Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এটা আমার স্বপ্নপূরণের রাত: লুকা মদ্রিচ

এই বছরটা তার সামনে এগিয়ে আসার বছর।

গত কয়েক বছর ধরেই তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। কিন্তু কখনো রোনালদোর ছায়ায়, বা কখনো অন্য কারো ছায়ায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। অবশেষে এবার বিশ্বকাপে সবার ছায়া থেকে বেরিয়ে এসেছেন, ক্রোয়েশিয়াকে করেছেন বিশ্বকাপের রানারআপ। তারই স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিতেছিলেন। এবার ফিফার ‘দ্য বেস্ট’ পুরষ্কার জিতলেন লুকা মদ্রিচ।

‘দ্য বেস্ট’ জয়ের পর ‘ফিফা ডট কম’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লুকা মদ্রিচ বলেছেন নিজের অনুভূতির কথা।

বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল হাতে; Image Source: Reuters

ক্যারিয়ারের প্রথম ‘দ্য বেস্ট’ পুরষ্কার জেতার অনুভূতিটা কেমন?

এটা একটা অসামান্য অনুভূতি। আমি খুব গর্বিত এবং আজ এখানে থাকতে পেরে সম্মানিত। এটা আমার জন্য বিশেষ একটা রাত এবং আমার ক্যারিয়ারে বিশেষ একটা মুহূর্ত।

‘দ্য বেস্ট’ পুরষ্কারটায় ভোট দেন খেলোয়াড়রা, কোচরা, মিডিয়া এবং সমর্থকরা। এদের সবার কাছ থেকে এই স্বীকৃতি পাওয়ার অনুভূতি কী?

এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এত মানুষের দ্বারা বাছাই হওয়ার চেয়ে বড় পুরষ্কার আর নেই। আমি সেই সকল লোকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা আমাকে সবসময় সহায়তা করেছেন এবং সমর্থন করেছেন।

অনেক বছর পর এবার এসে লিওনেল মেসি বা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বাইরে কেউ এই ব্যক্তিগত পুরষ্কারটা জিতলো। এটা কি আপনার অনেকগুলো জয়ের প্রথমটা হবে?

দেখা যাক। আমি এই মুহূর্তে সেটা নিয়ে ভাবছি না। আমি এবার পুরষ্কারটা নিতে পেরে খুবই খুশি। অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে বিশ্বে, ওই দুজন এবং আরও অনেকে। তাতে একটা গর্ব হচ্ছে যে, আমি তাদের সবাইকে হারিয়ে এটা অর্জন করেছি। এটা প্রমাণ করছে যে, আমার কঠোর পরিশ্রমের স্বীকৃতি মিলছে। এটাই সেই রাত, যে রাতে আমার সব স্বপ্ন সত্যি হলো।

আপনার এই বছরটা নিয়ে কিছু বলুন।

এটা অসাধারণ ছিলো। আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা বছর, সেটা সামষ্টিক বিবেচনায় এবং ব্যক্তিগত বিবেচনায়। আমি আমার ক্লাবের হয়ে এবং জাতীয় দলের হয়ে যা অর্জন করেছি, তাতে আমি খুবই তৃপ্ত। সেই সাথে ‘দ্য বেস্ট’-এর মতো ব্যক্তিগত পুরষ্কার, বা বিশ্বকাপে সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার পেয়েছি।

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে; Image Source: AS

আপনি যদি বছরের একটা ঝলক বেছে নেন, সেটা কোনটা হবে?

এত বেশি মুহূর্ত আছে যে, একটা বেছে নেওয়া খুব কঠিন। তবে আমি মনে করি, এটা বিশ্বকাপ ফাইনালই হওয়া উচিত। এটা আমার ক্যারিয়ারের বৃহত্তম ম্যাচ ছিলো। আমি আমার দেশের হয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলছি; বিশ্বকাপ – যেটা কি না এই গ্রহের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর। এই অনুভূতিটা অনন্য। সেই সাথে নিজের দলকে নেতৃত্ব দেওয়াটা ছিলো বাড়তি একটা অনুপ্রেরণা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ব্যাপারগুলো আমাদের পক্ষে যায়নি, আমরা হেরে গিয়েছিলাম। তবে আমি তারপরও এই অবধি যাওয়াটাকে একটা সাফল্য হিসেবেই দেখি। আমরা এমন কিছু করেছি, যেটা ইতিহাসে লেখা থাকবে।

প্রত্যেক শিশুই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আপনার ক্ষেত্রেও কি তা-ই ছিলো ঘটনাটা?

আপনি যখন ফুটবল শুরু করবেন, অবশ্যই এই স্বপ্ন আপনার থাকবে। আমি একজন এমন মানুষ, যে সবসময়ই সেরা হতে চায়। ফলে এটা খুব স্বাভাবিক যে আমি স্বপ্ন দেখেছি, একদিন আমি এই অবধি আসতে পারবো। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে, আজ আমি সেখানে পৌঁছেছি। এটাই সেই ব্যাপার, যার জন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমি নিজের কঠিন সময়গুলোতেও নিজেকে ঠেলেছি, নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছি। অবশ্যই এই অবধি আসার জন্য আমার সতীর্থদের, আমার পরিবারকে এবং আমার বন্ধুদের ধন্যবাদ জানাতে হবে।

যেসব কঠিন সময়ের কথা বললেন, সেগুলো কীভাবে পার করেছেন?

নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে; এমনকি যখন অন্যরা সেই বিশ্বাসটা রাখেনি, তখনও। পরিবারের কাছাকাছি অবস্থান করেছি, ভালোবাসার মানুষের কাছে থেকেছি, ইতিবাচক থেকেছি এবং সবসময় সামনে এগোনোর চেষ্টা করেছি। কঠোর পরিশ্রম করেছি, কখনোই হাল ছেড়ে দেইনি, পথে কখনো লক্ষ্যচ্যুত হইনি। এই জিনিসগুলোই আসলে আপনাকে মনে রাখতে হবে।

আপনার জন্য অসাধারণ একটা বছর গেলো। এখন এটার থেকেও কীভাবে ভালো করতে পারেন?

এটা খুব সহজ একটা কাজ হবে না। আমি আগেই যেমনটা বলেছি, আমি সবসময় সব দিক দিয়ে উন্নতি করার চেষ্টা করি। তবে এখন আমি যেরকম ফর্মে আছি, সেটা যদি ধরে রাখতে পারি, তাহলে এটা অসাধারণ একটা ব্যাপার হবে। শীর্ষে পৌঁছানোটা কোনও সহজ কাজ নয়, তবে সেখানে টিকে থাকা আরও কঠিন কাজ। আমি গত কয়েক বছর ধরে শীর্ষ ফর্মে আছি। আমি আশা করি, আরও কয়েক বছর এরকম অবস্থায় থাকতে পারবো।

ক্রোয়েশিয়ার হয়ে মাঠে; Image Source: Reuters/F. Bensch

আপনি এই খেলাটায় এখন ‘দ্য বেস্ট’। আপনি যদি জীবনের আরও কোনো ক্ষেত্রে সেরা হওয়ার ব্যাপারটা বেছে নেওয়ার সুযোগ পান, সেটা কোন ক্ষেত্রে হবে?

আমি একজন মাটির মানুষ এবং সাদাসিধে ব্যক্তিত্ব। আমি একজন পারিবারিক মানুষ এবং পরিবারের সাথে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ। ফলে এরকম সুযোগ এলে আমি সম্ভবত পরিবারকে সময় দেওয়াতে সেরা হতে চাইবো। আর জীবনের সব বড় মুহূর্তগুলো তাদের সাথে ভাগ করে নিতে চাইবো।

লুকা মদ্রিচ

যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক দেশে মধ্যবিত্ত এক পরিবারে জন্ম লুকা মদ্রিচের। শৈশবেই দেখেছেন যুদ্ধের ফলে নিজের দাদার মৃত্যু। যুদ্ধ তাদের নিজেদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছিলো। বাবাকে শৈশবে কাছে পাননি, কারণ বাবা তাদের রেখে চলে গিয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে। বড় হয়েছেন শরণার্থী শিবিরে, সেখানেই খেলা দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন লোকদের।

সম্প্রতি দেশের ফুটবল দুর্নীতির এক মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন, এমন অভিযোগ উঠেছিলো মদ্রিচের বিপক্ষে। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার জেল অবধি হয়ে যেতে পারে। আর এই জেল-জরিমানার হুমকি মাথায় নিয়েই রিয়ালের হয়ে, ক্রোয়েশিয়ার হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন। করেছেন বিশ্ব ফুটবলের হৃদয় জয়।

ক্রোয়েশিয়ার ডায়নামো জাগরেবে খেলার শুরু। সেখান থেকে এসেছিলেন ইংল্যান্ডের টটেনহ্যাম হটস্পারে। টটেনহ্যামে ১২৭টি ম্যাচ খেলেছেন চার বছরে। ২০১২ সাল থেকে বিশ্বের অন্যতম সফল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের মাঝমাঠের প্রাণভোমরা মদ্রিচ। ইতোমধ্যে রিয়ালের হয়ে খেলে ফেলেছেন ১৭১টি ম্যাচ।  

চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি হাতে; Image Source: Zimbio

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে একটি লা লিগা, একটি কোপা দেল রে, দুটি সুপার কোপা, চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ, তিনটি উয়েফা সুপার কাপ এবং তিনটি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছেন। গত তিন আসরে টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের অন্যতম কারিগর তিনি। ক্লাবের হয়ে নিজেকে চিনিয়েছেন অনেকদিন আগেই, তবে কিছুটা ঢাকা পড়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ছায়ায়।

ক্রোয়েশিয়া জাতীয় দলের হয়েও তার দারুণ সাফল্য। জাতীয় দলের হয়ে তিনটি ইউরো ও তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। বিশেষ করে এবার দলকে যেভাবে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলে নিয়ে গেছেন, সেটা ছিলো রূপকথার মতো একটা ব্যাপার। তারই স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার পেয়েছেন।

‘মাঝমাঠের জাদুকর’ ব্যাপারটা সারা বিশ্বে যখন কমতে চলেছে, সেই সময়ে মাঝমাঠে এখনও অসামান্য এক সৃজনশীল খেলোয়াড় হিসেবে দিনকে দিন নিজেকে আরও শক্তিশালী করে তুলছেন লুকা মদ্রিচ।

ফিচার ইমেজ: MICHAEL REGAN/FIFA/FIFA VIA GETTY IMAGES

Related Articles