ইউরোতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে কখনোই না জেতা ইংল্যান্ড মুখোমুখি হচ্ছে ক্রোয়েশিয়ার, যারা নিজেদের শেষ তিন ওপেনিং ম্যাচে অপরাজিত। এমন সমীকরণ মহাসমীকরণকে সামনে রেখে এবারের ইউরোর গ্রুপ ডি-র লড়াইয়ে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামছে দু’দল।
দুই দলের সর্বশেষ দেখা ২০১৮ উয়েফা ন্যাশনস লিগে, যা গোলশূন্য ড্র হয়। তার ঠিক পরের দেখাতেই ২-১ গোলের নাটকীয় জয় পায় ইংল্যান্ড। কিন্তু সেই বছরে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ২-১ গোলে জয় পায় ক্রোয়েশিয়া, যেখানে ১০৯ মিনিটে করা মানজুকিচের গোলটি হয় ম্যাচের ভাগ্যনির্ধারণী গোল। এজন্য ইংল্যান্ডের চেষ্টা থাকবে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে এই ম্যাচটি জিতে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পরাজয়ের ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে।
ইংল্যান্ড এবং ক্রোয়েশিয়া নিজেদের মধ্যে সর্বমোট ১০ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে, যেখানে ইংল্যান্ড জিতেছে ৫টি, ক্রোয়েশিয়া জিতেছে ৩টি, এবং অপর ২টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। ইউরো ২০০৪ আসরে ওয়েইন রুনির করা জোড়া গোলে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ তে বিধ্বস্ত করে জয়ী হয় ইংল্যান্ড। আবার ইউরো ২০০৮ কোয়ালিফাইং ম্যাচে ইংল্যান্ড ৩-২ গোলে পরাজিত হয় ক্রোয়েশিয়ার কাছে এবং ১৯৮৪ এরপর প্রথম ইউরোর ফাইনাল টুর্নামেন্টের জায়গা হারায়।
ইংল্যান্ড
এবারের ইংল্যান্ড দলটা তারকাবহুল হওয়ায় দলের মূূল লক্ষ্য থাকবে প্রথমবারের মতো ইউরো শিরোপাজয়ের দিকে। তাই নিজেদের প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জয়ের বিকল্প অন্য কিছুই ভাবছেন না ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউটগেট। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি ইংল্যান্ডের হোম গ্রাউন্ড ওয়েম্বলিতে হওয়ায় এ ম্যাচে থ্রি-লায়ন্সের জয়ের পাল্লাই ভারী থাকবে।
ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে ইংল্যান্ডের খেলার ধরন কেমন হবে, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হচ্ছে সাউথগেট কি ইংল্যান্ডকে থ্রি-ম্যান ডিফেন্স খেলাবেন কি না। তবে অস্ট্রিয়া এবং রোমানিয়ার বিপক্ষে ইউরোর প্রি-টুর্নামেন্ট ফ্রেন্ডলি ম্যাচে সাউথগেটকে দলকে ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলাতে দেখা গেছে। ক্রোয়েশিয়া ম্যাচেও ইংল্যান্ডের এ ফর্মেশনে খেলার সম্ভাবনাই বেশি৷
সাধারণত সাউথগেট তার দলকে ব্যাকলাইন থেকে বিল্ডআপ করাতে পছন্দ করেন। তবে ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচে দলের মূলক সেন্টারব্যাক হ্যারি ম্যাগুয়েরের ইনজুরি নিচ থেকে বিল্ডআপ করার ধরনকে বেশ ভালোভাবেই প্রভাবিত করতে পারে। এজন্য হয়তো ইংল্যান্ডকে ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে তুলনামূলক ডিরেক্ট ফুটবল খেলতে দেখা যেতে পারে।
ডিরেক্ট ফুটবল খেলতে কিছুটা অনীহা থাকায় বিল্ডআপের সময় ইংল্যান্ডের খেলোয়ারদের খুব বেশি লং বল খেলতে দেখা যায় না, এর পরিবর্তে খেলোয়াররা নিজেদের মধ্যে শর্ট পাসের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ ডিফেন্সলাইনকে ভাঙতে চেষ্টা করে। তবে ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্স ইদানিং বেশ ভঙ্গুর হওয়ায় এই ম্যাচে ইংল্যান্ডের মিডফিল্ডাররা নিজেদের মধ্যে ধীরগতির বিল্ডআপ করে ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্সকে অর্গানাইজড হতে দেওয়ার পরিবর্তে সরাসরি আক্রমণ করে দ্রুতগতিতে ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্সে আঘাত হানতে চেষ্টা করবে, সেটা বলাই বাহুল্য।
যেহেতু ইংল্যান্ড বলের দখল নিজেদের কাছে রাখতে পছন্দ করে, সে কারণে তাদের আউট অব পজেশন অবস্থায় খুব বেশি সময় কাটাতে হয় না। তবে বলের দখল হারালে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা সাথে সাথেই প্রতিপক্ষের বল হোল্ডারকে প্রেস করে বলের দখল পুনরায় ফিরে পেতে চেষ্টা করে। অফ দ্য বলে ইংল্যান্ডের খেলোয়াররা সাধারণত ম্যান-টু-ম্যান প্রেস করে। এক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের ফরোয়ার্ড হ্যারি কেইন প্রতিপক্ষের সেন্টারব্যাকদের সরাসরি প্রেস করতে শুরু করে। তখন দুই উইঙ্গার প্রতিপক্ষের ফুলব্যাকদের প্রেস করে তাদের সাথে বল হোল্ডারের পাসিং লেন বন্ধ করে দেয়; ফলে প্রতিপক্ষের বিল্ডআপ বাধাগ্রস্থ হয় এবং তারা লং বল খেলতে বাধ্য হন।
ক্রোয়েশিয়ার দুই সেন্টারব্যাক লভরেন এবং ভিদা প্রেসিংয়ের বিপক্ষে বেশ দুর্বল হওয়ায় কেইনের প্রেসিং তাদের বেশ ভালোভাবেই ভোগাতে পারে। ইংল্যান্ডের ফরোয়ার্ড লাইনের প্রেসিংয়ের মুখে তারা হয় ইমিডিয়েট বলের দখল হারাবে, অথবা বাধ্য হয়ে লং বল খেলবে। ইংল্যান্ডের মিডফিল্ডাররা এরিয়াল ব্যাটেলে বেশ শক্তিশালী হওয়ায় এক্ষেত্রে তাদের বল পজেশন ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
সম্ভাব্য একাদশ
সাউথগেট ইংল্যান্ডকে বেশিরভাগ সময় ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলালেও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হয়তো ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলতে দেখা যাবে। গোলবারের নিচে বরাবরই জর্দান পিকফোর্ড সাউথগেটের প্রথম পছন্দ। ক্রোয়েশিয়ার ভঙ্গুর ডিফেন্সের সুযোগ নিতে পিকফোর্ডের লং বলগুলো হতে পারে বেশ কার্যকরী।
দলের মূল সেন্টারব্যাক হ্যারি ম্যাগুয়েরের ইনজুরিতে স্টোনসের সেন্টারব্যাক সঙ্গী হিসেবে মিংসকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অস্ট্রিয়া এবং রোমানিয়া উভয় ম্যাচেই সেন্টারব্যাক রোলে দলে ছিলেন মিংস, ওই ম্যাচগুলোতে তার নড়বড়ে পারফরম্যান্স দলের বড় বিপদের কারণ না হলেও ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এজন্য স্টোনসকেই সামনে থেকে ডিফেন্স লিডারের দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাইটব্যাক হিসেবে ওয়াকার নামছেন সেটা অনুমেয়ই। লেফটব্যাক হিসেবে কে খেলবেন, সেটা নিয়ে রয়েছে বড় ধোঁয়াশা। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, লুক শ’র খেলার সম্ভাবনাই বেশি। এক্ষেত্রে তার স্পিড এবং প্রতিপক্ষ থার্ডে বল কন্ট্রোলে রেখে বক্সে কাট-ইন করাটা ম্যাচের পার্থক্যও গড়ে দিতে পারে।
মিডফিল্ডে ডাবল পিভট হিসেবে ডেক্লান রাইস এবং ক্যালভিন ফিলিপসের খেলার সম্ভাবনাই বেশি। ডেক্লান সাউথগেটের দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ, দলের বিল্ডআপের সময় দুই সেন্টারব্যাকের মাঝে অবস্থান নেওয়া এবং প্রেসিংয়ের সময় এরিয়া কভার দেওয়া – দুই ক্ষেত্রেই রাইসের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি থাকে। দুই সেন্টারব্যাকের সামনে রাইস এবং ফিলিপসের উপস্থিতি ইংল্যান্ডের ডিফেন্সকে অনেক বেশি সুরক্ষিত করে তুলবে, এবং তাদের ক্রমাগত প্রেসিংয়ের কারণে মদরিচ-ব্রোজোভিচদের স্বাভাবিক খেলাও ব্যাহত হবে। তবে অভিজ্ঞতার বিচারে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ফিলিপসের জায়গায় দেখা যেতে পারে জর্দান হেন্ডারসনকে।
আক্রমণভাগে মূল প্লেমেকার রোলে ম্যাসন মাউন্ট খেলবেন, সেটাও নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তার দুইপাশে দুই উইংয়ে রাশফোর্ড এবং ফোডেনের খেলার সম্ভাবনাই বেশি। তবে স্পিড দিয়ে ক্রোয়েশিয়ার ভঙ্গুর ডিফেন্সলাইনকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করার জন্য রাহিম স্টার্লিংকে উইঙ্গার হিসেবে দেখা যেতে পারে৷ নাম্বার নাইন রোলে খেলবেন দলের অধিনায়ক হ্যারি কেইন। তবে কেইনের মূল ভুমিকা থাকবে মিডফিল্ডে নেমে ফোডেন-মাউন্টদের সাথে দ্রুত ওয়ান-টু-ওয়ান করে ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্সে আঘাত হানা এবং অফ দ্য বলে ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডারদের প্রেসিং করে তাদের স্বাভাবিক বিল্ডআপে বাধাপ্রদান করা।
যাদের দিকে নজর রাখবেন
ইংল্যান্ড তারকাবহুল দলটির মূল তারকা অধিনায়ক হ্যারি কেইন। রাশিয়া বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুটজয়ী এই তারকা এবারের ইউরো গোল্ডেন বুট জয়ের দিকে নজর রাখবেন, সেটা নিঃসন্দেহেই বলা যায়। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে যদি স্কোরশিটে নাম উঠাতে পারেন, সেই আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে পুরো টুর্নামেন্টেই তাণ্ডব চালাতে পারেন প্রতিপক্ষের উপর। তাই কেইন নিজেও চাইবেন ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ভালো খেলে দলকে ভালো শুরু এনে দিতে এবং একইসাথে নিজের আত্মবিশ্বাসকেও বাড়িয়ে নিতে।
খুব অল্প সময়েই ম্যাসন মাউন্ট সাউথগেটের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেছেন, হয়ে উঠেছেন দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ক্রোয়েশিয়ার ভঙ্গুর ডিফেন্সের সুবিধা নেওয়ার জন্য মাউন্টের পারফর্ম করাটাও বেশ জরুরি। তাই মাউন্টও চাইবেন নিজের চেলসির ফর্ম জাতীয় দলের হয়েও বজায় রাখতে এবং ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে দলকে ভালো শুরু এনে দিতে।
ক্রোয়েশিয়া
২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টরা বর্তমানে বেশ কিছুটা ভাঙাগড়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বকাপে দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সুবাসিচ-রাকিটিচ-মানজুকিচদের আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের কারণে দলে বেশ কিছু জায়গায় শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে দলের কোচ দালিচের বুদ্ধিমত্তায় ক্রোয়েশিয়া খুব অল্প সময়ে অনেকটাই শূন্যতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। ক্রোয়েশিয়ার এবারের ইউরোর দলটা কোয়ালিটি এবং অভিজ্ঞতা উভয় বিচারেই বেশ ভারসাম্যপূর্ণ।
ক্রোয়েশিয়ান কোচ দালিচ প্রতিপক্ষের খেলার ধরন অনুসারে তার দলকে ৪-২-৩-১ কিংবা ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলান। ইংল্যান্ড সাধারণত মিডফিল্ডে নিউমেরিক্যাল সুপিওরিটি মেইনটেইন করে খেলার চেষ্টা করে। এজন্য মিডফিল্ডে ওভারলোড তৈরি করতে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-৩-৩ ফর্মেশনেই খেলতে দেখার সম্ভাবনাই বেশি।
এমনিতে ক্রোয়েশিয়ার খেলার ধরনও অনেকটা ইংল্যান্ডের মতোই। দালিচ তার দলকে সাধারণত ব্যাকলাইন থেকে বিল্ডআপ করান। খেলোয়াড়েরা বলের দখল নিজেদের কাছে রেখে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে চেষ্টা করে। বিল্ডআপের ক্ষেত্রে মূল বল প্রোগ্রেসরের দায়িত্ব পালন করেন দুই সেন্টারব্যাক লভরেন এবং ভিদা। তবে বিল্ডআপের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় যখন প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডরা ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডারদের সরাসরি প্রেস করে এবং মিডফিল্ডারদের থেকে আইসোলেট করে ফেলে। তখন কোনো পাসিং অপশন না পেয়ে ডিফেন্ডাররা উইং এরিয়ায় লং বল খেলতে বাধ্য হন। প্রতিপক্ষের হাই-প্রেসিংয়ের সামনে ক্রোয়েশিয়ার দুই ডিফেন্ডার প্রায়শই বিপদজনক জায়গায় বলের দখল হারিয়ে দলের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ান।
প্রতিপক্ষ দল হাই-প্রেসিং করলে দালিচ সাধারণত ব্যাকলাইন থেকে বিল্ডআপের পরিবর্তে সরাসরি লং বলে খেলানোর চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে খেলোয়ারেরা উইং এরিয়ায় ওভারলোড তৈরি করে উইং দিয়ে বল প্রোগ্রেস করতে চেষ্টা করে। আক্রমণভাগের খেলোয়াড়েরা বাতাসে বেশ শক্তিশালী হওয়ায় উইং থেকে ক্রমাগত ক্রস করে সেখান থেকে গোল করার চেষ্টা করে।
বিগত সময়ে ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্স বেশ বাজে পারফর্ম করছে, গত ১০ ম্যাচে তারা হজম করেছে ১৪ গোল। ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণের সময় তাদের দুই সেন্টারব্যাক বাদে বাকি সবাই সরাসরি আক্রমণে অংশ নেয়, দুই ফুলব্যাক এই সময় প্রতিপক্ষ উইং এরিয়ায় অবস্থান করে। এজন্য আক্রমণের সময় প্রতিপক্ষের কাছে বলের দখল হারালে তাদের ডিফেন্সলাইন একদমই ফাঁকা হয়ে যায়। ইংল্যান্ড প্রেসিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ দক্ষ এবং তাদের দলে দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাকে যাওয়ার মতো দ্রুতগতির বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় রয়েছে, যেটা ক্রোয়েশিয়ার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। ক্রোয়েশিয়ার দুই সেন্টারব্যাক লভরেন এবং ভিদা ডিফেন্ডিংয়ে বেশ দক্ষ হলেও চাপের মুখে তারা মাঝেমাঝে মারাত্মক সব ভুল করে বসেন। দলের আক্রমণের সময় তারা প্রায়ই আউট অব পজিশনে চলে যান, যার মাধ্যমে প্রতিপক্ষের জন্য কাউন্টারে প্রচুর স্পেস তৈরি করা অনেক সহজ হয়।
সম্ভাব্য একাদশ
ইংল্যান্ডের স্বাভাবিক খেলা খেলতে বাধা দেওয়ার জন্য এবং নিজেদের বিল্ডআপ প্লে ধরে রাখার জন্য এই ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলতে দেখার সম্ভাবনাই বেশি। গোলবারের নিচে দালিচের প্রথম পছন্দ ডায়নামো জাগরেবের হয়ে দুর্দান্ত সিজন কাটানো ডমিনিক লিভাকোভিচ। তার সামনে দুই সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলবেন লভরেন এবং ভিদা, তবে লভরেনের পরিবর্তে মার্শেইয়ের তরুণ ডিফেন্ডার চালেতা-চারকেও দেখা যেতে পারে । তাদের পাশে দুই ফুলব্যাক হিসেবে থাকবেন বারবসিচ এবং ভারসালিকো।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ভালো করতে হলে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডত্রয়ীকে। মিডফিল্ডে মার্সেলো ব্রোজোভিচ, লুকা মদরিচ এবং মাতেও কোভাচিচের খেলা অনেকটাই নিশ্চিত। এক্ষেত্রে ব্রোজোভিচ এবং কোভাচিচের দায়িত্ব থাকবে ইংল্যান্ডের খেলোয়ারদের সাথে ওয়ান-ভার্সাস-ওয়ান ডুয়েলে জয়ী হয়ে আক্রমণ রচনা করা; এবং মদরিচের দায়িত্ব থাকবে বল নিজের কন্ট্রোলে রেখে উইং এরিয়ায় ক্রমাগত লং বল দিয়ে সেখান থেকে আক্রমণ রচনা করা।
আক্রমণভাগে নাম্বার নাইন রোলে খেলবেন ব্রুনো পেতকোভিচ, তার দুইপাশে দুই উইঙ্গার হিসেবে খেলবেন ইভান পেরিসিচ এবং আন্তে রেবিচ। পেরিসিচ এবং রেবিচের কাজ হবে উইং থেকে ক্রমাগত ক্রস করা এবং পেতকোভিচের দায়িত্ব থাকবে সেই ক্রসগুলোতে মাথা ঠেকিয়ে বল জালে জড়ানোর।
যাদের দিকে নজর রাখবেন
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জিততে ২০১৮ সালের ব্যালন ডি’অর জয়ী এবং দলের অধিনায়ক লুকা মদরিচের দিকেই তাকিয়ে থাকবে ক্রোয়েশিয়া। গত সিজনে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন মদরিচ। ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ড কন্ট্রোলের মূল দায়িত্বও থাকবে তারই কাঁধে। তাই মদরিচের পারফরম্যান্সের উপরই অনেকটা নির্ভর করছে ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচভাগ্য।
একদিকে ইংল্যান্ড, যারা উইম্বলিতে কোনো প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টের ম্যাচে কখনো হারেনি। আবার অপরদিকে ইউরোর শেষ তিন ওপেনিং ম্যাচ জেতা ক্রোয়েশিয়া। দু’দলের মুখোমুখিতে এবার কি ইতিহাসের পটপরিবর্তন হবে, নাকি অমীমাংসিত ড্র’তে ম্যাচ শেষ হবে? জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আর কিছুক্ষণ।