Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে বিতর্কিত ৫ গোল

A little with head of Maradona and a little with the hand of God

কমেন্ট্রিতে এইভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়েছিলো ম্যারাডোনার বিতর্কিত হ্যান্ড অফ গড গোলটিকে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে বিতর্কিত মুহূর্তের মধ্যে এটি অন্যতম। চলুন দেখে আসা যাক বিশ্বকাপের ৫টি বিতর্কিত গোল, যেগুলো ম্যাচ ছাপিয়ে আলোচনা ও তর্ক বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলো।

১. ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড (জার্মানি বনাম ইংল্যান্ড – ২০১০)

ব্লুমফন্টেইনে দ্বিতীয় রাউন্ডেই মুখোমুখি হয় ২০১০ এর অন্যতম ফেভারিট দুই দল জার্মানি আর ইংল্যান্ড। ম্যাচ শুরুর আগেও উত্তেজনা ভর করেছিলো ফুটবলপ্রেমীদের মনে। ক্যাপেলো বা হোয়াকিম লো যেকোনো একজন কাটতে পারবে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট।

প্রথম থেকেই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলা জমে ওঠে। ম্যাচের ২০ মিনিটের মাথায় নয়ার গোলকিক থেকে ইংলিশ ডিফেন্ডার জন টেরি আর ম্যাথিউ আপসনের ভুলে বল পেয়ে যান মিরোস্লাভ ক্লোসা। দলকে লিড এনে দিতে ভুল করেননি পোড় খাওয়া এই স্ট্রাইকার। মিনিট বারো পরে থমাস মুলারের পাসে গোল ব্যবধান দ্বিগুণ করেন লুকাস পোডলস্কি। ৩৭ মিনিটে ল্যাম্পার্ডের ফ্রি কিকে মাথা লাগিয়ে ইংল্যান্ডকে খেলায় ফেরান ম্যাথিউ আপসন।

এর ২ মিনিট পরেই বিতর্কিত ঘটনাটি ঘটে। ডি বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ল্যাম্পার্ডের লম্বা শট নয়ার পরাস্ত করে ক্রসবারে লেগে গোললাইন পার হয়। তবে ভেতরে ড্রপ খেয়ে বলটি আবার বাইরে চলে আসায় রেফারি জার্মানদের পক্ষে রায় দেন। গোলটি বাতিল করে দেন উরুগুয়ের রেফারি জর্জ লারিন্দা। ওই গোলটি হলে ২-২ গোলে সমতায় ফিরতে পারতো ফ্যাবিও ক্যাপেলোর শিষ্যরা।

ল্যাম্পার্ডের করা সেই গোল; Source: CNN

পরবর্তীতে দ্বিতীয় হাফে একের পর আক্রমণ করেও ব্যর্থ হয় ইংল্যান্ড। উল্টো দারুণ দুটি কাউন্টার অ্যাটাক থেকে আরো দুটি গোল তুলে নেয় ডাই ম্যানশ্যাফটরা। ম্যাচের ৬৭ ও ৭০ মিনিটে জোড়া গোল করে জার্মানির জয় নিশ্চিত করেন থমাস মুলার। ৪-১ গোলে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ডেই বাদ পড়ে ইংল্যান্ড। তবে ম্যাচ ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে রেফারির সিদ্ধান্ত। এই ঘটনার পরপরই ফিফা গোল লাইন প্রযুক্তি যুক্ত করে। পরে এক সাক্ষাৎকারে ল্যাম্পার্ড বলেছিলেন, জার্মানির বিপক্ষে বাতিল করা গোল নিয়ে তার কোনো আক্ষেপ নেই, বরং তিনি খুশি, কারণ ফিফা এখন গোললাইন প্রযুক্তি চালু করেছে।

গোল বাতিল করার পর ল্যাম্পার্ডের অভিব্যক্তি; Source: Sportskeeda

২.  জিওফ হার্স্ট (ইংল্যান্ড বনাম পশ্চিম জার্মানি – ১৯৬৬)

ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ৮ম বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি হয় পশ্চিম জার্মানি ও স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ১৯৬৬ সালের ৩০ জুলাই ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে প্রায় ৯৭ হাজার দর্শকের সামনে মুখোমুখি হয় দুই দল। ৩২.৩০ মিলিয়ন মানুষ টিভিতে এই ফাইনালটি উপভোগ করে, যা যুক্তরাজ্যে টিভিতে সবচেয়ে বেশি দেখা ইভেন্ট হিসেবে রেকর্ড করে।

শুরু থেকেই খেলা জমে ওঠে। মাত্র ১২ মিনিটে পশ্চিম জার্মানিকে এগিয়ে দেন হলার। মিনিট ছয়েক পর ইংল্যান্ডকে সমতায় ফেরান জিওফ হার্স্ট। ৭৮ মিনিটে পিটার্সের গোলে ইংল্যান্ড এগিয়ে গেলে ওয়েম্বলির দর্শকেরা জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কিন্তু নাটকের তখন অনেক কিছুই বাকি ছিলো। ৮৯ মিনিটে ওয়েবারের গোলে সমতায় ফেরে জার্মানি। নির্ধারিত সময়ে ২-২ থাকায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

খেলার ১০১ মিনিটের মাথায় হার্স্ট জার্মান গোলবারের কাছাকাছি জায়গায় বল পেয়ে যান। তার শটটি ক্রসবারে লেগে গোললাইনে পড়ে। সুইস রেফারি গটফ্রিড ডিন্সট সহকারী রেফারির সাথে কথা বলে গোলের হুইসেল বাজান। জার্মানির প্লেয়াররা রেফারিকে ঘিরে থাকলেও রেফারি নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। এই গোলের পর জার্মানি খেলায় তো ফিরতে পারেইনি, বরং ১২০ মিনিটে আরেকটি গোল হজম করে। সেই গোলটি করে বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রথম ও একমাত্র হ্যাটট্রিক করেন জিওফ হার্স্ট। ইংল্যান্ডও জিতে নেয় তাদের প্রথম ও একমাত্র বিশ্বকাপ শিরোপা। গোলটি নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও বেশিরভাগ ফুটবলবোদ্ধাদের মতে বলটি গোললাইন ক্রস করেছিলো।

Caption

পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে করা জিওফ হার্স্টের গোল; Sorce: Pinterest

৩. কার্লোস তেভেজ (আর্জেন্টিনা বনাম মেক্সিকো – ২০১০)

জোহানেসবার্গ স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় রাউন্ডে মুখোমুখি হয় মেক্সিকো আর আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ২৫ মিনিটেই আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন কার্লোস তেভেজ। আর সেই গোলটিই হয়ে ওঠে ম্যাচ পরবর্তী মুখ্য বিষয়। মেসির পাসে যখন হেডে বল জালে জড়ান তেভেজ, তখন স্পষ্টতই অফসাইড পজিশনে ছিলেন তিনি। কিন্তু লাইন্সম্যান অফসাইডের বাঁশি না বাজালে রেফারি গোলের হুইসেল দেন। মেক্সিকোর খেলোয়াড়েরা লাইন্সম্যানের কাছে আবেদন করলেও তা ধোপে টেকেনি। পরবর্তীতে ইগুয়াইন ও কার্লোস তেভেজের দ্বিতীয় গোলে এক ঘণ্টার মধ্যেই তিন গোলের লিড পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। মেক্সিকোর হয়ে একটি গোল পরিশোধ করেন হার্নান্দেজ। আর্জেন্টিনা ৩-১ গোলে জয়লাভ করে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখে।

তেভেজের গোলের পর মেক্সিকান খেলোয়াড়দের লাইন্সম্যানের কাছে অফসাইডের আবেদন; Source: ABC

ম্যাচ শেষে সংবাদ মাধ্যমে তেভেজ বলেন, গোল করার মুহূর্তেও তিনি জানতেন যে তিনি অফসাইডে ছিলেন। লাইন্সম্যান পতাকা উত্তোলন না করায় তিনিও কিছু বলেননি। পরে দূরপাল্লার শটে আরেকটি দারুণ গোল করার পরও তেভেজের প্রথম গোলটিই ছিলো ম্যাচ পরবর্তী আলোচ্য বিষয়।

৪. আন্দেস ব্রাহিমি (আর্জেন্টিনা বনাম পশ্চিম জার্মানি – ১৯৯০)

১৯৮৬ সালের ফাইনালের মঞ্চই আবার পুনরাবৃত্ত হয় ১৯৯০ বিশ্বকাপে। তবে এবার হারের মুখ দেখতে হয় ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকে। বিশ্বকাপের সবচেয়ে উত্তেজনাময় ফাইনাল হিসেবে ম্যাচটি চিহ্নিত হয়ে আছে। রোমে অনুষ্ঠিত হওয়া ফাইনালটিতে পশ্চিম জার্মানিই ছিলো ফেভারিট।

শুরু থেকেই জার্মানির দারুণ অ্যাটাকিং লাইন আপের সামনে অনড় থাকে ম্যারাডোনা বাহিনী। ম্যাচের ৬৫ মিনিটে ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাসে ফাইনালে প্রথম লাল কার্ড দেখেন আর্জেন্টিনার পেদ্রো মনজন। লোথার ম্যাথিউসকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তিনি। পরবর্তীতে দেজোত্তি দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখলে নয়জন নিয়েই লড়াই করে আলবিসেলেস্তেরা। কিন্তু বিতর্কিত মুহূর্তটি আসে ৮৫ মিনিটে। রবার্তো সেনসিনির ট্যাকলে ডি বক্সের মধ্যে পড়ে যান জার্মানির রুডি ভোলার। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে ট্যাকলটি সঠিক হলেও মেক্সিকান রেফারি এডগার্ডো কোডেসাল পেনাল্টির নির্দেশ দেন। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা প্রতিবাদ করলেও তা মানেননি রেফারি। ৮৫ মিনিটে আন্দ্রেস ব্রাহিমির সেই পেনাল্টি গোলে নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ জিতে নেয় জার্মানি।

রুডি ভোলারকে করা রবার্তো সেনসিনির সেই ট্যাকল; Source: Weltfussball

ম্যাচ শেষে কাঁদতে থাকা ম্যারাডোনা ম্যাচের ফলাফলের জন্য রেফারিকে দোষারোপ করেন। এখনও পর্যন্ত আর্জেন্টিনায় রেফারি এডগার্ডো কোডেসালের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়।

৫. দিয়েগো ম্যারাডোনা (আর্জেন্টিনা বনাম ইংল্যান্ড – ১৯৮৬)

মেক্সিকোর অ্যাজটেক স্টেডিয়ামে ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষের সামনে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা ও লিনেকারের ইংল্যান্ড। সেই সময়ে ফকল্যান্ড যুদ্ধ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কও ছিলো বৈরী। ম্যাচের শুরু থেকেই তারই উত্তাপ ছড়াতে শুরু করে মাঠের মধ্যে।

প্রথমার্ধে কোনো দলই গোলের দেখা পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধের ছয় মিনিটের মাথায় জর্জে ভালদানোর সাথে ওয়ান টু ওয়ান করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন ম্যারাডোনা। তবে বিতর্কের বিষয় হচ্ছে, গোলটি তিনি করেন তার হাত দিয়ে। জর্জে ভালদানোর উড়ন্ত পাসটির জন্য ইংল্যান্ড গোলরক্ষক পিটার শিলটন ও ম্যারাডোনা দুজনই এগিয়ে আসেন। শিলটনের উচ্চতা ছিলো ৬ ফুট ১ ইঞ্চি। অপরদিকে ম্যারাডোনা ছিলেন মাত্র ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির। ৮ ইঞ্চি উচ্চতা কম হওয়া সত্ত্বেও ম্যারাডোনা বলটি জালে জড়াতে সক্ষম হন। পরে রিপ্লেতে দেখা যায়, তিনি তার হাত ব্যবহার করেছেন গোলটির জন্য।

শিলটন ও ইংল্যান্ডের প্লেয়াররা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানালেও তিউনিসীয় রেফারি আলি বিন নাসের গোলের পক্ষে রায় দেন। পরবর্তীতে ম্যারাডোনা ৭ জন খেলোয়াড়কে পরাস্ত করে আরেকটি গোল করেন, যা গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি হিসেবে খ্যাত। ইংল্যান্ডের হয়ে ৮০ মিনিটে লিনেকার একটি গোল শোধ করলেও ম্যাচটি তারা হেরে যায় ২-১ গোলে।

ম্যারাডোনার হ্যান্ড অফ গড খ্যাত সেই গোল; Source: Rare Historical Photos

ম্যাচ শেষে ম্যারাডোনা স্বীকার করেন যে, তিনি প্রথম গোলটি করতে নিজের হাতের সাহায্য নিয়েছিলেন। তিনি এই ব্যাপারটিকে ‘ঈশ্বরের হাত’ হিসেবে অভিহিত করেন। ফকল্যান্ড যুদ্ধের হারের প্রতিশোধ হিসেবেও ম্যাচটিকে আখ্যায়িত করেন দিয়েগো ম্যারাডোনা।

রেফারি আলি বিন নাসের দোষারোপ করেন লাইন্সম্যানকে। তিনি বলেন, লাইন্সম্যানের সিগন্যালের জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো সিগন্যাল দেননি। ইংল্যান্ড ম্যানেজার ববি রবসন রেফারিকে দোষারোপ করলেও ম্যারাডোনার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, রেফারির সিদ্ধান্ত জঘন্য হলেও ম্যারাডোনার চতুরতা প্রশংসার দাবিদার।

তবে হ্যান্ড অফ গডের চার মিনিট পরেই বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা গোলটি করে বিতর্ককে ছাপিয়ে নিজেকে প্রশংসায় ভাসান ম্যারাডোনা।

 Bangla article is about the controversial goal in world cup. Necessary sources are hyperlinked in the article.

Feature Image: These football times

Related Articles