Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্রিকেটের বিশ্বায়নে নতুন দুই দেশ আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হলো ফুটবল। জনপ্রিয় হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো- বিশ্বের প্রায় সব দেশই ফুটবলের সাথে সম্পৃক্ত। সে তুলনায় ক্রিকেট ৮-১০টি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। উপমহাদেশের দেশগুলোই ক্রিকেটে প্রভাব বিস্তার করছে। তার সাথে পাশাপাশি দেশ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড। এবং ইংল্যান্ড সহ কয়েকটি রাষ্ট্রে ক্রিকেটের উন্মাদনা দেখা যায়।

বর্তমানে ক্রিকেটও প্রচুর দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেছে। যার মূল কারণ হলো ফ্রাঞ্জাইজি ভিত্তিক টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্টগুলো। কিন্তু ক্রিকেটের মূল ভিত্তি হলো টেস্ট ক্রিকেট। টেস্ট খেলুড়ে দেশ আর সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয় টেস্ট ক্রিকেট এবং মানসম্মত ঘরোয়া টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পায় ২০০০ সালে। এরপর থেকে ক্রিকেটে বাংলাদেশের উন্নতিটা সবাই দেখছে।

গত ২২শে জুন বৃহস্পতিবার লন্ডনে আইসিসি বোর্ড মিটিংয়ে আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তানকে অফিসিয়ালভাবে টেস্ট স্ট্যাটাস দিয়ে পূর্ণ সদস্য দলের মর্যাদা দেওয়া হয়। এই দুই দলের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার মধ্য দিয়ে বর্তমানে টেস্ট খেলুড়ে দলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২টিতে! আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে আইসিসি বোর্ড মিটিংয়ে। সেখানে ঘোষণা করা হয়েছিল ‘আইসিসি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের’ বিজয়ী দল ১১তম দেশ হিসাবে টেস্ট খেলার মর্যাদা লাভ করবে। কিন্তু বিজয়ী দলের আরো কয়েকটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার কথা ছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইসিসি বোর্ড মিটিংয়ে আফগানিস্তান এবং আয়ারল্যান্ড দুই দলকেই টেস্ট স্ট্যাটাস দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল। তার বাস্তবায়ন হলো ২২শে জুন ২০১৭ সালে।

এখনো আইসিসি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের ৭ম আসর এখনো শেষ হয়নি। তার আগেই আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তানকে টেস্ট ক্রিকেট খেলার স্বীকৃতি দেওয়া হলো? অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। আফগানিস্তান এবং আয়ারল্যান্ডকেই কেন টেস্ট স্ট্যাটাস দেওয়া হলো? নেদারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতও তো বেশ কিছুদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। তাদের কেন দেয়া হলো না?

আফগানিস্তান এবং আয়ারল্যান্ড বেশ দ্রুত উন্নতি করেছে। তাছাড়া অনেক সাবেক ক্রিকেটার ক্রিকেটের বিশ্বায়ন চায়। কিন্তু র‍্যাংকিংয়ের এক নাম্বার দল এবং দশ নাম্বার দলের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকার কারণে সবাই আগে থেকে ম্যাচের ফলাফল আন্দাজ করতে পারে। তাই রাতারাতি ক্রিকেটের বিশ্বায়ন করাও সম্ভব না। আইসিসি বর্তমানে টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাই একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই দুই দেশকে টেস্ট স্ট্যাটাস দেয়া হলো।

আইসিসি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ এই প্রক্রিয়ায় বড় ভূমিকা পালন করেছে। এখন পর্যন্ত ৭ম আসরের ৫ম রাউন্ড শেষে আফগানিস্তান পাঁচ ম্যাচে চার জয়ে ৮১ পয়েন্ট এবং আয়ারল্যান্ড পাঁচ ম্যাচে চার জয়ে ৮০ পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। চতুর্থ রাউন্ড শেষে আয়ারল্যান্ড ১৯ পয়েন্টের ব্যবধানে প্রথম স্থানে অবস্থান করেছিল। কিন্তু ৫ম রাউন্ডে আফগানিস্তানের কাছে ইনিংস পরাজয়ে পরাজিত হয়ে কোনো পয়েন্ট পায়নি আয়ারল্যান্ড। অন্যদিকে আফগানিস্তান ২০ পয়েন্ট পেয়ে আয়ারল্যান্ডের চেয়ে এক পয়েন্ট এগিয়ে শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে।

আফগানিস্তান ক্রিকেট দল

রূপকথার মতোই তাদের ক্রিকেটে আবির্ভাব। অথচ আগের শতকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানের মানুষজন নিজেদের জীবন নিয়েই শংকায় থাকত। যেদিকেই তাকাতো শুধু রক্ত আর রক্ত দেখতো। এই শতকের শুরুতেও তারা খেলার জন্য খালি মাঠ পেতোনা। মাঠ দিয়ে কী হবে! তখন খেলাধুলা তাদের কাছে বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তালেবান হিংস্রতার হাত থেকে সবেমাত্র মুক্তি পেলেও কাবুল-কান্দাহারের মাটি তখনো রক্তাক্ত। এমতাবস্থায় খেলাধুলার মতো লাটসাহেবি শৌখিনতা করার সাহস কেউ দেখায়নি।

আফগান সরকার খেলাধুলার প্রতি তরুণদের উৎসাহিত করা শুরু করলো। যাতে করে তারা বিভীষিকাময় কালো অধ্যায় ভুলে যেতে পারে খেলায় ডুবে থেকে। আফগানিস্তানে ক্রিকেটের বিস্তারের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ভূমিকাও কিছুটা আছে। প্রতিবেশী পাকিস্তান ক্রিকেট পরাশক্তিদের মধ্যে একদল অনেক আগে থেকেই। প্রবাসী পাকিস্তানীদের কল্যাণে আফগানিস্তানীরাও ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ দেখাতে শুরু করেন। আফগান সরকার ২০০১ সালে আইসিসির কাছে আবেদন করে অ্যাফিলিয়েটেড সদস্যপদ লাভের আশায়।

আইসিসিও নিরাশ করেনি তাদের। এরপর ২০০৪ সালে এসিসি ট্রফির মধ্য দিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলে আফগানিস্তান। নিজেদের প্রথম আসরেই বাহারাইনকে হারিয়ে বাজিমাত করে আফগানরা। তিনবছর পর এসিসি ট্রফির শিরোপা ঘরে তুলেছিল আফগানিস্তান। তারা ২০০৭, ২০০৯, ২০১১ এবং ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত এসিসি ট্রফির শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছিলো। আফগানিস্তানের ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয় ২০০১ সাল থেকে। তারা মাত্র আট বছরের মাথায় ২০০৯ সালে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায়। নিজেদের প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচেই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় তুলে নেয় আফগানিস্তান। ২০১০ সালে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবারের মতো কোন বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট খেলার যোগ্যতা অর্জন করে তারা। তাদের উন্নতির ক্রমধারা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো। ২০১৪ সালে প্রথম এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় তারা। প্রথম আসরেই বাংলাদেশকে হারিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে তারা। এরপর ২০১৫ সালে একদিনের আন্তর্জাতিক বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে তারা। গ্রুপপর্বে স্কটল্যান্ডকে এক উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নেয় আফগানিস্তান।

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয়সূচক রান নেওয়ার পর উল্লাসে ফেটে পড়ছেন শাহপুর জাদ্রান ; Source – AFP

২০১৬ সালের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়েকে টপকে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে আফগানিস্তান। এবং আসরের চ্যাম্পিয়ন দল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় তারা। বর্তমানে তারা জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড সহ তাদের সমকক্ষ অন্যান্য দলকে বলেকয়ে হারিয়ে দিচ্ছে। কিছুদিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১-১ এ ওডিআই সিরিজ ড্র করে এসেছেন তাদের মাটি থেকে। ধারাবাহিক সাফল্যের ফলস্বরূপ তাদের এই মর্যাদা দেয়া হলো।

আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট দল

আফগানিস্তানের বহু আগে আইরিশ ক্রিকেটের পথচলা শুরু হয়েছে। ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডের প্রতিবেশী দেশ হওয়ার কল্যাণে আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয়েছে ১৯শতকের আগে।

১৮৩০ সালে বিভিন্ন ক্লাব গড়ে উঠেছিল আয়ারল্যান্ডে। আইরিশ ন্যাশনাল প্রথম ম্যাচ খেলে ১৮৫৫ সালে ‘দ্য জেন্টালম্যান অফ ইংল্যান্ডের’ বিপক্ষে। আয়ারল্যান্ড প্রথম বিদেশ সফরে যায় ১৮৫৮ সালে। সেখানে তারা মের্লবোন ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলে। ভূমি যুদ্ধের কারণে ১৮৮০ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত আয়ারল্যান্ডের বিদেশ সফরে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। ১৯০২ সালে আয়ারল্যান্ড প্রথম প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচ খেলে। তারপর থেকে তারা বিভিন্ন দেশের বিপক্ষে প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছিল।

১৯০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলকেও হারিয়ে দিয়েছিল তারা। ১৯৯৩ সালে আইসিসি সহযোগী দেশের স্বীকৃতি পায় আয়ারল্যান্ড। নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচ খেলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৬ সালের ১৩ জুন। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই করেই হেরেছে তারা। ইংল্যান্ডের ৩০১ রানের জবাবে ২৬৩ রান করতে সক্ষম হয়েছিল আইরিশরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণের পরের বছরেই তারা বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপেই তারা পাকিস্তানকে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় করে অঘটনের জন্ম দেয়। পাকিস্তানকে মাত্র ১৩২ রানে গুটিয়ে নিল ও’ব্রাইনের ৭২ রানের উপর ভর করে তিন উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয় আয়ারল্যান্ড। সেইসাথে সুপার এইটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে তারা। সুপার এইটেও টেস্ট খেলুড়ে বাংলাদেশকে হারায় আয়ারল্যান্ড।

পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর আইরিশ ক্রিকেটাররা দর্শকদের অভিনন্দনের জবাব দিচ্ছে ; Source – ICC

শুধুমাত্র ২০০৭ সালের বিশ্বকাপেই নয়। চার বছর পর বাংলাদেশ সহ তিন দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে তারা ইংল্যান্ডের দেওয়া ৩২৮ রানের লক্ষ্য অতিক্রম করে বিশ্বরেকর্ড গড়ে আয়ারল্যান্ড। আয়ারল্যান্ড এখন পর্যন্ত তিনটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে। প্রথম দুটি আসরে পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ডকে হারানোর পর নিজেদের তৃতীয় আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩০৫ রানের লক্ষ্য চার উইকেট হাতে রেখে অতিক্রম করেছিল আয়ারল্যান্ড।

২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের নায়ক কেভিন ও’ব্রাইন ; Source – Espn Cricinfo

দুই দলের যেসব ক্রিকেটারের উপর নজর থাকবে সবার

টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান ক্রিকেটারের উপর নজর থাকবে ক্রিকেট বিশ্বের। লিমিটেড ওভারের ক্রিকেটে সাফল্য পাওয়ার পর টেস্ট ক্রিকেটে তাদের পারফরমেন্স কেমন হবে সেটাই এখন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

এডমন্ড ক্রিস্টোফার জয়সে

ক্যারিয়ার শেষলগ্নে আছেন ৩৯ ছুঁইছুঁই এড জয়সে। আইরিশ এই ব্যাটসম্যানের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ইংল্যান্ডের হয়ে। আয়ারল্যান্ড যেবার নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছিল, তখন জয়সে ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে। নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচ খেলেছিলেন আয়ারল্যান্ডের অভিষেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তবে আয়ারল্যান্ডের হয়ে নন, ইংল্যান্ডের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের হয়ে ১৭ ম্যাচে একটি শতকের সাহায্যে ২৭.৭০ ব্যাটিং গড়ে ৪৭১ রান করেছেন জয়সে। ২০১১ সালে আয়ারল্যান্ডের হয়ে অভিষেক ঘটে জয়সের। এখন পর্যন্ত আয়ারল্যান্ডের হয়ে ৫৫টি একদিনের ম্যাচে ৩৯.১২ ব্যাটিং গড়ে ১,৮৭৮ রান করেছেন, চারটে শতক এবং ১০টি অর্ধশতকের সাহায্যে।

কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্সের হয়ে খেলার সময় এড জয়সের পুল শট ; Source – Getty Images

এড জয়সে মিডলসেক্স এবং সাসেক্সের হয়ে প্রচুর কাউন্টি ম্যাচ খেলেছেন। জয়সের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে টেস্ট ক্রিকেট ভালো সূচনা পেতে পারে আয়ারল্যান্ড। জয়সে এখন পর্যন্ত ২৫০টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে তিনি ৪৮.০৪ ব্যাটিং গড়ে ৪৬টি শতক এবং তার দ্বিগুণ ৯২টি অর্ধশতকের সাহায্যে ১৮,১৬২ রান করেছেন। জয়সের লিস্ট-এ ক্যারিয়ারও বেশ সমৃদ্ধ। তিনি ৩০৪ ম্যাচে ৩৮.৪৬ ব্যাটিং গড়ে ৯,৯৬২ রান করেছেন। ১৭টি শতক এবং ৫৬টি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন লিস্ট-এ ক্যারিয়ারে।

উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড

পুরোনাম উইলিয়াম থমাস স্টুয়ার্ট পোর্টারফিল্ড। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ডের শুরুর দিক থেকেই সাথে আছেন তিনি। ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আয়ারল্যান্ডের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করছেন পোর্টারফিল্ড। খুব সম্ভবত আয়ারল্যান্ডের প্রথম টেস্ট ম্যাচের দায়িত্বও তার কাঁধে বর্তাবে। আয়ারল্যান্ডের হয়ে ওডিআই এবং টি-টুয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি।

আইরিশ কাপ্তান পোর্টারফিল্ড ; Source – ABC

এখন পর্যন্ত ১০৬টি একদিনের ম্যাচে ৩১.৫৪ ব্যাটিং গড়ে ৩,১৮৬ রান করেছেন। তিনি নয়টি শতক এবং ১৪টি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। দীর্ঘদিন দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করার দরুন দল সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা আছে তার। সেইসাথে কাউন্টিতে গ্লৌচেস্টারশায়ার এবং ওয়ার্কউইকশায়ারের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে তার।

টিম মুরতাহ্

আয়ারল্যান্ডের হয়ে ৩৩টি ওডিআইতে ৩৪টি উইকেট। ১৪টি টি-টুয়েন্টিতে ১৩টি উইকেট আছে তার ঝুলিতে। তার দিকে আলাদাভাবে দর্শকরা কেন নজর রাখবে! যারা কাউন্টি ক্রিকেট খুব ভালোভাবে ফলো করেন, তারা এই আইরিশ পেসারকে চেনার কথা। ৩৬ ছুঁইছুঁই এই পেসার-ই হতে পারেন আইরিশদের তুরুপের তাস।

কাউন্টিতে মিডলসেক্সের হয়ে খেলার সময় টিম মুরতাহ্ ; Source – Sky Sports

মুরতাহ্ মিডলসেক্স এবং সারির মতো নামকরা দুটি কাউন্টি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। এখন পর্যন্ত ১৯৭টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এই ১৯৭ ম্যাচে তার উইকেট শিকারের সংখ্যা ৬৬৬টি! আয়ারল্যান্ড চাইবে তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর জন্য।

রশিদ খান

রশিদ খান আরমান। কাগজে কলমে বয়স এখনও ১৯ বৎসর হয়নি। সদ্য সমাপ্ত আইপিএলের দশম আসরে বেশ চড়া দামে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ তাকে দলে ভিড়িয়েছিল। বল হাতেও নজর কেড়েছিলেন ক্রিকেট বিশ্বকে। বর্তমানে টি-টুয়েন্টি এবং ওডিআই র‍্যাংকিংয়ে সেরা দশ বোলারদের একজন রশিদ খান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাত ব্যাটসম্যানের একজনকে আউট করার সময় আবেদন করছেন রশিদ খান ; Source – AFP

গত মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৮ রানে সাত উইকেট শিকার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে বড় ভূমিকা পালন করেন রশিদ খান। রশিদ খান মাত্র ২৯টি একদিনের ম্যাচে ৬৩টি উইকেট শিকার করেছেন। লোয়ার অর্ডারেও বেশ কার্যকরী ব্যাটিং করেন তিনি। দুই ফিফটিতে তার সংগ্রহ ৩৮৬ রান। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের ম্যাচে আট উইকেট সহ দুটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ২০ উইকেট শিকার করেছেন রশিদ খান। একটু ভিন্নধর্মী অ্যাকশন এবং অনবরত গুগলি দেওয়ার সক্ষমতার কারণে ব্যাটসম্যানরা তাকে রিড করতে একটু সমস্যায় পড়ে যায়। রশিদ খান উইকেট টেইকিং বোলার। টেস্ট ক্রিকেটে সাফল্য পেতে হলে যেকোনো দলে তার মতো বোলারের প্রয়োজন আছে।

মোহাম্মদ নবী

রশিদ খানের সাথে একই দলে এইবার আইপিএলে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন মোহাম্মদ নবী। এর আগে বিপিএল, পিএসএলের পরিচিত মুখ ছিলেন তিনি। আফগান ক্রিকেটের শুরুর লগ্ন থেকেই সাথে আছেন নবী। ব্যাটে-বলে সমান পারদর্শী নবী। ভিন্ন ভিন্ন ড্রেসিংরুমে থেকে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। যা টেস্ট ক্রিকেটে আফগানিস্তানের কাজে লাগবে।

মোহাম্মদ নবী ; Source – Sportswallah

মোহাম্মদ নবী এখন পর্যন্ত ৮৩টি একদিনের ম্যাচে ৮৫টি উইকেট শিকারের পাশাপাশি ৭৫ ইনিংস ব্যাট করে করেছেন ১,৯৪২ রান। টি-টুয়েন্টিতে ৫৮ ম্যাচে ৫৯টি উইকেট এবং ব্যাট হাতে ১৩৮.১৭ স্ট্রাইক রেইটে করেছেন ৮৭৬ রান।

আফগানিস্তান এবং আয়ারল্যান্ডের সামনে অপেক্ষায় আসল চ্যালেঞ্জ

আফগানিস্তান এবং আয়ারল্যান্ড বেশ কয়েকবছর ধরে আইসিসির নজরে ছিলেন টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ক্ষেত্রে। কিন্তু একসাথে দুই দলকেই দেওয়া হবে এমনটি ভাবেনি অনেকেই। এইবছরের শুরুতেই আইসিসি থেকে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল এই দুই দেশ ১১ এবং ১২তম দেশ হিসাবে টেস্ট স্ট্যাটাস পেতে যাচ্ছেন। যার বাস্তবায়ন হলো গত মাসে। টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে গেলেও এখনও কোন ম্যাচ পায়নি আফগানিস্তান এবং আয়ারল্যান্ড। খুব সম্ভবত চলতি বছরে তাদের টেস্ট অভিষেক হচ্ছে না। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর শুরুর দিকটা কতটা কঠিন, সেটা জিম্বাবুয়ে এবং বাংলাদেশের দিকে লক্ষ করলেই বুঝবে তারা। জিম্বাবুয়ে ৮ম দেশ হিসাবে টেস্ট স্ট্যাটাস পায় ১৯৯২ সালে। নিজেদের প্রথম টেস্ট জয় পেতে অপেক্ষা করতে হয় তিন বছর। তিন বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে হেসেখেলেই জয় পেয়েছিল জিম্বাবুইয়ানরা। ইনিংস ও ৬৪ রানে হারিয়েছিল পাকিস্তানকে। বিদেশের মাটিতেও প্রথম জয় পেয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে।

টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ছয় বছর পর ১৯৯৮ সালে পেশোয়ারে পাকিস্তানের বিপক্ষে সাত উইকেটের জয় তুলে নিয়েছিল তারা। টেস্ট ক্রিকেটের ধাক্কা সামাল দিতে না পেরে ২০০৬ সালে স্বেচ্ছায় টেস্ট ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। এখন পর্যন্ত ১০১ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের জয়ের সংখ্যা ১১টি। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর বাংলাদেশও কঠিন সময় পার করেছিল। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর প্রথম জয় পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২০০৫ সাল পর্যন্ত। নিজেদের দ্বিতীয় এবং বিদেশের মাটিতে প্রথম জয় পেতে বাংলাদেশের অপেক্ষা করতে হয়েছিল দীর্ঘ নয় বছর। শেষপর্যন্ত ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়ে সেই আক্ষেপ ঘুচিয়েছিল বাংলাদেশ।

বর্তমানে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের খুব ভালোভাবেই ঘুচিয়ে নিয়েছে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে নিজেদের শততম ম্যাচে জয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এর আগে গত বছর ইংল্যান্ডের মতো পরাশক্তির বিপক্ষে টেস্ট জয়ের গৌরব অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। নিজেদের ধারাবাহিক সাফল্যের জের ধরে টেস্ট পেয়েছে আফগানিস্তান এবং আয়ারল্যান্ড। সুযোগের কতটা সদ্ব্যবহার করতে পারে তারা, সেটাই দেখার বিষয়।

 

Featured image: RTE And Cricinfo

Related Articles