রাইন ইউরোপের অন্যতম বিখ্যাত একটি নদীর নাম। সুইজারল্যান্ডের আল্পস থেকে উৎসারিত হ’য়ে জার্মানি, নেদারল্যান্ডসকে ছুঁয়ে গিয়ে মিশেছে উত্তর সাগরে। রাইনের জল সন্নিহিত দেশগুলোকে সজীব রেখেছে। প্রভাবিত করেছে সেখানকার রাজনীত, অর্থনীতি; সম্পৃক্ত হয়েছে শিল্প-সাহিত্যে। আঞ্চলিক লোকগাথায় মিশে তৈরি হয়েছে নতুনতর মিথ। ইউরোপে রাইন এখন আর স্রেফ নদী নয়, একটি অন্যতম ঐতিহাসিক চরিত্র হয়ে উঠেছে।
সভ্যতার প্রাথমিক পর্বে পৃথিবীর সব দেশেই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি। ক্রমে তৈরি হয়েছে জনপদ। নদীর জলে লালিত-পালিত হয়েই অগ্রসর হয়েছে প্রত্যেকের প্রাত্যহিক জীবন। দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির কেহল তেমনই এক প্রান্তিক জনপদ। সুইজারল্যান্ড থেকে নেমে এসে রাইন যেখানে উত্তরবাহী হয়ে জার্মান, ফ্রান্সকে দ্বিখণ্ডিত করেছে, সেই রাইন তীরেই ক্রমশ বিকাশ হয়েছে কেহল নামক এই জনপদের।
কেহলের পশ্চিমপ্রান্তে নদী রাইন পার করলেই ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গ শহর। পূর্বপ্রান্তে আড়াআড়িভাবে বিস্তৃত দীর্ঘ ‘ব্ল্যাক ফরেস্ট’। দক্ষিণে সুইজারল্যান্ড, আর উত্তরে রাজধানী বার্লিন। দুইপাশে নদী এবং বনভূমি যেন কেহলের আপন মাতা-পিতা। সন্তানের মতোই স্নেহ-ভালোবাসার আগলে নিশ্চিত ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষায় সুরক্ষিত করে চলেছে কেহলের জীবন। বনভূমি ‘ব্ল্যাক ফরেস্ট’ আদতে পর্বত এবং বনের মিশেলে তৈরি এক বনপর্বত, যার কাঠামো মূলত বেলে পাথরের তৈরি।
ভেতরে দীর্ঘ পাইন এবং দেবদারু জাতীয় গাছ-গাছালিতে ভরা থাকলেও বনভূমি তেমন ঘন ও নিবিড় নয়। চারিদিকে চোখজুড়ানো সবুজ। তবুও দূর থেকে দেখলে এই বনভূমিকে কিঞ্চিৎ কালো দেখায়। তাই এর নাম হয়েছে ‘ব্ল্যাক ফরেস্ট’। অবশ্য কারো কারো এরকম ধারণাও আছে যে, একসময় জার্মানির এই অঞ্চলটি অন্ধকারাচ্ছন্ন ও দুর্ভেদ্য ছিল। তাই রোমানরা এর নামকরণ করেছিলেন ‘ব্ল্যাক ফরেস্ট’।
খ্রিষ্টীয় একাদশ শতকে রাইন তীরবর্তী এই অঞ্চলে বসবাস করতেন একদল জেলে। স্বাভাবিকভাবেই সে সময় এই অঞ্চলটি জেলেবস্তি হিসেবেই পরিচিত হয়ে ওঠে। ১৪ শতকের প্রথমার্ধে তৎকালীন ইউরোপে এই জনপদকে প্রধানত জেলেবস্তি হিসেবেই ডাকা হতো। বর্তমানে এটি একটি শহর। শহরের সমস্ত সুযোগ-সুবিধ, বিলাসিতা এখানে থাকলেও জনপদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেই দেখা যায় উন্মুক্ত প্রকৃতি।
শহর যেন এখানে রুচিসম্পন্ন অভিজাত প্রতিনিধি। তাই প্রকৃতি এখানে এখনো অনাহত। গ্রামও পেয়েছে তার নিজস্ব পরিসর। সেই অর্থে কেহল যেন যুগপৎ গ্রাম ও শহর। কিন্তু একটি জেলেবস্তির নাম ‘কেহল’ কী করে হলো? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রাচীন জনশ্রুতি। তৎকালীন সময়ে জেলেবস্তির কারো কারো ছিল ধরা গলা বা ‘থ্রোটি ভয়েস’। স্বাভাবিকভাবেই জনপদের ভেতরে তারা ধরা গলার মানুষ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠলেন ক্রমশ। এবং পরবর্তীকালে জনপদের পরিচিতি হিসেবেও কেমন করে যেন মুখ্য হয়ে উঠলো এই ‘ধরা গলা’ পরিচয়।
বলাই বাহুল্য, জর্মন ভাষায় গলা শব্দের অর্থ ‘কেহলা’। শব্দের গ্রামীণ বিবর্তনে হয়তো কোনো একসময় ‘কেহলা’ থেকে আজকের কেহলে রূপান্তরিত হয়েছে। কেহলের অভ্যন্তরে যেমন এখনো কেহল পদবীর অনেক মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়, তেমনি পৃথিবীর বহু দেশেই এখনো কেহল পদবীর বহু মানুষ বসবাস করেন।
সময়ের বিবর্তনে রাইনের জলের মতো কেহলের জীবনও পেরিয়েছে বহু পথ। পার হতে হয়েছে বহু যন্ত্রণাদায়ক যুদ্ধও। যুদ্ধের লাল রঙে সিক্ত হয়েছে নদী রাইন। কেহলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে বারংবার। ১৭ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুইস দীর্ঘ যুদ্ধের পর কেহল দখল করেছিলেন। সে সময় স্ট্রাসবুর্গকে সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যে ফরাসি রাজা কেহলে একটি বৃহৎ দুর্গ নির্মাণ করেন।
অবশ্য ঐ শতকের শেষার্ধে ‘রিসুইক’ শান্তি চুক্তির মাধ্যমে জার্মানরা কেহল এবং ঐ দুর্গটি ফিরে পান। ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জার্মানরা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সুবিধার লক্ষ্যে ছোট্ট ছোট্ট প্রদেশের একীকরণের কাজ শুরু করেন। এ সময় কেহল ঐ অঞ্চলের বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং নগরের মর্যাদা লাভ করে।
পরবর্তী সময়ে জর্মনদের হাত থেকে কেহল বহুবার বেহাত হয়েছে। কেহলের প্রথম ও দ্বিতীয় যুদ্ধে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে এ নগর। কেহলবাসীকে দু’বার নিজভূমি থেকে তাড়িয়েও দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে অবশ্য সবাই আবার নিজভূমিতে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯ শতকের প্রথমদিকে ‘প্যারিস চুক্তি’র মাধ্যমে কেহল আবার জর্মনদের হাতে ফিরে আসে। এবং ঐ সময় দুর্গটিকে ভেঙে ফেলে সমগ্র শহরকে নতুন করে তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
শহর কেহল মূলত জার্মানি থেকে ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গ শহরে প্রবেশের সদর দরজা। রাইন নদীর উপরে রয়েছে পরপর তিনটি সেতু। যা কেহল এবং স্ট্রাসবুর্গ শহরকে যুক্ত করেছে। একেবারে উত্তর দিকের সেতুটি শুধু ট্রেন চলাচলের জন্য। দক্ষিণ পার্শ্বেই রয়েছে কোলকাতার বিবেকানন্দ সেতুর আদলে নির্মিত একটি সেতু। সেতুর বুক দিয়ে ছুটে চলে ট্রাম। দুইপাশে গাড়িঘোড়া দৌড়ানোর জন্য রয়েছে রাস্তা এবং পায়ে হাঁটার জন্য ছোট্ট ফুটপাথ। আরো দক্ষিণে চলে গেলে পাওয়া যাবে শুধু পায়ে হাঁটার জন্য একটি সেতু। স্রেফ পায়ে হেঁটেই আপনি রক্ষীবিহীন জর্মন সীমান্ত পার করে পৌঁছে যেতে পারেন ফরাসিদের ডেরায়।
বিকালে হয়তো আপনি প্রাতঃভ্রমণে বের হয়েছেন। এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করে আপনার ইচ্ছে হলো, সীমান্তের ওই পারে যাবেন। তখন টুক করে সেতু পার হয়ে আপনি নির্দ্বিধায় পৌঁছে গেলেন ফ্রান্সে। নিন, এবার যত ইচ্ছে ফরাসি সুঘ্রাণ নিন। সেতুর মাঝখানে রাখা আছে স্কুলের চেয়ার-টেবিলের মতো লম্বা লম্বা কিছু স্থায়ী চেয়ার-টেবিল। যে জায়গাটা না জার্মানির, না ফ্রান্সের; অথবা দু’জনেরই। আপনি সেখানে বসে বন্ধুদের সঙ্গে খাস বাংলায় তর্ক-বিতর্কে মেতে উঠতে পারেন, নিদেনপক্ষে গালগপ্পের আসরও বসাতে পারেন।
সেতুর রেলিঙে ঝুলছে বহু তালাবন্ধ। কাছে গেলে দেখা যাবে, তাতে লেখা আছে যুগলের নাম। খানিকটা আমাদের দেশে গাছে মাদুলি ঝুলিয়ে মনস্কামনা পূর্ণ করার মতো ব্যাপার। যুগলেরা তালাবন্ধে নিজেদের নাম লিখে ঝুলিয়ে রাখে সেতুর রেলিঙে। তারপর চাবি ভাসিয়ে দেয় রাইনের জলে। তারা বিশ্বাস করতে ভালোবাসে যে, চাবিহীন বন্ধ তালা তাদের সম্পর্ককে চিরন্তন করবে।
কোনোদিন সন্ধ্যার পর রাইনের তীরে হাঁটতে বের হলে শুনতে পাবেন সেতুর উপর ছেলে-ছোকরাদের হুল্লোড় অথবা দেখতে পাবেন সেতুর মাঝে লাল রঙের কার্পেট বেছানো। যার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কোনো প্রেমিক হয়তো আংটি পরিয়ে দিচ্ছেন তার প্রেমিকার আঙুলে। গোল হয়ে দাঁড়িয়ে ভায়োলিনে প্রেমের সুর তুলে দিচ্ছেন তাদেরই বন্ধু-বান্ধবরা। রাইনের চরাচরে তখন জেগে উঠছে প্রেম আর বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে প্রেমের সুর।
৭৫ বর্গ কিলোমিটার কেহলে জনবসতি মোটে ৩৬ হাজারের মতো। এখানকার মানুষজন প্রথমদিকে প্রোটেস্ট্যান্ট থাকলেও কেহলকে ফ্রান্স কব্জা করে নেওয়ার পর অধিকাংশই রোমান ক্যাথলিক হয়ে যান। শহরের মাঝে বিনোদনের জন্য রয়েছে মাল্টিপ্লেক্স, থিয়েটার হল, নাইটবার, সিটি সেন্টার ইত্যাদি। চারিদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বহু স্কুল, আন্তর্জাতিক মানের টেনিসকোর্ট, ফুটবল মাঠ।
নদীর ওপারে স্ট্রাসবুর্গের তুলনায় কেহলে বাজারদর বেশ কম। স্ট্রাসবুর্গে পাঠরত বহু ছাত্র-ছাত্রী কেহলে বাজারহাট করে হোস্টেলে ফিরে যায় প্রায়শই। রাইনের তীরে রয়েছে কেহলের নিজস্ব একটি ঘরোয়া বন্দর। প্রতি বছর এই বন্দর ছুঁয়ে ভেসে যায় ২৯ হাজারের মতো জাহাজ। বছরে প্রায় দু’কোটির মতো মানুষ এখান থেকে ট্রেনে করে সীমান্ত পারাপার করেন। শহরের অদূরে রয়েছে ছোট্ট একটি হেলিপ্যাড। ব্যক্তিগত ছোট ছোট বিমান অথবা হেলিকপ্টার এখান থেকে উড়ে যেতে দেখা যায় হামেশাই।
কেহলের সাংস্কৃতিক জীবনে স্থানীয় কার্নিভাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বার্ষিক মেলা, নববর্ষ, হ্যালোউইন ইত্যাদি উদযাপনের থেকেও অধিক আগ্রহ লক্ষ করা যায় কার্নিভালের প্রতি। প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী, শীতকাল হলো শয়তানদের রাজত্ব। তাকে বিতারিত করে বসন্তকে নিয়ে আসাই কার্নিভালের মূল উদ্দেশ্য। শীতের একেবারে অন্তিম পর্বে সাধারণত উদযাপিত হয়ে থাকে এই উৎসব।
এ সময় নগরবাসীরা উদ্ভট পোশাক ও মুখোশ পরে দলে দলে শোভাযাত্রা বের করেন। গানবাজনাও চলতে থাকে সঙ্গে। কোলে শিশু নিয়ে মায়েরাও যেমন অংশগ্রহণ করেন, তেমনি কোনো কোনো বৃদ্ধও ভায়োলিনের ছড়ে জাগিয়ে তোলেন অনাদিকালের সুর। আশেপাশের সময় তখন থমকে যায় মুহূর্তের জন্য। পরমুহূর্তেই আবার এগিয়ে যায় শোভাযাত্রা। সঙ্গে চলতে থাকে কেহলবাসীর জীবনও।
কেহল শহর এখন শান্ত, নির্ঝঞ্ঝাট আদ্যোপান্ত। দেশের আরো অনেক শান্ত শহরের মতোই এখন কেহলের মানুষজনও আনন্দে জীবন কাটান। বাইরে থেকে দেখে কেহলকে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত মনে না হলেও নগরের অভ্যন্তরে এখনো যত্রতত্র রয়ে গেছে যুদ্ধ-চিহ্ন। শহর কেহল যেন বুকে করে আগলে রেখেছে তার ফেলে আসা অতীত। রাইন তীর ধরে হাঁটাতে থাকলে দেখা যায় অনেক ছোটবড় যুদ্ধস্তম্ভ, স্মারক। বড় তাম্রফলকে এখনো লেখা রয়েছে বহু শহীদের নাম।
শহরের জনবহুল রাইন্সট্রব চত্বরে রয়েছে ১৮৭০ নাগাদ ফরাসি-জর্মন যুদ্ধের স্মারক। এর সঙ্গেই রয়েছে মাতা কিনযিগের ধাতব মূর্তি। বহু পূর্বে এটি রাইনের তীরে রেলসেতুর পাশে ‘রাইন পিতা’ মূর্তির সঙ্গেই শোভা পেত। যুদ্ধ চলাকালীন রেল সেতুটি আংশিক নষ্ট হয়ে যায়। সে সময় সবার অলক্ষ্যে রাইনের জলে কখন তলিয়ে যায় মাতা কিনযিগের মূর্তিটি। অনেক বছর খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে রাইনের জল থেকে মূর্তিটিকে উদ্ধার করা হয়। এবং রাইন্সট্রব চত্বরে ‘শান্তির গির্জা’র উল্টোদিকে শহীদস্তম্ভের সঙ্গে মূর্তিটিকে আবার স্বমহিমায় বসানো হয়।
সেই থেকে মূর্তিটি এখনো রাইন্সট্রব চত্বরেই আছে। অবশ্য প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রয়োজনে মূর্তিটিকে গলিয়ে ফেলার কথা ভাবা হলেও সে সময় অল্পের জন্য বেঁচে যায় মূর্তিটি। মাতা কিনযিগের উল্টোদিকে রয়েছে ‘ফ্রিডেনস কিসা’- শান্তির গির্জা। ১৮১৭ নাগাদ নির্মিত হওয়া গির্জাটি প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্ট্যান্টদের সম্মিলিত প্রার্থনাগৃহ ছিল। ১৯১৪-তে ক্যাথলিকরা অন্যত্র গির্জা নির্মাণ করে চলে যাওয়ায় বর্তমানে এটি প্রোটেস্ট্যান্টদের দ্বারাই চালিত হয়। শহরের দক্ষিণে উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে নীরবে শায়িত রয়েছে দ্বিতীর বিশ্বযুদ্ধে নিহত ২১৪৪ জন জর্মন সৈনিকের দেহ।
ফরাসি-জর্মন যুদ্ধের সময় কমান্ডারদের ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নির্মিত বহুতলটি বর্তমানে কেহলের টাউন হল। ১৮৭২ নাগাদ এটি স্কুল হিসাবে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে প্রশাসনিক সভা, নানাবিধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেই ব্যবহার হয়ে থাকে। শহরের মাঝেই রয়েছে ১৮১৬ সালে নির্মিত হওয়া নগরের অন্যতম প্রাচীন বাড়ি। মূলত তৎকালীন উচ্চবিত্তদের ব্যবহৃত হওয়া এই বাড়িটি বর্তমানে দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক গৃহ। শহরের মধ্যে রয়েছে জেলা আদালত। রাইনের দক্ষিণে রয়েছে ৪৪ মিটার উচ্চতা ও ২১০টি সিঁড়ি বিশিষ্ট সৌম্য মিনার। কাঠামো ধাতব হলেও বহিরাবরণ কাঠে ঢাকা। এখান থেকে দেখা যায় সমগ্র কেহল শহর।
কেহল শহরের বেড়ে ওঠা, বেঁচে থাকা সমগ্রটাই নদী রাইনকে জড়িয়ে। নদী রাইনের সূত্রেই ওপারের স্ট্রাসবুর্গ শহরও নিজের মতো করে এগিয়েছে কেহলের সঙ্গে। দুই পাশের দুই শহর যেন সহোদর ভাই। আপন মা রাইনের যেন আত্মজ দুই সন্তানকে নিয়ে ভরা সংসার।
কেহলের জীবনে পরিবর্তন এসেছে অনেক- আদিম জেলেবস্তি থেকে আজকের সীমান্তবর্তী শহর। তা সত্বেও সেই যে আদিম কেহলের মেজাজ, আজো এই নগরসভ্যতা সম্পূর্ণ নষ্ট করতে পারেনি। আদিবাসীদের জীবন-যাপন নিভৃতে আজো বহন করে চলেছে। দুই শহরের তাবৎ দুঃখ, বেদনা আনন্দ, সমস্ত গল্পগাথার চিরন্তন সাক্ষী শুধু এই নদী রাইন। দুই শহরের জীবনের মতোই সে সমস্ত গল্পগাথা বুকে করে প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলেছে উত্তর সাগরের পথে।