অলিভার ক্রমওয়েল ব্রিটিশ রাজতন্ত্র বিলোপ করে প্রজাতান্ত্রিক কাঠামো দাঁড় করিয়েছিলেন। তার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য ছিল ফরাসিদের সাথে মিত্রতা স্থাপন এবং তাদের সঙ্গে নিয়ে স্প্যানিশ নৌশক্তির মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া। ফ্রান্সের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে তিনি সক্ষম হন। তবে ১৬৫৫-৬০ সাল পর্যন্ত চলা স্পেনের সাথে লড়াইয়ে উদ্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হন ক্রমওয়েল।
স্প্যানিশ প্রাইভেটিয়াররা ব্রিটিশ বাণিজ্য জাহাজের প্রভূত ক্ষতি করে। প্রায় ১,০০০-১,৮০০ বানিজ্য জাহাজ খুইয়ে ইংল্যান্ডের ব্যবসা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হলো। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে স্পেনের হাতে থাকা স্যান ডমিংগো দখল করতে চাইলেও কেবল জ্যামাইকা নিয়েই সন্তুষ্ট হতে হলো ক্রমওয়েলকে। ক্যারিবিয়ান বাদে তৎকালীন স্পেনের অধীনস্থ ডানকার্ক এলাকাও ফরাসি সহায়তায় ব্রিটিশরা ছিনিয়ে নিতে সমর্থ হয়। তবে যোগ-বিয়োগের হিসেবে এই সংঘর্ষ ক্রমওয়েলের জীবনের সফলতার মধ্যে পড়ে না।
দ্বিতীয় চার্লসের সিংহাসনে আরোহণ স্পেনের সাথে যুদ্ধের অবসান ঘটাল। চার্লস তার নজর নিবদ্ধ করলেন নেদারল্যান্ডসের দিকে। সেখান থেকে আসার সময় মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে এলেও ডাচরা ব্রিটিশদের খুব একটা বিশ্বাস করত না। তবে নেদারল্যান্ডসের গ্র্যান্ড পেনশনার ডি উইট ওয়েস্টমিন্সটার চুক্তি বজায় রাখতে সচেষ্ট ছিলেন।
চার্লসের ক্রমশ যুদ্ধংদেহি মনোভাবে শঙ্কিত হয়ে ১৬৬২ সালের এপ্রিলে ফরাসিদের সাথে ডি উইট সামরিক সহায়তার চুক্তি করেন। এই চুক্তির মূল কথা ছিল ইউরোপিয়ান শক্তিদের লড়াইয়ে তারা পরস্পরকে সহায়তা করবে, যদি না একজন অপরজনের উপর আক্রমণ না করে থাকেন।একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের সাথেও পারস্পরিক সামরিক সহায়তা সহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে দ্বিতীয় ওয়েস্টমিন্সটার চুক্তি সম্পাদিত হয়।
প্রথম অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধ কিন্তু যুগ যুগ ধরে চলা ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সমাপ্তি টানতে পারেনি। বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশ, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ আর আফ্রিকার উপনিবেশ নিয়ে প্রায় নিয়মিত ডাচ আর ব্রিটিশ বণিকদের মধ্যে ঝগড়া লেগে যেত, যেখানে সরকারও যুক্ত হয়ে পড়ত। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬৫৪-৫৯ সাল অবধি ডাচদের হাতে তাদের বাজেয়াপ্ত জাহাজের লম্বা তালিকা বানিয়ে রাজার হাতে দেয়। তাদের হিসেবে ডাচদের কাছে ক্ষতিপূরণ হয় তিন লাখ পাউন্ড।
ডি উইট এই তালিকা পাবার আগে ১৬৫৯ সালের এক চুক্তি মোতাবেক পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ ইতোমধ্যে কোম্পানিকে দিয়ে দিয়েছিলেন। তার সরকার থেকে সেই চুক্তির সূত্র ধরে বলা হলো এই অর্থই সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ হিসেবে কোম্পানি গ্রহণ করে নিয়েছে, কাজেই নতুন করে অর্থ দাবির কোনো অধিকার তাদের নেই। কিন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাতে কর্ণপাত না করে চার্লসের দরবারে নিয়মিত অভিযোগ জানাতে থাকে। তাদের সাথে যোগ দেয় অন্যান্য ব্রিটিশ বণিকেরা।
এদের ভ্রান্ত এক ধারণা ছিল যে- প্রথম অ্যাংলো-ডাচ সংঘর্ষের সময় তাদের ব্যবসার যে বিপুল মুনাফা হয়েছিল তার কারণ ছিল সাগরে রয়্যাল নেভির সাফল্য। যুদ্ধের পর থেকে মুনাফা নিম্নগামী হতে থাকলে তারা উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল কীভাবে আবার ব্যবসার সুদিন ফিরিয়ে আনা যায়।
অধিকাংশ বণিক মনে করছিল যে নতুন করে সংঘাত আরম্ভ হলে ডাচদের তো রয়্যাল নেভি সহজেই পরাজিত করে ফেলবে। এই পথ ধরে অনেক ডাচ বাণিজ্য জাহাজ ছিনিয়ে নেয়া যাবে। পাশাপাশি যুদ্ধে পরাজয়ের পর যখন ডাচদের নৌ ব্যবসা হোঁচট খাবে তখন সেই শূন্যতা পূরণ করবে ব্রিটিশরা, ফলে আবার ফুলেফেঁপে উঠবে তাদের অর্থনীতি।
ব্রিটিশদের ডাচবিরোধী পদক্ষেপ
দ্বিতীয় চার্লস ব্যক্তিগতভাবে ডি উইটকে পছন্দ করতেন না। নেদারল্যান্ডসের উপনিবেশগুলোর ব্যাপারেও তার আগ্রহ ছিল। তবে মূলত বণিকদের চাপেই ব্রিটিশ সরকার ডাচদের উস্কানি দিতে নানামুখি পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ছাপানো হয় লাখ লাখ লিফলেট, যাতে ডাচদের অত্যন্ত হীনভাবে উপস্থাপন করা হয়। এগুলো সারা ইউরোপে বিলিয়ে দেয়া হলো।
সামরিকভাবেও ডাচ উপনিবেশের দিকে ব্রিটিশরা হাত বাড়াল। উত্তর আমেরিকাতে নিউ আমস্টারডাম ছিল নেদারল্যান্ডসের অধীনে। ১৬২৪ সালে ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বর্তমান ম্যানহাটানের এলাকায় এই উপনিবেশ তৈরি করে। নিউ আমস্টারডাম ছিল নিউ নেদারল্যান্ডসের অংশ, যার অন্তর্গত ছিল বর্তমানকালের নিউ ইয়র্ক, লং আইল্যান্ডের একাংশ, কানেক্টিকাট আর নিউ জার্সি।
১৬৬৪ সালে নিউ নেদারল্যান্ডসের শাসক ছিলেন পিটার স্টুভেসান্ট (Peter Stuyvesant)। গভর্নর হিসেবে তিনি একদমই জনপ্রিয় ছিলেন না। ফলে কর্নেল নিকলসের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সেনারা এগিয়ে এলেও কেউ তাদের মোকাবেলার জন্য গভর্নরের পেছনে জড়ো হলো না। পিটার নিরাশ হয়ে নিউ আমস্টারডাম ছেড়ে দেন ব্রিটিশদের কাছে। সময়টা ছিল ১৬৬৪ সালের অক্টোবর।
ব্রিটিশরা তাদের সেনাপ্রধান, দ্বিতীয় চার্লসের ভাই জেমস, ডিউক অফ ইয়র্কের নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম রাখল নিউ ইয়র্ক। নেদারল্যান্ডস থেকে এস্টেট জেনারেলরা কোনো উচ্চবাচ্চ্য করলেন না। তাদের কাছে উত্তর আমেরিকার উপনিবেশ ধরে রাখার কোনো আর্থিক এবং কৌশলগত সুফল নেই।
তবে আফ্রিকার ব্যাপারে ডাচ চিন্তা ছিল ভিন্ন। এখানে কোনোমতেই এস্টেট জেনারেলরা ইংল্যান্ডকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে সুযোগ করে দেয়ার পক্ষে ছিলেন না। ১৬৬৪ সালের প্রারম্ভেই ব্রিটিশরা লোলুপ দৃষ্টি দিচ্ছিল পশ্চিম আফ্রিকার গিনির দিকে। জানুয়ারি মাসে ক্যাপ্টেন রবার্ট হোমস আটটি যুদ্ধজাহাজ নিয়ে গিনির ভার্দে অন্তরীপের (Cape Verde) সামনে চলে আসেন। এখানে কোনো পূর্বাভাস ব্যতিরেকেই তিনি দখল করে নেন ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দুটি জাহাজ।
এরপর ভার্দের তীরে কোম্পানির দুর্গও ব্রিটিশদের হস্তগত হয়। এরপর বর্তমান সেনেগালের গোরি দ্বীপও (Island of Goree) ডাচদের থেকে ছিনিয়ে নেয় ব্রিটিশরা। এপ্রিলের ২১ তারিখ হোমস গিনির উপকূলে টাকাওরি ফোর্টের দখল নেন। আরো কিছু দুর্গও তার অধীনে চলে আসে। তবে ঘানার ডেল মিনা দুর্গ (Castle of St. George del Mina) দখলের চেষ্টা ব্যর্থ হলো।
ডাচ প্রতিবাদ
ইংল্যান্ডের সাথে নতুন করে যুদ্ধে জড়ানোর ইচ্ছা ডি উইটের ছিল না। তবে সংঘর্ষ হয়তো এড়ানো যাবে না ভেবে কয়েক বছর ধরেই ডাচ ফ্লিটকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। প্রথম অ্যাংলো-ডাচ লড়াইয়ের ব্যবহৃত ভাঙাচোরা রণতরীর জায়গা নিয়েছে মজবুত আর নতুন জাহাজ, আকারে আর অস্ত্রশস্ত্রে যা ব্রিটিশদের সাথে পাল্লা দিতে সক্ষম। আকারে ছোট আর দ্রুতগতির ব্রিটিশ ফ্রিগেটের মতো জাহাজও ডাচ বহরে যুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে ক্রমওয়েলের গড়ে তোলা রয়্যাল নেভি চার্লসের সময় অনেকটাই স্থবির। নতুন কোনো উন্নতি তাদের বহরে হয়নি।
ডি উইটের জানা ছিল দীর্ঘস্থায়ী লড়াইয়ে নেদারল্যান্ডসের অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। অরেঞ্জিস্টদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ব্যাপারেও তিনি শঙ্কিত। যুদ্ধের ডামাডোলে অরেঞ্জ পরিবার যদি তাদের পূর্বের মর্যাদা ফিরে পেতে দাবি জানিয়ে বসে? কারণ তখন তো আর ক্রমওয়েলের সাথে করা ওয়েস্টমিনস্টার চুক্তি কার্যকর থাকবে না। তবে আফ্রিকাতে ব্রিটিশ বাড়াবাড়ি তো সহ্যও করা যায় না।
১৬৬৪ সালের অক্টোবরে ডি রুইটারকে আফ্রিকা পাঠানোর কথা ঠিক হলো। তবে তার আগে কূটনৈতিকভাবে সমস্যার মোকাবেলার উদ্যোগ গৃহীত হল। লন্ডনে ডাচ রাষ্ট্রদূতেরা রাজার কাছে আফ্রিকা আর আমেরিকাতে উপনিবেশ ছিনিয়ে নেবার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানান। রাজকীয় প্রতিনিধিরা জানালেন চার্লস বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখছেন।
রবার্ট হোমসকে বাড়াবাড়ির অভিযোগে গ্রেফতার করা হলেও পুরো বিষয়টি ছিল লোকদেখানো, পর্দার অন্তরালে তার সাফল্যে চার্লস কিন্তু উৎফুল্ল। ডাচদের কাছেও তা অজানা ছিল না। এদিকে গিনি উপকূলে নতুন করে হামলা চালানোর জন্য লোক জড়ো করা হচ্ছে এই সংবাদে আবারও তারা প্রতিবাদ পেশ করে। জবাবে চার্লসের হাবভাব যুদ্ধের ব্যাপারে তার সংকল্প নিশ্চিত করে দেয়।
এস্টেট জেনারেলরা জরুরি সভায় বসলেন। ডি রুইটারের কাছে গোপনে আফ্রিকাতে সামরিক অভিযানের নির্দেশ পাঠানো হলো। তিনি ছিলেন মালাগাতে। এখানে তার কাছে এস্টেট জেনারেলদের বার্তা পৌঁছে।
রসদপত্রের জন্য ডি রুইটার প্রথমে অ্যালিকান্টে এলেন, কিন্তু এখানে ফরাসি জাহাজের ভিড়ে ডাচদের জন্য মালামাল নিতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল। ওদিকে মালাগার বাইরে ঘুরে বেড়ানো ব্রিটিশ বহরের কম্যান্ডার লসন আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন ডি রুইটারের পরবর্তী গন্তব্যের ব্যাপারে। তাকে ফাঁকি দিয়ে ডি রুইটার অ্যালিকান্ট হয়ে কাদিজে এসে পৌঁছেন। এখানেই রসদপত্র জোগাড় করা গেল। নাছোড়বান্দার মতো লসন এখানেও এসে হাজির হন।
আফ্রিকার পথে
ডি রুইটার নিজের ক্যাপ্টেনদের কাছেও কাদিজে আসল যাত্রাপথ প্রকাশ করেননি। অক্টোবরের ৫ তারিখ তিনি ১২টি যুদ্ধজাহাজ আর একটি সরবরাহ জাহাজ নিয়ে পাল তোলেন, লসনকে দেখিয়ে রওনা দেন সালে বরাবর। যাত্রার তৃতীয় দিনেই তিনি কেবল তাদের আসল গন্তব্য প্রকাশ করলেন।
১৭ অক্টোবর ডাচ বহর এসে পৌঁছল কেপ ভার্দের সামনে। সেখান থেকে ২২ অক্টোবর তারা গোরে দ্বীপের অদূরে এসে নোঙর করলেন। তীরে ছিল ব্রিটিশদের নয়টি জাহাজ, যার মাত্র একটি রণতরী। দুর্গ থেকে ডি রুইটারের আগমনের কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি বলে পাঠালেন ইংল্যান্ডের সাথে যুদ্ধ করতে তিনি আসেননি, এসেছেন শুধুমাত্র দেশের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে নিতে।
সফল ডাচ অভিযান
ডি রুইটারের বাহিনী ব্রিটিশদের তুলনায় অনেক বড়। পরিস্থিতির অসহায়ত্ব বুঝে ব্রিটিশ কম্যান্ডার দুর্গ সমর্পণ করে দেন। ব্রিটিশ সেনারা তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দুর্গ ত্যাগ করে, তবে ভাড়াটে যোদ্ধ এবং কিছু ব্রিটিশ বনিককে বন্দি করা হয়। তিনটি রেখে বাকি ব্রিটিশ বাণিজ্য জাহাজও ডি রুইটার ছেড়ে দেন।
নভেম্বরের ছয় তারিখে গিনির পথ ধরলেন ডি রুইটারে। কিন্তু ছিনিয়ে নেয়া তিনটি ব্রিটিশ জাহাজ তার গতি কমিয়ে দিচ্ছিল। ফলে তিনি সেগুলোও ছেড়ে দেন। নাবিকের শর্ত দেয়া হলো যে তারা ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এলাকায় ব্যবসা করবে না।
বন্দি জাহাজ ছেড়ে দেবার পরেও প্রতিকূল বাতাস ডি রুইটারকে যাত্রাপথ বদলাতে বাধ্য করে। ডিসেম্বরের ৬ তারিখ তিনি সিয়েরা লিওনের উপকূলে এসে থামলেন। এখান থেকে রসদপত্র ভর্তি করে ১৫ তারিখ তিনি গিনির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। সেখান থেকে নতুন বছরের ৪ জানুয়ারি টাকাওরি দুর্গের কাছে এসে পড়লেন। সরাসরি আক্রমণের পরিকল্পনা থাকলেও দুর্গের বাইরের সাগরে ছোট একটি ব্রিটিশ বহর তাকে নতুন করে ভাবাল।
নিকটবর্তী ডেল মিনা দুর্গের ডাচ সেনানায়ক জেনারেল ভ্যাল্কেনবার্গের কাছে খবর পাঠালেন ডি রুইটার। এরপর টাকাওরির ব্রিটিশ অধিনায়ককে দুর্গ সমর্পণের আহ্বান জানালে তারা পরদিন ডাচদের আলোচনার জন্য আসতে বলে। কথামত ডাচ দূতরা যখন দুর্গের পথে তখন হঠাৎ করেই ব্রিটিশরা আক্রমণ শুরু করল।
ডি রুইটার অবিলম্বে ৫টি জাহাজ তীরের কাছে এনে দুর্গের উপর তুমুল গোলাবর্ষণ করতে থাকেন। এর ফাঁকে তীরে নামিয়ে দেন মেরিন সেনা। শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশরা দুর্গ ছেড়ে দিলে জেনারেল ভ্যাল্কেনবার্গের পরামর্শে টাকাওরি উড়িয়ে দেয়া হলো।
ডি রুইটারের পরবর্তী লক্ষ্য ছিল আরেক দুর্গ, যার অবস্থান করম্যান্টিন অঞ্চলের কোস্ট ক্যাসল অন্তরীপের সামনে। কিন্তু ১৬৬৪ সালের শেষদিকেই ইংল্যান্ডের কাছে তার অভিযানের সংবাদ চলে গেছে। চার্লসের নির্দেশে রয়্যাল নেভি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা সাগরে ডাচ বাণিজ্য জাহাজ দখল করছে। বছর শেষ হবার আগেই শতাধিক জাহাজ তাদের হস্তগত হয়। ডি উইট সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন।
ডি রুইটার জানতে পারলেন যে যুবরাজ রুপার্টের অধীনে একটি বহর তার দিকে আসছে। ফলে করম্যান্টিনা আক্রমণ পিছিয়ে দিয়ে তিনি সমস্ত জাহাজ ডেল মিনার সামনে নোঙর করলেন। নেদারল্যান্ডস থেকেও অতিরিক্ত সেনা সাহায্য চেয়ে পাঠানো হয়।
ভ্যাল্কেনবার্গ ডি রুইটারকে পরামর্শ দিলেন আপাতত করম্যান্টিন আক্রমণ মুলতবি রাখতে। তবে প্রথমে সায় দিলেও শেষ পর্যন্ত ৪ ফেব্রুয়ারি ডি রুইটার আক্রমণ চালানোরই সিদ্ধান্ত নেন। অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় অধিবাসীদের দলে টানা হলো। ৭ ফেব্রুয়ারি প্রায় ১,২০০ স্থানীয় লোক তার দলে যোগ দেয়। ব্রিটিশরা আশেপাশের সমস্ত দখল করা দুর্গ থেকে লোক এনে সবাইকে করম্যান্টিনে জড়ো করে।
করম্যান্টিনের খুব কাছেই আরেকটি দুর্গ, আদজা। এর অবস্থা আদজা উপসাগরের মুখে (Bay of Adja)। কাজেই করম্যান্টিনে আঘাত হানার আগে এই আদজা দুর্গ কব্জা করতে চাইলেন ডি রুইটার। করম্যান্টিন থেকে তুমুল গোলাবর্ষণ উপেক্ষা করে অনেক কষ্টে আদজার প্রতিরক্ষাকারীদের হারিয়ে ডাচরা তাদের দখল বুঝে নেয়। সামনে এখন করম্যান্টিনের প্রাচীর।