সাধারণ জনগণের মতে পৃথিবীতে দুই দল কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ বাস করে। একদল অনেক বেশি জানা অ্যাকাডেমিক গুরু, যাদের কাজ হচ্ছে ০ আর ১ নিয়ে। অপর দল হচ্ছে হ্যাকার। পৃথিবীতে আবার দু’ধরনের হ্যাকার রয়েছে। একদল হচ্ছে লোভী হ্যাকার, যারা আরেকজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে হানা দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার মতো জঘন্য কাজগুলো করে থাকে। অপর দলকে সমাজে বীর হিসেবে দেখা হয়, তারা দুর্নীতির মতো অপকর্মগুলোকে ফাঁস করে দেয়। তবে তাদের মধ্যে বিশেষ মিল হচ্ছে, তারা উভয়েই বেশ দক্ষ, বুদ্ধিমান এবং তাদের পুরো জীবনটাই উত্তেজনাপূর্ণ।
তবে হ্যাঁ, পৃথিবীতে কম হ্যাকারই তাদের হ্যাকিং ক্যারিয়ার পরিপূর্ণ উত্তেজনার সাথে কাটাতে পেরেছে। এই কম সংখ্যক হ্যাকারদের মধ্যে সবচাইতে আলোচিত হচ্ছেন কেভিন মিটনিক’। তো আসুন, এই কুখ্যাত-বিখ্যাত এই হ্যাকারের ব্যক্তিগত ইতিহাসে ডুব দিয়ে আসা যাক।
ম্যাজিক এবং ম্যানিপুলেশনের উপর আগ্রহ
১৯৬৩ সালের ৬ আগস্ট জন্ম নেয়া এই হ্যাকারের বেড়ে ওঠা আর পাঁচটি শিশুর মতো স্বাভাবিক ছিল না। কাজের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ানো এবং বারবার বাজে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া মা শেলি মিটনিকের সাথে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ভবঘুরে জীবন কাটাতো সে। এ কারণে আশেপাশে তেমন কোনো বন্ধুবান্ধব ছিল না তার। মায়ের ছেলে বন্ধুরা তার সাথে খারাপ আচরণ করতো, গালিগালাজ করে বেড়াতো। এ কারণেই সম্ভবত বেশ অল্প বয়স থেকেই তার মধ্যে কর্তাব্যক্তি বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছিল।
এত বাধা আর সীমাবদ্ধতার মধ্যেও মিটনিক সবসময়ই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতো। আর খেলাধুলায় সে ছিল বেশ পারদর্শী। যদিও তার পুরো কল্পনা জুড়েই ছিল একটিমাত্র জিনিস- ম্যাজিক।
তার বয়স যখন দশ, এক প্রতিবেশী তাকে একটি ম্যাজিক ট্রিক দেখায়। তখন থেকেই তার ম্যাজিকের প্রেমে পড়া। বলা যায়, প্রথম দেখাতেই প্রেম! ছলচাতুরিপূর্ণ এই শিল্পে সে এতটাই আবিষ্ট হয়ে যায় যে, সারাদিন এসব নিয়েই পড়ে থাকতো। দর্শকদের চোখে ধোঁকা দেয়ার বিভিন্ন কৌশল উদঘাটন করার কাজে প্রায় পুরোটা সময়ই ব্যয় করতো।
মিটনিকের বয়স যখন তের, তাকে অধিকাংশ সময়ই স্থানীয় বুক স্টোরগুলোতে পাওয়া যেত। দেখা যেত, ‘দ্য বিগ ব্রাদার গেইম’ নামের একটি বই গোগ্রাসে গিলছে। বইটিতে ধাপে ধাপে দেখানো হয়েছিল, কীভাবে আরেকজনের সম্পত্তির দলিল, ড্রাইভিং হিস্টোরি, এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যগুলোতে প্রবেশাধিকার নেওয়া যায়। বইয়ে দেখানো পদ্ধতিগুলো মিটনিককে আরো বেশি কুশলী করে তোলে। সেগুলো তাকে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দুনিয়ার আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। সে এ ব্যাপারে বেশ আগ্রহী ছিল, কেননা সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে এমন একটি নিখুঁত শিল্প, যার মাধ্যমে বেশ সহজেই যে কাউকে বোকা বানিয়ে নিজের বশে আনা যায় এবং ইচ্ছেমতো কাজ করিয়ে নেওয়া যায়।
তার বয়স সতেরো পেরোবার আগেই এই শিল্পে এত বেশি দক্ষ হয়ে উঠেছিল যে চাইলেই ফোনের অপর প্রান্তে থাকা মানুষটির কাছ থেকে গোপন নথি, ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারতো। হোক সে তার বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক কিংবা এমন ব্যক্তি যার সাথে আগে কখনো তার দেখা হয়নি। শুনতে অসম্ভব মনে হলেও, অধিকাংশ সময়ই তার কৌশলগুলো কাজ করতো!
হ্যাকিং জীবনের শুরু
সময়টা ছিল প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ার। মানুষ বড় বড় ফাইল বাদ দিয়ে ডিজিটাল স্টোরেজে তথ্য রাখা শুরু করছিল। কিন্তু তারা ডিজিটাল সিকিউরিটির ব্যাপারে তেমন ওয়াকিবহাল ছিল না। তাই মিটনিকের জন্য ঐ সময়টা ছিল ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে নিজের কর্মদক্ষতা দেখানোর যথাযথ সময়। কিন্তু সে প্রথমেই কম্পিউটারাইজড সিস্টেমের দিকে না ঝুঁকে একটিমাত্র ফোনকল ব্যবহার করে কতদূর যেতে পারে তা দেখতে চাইলো।
একদিন সে ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অফ মোটর ভেহিকেলসে টেলিফোন করে নিজেকে একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে পরিচয় দেয় এবং নির্দিষ্ট একটি গাড়ির তথ্য জানতে চায়। স্বাভাবিকভাবেই অফিসের কেরানি তার কাছে ‘রিকোয়েস্টার কোড’ জানতে চায়, যা একপ্রকার নির্দিষ্ট পরিভাষা যেটি ডিএমভি থেকে তথ্য নেয়ার জন্য তার প্রয়োজন ছিল। তখন মিটনিক ডিএমভির প্রতিনিধি হয়ে স্থানীয় থানায় ফোন করে এবং একটি কোড বানিয়ে একজন নির্দিষ্ট পুলিশ অফিসারের রিকোয়েস্টার কোড কিনা তা নিশ্চিত হতে চায়। মূল কোডের সাথে মিটনিকের কোডের প্রায় মিল থাকায় পুলিশ স্টেশন থেকে মিটনিকের ভুল সংশোধন করার অভিপ্রায়ে আসল কোডটি বলে দেয়। যা ব্যবহার করে পরবর্তীতে ডিএমভিকে ফোন করে ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত যেকোনো গাড়ির তথ্য, নাম্বার প্লেট, মালিকের নাম সহজেই জেনে নিতে পারতো।
প্রশাসনের নজরে আসা
কেভিন একটি গবেষণা কেন্দ্রের ফোনি কম্পিউটার সিস্টেমের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে, যেখানে তার বন্ধু মিকাহ’র বাবা কাজ করতো। সে মিকাহ’র বাবার অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করে একটি নকল সিকিউরিটি সিস্টেম বাইপাস করাতো মূল সিস্টেমে, যেটি তাকে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করার সুযোগ দিতো।
সবকিছু ঠিকমতোই চলছিল। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল যখন তার বন্ধু মিকাহ এই সিকিউরিটি সিস্টেমে প্রবেশ করে, কিন্তু বের হওয়ার সময় নিজের ট্রেস না মুছেই চলে আসে। ব্যাপারটি সিস্টেমের নিরাপত্তাকর্মীদের নজরে আসার সাথে সাথে তারা এফবিআইকে জানায়। এফবিআই প্রথমে মিকাহ’র বাবাকে সন্দেহ করে, কেননা প্রবেশকারী আইপি এড্রেস তার বাবার কম্পিউটারের ছিল। বাবা যখন মিকাহ’র কাছে এ ব্যাপারে জানতে চায়, তখন সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কেভিনকে দায়ী করে।
তবে ঐ যাত্রায় মিটনিক বেঁচে যায়। কেননা তখন তার বয়স ছিল আঠারোর কম, আর তখনো কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের কোনো আইন চালু হয়নি। যদিও এফবিআই তাকে এ ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক করে যায়, কিন্তু গভীর আসক্তি তো এতো তাড়াতাড়ি শেষ হওয়ার নয়!
প্রথম শাস্তি
কেভিন সবসময় দেখার চেষ্টা করতো একটি ফোনকল আর মডেম ব্যবহার করে কতদূর পর্যন্ত যাওয়া যায়। কিন্তু তার কখনো আর্থিক বা ব্যক্তিগত লাভের লোভ ছিল না। কিন্তু তবুও একটি ঘটনার পর সে শাস্তি থেকে রেহাই পায়নি।
একদিন মিটনিকের মাথায় ইউএস লিজিং (US Leasing) এর মতো বিশাল একটি কোম্পানির সিস্টেম হ্যাক করার চিন্তা আসে। এবার সে নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে কোম্পানির কর্মকর্তাদের জানালো যে তাদের সিস্টেমে একটি বাগ আছে, যা পুরো সিস্টেমের তথ্যগুলো নষ্ট করে দিতে পারে। তখনকার সময় কোম্পানির কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট করে এডমিন অ্যাকাউন্টের প্রবেশাধিকার পাওয়ার জন্য এতোটুকুই যথেষ্ট ছিল। কোম্পানি তাকে বাগ ফিক্স করার জন্য সিস্টেমের অ্যাডমিন অ্যাকাউন্টের আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে দেয়। পুরো কাজটি ভালোভাবে করার জন্য সে তার হ্যাকার বন্ধু ল্যুইসকে (Lewis de Payne) এই কাজে সাহায্য করার জন্য নিয়োগ করেছিল।
সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল, কিন্তু ঝামেলা দেখা দিল যখন ল্যুইসের সাথে তার প্রেমিকা সুজান হ্যাডলির ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। দুর্ভাগ্যবশত, সুজানও ছিল বেশ ভালো হ্যাকার। সে সময় ‘সুজি হ্যাডলি’ নামে হ্যাকার কমিউনিটিতে বেশ পরিচিত ছিল সে। ছাড়াছাড়ির আগে মিটনিকের কার্যক্রম সম্পর্কে ল্যুইসের কাছ থেকে জানতে পারে এবং কোম্পানির ব্যাপারে ল্যুইসের কাছে থাকা বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ করে রেখে দেয়। পরবর্তীতে তথ্যগুলো ব্যবহার করে ঐ কোম্পানির সিস্টেম হ্যাক করে এবং প্রত্যেকটি প্রিন্টার মেশিনে মিটনিকের নাম লেখা কাগজ ছাপিয়ে দেয়।
এছাড়াও সুজান জানতে পারে মিটনিক এবং লিউইস মিলে একটি স্থানীয় ফোন কোম্পানির সিস্টেম হ্যাক করে কর্মচারীদের তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। সে সাথে সাথে স্থানীয় পুলিশকে এ ব্যাপারে জানায় এবং মিটনিককে ধরিয়ে দেয়।
এবারো আঠারো বছর না হওয়ায় তাকে মাত্র ৯০ দিনের জন্য কিশোর অপরাধী হিসেবে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়। যদিও সে সময় আদালতের বিচারক কী কারণে মিটনিককে এই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। কেননা হ্যাকিং, ক্র্যাকিংয়ের মতো ব্যাপারগুলো তখনো তেমনভাবে চিন্তা করার বিষয় ছিল না।
আইটি কোম্পানিতে যোগদান
ঐ ঘটনার পর চারদিকে মিটনিকের কুখ্যাতির কথা ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে আইটি কোম্পানিগুলোর ভূরিভোজ বা আড্ডায় তাকে নিয়ে বেশ আলোচনা হতো। ‘লা টাইমস’ নামের একটি পত্রিকা তার অপরাধ কর্মকাণ্ডের কথা বেশ গুরুত্বের সাথে রিপোর্ট করেছিল। যদিও এগুলোর কোনোটাই সমস্যা ছিল না, কিন্তু প্রথম দিকে অনেক কোম্পানিই মনে করতো, একজন হ্যাকারকে চাকরি দিলে সে কোম্পানিতে বসেই তার দক্ষতা খারাপ কাজে ব্যবহার করবে। তাই তাকে কোনো কোম্পানিই চাকরি দিতে আগ্রহী ছিল না।
কিন্তু ভাগ্য তার সহায় ছিল। একটি কারিগরি স্কুলে ছ’মাস কম্পিউটিং কোর্স শেষ করার পর, স্কুলের রেফারেন্সেই জিটিই (GTE) নামের একটি টেলিফোন কোম্পানিতে ইন্টার্ন করার সুযোগ পায় মিটনিক। সেখানকার প্রতিনিধিরা তাকে তাদের সিস্টেম হ্যাক করে দুর্বলতাগুলো ধরিয়ে দেয়ার সাথে সাথে সিস্টেমের জন্য শক্তিশালী নিরাপদ ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য বলে। একজন হ্যাকারের জন্য এর চাইতে ভালো কাজ আর কী হতে পারে?
কিন্তু যখন সে ফোন কোম্পানিটির সংবেদনশীল তথ্যতে বারবার প্রবেশাধিকারের সুযোগ পেতে থাকে, জিটিই তাকে একটি নিরাপত্তা ফর্ম পূর্ণ করার জন্য বলে, যেখানে ঐ কোম্পানিতে স্থায়ীভাবে কাজ করার অফার দেওয়া হয়। কিন্তু মিটনিক বুঝতে পারে জিটিইতে তার সময় শেষ হয়ে আসছে। পরবর্তীতে মিটনিকের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে তারা তার আসল কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারে এবং মাত্র নয়দিনের মাথায় কোম্পানি থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
মিটনিক তার আগের জীবনে আবার ফিরে আসে।
১.৪ মিলিয়ন ডলারের জরিমানা, এরপর…!
মিটনিক বেশ ভালোভাবেই নতুন তৈরি হওয়া মেয়েবন্ধুর সাথে সম্পর্ক আর হ্যাকিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলো। অবৈধভাবে বড় কোনো কোম্পানিতে হানা না দিলেও সন্ধ্যার পরে অনেক সময় ধরে বিভিন্ন দুর্বল সিস্টেমে প্রবেশ করার মাধ্যমে নিজের দক্ষতাগুলো ঝালিয়ে নিতো। এমনই এক সন্ধ্যায় ‘সান্তা ক্রুজ অপারেশন (Santa cruz operation)’ নামের একটি সফটওয়্যার কোম্পানির সিস্টেম হ্যাক করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে সে। এবার ব্যাপারটা শুধু জেলে পাঠানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলো না। সান্তা ক্রুজ অপারেশন তার নামে মামলা করে। মামলায় রায়ে তাকে এবং তার বান্ধবীকে ১.৪ মিলিয়ন করে ২.৮ মিলিয়ন ডলারের জরিমানা করা হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায়, সান্তা ক্রুজ অপারেশন তার নামে মামলাটি করেছিল শুধুমাত্র তার উপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কীভাবে তাদের নেটওয়ার্কে সে হানা দিয়েছে সেটি জানার জন্য। মিটনিক এ ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করে এবং শুধুমাত্র তিন বছর প্রবেশন অ্যাক্টের আওতায় থাকার অভিপ্রায়ে জেল-জরিমানা থেকে মুক্তি পেয়েছিল।
এরিক হেইনজের আগমন
১৯৮৯ সাল, তিন বছরের প্রবেশন অ্যাক্টের আওতায় থাকতে থাকতে হ্যাকিং থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া কেভিন মিটনিক নতুন অনুপ্রেরণায় আবার মাঠে নামে। তার অনুপ্রেরণার নাম ছিল ‘এরিক হেইনজ’। এরিক ছিল তখনকার হ্যাকিং কমিউনিটিতে উল্লেখযোগ্যভাবে দক্ষ এবং সফল হ্যাকার। এক বন্ধুর কাছ থেকে এরিক সম্পর্কে জানার পরপরেই তার সাথে দেখা করার জন্য উঠেপড়ে লাগে মিটনিক। টানা কয়েকদিন চেষ্টার পরে তাদের দেখাও হয়ে যায়।
প্রথম দেখাতেই মিটনিক এরিকের ব্যাপারে বেশ আকর্ষণ অনুভব করে। নিজের কাজ সম্পর্কে তাকে জানায় এবং এরিকের সাথে কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। এরিক জানায়, তার কাছে পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় যেকোনো টেলিফোন সিস্টেমে প্রবেশ করার মতো কোড আছে। এমনকি ক্যালিফোর্নিয়ার সবরকমের ফোনকল শোনার মতো ক্ষমতা তার আছে। তবে কিছু কারণে এরিককে তার সন্দেহ হয়। প্রথমত, সে ছিল ভীতু প্রকৃতির। কিন্তু এরিক যে সমস্ত কাজ করছে বলে জানিয়েছে সেগুলো করতে বেশ সাহসের প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, আপাতদৃষ্টিতে এরিকের কোনো কাজ না থাকলেও তাকে বেশ বিত্তশালী মনে হয়েছে।
এই সন্দেহ দূর করার জন্য সাক্ষাৎ শেষে মিটনিক কিছু প্রচলিত পদ্ধতিতে তার ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তাকে খালি হাতে ফিরতে হয়। এরিক যেন হাওয়া থেকে এসে হাওয়াতে মিলিয়ে যাওয়া একজন। এরিকের এই গভীর রহস্যময়তা মিটনিককে তার ব্যাপারে আরো আগ্রহী করে তুলে। পরবর্তীতে আরো কিছু তদন্তের পর মিটনিকের বিশ্বাস হতে শুরু করে, এরিক আসলে কোন হ্যাকার নয়। এমনকি একসময় মিটনিক এরিকের ফোনে আঁড়িপাতাও শুরু করে এবং তার পূর্বের ধারণার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়। কিন্তু ততদিনে বেশ দেরি হয়ে গেছে।
হ্যাকার হিসেবে পরিচয় দেওয়া এরিক ছিল এক এফবিআই এজেন্ট, যে কিনা আরেক এজেন্টের সাথে একত্রিত হয়ে মিটনিককে ফাঁদে ফেলে জেলে পাঠানোর পরিকল্পনায় করছিল। তারা চাইছিল মিটনিক যেন ঐ এজেন্টের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে তার ফোনে আঁড়ি পাতে। তাদের ধারণা ছিল মিটনিক আড়িপাতার কাজটি বেশ ভালোভাবেই করতে পারে। তাদের ধারণাও সঠিক ছিল। মিটনিক ফাঁদে পা দেয়, এরিকের ফোনে আড়ি পাতে। সেই সুযোগে এফবিআই তার নামে সার্চ ওয়ারেন্ট বের করে।
কিন্তু ভাগ্যক্রমে এফবিআইয়ের কাছে মিটনিকের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ ছিল না। এই সুযোগ মিটনিককে তাদের থেকে এগিয়ে রাখে। সে তাদের পাতা সম্ভাব্য ফাঁদগুলো বেশ সচেতনতার সাথে এড়িয়ে চলে। মিটনিক জানতো এফবিআই বিভিন্ন দিক থেকে তার উপর নজর রাখছে। তাই তাকে ফাঁদে ফেলতে পারে এমন সব জিনিস অ্যাপার্টমেন্ট থেকে সরিয়ে ফেলেছিল। একদিন এফবিআই সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে মিটনিকের অ্যাপার্টমেন্টে আসে এবং খালি হাতে ফিরে যায়। তবে তারা মিটনিককে কারাগারে পাঠাতে এত বেশি উতলা হয়ে ওঠে যে, ঐ ঘটনার পরেও তাকে ধরার নতুন সুযোগ খোঁজে।
এরিক ওয়েইস, মিটনিকের নতুন পরিচয়
কয়েক মাস পরেই মিটনিক তিন বছরের প্রবেশন শেষ করে বেরিয়ে আসে এবং স্বাধীনভাবে চলাচলের সুযোগ পায়। কিন্তু তা ছিল ক্ষণিকের জন্য। এর মাত্র তিনদিনের মাথায় এফবিআই ওয়ারেন্ট ইস্যু নিয়ে মিটনিকের মায়ের বাসায় যায়, যেখানে দু’দিনের জন্য মিটনিক অবস্থান করেছিল।
সে বুঝে গিয়েছিল, কারাগার থেকে বাঁচার জন্য অবশ্যই তাকে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পালাতে হবে। নতুন কোনো পরিচয় নিয়ে এফবিআইয়ের হাতের নাগালের বাইরে থাকতে হবে। যে-ই ভাবা, সেই কাজ। স্বপ্ন আর প্রতারণার শহর বলে খ্যাত লাস ভেগাসে পাড়ি জমায় মিটনিক। সেখানে তার সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে জন্ম নিবন্ধনের সার্টিফিকেট এবং সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার যোগাড় করে। তখন থেকে সে হয়ে উঠে ‘এরিক ওয়েইস’। নামটি ছিল তার গুরু, বিখ্যাত ম্যাজিশিয়ান হ্যারি হুডিনির।
পরিচয় পাল্টালেও মিটনিকের টাকাপয়সা সব তার আসল নামেই ছিল। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় যখন জিমের লকারে রাখা ১১ হাজার ডলার চুরি হয়ে যায়। তখন তার একটি চাকরির প্রয়োজন হয়। পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দেখে ডেনভারে পাড়ি জমায় এবং রবার্ট অ্যান্ড ওয়েন নামের একটি ল’ ফার্মে চাকরির জন্য আবেদন করে।
ইন্টার্ভিউতে সে ভালোই করে। কিন্তু চাকরি পাওয়ার জন্য তার প্রয়োজন ছিল একটি রিজিউম এবং আগের কোম্পানির রেফারেন্স। অবশ্য এগুলো তৈরি করতে তার কোনো সমস্যাই ছিল না। সে দক্ষ হাতেই তার রিজিউম তৈরি করে। রিজিউমে উল্লিখিত কোম্পানির নামে একটি নকল ফোন বুথ তৈরি করে। যখন তথ্য যাচাই বাছাইয়ের জন্য ফোন করা হয়, তখন মিটনিকই ফোন ধরে ঐ ফার্মকে জানায় যে, রবার্ট এন্ড ওয়েনে আবেদন করা ছেলেটি তাদের ফার্মেই কাজ করতো। এভাবেই সে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে সেখানে চাকরি পেয়ে যায়। কিন্তু হ্যাকিং থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখেনি।
নোকিয়া, মটোরোলা ও এনইসির সিস্টেমে অবৈধ প্রবেশ
নব্বই দশকের প্রথম থেকে মোবাইল ফোন প্রযুক্তি বেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছিল। মিটনিকের আগ্রহ ছিল ফোনগুলোতে ব্যবহৃত সোর্স কোডের ব্যাপারে। ঐ সময় নোকিয়া, মটোরোলা এবং এনইসি ছিল সবচাইতে জনপ্রিয় মোবাইল ফোন কোম্পানি। তাই মিটনিকের হিট লিস্টে এরাই ছিল সবার প্রথমে।
নোকিয়া ও মটোরোলা হ্যাকিং করতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। তাদের সিস্টেমে ঢুকে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে নেয়ার পর খুব সহজেই ট্রেস ঢেকে রাখতে সক্ষম হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় এনইসির বেলায়। সিস্টেমে ঢুকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে কেউ অনুসরণ করার চেষ্টা করছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য যখন দ্বিতীয়বারের মতো পরীক্ষা করতে যায়, তখন সে এনইসির এডমিনের কাছে আসা একটি ই-মেইল ইন্টারসেপ্ট করার সুযোগ পায়। সেখানে বলা হয়েছে, কেউ একজন এনইসির সোর্সকোড লস অ্যাঞ্জেলসের কোনো একটি সার্ভারে অপসারণ করার চেষ্টা করছে। আর এ ব্যাপারে এফবিআই পুরোপুরি অবগত।
মিটনিক এতদিন এই ভয়টিই করে আসছিল। সে জানতো এফবিআই তার পিছু ছাড়বে না। সে বুঝে গিয়েছিল, এখন থেকে তাকে আরো বেশি সতর্ক হতে হবে।
আবারো আইনের আওতায়
মিটনিক তার নতুন জীবন বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করছিল। তবে তার ধারণাই ছিল না যে, অতি শীঘ্রই এই জীবনের ইতি ঘটবে।
সে দুপুরের খাবারের সময়টাতে ফোনে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করে কাটাত। আর এই ব্যাপারটাই ফার্ম কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তারা মনে করেছিল মিটনিক এই সময়টা কোম্পানির বাইরে অন্যান্য গ্রাহকদের টাকার বিনিময়ে পরামর্শ সেবা দেয়, যা ছিল ফার্মের নিয়ম বহির্ভূত। এই কারণে মিটনিক দ্বিতীয়বারের মতো চাকরি হারায়। সময়টা ছিল ১৯৯০, মিটনিকের বয়স তখন ৩০।
মিটনিক প্রথমে যা করেছিল তা-ই আবার করলো। ‘এরিক ওয়েইস’ থেকে নিজের পরিচয় ‘ব্রিয়ান মেরিল’-এ স্থানান্তর করলো। নতুন ঠিকানা হলো সিয়াটল।
কিন্তু সবসময় যা স্বাভাবিকভাবে ঘটতো, এবার হলো তার উল্টোটা। নিজের ক্লোন করা ফোনের ট্রেস গোপন করার যে পদ্ধতি সে আবিষ্কার করেছিল, সেটি সিয়াটলের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরে আসে। তারা এ ব্যাপারে এফবিআইয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
মিটনিক সবসময়ই তার পুরনো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করতো। কিন্তু সে জানতো না, তাদেরই একজন এফবিআইয়ের ইনফর্মার হিসেবে কাজ করছে। যখন সে তার এক পুরনো বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে, এফবিআই জেনে যায় ব্রিয়ান মেরিল আর কেউ নয়, তাদের পুরনো পলাতক আসামি কেভিন মিটনিক।
এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার পর মিটনিক সিয়াটল ছেড়ে নর্থ ক্যারোলিনার রালেগে পাড়ি জমায়। কিন্তু তার ধারণাও ছিল না যে, এফবিআই তার ক্লোন করা ফোন কলগুলোকে অনুসরণ করতে করতে রালেগে তার অ্যাপার্টমেন্টে হানা দেবে। বাস্তবে সেটিই ঘটলো।
মিটনিক জানতো, তার নতুন অ্যাপার্টমেন্টে এমন কিছু নেই যা এফবিআইয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। আর সে তার জাল পরিচয়পত্রের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। কিন্তু অ্যাপার্টমেন্ট সার্চ করার সময় এক এজেন্ট একটি পুরনো স্কি জ্যাকেট খুঁজে পায়, যার পকেটে মিটনিকের নামে অনেক আগের একটি পে স্লিপ ছিল। প্রায় তিন বছর পলাতক থাকার পর ১৯৯৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মিটনিক আবার আইনের আওতায় আসে।
‘ফ্রি কেভিন’ মুভমেন্ট ও অন্যান্য
আদালতে সব প্রমাণ মিটনিকের বিরুদ্ধে যায়। সে সর্বমোট ২৩টি ফোনকল জাল করে। প্রত্যেকটি ফোনকলের জন্য ২০ বছর করে প্রায় ৪৬০ বছরের জেল হয়। এছাড়াও সে প্রায় বিশ হাজার ক্রেডিট কার্ড জাল করার মাধ্যমে অধিগ্রহণ করেছিল, যেগুলো ব্যবহার করে সে বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করতে পারতো। তাছাড়া নোকিয়া, মটোরোলা ও এনইসির মতো কোম্পানিগুলো ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০০ মিলিয়ন ডলার দাবি করে। যদিও মিটনিক ক্রেডিট কার্ড ও সোর্স কোড বিক্রির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিগত লাভের চিন্তাও করেনি।
তার নামে কোনো সহিংস অপরাধের প্রমাণ না থাকলেও সে যেসব কাজ করেছিল, তার মাধ্যমে বিরাট বড় কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারতো, যা সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছিল। তাই আদালত অন্যান্য হ্যাকারদের মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়ার জন্য মিটনিকের বিচার উদাহরণ হিসেবে দেখাতে চেয়েছিল।
আদালত মিটনিককে তার বিরুদ্ধে পেশ করা প্রমাণগুলোর বিরুদ্ধে রিভিউ করার কোনো সুযোগ দেয়নি। এমনকি তাকে জামিনের আবেদন করার সুযোগও দেয়া হয়নি। এ ধরনের ঘটনা আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম ঘটে। মিটনিকের ডিফেন্স অ্যাটর্নি সহ আরো অনেকেই তার সাথে হওয়া অবিচারের নিন্দা জানায়। তারা আদালতের বাইরে ‘ফ্রি কেভিন’ আন্দোলনের প্রচারণা চালায়। স্থানীয় পত্রিকাগুলোও মিটনিকের পক্ষ নেয়।
এতে কাজ হয়। আদালত তার ব্যাপারে সদয় হয়। সব কিছু বিবেচনা করে মিটনিককে পাঁচ বছরের জেল দেওয়া হয়। জরিমানার পরিমাণ তিনশ’ মিলিয়ন থেকে কমিয়ে ৪,১২৫ ডলার করা হয়। তিন বছরের জন্য কোনোরকম ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস ব্যবহারের ব্যাপারে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস ও ইন্টারনেটের সাথে সম্পর্কহীন তিন বছর
মিটনিক তখন প্রবেশন অ্যাক্টের আওতায় ফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেটের সাথে সম্পর্কহীন তিন বছরের দীর্ঘ সময় কাটাচ্ছে, রয়েছে অনেকগুলো দক্ষ চোখের নজরদারিতে। এর মধ্যেই তার জন্য ভালো সময়গুলো আসতে থাকে।
একদিন ইউএস সিনেটর ফ্রেড থমসমের চিঠি আসে। সিনেটের একটি অধিবেশনে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আর অনুরোধ করা হয় মিটনিক যেন যুক্তরাষ্ট্র সরকার সাইবার অ্যাটাক থেকে কতটুকু নিরাপদ এ বিষয়ের উপর নিজের মতামত পেশ করে। এভাবেই শুরু। পরবর্তীতে মিটনিককে বিভিন্ন কোম্পানি, সরকারি এজেন্সি, প্রযুক্তি বিষয়ক আলোচনা, টিভি শো’তে ডাকা হতো সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কথা বলার জন্য। এ থেকে বেশ টাকাও উপার্জন হতে থাকলো। তবে সবচাইতে মজার বিষয় ছিল, যেখানে পুরো পৃথিবী তথ্য আদানপ্রদানে, আমন্ত্রণে, নিমন্ত্রণে ই-মেইল প্রযুক্তির ব্যবহার করতো, সেখানে মিটনিকের মতো একজন ‘প্রযুক্তি গুরু’ সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিল চিঠি আদানপ্রদানে।
ঐ সময় হলিউডের প্রডিউসার জে.জে. আবরামস তাকে ‘Alias’ নামের টিভি সিরিজে অভিনয় করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, যেখানে মিটনিককে একজন সিআইএর কম্পিউটার স্পেশালিষ্ট হিসেবে দেখানো হয়। যদিও মিটনিকের রুল ধারণের সময় কম্পিউটারের কি-বোর্ড সিপিইউ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতো।
ঐ সময় থেকেই মিটনিক সিদ্ধান্ত নেয় সে একজন সিকিউরিটি কনসাল্টেন্ট হিসেবে আজীবন কাজ করে যাবে। আর নিজের অভিজ্ঞতা, জানা বিষয়গুলো বই আকারে লিখে যাবে। সেই সুবাদেই মিটনিক তার প্রথম বই ‘The Art of Deception’এ হাত দেয়। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা খাতায় লেখার মধ্যে বিরক্তি, পরিশ্রম দুটোই আছে। তাই সে আদালতে একটি কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য আবেদন করে। ভাগ্যক্রমে আদালত তাকে একটি ল্যাপটপ ব্যবহারের সুযোগ দেয়। কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যাপারে ছিল কঠোর নিষেধাজ্ঞা। ২০০২ সালে বইটি পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে সবচাইতে বেশি বিক্রিত বইয়ের খেতাব পায়।
নেশাকে পেশা হিসেবে পাওয়ার অধ্যায়
তিন বছরের প্রবেশন অ্যাক্টের সময় শেষ হওয়ার পর মিটনিক তার হ্যাকিং জীবনে আবার ফিরে আসে। তবে এবার বৈধভাবে। মিটনিককে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয় তাদের সিস্টেম হ্যাক করে দুর্বলতাগুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এবং কীভাবে দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে সিস্টেমকে আরো উন্নত করা যায় সে বিষয়েও পরামর্শ চাওয়া হয়। এছাড়াও তার কোম্পানি ‘মিটনিক সিকিউরিটি কনসাল্টিং’ এফবিআই সহ প্রায় ৫০০ সরকারি, বেসরকারি কোম্পানির কর্মচারীদের এথিক্যাল হ্যাকিং শেখানো সহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকে। এছাড়াও তিনি একজন নিয়মিত লেখক ও পাবলিক স্পীকার। ‘The Art of Deception’ ছাড়াও তার লেখা অন্যান্য বইগুলো হলো ‘The Art of Intrusion’, ‘Ghost in the Wires’ এবং ‘The Art of Invisibility’.
তথ্যসূত্র: Ghost in Wires: My adventures as the world’s most wanted hackerBy Kevin Mitnick
কৃতজ্ঞতা: blinkist.com