Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বকাপের সেরা ৫ অঘটন

গত তিন বিশ্বকাপ ধরে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা বিদায় নিচ্ছে গ্রুপপর্ব থেকেই। ইতালি থেকে শুরু করে স্পেন এবং এবারের জার্মানিও। ক্রুস, নয়্যার, ওজিল, মুলাররা যে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিবেন, তা হয়তো গ্রুপের বাকি তিনদলও ভাবেনি। নিশ্চয়ই এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটন হয়ে থাকবে ডাই ম্যানশ্যাফটদের প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়া। অঘটনের এই বিশ্বকাপে হয়তো আরো অনেক অঘটনই দেখা যাবে। তার আগে দেখে নেওয়া যাক ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা পাঁচ অঘটন।

আর্জেন্টিনা ০ – ১ ক্যামেরুন (১৯৯০ বিশ্বকাপ)

আগেরবারের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই মুখোমুখি হয় আফ্রিকান দেশ ক্যামেরুনের। ম্যারাডোনার নেতৃত্বে ইতালিতে বিশ্বকাপ খেলতে আসা আর্জেন্টিনা ১৯৮৬ সালের মতো শক্তিশালী না হলেও ধারে ভারে ক্যমেরুন থেকে অনেক এগিয়ে ছিলো। ইতালির সান সিরো স্টেডিয়ামে ৮ জুন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে ক্যামেরুন ও আর্জেন্টিনা।

ম্যারাডোনা বাহিনীকে হারানোর পর ক্যামেরুন; Image Source: Pinterest

প্রথমার্ধ আর্জেন্টিনা দাপটের সাথে খেললেও গোলের দেখা পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধের অর্ধেক সময় না পেরোতেই ধারার বিপরীতে গোল করে বসে ক্যামেরুন। ম্যাচের ৬৭ মিনিটের সময় ওমাম-বাইয়ুকের গোলে ম্যাচে লিড নেয় ক্যামেরুন। বাকি সময় ম্যারাডোনা, ক্যানিজিয়া, বুরুচাগারা মিলে ক্যামেরুনের রক্ষণ ভাঙতে পারেননি। সান সিরোর প্রায় ৭৪ হাজার দর্শকের সামনে শেষপর্যন্ত ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা ১-০ গোলের হার দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে। গ্রুপ তৃতীয় হয়ে ওঠার পরও সেবার ফাইনাল খেলে লা আলবিসেলেস্তে বাহিনী। যদিও টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ তুলে ধরতে পারেননি ম্যারাডোনা।

স্পেন ০ (৩) – ০ (৫) দক্ষিণ কোরিয়া ( ২০০২ বিশ্বকাপ )

আয়োজক হিসেবে ২০০২ বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় চমক ছিলো দক্ষিণ কোরিয়ার সেমি ফাইনাল খেলা। যদিও তা নিয়ে রয়েছে অনেক তর্ক-বিতর্ক। রেফারিংয়ের সুবিধা নিয়েও কথা উঠেছিলো। ২০০২ সালের ২২ জুন গুয়াংজু স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়া ও ফার্নান্দো হিয়েরোর স্পেন। দ্বিতীয়ার্ধে রুবেন বারাজার হেডে গোল পেয়ে যায় স্পেন। কিন্তু ডিফেন্ডারকে ধাক্কা দেওয়ায় উগান্ডার রেফারি আলি তমুসাঙ্গে গোলটি বাতিল করে দেন। নব্বই মিনিটে আর কোনো গোল না হওয়ায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

রেফারির সাথে স্পেন অধিনায়ক ফার্নান্দো হিয়েরো; Image Source: Getty Image

সেই বিশ্বকাপে গোল্ডেন গোল পদ্ধতিতে অতিরিক্ত সময়ের ফলাফল নির্ধারিত হতো। দ্বিতীয় রাউন্ডে দক্ষিণ কোরিয়া গোল্ডেন গোলের সুবিধা নিয়েই ইতালিকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছায়। তবে এবার সেই একই গোল্ডেন গোলের দুর্ভাগ্য দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় হজমই করতে হয়েছিলো। অতিরিক্ত সময়ে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার জোয়াকিনের ক্রসে বল জালে জড়ান স্ট্রাইকার ফার্নান্দো মরিয়েন্তিস। কিন্তু ক্রস তোলার আগেই বল গোল লাইনের বাইরে যাওয়ায় ফ্ল্যাগ তুলেন লাইন্সম্যান। দ্বিতীয়বারের মতো লা রোহাদের গোল বাতিল হয়ে যায়।

অতিরিক্ত সময়ে আর গোল না হওয়ায় গেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে জোয়াকিনের শটটি আটকে দেন দক্ষিণ কোরিয়ান গোলরক্ষক লি উন জি। অন্যদিকে ৫টি শটই জালে জড়িয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ৫-৩ ব্যাবধানে স্পেনকে হারিয়ে চলে যায় শেষ চারে। ম্যাচ হারার জন্য স্প্যানিশ খেলোয়াড়েরা রেফারি ও লাইন্সম্যানদের কাঠগড়ায় তোলেন। তবে সেমি ফাইনালে জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে দক্ষিণ কোরিয়ার স্বপ্নযাত্রা ওখানেই শেষ হয়।

টাইব্রেকারে স্পেনকে হারানোর পর দক্ষিণ কোরিয়ার উল্লাস; Image Source: The Telegraph

ইতালি ৩ – ২ ব্রাজিল ( ১৯৮২ বিশ্বকাপ )

জিকো, সক্রেটিস, ফ্যালকাওদের ১৯৮২ বিশ্বকাপের ব্রাজিলকে বলা হয় ব্রাজিলের অন্যতম সেরা একটি দল। গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচে জয় নিয়েই দ্বিতীয় রাউন্ডে আসে সেলেসাওরা। অন্যদিকে গ্রুপের তিনটি ম্যাচেই ড্র করে অনেকটা ভাগ্যের জোরেই পরবর্তী রাউন্ডে খেলতে নামে ইতালি। ইতালির সেরা স্ট্রাইকার পাওলো রসি একটি ম্যাচেও গোল পাননি তখনো।

১৯৮২ বিশ্বকাপের ব্রাজিল দল; Image Source: Fifa Wallpaper

ইতালি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাকে নিয়ে করা দ্বিতীয় রাউন্ডের গ্রুপ থেকে একটি দল খেলতে পারবে সেমিফাইনাল। ব্রাজিল ৩-১ গোলে আর ইতালি ২-১ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারালে ব্রাজিল-ইতালি ম্যাচ পরিণত হয় সেমি ফাইনালের টিকেট পাওয়ার ম্যাচে। জোগো বোনিতো ফুটবল খেলা ব্রাজিল সেই বিশ্বকাপে এর আগপর্যন্ত ছিলো দুর্দান্ত। অন্যদিকে ইতালির শক্তি ছিলো রক্ষণভাগ। আগের চার ম্যাচে বিবর্ণ রসির পাশাপাশি ইতালির আক্রমণভাগও ছিলো নিষ্প্রভ। কিন্তু সেরারা জ্বলে ওঠেন সঠিক সময়েই। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জ্বলে উঠলেন পাওলো রসি।

৫ জুলাই স্পেনের বার্সেলোনাতে মুখোমুখি হয় ফুটবলের দুই পরাশক্তি ব্রাজিল ও ইতালি। মিনিট পাঁচেকের মাথায় কাবরিনির ক্রসে হেডে ইতালিকে এগিয়ে দেন রসি। তবে বেশিক্ষণ লিড ধরে রাখতে পারেনি ইতালি। ব্রাজিলের মুহুর্মুহু আক্রমণে ১২ মিনিটে গোল খায় ইতালি। দলকে সমতায় ফেরান সক্রেটিস। আধা ঘন্টা যেতে না যেতেই রসি করেন দলের দ্বিতীয় গোলটিও। প্রথমার্ধ ২-১ এ এগিয়ে থেকেই ড্রেসিং রুমে যায় আজ্জুরিরা। তবে ৬৮ মিনিটে ২০ গজ দূর থেকে ফ্যালকাওয়ের জোরালো শটে দ্বিতীয়বারের মতো ম্যাচে ফেরে ব্রাজিল। কিন্তু ছয় মিনিটের মাথায় লিড আবারো পুনুরুদ্ধার করে ইতালি। এবারো নায়ক রসি। কর্নার থেকে ব্রাজিলের দুর্বল ক্লিয়ারেন্সে ডি বক্সের বাইরে দাঁড়ানো রসি বল পান। তাতেই হ্যাটট্রিক করে ইতালিকে আনন্দে উৎসবে ভাসান রসি। সেইবার ইতালিকে চ্যাম্পিয়ন করেই গোল্ডেন বল জিতে নেন প্রথম চার ম্যাচ নিষ্প্রভ থাকা রসি। মনোমুগ্ধকর ফুটবল খেলেও দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিশ্বকাপ যাত্রার সমাপ্তি ঘটে সাদা পেলে খ্যাত জিকোর ব্রাজিলের।

ইতালির জয়ের নায়ক পাওলো রসি; Image Source: The Daily Mail

স্লোভাকিয়া ৩ – ২ ইতালি (২০১০ বিশ্বকাপ)

ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইতালি ২০১০ বিশ্বকাপ শুরু করে প্রথম দুই ম্যাচ ড্র করে। শেষ ম্যাচে স্লোভাকিয়াকে হারানো ব্যতিত আর কোনো উপায় ছিলো না ক্যানাভারোর ইতালির। ২৪ জুন জোহানেসবার্গে মুখোমুখি হয় চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি আর স্লোভাকিয়া। ম্যাচের ২৫ মিনিটের মাথায় স্লোভাকিয়াকে এগিয়ে দেন ভিতেক। প্রথমার্ধে আর কোনো গোলের দেখা না পাওয়ায় দ্বিতীয়ার্ধে স্লোভাকিয়াকে চেপে ধরে ইতালি। কিন্তু অল আউট অ্যাটাক যাওয়া ইতালিকে প্রতি আক্রমণে ৭৩ মিনিটে আরেকটি গোল দিয়ে বসেন ভিতেক। ৮১ মিনিটে ডি নাটালের গোলে ইতালির আশার আলো একটু জ্বলে উঠলেও ৮৯ মিনিটে সেই আলো পুরোপুরি নিভিয়ে দেন কপুনেক। স্লোভাকিয়া এগিয়ে যায় ৩-১ গোলে। যোগ করা সময়ে কোয়াগলিয়ারেলার গোল শুধু ব্যবধান কমায়। ম্যাচটি আজ্জুরিরা হেরে যায় ৩-২ গোলে। তাতেই ১৯৯৮ এর ফ্রান্সের মতো পরের বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হয়েও গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয় পিরলো, গাত্তুসো, বুফনদের ইতালি।

ম্যাচ হারের পর ইতালির খেলোয়াড়েরা; Image Source: The Sun

দক্ষিন কোরিয়া ২ – ০ জার্মানি (২০১৮ বিশ্বকাপ)

মেক্সিকোর সাথে প্রথম ম্যাচ হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানি পরের ম্যাচে হারায় সুইডেনকে। তবে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার জন্য শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারানো ছাড়া কোনো বিকল্প ছিলো না নয়্যার, ক্রুসদের সামনে।

র‌্যাঙ্কিংয়ে ১ নাম্বারে থাকা জার্মানির সামনে শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয় ৫৭ নাম্বারে থাকা দক্ষিণ কোরিয়া। ধারে ভারে এগিয়ে থাকা ডাই ম্যানশ্যাফটরা জিতবে এমনটাই ভেবে রেখেছিলেন সবাই। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে ২-০ গোলে জার্মানিকে হারিয়ে আবারো গ্রুপপর্ব থেকেই চ্যাম্পিয়নদের বিদায় করে দেয় দক্ষিণ কোরিয়া। সাথে ২০০২ বিশ্বকাপ সেমি ফাইনালের বদলাও তুলে নেয় এশিয়ান জায়ান্টরা।

গোল মিসের পর হতাশাচ্ছন্ন জার্মান খেলোয়াড়েরা; Image Source: Goal.com

প্রথমার্ধে নির্বিষ আক্রমণের পর দ্বিতীয়ার্ধে গোছালো জার্মানি কিছুটা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। কিন্তু একের পর এক সুযোগ মিস আর কোরিয়ান গোলরক্ষক হুন উ চুর দৃঢ়তায় গোলের দেখা পেয়ে ওঠেননি ভার্নার, গোমেজরা। উল্টো কর্নার থেকে জার্মান ডিফেন্ডারদের ভুলে বল পেয়ে দলকে ৯৪ মিনিটে এগিয়ে দেন ইয়ং গোন কিম। গোলের পিছে মরিচিকার মতো ছুটতে থাকা জার্মানরা নিজেদের অর্ধ খালি রেখে অল আউট অ্যাটাকে চলে আসে। এমনকি গোলকিপার নয়্যারও পর্যন্ত মিডফিল্ড ছেড়ে উপরে চলে আসেন। সেই সুযোগে ৯৭ মিনিটে দলকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন দলের তারকা হং মিন সন। আর তাতেই কপাল পোড়ে ডাই ম্যানশ্যাফটদের। টানা তৃতীয়বারের মতো গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় ঘটে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের।

This Bangla article is about the upsets in world cup. Necessary sources are hyperlinked in the article.

Feature Image: Fifa wallpaper

Related Articles