- বাসেল ০–৪ ম্যানচেস্টার সিটি
- জুভেন্টাস ২–২ টটেনহাম হটস্পার
- এফসি পোর্তো ০–৫ লিভারপুল
- রিয়াল মাদ্রিদ ৩–১ প্যারিস সেইন্ট জার্মেই
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া লিগের আসরগুলো মৌসুম জুড়ে মাতিয়ে রাখে সারাবিশ্বের অগণিত ভক্তকে। আর সেই উত্তেজনায় ভিন্ন এক মাত্রা যোগ করে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ। আগের মৌসুমে ইউরোপিয়ান প্রধান লিগগুলোর প্রত্যেকটির শীর্ষে থাকা প্রথম চারটি দল করে মোট ৩২টি দল নিয়ে আসর বসে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের। প্রথম রাউন্ডে অর্থাৎ গ্রুপ স্টেজে দলগুলোকে ভাগ করে দেয়া হয় মোট আটটি গ্রুপে। সেখান থেকে প্রত্যেক গ্রুপ থেকে বিজয়ী হওয়া প্রথম দু’দল করে নিয়ে মোট ১৬ দলের সমন্বয়ে শুরু হয় ‘রাউন্ড অব সিক্সটিন’। ২০১৭/১৮ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগের রাউন্ড অফ সিক্সটিনের প্রথম আট দলের খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো গত ১৪ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি। খেলা শুরু হয় বাংলাদেশ সময় রাত ১:৪৫ মিনিটে। চলুন চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক ম্যাচ রিপোর্টগুলোর উপর।
১৪ ফেব্রুয়ারি / রাত ১:৪৫ মিনিট
প্রথম দিন, ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাসেল বনাম ম্যানচেস্টার সিটি এবং জুভেন্টাস বনাম টটেনহামের ম্যাচটি। একতরফাভাবে বাসেলের বিপক্ষে ম্যাচটি জিতে নেয় ম্যানসিটি। দলের হয়ে উদ্বোধনী গোলটি করেন ক্লাবের জার্মান মিডফিল্ডার ইলকায় গুন্ডোগান। প্রথমার্ধের ১৪ মিনিটের মাথায় সতীর্থ খেলোয়াড় কেভিন ডুব্রানার কর্নার থেকে নেয়া শট থেকে গোলটি করেন গুন্ডোগান।
এর ঠিক চার মিনিট পর রাহিম স্টারলিংয়ের পা থেকে আসা বল থেকে সিটির হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন বার্নার্ডো সিলভা। তারপর ২৩ মিনিটের মাথায় দলের স্ট্রাইকার আগুয়েরো করেন তৃতীয় গোল। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৩ মিনিটে দলের চতুর্থ ও নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন গুন্ডোগান। প্রথম লেগের ম্যাচে ৪–০ বিশাল ব্যবধান নিয়ে মাঠ ছাড়ে ম্যানচেস্টার সিটি। ঘরোয়া লিগে শীর্ষে থাকা পেপ গার্দিওলার দল এই মৌসুমে এগিয়ে চলেছে দুর্দান্ত গতিতে। কোনো অঘটন না ঘটলে হয়তো এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা উঠতে পারে তাদের ঘরেই। গত দুই মৌসুম ধরে বার্সেলোনার কাছে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়া সিটি এবারে ফাইনাল খেলার দৃঢ় মনোবল নিয়েই মাঠে নেমেছে।
অন্যদিকে একইসাথে শুরু হওয়া অন্য একটি ম্যাচে টটেনহাম মোকাবিলা করে স্বাগতিক জুভেন্টাসের। খেলার প্রথমার্ধ শুরু হতে না হতেই ২ মিনিটের মাথায় মিরালেম পিয়ানিকের সেটপিস থেকে প্রথম গোলটি করেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার গঞ্জালো হিগুয়াইন। ৯ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে দলের এবং নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন হিগুয়াইন।
প্রথমার্ধেরই ৩৫ মিনিটের মাথায় ডেলে আলির থ্রু বল থেকে টটেনহামের হয়ে প্রথম গোলটি করেন হ্যারি কেইন। প্রথমার্ধের ৪৫ মিনিটের দিকে আরেকটি পেনাল্টি পায় জুভেন্টাস, কিন্তু সেই পেনাল্টি থেকে দলকে ৩–১ গোলে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন হিগুয়াইন। গোলরক্ষক লরিসের ১১ মিটার দূরত্ব থেকে নেয়া শটটি ক্রসবারে লাগে। ২–১ গোল ব্যবধানে খেলার প্রথমার্ধের সমাপ্তি ঘটে।
৭১ মিনিটের মাথায় ডি-বক্সের মাথা থেকে দুর্দান্ত ফ্রি-কিকের মাধ্যমে টটেনহামের পক্ষে দ্বিতীয় গোলটি করে দলকে সমতায় নিয়ে আসেন আক্রমণভাগের খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ান এরিকসন। ২-২ গোল ড্র হয় সেই ম্যাচটি।
১৫ ফেব্রুয়ারি / রাত ১:৪৫ মিনিট
গতকাল রাতে অনুষ্ঠিত হয় আরো দুটি ম্যাচ, যার একটিতে লিভারপুল মোকাবিলা করে স্বাগতিক এফসি পোর্তোর এবং নিজেদের মাঠে রিয়াল মাদ্রিদ নামে ফরাসি ক্লাব পিএসজির। খেলার শুরু থেকে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের পর ২৫ মিনিটের মাথায় লিভারপুলের হয়ে প্রথম গোলটি করেন উইঙ্গার সাদিও মানে।
তার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই জেমস মিলনারের একটি বাঁকানো শট ক্রসবার লেগে ফিরে এলে, তা থেকে একটি দৃষ্টিনন্দিত গোল করেন দলের মিশরীয় ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ্। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধের খেলা শেষ করে লিভারপুল। তারপর দ্বিতীয়ার্ধের ৬৩ মিনিটের মাথায় নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন সাডিও মানে এবং ৬৯ মিনিটের মাথায় চতুর্থ গোলটি করেন রবার্তো ফিরমিনহো।
শেষমেশ খেলা শেষ হওয়ার রেফারির শেষ বাঁশি বাজানোর পাঁচ মিনিট পূর্বে পোর্তোকে হতাশায় ডুবিয়ে দিতে দলের পঞ্চম গোল এবং নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন সাডিও মানে। সালাহ্কে দলে ভেড়ানোর পর লিভারপুলের আক্রমণভাগ হয়ে উঠেছে অদম্য। ঘরোয়া লিগে খুব কম সময়ের ব্যবধানে করেছেন ২২টি গোল, এছাড়াও আরও ৭টি গোলের সাথে ছিলেন পরোক্ষভাবে জড়িত। মানে-ফারমিনহো- সালাহ, আক্রমণভাগের এই ত্রয়ীর করা ৫ গোলের বিশাল ব্যবধানের জয় নিয়ে পোর্তোর স্ট্যাডিয়াম ছাড়ে লিভারপুল। তাদের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত বলা চলে। ফিরতি ম্যাচে পোর্তোকে লিভারপুলের মোকাবেলা করতে হবে লিভারপুলেরই মাঠে, এবং জিততে হলে প্রয়োজন ৬টি গোল।
অন্যদিকে নিজেদের মাঠে রিয়াল মাদ্রিদ নামে ফরাসি ক্লাব পিএসজির বিপক্ষে। খেলা শুরুর আগে থেকেই ফুটবল বিশ্ব মেতে ছিল আজকের এই ম্যাচটি নিয়ে। কেননা সেকেন্ড লেগ শেষে এই দু’দলের জয়-পরাজয়ের উপর নির্ভর করছে দু’দলেরই ম্যানেজারদের ভাগ্য। তারকা ফুটবলার ভরপুর পিএসজিকে নিয়ে অনেকেই উচ্চাকাঙ্ক্ষা করেছিলেন। মৌসুমের শুরুতে প্রায় সাড়ে ৪০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে পিএসজি দলে ভেড়ায় বর্তমান সময়ের দুর্দান্ত দুই ফরোয়ার্ড নেইমার ও এম্বাপ্পেকে। বলা বাহুল্য, পিএসজিই ছিল আজকের হট ফেভারিট। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসের সেরা দল রিয়াল মাদ্রিদকে ছোট করে দেখাটা কত বড় ভুল সেটা দেখাতেই আজ মাঠে নেমেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। খেলার প্রথম ৪৫ মিনিট রিয়াল মাদ্রিদ ধীর গতিতে খেললেও শেষার্ধ্বে ফিরে আসে তাদের চিরচেনা রূপে।
প্রথমার্ধের ৩৩ মিনিটের মাথায় নাচো হার্নান্দেজের পায়ে লেগে ফিরে আসা বল থেকে গোল করে পিএসজিকে এগিয়ে নেন দলের তরুণ মিডফিল্ডার অ্যাড্রিয়েন র্যাবিয়ট। আর প্রথমার্ধের ৪৫ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে রিয়াল মাদ্রিদকে সমতায় নিয়ে আসেন বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আক্রমণ চালিয়ে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। ৬৮ ও ৭৯ মিনিটের মাথায় দলের খেলার কৌশলে পরিবর্তন নিয়ে আসেন মাদ্রিদের কোচ জিনেদিন জিদান। বিশেষ করে দলের তরুণ খেলোয়াড় মার্কো অ্যাসেন্সিও মাঠে নামার পর পুরোপুরি বদলে যায় ম্যাচের রূপ। শেষার্ধের ৮৩ মিনিটে অ্যাসেন্সিওর একটি ক্রস প্রতিপক্ষের গোলরক্ষকের হাতে লেগে ফিরে এলে বলটি জালে পাঠান ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
আর সেই গোলের রেশ কাটতে না কাটতে ৮৬ মিনিটের মাথায় অ্যাসেন্সিওর নেয়া একটি ক্রস থেকে নেয়া শটে পিএসজির কফিনের তৃতীয় পেরেকটি ঠুকে দেন মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান ফুলব্যাক মার্সেলো। ৩-১ গোলের ব্যবধান নিয়ে প্রথম লেগের খেলা শেষ করে রিয়াল মাদ্রিদ। আজকের ম্যাচে করা গোলের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের টানা ৭ ম্যাচে ১০টিরও বেশি গোল করার রেকর্ড গড়লেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
বড় কোনো অঘটন না ঘটলে লিভারপুল ও ম্যানসিটির কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত। তবে লেগের দ্বিতীয় ম্যাচে ফেরার সুযোগ রয়েছে পিএসজি এবং টটেনহামের, যেহেতু নিজেদের মাঠেই মোকাবেলা করতে হবে প্রতিপক্ষকে। নিজেদের মাঠ হওয়ায় সুবিধা তো আছেই, তাছাড়া অ্যাওয়ে গোল থাকায় হয়তো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা খুব একটা কঠিন হবে না টটেনহামের জন্যে। তবে পিএসজির কপালে রয়েছে দুর্গতি। অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা নিয়ে জিততে হলে তাদেরকে ফিরতি ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদকে হারাতে হবে ২-০ গোলে। খেলার স্কোর ৩-১ (৪-৪) হলে সেটা গড়াবে টাইব্রেকার পর্যন্ত। কিন্তু মাদ্রিদকে হারানো খানিকটা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে তাদের জন্যে। দু’বারের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ ঘরোয়া লিগে পিছিয়ে বার্সেলোনা থেকে বেশ পিছিয়ে থাকার কারণে এবার মনেপ্রাণে চাইবে চ্যাম্পিয়নস লিগ নিজেদের ঘরে তোলার। তার উপর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বরাবর ফর্মে থাকা ক্রিস্টিয়ানো আজকে জোড়া গোল করে জানিয়ে দিলেন যে, কাগজে-কলমে তাদের রুখে দেয়াটা সহজ মনে হলেও মাঠে সেটা মোটেও ততোটা সহজ নয়। এই আটটি দল সেকেন্ড লেগে পুনরায় নিজেদের মোকাবিলা করবে আগামী মার্চ মাসের ৭ এবং ৮ তারিখ।
অন্যদিকে, এই মাসের ২১ ফেব্রুয়ারি, রাউন্ড অফ সিক্সটিনের অন্য ম্যাচগুলোতে নিজেদের মাঠে চেলসি মোকাবেলা করবে বার্সেলোনার এবং বায়ার্ন মিউনিখ বেসিকটাসের। পরের দিন ২২শে ফেব্রুয়ারি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড খেলবে স্বাগতিক সেভিয়ার এবং শাখতার মোকাবেলা করবে রোমার বিপক্ষে। সেই ম্যাচগুলোর রিপোর্ট নিয়ে যথাসময়ে হাজির হয়ে যাবো আমরা আপনাদের সামনে।