![](https://assets.roar.media/assets/K2AGXuH1gpN60M42_288532.jpg?w=1200)
‘হায় ঈশ্বর, এ কিছুতেই হতে পারে না!’
২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে হেরে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার পর অ্যাডিলেডের ড্রেসিংরুমে বসে ঠিক এই কথাটিই বলেছিলেন দলের অধিনায়ক ইয়োন মরগান। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই দলের ফাস্ট বোলার স্টুয়ার্ট ব্রড বলেছিলেন,
‘এই টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে যদি আমরা ব্যর্থ হই, তবে সব ধরনের তিরস্কারই আমাদের প্রাপ্য।’
ব্রড অবশ্য ভুল কিছু বলেননি। ইংল্যান্ড সেই বিশ্বকাপে যে পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছিল, তা এক কথায় ভয়াবহ। সেবার গ্রুপপর্বের ছয় ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই হেরেছিল ইংলিশরা, দুইটি জয় এসেছিল দুই সহযোগী সদস্য আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। হারার চেয়েও হারার ধরনটা ছিল বেশি হতাশাজনক; অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার কাছে এক প্রকার খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছিল দলটি।
বাঁচা-মরার ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭৬ রান। সেটি খুব একটা সহজ লক্ষ্যমাত্রা হয়তো ছিল না, কিন্তু অ্যাডিলেডের সেই পিচে তা নাগালের মধ্যেই ছিল। কিন্তু সেটি তারা পারেনি, আসলে তখন ইংল্যান্ড যে ধরনের ক্রিকেট খেলছিল, তা সত্যিই আধুনিক ক্রিকেটের সাথে ছিল বেমানান। অ্যাডিলেডের সেই কালো দিনে মরগান নিজেও ছিলেন চূড়ান্ত মাত্রায় ব্যর্থ, শূন্য রানে সেদিন সাজঘরে ফিরেছিলেন তিনি।
![](https://assets.roar.media/assets/iliDUuIMm7vTvRTL_289054.jpg)
এমন হারের পর পুরো ড্রেসিংরুমে যেন রাজ্যের সব হতাশা এসে ভর করে, চারিদিকে উঠে সমালোচনার তীব্র ঝড়। মরগান নিজেও বুঝতে পারছিলেন, এই অবস্থা থেকে বের হতে ইংল্যান্ড দলে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তনের দরকার। তবে সেই পরিবর্তনের জোয়ারে তিনি নিজেও ভেসে গিয়ে দল থেকে বাদ পড়বেন কি না, সেটাই তখন বড় প্রশ্ন হয়ে উঁকি দিচ্ছিল।
এমন অনিশ্চয়তা অবশ্য মরগানের জীবনে নতুন কিছু ছিল না। সেই ছোটবেলা থেকেই এসবের মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। তার আইরিশ বাবা-মার অনেকগুলো সন্তান ছিল, খুব বেশি টাকাও তাদের ছিল না। এসব সত্ত্বেও মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই নিজেকে ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে ফেলেন তিনি। ইংল্যান্ডে ক্রিকেট ভীষণ মাত্রায় জনপ্রিয় হলেও পাশের দেশ আয়ারল্যান্ডে মোটেও সেই অবস্থা ছিল না। বিশেষ করে আশির দশকে ফুটবল কিংবা রাগবির তুলনায় ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা আয়ারল্যান্ডে ছিল শূন্যের কোঠায়।
![](https://assets.roar.media/assets/MWtrhTDCJiPyBEKL_289236.jpg)
তবুও ইয়োন মরগান ক্রিকেটটাকেই ভালোবেসেছিলেন। আসলে খেলাটার প্রতি ভালোবাসা যে তার রক্তেই মিশে ছিল। তার প্রপিতামহ ইংল্যান্ডে থাকাকালীন ক্রিকেটের প্রতি এক অদ্ভুত মায়ার টানে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। এরপর দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আয়ারল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছেন, দেশটির অভিষেক বিশ্বকাপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও ছিলেন তিনি। সময়ের পরিক্রমায় আয়ারল্যান্ডের সবুজ জার্সি ছেড়ে গায়ে চড়িয়েছেন ইংল্যান্ডের নীল জার্সি, টেস্ট খেলার আজন্ম লালিত স্বপ্নও পূরণ করেছেন। নাটকীয়ভাবে ২০১৫ বিশ্বকাপ শুরুর এক মাস আগে দলের অধিনায়কও হয়েছেন। এত নাটকে ভরপুর যার জীবন, তিনিই এই ছোট্ট ক্লাইম্যাক্সে ভয় পেয়ে যাবেন, সেটা ভাবাই বরং ভুল।
বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার কিছুদিন পরই শুরু হয় আইপিএল। বিশ্বকাপের হতাশা ভুলতে মরগান বেছে নেন এই মঞ্চকেই। এদিকে সাবেক অধিনায়ক অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসকে ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট হিসেবে নিয়োগ দেয় ইসিবি, আর পিটার মুরের বদলে কোচ হিসেবে নিয়োগ পান ট্রেভর বেলিস। স্ট্রাউস নিয়োগ পেয়েই মরগানকে ফোন করে জানিয়ে দেন, অধিনায়ক হিসেবে তিনি মরগানকেই বহাল রাখবেন। স্ট্রস নিজে আসল সমস্যাটা ভালোভাবে বুঝতে পারছিলেন, কারণ তিনি নিজেও এই দলের সাথে দীর্ঘদিন ছিলেন।
অধিনায়ক নয়, বরং দলের দলের খেলার ধরনেই আসল গলদ রয়েছে – সেটা বুঝতে পেরে বেশ বড়সড় পরিবর্তনের পরিকল্পনা করতে থাকেন স্ট্রাউস। হ্যাঁ, এটা ঠিক, ২০১২ সালে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ইংল্যান্ড উঠেছিল। তবে সেটার পিছনে ঘরের মাঠে সিম ও সুইং সহায়ক পিচের ভূমিকাটাই বড় ছিল। কিন্তু ঘরের বাইরে ভিন্ন কন্ডিশনে বারবার দলটা মুখ থুবড়ে পড়ছিল। সেই সময়ে ইংল্যান্ডের পরিকল্পনা শুনলেই তাদের খেলা ধরন কতটা সেকেলে ছিল, সেই ব্যাপারে আঁচ পাওয়া যাবে।
মরগান বলেন,
‘আগে আমরা পরিকল্পনা করতাম টপ অর্ডারের প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে প্রতি চার ইনিংসের মধ্যে কমপক্ষে এক ইনিংসে ৮০ স্ট্রাইক রেটে ৬০+ রান করতে হবে। আর পরের তিন ব্যাটসম্যানকে প্রতি চার ইনিংসের মধ্যে কমপক্ষে এক ইনিংসে ১০০ স্ট্রাইক রেটে ২৫+ রান করতে হবে। কিন্তু ২০১৫ বিশ্বকাপের ছয় মাস আমাদের মনে হলো, আমাদের এই পরিকল্পনাটি আধুনিক তুলনায় বেশ পিছিয়ে আছে। তাই আমরা আরেকটু আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু সেটা বিশ্বকাপে বুমেরাং হয়েই ফিরে আসে।’
এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে দলকে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেন অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস। আর সেই নতুন দল গঠনের ক্ষেত্রে মরগানকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন তিনি। এই ব্যাপারে মরগান বলেন,
‘আমরা একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের দল সাজাতে চাচ্ছিলাম, আর সেটা করতে গিয়ে আমাদের বেশ কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। অ্যান্ডারসন, ব্রড, বেল, ট্রেডওয়েলদের মতো খেলোয়াড়দের ছাঁটাই করার সিদ্ধান্তে আসা মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু দলের স্বার্থে আমাদের এছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না।’
এরকম একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আরেকটি দলও গিয়েছিল, নিউ জিল্যান্ড। রস টেলরের নেতৃত্বে যে দলটা ব্যর্থতার ঘেরাটোপে ঘুরপাক খাচ্ছিল, সেই দলটাই ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বে বদলে যায়। ২০১৫ বিশ্বকাপের শিরোপাটা অজিদের ঘরে গেলেও সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্রিকেট কিন্তু ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’রাই উপহার দিয়েছিলো। আর এই বদলে যাওয়া নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের মাধ্যমেই ওয়ানডে ক্রিকেটে ইংল্যান্ড দলের নতুন যাত্রা শুরু হয়।
![](https://assets.roar.media/assets/hPKUsu9bD04wIa2x_215777.jpg)
এজবাস্টনে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ইংলিশদের শুরুটা অবশ্য একদম ভালো ছিল না। ইনিংসের প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন জেসন রয়। কিন্তু জো রুটের সেঞ্চুরি ও মরগানের হাফসেঞ্চুরিতে সেখান থেকে শক্ত একটা ভিত্তি দাঁড় করায় তারা। এরপর জস বাটলারের ৭৭ বলে ১২৯ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংসে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৪০০ ছাড়ানো স্কোর দাঁড় করায় তারা। এই পাহাড়সম পুঁজি নিয়ে সেদিন নিউ জিল্যান্ডকে হারাতে একটুও বেগ পেতে হয়নি দলটিকে।
নিজেদের আমূল বদলে ফেলার মতো ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তের শুরুটা এমন হওয়া ভীষণ জরুরী ছিল। সিরিজের বাকি ম্যাচগুলোতেও নিজেদের এই ভয়ডরহীন মনোভাব বজায় রেখে সেই সিরিজ ইংল্যান্ড জিতে নেয় ৩-২ ব্যবধানে। এই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করার ক্ষেত্রে শুধু টপ অর্ডারের সাহসিক ব্যাটিংই নয়, সাথে লোয়ার অর্ডারে বোলারদের ব্যাট হাত জ্বলে ওঠাও বড় ভূমিকা রেখেছিল। লিয়াম প্লাঙ্কেট, ক্রিস ওকস, ডেভিড উইলি, আদিল রশিদদের মতো বোলাররা ব্যাট হাতে দলকে সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকলে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের চিন্তা এমনিতেই কিছুটা লাঘব হয়ে যায়। তাছাড়া অ্যান্ডারসন, ব্রড, ট্রেডওয়েলদের নিয়ে গড়া বোলিং সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তেমন একটা কার্যকর ছিল না, সেদিক থেকে নতুন বোলিং লাইনআপে বৈচিত্র্য ছিল অনেক বেশি।
![](https://assets.roar.media/assets/z7Px1ncmh2Px3uH4_skysports-eoin-morgan-century-hundred-england-south-africa_3961879.jpg)
সবকিছু বেশ ভালোই চলছিল। এই নতুন ইংল্যান্ডকে নিয়ে মরগান ২০১৯ বিশ্বকাপে বড় কিছু করবে, এমন পরিকল্পনা নিয়েই ইসিবি এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা আসে ২০১৬ সালে।
সেই বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার ফলে অক্টোবরে ইংলিশদের বাংলাদেশ সফর নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারেই সায় দেয় ইসিবি, কিন্তু সেই সফরে আসতে অস্বীকৃতি জানান মরগান।
আসলে শান্তিপ্রিয় দেশ আয়ারল্যান্ডের মানুষ ইয়োন মরগান এত নিরাপত্তার আস্তরণে ঢেকে ক্রিকেট খেলার ব্যাপারে নিজের মনকে সায় দিতে পারেননি, তাই এই সিরিজে অংশ নিতে তিনি রাজি হননি। তার এই সিদ্ধান্তের কারণে ইংলিশ মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে, সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন তো মরগানের অধিনায়কত্ব হারানোর ভবিষ্যদ্বাণী করে দেন। সত্যি কথা বলতে, ইংরেজ না হয়েও ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হওয়ায় মরগ্যানকে নিয়ে কিছু মহলের এমনিতেই কিছুটা অস্বস্তি ছিল। এই ঘটনার পর তারা যেন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেন। তবে ইসিবি তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি, অধিনায়ক হিসেবে আস্থা রেখেছে এই আইরিশের উপরেই।
এরপর ২০১৭ সালে ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ইংল্যান্ডের শুরুটাও ছিল দুর্দান্ত। গ্রুপপর্বের সবগুলো ম্যাচ হেসেখেলে জিতে নিয়ে সেমিফাইনালে পা রাখে তারা, যেখান তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তান। স্বাগতিক দল পিচ থেকে কিছুটা সাহায্য পাবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কার্ডিফে সেদিন যেন উল্টো ঘটনাটাই ঘটল।
আগের বেশ কিছু ম্যাচে ব্যবহৃত পিচ কিছুটা ধীর গতির হয়ে যায়। ফলে যে দলটা আগের তিন ম্যাচে অনায়াসে রানের ফুলঝুরি ছুটিয়েছিল, টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে তারাই রান তুলতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত মাত্র ২১১ রানের পুঁজি দাঁড় করায় ইংল্যান্ড, যা খুব সহজেই টপকে যায় পাকিস্তান।
তবে এই হার কিন্তু মোটেও ইংলিশ ড্রেসিংরুমে ২০১৫ সালের সেই দুঃস্মৃতি ফিরিয়ে আনেনি, কারণ দলের সবাই জানতো, এই হার থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা তাদের আছে। সেটা অবশ্য নতুন করে বলার কিছু নেই, ২০১৫ বিশ্বকাপের ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো যে দলটার উত্থান হয়েছিল, তারা আজ ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল। কিছুদিন পর ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বকাপে তারাই যে হট ফেভারিট, এই ব্যাপারে খুব কম বিশ্লেষকই দ্বিমত প্রকাশ করবেন।
![](https://assets.roar.media/assets/KFNeawvDLhTTmlDd_288531.png)
পরিসংখ্যানের কিছু তথ্য দিলেই বোঝা যাবে, গত চার বছরে এই ইংল্যান্ড দলটা ওয়ানডে ক্রিকেটে ঠিক কতটা বদলে গেছে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ইংল্যান্ড যেখানে ৯৭ ইনিংসে মাত্র ১০ বার ৩০০+ সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে, সেই দলটাই ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত খেলা ৮০ ইনিংসে ৩০০+ সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে ৩৪ বার! আগের চার বছরে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইকরেট যেখানে ছিল ৮৩.৭৯, সেখানে পরের চার বছরে স্ট্রাইকরেট ১০০ ছুঁইছুঁই! জয়-পরাজয়ের অনুপাতেও পার্থক্যটা বিশাল, ০.৯৬ এর বদলে এখন সেটা দাঁড়িয়েছে ২.৩০!
তবে শঙ্কার জায়গাও আছে। কিছুদিন আগে র্যাঙ্কিংয়ের নয় নাম্বারে উইন্ডিজের সাথে ২-২ ব্যবধানে সিরিজ ড্র করাটা কিছুটা অশনি সংকেত হিসেবেই এসেছে। আক্রমণাত্মক মনোভাবই ইংলিশদের এই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি, এটা যেমন সত্যি, অতি বেশি আক্রমণাত্মক হওয়াটা মাঝেমধ্যে যে বুমেরাং হিসেবে ফিরে আসতে পারে, তারও উৎকৃষ্ট প্রমাণ ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে একবার পা হড়কালে আবার ফিরে আসার সুযোগ পাওয়া যায় বটে, কিন্তু বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে একবার পা হড়কানো মানেই তো অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া!
তবে ঝুঁকি যতই থাকুক, নিজেদের এই চিরচেনা কৌশল দিয়েই ইংলিশরা এবারের বিশ্বকাপ জয়ের চেষ্টা করবে, তা বলাই বাহুল্য। বিশেষ করে ইয়োন মরগানের মতো অধিনায়ক যাদের আছে, তাদের তো আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলাটাই স্বাভাবিক। ঝুঁকি নিতে মরগান মোটেও ভয় পান না, তা তিনি কিছুদিন আগে আবারও বুঝিয়ে দিয়েছেন। জোফরা আর্চারকে দলে না নেওয়ার জন্য যেখানে নিজের কিছু সতীর্থই বারবার অনুরোধ করছিল, সেখানে সমস্ত চাপ উপেক্ষা করে আর্চারকে বিশ্বকাপ দলে রাখার ব্যাপারেই ভোট দিয়েছেন তিনি।
![](https://assets.roar.media/assets/oPAkMnGzlZS4MexP_sp22-cric-Jofra-Archer.jpg)
কোনো কারণে যদি আর্চার বিশ্বকাপে ব্যর্থ হন, তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে হয়তো মরগানকে সমালোচনার তীব্র বিষবাণে বিদ্ধ হতে হবে। কিন্তু তিনি এটাও জানেন যে, বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চ জয় করতে চাইলে এই ধরনের ঝুঁকি নিতেই হবে। আর সমালোচকদের অগ্নিদৃষ্টি তো তার ক্যারিয়ারে নতুন কিছু নয়, পুরো ক্যারিয়ারজুড়েই দলের প্রতি তার আনুগত্য ও পরিচয় নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলে গেছেন।
তিনি আইরিশ নাকি ইংলিশ, এমন সব প্রশ্নে তাকে বারবার বিব্রত হতে হয়েছে। কিন্তু মরগান নিজে কখনো এসবে বিচলিত হননি। আর কেউ না জানুক, তিনি নিজে তো জানেন, আজকের এই অবস্থায় আসার জন্য তাকে কতটা কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন,
‘আয়ারল্যান্ডে যখন ক্রিকেট খেলতাম, তখন বেশ অদ্ভুত একটা অনুভূতি কাজ করত। অধিকাংশ মানুষই খেলাটাকে ভালো চোখে দেখত না। কিন্তু মাত্র ১৬ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে এসে আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতি দেখতে পেয়েছি। এখানে ক্রিকেট এতটাই জনপ্রিয় যে, আপনি শহরের যে কারো সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে পারবেন। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার এই মেলবন্ধনে আমি হয়তো মন থেকে ইংলিশ হয়ে গেছি।’
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ডাবলিনের কাউন্সিল চত্বর থেকে আজ ঘরের মাঠে ইংলিশদের নেতৃত্ব দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন ইয়োন মরগান। আজ থেকে এক যুগ আগে কোনো জ্যোতিষী যদি তাকে ২০১৯ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কাপ্তান হওয়ার ভবিষদ্বাণী করতেন, তবে তিনি নিজেই হয়তো সেটা হেসে উড়িয়ে দিতেন। আর সে কারণেই নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষ মনে করেন মরগান। এবারের বিশ্বকাপে সেই ভাগ্য কি তাকে আরেকটু সহায়তা করবে? সেই উত্তরটা না হয় আমরা সময়ের কাছেই ছেড়ে দিলাম। যদি সেরকমটাই হয়, তবে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে তার নামটা চিরকালের জন্য মুদ্রিত হয়ে যাবে, তা বলাই বাহুল্য।