Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রূপ-গুণ-শৌর্য-বীর্য: প্রধান চার গ্রিক দেবী

রূপে-গুণে-শৌর্যে-বীর্যে সমৃদ্ধ গ্রিক দেবীরা। অলিম্পাসের চূড়ায় বসবাসকারী এই দেবীদের নিয়ে কম জল্পনা-কল্পনা কিংবা রচনা হয়নি। এসব রচনার মধ্য থেকেই আজ আপনাদের কাছে হাজির হয়েছি মূল চার গ্রিক দেবীকে নিয়ে। এরা হলেন এথেনা, আর্টেমিস, হেস্টিয়া ও আফ্রোদিতি। এদের মধ্যে প্রথম তিনজন কুমারী দেবী।

১) এথেনা

মায়ের গর্ভে জন্ম হয়নি এই দেবীর, পিতা জিউসের মাথা থেকেই তার উৎপত্তি বলে ধরে নেয়া হয়। তবে এমন গল্পও চালু রয়েছে যে জিউস ও শৈল্পিক জ্ঞানের দেবী মেটিসের মিলনে এথেনার সৃষ্টি এবং জিউস ভয় পেয়ে যান যে মেটিস তার চেয়েও শক্তিশালী এক সন্তানের জন্ম দিতে চলেছেন, এজন্য জিউস তাকে জন্মের আগেই গিলে ফেলেন! কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি, এথেনা জন্ম নিয়েছেন জিউসেরই মাধ্যমে। পরে অবশ্য জিউসের প্রিয় সন্তানরূপেই দেখা যায় তাকে।  জিউসের মনে এথেনার জন্য বিশ্বাসের স্থানটি ছিল প্রবল। এজন্যই তাকে নিজের প্রিয় অস্ত্র এগিস ও বজ্র ব্যবহারের অনুমতিও দিয়েছিলেন।

যুদ্ধসজ্জায় সজ্জিত জন্ম থেকেই প্রাপ্তবয়স্ক এথেনা ছিলেন যুদ্ধদেবী। হোমারের ইলিয়ডে তাকে বর্ণনা করা হয় এক নিষ্ঠুর ও হিংস্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে। কিন্তু অন্যান্য জায়গায় বলা আছে যে নিজ রাজ্যকে বহির্শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতেই দেবীর এই যুদ্ধংদেহী মনোভাব। একইসাথে তাকে ভাবা হয় কৃষিকাজ ও কারিগরির দেবী। অর্থাৎ সৃষ্টি ও সংহার উভয় ভূমিকায়ই তিনি অবতীর্ণ হন ক্ষেত্রবিশেষে। এথেনার কার্যক্ষেত্র বিশাল। জ্ঞান, সাহস, অনুপ্রেরণা, সভ্যতা, ন্যায়, আইন, যুদ্ধবিদ্যা, শক্তি, গণিত, শিল্প, চারু ও কারুকলা- সর্বত্রই তার দক্ষতা অত্যন্ত প্রকট। তিনি বহুমাত্রিক এক দেবী।

এথেন্সের রক্ষক এথেনা; Source: sheppardartsdeviantart.com

কোনো কোনো মিথ অনুসারে, এথেনার শাপেই মেডুসা হয়ে ওঠেন ভয়ংকররূপী। এবং পরে মেডুসার হননের সময় এথেনা এবং হার্মিস পারসিউসকে সাহায্য করতে গিয়েছিলেন। মেডুসার দিকে সরাসরি তাকালে পাথর হয়ে যেতে হয়, তাই এথেনা পারসিউসকে একটি চকচকে ঢাল দিয়েছিলেন। এই ঢালের মধ্য দিয়ে দিয়ে পারসিউস মেডুসাকে দেখতেও পেয়েছিল এবং এথেনার নির্দেশানুসারে সে মেডুসার মাথাটি কেটে ফেলে। ট্রোজান যুদ্ধের সময় এথেনা প্যারিসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, কারণ প্যারিস আফ্রোদিতিকে সোনালী আপেলটি দিয়েছিল। হারকিউলিসের অভিযানে এথেনা তাকে সাহায্য করেছিলেন স্টিমফ্যানিয়ান পাখিদের তাড়িয়ে দিতে।

নগরের রক্ষণাবেক্ষণের ভারও ছিলো তার উপর। বিশেষত, বিখ্যাত এথেন্স নগর ছিল তার আওতায়। এথেনার নামানুসারেই নামকরণ করা হয় এই নগরটির, এমনটাও কথিত আছে ইতিহাসে। ‘কুমারী পার্থেনোস’ নামেও ডাকা হতো এই দেবীকে, আর তার মন্দির ‘পার্থেনোন’।

এথেনা বাঁশি সৃষ্টি করেছিলেন, কিন্তু কখনো বাজাননি।

২) আর্টেমিস

ডেলোসের সিনথাস পর্বতে জন্ম নেয়ায় তাকে ডাকা হয় ‘সিনথিয়া’ও। দেবতা অ্যাপোলোর জমজ বোন তিনি। পিতা জিউস ও মাতা লেটো। একজন দক্ষ শিকারীর ভূমিকায় দেখা যায় তাকে। শিকারকার্যের তত্ত্বাবধানেও ছিলেন তিনি। জংলী প্রাণী ও সকল বস্তু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল তারই।

আর্টেমিসের নিষ্ঠুরতার গল্পও শোনা যায় বেশ কিছু মিথে। এক জায়গায় বলা আছে, ব্যথাহীনভাবে মারা যাওয়া সকল নারীকে মৃত্যুর পর দ্বিধাবিভক্ত হতে হতো আর্টেমিসের নিক্ষেপ করা রূপালী তীরে।

আর্টেমিস; Source: angelsandmasters.com

গ্রিক সাহিত্যিকদের কল্পনায় বিভিন্ন বিপরীত ও বিচিত্র রূপে ধরা পড়েম আর্টেমিস। হোমারের পরবর্তীকালীন কবিরা আর্টেমিসকে ‘ত্রিরূপী দেবী’ আখ্যা দেন; যিনি আকাশে ‘সেলেনা’, ভূমিতে ‘আর্টেমিস’ ও তমসাচ্ছন্ন পাতালে ‘হেকেট’।

ফেবোস (সূর্য) এর বিপরীতে নারী চরিত্র হিসেবে তাকে বলা হয় ফিবি (চাঁদ)। অপর নাম সেলেনি, ল্যাটিন ভাষায় যে শব্দের অর্থ ‘চন্দ্রীয়’ (Luna)। একইসাথে তিনিই অমাবস্যা (হেকেট)। পেঁচা, জলপাই গাছ, সাপ, এগিস (জিউসের অস্ত্র, যেটি তিনি এথেনাকে ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন), বর্শা, বর্ম ইত্যাদি হচ্ছে তার প্রতীক। এদের মধ্যে পেঁচাকে পবিত্র মনে করা হয়।

৩) হেস্টিয়া

সর্বশেষ কুমারী দেবী তিনি। জিউসের বোন। দেবতা ক্রোনোস ও রিয়ার সন্তান। অন্য দেবীদের মতো গৃহের বাইরে নয়, তার অবস্থান গৃহের অভ্যন্তরে । মানুষের দৈনন্দিন জীবনের নিত্যসঙ্গী তিনি। নবজাতক সন্তানের জন্মের পরপরই তার আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হয়। প্রতিবেলা আহারের পূর্বে ও পরে তাকে স্মরণ করা হয়। তাকে বলা হয় স্থাপত্য, পরিবার ও খাদ্যের দেবী। প্রতিটি নগরে হেস্টিয়ার নামে একটি গণচুল্লী থাকে, সেখানকার আগুন বাইরে নেওয়া হয় না। সেখান থেকে নতুন বাসস্থানের জন্য আগুন নিয়ে যাওয়া হয় এবং এভাবেই আগুনের পরম্পরা বজায় থাকে।

গৃহদেবী হেস্টিয়া; Source: mythologian.net

কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাকে ধরা হয় দেবীদের মধ্যে সবচেয়ে নম্র ও শান্ত। অন্যান্য জায়গায় তাকে ‘বর্ণহীন’ বলা হয়, কারণ তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের তেমন কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। ইলিয়ড ও ওডিসির লেখক হোমারের কাজগুলো থেকে হেস্টিয়া পুরোটাই বিলুপ্ত। তার দেখা মেলে অ্যাপোলোডোরাস, হেসিওড এবং ওভিডের রচনায়।

প্রতিটি মন্দিরের প্রধান দেবতার সাথে হেস্টিয়ারও পূজা করা হয়, তাকে সিদ্ধিদেবী ধরা হয় বলে। সবকিছুর সফলতার আগে তাকে স্মরণ করলে কাজটি শুভ হবে, এ ধারণা থেকেই এই পূজার উদ্ভব।

৪) আফ্রোদিতি

হেসিওডের থিওজোনি অনুযায়ী, প্রেম ও সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতি। হাস্যপ্রেমী এক দেবী, যিনি দেবতা-মানুষ নির্বিশেষে সকল পুরুষের মন হরণ করে নিতে পারতেন এক নিমেষেই। এক হাসিতেই তুচ্ছ করে দিতে পারতেন সকল রাজ্যজয়ীকে। হোমারের ইলিয়ডে তাকে জিউস ও ডায়োনের কন্যা বলা হলেও পরবর্তী গ্রিক সাহিত্যে তাকে সমুদ্রস্রোতের ফেনিলতা থেকে জন্মানো দেবীই মনে করা হয়েছে। গ্রীক শব্দ ‘আফ্রোস’ (Afros) অর্থও ফেনিলতা।

আফ্রোদিতির এই সমুদ্রজন্ম ঘটে সাইথেরা দ্বীপের পাশে, সেখান থেকে ঢেউগুলো তাকে নিয়ে যায় আরেক দ্বীপ সাইপ্রাসে। জন্মের সাথে জড়িত দুটো দ্বীপই তাই তার জন্য ছিলো পবিত্রভূমির শামিল। তাকে যেমন ‘সাইথেরা’ ডাকা হয়, তেমনি ‘সাইপ্রান’ও তার একটি নাম।

হোমারীয় স্তুতিতে তাকে ‘সুন্দর ও স্বর্ণালী দেবী’ আখ্যা দেয়া হয়। বেশিরভাগ মিথেই তাকে দেখা যায় হেফাস্টাসের স্ত্রী হিসেবে। তার একটি হংসরথ ছিল, যার মাধ্যমে তিনি বাতাসের গতি ভেদ করে সামনে এগিয়ে যেতেন। রূপের সাথে তার অহংকার ও ঈর্ষাভাবাপন্ন হৃদয়েরও দেখা মেলে বহুবার। তাকে কেউ একটুও অমান্য করলে মেনে নিতে পারতেন না তিনি, প্রতিশোধ নিয়েই তবে ক্ষান্ত হতেন। সোনার একটি আপেল নিয়ে তিন দেবী- আফ্রোদিতি, হেরা ও এথেনার মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়েছিল। জিউসকে বিচারক করতে চাইলেও বিপাকের ভয়ে তিনি রাজি হননি, পরে ট্রয় নগরীর রাজার ছেলে প্যারিস সেবার বিচারক হলেন এবং আফ্রোদিতিকে জয়ী ঘোষণা করেন। এজন্য ট্রোজান যুদ্ধে আফ্রোদিতি প্যারিসের পাশে ছিলেন, এবং এথেনা ও হেরা যে বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, সে কথা আগেই বলা হয়েছে।

Source: Everworld Wiki

গ্রিক পুরাণের অসংখ্য চিত্তাকর্ষক কাহিনীর অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকেন এই দেবীরা। তারা বিভিন্ন রূপে বর্ণিত, বিভিন্নভাবে আখ্যায়িত। কখনো দয়ার সাগর হয়ে তারা আবির্ভূত হন, কখনো বা সাধারণ মানুষের মতো কিংবা তার চেয়েও বেশি নিষ্ঠুরতা ও ঈর্ষার হাতে বন্দী হন তারা। দেবী বলে তেমন করে আলাদা করা যায় না, কিছু অলৌকিক বৈশিষ্ট্য ছাড়া কিছুতেই। হয়তো গ্রিক পুরাণের রচয়িতারাও আশেপাশের মানবসমাজ থেকেই মূল উপাদান নিয়ে তাতে যোগ করেছেন এসব বৈশিষ্ট্য, হয়তো অলিম্পাসের চূড়ায় বসে আজো এই দেবীরা চালাচ্ছেন ব্যক্তিগত কোন্দল! বহু মতান্তরে, বহু রচনায় কিছুই নেই আর ধ্রুব। ‘হয়তো’- ছাড়া কিছুই বলার থাকে না এই উপকথা কিংবা পৌরাণিক গল্পে। তবে সাহিত্যরস আস্বাদনেরর জন্য ভালো খোরাক এগুলো, তা বলা চলে নিঃসন্দেহে!

তথ্যসূত্র:

Mythology: timeless tales of gods and heroes; Writer: Edith hamilton

ফিচার ইমেজ- wallpaperscraft.com

Related Articles