প্রতিদিনের জীবনে একটু বাড়তি অক্সিজেন যোগ করতে ঘর সাজাতে পারেন ছোটখাট গাছ দিয়ে। এতে আপনার ঘরে যেমন আসবে নান্দনিকতা, বাতাস হবে বিশুদ্ধ। তাহলে দেখে নেওয়া যাক এমন ১০ টি উপকারী ঘরের গাছকে।
১০. জারবেরা ডেইজি
উজ্জ্বল রঙের ফুলের এই গাছটি আপনার ঘর থেকে শুষে নেবে ট্রাইক্লোরোইথেন, যা ড্রাই ক্লিন করা কাপড়চোপড়ের মাধ্যমে আপনি ঘরে আনছেন। কালিতে থাকা বেনজিনকেও ফিল্টার করবে গাছটি। মাঝারি আকারের টবে গাছটি রাখতে পারেন লন্ড্রি বা বেডরুমে। কিন্তু আগে দেখে নিতে হবে, গাছটি ঠিকমতো আলো পায় কিনা। জারবেরা গাছ সুনিষ্কাশিত মাটিতে থাকতে ভালোবাসে,তাই অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন পাত্রে কয়েকটি ছিদ্র থাকে। সপ্তাহে দু-তিনবার গাছে স্প্রে করতে হবে। গাছটিকে দিনে অন্তত ৬ ঘন্টা সরাসরি সূর্যালোকে রাখতে হবে। ঠিকমতো যত্ন নিলে জারবেরা ফুল গাছে দু’সপ্তাহ পর্যন্ত টিকতে পারে।
৯. অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী
অ্যালোভেরা একটি রসালো পাতাযুক্ত আলোকদিকমুখী গাছ। গাছটি বড় করা বেশ সহজ। ঘর পরিষ্কারক ও রঙয়ের সাথে আমাদের ঘরে প্রবেশ করে ফরমালডিহাইড ও বেনজিন। অ্যালোভেরা এগুলোকে পরিষ্কার করে। সবথেকে ভালো হয় যদি অ্যালোভেরাকে কোনো আলোকিত জানালার পাশে রাখা যায়। বাতাস পরিষ্কার করার সাথে সাথে অ্যালোভেরা কিন্তু কাটাছেঁড়ার জন্যও উপকারী। ৬,০০০ বছর আগ থেকে মিশরের মানুষেরা এই উদ্ভিদকে নানা কাজে ব্যবহার করে এসেছে, তারা একে ‘অমরত্বের উদ্ভিদ’ বলত। ত্বকের বিভিন্ন জটিলতায়, ক্ষত সারাতে ও জোলাপ (কোষ্ঠ পরিষ্কারক) হিসেবে। আজও কাটাছেঁড়া, রোদে পোড়া (সানবার্ন), পোড়া ক্ষত ও ত্বকের অন্যান্য জটিলতায় উদ্ভিদটি নানাভাবে ব্যবহার করা হয়।
৮. স্পাইডার প্ল্যান্ট
বাসায় গাছ রাখার মতো আলো আসে না? গাছের পরিচর্যা করার মতো সময় হাতে নেই, বাসার পোষা প্রাণীর দৌরাত্ম্যে টবের সব গাছ মরতে বসেছে? চিন্তা করার দরকার নেই, এই গাছটি আপনার জন্যই। মাঝখানে হলদে সবুজ, ধারগুলো গাঢ় সবুজ সুন্দর এই গাছটিতে ছোট ছোট সাদা ফুল ফোটে। চামড়া, ছাপা হওয়া ও রাবারের পণ্যের সাথে আমাদের ঘরে আসে ফরমালডিহাইড, জাইলিন, কার্বন মনোক্সাইড ও বেনজিন। ঘরে এই গাছটির উপস্থিতি অনেকাংশেই কমিয়ে দেবে এসব ক্ষতিকর রাসায়নিককে। এই গাছকে সংখ্যায় বৃদ্ধি করা খুবই সহজ। ঠান্ডা থেকে কক্ষ তাপমাত্রা সব অবস্থায়ই এরা চমৎকার মানিয়ে নেয়, ভালোবাসে শুকনো মাটিতে থাকতে। উজ্জ্বল আলোতেই এরা সবচে’ ভালো জন্মায়, কিন্তু আপনি এদের রাখতে পারেন সাধারণ শহরের ঘরেই।
৭. স্নেক প্ল্যান্ট
ধারালো পাতার জন্যই বোধহয় এদের আরেক নাম ‘শাশুড়ির জিহ্বা’! এরকম একটি গাছকে টবে করে বাথরুমে রেখে দিন, অন্ধকার আর জলীয়বাষ্পপূর্ণ পরিবেশে এরা সুন্দর বেড়ে উঠবে, কিন্তু পরিষ্কার করবে আপনার ঘরের ফরমালডিহাইডকে। এরকম দুটো টবকে শোবার ঘরেও রেখে দিতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে। ফরমালডিহাইড আর কার্বন মনোক্সাইড সরানোর সাথে সাথে আরো একটি উপকার আপনাকে দেবে গাছটি। সাধারণত গাছ যেখানে রাতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে, এই গাছটি তার ব্যতিক্রম। ফলে যখন ঘুমাচ্ছেন, গাছটি আপনাকে একটুখানি অতিরিক্ত অক্সিজেন দেবে।
৬. মানি প্ল্যান্ট
গৃহসজ্জায় এই গাছটি বোধহয় বাংলাদেশে সবচেয়ে পরিচিত। পানিতে বা মাটিতে, দু’ভাবেই গাছটি লাগাতে পারেন। সহজে বেড়ে চলে, আর সহজলভ্য বলে এর কদর সবখানেই আছে। শুধু একটি পাত্রে লাগিয়ে পাত্রটি ঝুলিয়ে দিন, গাছটি সবুজ লতার ঝালর তৈরি করে আপনার ঘরের শোভা বাড়াবে। গাছটি উজ্জ্বল আলো ভালোবাসলেও, অন্ধকারে এর কোনো সমস্যা হয় না। অন্ধকারেও সবুজ থাকতে পারে বলে, এর আরেক নাম ‘শয়তানের বৃক্ষ’ (ডেভিলস আইভি)। যদি মাটিতেই লাগান, তবে অতিরিক্ত পানি দেয়ার প্রয়োজন নেই, পানিতে রাখলেও পানি পরিবর্তন করবেন। নাহলে শেকড়ে পচন ধরতে পারে।
৫. চন্দ্রমল্লিকা
উজ্জ্বল বিভিন্ন রঙ নিয়ে শীতে জন্মায় চন্দ্রমল্লিকা। আপনার ঘরকে সুসজ্জিত করার সাথেই ঘরে জমে থাকা বেনজিন, যা আঠা, রঙ, ডিটারজেন্ট ও প্লাস্টিকের সাথে আসে, তাকে ফিল্টার করে। এই গাছ উজ্জ্বল আলো ভালোবাসে, এর কুঁড়িকে ফুটতে সাহায্য করে সূর্যের সরাসরি আলো। তাই একে রাখতে পারেন ঘরের সবচেয়ে উজ্জ্বল আলো দেওয়া জানালাটির কাছে। আপনি যদি গৃহসজ্জার সাথে মিলিয়ে গাছ লাগাতে চান, তবে চন্দ্রমল্লিকা হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ। নীল বাদে প্রায় সব রঙের ফুলগাছের জাত আছে চন্দ্রমল্লিকার। কিন্তু গাছ কেনার সময় লক্ষ্য রাখবেন যেন বাগানে লাগানোর গাছ না কিনে ফেলেন, এর বাগান আর ঘরের জাত আলাদা।
৪. লাল ধারের ড্রাসিনিয়া
লাল ধার বিশিষ্ট এই ড্রাসিনিয়া আপনাকে দেবে রঙের বৈচিত্র্য। অনেক জাতের ড্রাসিনিয়ার ভেতর এদেরকে চিহ্নিত করা যায় ফিতার মতো পাতা, আর লাল ধারগুলোর জন্য। ধীরে ধীরে বাড়লেও এরা প্রায় ১৫ ফুট লম্বা হয়ে আপনার সিলিং ছুঁতে পারে। তাই এদেরকে উঁচু ছাদবিশিষ্ট মধ্যম আলোর ঘরে রাখা উচিত। এরা ঘরের বার্নিশ ও গ্যাসোলিনের সাথে আসা জাইলিন, ট্রাইক্লোরোইথেন ও ফরমালডিহাইড দূরীকরণে সবচে’ বেশি পারদর্শী।
৩. উইপিং ফিগ
এই গাছ বাঁচাতে একটু যত্ন করতে হয়, তবে একবার টিকে গেলে গাছটি বহু বছর বাঁচে। ঘরের আসবাব ও কার্পেটে থাকা ট্রাইক্লোরোইথেন, বেনজিন ও ফরমালডিহাইড দূরীকরণে সাহায্য করে গাছটি। বারবার তাপমাত্রা বা আলোর পরিমাণ পরিবর্তিত হলে গাছটির জীবন আশঙ্কায় পড়ে।
২. পিস লিলি
সাধারণত এরা লিলি নামেই আমাদের দেশে বেশি পরিচিত। কালচে সবুজ পাতার সাথে সাদা ফুলের কনট্রাস্ট আপনার মন কাড়তে বাধ্য। অনেক সহজেই বাঁচিয়ে রাখা যায় গাছটিকে। সাধারণ অবস্থায় এরা ১২-১৬ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। গরমকালের শুরুতেই সাধারণত ফুল দিলেও সারাবছর ধরেও ফুল দিতে দেখা যায় এদেরকে। নাসা গবেষণায় এদেরকে ‘বাতাস পরিষ্কারক’ উদ্ভিদ বলে চিহ্নিত করেছে। এরা আশেপাশের বাতাস থেকে ফরমালডিহাইড, বেনজিন ও কার্বন মনোক্সাইড শোষণ করে। উদ্ভিদটি শিশু ও পোষা প্রাণীর নাগালে না রাখাই ভাল। বেশিরভাগ সময়ে উদ্ভিদটির মৃত্যুর কারণ হয় অতিরিক্ত পানি দেয়া। পরিমিত পানি ও দিনের কিছুটা সময় উজ্জ্বল আলোতে থাকতে ভালোবাসে গাছটি।
১. ইংলিশ আইভি
গাছটি পশ্চিমের দেশগুলোতে ক্রিসমাসের দিন ঘর সাজাতে ব্যবহার হয়। অনেক দ্রুত বেড়ে গিয়ে অন্য গাছপালাকেও লতায় ছেয়ে ফেলে বলে অনেকেই একে ঘরে রাখতে চান না। ছোট পাত্রে রাখা ইংলিশ আইভি আপনার ঘরে খুব বেশি বাড়তে পারবে না। ছেঁটে রাখার মাধ্যমেও একে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। বোনাস হিসেবে এরা ঘরের ক্লিনারের সাথে আসা ফরমালডিহাইডকে শুষে নিয়ে আপনাকে দেবে বিশুদ্ধ বাতাস।