কর্ণের নিকট সাত্যকি, ধৃষ্টদ্যুম্ন ও অন্যান্য শীর্ষ পাণ্ডব যোদ্ধার পরাজয়
ঘটোৎকচ যখন কর্ণের সঙ্গে যুদ্ধ পরিত্যাগ করে অলায়ুধের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন, সেসময় কর্ণ শীর্ষ পাণ্ডব যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অগ্রসর হন। কর্ণ প্রথমে ধৃষ্টদ্যুম্ন ও শিখণ্ডীকে এবং এরপর যুধমন্যু, উত্তমৌজ ও সাত্যকিকে তীরবিদ্ধ করেন। প্রত্যুত্তরে তারা একযোগে কর্ণকে তীরবিদ্ধ করেন এবং কর্ণের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ চলতে থাকে। সাত্যকি, ধৃষ্টদ্যুম্ন, শিখণ্ডী, যুধমন্যু ও উত্তমৌজ একযোগে কর্ণের দিকে তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন, কিন্তু কর্ণ তীরের সাহায্যে উক্ত তীরবৃষ্টিকে প্রতিহত করেন এবং এরপর তাদের বিরুদ্ধে সজোরে তীর ও বর্শা নিক্ষেপ করতে শুরু করেন। কর্ণের তীর ও বর্শার আঘাতে উক্ত পাঁচ পাণ্ডব যোদ্ধার কয়েকজনের রথের ঝাণ্ডা কাটা পড়ে, কয়েকজনের রথের সারথি নিহত হয় এবং কয়েকজনের রথের সঙ্গে যুক্ত ঘোড়াগুলো নিহত হয়। কর্ণ তাদের সকলকে ব্যাপকভাবে তীরবিদ্ধ করেন এবং তারা আহত অবস্থায় পশ্চাৎপসরণ করে যুধিষ্ঠিরের সৈন্যদলের ভিতরে প্রবেশ করেন। তাদের পরাজয়ের পর কর্ণের তীরে বিপুল সংখ্যক পাণ্ডব সৈন্য নিহত হয় ও পাণ্ডব সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়তে শুরু করে।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, জয়দ্রথের মৃত্যুর পর কৃষ্ণের দৈব রথে চড়ে সাত্যকি কর্ণকে পরাজিত করেন এবং চতুর্দশ রাতের প্রথম প্রহরে সাত্যকি কর্ণ ও বৃষসেনের বিরুদ্ধে সমানে সমানে যুদ্ধ করেন। কিন্তু সেই রাতের তৃতীয় প্রহরে তিনি পাণ্ডব বাহিনীর অন্য চার শীর্ষ যোদ্ধার সঙ্গে মিলে একযোগে কর্ণকে আক্রমণ করেও তাকে পরাজিত করতে পারেননি, উল্টো তিনি ও উক্ত চার পাণ্ডব যোদ্ধা কর্ণের নিকট পরাজিত হয়ে পশ্চাৎপসরণ করতে বাধ্য হন। এর থেকে দুইটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যেতে পারে: সাত্যকি অত্যন্ত দক্ষ যোদ্ধা হলেও কৃষ্ণের দৈব রথ ব্যতীত তার পক্ষে কর্ণকে পরাজিত করা সম্ভব ছিল না, এবং কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের দ্বৈরথগুলোর ফলাফল পূর্বানুমান করা কঠিন ছিল।
কর্ণ–ঘটোৎকচ মহাযুদ্ধের অন্তিম পর্ব: কর্ণের বিজয় এবং ঘটোৎকচের পতন
এদিকে ততক্ষণে অলায়ুধ ও ঘটোৎকচের মধ্যেকার দ্বৈরথ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং ঘটোৎকচের হাতে অলায়ুধ নিহত হন। কর্ণের নিকট সাত্যকি, ধৃষ্টদ্যুম্ন ও অন্যান্য শীর্ষ পাণ্ডব যোদ্ধাদেরকে পরাজিত হতে দেখে ঘটোৎকচ ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন এবং অলায়ুধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তিনি ইন্দ্রজালের সাহায্যে যে রথটি সৃষ্টি করেছিলেন সেটিতে চড়ে কর্ণের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। কর্ণ ও ঘটোৎকচের মধ্যে তাদের অসমাপ্ত দ্বৈরথ যুদ্ধ আবার আরম্ভ হয় এবং কর্ণ ও ঘটোৎকচ পরস্পরের দিকে নানা ধরনের অজস্র তীর নিক্ষেপ করতে থাকেন। কার্যত তাদের দ্বারা নিক্ষিপ্ত তীরবৃষ্টিতে চতুর্দিক ছেয়ে যায়। কর্ণ ও ঘটোৎকচ পরস্পরের দিকে তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করে পরস্পরকে তীরবিদ্ধ করতে থাকেন এবং বেশ কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে সমানে সমানে যুদ্ধ চলতে থাকে।
এরপর ঘটোৎকচ মন্ত্র উচ্চারণ করে কর্ণের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অস্ত্র প্রয়োগ করেন এবং উক্ত অস্ত্রের আঘাতে কর্ণের রথের সঙ্গে যুক্ত ঘোড়াগুলো ও রথটির সারথি নিহত হয়। এভাবে কর্ণের রথটিকে বিকল করে দিয়ে ঘটোৎকচ ইন্দ্রজালের সাহায্যে অদৃশ্য হয়ে যান। কৌরব সৈন্যরা আশঙ্কা করতে থাকে যে, ঘটোৎকচ অদৃশ্য অবস্থায় ছলের মাধ্যমে কর্ণকে হত্যা করবেন। কিন্তু কর্ণ ক্ষিপ্রগতিতে আরেকটি রথে আরোহণ করেন এবং ঘটোৎকচকে দেখতে না পেয়ে তিনি চতুর্দিকে তীব্র তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। সেসময় কর্ণ এত ক্ষিপ্রগতিতে ঘটোৎকচের দিকে তীর নিক্ষেপ করছিলেন যে, তিনি কখন তূণীর থেকে তীর নিচ্ছিলেন, কখন সেগুলোকে তাক করছিলেন আর কখন সেগুলোকে নিক্ষেপ করছিলেন, কেউই সেটি বুঝতে পারছিল না। কর্ণ এত বিপুল সংখ্যক তীর নিক্ষেপ করছিলেন যে, চতুর্দিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং কর্ণের তীরে ঢাকা পড়ে যায়। অদৃশ্য ঘটোৎকচ কর্ণের তীরে বিদ্ধ হন এবং আবার দৃশ্যমান হন।
এবার ঘটোৎকচ শূণ্যে ভাসমান অবস্থায় তার চূড়ান্ত ইন্দ্রজাল প্রয়োগ করেন এবং তার প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালের ফলে আকাশে লাল রঙের মেঘের সৃষ্টি হয়। সেখান থেকে তীব্র গর্জনের শব্দ শোনা যেতে থাকে এবং সেটির মধ্য থেকে বিপুল সংখ্যক তীর, বর্শা, ভারী দণ্ড, কুঠার, তলোয়ার, গদা, বল্লম, কাঁটাযুক্ত গদা, শতঘ্নী ও অন্যান্য নানাবিধ অস্ত্রশস্ত্র কর্ণ ও কৌরব সৈন্যদের ওপর পতিত হতে থাকে। শুধু তাই নয়, উক্ত মেঘের মধ্য থেকে বিপুল সংখ্যক বড় পাথর, রথের চাকা, বজ্র ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্রশস্ত্র কর্ণ ও কৌরব সৈন্যদের ওপর পতিত হতে থাকে। কর্ণ সেদিকে তীব্র তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ করেন, কিন্তু ঘটোৎকচ কর্তৃক প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালের ফলে সৃষ্ট উক্ত অস্ত্রবৃষ্টিকে প্রতিহত করতে ব্যর্থ হন। এই ভয়ঙ্কর অস্ত্রবৃষ্টির ফলে কৌরব বাহিনীর বিপুল সংখ্যক রথী, হাতি ও ঘোড়া নিহত হয়।
তদুপরি, ঘটোৎকচ কর্তৃক প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালের ফলে বিপুল সংখ্যক অতিকায় রাক্ষস ও যাতুধানের আবির্ভাব ঘটে এবং তারা শূণ্যে ভাসমান অবস্থায় কর্ণ ও কৌরব সৈন্যদের ওপর অজস্র তীর, বর্শা, গদা, কাঁটাযুক্ত দণ্ড, বজ্র, ত্রিশূল, অশনি, চক্র ও শতঘ্নী নিক্ষেপ করতে থাকে। এভাবে ঘটোৎকচ কর্তৃক প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালের ফলে সৃষ্ট ভয়ঙ্কর অস্ত্রবৃষ্টির ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে কৌরব বাহিনীর এত বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয় যে, ইতিপূর্বে কোনো পাণ্ডব যোদ্ধা এত অল্প সময়ে কৌরবদের এত বেশি ক্ষয়ক্ষতি সাধন করতে পারেননি। এই ভয়াবহ অস্ত্রবৃষ্টির ফলে হাজার হাজার কৌরব সৈন্য নিহত হয় এবং বাকিরা অত্যন্ত আতঙ্কিত অবস্থায় ছত্রভঙ্গ হয়ে পশ্চাৎপসরণ করতে শুরু করে। কেবল কর্ণ ঘটোৎকচের অস্ত্রবৃষ্টি দ্বারা সম্পূর্ণভাবে বেষ্টিত হওয়া সত্ত্বেও অটলভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করতে থাকেন।
কর্ণ মন্ত্র উচ্চারণ করে ঘটোৎকচের প্রয়োগকৃত ইন্দ্রজালের বিরুদ্ধে একটি দিব্যাস্ত্র প্রয়োগ করেন, কিন্তু সেটি ঘটোৎকচ কর্তৃক প্রয়োগকৃত ভয়ঙ্কর ইন্দ্রজালকে ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয় এবং উক্ত ইন্দ্রজালের প্রভাবে সেটি নিজেই ধ্বংস হয়ে যায়। একই সময়ে ঘটোৎকচ কর্ণের দিকে একটি শতঘ্নী নিক্ষেপ করেন এবং সেটির আঘাতে কর্ণের রথের সঙ্গে যুক্ত ঘোড়াগুলো নিহত হয়। কর্ণ ধনুক হাতে নিয়ে তার অচল রথ থেকে লাফিয়ে নেমে পড়েন এবং এরপর ঘটোৎকচের বিরুদ্ধে কোন অস্ত্র প্রয়োগ করা যায় সেই ব্যাপারে চিন্তা করতে থাকেন। এসময় কৌরব সৈন্যরা এবং কৌরব বাহিনীর সকল শীর্ষ যোদ্ধা কর্ণকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, “কর্ণ! ইন্দ্রের দেয়া তীর ব্যবহার করে এই রাক্ষসকে হত্যা করো! কৌরবরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে! অর্জুন আর ভীম আমাদের এরচেয়ে বেশি আর কী ক্ষতি করতে পারেন? এই রাক্ষসকে হত্যা করো, যে আমাদের সকলকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে। যারা এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধ থেকে বেঁচে যাবে তারা পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।”
কর্ণ ইন্দ্র কর্তৃক প্রদত্ত উক্ত অস্ত্রটি (যেটি ‘বাসব শক্তি’ বা ‘নৈকর্তন’ নামে পরিচিত ছিল) অর্জুনকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন, কারণ উক্ত অস্ত্রটি কেবল একবারই ব্যবহার করা সম্ভব ছিল। কিন্তু ঘটোৎকচ কর্তৃক প্রয়োগকৃত ভয়ঙ্কর ইন্দ্রজালের ফলে কৌরব বাহিনীর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হতে দেখে এবং কৌরব সৈন্যদের আর্তনাদ শুনে কর্ণ উক্ত অস্ত্রটি ঘটোৎকচের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মন্ত্র উচ্চারণ করলে উক্ত অস্ত্রটির আবির্ভাব ঘটে এবং কর্ণ সেটিকে ঘটোৎকচের দিকে তাক করেন। কর্ণ ইন্দ্রের দেয়া সেই অস্ত্রটি হাতে নেয়ার পর চতুর্দিকে তীব্র বাতাস প্রবাহিত হতে থাকে এবং প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাত হতে থাকে। কর্ণের হাতে সেই ভয়ঙ্কর অস্ত্রটি দেখে ঘটোৎকচ উড়ন্ত অবস্থায় পশ্চাৎপসরণ করার চেষ্টা করেন, কিন্তু কর্ণ অস্ত্রটিকে ঘটোৎকচের দিকে নিক্ষেপ করেন। উক্ত অস্ত্রের আঘাতে ঘটোৎকচ কর্তৃক প্রয়োগকৃত চূড়ান্ত ইন্দ্রজাল ধ্বংস হয়ে যায় এবং অস্ত্রটি ঘটোৎকচের বুক বিদীর্ণ করে দেয়।
মরণাপন্ন ঘটোৎকচ মৃত্যুর ঠিক আগে অতিকায় আকৃতি ধারণ করেন এবং কৌরব সৈন্যদের ওপর পতিত হন। ঘটোৎকচের বিশাল মৃতদেহের নিচে পিষ্ট হয়ে পুরো এক অক্ষৌহিণী কৌরব সৈন্য নিহত হয়। কর্ণের হাতে ঘটোৎকচের মৃত্যুর পর কৌরব সৈন্যরা বিজয়োৎসব আরম্ভ করে এবং চতুর্দিকে তাদের আনন্দধ্বনি, বাদ্য–বাজনার শব্দ ও শঙ্খের আওয়াজ পাওয়া যায়। এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধে কর্ণের বিজয়ের পর কৌরব সৈন্যরা উচ্ছ্বসিতভাবে তার প্রশংসা করতে থাকে এবং সকলের দ্বারা প্রশংসিত হয়ে তিনি দুর্যোধনের রথে আরোহণ করেন। অন্যদিকে, ঘটোৎকচের মৃত্যুর পর পাণ্ডব সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পশ্চাৎপসরণ করতে শুরু করে।
কর্ণ ও ঘটোৎকচের মধ্যেকার দ্বৈরথ যুদ্ধের পূর্ণ বিবরণ থেকে এটি স্পষ্ট যে, কর্ণ ও ঘটোৎকচ একেবারে শেষ পর্যায় পর্যন্ত সমানে সমানে যুদ্ধ করেছিলেন। ঘটোৎকচ কর্তৃক প্রয়োগকৃত প্রতিটি ইন্দ্রজালকে কর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। নিজস্ব ক্ষমতার শীর্ষে থাকা অবস্থায় এবং স্বয়ং শিবের নির্মিত অস্ত্র ব্যবহার করেও ঘটোৎকচ কর্ণকে হত্যা করতে পারেননি। কর্ণ তিনবার ঘটোৎকচের রথ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কর্ণ ঘটোৎকচ কর্তৃক প্রয়োগকৃত সর্বশেষ ও চূড়ান্ত ইন্দ্রজালটি ধ্বংস করতে ব্যর্থ হন এবং তাকে ইন্দ্রের দেয়া অস্ত্রটি প্রয়োগ করে সেটিকে ধ্বংস করতে হয়। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ঘটোৎকচ কর্তৃক প্রয়োগকৃত চূড়ান্ত ইন্দ্রজালটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর হওয়া সত্ত্বেও সেটি কর্ণকে হত্যা করতে পারেনি। কিন্তু সেটির ফলে বিপুল সংখ্যক কৌরব সৈন্য নিহত হয় এবং নিজের সৈন্যবাহিনীকে রক্ষা করার জন্য কর্ণকে ইন্দ্রের দেয়া অস্ত্রটি ব্যবহার করতে হয়।
কর্ণ ও ঘটোৎকচের মধ্যেকার দ্বৈরথ যুদ্ধকে নিঃসন্দেহে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শীর্ষ দুইটি দ্বৈরথ যুদ্ধের একটি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় (অপরটি হচ্ছে কর্ণ ও অর্জুনের মধ্যেকার চূড়ান্ত দ্বৈরথ যুদ্ধ)। কেবল তীব্রতা ও ভয়াবহতার দিক থেকে নয়, তাৎপর্যের দিক থেকেও এই বক্তব্যটি প্রযোজ্য। এই যুদ্ধে কর্ণ বিজয়ী হন, কিন্তু অর্জুনের বিরুদ্ধে বিজয় লাভের সুনিশ্চিত হাতিয়ারটি তার হাতছাড়া হয়ে যায় এবং অর্জুনকে পরাজিত করার জন্য তাকে তখন থেকে কেবল নিজের রণনৈপুণ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। সুতরাং কর্ণের জন্য এটি ছিল একটি মিশ্র বিজয়।
অর্জুন ও সাত্যকির নিকট কৃষ্ণের ব্যাখ্যা: কৃষ্ণের দূরদর্শী রণনীতি এবং কৌরবদের ও কর্ণের শক্তিক্ষয়
কর্ণের হাতে ঘটোৎকচের মৃত্যুর পর পাণ্ডব বাহিনীর সকলেই অত্যন্ত দুঃখিত হয় এবং পঞ্চপাণ্ডবের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু কৃষ্ণের প্রতিক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে অর্জুনের রথের ওপর নাচতে শুরু করেন এবং খুশিতে অর্জুনকে বারবার আলিঙ্গন করেন। কৃষ্ণের আচরণে আশ্চর্যান্বিত হয়ে অর্জুন তাকে বলেন যে, সেটি উল্লসিত হওয়ার সময় নয়। ঘটোৎকচ নিহত হয়েছেন এবং পাণ্ডব সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে। ঘটোৎকচের মৃত্যুতে তারা সকলেই দুঃখিত। এমতাবস্থায় কৃষ্ণ কেন এত আনন্দিত?
উত্তরে কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন যে, এটি অর্জুনের সৌভাগ্য যে, ইন্দ্র কর্ণের কাছ থেকে কর্ণের সহজাত কবচ–কুণ্ডল নিয়ে গেছেন এবং এখন ঘটোৎকচের মৃত্যুর ফলে ইন্দ্রের দেয়া ‘বাসব শক্তি’ অস্ত্রও কর্ণের হাতছাড়া হয়ে গেছে। কৃষ্ণ মন্তব্য করেন যে, কর্ণের কাছে যদি তার সহজাত কবচ–কুণ্ডল থাকতো, সেক্ষেত্রে ইন্দ্র (দেবতাদের রাজা), যম (ধর্ম ও মৃত্যুর দেবতা), বরুণ (জলের দেবতা), কুবের (সম্পদের দেবতা) ও অন্যান্য দেবতারা মিলেও কর্ণকে হত্যা করতে পারতেন না, এবং অর্জুনের গাণ্ডীব বা কৃষ্ণের নিজের সুদর্শন চক্র কোনোটিই কর্ণের বিরুদ্ধে কার্যকর হতো না। কর্ণের কাছে এখন আর সেই কবচ–কুণ্ডল নেই এবং ইন্দ্রের দেয়া অব্যর্থ অস্ত্রটিও নেই। কৃষ্ণ সহজাত কবল–কুণ্ডলবিহীন ও ইন্দ্রের অস্ত্রবিহীন কর্ণকে এমন একটি বিষাক্ত সাপের সঙ্গে তুলনা করেন, যেটিকে মন্ত্রবলে অবশ করে ফেলা হয়েছে।
কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন যে, এখন আর কর্ণ চাইলেই অর্জুনকে হত্যা করতে পারবেন না। কিন্তু তিনি অর্জুনকে এই বলে সতর্ক করে দেন যে, সহজাত কবচ–কুণ্ডল ও ইন্দ্রের দেয়া অস্ত্র না থাকার পরেও কর্ণ এতটাই শক্তিশালী যে অর্জুন ছাড়া আর কেউ কর্ণকে হত্যা করতে সক্ষম হবেন না। কৃষ্ণ অর্জুনকে জানান যে, এমন এক সময় আসবে যখন কর্ণের রথের চাকা মাটিতে আটকে যাবে এবং তখন তিনি কর্ণকে হত্যা করার জন্য অর্জুনকে ইঙ্গিত করবেন। কৃষ্ণ যোগ করেন যে, পাণ্ডবদের কল্যাণের উদ্দেশ্যেই তিনি মগধের রাজা জরাসন্ধ, চেদির রাজা শিশুপাল এবং নিষাদের রাজা একলব্যকে হয় নিজে হত্যা করেছেন নয়তো অন্য কারো মাধ্যমে হত্যা করিয়েছেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় এরা যদি জীবিত থাকতেন, সেক্ষেত্রে তারা অবশ্যই দুর্যোধনের পক্ষে যোগদান করতেন এবং সেক্ষেত্রে পাণ্ডবদের জন্য এই যুদ্ধ বহুগুণে কঠিন হয়ে যেতো।
কৃষ্ণ আরো উল্লেখ করেন যে, ঘটোৎকচের মৃত্যুতে পাণ্ডবদের দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই। ঘটোৎকচ এই যুদ্ধে নিহত না হলে তিনি নিজেই পরবর্তীতে ঘটোৎকচকে হত্যা করতেন, কারণ পাণ্ডবদের আত্মীয় হলেও ঘটোৎকচ ছিলেন ব্রাহ্মণদের শত্রু এবং তিনি বহু যজ্ঞ ধ্বংস করেছেন। কৃষ্ণ খোলাখুলিই উল্লেখ করেন যে, তিনি জেনেশুনেই কর্ণের বিরুদ্ধে ঘটোৎকচকে প্রেরণ করেছিলেন, কারণ তিনি জানতেন যে, ঘটোৎকচের হাতে কৌরব বাহিনী বিপর্যস্ত হলে কর্ণ তাদেরকে রক্ষা করার জন্য ইন্দ্রের দেয়া অস্ত্র ঘটোৎকচের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করতে বাধ্য হবেন। এর ফলে কর্ণ আর সেটি অর্জুনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবেন না।
কৃষ্ণের এই বক্তব্য থেকে তার ক্ষুরধার বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। কৃষ্ণ ও অর্জুন ঘটোৎকচকে ডেকে কর্ণকে হত্যা করার জন্য তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু অর্জুন বা ঘটোৎকচ কেউই কৃষ্ণের প্রকৃত উদ্দেশ্য অনুধাবন করতে পারেননি। প্রকৃতপক্ষে ঘটোৎকচকে কর্ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রেরণ ছিল কৃষ্ণের একটি অতুলনীয় চাল। ঘটোৎকচ যদি কর্ণকে হত্যা করতে সমর্থ হতেন, সেটি হতো পাণ্ডবদের জন্য একটি বিরাট বিজয়। আবার, কর্ণ যদি ইন্দ্রের দেয়া অস্ত্র ব্যবহার করে ঘটোৎকচকে হত্যা করতেন, সেটিও হতো পাণ্ডবদের জন্য বড় একটি কৌশলগত সাফল্য, কারণ সেক্ষেত্রে অর্জুন কর্ণের হাত থেকে সুরক্ষিত হতেন। অর্থাৎ, ঘটোৎকচ কর্ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করার পরপরই পাণ্ডবদের জন্য একটি বড় ধরনের বিজয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, এবং এক্ষেত্রে ঘটোৎকচ জীবিত থাকবেন না নিহত হবেন, সেটির কোনো গুরুত্ব ছিল না।
কৃষ্ণের বক্তব্য শুনে সাত্যকি তাকে প্রশ্ন করেন যে, কর্ণের যদি ইন্দ্রের দেয়া অস্ত্রটি অর্জুনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার ইচ্ছে থেকেই থাকতো, সেক্ষেত্রে তিনি কেন এতদিন অর্জুনের বিরুদ্ধে সেটিকে ব্যবহার করেননি? উত্তরে কৃষ্ণ এই রহস্যের জড় উন্মোচন করেব। তিনি বলেন যে, যুদ্ধক্ষেত্রে কর্ণের প্রবেশের পর থেকে প্রতি রাতে দুর্যোধন, শকুনি ও দুঃশাসন কর্ণকে বলতেন যে, তিনি যেন পরবর্তী দিনের যুদ্ধে অর্জুনের বিরুদ্ধে ইন্দ্রের দেয়া অস্ত্রটিকে প্রয়োগ করেন। কর্ণ প্রতিবারই তাদের কথায় সম্মত হতেন। কিন্তু প্রতিদিনই যুদ্ধের সময় কৃষ্ণ তাদের ওপর ইন্দ্রজাল প্রয়োগ করতেন এবং কর্ণ, দুর্যোধন, দুঃশাসন ও শকুনি সকলেই অর্জুনের বিরুদ্ধে উক্ত অস্ত্র প্রয়োগের কথা ভুলে যেতেন। কৃষ্ণ আরো উল্লেখ করেন যে, এসবের পরেও তিনি অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য এতদিন যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুনকে কর্ণের কাছ থেকে দূরে রেখেছেন এবং অন্যান্য শীর্ষ পাণ্ডব যোদ্ধাকে কর্ণের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছেন।
বস্তুত কৃষ্ণ, অর্জুন ও সাত্যকির এই আলাপচারিতা ছিল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। শক্তিশালী কৌরব বাহিনীকে পরাজিত করার জন্য এবং কর্ণের শক্তিক্ষয় করার জন্য কৃষ্ণ যে জটিল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলছিলেন, এই আলাপচারিতায় তার অংশবিশেষের চিত্র ফুটে ওঠে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বলের পাশাপাশি ছল বা কৌশলও যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, সেটিও এই আলাপচারিতা থেকে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সর্বোপরি, কৃষ্ণ যে একজন অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও দূরদর্শী রণনীতি বিশারদ ছিলেন, সেটিও এই ঘটনাবলি থেকে স্পষ্ট হয়।
ঘটোৎকচের মৃত্যুতে যুধিষ্ঠিরের ক্রোধ
ঘটোৎকচ নিহত হওয়ার পর কৌরব সৈন্যরা উল্লাস প্রকাশ করছিল এবং দ্রোণাচার্য ও কর্ণ তীব্র আক্রমণ চালিয়ে পাণ্ডব বাহিনীর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি সাধন করছিলেন। এমতাবস্থায় যুধিষ্ঠির দ্রোণাচার্যকে প্রতিহত করার জন্য ভীমকে নির্দেশ দেন এবং ভীম দ্রোণাচার্যের সৈন্যদলের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। যুধিষ্ঠির ঘটোৎকচের সম্পর্কে কৃষ্ণ, অর্জুন ও সাত্যকির আলাপচারিতা শুনতে পাননি। ঘটোৎকচের মৃত্যুতে তিনি অত্যন্ত শোকাহত হয়ে পড়েছিলেন এবং ভীমকে কৌরবদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করে তিনি তার রথের ওপর বসে পড়েন। কৃষ্ণ তাকে সান্ত্বনা দেন, কিন্তু যুধিষ্ঠির উল্লেখ করেন যে, তারা বনবাসে থাকাকালে ঘটোৎকচ তাদের অনেক সেবা করেছেন এবং তারা ঘটোৎকচের ও ঘটোৎকচ তাদের প্রিয় ছিলেন। যুধিষ্ঠির উল্লেখ করেন যে, যখন অভিমন্যু নিহত হন, তখন অর্জুন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না এবং জয়দ্রথ তাদের বাকি সবাইকে চক্রব্যূহের প্রবেশমুখে আটকে রেখেছিলেন। এই সামান্য ‘অপরাধে’র জন্য অর্জুন জয়দ্রথকে হত্যা করেছেন।
যুধিষ্ঠির আক্ষেপ করে বলেন যে, অথচ যে দ্রোণাচার্য অভিমন্যুকে হত্যা করার উপায় কর্ণকে বলেছিলেন এবং যে কর্ণের তীরে অভিমন্যুর ধনুক কাটা পড়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে অর্জুন প্রতিশোধ নেননি। এখন কর্ণ তাদের সকলের সামনে ঘটোৎকচকে হত্যা করেছেন। যুধিষ্ঠির বলেন যে, দ্রোণাচার্য ও কর্ণ হচ্ছেন তাদের সকল সমস্যার জড়। এজন্য ভীম দ্রোণাচার্যের বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়েছেন এবং তিনি নিজেই কর্ণের বিরুদ্ধে অগ্রসর হবেন। এই বলে যুধিষ্ঠির কর্ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তার দিকে অগ্রসর হন। কৃষ্ণ বলেন যে, যুধিষ্ঠিরের কর্ণের বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়া নিরাপদ নয়। কিন্তু যুধিষ্ঠির কর্ণের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন।
এমতাবস্থায় মহর্ষি বেদব্যাস যুধিষ্ঠিরের সামনে প্রকট হন। তিনি কর্ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করা থেকে যুধিষ্ঠিরকে নিবৃত্ত করেন। তিনি যুধিষ্ঠিরকে বলেন যে, এটি সৌভাগ্যের বিষয় যে, যখন কর্ণের কাছে ইন্দ্রের দেয়া অস্ত্র ছিল, তখন কর্ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েও অর্জুন বেঁচে আছেন। তিনি যুধিষ্ঠিরকে ক্রোধ ও দুঃখ ত্যাগ করতে উপদেশ দেন এবং যুধিষ্ঠিরকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, এই যুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় তাদেরই হবে। বেদব্যাসের কথায় যুধিষ্ঠির কর্ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করা থেকে বিরত থাকেন, কিন্তু তখনো তার ক্রোধ দূরীভূত হয়নি। তিনি দেখতে পান যে, ভীম কৌরব সৈন্যদের আক্রমণের মোকাবিলা করছেন। এমতাবস্থায় তিনি ধৃষ্টদ্যুম্নকে ডেকে দ্রোণাচার্যকে হত্যা করার জন্য তাকে নির্দেশ দেন এবং পাণ্ডব বাহিনীর সকল শীর্ষ যোদ্ধাকে দ্রোণাচার্যের বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন। যুধিষ্ঠিরের নির্দেশ অনুযায়ী তারা দ্রোণাচার্যের দিকে অগ্রসর হন এবং উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে যায়।
নৈশকালীন যুদ্ধের অবসান
সেসময় ছিল গভীর রাত এবং উভয় পক্ষের সৈন্যরা ক্লান্তি ও তন্দ্রার কারণে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে অস্ত্রশস্ত্র ফেলে দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রেই ঘুমিয়ে পড়ে। তাদের কেউ হাতির পিঠে, কেউ ঘোড়ার পিঠে এবং কেউ রথের ওপর থাকা অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ে। প্রতিপক্ষের সজাগ যোদ্ধারা এই ঘুমন্ত যোদ্ধাদেরকে হত্যা করতে শুরু করে। কেউ কেউ তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় শত্রুদের পাশাপাশি নিজেদের পক্ষের সৈন্যদেরকেও হত্যা করে ফেলে। উভয় পক্ষের সৈন্যদের এই পরিস্থিতি দেখে অর্জুন সজোরে কৌরব সৈন্যদের উদ্দেশ্যে বলেন যে, তখনকার মতো যুদ্ধ বন্ধ করা হোক এবং উভয় পক্ষের পরিশ্রান্ত সৈন্যদের বিশ্রাম নিতে দেয়া হোক। সূর্যোদয়ের পর তারা আবার যুদ্ধ করতে পারে। এরপর অর্জুন পাণ্ডব বাহিনীকে যুদ্ধ বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
কর্ণ ও দুর্যোধন তখনো যুদ্ধ করে যাচ্ছিলেন এবং তাদের দুইজনের মধ্যে ক্লান্তির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না। বরং ঘটোৎকচের মৃত্যুর ফলে কৌরবদের জন্য যে সুবিধাজনক অবস্থানের সৃষ্টি হয়েছিল, সেটিকে পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করার জন্য তারা দুইজন উৎসাহী ছিলেন। এমতাবস্থায় কৌরব সৈন্যরা কর্ণ ও দুর্যোধনকে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানায়। শেষ পর্যন্ত পাণ্ডব বাহিনীকে যুদ্ধ বন্ধ করতে দেখে কর্ণ ও দুর্যোধন কৌরব বাহিনীকেও যুদ্ধ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার পর উভয় পক্ষের ক্লান্ত, রক্তাক্ত ও তন্দ্রাচ্ছন্ন সৈন্যদের অন্যান্য দিনের মতো নিজ নিজ শিবিরে ফিরে যাওয়ার মতো শক্তি অবশিষ্ট ছিল না। রথী ও সারথিরা তাদের নিজ নিজ রথের ওপর, হাতির পিঠে চেপে থাকা যোদ্ধারা হাতির ওপর, অশ্বারোহীরা তাদের ঘোড়ার ওপর এবং পদাতিক সৈন্যরা মাটির ওপর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এর মধ্য দিয়ে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের চতুর্দশ রাতের লড়াইয়ের অবসান ঘটে।