Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যাশেজ : অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার বনাম ইংল্যান্ডের লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান

ক্রিকেটের প্রাণ হলো টেস্ট ক্রিকেট। আর টেস্ট ক্রিকেটের প্রাণ হলো ‘দ্য অ্যাশেজ’। টি-টুয়েন্টির রঙিন যুগে এখনও সাদা পোশাকে দর্শকদের মনে উত্তেজনা ছড়িয়ে যাচ্ছে অ্যাশেজ। ২৩শে নভেম্বর অ্যাশেজের ৭০ তম সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে। ব্রিসবেন ‘দ্য গ্যাবা’ নামেই বেশ পরিচিত। আগের ৬৯টি সিরিজের মধ্যে দুই দল সমান ৩২টি করে সিরিজ জিতেছে। তবে ম্যাচ জয়ের দিক দিয়ে ইংল্যান্ডের চেয়ে বেশ বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া। ৩২৫টি অ্যাশেজ টেস্টের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ১৩০টি এবং ইংল্যান্ড জয়লাভ করেছে ১০৬টি টেস্টে।

দ্য অ্যাশেজ; Image Source – Getty Images

৭০ তম সিরিজে স্বাগতিক দেশ হিসেবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সম্মানের লড়াইয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে অস্ট্রেলিয়া। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দুই দলের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া কতটা ভয়ংকর, সেটা ইংল্যান্ড নিজেদের শেষ সফরের স্মৃতি রোমন্থন করলেই বুঝতে পারবে। ২০১৩-১৪ মৌসুমের অ্যাশেজে ইংল্যান্ডকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া। শেষ পাঁচটি অ্যাশেজ সিরিজের মধ্যে চারটিতে শিরোপা লাভ করা ইংল্যান্ড চাইবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেও শিরোপা ধরে রাখতে। অন্যদিকে স্টিভ স্মিথের অস্ট্রেলিয়া ঘরের মাটিতে অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করার জন্য কোমর বেঁধেই নামবে।

অ্যাশেজ সামনে রেখে মাঠের বাইরে দুই দেশের কিংবদন্তী ক্রিকেটারদের কথার লড়াই শুরু হয়ে গেছে কয়েক মাস আগে থেকেই। দল নির্বাচনে নিজস্ব মতামত জানাচ্ছিলেন অনেকেই। শিরোপার দাবিদার কে, কোন দল কতটা কোণঠাসা- এসব নিয়ে হচ্ছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের সাফল্যের হার প্রায় সমানে সমান। ইংল্যান্ডের দশটি জয়ের বিপরীতে নয়টি পরাজয়। এবং অস্ট্রেলিয়ার ছ’টি জয়ের বিপরীতে আটটি পরাজয়। ইংল্যান্ড জয়ের সংখ্যার দিক দিয়ে এগিয়ে আছে ঘরের মাটিতে দু’টি সিরিজ বেশি খেলার ফলে। বিদেশের মাটিতে ইংল্যান্ড পাঁচটি হারের বিপরীতে জয় পেয়েছে মাত্র একটিতে। অস্ট্রেলিয়া ঘরের বাহিরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩-০ তে হোয়াইটওয়াশ সহ ছয়টি টেস্টে পরাজিত হয়ে দু’টিতে জয়লাভ করেছে। ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে এবং বাইরের মাটিতে ভারত ও বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ খেলেছে। এই চার সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ১২টি টেস্ট খেলে ছয়টিতে জয় এবং পাঁচটিতে পরাজিত হয়েছে। অন্যদিকে ইংল্যান্ড ১৫টি টেস্টে সমান ছ’টি জয় তুলে নিলেও পরাজয় বরণ করেছে আটটিতে। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই দলেই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-১ এ ড্র করে বাড়ি ফিরেছে। অন্যদিকে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ড ৪-০ ব্যবধানে এবং অস্ট্রেলিয়া ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে।

এই চার প্রতিপক্ষের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং গড় ৩২.৫৩ এবং ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং গড় ৩১.৯৩! সব মিলিয়ে দুই দলের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং গড়ের পার্থক্য খুব বেশি না হলেও দুই দলের শক্তিমত্তা আলাদা দু’ভাগে বিভক্ত। অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার বনাম ইংল্যান্ডের লোয়ার অর্ডার!

টপ অর্ডারে অস্ট্রেলিয়ার দুই ভরসার প্রতীক স্টিভ স্মিথ এবং ডেভিড ওয়ার্নার; Image Source – Sporting News

এই চার সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সারির পাঁচ ব্যাটসম্যান দলের সিংহভাগ রান করেছেন। ডেভিড ওয়ার্নার, উসমান খাজা, স্টিভেন স্মিথ এবং পিটার হ্যান্ডসকম্ব- সবার ব্যাটিং গড়ই চল্লিশের উপর। স্টিভেন স্মিথ ২৩ ইনিংসে ৬৩.৫৫ ব্যাটিং গড়ে ১,২৭১ রান করেছেন। এছাড়া ওয়ার্নার ২৩ ইনিংসে ৪৫.০৪ ব্যাটিং গড়ে ১,০৩৬ রান। হ্যান্ডসকম্ব ১৭ ইনিংসে ৪৯.০৭ গড়ে ৬৩৮ রান এবং উসমানা খাজা ১৩ ইনিংসে ৪৮.৫৮ গড়ে ৫৮৩ রান করে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছেন। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডারদের তুলনায় ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা নিষ্প্রভ ছিলেন উক্ত চার সিরিজে। প্রথম সারির পাঁচ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মাত্র একজনের ব্যাটিং গড় চল্লিশের উপর। অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডাররা যেখানে ১২টি টেস্টে ১৩টি শতক হাঁকিয়েছেন, সেখানে ইংল্যান্ডের টপ অর্ডাররা ১৫টি টেস্টে শতক হাঁকিয়েছেন মাত্র ৮টি।

জো রুট; Image Source – Twitter

অধিনায়ক জো রুট ৩০ ইনিংসে ৫৩.৮৬ ব্যাটিং গড়ে ১,৫৬২ রান করেছেন। রুট ছাড়া ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারের আর কেউই নজর কাড়তে পারেননি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় অ্যালিস্টার কুকের ৩৯.৬২। তিনি ৩০ ইনিংসে ৩৯.৬২ ব্যাটিং গড়ে ১,১৪৯ রান করেছেন। এছাড়া মঈন আলী ১৩ ইনিংসে ৩৬.৩৮ ব্যাটিং গড়ে ৪৭৩ রান এবং জনি বেয়ারস্টো ১০ ইনিংসে ৩৪.১০ ব্যাটিং গড়ে ৩৪১ রান করেছেন। কিটন জেনিংস এবং গ্যারি ব্যালেন্সের পারফরমেন্স আরও বেশি শোচনীয়। ব্যালেন্স ১৫ ইনিংসে ২০.২৬ ব্যাটিং গড়ে ৩০৪ রান এবং জেনিংস ১২ ইনিংসে ২৪.৫০ ব্যাটিং গড়ে ২৯২ রান করেছেন। অ্যাশেজে জেনিংসের বদল অ্যালিস্টার কুকের সাথে ইনিংসের গোড়াপত্তন করবেন মার্ক স্টোনম্যান। অ্যাশেজ সামনে রেখে তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ইংল্যান্ডকে আশার আলো দেখাচ্ছেন তিনি। তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচে যথাক্রমে ৮৫, ৬১, ৫১ এবং ১১১ রানের ইনিংস খেলেছেন স্টোনম্যান।

অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডাররা সাফল্য পেলেও লোয়ার অর্ডারদের পারফরমেন্স ছিলো হতাশাজনক। ৬-৮ নাম্বার পজিশনে নিয়ে এখনও দুশ্চিন্তা কাটেনি অস্ট্রেলিয়ার। সাতে ব্যাট করা ম্যাথু ওয়েডের বদল সাত বছর পর দলে সুযোগ পেয়েছেন টিম পেইন। প্রথম অ্যাশেজ টেস্টে ছয়ে ব্যাট করবেন শন মার্শ। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা মিচেল স্টার্ক ব্যাট করবেন আটে। নিকট অতীতে লোয়ার অর্ডারে তিনিই অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান। গত ২০ মাসে উক্ত চারটি দলের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার লোয়ার অর্ডাররা যেখানে মাত্র ২০.৯৮ ব্যাটিং গড়ে রান করেছেন, সেখানে ইংল্যান্ডের লোয়ার অর্ডাররা রান করেছেন ৩৯.২৯ ব্যাটিং গড়ে! অস্ট্রেলিয়ার লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ১২ ম্যাচে মাত্র সাতটি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ১৫ ম্যাচে ২৩টি পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছেন। ২১ ইনিংসে ৩৬.৭৬ ব্যাটিং গড়ে ৭৭২ রান করা বেন স্টোকস দলে না থাকলেও মঈন আলী, জনি বেয়ারস্টো এবং ক্রিস ওকসদের দিয়ে সাজানো ইংল্যান্ডের লোয়ার অর্ডার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভালো করার ব্যাপারে আত্মপ্রত্যয়ী। অস্ট্রেলিয়া যেখানে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান খুঁজতে দিশেহারা, সেখানে ইংল্যান্ডের জনি বেয়ারস্টো দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। লোয়ার অর্ডারে তিনি ১৮ ইনিংসে ৪৯.০০ ব্যাটিং গড়ে ৮৩৩ রান করেছেন। এছাড়া মঈন আলী ১৩ ইনিংসে ৫০.১৮ ব্যাটিং গড়ে ৫৫২ রান এবং ক্রিস ওকস ১৩ ইনিংসে ৩১.২২ ব্যাটিং গড়ে ২৮১ রান করেছেন।

মিচেল স্টার্ক এবং জস হ্যাজলেউড; Image Source – Cricket.com.au

৪ 

দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং গড় ২৯.১৪ এবং ইংল্যান্ডের ৩৩.২৩। সব মিলিয়ে বোলিং গড়ে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে থাকলেও দুই দলের মূল বোলারদের পারফরমেন্সে খুব বড় ব্যবধান নেই। অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের বোলিং গড় ২৯.৮৬ এবং ইংল্যান্ডের পেসারদের বোলিং গড় ৩০.২৮। এই চার সিরিজে মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজলেউড, প্যাট কামিন্স এবং জ্যাকসন বার্ড ২৮.৪৭ বোলিং গড়ে ১০১টি উইকেট শিকার করেছেন। অন্যদিকে জেমস অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রড এবং ক্রিস ওয়াকস ২৫.১৫ বোলিং গড়ে ৯৯টি উইকেট শিকার করেছেন।

স্টুয়ার্ট ব্রড এবং জেমস অ্যান্ডারসন; Image Source – England and Wales Cricket Board (ECB) – The Official Website

দুই অফস্পিনার নাথান লায়ন এবং মঈন আলী নিজ নিজ দলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। নাথান লায়ন ১২ টেস্টে ২৮.৩২ বোলিং গড়ে ৫৮ উইকেট শিকার করেছেন। মঈন আলী ১৫ ম্যাচে ৩১.৬৪ বোলিং গড়ে শিকার করেছেন ৫৭ উইকেট।

নাথান লায়ন এবং মঈন আলী ; Image Source – Ryan Pierse

বেন স্টোকস বিহীন ইংল্যান্ড দল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে চতুর্থ পেসারের অভাব বোধ করবে। বর্তমানে স্টোকস ব্যাটে এবং বলে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার দলেও বেশ কয়েকটি জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে। ওপেনিংয়ে অভিষিক্ত ব্যানক্রফট নিজের সামর্থ্যের কতটা দিতে পারেন কিংবা ছয়ে শন মার্শ এবং সাত বছর পর দলে ফেরা টিম পেইনকে নিয়েও দোটানায় আছে অস্ট্রেলিয়া। ১৯৮৮ সালের পর ‘দ্য গ্যাবা’য় কোনো টেস্ট হারেনি অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ড ১৯৮৬ সালে শেষবার ‘দ্য গ্যাবা’য় টেস্ট ম্যাচ জিতেছিল। টেস্ট ক্রিকেট প্রেমীরা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আরও একটি অ্যাশেজ দেখবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ফিচার ইমেজ- AFP

Related Articles