Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মহারণের আগে: গার্দিওলার তৃতীয় নাকি টুখেলের প্রথম?

ইউরোপিয়ান ফুটবলপ্রেমীদের কাছে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের যেকোনো ম্যাচের আবেদনই অন্যান্য আর পাঁচটা সাধারণ ম্যাচ থেকে অনেক বেশি। এজন্য ফুটবলভক্তরা পুরো সিজন ধরে অপেক্ষা করেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল ম্যাচের জন্য। দর্শকদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২৯ তারিখ বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় পোর্তোর ‘এস্তাদিও দো দ্রাগাও’ স্টেডিয়ামে অল-ইংলিশ ফাইনালে মাঠে নামছে দুই ইংলিশ জায়ান্ট ক্লাব চেলসি এবং ম্যানচেস্টার সিটি।

২০২০-২১ সিজনের শুরুতে কি কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পেরেছিল যে ম্যানচেস্টার সিটি কিংবা চেলসির কেউ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল ম্যাচ পর্যন্ত যেতে পারবে? সিজনের শুরুতে একটা সময় প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের ১৬তম অবস্থানে ছিল ম্যানসিটি। দলে নতুন নতুন তারকা ফুটবলার আনার পরও ছন্নছাড়া ফুটবল খেলতে থাকায় চেলসির কোচ ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে তো সিজনের মাঝপথে ছাঁটাই করেই দিল চেলসির বোর্ড। সেখান থেকে ঘুরে দাড়িয়ে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেই এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে দু’দল।

এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে ধারাবাহিকভাবেই ভালো খেলে যাচ্ছে ম্যানচেস্টার সিটি। এই সিজনে খেলা ১২টি ম্যাচের মধ্যে গ্রুপপর্বে পোর্তোর সাথে অ্যাওয়ে ম্যাচে ড্র করা বাদে বাকি ১১টা ম্যাচেই জয়ী হয়েছে, ১২ ম্যাচে ২৫ গোল করার বিপরীতে গোল কনসিড করেছে কেবল ৪টি। চেলসি ১২ ম্যাচে ৮টি জিতেছে, ৩টি ড্র করেছে এবং মাত্র ১টি ম্যাচেই হেরেছে। ১২ ম্যাচে ২২ গোল করার বিপরীতে চেলসিও গোল কনসিড করেছে ৪টি। নিজেদের মধ্যে হেড-টু-হেড ১৫১ ম্যাচের মধ্যে চেলসি জিতেছে ৬১টি ম্যাচ, ম্যানসিটি ৫১ ম্যাচ জিতেছে, এবং বাকি ৩৯টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। অবশ্য সর্বশেষ ১০ দেখায় বেশ এগিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানসিটির ৬ জয়ের বিপরীতে চেলসি জিতেছে ৩টি ম্যাচে। এই সিজনে হওয়া ৩টি ম্যাচের মধ্যে ২টি ম্যাচেই জিতেছে চেলসি, অপরটি জিতেছে ম্যানসিটি।

চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল ম্যাচে দু’দলের মাঠের লড়াইয়ের পাশাপাশি মাঠের বাইরেও ট্যাকটিক্সের লড়াই দেখা যাবে পেপ গার্দিওলা এবং টমাস টুখেলের মধ্যে। ফাইনাল ম্যাচে কেমন হতে পারে দু’দলের ট্যাকটিক্স? কারা কারা খেলতে পারেন শুরুর একাদশে? চলুন দেখে নেওয়া যাক।

টমাস টুখেল; Image Credit: AFP

 

ম্যানচেস্টার সিটি

ম্যানসিটির চ্যাম্পিয়নস লিগের বিগত ম্যাচগুলোতে ট্যাকটিক্যালি বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন পেপ গার্দিওলা। সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তনটি এনেছেন, তা হলো কোনো নাম্বার নাইন না খেলিয়ে দলের একাধিক খেলোয়াড়কে একই সাথে ফলস নাইন রোলে ব্যবহার করা। পেপ গার্দিওলা ‘ফলস নাইন’ সিস্টেমকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন একইসাথে কেভিন ডি ব্রুইনা, রিয়াদ মাহরেজ, বার্নাডো সিলভা, ফিল ফোডেন, এমনকি গুন্ডোগানকেও ফলস নাইন রোলে ব্যবহার করে। কখন কে টার্গেট ম্যান থাকবেন, সেই সমস্যার পাশাপাশি ফরোয়ার্ডদের ক্রমাগত পজিশন রোটেশনের কারণে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা কখন কাকে ম্যান মার্ক করবে, সেটা নিয়ে সমস্যায় পড়ছে।

বলের দখলে নিজেদের কাছে থাকা অবস্থায় সিটির ফর্মেশন অনেকটা ৪-২-৪ ফর্মেশনের মতো হয়ে থাকে। এ সময় দুই উইংয়ে মাহরেজ এবং ফোডেন টাচলাইন এরিয়া বরাবর অবস্থান করে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ওয়াইড এরিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য করেন। এ সময় ডি ব্রুইনা এবং বার্নাডো সিলভা প্রতিপক্ষ থার্ডের হাফ-স্পেসে অবস্থান নিয়ে দুই ডাবল পিভট গুন্ডোগান এবং রদ্রির সাথে ক্রমাগত পাসিং করে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সলাইন ভাঙবার চেষ্টা করেন। তখন দুই ফুলব্যাক ওয়াকার এবং ক্যান্সেলো উপরে উঠে গিয়ে মিডফিল্ডারদের পাসিং অপশন বৃদ্ধি করেন এবং বিল্ডআপে অংশ নেন।

তবে ফোডেন প্রথাগত উইঙ্গার না হওয়ায় প্রথাগত উইঙ্গারদের মতো টাচলাইনে অবস্থান করার পরিবর্তে সেন্টার এরিয়ায় কাট-ইন করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এদিকে লেফটব্যাক রোলে খেলা ক্যান্সেলোও সেন্টার এরিয়ায় এসে বিল্ডআপে অংশ নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন৷ ফলে লেফট সাইডের ওয়াইড এরিয়া ঠিকমতো ব্যবহার করতে না পারার কারণে পিএসজির সাথে প্রথম লেগের ম্যাচের প্রথমার্ধে প্রতিপক্ষ অর্ধে সিটিকে বেশ ভুগতে দেখা গেছে। কারণ, দলে কোনো স্পেসিফিক টার্গেট ম্যান নেই, একই সাথে লেফট সাইড ওয়াইড না হওয়ায় পিএসজির ডিফেন্স লাইন ন্যারো হয়ে যায় এবং গুন্ডোগান-ডি ব্রুইনা-সিলভা’রা অপনেন্ট থার্ডে স্পেস না পেয়ে ক্লুলেস খেলতে শুরু করে।

এজন্য দ্বিতীয়ার্ধে গার্দিওলা ক্যান্সেলোর পরিবর্তে জিনচেঙ্কোকে নামান। জিনচেঙ্কো ফুলব্যাক হলেও বামপাশে হাইলাইনে উঠে গিয়ে মাহরেজের মতো ওয়াইড এরিয়া কভার দিতে শুরু করেন। ফলে সিটির ফরোয়ার্ডদের পক্ষে পিএসজির ডিফেন্সিভ লাইনে হোল তৈরি করে থ্রেট ক্রিয়েট করা সহজতর হয়। ডিফেন্ডিংয়ের সময় চেলসির ফর্মেশন ৫-৪-১ বা ৫-৩-২’তে পরিবর্তিত হয়। ফলে চেলসির ফাইভ-ম্যান ডিফেন্সলাইন ব্রেক করার জন্য সিটির উভয় ওয়াইড এরিয়াই কার্যকর রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Image Credit : coaches voice

উপরের ছবি থেকে দেখা যায়, এখানে উইঙ্গার রোলে থাকা ফোডেন ‘ফলস নাইন’ রোলে শিফট হয়ে গেছেন। ফলে জিনচেঙ্কো হাইলাইনে উঠে ওয়াইড এরিয়া কভার করছেন পিএসজির ন্যারো ডিফেন্সলাইনকে ওয়াইড করার জন্য।

চেলসির দুই উইংব্যাক বিল্ডআপের সময় হাইলাইনে উঠে থাকেন সাধারণত। এক্ষেত্রে ওয়াইড এরিয়ায় ফ্রি-স্পেস তৈরি হয়। এজন্য সিটির ডিফেন্ডাররা যদি নিচে থেকে ফোডেন বা মাহরেজকে লক্ষ্য করে ডায়াগনাল লং বল দেন, তবে সহজেই চেলসির টাইট ডিফেন্সলাইন ব্রেক করা সম্ভব হতে পারে।

এডারসন অপনেন্ট থার্ডের ওয়াইড এরিয়ায় লং ডায়াগনাল বল দিয়েছেন; Image Credit : coaches voice

 

অফ দ্য বল প্রেসিংয়ের সময় সিটির দুই উইঙ্গার ফোডেন এবং মাহরেজ প্রতিপক্ষের দুই ফুলব্যাককে প্রেস করতে থাকেন অথবা জোনাল মার্কিং করেন। এ সময় ডি ব্রুইনা-গুন্ডোগান-রদ্রি-সিলভা মিলে সেন্টার এরিয়ায় রিং তৈরি করেন, এবং এর মাঝে প্রতিপক্ষের একজন কিংবা দুইজন মিডফিল্ডারকে আইসোলেটেড করে ফেলেন। এ সময় মাহরেজ এবং ফোডেন প্রতিপক্ষ ফুলব্যাকদের জোনাল মার্ক করে রাখায় বল ক্যারিয়ারকে বাধ্য হয়ে ব্লাইন্ড লং বল খেলতে হয়। সিটির ডিফেন্সলাইনে ওয়াকার-স্টোনস-ডিয়াসরা এরিয়াল বলে শক্তিশালী হওয়ায় লং বল থেকে বলের দখল পুনরায় ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।

বিল্ডআপের সময় অপনেন্ট থার্ডে বলের দখল হারানোর ফলে কাউন্টার অ্যাটাকে গোল খাওয়া সিটির জন্য একটি নিয়মিত বিষয় ছিল। গার্দিওলা এইক্ষেত্রেও বেশ পরিবর্তন এনেছেন। অপনেন্ট থার্ডে বল পজেশন হারালে সিটির ফরোয়ার্ডরা সাথে সাথেই প্রতিপক্ষের ব্যাকলাইনকে ক্রমান্বয়ে জোনাল প্রেস করতে শুরু করেন। এর ফলে প্রতিপক্ষের বল প্রোগ্রেসন অনেকটা স্লো হয়ে যায় এবং ততক্ষণে সিটির ডিফেন্ডাররা নিজেদের মধ্যে অর্গানাইজড হওয়ার সময় পেয়ে যান।

Image Credit: Author

এখানে সিটির ফরোয়ার্ডলাইন পিএসজির ব্যাক ফোরকে জোনাল মার্ক করে মিডফিল্ডারদের থেকে আইসোলেট করে ফেলেন। ফলে পিএসজির ব্যাক ফোর নাভাসের সাথে মিলে নিজেদের মধ্যে অনেকগুলো পাস খেললেও বল প্রোগ্রেস করতে ব্যর্থ হয়।

তবে চেলসির বিল্ডআপ ফ্রম দ্য ব্যাক সিস্টেমে তাদের ব্যাক-ফাইভের সাথে গোলকিপার মেন্ডি অংশ নেয়, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কান্তে বা জর্জিনহোর মধ্যে কেউ নিচে ড্রপ করে বিল্ডআপে পাসিং অপশন বাড়াতে সাহায্য করে। এজন্য চেলসির ব্যাকলাইনকে প্রেস করতে গিয়ে সিটির বেশিসংখ্যক খেলোয়াড়কে চেলসির হাফে স্পেস কভার দিতে হবে। ফলে চেলসির ডিফেন্ডারদের থেকে একটি ডিফেন্স ব্রেকিং পাস থেকেই সিটির ডিফেন্সলাইনে প্রচুর ফ্রি-স্পেস তৈরি হয়ে যাবে।

সিটির মিডফিল্ডাররা হাইলাইনে উঠে বিল্ডআপের সময় চেলসির ব্যাকলাইনকে প্রেস করতে থাকায় সিটির মিডফিল্ডের নিচে অনেকটা ফ্রি-স্পেস তৈরি হয়; Image Credit : Total Football Analysis

 

যাদের দিকে নজর রাখবেন 

ম্যানসিটি দল তারকায় পরিপূর্ণ হলেও দলের ক্রিয়েটর-ইন-চীফ হচ্ছেন কেভিন ডি ব্রুইনা৷ তার ভিশন, পাসিং স্কিল, ড্রিবলিং, কিংবা চান্স ক্রিয়েশন বর্তমান সময়ের সেরাদের মধ্যে অন্যতম। এই সিজনে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছেন ইংলিশ তরুণ ফিল ফোডেনও। পিএসজি এবং বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের সাথে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলেছেন, করেছেন গোলও। তাই ফাইনাল ম্যাচের মতো বড় মঞ্চে তিনিও সব আলো কেড়ে নিতে পারেন নিজের দিকে।

সম্ভাব্য একাদশ 

এডারসন, ওয়াকার, স্টোনস, ডিয়াস, জিনচেঙ্কো, রদ্রি, গুন্ডোগান, মাহরেজ, সিলভা, ডি ব্রুইন, ফোডেন।

চেলসি

টমাস টুখেলের আন্ডারে চেলসির সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে তাদের ডিফেন্সলাইনে। টুখেলের আন্ডারে চেলসি ২৯ ম্যাচে মাত্র ১৬টি গোল হজম করেছে। এ পরিসংখ্যানের মাধ্যমেই বোঝা যাচ্ছে, চেলসির ডিফেন্সলাইন ব্রেক করা প্রতিপক্ষের জন্য কতটা কষ্টসাধ্য! টুখেলের আন্ডারে চেলসির মূল ট্যাকটিক্স হচ্ছে ব্যাকলাইন অর্গানাইজড রেখে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সের ভুলের অপেক্ষায় থাকা। এই সাধারণ কিন্তু দুর্বোধ্য অ্যাপ্রোচের মাধ্যমেই চেলসি সাম্প্রতিক সময়েই ম্যানসিটিকে দুইবার হারিয়ে দিয়েছে।

টুখেলের আন্ডারে চেলসিকে ৩-৪-৩ অথবা ৩-৪-২-১ ফর্মেশনে খেলতে দেখা গেছে। বিল্ডআপের ক্ষেত্রে টুখেলের মূল অ্যাপ্রোচ ব্যাকলাইন থেকে বিল্ডআপ করা এবং সবসময় ডিফেন্সিভ থার্ডের প্রত্যেকটা পজিশনে ‘নিউমেরিক্যাল সুপিওরিটি’ নিশ্চিত করা। বিল্ডআপের সময় চেলসির দুই ওয়াইড সেন্টারব্যাক ওয়াইড এরিয়া কভার দেওয়ার চেষ্টা করেন, তখন দুই উইংব্যাক আরো হাইলাইনে উঠে যান। দুই ডাবল পিভট কান্তে-জর্জিনহো নিচে ড্রপ করে ডিফেন্ডারদের বাড়তি পাসিং অপশন তৈরি করেন। দলে চেলসির বিল্ডআপের সময় প্রতিপক্ষের পক্ষে ম্যান মার্কিং করে প্রেসিং করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বিল্ডআপের সময় ইনিশিয়াল বল প্রোগ্রেশনের দায়িত্ব পালন করেন রুডিগার অথবা আজপিলিকেতা। দু’জনই বল পায়ে বেশ দক্ষ হওয়ায় প্রতিপক্ষের ফার্স্ট প্রেসিং লাইন বিট করে ফেলেন এবং এর ফলে তাদের জন্য তখন অনেকগুলো পাসিং অপশন তৈরি হয়।

চেলসির আক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন মেসন মাউন্ট। মিডফিল্ডে প্রতিপক্ষ যখন কান্তে-জর্জিনহো পিভট ডুয়োর সাথে টু-ভার্সাস-টু অবস্থান তৈরি করেন, তখন মাউন্ট নিচে ড্রপ করে মিডফিল্ডে নিউমেরিক্যাল সুপিওরিটি তৈরি করেন এবং বল রিসিভ করে টার্ন করে ফ্রি-স্পেসে মুভ করেন। তখন মাউন্টের সামনে দুই ফরোয়ার্ড ওয়ের্নার, পুলিসিচ, বা জিয়েখ থাকায় প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা মাউন্টকে ব্লক করবেন নাকি দুই ফরোয়ার্ডকে মার্ক করে রাখবেন সেটা ভেবে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন।

চেলসির হাইলাইন বিল্ডআপের সময় দুই উইংব্যাক উপরে উঠে আসেন। তখন চেলসির দুই উইঙ্গার প্রতিপক্ষ হাফস্পেসে পজিশন নেন। এ সময় চেলসির ফাইভ-ম্যান ফরোয়ার্ড লাইন তৈরি হওয়ায় প্রতিপক্ষ ডিফেন্সলাইনের সাথে ফাইভ-ভার্সাস-ফোর এবং প্রতিপক্ষ ফুলব্যাকের সাথে চেলসির উইঙ্গার এবং উইংব্যাকের টু-ভার্সাস-ওয়ান অবস্থানের তৈরি হয়। তখন যদি প্রতিপক্ষ ফুলব্যাক হাফস্পেসে থাকা চেলসির উইঙ্গারকে মার্ক করেন, তখন উইংব্যাক চিলওয়েল বা জেমসের জন্য সম্পূর্ণ ওয়াইড এরিয়া ফাঁকা হয়ে যায়, এবং যদি উইংব্যাককে ট্র্যাক করেন, তখন হাফস্পেস দিয়ে একটা ইনসাইড রানই প্রতিপক্ষের ডিফেন্সলাইনকে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দেয়।

এখানে জিয়েখের বল পায়ে ফরোয়ার্ড মুভমেন্টের সময় সিটির লেফটব্যাক মেন্ডি চেলসির উইংব্যাক জেমসকে মার্ক না করে জিয়েখের স্পেস ব্লক করতে চেষ্টা করায় উইং  এরিয়ায় জেমস ফ্রি স্পেস পেয়ে যান; Image Credit : Total Football Analysis

 

চেলসির বিল্ডআপের সময় দুই পিভট কান্তে-জর্জিনহো বল প্রোগ্রেস করতে চেষ্টা করলে ম্যানসিটির মিডফিল্ডাররা হাইলাইনে উঠে তাদের প্রেস করতে চেষ্টা করবেন। তখন যদি কান্তে বা জর্জিনহো সিটির মিডফিল্ডলাইনের মধ্যে দিয়ে টিমমেটকে পাস দিতে পারেন, তবে খুব সহজেই সিটির হাফে ফ্রি-স্পেস তৈরি হয়ে যাবে এবং চেলসি থ্রেট তৈরি করার সুযোগ পেয়ে যাবে।

প্রেসিংয়ের সময় চেলসির দুই স্ট্রাইকার প্রতিপক্ষ সেন্টারব্যাকদের প্রেস করতে থাকে। এ সময় মাউন্ট প্রতিপক্ষ সেন্টার মিডফিল্ডারকে ম্যান মার্ক করে এবং দুই উইংব্যাক হাইলাইনে উঠে প্রতিপক্ষের দুই ফুলব্যাককে মার্ক করে। সিটির বিল্ডআপে বেশ গুরুত্বপূর্ণ রোলপ্লে করে পিভট রোলে খেলা রদ্রি। এক্ষেত্রে রদ্রিকে মার্ক করে রাখলে এডারসন কিংবা দুই সেন্টারব্যাককে ব্লাইন্ড লং বল খেলতে হবে বাধ্য হয়ে৷ এভাবে সিটির ব্যাকলাইন থেকে বিল্ডআপ সিস্টেমকেও আটকানো সম্ভব।

অফ দ্য বলে চেলসির খেলোয়াররা দ্রুত ফরমেশন বদল করে ৫-৪-১ অথবা ৫-৩-২ ফর্মেশনে চলে যায়। ফলে প্রতিপক্ষের পক্ষে এই ফাইভ ম্যানের টাইট ডিফেন্সলাইন ব্রেক করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। চেলসির ডিফেন্সলাইন এবং মিডফিল্ডলাইনের মধ্যে স্পেস অনেক কম দেওয়ায় প্রতিপক্ষ মিডফিল্ডারদের পক্ষে ইন-বিটুইন-দ্যা-লাইনে ফ্রি স্পেসে অপারেট করাও অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।

চেলসির পিভট ডুয়ো কান্তে এবং জর্জিনহো দুজনই ভালো বল উইনার হওয়ায় প্রতিপক্ষ মিডফিল্ডারদের পক্ষে সেন্টার এরিয়া দিয়ে বল প্রোগ্রেস করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। প্রেসিংয়ের সময় কান্তে সরাসরি প্রতিপক্ষ বল ক্যারিয়ারকে প্রেস করে এবং জর্জিনহো কভার ম্যানের রোলে স্পেস কভার দিয়ে বল ইন্টারসেপ্ট করতে চেষ্টা করে। এজন্য সিটির গুন্ডোগান-ডি ব্রুইনা-সিলভাদের পক্ষে সেন্টার এরিয়া দিয়ে বল প্রোগ্রেস করা বেশ কঠিন হবে।

চেলসির বিল্ডআপের সময় ব্যাক-থ্রি লাইন ধরে রাখলেও মাঝেমধ্যে দুই ওয়াইড সেন্টারব্যাক বল পায়ে উপরে উঠে যায়। এসময় সিলভা কিংবা ক্রিস্টেনসেন ওই স্পেস কভার দেওয়ার চেষ্টা করলেও চেলসির ওয়াইড এরিয়ায় প্রচুর ফ্রি স্পেস থাকে কারণ তখন দুই উইংব্যাক চিলওয়েল-জেমসও উপরে উঠে যান। তখন যদি প্রতিপক্ষ প্রেস করে বল কেড়ে নেয়, তবে প্রতিপক্ষের পক্ষে গোলস্কোরিং থ্রেট তৈরি করা তুলনামূলক বেশ সহজ।

এখানে সিটির বিল্ডআপের সময় রুডিগার উপরে উঠে আসলে ক্যান্সেলোর লং বলে জেসুস অনেকটা ফ্রি স্পেস পেয়ে যান, এবং সিটি গোল করে ফেলে; Image Credit: Author

 

যাদের নজরে রাখবেন

মাদ্রিদের সাথে ম্যাচে এনগোলো কান্তে এক কথায় দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। তিনিই ছিলেন দলের মূল ইঞ্জিন। অন্যদিকে, পুরো সিজনজুড়েই দারুণ ছন্দে আছেন ম্যাসন মাউন্ট। তার ইন বিটুইন দ্য লাইনে একটি ফরোয়ার্ড রানই গড়ে দিতে পারে খেলার পার্থক্য। তাই এদের দু’জনের মধ্যেই কারো ফাইনাল ম্যাচে চেলসির মূল খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সম্ভাব্য একাদশ 

মেন্ডি, আজপিলিকেতা, সিলভা, রুডিগার, রাইস-জেমস, চিলওয়েল, কান্তে, জর্জিনহো, জিয়েখ, মাউন্ট, ওয়ের্নার।

Image Credit: Getty Images

চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে যেমন চেলসি ও ম্যানসিটির ফুটবলারদের মধ্যে মাঠের লড়াই দেখা যাবে, তেমনি মাঠের বাইরে দেখা যাবে বর্তমান সময়ের দুই অন্যতম সেরা ফুটবল ট্যাকটিশিয়ানের মস্তিষ্কের লড়াই। টুখেল গার্দিওলার হাইলাইন প্রেসিংকে কীভাবে বিট করার চেষ্টা করেন, সেটার পাশাপাশি গার্দিওলা টুখেলের অর্গানাইজড ডিফেন্সলাইনকে ব্রেক করার জন্য কী নতুন রেসিপি নিয়ে হাজির হন, সেটা জানতেও কারো আগ্রহের কমতি থাকার কথা নয়। পোর্তোয় শেষ হাসি কে হাসবেন, তা জানার অপেক্ষা আর কয়েক ঘণ্টারই। আপাতত প্রশ্নের উত্তরটা তোলা রইলো সময়ের হাতেই! 

Related Articles