Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কুকুরের ফোবিয়া: যেসব কারণে ভয় পায় কুকুর

‘ফোবিয়া’ বা ভীতি কী? সহজ ভাষায় ভীতি বলতে যা বোঝায়, ফোবিয়া তা নয়। ফোবিয়া বলতে উচ্চমাত্রার দুশ্চিন্তা বা একধরনের ডিজঅর্ডার বোঝায় যা কোনো বিশেষ বস্তু, ব্যক্তি কিংবা ঘটনার সম্মুখীন হলেই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। মানুষের নানা রকমের ফোবিয়া হতে পারে যেগুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চলছে। পাশাপাশি মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা তো আছেই। কিন্তু আপনার পোষা কুকুরটিরও যে বিভিন্ন বিষয়ে ফোবিয়া থাকতে পারে, তা ভেবে দেখেছেন কি?

হ্যাঁ, জিনগত সমস্যা, যথাযথ পরিচর্যা এবং পর্যাপ্ত সামাজিকীকরণের অভাব কিংবা পরিস্থিতির শিকার হয়ে কুকুরের মাঝেও সৃষ্টি হতে পারে নানা রকম ফোবিয়া। আর এই ফোবিয়া শনাক্ত করার জন্য আপনাকে প্রাণী বিশেষজ্ঞ হতে হবে না। কিছু লক্ষণ যেমন অযথা ঘেউ ঘেউ করা, সারাক্ষণ কম্পমান থাকা, গুটিসুটি হয়ে থাকা, আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা, বিভিন্ন বস্তু কামড়ে নষ্ট করা ইত্যাদি দেখেই বুঝতে পারবেন আপনার কুকুরটি ফোবিয়াতে আক্রান্ত কিনা। পশুপ্রেমীদের জন্য এটি অবশ্যই চিন্তার বিষয়। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কুকুরের ১০টি সাধারণ ফোবিয়ার কথা।

১) অ্যাস্ট্রাফোবিয়া

বজ্রপাতে ভয় পায় কুকুর; image source: sciencealert.com

অ্যাস্ট্রাফোবিয়া হচ্ছে বজ্রপাতের শব্দে ভয় পাওয়া। কুকুরের সবচেয়ে সাধারণ ফোবিয়া এটি। অধিকাংশ কুকুরই অ্যাস্ট্রাফোবিয়াতে অল্পবিস্তর ভুগে থাকে। তবে ভয় পাবার মাত্রা কুকুরভেদে ভিন্ন হয়। সাধারণত বজ্রপাতের পূর্বেই কুকুর বুঝতে পারে কিছু একটা হতে চলেছে এবং যথাসম্ভব নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করে। বজ্রপাতের সময় দেখা যায় অনেক কুকুরের কানগুলো অনেকটা চ্যাপ্টানো আর লেজ একেবারে গুটি পাকিয়ে থাকে। এরকম দেখলে বুঝতে হবে কুকুরটির অ্যাস্ট্রাফোবিয়ার খুবই হালকা পর্যায়ে আছে। কিন্তু অনেক কুকুরই বজ্রপাতের সময় আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে, যাকে সামনে পায় তাকে কামড় দেয়ার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে বুঝতে হবে কুকুরটির অ্যাস্ট্রাফোবিয়া গুরুতর পর্যায়ের। কখনোবা ভয়ের মাত্রা বেশি হলে কুকুরের পাকস্থলীতে গণ্ডগোল বাঁধে এবং বমি হয়। এই ফোবিয়া কাটানোর সবচেয়ে ভালো উপায় গান। বজ্রপাত শুরুর পূর্বে কিংবা শুরু হলে কুকুরকে গান শোনালে অ্যাস্ট্রাফোবিয়ার ভয় অনেকটাই প্রশমিত হয়ে আসে।

২) আতশবাজি ফোবিয়া

উচ্চশব্দের আতশবাজি ভয় পাইয়ে দেয় কুকুরকে; image source: cowes.info

বজ্রপাতের মতো আতশবাজি ভয় পাওয়াটাও কুকুরের একটি স্বাভাবিক ফোবিয়া। তবে ভয়ের মাত্রাটা বেশি হলেই সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, উজ্জ্বল আলো দেখে নয়, বরং আতশবাজির প্রচণ্ড শব্দই কুকুরকে বেশি বিব্রত করে। তবে অনেক কুকুরই ধীরে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। আবার অনেকে নিজের কুকুরকে অভ্যাস করিয়ে নেন। সেক্ষেত্রে প্রথমে কম আওয়াজের ছোট আতশবাজি দেখিয়ে শুরু করা যেতে পারে। তবে যেসব কুকুরের ক্ষেত্রে সমস্যাটা প্রকট সেগুলোর জন্য ‘অ্যান্টি অ্যাংজাইটি’ ওষুধ বা সিডেটিভ প্রয়োগ করা বাঞ্ছনীয়।

৩) সেপারেশন ফোবিয়া

প্রভুর বাড়ি ত্যাগের সময় একাকীত্বে ভোগে কুকুর; image source: lovethatpet.com.au

উন্নত দেশের পোষা কুকুরের মধ্যে এই ফোবিয়া বেশি দেখা যায়। সেপারেশন ফোবিয়া বলতে কুকুরের একাকীত্বে ভোগার ভয়কে বোঝায়। সহজ ভাষায়, একটি কুকুর যখন মনে করে যে তার প্রভু তাকে পরিত্যাগ করবে, তখন সে এরূপ ফোবিয়ায় ভোগে। অফিসগামী মানুষের পোষা কুকুরগুলো এরূপ পরিত্যাজ্য হবার ফোবিয়ায় ভোগে। সাধারণত কুকুর যখন এর মালিককে বাড়ি থেকে বের হতে দেখে, তখন একে সেপারেশন ফোবিয়া পেয়ে বসে। আর তখন শত বারণ সত্ত্বেও সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে চায় এবং মালিকের পিছু নিতে চায়। এরূপ ফোবিয়ায় ভুগতে থাকা কুকুরকে বাড়িতে একা রেখে গেলে দিনকে দিন এর ফোবিয়া প্রকট আকার ধারণ করতে থাকে। এরা একাকী বাড়িতে সারাক্ষণ ঘেউ ঘেউ করে এবং বিভিন্ন আসবাবপত্রের ক্ষতিসাধন করে। সেপারেশন ফোবিয়া থেকে খুব সহজেই কুকুরকে মুক্ত করা যেতে পারে। বাড়ি থেকে বের হওয়া এবং বাড়িতে ফেরার সময় যথাসম্ভব নিঃশব্দে কাজ সারতে হবে, যেন কুকুরটির কাছে কোনোভাবেই এমন মনে না হয় যে তার মালিক অনেক সময়ের জন্য চলে যাচ্ছে তাকে ছেড়ে।

৪) হাসপাতালের ভয়

প্রথমবার টিকাদানের সময় ভয় পায় কুকুর; image source: hunde.de

কুকুরকে সুস্থ রাখতে নিয়ম মাফিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান অনেকেই। আর এখানেও জন্ম হয় আরেক প্রকার ফোবিয়ার। এই ফোবিয়ায় ভোগা কুকুর বাড়ি থেকে বেরুতেই চাইবে না। আপনার উদ্দেশ্য বেড়াতে যাওয়া হলেও সে ভাববে আপনি তাকে কোনো পশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন নিশ্চয়ই! এই ফোবিয়া সহজেই এড়ানো যেতে পারে খানিকটা সাবধানতা অবলম্বন করে। যখন কোনো কুকুরকে প্রথমবারের মতো পশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন এমনিতে হাসপাতালের অপরিচিত গন্ধ এবং নতুন যন্ত্রপাতি দেখে সে ভীত হয়ে পড়ে। সবশেষ ইনজেকশন দেয়ার সময় ভয়ের মাত্রা চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়। ফলে পরবর্তীতে বাড়ির বাইরে নিয়ে যেতে চাইলেই সে ভীতিকর সেই স্মৃতি স্মরণ করে। তাই মনোবিজ্ঞানীদের পরামর্শ এই যে, কুকুরটিকে প্রথমে কয়েকবার এমনিতেই পশু হাসপাতালে ঘুরিয়ে আনতে হবে যেন সেটি সেই পরিবেশকে সহজ করে নিতে পারে। পরে একদিন ইনজেকশন প্রয়োগ করলেও আর সমস্যা নেই।

৫) গাড়িতে চড়ার ভীতি

ধীরে ধীরে অভ্যাস করালে গাড়ি চড়ার ভয় কেটে যায় কুকুরের; image source: hun.is

এক মাসের জন্য চলে যাচ্ছেন কোথাও বেড়াতে। এমন অবস্থায় আপনার প্রিয় পোষা কুকুরটিকে সাথে নিয়ে যাবেন সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি কোনো কারণে কুকুরটি আপনার সাথে গাড়িতে উঠতে আপত্তি জানায় তখন? শুধু আপত্তি নয়, আপনি জোর করে গাড়িতে তুললে সে আপনাকে কামড়ও বসিয়ে দিতে পারে! এর কারণ গাড়িতে চড়ার ফোবিয়া। আর সে ফোবিয়া সৃষ্টির পেছনে কোনো না কোনোভাবে আপনিই দায়ী। কীভাবে? কুকুরের প্রথম গাড়ি চড়ার অভিজ্ঞতা যদি ভালো না হয়, সেটি এর মনে দাগ কেটে যায় এবং ফোবিয়ার সৃষ্টি করে। যেমন ধরুন, কুকুরের প্রথম গাড়ি চড়ার অভিজ্ঞতা যদি হয় কোনো দুর্গম উঁচু নিচু রাস্তায় ভ্রমণ, ছোটোখাট দুর্ঘটনা কিংবা পশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, তাহলে সে আর দ্বিতীয়বার গাড়িতে উঠতে চাইবে না। এক্ষেত্রে কুকুরের গাড়ি চড়ার ভীতি সহজেই দূর করা যায় কয়েকটি আনন্দভ্রমণের মাধ্যমে।

৬) স্টেয়ার ফোবিয়া

সিঁড়ি দিয়ে নামতে ভয় পায় কুকুর; image source: 3milliondogs.com

স্টেয়ার ফোবিয়া বা সিঁড়িতে ওঠানামা করার ভয় সাধারণত যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে হয়ে থাকে। কুকুর শিশু অবস্থায় সিঁড়িতে চলাফেরার সাথে পরিচিত না হলে বড় হয়ে সে ফোবিয়াতে ভোগে। একটি কুকুর হাঁটতে হাঁটতে সিঁড়ির কাছে গিয়ে থেমে গেলে এবং ইতস্তত করতে থাকলে ধরে নিতে হবে সে সিঁড়িতে উঠতে বা নামতে ভয় পাচ্ছে। এক্ষেত্রে অজ্ঞাতসারে জোর করে একে সিঁড়িতে উঠিয়ে দিলে অনেক সময় ভয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে ব্যথা পায়। আমেরিকায় পশু হাসপাতালে পায়ের ব্যথায় ভর্তি হওয়া অধিকাংশ কুকুরই সিঁড়ি থেকে পড়ে জখম হয়। প্রথমেই বড় সিঁড়িতে না নিয়ে ছোট ছোট সিঁড়িতে ওঠানামার অভ্যাস করিয়ে এই ভয় কাটানো যেতে পারে।

৭) মেনজ ফোবিয়া

পুরুষদের ভয় পায় কুকুর; image source: thesprucepets.com

একটি কুকুর যখন সবচেয়ে বেশি ভয় পায়, তখন সে সবচেয়ে বেশি আগ্রাসী থাকে। তাই মেনজ ফোবিয়া সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অনেক পুরুষই প্রতি বছর ভীত কুকুরকে আদর করতে গিয়ে কামড় খান! হ্যাঁ, কুকুর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীদের চেয়ে পুরুষদের বেশি ভয় পায়। তবে কিছু কুকুর পরিস্থিতির শিকার হয়ে যেকোনো পুরুষকেই বিপদ মনে করে। আর এরূপ ফোবিয়া যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। কুকুরকে নানাভাবে বিরক্ত না করে বন্ধুসুলভ আচরণ করলেই এই ফোবিয়া ধীরে ধীরে কেটে যায়।

৮) অপরিচিতি ভীতি

অপরিচিত মানুষের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে ফোবিয়ায় ভোগা কুকুর; image source: wikihow.com

অপরিচিত মানুষ দেখলে কুকুর খানিকটা গর্জে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। কুকুরের এই আচরণ বরং বাড়িঘরে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে। কিন্তু আচরণ যখন উল্টো হবে, তখন বুঝতে হবে সেটি ফোবিয়াতে ভুগছে। অপরিচিত মানুষকে ভয় পাওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায় অনেক কুকুরের মাঝেই। আর কুকুরের এ সমস্যাটি একটি জটিল সমস্যা। কারণ, বাড়িতে আগত প্রতিটি নতুন মানুষের সাথে একে পরিচয় করিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। স্বাভাবিক অবস্থায় একটি কুকুর যেখানে অপরিচিত লোকজন দেখে ঘেউ ঘেউ করলেও সহজে আক্রমণ করে না, বরং প্রভুর আগমন পর্যন্ত অপেক্ষা করে। কিন্তু ফোবিয়াতে ভোগা একটি কুকুর অপরিচিত মানুষ দেখলেই বিপদের গন্ধ পায় এবং ভয় পেয়ে আক্রমণ করে বসে। এরূপ ফোবিয়ায় ভোগা কুকুরকে কিছুদিন বেঁধে রাখলে এর ফোবিয়া কেটে যায়।

৯) শিশু ভীতি

শিশুদের ভয় পায় কুকুর; image source: lovepets.com

শিশুদের ভয় পাওয়া কুকুরের জন্য একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কারণ, একটি গৃহপালিত কুকুরকে যা শেখানো হয় সে তা-ই শেখে এবং যে পরিবেশে বড় হয়, তার সাথেই বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। এভাবে একটি নির্দিষ্ট সময় পর সে নতুন কিছু সহজেই গ্রহণ করে নিতে পারে না। শিশুদের ব্যাপারটিও তেমন। হঠাৎ করে প্রভুর সংসারে নতুন সদস্যের আগমন সে সহজভাবে নিতে পারে না। তাছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে বড় হওয়া একটি কুকুর আকার আকৃতিতে বেশ ছোট এবং অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গিমা করা একটি শিশুকে এমনিতেই ভয় পায়। অনেকসময় শিশুর আদরকেও সে নিজের জন্য হুমকি মনে করে। তাই, বাড়িতে পোষা কুকুর থাকলে কোনো শিশুকে প্রথমেই এর সাহচার্যে ছেড়ে দেয়া উচিৎ নয়। কেননা তাতে কুকুরটির আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। ধীরে ধীরে অভ্যাস করিয়ে নিলে কুকুরের এই ভয় কেটে যায়।

১০) যন্ত্রপাতির ভয়

ভ্যাকুয়াম ক্লিনারে ভয় পেয়ে পালাচ্ছে কুকুরটি; image source: cuteness.com

যন্ত্রপাতির উপর কুকুরের ভয় জন্মানোটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার কিংবা ট্রেডমিলের মতো যন্ত্রপাতির উপর নানা কারণেই কুকুরের ফোবিয়া সৃষ্টি হয়। এর কারণ এসব যন্ত্রের অদ্ভুত শব্দ এবং কার্যকরণ। কুকুরের এরকম ফোবিয়া স্বাভাবিক হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা বিপদজনক হতে পারে। কোনোরূপ দুর্ঘটনা ঘটবার আগেই এই ফোবিয়া কাটানো উচিৎ। সেটা হতে পারে পরিচর্যার মাধ্যমে কিংবা ডগ ট্রেনার এর সাহায্যে। তবে বাসায় যেকোনো নতুন যন্ত্র আনলে প্রথমেই তা চালু না করে কুকুরকে মানিয়ে নেয়ার সময় দিলে এই ফোবিয়া সহজেই কেটে যায়।

ফিচার ছবি: wallvie.com

Related Articles