Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হেরোডটাস: ‘ইতিহাসের জনক’ বলেই পরিচিত যে মানুষটি

তাকে বলা হয় ‘ইতিহাসের জনক’। এই পরিচয়টুকুই হেরোডটাসকে চেনার জন্য যথেষ্ট। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ইতিহাসকে একটি অনুসন্ধানমূলক বিষয় বলে গণ্য করেছিলেন এবং একে ভৌগোলিক স্থানের ভিত্তিতে ভাগ করেছিলেন। তিনি ভৌগোলিক ব্যাপারগুলোকে শুধু তথ্য ভিত্তিক উপস্থাপনের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে সেগুলোর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করার উপর জোর দেন। তিনি মাটির বর্ণনা দিতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে বসবাস করা তৎকালীন অনেক নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর চমৎকার বর্ণনা উপস্থাপন করেন। তাই আধুনিক পণ্ডিতগণ তাকে পৃথিবীর প্রথম নৃকূলবিদ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তার মতে-

“সকল ইতিহাসই ভৌগোলিকভাবে আলোচনা করতে হবে, এবং ভূগোল আলোচনা করতে হবে ঐতিহাসিকভাবে।”

হেরোডটাস; source: Lapham’s Quarterly

হেরোডটাসের জীবনী বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ইতিহাসবিদগণ হেরোডটাসের নিজের লেখার উপরই নির্ভর করেন। তার জন্ম আনুমানিক ৪৮৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্যের (বর্তমানে তুরস্কের অন্তর্গত) হেলিকারনেসাসে। হেলিকারনেসাস শহরের অন্যতম প্রভাবশালী পরিবার ছিল তার পরিবার। তার বাবা লিক্সেস এবং মা দ্রায়ো, উভয়েই সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য ছিলেন। ধারণা করা হয়, হেলিকারনেসাসের শাসক লিগডামিসের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগে হেরোডটাসের পরিবারকে সামোস দ্বীপে নির্বাসিত করা হয়েছিল। ফলে হেরোডটাসের শৈশবের একটি বড় অংশ কাটে সামোস দ্বীপে। সম্ভবত এ কারণেই তিনি তার লেখায় সামোস দ্বীপের প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। তিনি ইতিহাস রচনা করেছিলেন আয়োনিক গ্রীক ভাষায়, যা কিনা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীরই সদস্য। এই ভাষা তিনি সামোসে থাকাকালীনই শিখেছেন বলে ধারণা করা হয়। তবে সম্প্রতি হেলিকারনেসাসে কিছু প্রাচীন লিপি পাওয়া যায় যেগুলো হেরোডটাসের আমলের। লিপিগুলোতে দেখা যায় যে হেলিকারনেসাসের সরকারি দলিলপত্রেও আয়োনিক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে হেরোডটাস এই ভাষা হেলিকারনেসাসে শিখেছেন নাকি সামোসে, সে ব্যাপারে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

হেরোডটাস একজন ভ্রমণপাগল মানুষ ছিলেন। তিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় ভ্রমণ করে বেড়িয়েছেন। তাই নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি ইতিহাস এবং ভৌগোলিক অবস্থানসমূহ ব্যাখ্যা করতে পেরেছেন। তিনি কবে এথেন্স গিয়েছিলেন সে ব্যাপারে জানা যায় না তবে এথেন্সে তিনি অনেকদিন ছিলেন এবং তার বেশিরভাগ লেখালেখির কাজ সেখানেই করেন। পরে থুরি বা থুরিয়ামে গিয়ে তা সমাপ্ত করেন। তিনি মারমারা ও বসফরাস প্রণালী ধরে ইতালি হয়ে ইউক্সাইন (কৃষ্ণ সাগরের পুরাতন নাম) সাগরে পৌঁছান। সেখান থেকে সরাসরি চলে যান পারস্য সাম্রাজ্যের সুসা এবং পরে ব্যাবিলনে। অন্যদিকে আনাতোলিয়া বা এশিয়া মাইনর (বর্তমানে এশিয়ান অংশের তুরস্ক) এর উপকূলীয় দ্বীপগুলোতেও তিনি একাধিকবার ভ্রমণ করেন। দক্ষিণে তিনি মিশর এবং মিশরের আসওয়ান দ্বীপ হয়ে প্রাচীন গ্রীসের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক শহর সাইরেন পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। সাইরেনের প্রাচীন মূর্তি ও ভাস্কর্যগুলোর অনেক বর্ণনা রয়েছে তার লেখাগুলোতে। উল্লেখ্য, সাইরেন বর্তমানে লিবিয়ার অন্তর্গত।

প্রাচীন হেলিকারনেসাস শহর; source: AwesomeStories

পৃথিবীর আকৃতি সম্বন্ধে তখন যে ধারণা প্রচলিত ছিল তা হচ্ছে পৃথিবী একটি বৃত্তাকার সমতলভূমি, যার চারদিকে ঘিরে আছে সমুদ্র। কিন্তু হেরোডটাস এই ধারণা গ্রহণ না করে পৃথিবীকে একটি সমতল চাকতির সাথে তুলনা করেন, যার উপর দিয়ে সূর্য অর্ধবৃত্তাকার পথে পূর্ব থেকে পশ্চিমে ভ্রমণ করে। তিনি পিথাগোরিয়ান ‘স্কুল অব ফিলসফি’ থেকে পড়ালেখা করেন এবং পিথাগোরিয়ান দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়ে পৃথিবীর ভূমি ও জলভাগের প্রতিসম বিবরণ দেন। দানিউব এবং নীলনদ সম্পর্কে তার বর্ণনা ছিল সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। তার মতে, নীলনদ লিবিয়ার (আফ্রিকা) ঠিক মাঝখান দিয়ে চলে গেছে এবং লিবিয়াকে সমান দু’ভাগে ভাগ করেছে। অন্যদিকে পৃথিবীর স্থলভাগকে তিনি সমান দু’ভাগে ভাগ করেন। এই দু’ভাগকে আলাদা করেছে ইউক্সাইন সাগর, কাস্পিয়ান সাগর এবং ককেশাস পর্বতমালা। আবার তার ধারণা অনুযায়ী ইউরোপ শুধু এশিয়া থেকে বড়ই ছিল না, এশিয়া এবং আফ্রিকার সমষ্টির সমান ছিল! দানিউব নদী সম্পর্কে হেরোডটাসের মন্তব্যগুলো অপেক্ষাকৃত সঠিক ছিল। তিনি দানিউবকে ইউরোপের দীর্ঘতম নদী হিসেবে লিপিবদ্ধ করেন, যদিও ইউরোপের দীর্ঘতম নদী হচ্ছে ভোলগা।

মানচিত্রে দানিউব নদী; source: Mike Anderson’s Ancient History Blog

সৃষ্টিসংক্রান্ত কিংবা সৌরজগৎ সংক্রান্ত হেরোডটাসের বিশ্বাস ছিল ভ্রান্ত এবং হাস্যকরও বটে, যদিও তার সময়ে এই ধারণাই বেশ গুরুত্ববহ ছিল। তিনি ধারণা করতেন শীতকাল আসার প্রাক্কালে বাতাসের ক্রমাগত চাপে সূর্য ধীরে ধীরে দক্ষিণ দিকে হেলে যায় এবং এতে করে তাপমাত্রা কমে যায়! তবে অবৈজ্ঞানিক ধারণা ব্যতিরেকে, তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি পৃথিবীর মাধ্যাহ্নিক দ্রাঘিমারেখা তথা মেরিডিয়ান আঁকার চেষ্টা করেন। তার এই মেরিডিয়ান রেখা মিশর থেকে শুরু হয়ে সিলিসিয়াতে (তুরস্কের দক্ষিণ উপকূল) গিয়ে শেষ হয়েছে। ভুলত্রুটি যা-ই থাকুক না কেন, তার এই প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়।

পৃথিবীর মহাদেশগুলো সম্পর্কে কোনো পরিস্কার ধারণা ছিল না হেরোডটাসের। তিনি ইউরোপের উত্তরাঞ্চলীয় সীমা নির্ণয় করতে পারছিলেন না। সেদিকে কোনো সাগর মহাসাগর আছে কিনা সে বিষয়েও তার কোনো পরিষ্কার ধারণা ছিল না। দক্ষিণদিকের সাগরগুলোর ক্ষেত্রে তিনি বেশ বিভ্রান্তবোধ করতেন। এ বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, ভারত থেকে স্পেন পর্যন্ত জলভাগ খুবই আঁকাবাঁকা। অবশ্য আরব সাগর এবং ভারত ও আটলান্টিক মহাসাগর সম্পর্কে তার মোটামুটি পরিষ্কার ধারণা ছিল। তবে তার সবচেয়ে ভালো ধারণা ছিল ইউক্সাইন বা কৃষ্ণ সাগর সম্পর্কে। এই কৃষ্ণ সাগরকে তিনি ‘বিস্ময়কর সাগর’ বলে আখ্যায়িত করেন। কেননা বাণিজ্যের জন্য তখন এই সাগর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হতো। তিনি কৃষ্ণ সাগরের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১,১০০ স্টাডিয়া বা ১১০ মাইল এবং সর্বোচ্চ প্রশস্ততা ১,৩০০ স্টাডিয়া বা ১৩০ মাইল হিসাব করেন। হিকেটিয়াসসহ আলেকজান্দ্রিয়ার তৎকালীন সব বিখ্যাত ভূগোলবিদই বিশ্বাস করতেন কাস্পিয়ান সাগর হচ্ছে উত্তর মহাসাগরের একটি শাখা। কিন্তু হেরোডটাস সকলের বিপরীতে গিয়ে ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে দাবি করেন কাস্পিয়ান সাগর হচ্ছে একটি আন্তঃমহাদেশীয় সাগর। তার এই দাবি যথাযথ ছিল।

কৃষ্ণ সাগর; source: onassis.org

পৃথিবীর ভূমিরূপ কীভাবে পরিবর্তিত হয় এ ব্যাপারে হেরোডটাসের যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। নীল উপত্যকাকে তিনি নীল নদের বয়ে আনা পলি এবং কাঁদার জমাটবাধা ভূমি হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি এটাও বিশ্বাস করতেন যে নীলনদের বাহিত কাদা দ্বারাই ভূমধ্যসাগরে মিশরের উত্তরাঞ্চলের একাধিক ব-দ্বীপ তৈরি হয়েছে। তিনি ব-দ্বীপ তৈরির প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন এবং পশ্চিম তুরস্কের মেন্ডার নদীর বদ্বীপটিও নদীবাহিত কাদা দ্বারাই সৃষ্ট বলে দাবি করেন। তার আরেকটি বড় সাফল্য হচ্ছে তিনি তৎকালীন প্রচলিত তটরেখা বা উপকূলীয় সীমানা সংশোধন করেন এবং দেখান যে অধিকাংশ সমুদ্রবন্দরই আন্তর্দেশীয় অর্থাৎ উপকূলের অনেক ভেতরে।

হেরোডটাসই প্রথম ব্যক্তি যিনি পৃথিবীর স্থলভাগকে তিনটি প্রধান খণ্ডে বা মহাদেশে ভাগ করেন। তার তিনটি ভাগ ছিল এশিয়া, ইউরোপ এবং লিবিয়া (বর্তমান আফ্রিকা)। তিনি ইউরোপের আয়তন হিসাব করেন এশিয়া এবং লিবিয়ার সমষ্টির সমান। এই তথ্যগুলো ভুল হলেও তার বিস্ময়কর সাফল্য ছিল তিনি এশিয়া ও ইউরোপের ব্যবধায়ক নির্ণয় করতে পেরেছিলেন। বসফরাস প্রণালী, আমু নদী, ডন নদী এবং কাস্পিয়ান সাগর দ্বারা এই দুই মহাদেশ বিভক্ত হয়েছে। নদীর ক্ষেত্রে তিনি দানিউবকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নদী গণ্য করতেন এবং কার্পিস বা কার্পেথিয়ান পর্বতমালা এবং আল্পিস বা আল্পস পর্বতমালাকে মনে করতেন পৃথিবীর দুটি উচ্চতম পর্বতমালা।

আল্পস পর্বতমালা; source: glee.wikia.com

স্কাইথিয়ার সাথে তার পরিচয় ঘটে গ্রীকদের এই অঞ্চল দখলের বদৌলতে। প্যালাস মেয়োটিসের পশ্চিমে অবস্থিত এই অঞ্চলের উপজাতিদের সম্পর্কে চমৎকার তথ্যবহুল বর্ণনা করেন হেরোডটাস। জীবনযাপনের ধরণ এবং ভৌগোলিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে তিনি স্কাইথিয়ান অধিবাসীদের একাধিক উপজাতিতে ভাগ করেছিলেন। নিউরি, অ্যান্ড্রোফ্যাগি, মেলানকেনি, গেলোনি, বুইদিনি সহ অনেকগুলো নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ আছে তার লেখায়। প্রতিটি গোষ্ঠীরই ছিল নিজস্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং একজন স্বতন্ত্র নেতা। তবে সব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই কৃষি নির্ভর ছিল। এসব গোষ্ঠীর মধ্যে অ্যাগিস্থ্রসি নামক গোষ্ঠীকে তিনি সবচেয়ে সুরুচিসম্পন্ন বলে উল্লেখ করেন যারা স্বর্ণালঙ্কার পরিধান করতো।

নিউরিস নামক নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী সম্পর্কে কিছু অদ্ভুত তথ্য উল্লেখ আছে হেরোডটাসের লেখায়। যেমন- এরা বছরের নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনে নিজেদেরকে নেকড়েতে রূপান্তর করতো! অন্যদিকে অ্যান্ড্রোফ্যাগিরা ছিল ক্যানিবাল বা নরখেকো। আচার আচরণে এরাই হচ্ছে সবচেয়ে আগ্রাসী এবং মারমুখী। অন্যদিকে লাল চুল এবং নীল চোখ বিশিষ্ট বুইদিনিরা ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, যারা যাযাবর জীবন যাপন করতো। গেলোনিরা ছিল সবচেয়ে স্থির উপজাতি যারা সম্পূর্ণ কৃষিকাজের উপর নির্ভর করতো। অন্যদিকে পূর্ব দিকের শেষ উপজাতি গোষ্ঠী হিসেবে আর্জিপিয়ান নামক একটি গোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করেন হেরোডটাস, যারা উড়াল পর্বতের পাদদেশে বসবাস করতো।

ক্যানিবাল বা নরখেকো জনগোষ্ঠী; source: glee.wikia.com

এশিয়া সম্পর্কে হেরোডটাসের জ্ঞান পারস্য সাম্রাজ্যের মধ্যেই আবদ্ধ ছিল, যদিও এর বাইরেও তিনি অনেক কিছুই বলেছেন। তবে সেগুলোর অধিকাংশই ছিল ভ্রান্ত। পারস্যের বর্ণনায় তিনি একে শাসন এবং বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য ২০টি অঙ্গরাজ্যে বিভক্ত হবার কথা উল্লেখ করেন। পারস্যের বাইরে আনাতোলিয়া সহ আরো অনেক গ্রীক কলোনি, হিন্দুকুশ, হিমালয়, এমনকি টাইগ্রিস ও ইউফ্রেতিস নদী নিয়েও তার লেখায় রয়েছে যথেষ্ট বর্ণনা। কিন্তু এগুলো প্রায় সবই ভুল! তবে তুরস্কের সার্দিশ থেকে সুদা শহর পর্যন্ত ১৩,৫০০ স্টাডিয়া বা ১,৩৫০ মাইল দীর্ঘ এক ঐতিহাসিক রাজকীয় সড়কের কথা বর্ণনা করেন হেরোডটাস। এই মহাসড়কের নিয়মিত দূরত্বে ছিল বিরতি নেয়ার জন্য স্টেশন। আবার ভারতবর্ষের বাণিজ্য সম্পর্কেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেন হেরোডটাস। ভারতীয়রা তখন ব্যাপক পরিমাণে তুলা এবং বাঁশ উৎপাদন করতো। বাঁশ থেকে তৈরি করতো হরেক রকমের হস্তনির্মিত সামগ্রীও।

হেরোডটাসের বর্ণিত ম্যাক্রোবিয়ান ইথিওপিয়ান উপজাতি; source: pinterest

আফ্রিকা বা তার দেয়া নাম লিবিয়া সম্পর্কে হেরোডটাসের যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। তিনি ভূমধ্যসাগরের উত্তর ও দক্ষিণ উপকূল সঠিকভাবে নির্ণয় করতে সক্ষম হন। অন্যদিকে দক্ষিণে খার্তুম শহর সম্পর্কেও তিনি যথেষ্ট তথ্য জানতেন। এই বিরাট অঞ্চলে কেবল একটি বড় উপজাতি গোষ্ঠী বসবাস করতো, যাদের নাম তিনি ‘আসমাখ’ বলে উল্লেখ করেন। নীল ও সাদা, নীলনদের উভয় শাখায়ই এই জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল বলে উল্লেখ করেন হেরোডটাস। আফ্রিকার সবচেয়ে প্রত্যন্ত জনগোষ্ঠী হিসেবে ম্যাক্রোবিয়ান ইথিওপিয়ানদের নাম উল্লেখ করেন তিনি। তাদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা এবং সুদর্শন জনগোষ্ঠী হিসেবে বর্ণণা করেন হেরোডটাস। ম্যাক্রোবিয়ানদের গড় আয়ু ছিল ১২০ বছর। তাদের অঞ্চলে স্বর্ণ এতোই সহজলভ্য ছিল যে সেখানে শেকল এবং কয়েদিদের পায়ের বেড়ি তৈরিতেও স্বর্ণ ব্যবহার করা হতো! খাদ্যাভ্যাসের দিক থেকেও তারা সবচেয়ে উন্নত ছিল। তাদের প্রধান খাদ্য ছিল মাংস এবং দুধ।

হেরোডটাসের আয়োনিক গ্রীক ভাষায় লেখা পান্ডুলিপি; source: Wikipedia

 

হেরোডটাসের শ্রেষ্ঠ বই ‘দ্য হিস্টোরিস’। তাছাড়া ‘টেলস ফ্রম হেরোডটাস’, ‘হিস্টোরিস ফ্রম হেরোডটাস’, ‘অন অ্যাকাউন্টস ফ্রম ইজিপ্ট’, ‘অন দ্য ওয়্যার ফর গ্রীক ফ্রিডম’ প্রভৃতি তার লেখা। উপরের আলোচনা মূলত তার এসব লেখারই মূল দিকগুলোর সারমর্ম। তার লেখার মধ্যে ৪৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পর আর কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তাই ইতিহাসবিদগণ এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে ৪২৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হেরোডটাসের মৃত্যু হয়েছিল। সম্ভবত তিনি প্রাচীন গ্রীসের মেসোডোনিয়া শহরে মৃত্যুবরণ করেন। তার সকল ভুলভ্রান্তি একদিকে রেখে বলা চলে, তিনি ইতিহাসের প্রতি মানুষের কৌতুহলের এক ধারা শুরু করে দিয়ে গেছেন, যার জন্য আজ পৃথিবীর ইতিহাস সম্পর্কে মানুষের এত জ্ঞান।

ফিচার ইমেজ- Nicely Abridged Books

Related Articles