বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম ম্যাচে আজ মুখোমুখি হচ্ছে ফ্রান্স এবং উরুগুয়ে। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে বিদায় করে দেয়া এই দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের ম্যাচটি দারুণ উপভোগ্য হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স দেখানো কিলিয়ান এমবাপের উপরে স্বাভাবিকভাবেই স্পটলাইট থাকবে। ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম বলেছেন এই উদীয়মান তরুণের নিজেকে প্রমাণ করার জন্য এর থেকে ভালো সুযোগ আর হতে পারে না।
এই ম্যাচে খেলছেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের চারজন ফুটবলার। ফ্রান্সের আঁতোয়ান গ্রিজম্যান এবং লুকাস হার্নান্দেজ মুখোমুখি হচ্ছেন ক্লাব সতীর্থ ডিয়েগো গোডিন এবং হোসে গিমেনেজের। প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর দুই তারকা কিলিয়ান এমবাপে এবং এডিনসন কাভানিও মুখোমুখি হতে পারতেন। কিন্তু উরুগুয়ের জন্য দুর্ভাগ্য, কাফ ইনজুরির জন্য আজকের ব্যাচে এডিনসন কাভানির খেলা অনেকটাই অনিশ্চিত। টুর্নামেন্টে উরুগুয়ের ৭টা গোলের মধ্যে ৩টাই কাভানির করা। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেকেন্ড রাউন্ডে পর্তুগালের বিরুদ্ধে করা গোলটি, যেটি মুহূর্তেই রোনালদো এবং পর্তুগালের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে উরুগুয়েকে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলে দেয়।
কিন্তু ম্যাচের ৭০ মিনিটের মাথায় ইনজুরিতে পড়েন তিনি। পরে রোনালদোই তাকে মাঠের বাইরে যেতে সাহায্য করেন। তবে চোট পেলেও পুরোদমে অনুশীলন চালিয়ে গেছেন এল ম্যাটাডর। এদিকে বার্সা স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজও অনুশীলনের সময় হালকা আহত হয়েছেন, কিন্তু সেটা খুব বেশি গুরুতর কিছু নয়। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত কাভানির ছায়ায় থাকা সুয়ারেজের জ্বলে ওঠার এখনি সময়।
কেমন হবে একাদশ
এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা রক্ষণভাগ ছিল উরুগুয়ের। ৪ ম্যাচ মিলিয়ে মাত্র একটি গোল হজম করেছে দলটি। কোচ দেশম অন্তত একটা ব্যাপার নিশ্চিতভাবেই জানেন, আর্জেন্টিনার ম্যাচের মতো মুহুর্মুহু গোল করার সুযোগ এই ম্যাচে পাওয়া যাবে না। আবার কাউন্টার অ্যাটাকের দিক দিয়েও উরুগুয়ে দুর্ধর্ষ।
ফ্রান্স সম্ভবত ৪-২-৩-১ ফরমেশনে খেলতে যাচ্ছে। হিউগো লরিস থাকবেন গোলপোস্টে, সেন্ট্রাল ব্যাকে থাকবেন স্যামুয়েল উমতিতি এবং রাফায়েল ভারান। জিবরিল সিদিভেকে সাইডলাইনে থাকতে হতে পারে ইনজুরির কারণে। তবে বেঞ্জামিন পাভার্ড রাইট ব্যাকে দারুণ খেলছেন, এমনকি আর্জেন্টিনার বিপক্ষে গোলও করেছেন। লুকাস হার্নান্দেজ থাকবেন লেফট ব্যাকে। মেসিকে সামলে রাখা কানতে থাকবেন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে। মিডফিল্ডার মাতুইদি আর্জেন্টিনার সাথে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পাওয়ায় এই ম্যাচে খেলতে পারছেন না।
ফ্রান্সের অ্যাটাকিং সাইডে থাকবেন পরিক্ষিত ত্রয়ী কিলিয়ান এমবাপে, আঁতোয়ান গ্রিজম্যান এবং অলিভিয়ে জিরু। আর্জেন্টিনার সাথে গ্রিজম্যান এবং গিরোড ভালোভাবেই বল দিয়েছেন এমবাপেকে। তাদের মধ্যেকার রসায়ন উরুগুইয়ান প্রাচীর ভেদ করে একটা গোল এনে দিতে পারলেই মোটামুটি নিশ্চিন্ত হতে পারবেন ফ্রান্স সমর্থকেরা।
একনজরে ফ্রান্সের মূল একাদশ
ফ্রান্স (৪-২-৩-১)
কিলিয়ান এমবাপে, আঁতোয়ান গ্রিজম্যান, অলিভিয়ের গিরোড, লুকাস হার্নান্দেজ, পল পগবা, কোরেন্টিন তলিসো, এনগোলো কানতে, বেঞ্জামিন পার্ভার্ড, স্যামুয়েল উমতিতি, রাফায়েল ভারান, হিউগো লরিস।
উরুগুয়ে ৪-৩-১-২ ফরমেশনে খেলতে আগ্রহী, ফার্নানো মুসলেরা থাকবেন গোলপোস্টে। ডিয়েগো গোডিন এবং হোসে গিমিনেজের বিশ্বস্ত জুটি থাকবে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে। রাইট ব্যাকে থাকবেন মার্টিন কাসিরিস আর লেফট ব্যাকে ডিয়েগো লাক্সল্ট। লাক্সল্টের দায়িত্ব থাকবে দুর্দমনীয় এমবাপেকে সামলানো। তবে মনে রাখতে হবে, এই তরুণ ডিফেন্ডার পর্তুগালের সাথে ম্যাচে ৯বার আক্রমণ সামলেছেন। মিডফিল্ডে লুকাস টরেইরা লাইনআপ শুরু করবেন, তার পাশে থাকবেন ম্যাটিয়াস ভ্যাসিনো এবং নাহিতান নান্দেজ। কাভানি তো থাকছেন না, উরুগুয়ে কোচ অস্কার তাবারেজ তাই সুয়ারেজের সাথে স্টার্টিং লাইনআপ শুরু করবেন ক্রিশ্চিয়ান স্টুয়ানিকে দিয়ে। ম্যাক্সি গোমেজকেও খেলাতে পারেন, তবে তার অভিজ্ঞতা কম বলে স্টুয়ানিকেই সম্ভাব্য ধরে রাখা হচ্ছে।
একনজরে উরুগুয়ের মূল একাদশ
উরুগুয়ে (৪-৩-২-১)
ফার্নান্দো মুসলেরা(গোলকিপার), ডিয়েগো গোডিন, হোসে গিমিনেজ, মার্টিন কাসিরিস, ডিয়েগো লাক্সল্ট, ম্যাটিয়াস ভ্যাসিনো, নাহিতান নান্দেজ, লুইজ সুয়ারেজ, ক্রিশ্চিয়ান স্টুয়ানি, রডরিগো বেনটাকর, লুকাস টরেইরা।
পরিসংখ্যান
এপর্যন্ত ফ্রান্স উরুগুয়ের মুখোমুখি হয়েছে ৮বার। এরমধ্যে ফ্রান্স জিতেছে ১ বার, উরুগুয়ে ২ বার আর ড্র হয়েছে ৫ বার। বিশ্বকাপের মুখোমুখি তিন লড়াইয়েই ফ্রান্সকে পরাজিত করেছে উরুগুয়ে। এই ম্যাচ যদি উরুগুয়ে জিততে পারে তাহলে তারা বিশ্বকাপে টানা ৫ ম্যাচ জেতার রেকর্ড স্পর্শ করতে পারবে। আবার ইউরোপ মহাদেশের সাথে খেলা শেষ ৪ ম্যাচেই জিতেছে উরুগুয়ে। ফ্রান্সও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই, ১৯৭৮ সালের পরে বিশ্বকাপে কখনো দক্ষিণ আমেরিকান দলের কাছে টানা ৯ ম্যাচ হারেনি তারা।
কাভানির অনুপস্থিতি এবং আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ২-১ এ পিছিয়ে পড়বার পরেও দারুণভাবে তিনটি গোল করে ম্যাচ জেতার আত্মবিশ্বাস এবং নতুন সেনসেশন কিলিয়ান এমবাপের উপস্থিতি তাই এ ম্যাচে ফ্রান্সকেই এগিয়ে রাখছে।