত্বে যথেষ্ট ফাঁক রয়েছে, এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির যেকোনো সাধারণ পর্যবেক্ষকের চোখে এই অসঙ্গতিগুলো ধরা পড়বে।
প্রথমত, ২০১৬ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রুশরা হস্তক্ষেপ করেছে, এই অভিযোগে ট্রাম্পের নিজের প্রশাসনই রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু রুশ হস্তক্ষেপের কারণে ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন, এই জাতীয় কথা শুধু ট্রাম্প কেন, কোনো রাজনীতিবিদই নিজের ক্ষেত্রে স্বীকার করবেন না। ট্রাম্প যদি এই অভিযোগ স্বীকারই করেন, তাহলে তো তার ২০১৬ সালের নির্বাচনের বিজয়ই মিথ্যা হিসেবে প্রতিপন্ন হবে। কোনো রাজনীতিবিদ এভাবে নিজের ক্ষতি কেন করবেন?
দ্বিতীয়ত, ২০১৯ সালে তুরস্ক সিরিয়ার কুর্দি–অধ্যুষিত অঞ্চলে আক্রমণ চালায়, এবং তুর্কিদের সঙ্গে সংঘাত এড়ানোর জন্য ট্রাম্প ঐ অঞ্চল থেকে ‘কিছুসংখ্যক’ মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করে নেন। অবশ্যই রাশিয়া বরাবরই সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিকট দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ইচ্ছায় নয়, বরং তাদের নিজেদের মিত্র তুরস্কের সঙ্গে সংঘাত এড়ানোর লক্ষ্যে সিরিয়া থেকে আংশিক সৈন্য প্রত্যাহার করেছিল। তদুপরি, মার্কিন সৈন্যরা এখনো সিরিয়ায় অবস্থান করছে, এবং পরবর্তীতে ইরাক থেকে বেশ কিছু মার্কিন সৈন্যকে সিরিয়ায় প্রেরণ করা হয়েছে।
তৃতীয়ত, ট্রাম্প জার্মানিতে মার্কিন সৈন্যসংখ্যা হ্রাস করেছেন, এটি ঠিক। কিন্তু উল্টোদিকে তিনি পোল্যান্ডে, অর্থাৎ রাশিয়ায় আরো নিকটে মার্কিন সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন। এবং রুশরা বরাবরই তাদের সীমান্তের কাছে মার্কিন সামরিক উপস্থিতিকে নিজেদের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে।
সর্বোপরি, রুশরা আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্যদের খুন করার জন্য তালিবানকে অর্থ সরবরাহ করছে, এই অভিযোগের পক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। কিছু কিছু মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাও এই অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, এবং তালিবান এই বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে আসছে।
সুতরাং আঙ্গারের যুক্তিগুলো যথেষ্ট দুর্বল, এবং এই ৪টি ঘটনা কোনোভাবেই প্রমাণ করে না যে, ট্রাম্প রুশ এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। এর চেয়ে বড় কথা, ট্রাম্পের শাসনামলে রুশ–মার্কিন সম্পর্কের কোনো উন্নতি হয় নি, বরং অবনতি ঘটেছে। ট্রাম্পের শাসনামলেই রাশিয়া এবং রাশিয়ার মিত্র সিরিয়া, ইরান ও ভেনেজুয়েলার ওপর সবচেয়ে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ট্রাম্পের শাসনামলে রুশ মিত্র রাষ্ট্রগুলোতে (আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কিরগিজস্তান) মার্কিন–সমর্থিত ‘রঙিন বিপ্লব’ সংঘটিত হয়েছে, এবং এগুলো রাশিয়ার জন্য গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করেছে।
সর্বোপরি, ট্রাম্পই আইএনএফ চুক্তির মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ রুশ–মার্কিন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিগুলো বাতিল করে দিয়েছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে রাশিয়াকে বাধ্য করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিণতি কেমন হয়েছিল, সেটি কারো অজানা নয়, এবং স্বভাবতই নতুন একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতা রুশ অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে ধ্বংসাত্মক হবে। সুতরাং, এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, ট্রাম্প যদি রুশ এজেন্টই হয়ে থাকেন, তাহলে তার প্রশাসন রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপগুলো কেন গ্রহণ করেছে?
এই প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে বরং আঙ্গারের পরবর্তী দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক। আঙ্গারের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৭৭ সালে ট্রাম্প প্রথমবারের মতো কেজিবির নজরে আসেন। এই বছর ট্রাম্প চেকোস্লোভাক মডেল ইভানা জেলনিকোভাকে বিয়ে করেন, এবং এর ফলে কেজিবি তার ওপর নজরদারি আরম্ভ করে। উল্লেখ্য, প্রাক্তন চেকোস্লোভাকিয়া ছিল একটি সোভিয়েতপন্থী কমিউনিস্ট রাষ্ট্র, এবং পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার মতো চেকোস্লোভাক গোয়েন্দা সংস্থাও কেজিবির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করত। ট্রাম্প ইভানাকে বিয়ে করার পর কেজিবি ও চেকোস্লোভাক গোয়েন্দা সংস্থা তাকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করার জন্য প্রচেষ্টা আরম্ভ করে।
এরপর ১৯৮০ সালে ট্রাম্প নিউ ইয়র্কে ‘গ্র্যান্ড হায়াট নিউ ইয়র্ক হোটেল’ নির্মাণ করেন এবং এই হোটেলের জন্য নিউ ইয়র্কের ‘জয়–লুড ইলেক্ট্রনিক্স’ থেকে ২০০টি টেলিভিশন সেট ক্রয় করেন। আঙ্গারের ভাষ্যমতে, জয়–লুড ইলেক্ট্রনিক্স ছিল কেজিবি–নিয়ন্ত্রিত একটি প্রতিষ্ঠান, এর মালিক সেমিয়ন কিস্লিন ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আগত একজন ইহুদি, এবং তিনি ছিলেন কেজিবির একজন ‘স্পটার এজেন্ট’। অর্থাৎ, তার কাজ ছিল কেজিবির এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য মার্কিন নাগরিকদের বাছাই করা। কিস্লিনের সঙ্গে ট্রাম্পের যোগাযোগকে আঙ্গার ট্রাম্পের কেজিবি এজেন্ট হওয়ার প্রমাণ হিসেবে দাবি করেছেন। অবশ্য কিস্লিন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং জানিয়েছেন যে, তিনি কখনোই কেজিবির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
১৯৮৭ সালে ট্রাম্প ও তার স্ত্রী ইভানা প্রথম বারের মতো সোভিয়েত ইউনিয়নে আসেন, এবং মস্কো ও লেনিনগ্রাদ (বর্তমান সেন্ট পিটার্সবার্গ) সফর করেন। আঙ্গারের ভাষ্যমতে, এ সময় কেজিবি অপারেটিভরা ট্রাম্পকে তোষামদমূলক কথাবার্তা বলে এবং অভিনয় করে যে, ট্রাম্পের ব্যক্তিত্ববোধে তারা মুগ্ধ হয়েছে। আঙ্গারের মতে, কেজিবি অপারেটিভরা ট্রাম্পকে রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে। তারা মন্তব্য করে যে, ট্রাম্পের মতো মানুষেরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হওয়া উচিত, এবং তাদের মতো মানুষেরাই পারে ‘পৃথিবীকে বদলে দিতে’। আঙ্গার ইঙ্গিত প্রদান করেছেন, ট্রাম্পের সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরকালে কেজিবির ‘হানি ট্র্যাপে’ পা রেখেছিলেন, অর্থাৎ, কেজিবি–নিয়ন্ত্রিত কোনো নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীতে সোভিয়েত/রুশরা এই ঘটনার ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার হুমকি প্রদানের মাধ্যমে ট্রাম্পকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনেছে!
এই সময়েই ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেন। মার্কিন প্রতিরক্ষানীতি সম্পর্কেও এসময় তিনি অপ্রচলিত মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি মত প্রকাশ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র রাষ্ট্রগুলো (যেমন: জাপান) যুক্তরাষ্ট্রকে শোষণ করছে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তার মিত্র রাষ্ট্রগুলোকে নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির জন্য বাধ্য করা। তার এই মতবাদ প্রচার করার জন্য ট্রাম্প ১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বরে ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’, ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ এবং ‘দ্য বোস্টন গ্লোব’ পত্রিকায় পূর্ণ পৃষ্ঠাজুড়ে বিজ্ঞাপনও প্রচার করেন। আঙ্গারের মতে, এই ঘটনায় সোভিয়েত ইউনিয়নে মানুষকে উচ্ছ্বসিত হতে দেখা গিয়েছিল।
সংক্ষেপে এটিই হচ্ছে আঙ্গারের বক্তব্যের সারমর্ম। আঙ্গারের মতে, ১৯৭৭ সালে কেজিবি ট্রাম্পকে নিজেদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগের চেষ্টা শুরু করে এবং ১৯৮০–এর দশকে তাদের এই প্রচেষ্টা সফল হয়। পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রুশ গোয়েন্দা সংস্থাও ট্রাম্পকে নিজেদের এজেন্ট হিসেবে রাখে, এবং ২০১৬ সালে রুশ হ্যাকারদের সহায়তায় ট্রাম্প মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
আপাতদৃষ্টিতে, এটি খুবই সাধারণ কিন্তু চমকপ্রদ একটি ইন্টেলিজেন্স অপারেশন। কিন্তু আঙ্গারের তত্ত্বকে বেদবাক্য হিসেবে গ্রহণ করার আগে বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট করে নেয়া প্রয়োজন।
প্রথমত, এটি সত্যি যে, অন্যান্য প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থার মতো কেজিবিও নিজেদের শত্রুরাষ্ট্রের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের) নাগরিকদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করার কোনো প্রচেষ্টা বাদ রাখেনি। এটিও সত্যি যে, যেসব গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন নাগরিক সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করত, কেজিবি তাদেরকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করার প্রচেষ্টা চালাত। এবং এটিও সত্যি যে, কেজিবিসহ বহু গোয়েন্দা সংস্থাই এজেন্ট নিয়োগের জন্য ‘হানি ট্র্যাপ’ ব্যবহার করে থাকে। ট্রাম্প একজন মার্কিন নাগরিক, তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেছেন, এবং তার অতীতের কর্মকাণ্ড অনুযায়ী, তার পক্ষে কোনো ‘হানি ট্র্যাপে’ আটকা পড়া অস্বাভাবিক নয়। অর্থাৎ, অন্তত তাত্ত্বিকভাবে, আঙ্গারের তত্ত্ব সঠিক হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আঙ্গার তার দাবির পক্ষে কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ দিতে পারেননি। যেমন: কোন কেজিবি কর্মকর্তা ট্রাম্পকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগের দায়িত্ব ছিলেন? কোন কোন কেজিবি অপারেটিভ ট্রাম্পের সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরকালে তাকে রাজনীতিতে যোগ দিতে উৎসাহিত করেছিলেন? ঠিক কখন এবং কোথায় এই ঘটনা ঘটেছিল? কিংবা ট্রাম্প যদি সত্যিই কোনো কেজিবি ‘হানি ট্র্যাপে’ ফেঁসে গিয়ে থাকেন, সেটির প্রমাণ কী? এই প্রশ্নগুলোর কোনোটির উত্তরই আঙ্গার তার বইয়ে দেননি, এবং এজন্য আঙ্গারের তত্ত্বকে বাস্তবতা হিসেবে মেনে নেয়ার পূর্বে বিষয়টি ভালো করে ভেবে নেয়া উচিত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রপতি জোসেফ বাইডেনও দুবার সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেছিলেন, এবং সফর শেষে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও এর নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে গণমাধ্যমে ইতিবাচক বক্তব্য রেখেছিলেন। আঙ্গারের তত্ত্ব অনুযায়ী তাহলে কি বাইডেনও কেজিবি এজেন্ট?
দ্বিতীয়ত, আঙ্গারের দাবি অনুযায়ী, জয়–লুড ইলেক্ট্রনিক্সের মালিক সেমিয়ন কিস্লিন কেজিবির স্পটার এজেন্ট ছিলেন, এবং তার সঙ্গে ট্রাম্পের যোগাযোগকে আঙ্গার ট্রাম্পের কেজিবি এজেন্ট হওয়ার প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ১৯৭০–এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে সোভিয়েত ইউনিয়ন হাজার হাজার সোভিয়েত ইহুদিকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল, এবং এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে কেজিবি বহু সংখ্যক সোভিয়েত ইহুদিকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করে, যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কেজিবিকে তথ্য সরবরাহ করতে পারে। আঙ্গারের মতে, কিস্লিন ছিলেন অনুরূপ একজন এজেন্ট।
বস্তুত কিস্লিনের কেজিবি এজেন্ট হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কেজিবি বরাবরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সোভিয়েত/রুশ–বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের এজেন্ট হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করত। কিস্লিন নিজে এই অভিযোগ স্বীকার করেন না, এবং আঙ্গারও এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে আঙ্গারের তত্ত্বের ভিত্তি অনেকটাই দুর্বল হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে।
তৃতীয়ত, আঙ্গার তার দাবিগুলোর জন্য খুব বেশি সূত্র ব্যবহার করেননি, এবং তাঁর মূল সূত্র হচ্ছে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী দুই প্রাক্তন কেজিবি এজেন্ট ইউরি শভেৎস এবং ওলেগ কালুগিন। শভেৎস ছিলেন কেজিবির একজন মেজর এবং ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডি.সি.তে নিযুক্ত কেজিবির ফার্স্ট মেইন ডিরেক্টরেটের ‘রেসিডেন্ট’। কালুগিন ছিলেন কেজিবির একজন জেনারেল এবং কেজিবির ফার্স্ট মেইন ডিরেক্টরেটের অন্তর্গত ফরেন কাউন্টার–ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেটের প্রধান। সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেজিবির কার্যকলাপ সম্পর্কে তাদের দুজনেরই বিস্তারিত জ্ঞান থাকা স্বাভাবিক, এবং এজন্য সূত্র হিসেবে আপাতদৃষ্টিতে তারা খুবই নির্ভরযোগ্য।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, শভেৎস ও কালুগিন দুজনেই হচ্ছেন ‘ডিফেক্টর’, বা রুশদের দৃষ্টিকোণ থেকে, ‘বিশ্বাসঘাতক’। দুজনেই ১৯৯০ সালে কেজিবি থেকে বহিষ্কৃত হন, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ধারণা করা হয়, কালুগিন আগে থেকেই সিআইএর কাছে তথ্য পাচার করতেন। তদুপরি, শভেৎস ও কালুগিন উভয়েই বর্তমান রুশ সরকারের কট্টর বিরোধী এবং রুশ–মার্কিন ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থক। শভেৎস রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের রাজনৈতিক শত্রু আলেক্সান্দর লিৎভিনেঙ্কোর একজন সহযোগী ছিলেন, এবং কালুগিনের মতে, পুতিনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো উচিত। অর্থাৎ, উভয়েই রাজনৈতিকভাবে রুশ সরকারের শত্রু। এমতাবস্থায় তাদের প্রদত্ত বক্তব্য সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মিথ্যা বক্তব্য দিচ্ছেন, এই সুযোগও রয়েছে।
চতুর্থত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র রাষ্ট্রগুলোর নিজস্ব সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করা উচিত– ১৯৮৭ সালে ট্রাম্পের এই সংক্রান্ত প্রচারণাকে আঙ্গার তার কেজিবি এজেন্ট হওয়ার প্রমাণ হিসেবে দাবি করেছেন। এ কথা সত্যি যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন (এবং পরবর্তীতে রাশিয়া) বরাবরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার পশ্চিম ইউরোপীয় ও জাপানি মিত্রদের সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করে এসেছে। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রও প্রথমে সোভিয়েত–নেতৃত্বাধীন ওয়ারশ জোট এবং পরবর্তীতে রুশ–নেতৃত্বাধীন ‘যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থা’ জোটে ফাটল ধরাতে চেষ্টা করেছে। এদিক থেকে মনে হওয়া খুবই সম্ভব যে, ট্রাম্প এই প্রচারণার মাধ্যমে সোভিয়েত এজেন্ডাকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন।
কিন্তু এ কথা মনে রাখা প্রয়োজন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাস্তবিকই তার মিত্র রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এটি করে মূলত নিজেদের স্বার্থে, কিন্তু তা সত্ত্বেও মার্কিন জাতীয়তাবাদী ও ডানপন্থীরা অন্য কোনো রাষ্ট্রের জন্য এত ব্যয় করতে অনিচ্ছুক। এটি ভুলে গেলে চলবে না, মার্কিন সুরক্ষার ছায়াতলে থেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান ও পশ্চিম জার্মানি বিরাট অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। যদি এই রাষ্ট্রগুলো মার্কিন সুরক্ষাবলয়ের অন্তর্ভুক্ত না হতো, তাহলে তাদেরকে সামরিক ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে হতো এবং এর ফলে অর্থনীতির পুনর্গঠন তাদের জন্য অনেক কঠিন হতো। কিন্তু যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনো সত্যি সত্যিই এই রাষ্ট্রগুলোকে নিরাপত্তা দেয়া ছেড়ে দেয়, সেক্ষেত্রে এই রাষ্ট্রগুলোর ওপর মার্কিন আধিপত্য বজায় থাকবে না, এবং এটি রাশিয়াকে লাভবান করবে। এদিক থেকে আঙ্গারের তত্ত্বটি যৌক্তিক।
কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, মার্কিন প্রতিরক্ষানীতি সম্পর্কে ট্রাম্পের এই মনোভাব কি আসলেই ট্রাম্পের কেজিবি এজেন্ট হওয়ার প্রমাণ, না পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ট্রাম্পের সীমিত জ্ঞানের ফলাফল– সেটি এখানে স্পষ্ট নয়। ট্রাম্প যখন রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা লাভ করেন, সেসময় তিনি ‘নিউক্লিয়ার ট্রায়াড’ কী সেটা জানতেন না, কাশেম সুলাইমানিকে চিনতেন না এবং পুয়ের্তো রিকো যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত, সেটাও তার জানা ছিল না। এরকম একজন ব্যক্তির পক্ষে মার্কিন প্রতিরক্ষানীতি ও বৈদেশিক সামরিক সহায়তার জটিলতা অনুধাবন না করাটা ট্রাম্পের পক্ষে অস্বাভাবিক নয়।
সর্বোপরি, আঙ্গারের বইয়ের শিরোনাম ট্রাম্পকে নিয়ে হলেও এর কয়েকটি মাত্র অধ্যায়ে ট্রাম্প এবং সোভিয়েত/রুশ ইন্টেলিজেন্সের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অন্য অধ্যায়গুলোতে প্রচুর তথ্য দেয়া হয়েছে, কিন্তু ট্রাম্প এবং ট্রাম্পের কেজিবি এজেন্ট হওয়ার সঙ্গে সেগুলো বহুলাংশেই অপ্রাসঙ্গিক। প্রাক্তন সিআইএ কর্মকর্তা, জন সাইফারের ভাষ্যমতে, আঙ্গারের বইয়ে নতুন কোনো তথ্য আসেনি, বরং পুরনো প্রশ্নগুলোই নতুন করে এবং নতুন রূপে উপস্থাপিত হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, ট্রাম্প একজন কেজিবি এজেন্ট হতে পারেন, আবার না-ও পারেন। ক্রেইগ আঙ্গারের বইয়ে এই বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপিত হয়নি, সুতরাং এই বইয়ে প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে ট্রাম্পকে নিশ্চিতভাবে কেজিবি এজেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় কিনা, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ট্রাম্প ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, এরকম একটি সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ‘ট্রাম্প একজন কেজিবি এজেন্ট’ এই অভিযোগ যদি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, সেক্ষেত্রে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিপর্যস্ত হবে। এমতাবস্থায় ট্রাম্প কেজিবি এজেন্ট ছিলেন কিনা, এটি নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকলেও তার বিরুদ্ধে আনীত এই অভিযোগটি যে মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠবে, সেই বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই বললেই চলে।