মজার কি শুধু মানুষই হয়? মজার তো হতে পারে পশু-পাখিরাও। তাই তো প্রতি বছর ‘কমেডি ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড’ সারা পৃথিবীজুড়ে বন্যপ্রাণীদের হাস্যকর মুহূর্তের ছবি তোলার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। এসব ছবিতে প্রাণীগুলোকে পাওয়া যায় খুবই বিচিত্র হাস্যকর ভঙ্গিমায়। ছবিগুলো দেখে মনে হয় কেউ হয়তো কাউকে থাপ্পড় দিচ্ছে, কেউ আবার হয়তো বসে আছে খুবই গম্ভীর ভঙ্গিমায়, আবার কোনো ছবি দেখে মনে হয় প্রাণীগুলো হয়তো একজন আরেকজনকে দেখে হেসে গড়িয়ে পড়ছে!
সারা পৃথিবী থেকে প্রাণীদের এমনই সব অদ্ভুত আর মজাদার ছবি নিয়ে এ বছরও হয়ে গেছে ‘কমেডি ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড-২০১৭’। বিজয়ী আলোকচিত্রীরা পেয়েছেন থিংক ট্যাংক ক্যামেরা ব্যাগ এবং ট্রফি। কিন্তু প্রতিযোগিতাটি শুধু পুরস্কারের মাঝেই সীমাবদ্ধ না। কমেডি ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা টম সুলান এবং পল জনসন হিকস বর্ন ফ্রী ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় পৃথিবীজুড়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করা শুরু করেন।
এ বছর প্রায় ২ লক্ষ ছবি থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের পর মোট ৪০টি ছবি ফাইনালে লড়াই করার জন্য অংশ নেয়। সেখান থেকে ১৭টি ছবি বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার জিতে নেয়।
চলুন দেখে আসা যাক ‘কমেডি ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড-২০১৭’ এর বিচারক এবং দর্শকদের মনকাড়া সেরা ছবিগুলো।
১) সাহায্য
‘সাহায্য’ শিরোনামের আলোকচিত্রী তাইবর ক্রেচের তোলা এই ছবিটি জিতে নিয়েছে এ বছরের সেরা ছবির পুরষ্কারটি। ছবিটিতে দেখা যায় একটি পেঁচা নিজেকে তার সঙ্গীদের মতো ডালের উপর ধরে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করছে, কিন্তু তার অন্য বন্ধু দুটি তাকে পাত্তা না দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। ছবিটি তোলা হয়েছিল হাঙ্গেরির অপাস্তুজার থেকে।
২) হাস্যোজ্জ্বল ডোরমাউস
আলোকচিত্রী অ্যান্ড্রেয়া জ্যাম্পেট্টির তোলা ফুলের উপর বসা হাসিখুশি এই বাচ্চা ডোরমাউসটির এই ছবি এবার জিতে নিয়েছে অ্যালেক্স ওয়াকারের ‘স্যিরিয়ান অন দ্য ল্যান্ড’ অ্যাওয়ার্ড। হাসিখুশি এই ডোরমাউসকে পাওয়া গিয়েছিল ইতালিতে।
৩) হাঁসের গতি
মুক্তি আর গতি মনে হয় পারস্পরিক সম্পর্কিত বিষয়। তাই তো মুক্তির আনন্দে আর গতির জোরে হাঁসগুলো এবার রকেটকেও হার মানাবে। আলোকচিত্রী জন থার্লফল এর তোলা ‘ডাক স্পীড’ শিরোনামের এই ছবিটি এবার জিতে নিয়েছে ‘ইন দ্য এয়ার উইনার অ্যাওয়ার্ড’। ছবিটি তোলা হয়েছিল ইংল্যান্ড থেকে।
৪) থাপ্পড়
রাগ কি শুধু মানুষদেরই ওঠে? রাগ পানির নিচে থাকা কচ্ছপদেরও উঠতে পারে! তাই তো রাগের চোটে সবুজ কচ্ছপটি নেপলিওন মাওরি ব্রাস মাছটিকে থাপ্পড়ই মেরে বসলো! পানির নিচের এই মজাদার ছবিটি তুলে আলোকচিত্রী ট্রয় মাইন এবার জিতে নিয়েছেন ‘আন্ডার দ্য সী উইনার অ্যাওয়ার্ড’। রাগী কচ্ছপ এবং মার খাওয়া অসহায় এই মাছটিকে পাওয়া গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে।
৫) চার্চে যাবার জন্য তৈরি সবাই
পেঙ্গুইনরা যে বেশ সভ্য প্রাণী, সে তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু এবার মনে হয় তারা ধর্মকর্মেও হার মানিয়ে ফেলবে আমাদের, তাই তো একেবারে স্যুট-বুট পরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে গেছে চার্চের সামনে। আলোকচিত্রী কার্ল হেনরির তোলা এই সভ্য এবং ধার্মিক পেঙ্গুইনদের ছবিটি জিতে নিয়েছে ‘হাইলি কমেন্ডেড পুরষ্কার’ । ছবিটি তোলা হয়েছিল সাউথ জর্জিয়া আইল্যান্ড থেকে।
৬) পশুদের প্রতিযোগিতা
যুদ্ধের জন্য সবাই প্রস্তুত। প্রধান সেনাপতির নির্দেশে এখনই শুরু হবে হামলা! ছবিটা দেখে এমনই মনে হয়। কেনিয়ার মাসাই মারা থেকে ছবিটি তুলেছেন আলোকচিত্রী জিন জ্যাক্যুইস অ্যালাকেলি।
৭) বানরের মুক্তি
“বন্ধু, এবার আমরা পেয়ে গেছি বাইক! আর আমাদের ঠেকায় কে! চল একটা রাইড হয়ে যাক!” হাস্যোজ্জ্বল এই দুই বানর বন্ধুর ছবিটি ইন্দোনেশিয়ার ট্যাংকোকো বাটুয়াগাস অ্যানিমেল রিজার্ভ থেকে তুলেছেন আলোকচিত্রী ক্যাটি ল্যাভেক ফস্টার।
৮) সমুদ্র ভোঁদরের হর্ষধ্বনি
পানিতে স্নান করার মতো আনন্দের কিছু এই পৃথিবীতে আর আছে নাকি! ছবিটা দেখে এমনই মনে হয়। আনন্দে উল্লসিত সমুদ্র ভোঁদরের এই ছবিটি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে তুলেছেন আলোকচিত্রী পেনি পামার ।
৯) মায়ের পেছনে চড়ে যাত্রা
মা ভাল্লুক বাচ্চা ভাল্লুককে ফেলে রেখে একা মজা করতে চলে যাবে, তা হয় নাকি! বাচ্চা ভাল্লুক প্রয়োজন হয় তার পেছনে ঝুলে ঝুলে যাবে, তা-ও তাকে রেখে যেতে দেবে না! অদ্ভুত সুন্দর এবং মজাদার এই ছবিটি আলোকচিত্রী ডেইজি গিলারডিনি তুলেছেন কানাডার ম্যানিটোবার ওয়াপস্যুক ন্যাশনাল পার্ক থেকে।
১০) মাডস্কিপারের গট ট্যালেন্ট
গান গাওয়া শুধু পাখি আর মানুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, তা তো হয় না। গান গাওয়ার অধিকার আছে সবার! তাই তো এই দুই মাডস্কিপার এখন গট ট্যালেন্টে গান গাওয়ায় ব্যস্ত। ছবিটি থাইল্যান্ড থেকে তুলেছেন আলোকচিত্রী ড্যানিয়েল ট্রিম।
১১) শেয়ালের কারসাজি
সবাই তো বল দিয়েই শট দেয়, শেয়াল না হয় তার শটটা অন্য কিছু দিয়েই দিল! আলোকচিত্রী ডগলাস স্প্রট ছবিটি তুলেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার স্যানজস থেকে।
১২) গোপন কাজ করার সময় ধরা
ভাল্লুক দু’টির গোপনীয়তা একদম নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়ে ছবিটি রোমানিয়া থেকে তুলেছেন আলোকচিত্রী বেন্স মেট।
১৩) হোয়াট’স আপ ডক?
সবার প্রিয় অতিপরিচিত কার্টুন বাগস বানির মতো দেখতে এই বুনো খরগোশটির ছবি তুলেছেন আলোকচিত্রী অলিভার কলি বেলজিয়াম থেকে।
১৪) এসব কী!
বন্ধুর কাজকর্মে একদম বিস্মিতই হয়ে গেছে এই সিল মাছটা! বিস্মিত সিল মাছ এবং তার বন্ধুর এই ছবিটি তোলা হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে। ছবিটি তুলেছেন আলোকচিত্রী জর্জ ক্যাচকার্ট।
১৫) কুংফু ট্রেইনিং
এবার কুংফু মাস্টার হবে ক্যাঙ্গারুও! সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে কুংফু ট্রেইনিংয়ে মগ্ন এই ক্যাঙ্গারুকে পাওয়া গেল অস্ট্রেলিয়ায়। ছবিটি তুলেছেন আলোকচিত্রী অ্যান্ড্রি গিলজভ।
১৬) হাস্যরত সিলমাছ
কী দেখে যে সিলমাছটা এমন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলো, তা মনে হয় সিল মাছটা আর আলোকচিত্রী ব্র্যিয়ান ভ্যালেন্টিই ভালো জানেন। ছবিটি তিনি তুলেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়াগো থেকে।
১৭) বাইরে থেকে সিটবেল্ট চেক
আজকালকার মানুষেরা যা অসাবধান! তাই তো জিরাফটা বাইরে থেকে চেক করে নিলো প্লেনের সবাই ঠিকমতো সিটবেল্ট বেঁধেছে কিনা! সাবধানী আর সতর্ক এই জিরাফটির ছবি কেনিয়ার মাসাই মারা থেকে তুলেছেন আলোকচিত্রী গ্রেইমি গাই।
১৮) বিভ্রান্ত ক্যাটারপিলার
“এক্সকিউজ মি, দয়া করে কি একটু বলতে পারবেন, আমাকে কোনদিকে যেতে হবে?” বিভ্রান্ত এই ক্যাটারপিলারটির সাথে আলোকচিত্রী অ্যাস্টার লিউং এর দেখা হয়েছিলো চীনের হংকংয়ে।
১৯) একেই বলে ভাব নেয়া!
আলোকচিত্রীকে দেখেই কিছুটা ভাবই নিয়ে নিলো বানরটা! এই বানরটিকে পাওয়া যাবে জাপানের নিয়ার নেকাও পার্কে। ছবিটি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী লিন্ডা অলিভার।
২০) হাঙরের হাসি
আমারও দাঁত আছে এবং আমিও হাসতে পারি! আলোকচিত্রীকে মনে হয় এ কথাই বলছিলো বাচ্চা হাঙরটা। ছবিটি আলোকচিত্রী এগুইন কিটসইস তুলেছেন বাহামাসের বিমিনি থেকে।
ফিচার ইমেজ © Daisy Gilardini/CWPA/Barcroft Images