Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফাইনালের আগের ফাইনাল

চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্ব শুরু, ৩২ দল থেকে ক্রমে নেমে এসেছে ৮ দলে। স্বাভাবিকভাবেই দলগুলোর মাঝে শক্তির পার্থক্য তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ৪ কোয়ার্টার ফাইনালের মাঝে ‘রিয়াল মাদ্রিদ বনাম জুভেন্টাস’ এর লড়াইটাই হবে সবচেয়ে হাই ভোল্টেজ ম্যাচ। সেটা শুধু নামের ভারের কারণে নয়, তাদের পারফর্মেন্সের কারণেও। কী হতে পারে আজকের ম্যাচের ফলাফল সেটা নিয়েই এই আলোচনা।

‘রিয়াল মাদ্রিদ’ বনাম ‘জুভেন্টাস’ – গত চ্যাম্পিয়নস লিগের দুই ফাইনালিস্ট, নিঃসন্দেহে ইউরোপের দুই জায়ান্ট। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এই মৌসুমে কোনো দলই নিজ গ্রুপ থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের পর্বে যেতে পারেনি। জুভেন্টাসের গ্রুপে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বার্সা এবং রিয়াল মাদ্রিদের গ্রুপে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল টটেনহাম। তবে নকআউট পর্বে টটেনহাম বাদ পড়ে এই জুভেন্টাসের কাছেই, আর রিয়াল মাদ্রিদ হারায় সমসাময়িক সবচেয়ে আলোচিত দল পিএসজিকে।

রিয়াল মাদ্রিদের এই সিজনের ফর্মটা তুলনামূলক ভাবে বেশ খারাপ যাচ্ছে। ঘরোয়া কাপ থেকে আগেই বাদ পড়েছে, বড় ধরনের নাটকীয় কিছু না হলে লা লিগা যাচ্ছে বার্সেলোনার ঘরেই। সেই ক্ষেত্রে সিজনের একমাত্র শিরোপা জয় করার সুযোগটাকে নিশ্চয়ই হাতছাড়া করতে চাইবেন না জিদান কোম্পানি। তাছাড়া এই সিজনে চ্যাম্পিয়নস লিগে দুর্দান্ত ফর্মেই আছে রিয়াল মাদ্রিদ এবং তাদের মূল খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এই সিজনে ১২টি গোল করে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটা ধরে রেখেছেন ক্রিস। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে গ্রুপের সব কয়টি ম্যাচে গোল করার কৃতিত্ব ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দিকেই তাকিয়ে থাকবে মাদ্রিদ; Image Source: Goal.com

এই বিষয়টা যদি রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের খুশির কারণ হয় তাহলে একই সাথে সেটা কিছুটা দুশ্চিন্তারও। চ্যাম্পিয়নস লিগে এই সিজনে রিয়াল মাদ্রিদ গোল করেছে ২২টি, এর মাঝে অর্ধেকের বেশী (১২টি) গোল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। এখন পর্যন্ত তিনি প্রতিটি ম্যাচেই গোল করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গোল বিহীন একটি ম্যাচ যেতেই পারে। সেই দিনটিতে বড় ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদকে কে বাঁচিয়ে দেবেন সেটাই দেখার বিষয়। এই দুশ্চিন্তার পাশাপাশি মাদ্রিদ সমর্থকদের আরো একটি বিষয় ঝামেলায় ফেলতে পারে; সেটা হলো ইতিহাস।

ডিবালাকে করতে হবে ম্যাজিকাল কিছু; Image Source: Boston Herald

চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে এই পর্যন্ত দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ১১ বার। এই ১১ বারের মাঝে জুভেন্টাসের ৫ বারের জয়ের বিপরীতে রিয়াল মাদ্রিদের জয় ৪ বার, বাকি দুটো ম্যাচ ড্র হয়েছে। এছাড়া দুই দলের মধ্যকার একটা প্রীতি ম্যাচেও জয় তুলে নিয়েছে জুভেন্টাস। তবে মুখোমুখি লড়াইয়ে প্রায় সমতা থাকলেও পার্থক্যটা শুধু ফলাফল দেখে বোঝা যাবে না।

চ্যাম্পিয়নস লিগ টুর্নামেন্ট বিবেচনা করলে এবারের আগে মোট ৬টি আসরে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, গত ফাইনাল বাদে কোনোবারই নক আউট স্টেজে জুভেন্টাসকে টপকে মাদ্রিদ পরের পর্বে যেতে পারেনি। এর মানে হচ্ছে চ্যাম্পিয়নস লিগে যখনই নক আউটের দুই লেগে মুখোমুখি হয়েছে তখনই বাজিটা জুভেন্টাস জিতে নিয়েছে। এর সাথে আরেকটি বিষয় আছে, রিয়াল মাদ্রিদ কখনোই জুভেন্টাসের মাঠে গিয়ে জিতে আসতে পারেনি।

ইসকো আছেন দূর্দান্ত ফর্মে; Image Source: Managing Madrid

২০০২-০৩ মৌসুমে ঘরের মাঠে ২-১ গোলে জিতলেও পরের লেগে জুভেন্টাসের মাঠে গিয়ে ৩-১ গোলে হেরে আসে। ২০০৪-০৫ মৌসুমে ঘরের মাঠে ১-০ গোলে জিতলেও পরের লেগে অতিরিক্ত সময়ের গোলে ২-০ গোলের পরাজয় মেনে নেয় মাদ্রিদ। ২০০৮-০৯ মৌসুমে মুখোমুখি হয় গ্রুপ পর্বে, সেবার জুভের মাঠে গিয়ে ২-১ গোলে হারার সাথে সাথে ঘরের মাঠেও হারে ২-০ গোলে। ২০১৩-১৪ মৌসুমেও মুখোমুখি হয় গ্রুপ পর্বে। ঘরের মাঠে ২-১ গোলের জয় নিয়ে জুভের মাঠে ২-২ গোলে ড্র করে। এরপর ২০১৪-১৫ মৌসুমে জুভ ঘরের মাঠে জিতে ২-১ গোলে, পরের লেগে মাদ্রিদের মাঠে ১-১ গোলের ড্র জুভ’কে পাইয়ে দেয় পরের পর্বের টিকিট।

গত সিজনের মতো এবারও কি লড়াইয়ে ক্রিস্টিয়ানো জিতবেন; Image Source: YouTube

আশার কথা হচ্ছে, এই ইতিহাস জুজু হয়ে সামনে দাঁড়ালেও এই জুজু কাটানোর সামর্থ্য কিংবা শক্তি দুটোই রিয়াল মাদ্রিদ দলের রয়েছে। এছাড়া জুভেন্টাস দল হিসেবেও গত সিজনের ফাইনালের চেয়ে কিছুটা দুর্বল। গত সিজনের রাইটব্যাক দানি আলভেজ দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন পিএসজিতে। নিষেধাজ্ঞার কারণে দলে নেই মাঝ মাঠের খেলোয়াড় মিরালেম পিয়ানিচ আর ডিফেন্ডার মেহদি বেনাতিয়া। ইনজুরির কারণে অনিশ্চয়তা রয়েছে আলেক্স সান্দ্রো এবং মারিও মান্দজুকিচ যদিও দুজনকেই জুভেন্টাসের স্কোয়াডে রাখা হয়েছে।

এদিকে স্কোয়াডের দিক থেকে রিয়াল মাদ্রিদ রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। লা লিগার সর্বশেষ ম্যাচে রোনালদোকে বিশ্রাম দেবার বিলাসিতা দেখাতে পেরেছেন জিদান। আজকের ম্যাচে তাই সতেজ ক্রিস্টিয়ানোকে আশা করবে মাদ্রিদ সমর্থকেরা।

লড়াইটা দুই কোচেরও; Image Source: The Independent

রিয়াল মাদ্রিদের সম্ভাব্য একাদশ

নাভাস – কার্ভাহাল, ভারানে, রামোস, মার্সেলো – মদ্রিচ, ক্যাসিমেরো, ক্রুস – ইসকো, রোনালদো, বেনজেমা।

রিয়াল মাদ্রিদের সম্ভাব্য একাদশ; Image Source: 101greatgoals.com

জুভেন্টাসের সম্ভাব্য একাদশ

বুফন – ডি শিল্যিও, বার্জাগলি, কিয়েলিনি, সান্দ্রো – খেদিরা, মাতুইদি, মারচিজিও – দিবালা, কস্তা, হিগুয়েন।

জুভেন্টাসের সম্ভাব্য একাদশ; Image Source: 101greatgoals.com

কেমন হতে পারে দুই দলের খেলার স্ট্র্যাটেজি

প্রথাগত ভাবেই জুভেন্টাস ইতালিয়ান ডিফেন্সিভ স্টাইলে খেলে অভ্যস্ত। এর সাথে রয়েছে বিশ্বসেরা গোলকিপার বুফন। বিপরীতে প্রথাগত কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর খেলায় সাবলীল রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ঘর সামলানোকেই জরুরী মনে করার কথা জুভ বাহিনীর। জুভেন্টাস জানে যে, তাদের শক্তির জায়গাটা ডিফেন্স। তাই তারা সেদিকেই জোর দেবার কথা চিন্তা করবে। তবে আক্রমণেও হিগুয়েন কিংবা দিবালা ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। গত সিজনের কোয়ার্টার ফাইনালে দিবালার দুই ম্যাজিক্যাল গোলেই ছিটকে পড়েছিল বার্সেলোনা। এবারও এমন কিছু আশা করতেই পারে তার কাছ থেকে জুভেন্টাসের সমর্থকেরা।

অন্যদিকে রিয়াল মাদ্রিদের লক্ষ্য থাকবে এই ম্যাচেই জয় তুলে নেওয়া, সেই সাথে অবশ্যই গোল না খাওয়া। কারণ জুভেন্টাসের সাথে একবার পিছিয়ে গেলে তাদের ডিফেন্স ভাঙ্গাটা খুবই কঠিন। স্পেনের হয়ে ইসকো আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হ্যাট্রিক করায় মাদ্রিদের প্রথম একাদশে তার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাটা প্রবল। যদিও জিদানের দলের খেলার স্টাইলে প্লে মেকিং এর সুযোগ কম থাকে। প্লে মেকিং এ গেম বিল্ড আপ হয় স্লো মুভমেন্টে, রিয়াল মাদ্রিদ কুইক বিল্ড আপে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ইসকোর পরিবর্তে শুরুর একাদশে গ্যারেথ বেলের থাকাটাও তাই অস্বাভাবিক নয়। এছাড়া দ্বিতীয়ার্ধে সাব হিসেবে নেমেও ম্যাচের গতি বাড়াতে পারেন গ্যারেথ বেল

শেষ কথা

চ্যাম্পিয়নস লিগ নামকরণ হবার পর থেকে গত সিজনের আগ পর্যন্ত কোনো দলই পরপর দুইবার সেটা জিততে পারেনি। প্রথম দল হিসেবে গত সিজনে সেটা করে দেখিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। এবার তাদের লক্ষ্য টানা তিনবার শিরোপা জয়। এরকম কিছু অর্জন করতে হলে কেবলমাত্র সামর্থ্য থাকলেই হয় না, এর সাথে সাথে সামর্থ্যের প্রয়োগটাও শতভাগ থাকতে হবে। কেননা একটুখানি মনোযোগের অভাব ঘটলেই কিংবা নিজেদের মন্দ পারফর্মেন্সে প্রতিপক্ষ তার কাজটা করে ফেলতে পারে। সাথে ভাগ্যের একটু সমর্থন।

একই সাথে প্রায় সব ধরনের মর্যাদা পূর্ণ শিরোপা জিতলেও বুফনের হাতে এখনো অধরা আছে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপাটাই। ক্যারিয়ারে ৩ বার (২০০৩, ২০১৫, ২০১৭) চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেললেও এখন পর্যন্ত শিরোপার স্বাদটা পেয়ে ওঠা হয়নি। ২০০৩ সালের ফাইনালটা এসি মিলানের কাছে পেনাল্টিতে হারলেও ২০১৫ আর ২০১৭ সালের হারটা মেনে নিতে হয়েছিল সমকালীন দুই সেরা খেলোয়াড় মেসি আর ক্রিস্টিয়ানোর দল বার্সালোনা এবং রিয়াল মাদ্রিদের কাছেই। এর মাঝে গত ফাইনালে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোই তার বিপক্ষে করেছিল ২ গোল। এই বিষয়গুলো নিশ্চয়ই তাতিয়ে রাখবে বুফনকে।

ক্যারিয়ারে কখনোই চ্যম্পিয়নস লিগ না জেতা বুফন কি এবার পারবে? Image Source: Juventus.com

শক্তিশালী ডিফেন্সিভ দলের বিপক্ষে বিশ্বের অন্যতম সেরা অ্যাটাকের লড়াই – লড়াইটা ম্যাড়ম্যাড়ে হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আশা করা যায়, দুই লেগে দুটো উপভোগ্য ম্যাচের সাক্ষী হতে যাচ্ছে ফুটবল প্রেমীরা।

ফিচার ইমেজ: Chapin74

Related Articles