![](https://assets.roar.media/assets/4ypTwDqJNkJx0Roc_IMG_20190125_154118.jpg?w=1200)
৩০ বছর বয়সের পর থেকেই একজন ফুটবলারের ক্যারিয়ারে পড়ন্ত সময় চলে আসে। বেশিরভাগ ফুটবলারই ৩৩-৩৫ বছরের পরই বুটজোড়া তুলে রাখার ঘোষণা দিয়ে দেন। কিন্তু তারপরও কোনো না কোনোভাবে সবাই খেলার সাথেই জড়িত থাকেন। কোচ, ধারাভাষ্যকার কিংবা ফুটবলভিত্তিক টিভি শো-গুলোতে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেন। আর তা না হলে ব্যবসা বাণিজ্যের পাশাপাশি বাকি জীবনটা পরিবার নিয়ে উপভোগ করেই কাটান। তবে কিছু কিছু ফুটবলার অবসর নেওয়ার পর বেছে নিয়েছেন কিছু অদ্ভুত পেশা, কিংবা শখও বলতে পারেন। আজ আমরা জানবো তেমনি কয়েকজন ফুটবলার সম্পর্কে।
জর্জ উইয়াহ – প্রেসিডেন্ট
ফুটবলার মাঠ থেকে একেবারে দেশের রাষ্ট্রপতি! এই কাজটিই করে দেখিয়েছেন একসময়ের অন্যতম স্বনামধন্য খেলোয়াড় জর্জ উইয়াহ।
ক্যারিয়ারে মোনাকো, পিএসজি ও এসি মিলানের হয়ে কাটিয়েছেন সোনালী সময়। ১৯৯৫ সালে প্রথম আফ্রিকান খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছিলেন ফিফা বর্ষসেরা ও ব্যালন ডি অর পুরস্কার। এছাড়া তিনবার বর্ষসেরা আফ্রিকান ফুটবলের মুকুটও পরেছিলেন এই লাইবেরিয়ান ফুটবল কিংবদন্তী।
![](https://assets.roar.media/assets/vqTW9S0M0yzoGv2U_images-%283%29.jpeg)
খেলা শেষেই লাইবেরিয়ার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন জর্জ উইয়াহ। নিজেই কংগ্রেস অফ ডেমোক্রেটিক নামে একটি দল গঠন করেন। ২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করলেও সেবার হেরে যান তিনি। ২০১১ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করে আবারও হেরে যান উইয়াহ। অবশেষে ২০১৭ সালের নির্বাচনে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি।
হোসে ম্যানুয়াল পিন্টো – সঙ্গীত প্রযোজক
বার্সেলোনার সোনালী সময়ে দলের দ্বিতীয় গোলরক্ষক ছিলেন পিন্টো। ভিক্টর ভালদেজের জন্য মূল দলে জায়গা না পেলেও গোলকিপার হিসেবে বেশ ভালোই পারফর্ম করেছেন। নামের পাশে আছে বার্সেলোনার হয়ে ট্রেবল জয়। সেল্টা ভিগো থেকে ২০০৮ সালে বার্সেলোনায় যোগদানের পর ক্যারিয়ারের শেষ অবধি এই ক্লাবেই ছিলেন পিন্টো।
![](https://assets.roar.media/assets/Nm0m65rdIaIfVtHh_images-%284%29.jpeg)
খেলোয়াড় থাকাকালীন অবস্থায়ই হিপহপ গায়ক ও সঙ্গীত প্রযোজনায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। ২০০৫ সালে নিজেই খোলেন একটি প্রযোজনা স্টুডিও। তার নাম দেন ওয়াহিন। বর্তমানে খেলাধুলা ছেড়ে গানের জগতেই পুরো মনোনিবেশ করেছেন সাবেক এই কাতালান গোলকিপার।
এরিক ক্যান্টোনা – অভিনেতা
ফ্রান্স ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তী এরিক ক্যান্টোনা ফুটবল ছাড়ার পরপরই জড়িয়ে পড়েন অভিনয়ের জগতে। রেড ডেভিলদের বিখ্যাত সাত নাম্বার জার্সি গায়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন নিজের সময়ে। তৎকালীন সময়ে ফুটবলের অন্যতম তারকা ছিলেন ক্যান্টোনা। কিন্তু মাঠের বাইরের কর্মকান্ডে বারবার সমালোচিত হয়েছেন তিনি। তাই মাত্র ৩১ বছর বয়সেই অবসর নেন ফুটবল থেকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ১৪৩ ম্যাচে ক্যান্টোনার গোল ৬৪টি। ২০০৪ সালে পেলের করা জীবিত সেরা ১০০ খেলোয়াড়ের তালিকায় স্থান পান তিনি।
![](https://assets.roar.media/assets/Bcxdyy9D0n32QBLZ_images-%285%29.jpeg)
খেলা ছাড়ার পরেই অভিনয়ের সাথে যুক্ত হন ক্যান্টোনা। ১৯৯৮ সালে ‘এলিজাবেথ’ নামের একটি মুভি দিয়ে অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয় তার। সেই মুভিতে কেট ব্ল্যানচেটও ছিলেন। পরবর্তীতে ফরাসি মুভিতেও অভিনয় করেন ক্যান্টোনা। ২০১০ সালে যুক্ত হন থিয়েটারের সাথেও। বর্তমানেও অভিনয়ের সাথে যুক্ত আছেন তিনি।
মাইকেল ওয়েন – ঘোড়দৌড়
১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ তারকাখ্যাতি এনে দিয়েছিল সাবেক এই ইংলিশ ফরোয়ার্ডকে। সেই বিশ্বকাপে সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরষ্কারটিও জেতেন ওয়েন। পরবর্তীতে ক্লাব ফুটবলেও ছিলেন ধারাবাহিক। লিভারপুলের হয়ে ওয়েনের গোলসংখ্যা ১১৮টি। খেলেছেন রিয়াল মাদ্রিদেও। ক্যারিয়ারে জিতেছেন আরাধ্য ব্যালন ডি অরও। নিজের সময়ে অন্যতম ভয়ঙ্কর এক স্ট্রাইকার ছিলেন মাইকেল ওয়েন। ২০০৪ সালে পেলের করা সেরা জীবিত ১০০ খেলোয়াড়ের তালিকায় জায়গা পেয়েছিলেন এই ইংলিশ কিংবদন্তী।
![](https://assets.roar.media/assets/aZxDQIiZqABJN4kR_171124142318-michael-owen-racing-at-ascot-large-169.jpg)
২০১৭ সালে মাইকেল ওয়েন ঘোড়দৌড়ের সাথে যুক্ত হন। নিজের খেলা প্রথম ঘোড়দৌড়েই দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। এখন তাই ঘোড়দৌড় নিয়েই ব্যস্ত মাইকেল ওয়েন।
রিও ফার্দিনান্দ – বক্সিং
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তী রিও ফার্দিনান্দ খেলা শেষে বেছে নিয়েছেন বক্সিং রিংকেই। ২০০২ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগদানের পর ওল্ড ট্রাফোর্ডে ছিলেন ১২টি বসন্ত। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের অধীনে জিতেছেন সব শিরোপাই। ২০১৪ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়ার পর এক বছর খেলেছিলেন কিউপিআরে। তারপরই বুট জোড়া তুলে রাখেন এই রক্ষণভাগের খেলোয়াড়।
![](https://assets.roar.media/assets/pwZfo59CTuaU9PfA_images-%286%29.jpeg)
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ফার্দিনান্দ ঘোষণা দেন, তিনি বক্সিং রিংয়ে নামবেন। স্পন্সর হিসেবে বেটফায়ার কোম্পানিকে পাশে পেয়েছিলেন। সেভাবে প্রস্তুতিও শুরু করেছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালের মে মাসে ব্রিটিশ বক্সিং কাউন্সিল ফার্দিনান্দের বক্সিংয়ের লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন নাকচ করে দেয়। তাই আপাতত বক্সিং গ্লাভস খুলে রেখেছেন তিনি।
ভিনি জোন্স – অভিনয়
ভিনি জোন্সকে ফুটবলার হিসেবে মানুষ যতটা না চেনে, তার চেয়ে বেশি চেনে একজন অভিনেতা হিসেবেই। অথচ ফুটবলার হিসেবেই ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন জোন্স।
সাবেক এই ওয়েলস ফুটবলার ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৯৮৪ সালে। অবশ্য চেলসি, লিডস ও কিউপিআর ছাড়া আর তেমন কোনো বড় ক্লাবেও খেলেননি তিনি। ওয়েলসের জার্সিও গায়ে চাপিয়েছেন মাত্র সাতবার।
![](https://assets.roar.media/assets/6W0JlSTvnAAl4nU1_images-%287%29.jpeg)
অবসরের পরপরই অভিনয়ে যোগ দেন জোন্স। বিখ্যাত পরিচালক গাই রিচির ‘লক, স্টক এন্ড টু স্মোকিং ব্যারেলস’ মুভি দিয়ে হলিউড অভিষেক ঘটে তার। তবে লাইমলাইটে আসেন গাই রিচির পরবর্তী বিখ্যাত মুভি ‘স্ন্যাচ’ দিয়ে। এরপর একে একে করেছেন অনেক বিখ্যাত মুভি, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘দ্য কনডেমড’, ‘এক্স মেন – দ্য লাস্ট স্ট্যান্ড’, ‘মাদাগাস্কার ৩’ প্রভৃতি। সিলভেস্টার স্ট্যালোন ও শোয়ের্জনেগারের সাথে ‘এস্কেপ প্ল্যান’ মুভিতেও অভিনয় করেছিলেন জোন্স।
ড্যানিয়েল এগার – ট্যাটু আর্টিস্ট
লিভারপুলের ফ্যান হলে ড্যানিয়েল এগারকে প্রায় কম-বেশি সবারই চেনার কথা। কয়েকবছর আগেই অলরেডদের জার্সি গায়ে ফুটবল খেলেছেন তিনি। তবে ফুটবল ক্যারিয়ারের পর বর্তমানে এগার কাজ করছেন ট্যাটু আর্টিস্ট হিসেবে।
১২ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে ৮ বছরই কাটিয়েছেন অ্যানফিল্ডে। আগে-পরে দুই বছর ছিলেন প্রথম সিনিয়র ক্লাব ব্রন্ডিতে। রক্ষণভাগে খেলা এই খেলোয়াড় ডেনমার্কের হয়েও খেলেছেন ৭৫টি ম্যাচ। ২০১৬ সালে অবসরের পরেই ট্যাটু আঁকিয়ের কাজে জড়ান এগার।
![](https://assets.roar.media/assets/2NzBpK19wuOPG6fi_15614.jpg)
অবসরের পরেই পরিবারসহ স্পেনে পাড়ি জমান। সেখানেই যুক্ত হন ট্যাটুডু নামের এক ট্যাটু কোম্পানির সাথে। বিশ্বের অন্যতম বড় ট্যাটু কোম্পানি হিসেবেও সুপরিচিত এই কোম্পানিটি।
ফ্রাঙ্ক লেবোফ – অভিনয়
ফ্রান্সের হয়ে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ ও ২০০০ ইউরো জেতা ফ্রাঙ্ক লেবোফও ভিনি জোন্সের মতো ফুটবলের পর জড়িয়ে পড়েছেন অভিনয় জগতে।
ফুটবল ক্যারিয়ারের বড় একটা সময় লেবোফ কাটিয়েছেন চেলসি ও মার্শেইয়ে। চেলসির হয়ে খেলেছেন ১৪৪টি ম্যাচ। ক্যারিয়ারের শেষদিকে পাড়ি জমিয়েছেন সৌদি আরবে। সেখানেই খেলা অবস্থায় ২০০৫ সালে অবসরের ঘোষণা দেন।
![](https://assets.roar.media/assets/ImoaqzflKAGEi8mg_images-%288%29.jpeg)
অবসরের পর লেবোফ পাড়ি জমান লস অ্যাঞ্জেলসে। সেখানে সাবেক চেলসি সতীর্থ জোন্সের সাথে হলিউডে নাম লেখান লেবোফ। ‘টেকিং সাইডস’ নামের মুভি দিয়ে হলিউডে অভিষেক হয় তার। ‘এলাইস’ নামের মুভি ছাড়াও স্টিফেন হকিংকে নিয়ে নির্মিত ‘থিওরি অফ এভিরিথিং’ মুভিতে ডাক্তারের চরিত্রেও অভিনয় করেন তিনি।