Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জার্মানি কি পারবে ব্রাজিলের শ্রেষ্ঠত্বে ভাগ বসাতে?

সব দলের সমর্থকেরাই চান তাদের দলের ধারাবাহিকতা। ২০০৬ এর চ্যাম্পিয়ন ইতালি ২০১০ এ গ্রুপপর্বে বাদ পড়ে যায়, ২০১০ এর চ্যাম্পিয়ন স্পেন বাদ পড়ে যায় ২০১৪ এর গ্রুপপর্বে, ১৯৯৮ এর চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সও একই নিয়তি বরণ করে নেয়। কিন্তু এই ধারাবাহিক অনুক্রমে ঘুণাক্ষরেও কেউ একটা দলকে ফেলতে চাইবেন না। সেই দল হলো জার্মানি। কারণ তাদের ধারাবাহিকতা। ২০০২ বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে মোট দশটি টুর্নামেন্টের মধ্যে একবার বাদে আর প্রত্যেকবার কমপক্ষে সেমিফাইনালে উঠেছে জার্মানি। ধারাবাহিকতম এই দলটিকে আপনার হিসেবের মধ্যে রাখতেই হবে। সেই ঐতিহাসিক লংবলে খেলা জার্মানি হোক বা হালের শর্টপাসের, জার্মানি জার্মানিই। ব্রাজিলের মাটিতে ৪র্থ শিরোপা জয়ের পর এবার ব্রাজিলকেই স্পর্শ করে ফেলার মিশনে কি সফল হবে জার্মানি?

জার্মানির বর্তমান সাফল্যের প্রধান কারিগর; Image Source:For The Win – USA Today

হালের এই জার্মানিকে যদি বুঝতে চান তবে আপনাকে একটু এই লিখাটি পড়তে অনুরোধ করা হচ্ছে, কিভাবে একটি দেশ পরিকল্পনামাফিক একটা কাঠামো গড়ে তোলে তা বোঝার জন্য। আপনি জানেন কি, সৌদি আরবের ম্যাচের আগের পাঁচটি প্রীতি ম্যাচে জার্মানির কোনো জয় নেই! তাতে তাদের জাত যায় না, কারণ বাছাইপর্বের দশ ম্যাচে গড়ে ৪.৩ টি করে ৪৩ গোল করেছে আর হজম করেছে মাত্র ৪টি! আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন, এই জার্মান দলের কেবল তরুণ সদস্যদের পাঠিয়েই তারা জিতে নিয়েছিল কনফেডারেশন কাপ ২০১৭। তাই জার্মানিকে প্রীতি ম্যাচ দিয়ে বিচার করবেন না। ইতিহাস ঘেটে দেখুন, প্রীতি ম্যাচে জার্মানির ফর্ম আহামরি কিছু না, কিন্তু তারা আসল সময়ে জ্বলে উঠতে জানে! শুরুতেই পজিশনভিত্তিক জার্মানির শক্তি-দুর্বলতা জেনে নেয়া যাক।

রক্ষণ

যদি জিজ্ঞাসা করা হয় লা লীগার সেরা গোলরক্ষক কে? দুটো নাম আসবে। স্টেগান ও অবলাক। বার্সার গোলরক্ষক স্টেগান ইউরোপের সেরা পাঁচের একজন সন্দেহাতীতভাবেই। কিন্তু এই স্টেগান থাকবেন বেঞ্চে! এতটুকুই যথেষ্ট জার্মানির দলের গভীরতা বোঝাতে। গত আট বছরের বিশ্বের সেরাদের সেরা একজন ‘অতিমানব’ ম্যানুয়েল নয়্যার। প্রায় সাত মাস ইনজুরিতে থাকার পরেও তিনিই গোলবার আগলানোর দায়িত্ব পান ফিরে এসেই, দুই ম্যাচে বুঝতেও দেননি যে এতকাল তিনি দলের বাইরে। যদি কখনো নয়্যার আবার চোট পান, জার্মানির তাতে ঘাম ছুটে যাবে না। কারণ তাদের বেঞ্চেই আছেন সাম্প্রতিক ফর্মে বিশ্বসেরাদের একজন।

এত ভাল গোলরক্ষক যুগল আর কোনো দলেরই নেই, একই ফ্রেমে নয়্যার ও স্টেগান; Image Source:Scoopnest.com

জার্মানির রাইটব্যাকে নিশ্চিতভাবেই খেলবেন বায়ার্নের জশুয়া কিমিচ। বায়ার্নের হয়ে তার গোল-এসিস্ট চোখে পড়ার মতো। জার্মানির হয়েও বাছাইপর্বে সবচেয়ে বেশী গোল তারই বানিয়ে দেয়া। কারভাহালের সাথে বর্তমানের বিশ্বের সেরা রাইটব্যাক হিসেবে তার নাম উঠবেই। কিমিচের মাথায় অসম্ভব গুরুদায়িত্ব, তিনি লামকে রিপ্লেস করছেন। লাম, যিনি বেকেনবাওয়ারের পর বোধহয় জার্মানির ইতিহাসের সেরা ডিফেন্ডার, তাকে অদ্যাবধি তরুণ কিমিচ লামকে যেভাবে রিপ্লেস করেছেন তা অভাবনীয়। লেফটব্যাকে আছেন হেক্টর। গত বিশ্বকাপে জার্মানির পুরোদস্তুর কোনো লেফটব্যাক ছিল না, হেক্টর সেই অভাব ঘুচিয়েছেন। বাছাইপর্বে গোল বানানোর তালিকায় তার স্থান ৩য়। বোঝা যাচ্ছে কি, জার্মানির ফুলব্যাকরা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাদের সিস্টেমে? কিন্তু হেক্টরের দুর্বলতা তার রক্ষণাত্মক কাজে কিছু ত্রুটি, যেগুলোকে প্রতিপক্ষ টার্গেট করবেই। তার বদলি খেলার জন্য প্রস্তুত থাকবেন প্লাটেনহার্ট, ব্রাজিল সহ সাম্প্রতিক কিছু ম্যাচে তার পারফর্মেন্স ছিল চোখে পড়ার মতো।

জার্মানির রক্ষণ দলবদ্ধ বলে একক নৈপুণ্যে তাদের হারানোর আশা করা দুষ্কর; Image Source:ESDF Analysis

সেন্টারব্যাক হিসেবে নিশ্চিতভাবেই শুরু করবেন হামেলস ও বোটেং। একই সাথে খেলে আসছেন বহুদিন ধরে, ক্লাবেও সতীর্থ তাঁরা। যার ফলে একে অপরকে বোঝেন এবং প্রয়োজনমতো অন্যজনকে কমপ্লিমেন্ট দিতে পারেন। ফুটবলে মার্কিং অদল-বদল বিশাল ব্যাপার, যে কারণে দেখা যায় কোচেরা অন্য খেলোয়াড় বদলালেও সেন্টারব্যাক জুটি সচরাচর একই রাখেন। আর সেই জায়গায় এই জুটি বহুকাল ধরে একসাথে খেলে আসছে। সাব হিসেবে থাকবেন চেলসিতে দারুণ এক মৌসুম কাটানো রুডিগার, বায়ার্নের সুলে ও বরুশিয়ার জিন্টার। বয়সে তরুণ হতে পারেন তারা, কিন্তু অভিজ্ঞতা নেহায়েত কম না। এই তরুণরাই জার্মানিকে ২০১৭ তে কনফেডারেশন কাপ জিতিয়েছে রাশিয়ায়। যদি মূল পছন্দের একজন ইঞ্জুরিতেও পড়ে যায়, তবুও যে কেউ সাবলীলভাবে তাকে রিপ্লেস করতে পারবেন। যেমন ধরা যাক সুলে। সুলে বায়ার্নে হামেলস-বোটেং-কিমিচের সাথে খেলে অভ্যস্ত। কারোর বদলি মাঠে নামলে সহজেই তাদের সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন। জার্মানির বৈচিত্র্যের এটাও এক রহস্য।

মাঝমাঠ

বর্তমানে ফুটবলীয় গুরুত্ব বিবেচনায় টনি ক্রুসের সমকক্ষ মিডফিল্ডার খুব কমই আছেন বিশ্বে; Image Source:Managing Madrid

মাঝমাঠে জার্মানির রসদ যেকোনো কোচের স্বপ্ন। প্রথমেই আসবে টনি ক্রুসের নাম, যাকে বিশ্বকাপজয়ী কোচ মেনত্তি বলেন ফুটবলের উইকিপিডিয়া! ক্রুসের সমান ফুটবল ধারণা হালের খুব কম খেলোয়াড়েরই আছে। দলের শর্টপাসে খেলার সময় ক্রুস সেই মাফিক পজিশনিং নেন, দলের লম্বা পাসে খেলা দরকার হলে সেই মাফিক জায়গা নেন। বর্তমান ফুটবলে ‘ডিপ লায়িং প্লেমেকার’ বলতে একটা রোল আছে, এই দলে ক্রুস সেই কাজটা করেন। তার সাথে সম্ভাব্য পার্টনার হিসেবে থাকবেন স্যামি খেদিরা। মূলত বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার তিনি। আসল রক্ষণভাগকে ডিফেন্সিভ সুরক্ষা দেয়াই তার মূল কাজ হলেও ইদানিং খেদিরার গোল করানোর পরিসংখ্যানে আগের তুলনায় বেশ সুস্বাস্থ্য এসেছে! খেদিরাকে প্রতিযোগিতায় ফেলবেন ম্যানসিটির গুন্দোগান। গুন্দোগান খেদিরার চেয়ে কম রক্ষণাত্মক হলেও তার আক্রমণে ভূমিকা অনেক বেশী। গুন্দোগান স্কোরিং মিডফিল্ডার, ভাল থ্রু বল বাড়াতে পারেন। তাই সময় বা ম্যাচ বুঝে লো তাঁকে নামাবেন নিশ্চিত। আছেন রুডি। বয়সে একদম তরুণ কিন্তু সেই ২০১৭ কনফেডারেশন কাপ জয়ের পথে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে নামালে তিনিও খেদিরার চেয়ে কোনো অংশে কম না। এ তো গেল সেন্টার মিডফিল্ডের অবস্থা। অ্যাটাকিং মিডেও প্রাচুর্যের অভাব নেই।

একই ফ্রেমে ওজিল ও খেদিরা; Image Source:Goal.com

দলের মূল প্লেমেকার অনেকদিন ধরেই মেসুত ওজিল। ওজিলের খেলার সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো তার শারীরিক অবস্থা দেখে গায়েই লাগে না যে খেলছেন! কিন্তু ২০১০ এর পরে এককভাবে গোল বানিয়ে দেয়া বা থ্রু বলের পরিসংখ্যানে মেসির পাশাপাশি ওজিল বিশ্বে অদ্বিতীয়। যে দলে ডিপ লায়িং প্লেমেকার ক্রুস আর মূল প্লেমেকার ওজিল, তাদের সাথে যেকোনো দলেরই ডিফেন্ড করতে নাভিশ্বাস উঠে যাবে।

এরপর আছেন ড্রাক্সলার। প্রচন্ডরকম মৌলিক খেলোয়াড়। দলের ট্যাকটিক্স মাফিক কোচ তাকে চাইলে খেলাতে পারেন যেকোনো উইংয়ে, অ্যাটাকিং মিডে বা সেন্টার মিডের বামপাশেও। তিনিই ছিলেন তরুণ কনফেডারেশন কাপজয়ী সেই দলের অধিনায়ক। লো এতটাই দলগত খেলাকে প্রাধান্য দেন যে, একা একা কারিকুরি করেন বিধায় ম্যানসিটির হয়ে দারুণ এক মৌসুম কাটানোর পরেও লিওরে সানে বাদ গেছেন। কিন্তু তুলনামূলক স্বল্পখ্যাত জুলিয়ান ব্র্যান্ডট বাদ যাননি। ব্র্যান্ডট দল অন্তঃপ্রাণ খেলোয়াড়, প্রচন্ড খেটে খেলেন বল পায়ে না থাকার সময়েও। বল পায়ে প্রচন্ড গতিশীল, একটু ভিন্নমাত্রিক খেলোয়াড়। ব্র্যান্ডট কখন তার গতি পরিবর্তন করে ধোঁকা দিয়ে ফেলে তা ধরা একটু মুশকিল। এই দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ের তুলনায় তাকে নিয়ে কম ঘাটাঘাটি হয়েছে, সেই হিসেবে ব্র্যান্ডট তুরুপের তাস হতে পারেন লো’র।

আক্রমণ

জাতীয় দলে মুলার বরাবরই অনবদ্য; Image Source: Sportskeeda.com

জার্মানির আক্রমণ আলাদাভাবে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের মতো চোখ ধাঁধানো কিছু না। জার্মানির প্রধান স্ট্রাইকার নতুন টিমো ওয়ের্নার এবার বুন্দেসলীগায় করেছেন ১৩ গোল আর ৮ এসিস্ট। এর দ্বিগুণের বেশী গোল করেও আর্জেন্টিনায় চান্স পাননি ইকার্দি! মুলারের সাথেও হিগুয়েন, আগুয়েরো বা ফিরমিনোর তুলনা দিলে মুলারদের কেউ গা-করবেই না। কিন্তু এটাই জার্মানি, তাদের খেলাই দলগত।

এই ওয়ের্নার জার্মানির জার্সি গায়ে অন্য যেকোনো দলের তারকাদের চেয়ে বেশী কার্যকরী। মুলারকে নিয়ে বিশেষ কিছু কি বলা লাগে? মুলারের মতো ফরোয়ার্ডদের বলা হয় ‘ফক্স ইন দ্য বক্স’। আসলেই মুলার জার্মানিতে অনবদ্য। ডিফেন্ডারদের বাইরে টেনে এনে ওয়ের্নার, রিউসদের জায়গা করে দেন; নিজে হঠাৎ বক্সে ঢুকে ঠিকই জাল পেয়ে যান! স্বাভাবিকভাবেই বাছাইপর্বে তারই গোলসংখ্যা সর্বাধিক। ওয়ের্নারের বদলি হিসেবে নামবেন অভিজ্ঞ মারিও গোমেজ, লীগের দ্বিতীয়ার্ধে আবার নিজেকে মোটামুটি ফিরে পেয়েছেন যদিও তার দলভুক্তি নিয়ে বিস্তর বিতর্ক আছে। জার্মানির জন্য সবচেয়ে বড় সুখবর, এবার তারা রিউসকে পাচ্ছে। একক প্রতিভা বিবেচনায় রিউস জার্মানির সেরা প্রতিভা, কিন্তু প্রচন্ড ইঞ্জুরিপ্রবণ। সর্বশেষ কোনো টুর্নামেন্টই খেলতে পারেননি জার্মানির হয়ে। এবার রিউস ফিট। ফিট রিউস যেকোনো দলের জন্যই ত্রাস। একসময় রিউসের তুলনা হতো নেইমারের সাথে। চোটের পর চোট তাকে প্রায় ভুলিয়েই দেয়। লেফট উইংয়ে প্রচন্ড গতিতে যে কাউকে পরাস্ত করা বা গোল করা বা গোল বানিয়ে দেয়ায় দক্ষ এই ডর্টমুন্ড তারকা। রিউস পুরো বিশ্বকাপে সুস্থ থেকে খেললে জার্মান আক্রমণ অন্যরকম এক মাত্রা পাবে।  

যেভাবে খেলতে পারে জার্মানি

শুরুতেই বলা হয়েছে যে, জার্মানি একটা কাঠামো। ঠিক এই কারণে হঠাৎ খেদিরার চোটের কারণে ফাইনালে নামা অজ্ঞাতপ্রায় এক ক্রেমার প্রায় নির্ভুলভাবে খেলে যান। এই দলের খেলোয়াড়দের ট্যাকটিক্যাল সেন্স এককথায় অনবদ্য। লো’র ইশারায় মূহুর্তে তারা সুইচ করতে পারে অন্য ফরমেশনে। যেমন, কোচ লো’র প্রিয় দুই ফর্মেশন ৪-২-৩-১ ও ৩-৫-২। সাধারণত ৪-২-৩-১ এ শুরু করেন। এখন কোচ চাইলেন ৩-৫-২, কিমিচ হামেলস-বোটেং এর সাথে সেন্টার ব্যাক হয়ে নিচে থাকবেন, যেহেতু তার এই রোলে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। হেক্টর লেফট উইংব্যাকে, রিউস রাইটে আর মুলার স্ট্রাইকারে বা উল্টোটা! মানে কোনো খেলোয়াড় না বদলেই এই সুইচ করা সম্ভব। আর যদি ৩-৫-২ তে খেলান, তবে খেদিরার জায়গায় গুন্দোগান আসবেন, সাথে ওজিল-ক্রুস, দুই পাশে কিমিচ ও হেক্টর বা রিউস, সামনে মুলার-ওয়ের্নার। জার্মানির দলে মোট পাঁচজন সেন্টারব্যাক, যেটা থেকে ইঙ্গিত স্পষ্ট প্রয়োজনে লো থ্রি-ম্যান ব্যাক মানে ৩-৫-২ খেলাবেন। আবার লো গতবার লেফট ব্যাকে খেলিয়েছেন একজন সেন্টারব্যাককে, এতে লামের উপরে উঠার ঝুঁকি প্রশমিত করা সম্ভব হতো। এবারও হেক্টর বা কিমিচ কারো দুর্বলতা প্রকাশিত হলে তেমনই করতে পারেন।

জার্মান ট্যাকটিক্সে টনি ক্রুসের ভূমিকা অনবদ্য; Image Source:The football blog – Wyscout

মাঝমাঠে ছোট ছোট পাসে খেলার দর্শনই লো’র। তবে অন্য টিকিটাকার সাথে ফারাক হলো, জার্মানি কেবল শর্ট পাসিং বিল্ডআপের উপর নির্ভরশীল না। ক্রস বা লম্বা বলেও গোল করার চেষ্টা করতে থাকে। জার্মানির প্রতিটি খেলোয়াড় বল পায়ে সাবলীল। তাই ম্যাচ বিল্ডআপ ডিফেন্স থেকেই শুরু করে। মাঝমাঠে ক্রুস পুরো খেলা নির্দেশ করতে থাকেন। কখনো ব্যাকলাইনের সাথে একই লাইনে থেকে, আবার কখনো ওজিলের সামনে থেকে- ক্রুস নিজেই বৈচিত্র্যের এক ভান্ডার। জার্মানির অভ্যন্তরীণ বোঝাপড়া তাদের বিপক্ষে ডিফেন্ড করাকে সবসময়ই কঠিন কাজে পরিণত করে থাকে।

দুর্বলতা

ফিটনেস

গোলরক্ষক নয়্যার প্রায় সাত মাস পরে ফিরলেন। যদিও মনে হচ্ছে খুব একটা ছেদ পড়েনি তার খেলায়, তবুও জার্মান মিডিয়াতেই এ নিয়ে সন্দেহ বিদ্যমান। কোনো ম্যাচে তিনি পুরো ইঞ্জুরড হলেন না, কিন্তু তার রিফ্লেক্সে সমস্যা দেখা দিল বা এত মাসের ইনজুরির ছাপটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পড়তেই পারে, যেটা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। বোটেং এর ব্যাপারটা এতটা গুরুতর না হলেও বোটেং নিজেও সদ্য ইনজুরি ফেরত।

রাইটব্যাকে বিকল্পহীনতা

জার্মানির একমাত্র রাইটব্যাক কিমিচ। লেফটব্যাকে হেক্টরের সরাসরি বিকল্প থাকলেও কিমিচের নেই। লো চাইলেই গতবারের মতো কোনো সেন্টারব্যাককে রাইটব্যাকে খেলাতে পারেন, যদি কিমিচ চোটগ্রস্থ হন বা কার্ডের ফারায় পড়েন। কিন্তু জার্মানির উইংভিত্তিক খেলাটা কিমিচ বা কোনো যোগ্য রাইটব্যাকের অভাবে ভালই ধাক্কা খেবে সেক্ষেত্রে।

অভিজ্ঞতা

জার্মানি অবশ্যই মিস করবে লাম, ক্লোসাদের মতো পোড় খাওয়া সৈনিকদের; Image Source:skysports.com

জার্মানি তিন বিভাগে তিন লিজেন্ডকে মিস করতে যাচ্ছে। মাঝমাঠে শোয়াইনস্টাইগার, ডিফেন্সে লাম আর আক্রমণে ক্লোজা। মাঝমাঠে ক্রুস-খেদিরা থাকায় তেমন অভাব বোধ হবে না। কিন্তু আক্রমণে ক্লোসার স্কিল মিস না করলেও তার অভিজ্ঞতা মিস করবে জার্মানি। ক্লোজা ২০১৪ বিশ্বকাপে এসেছিলেন তিন বিশ্বকাপের পোড় খাওয়া হয়ে। টিমো ওয়ের্নার স্কিলের দিক দিয়ে গতবারের ক্লোজার মতো বা এর চেয়ে ভালো, কিন্তু এত বড় মঞ্চে অভিজ্ঞতা একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে। উপরন্তু তার আরেকটা সমস্যা আছে। কোনো মাঠে খুব বেশী শব্দ থাকলে তার কান সেটা নিতে পারে না। এটাও একটা সমস্যা হতে পারে।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে লামের অভাবটা। লাম যেভাবে উপরে-নিচে ভারসাম্য রেখে খেলতেন, কিমিচ এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছেননি। এত সহজও না। চাইলেই ডিবালা মেসিকে বা বেল রোনালদোকে রিপ্লেস করতে পারবেন না, কিছু খেলোয়াড় অন্য পর্যায়ে পৌঁছে যান। লাম তেমনই ছিলেন। কিমিচ অসাধারণ, কিন্তু এখনো লাম নন।

যে শক্তি আর কারো নেই

বায়ার্ন ফ্যাক্টর

সাধারণত বিশ্বকাপের ১৫ দিন আগে ক্যাম্পে সব খেলোয়াড়রা ট্রেনিং ক্যাম্পে যোগ দেন। একসাথে হয়তো খেলেছেন এর আগে কয়েক মাস। কিন্তু লো’র এই চিন্তা নেই। কিমিচ-হামেলস-বোটেং সারা বছর একসাথে খেলেন বায়ার্নে, সাথে যোগ করুন সুলেকে। ডানপাশে মুলার-কিমিচের জুটি ক্লাবে প্রতিদিনকার ঘটনা। ক্রুসের সাথে মুলার, ওজিলরা খেলছেন সেই ২০১০ থেকে। সিনিয়রদের প্রত্যেকে প্রত্যেকের সাথে প্রায় ২০১০ থেকে খেলছেন। তাদের বোঝাপড়াটা তাই অন্য পর্যায়ের, কে কখন জায়গা বদলাবেন কার সাথে তারা চকিতেই করে ফেলতে পারেন। আর এসবই জার্মানিকে বানিয়েছে অনবদ্য।

সবাই প্রস্তুত

জার্মানির কনফেডারেশন কাপ জয়ের সেনানী ছিল মোটামুটি বি দলের তরুণেরা যারা এবারের বিশ্বকাপ যাত্রায় সামিল; Image Source:The NationalGermany’s J

জার্মানির মূল দলে যারা খেলবেন তাদের মাঝে ওয়ের্নার, কিমিচ আর হেক্টর বাদে সবাই গতবারের বিজয়ী সদস্য (রিউস এই দলে আছেন বহুদিন ধরে, তাই তাকে বাদ দেয়া হলো)। আর যারা বেঞ্চে বা নতুন, এই তিনজন দায়িত্ব নিয়ে জিতিয়েছেন কনফেডারেশন কাপ। আর কোন দলের বেঞ্চের খেলোয়াড়রা এমনভাবে প্রস্তুত? লো প্রীতি ম্যাচ এমনভাবে খেলান যেন সবাই সময় পায়, ফলাফল তার কাছে মুখ্য না। যে কারণে প্রীতি ম্যাচে খারাপ করলেও জার্মানি মূল পর্বে ভয়ানক।

যেমন হতে পারে একাদশ

জার্মানির একাদশ অনুমান করা কঠিনতম কাজ। তবুও ৪-২-৩-১ এ সম্ভাব্য দল দেয়া হলো:

নয়্যার
কিমিচ-হামেলস-বোটেং-হেক্টর
খেদিরা-ক্রুস
মুলার-ওজিল-রিউস
ওয়ের্নার

ম্যাচের সময়সূচী

জার্মানি-মেক্সিকো (১৭ জুন, রাত ০৯.০০)
জার্মানি-সুইডেন (২৩ জুন, রাত ০৯.০০)
জার্মানি- দ. কোরিয়া (২৭ জুন, রাত ০৯.০০)

সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ

 (ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, উরুগুয়ে, স্পেন, ফ্রান্সকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ধরে)

গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে: সুইজারল্যান্ড (শেষ ১৬), ইংল্যান্ড (কোয়ার্টার), স্পেন (সেমিফাইনাল)

গ্রুপ রানারআপ হলে: ব্রাজিল (শেষ ১৬), বেলজিয়াম (কোয়ার্টার), ফ্রান্স (সেমিফাইনাল)

একটি কথা প্রচলিত আছে, “ফুটবল সবাই খেলে, কিন্তু দিনশেষে কেবল জার্মানরাই জেতে!” জার্মানির খেলার সেই যান্ত্রিকতা এখন আর নেই, খেলায় এসেছে সৌন্দর্য। কিন্তু মানসিকতায় যে যান্ত্রিকতা তা চলে যায়নি। বিশ্বকাপ ইতিহাসে জার্মানির টাইব্রেকারে সাফল্য সবচেয়ে বেশী! মানসিকতা, ধারাবাহিকতা সব মিলিয়ে যেকোনো আসরে জার্মানি সবসময়ই ফেভারিট। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা আসে ফেভারিট হিসেবেই, জার্মানিও তার ব্যতিক্রম না। তাত্ত্বিকভাবে তাদের সব রসদই আছে শিরোপা পুনরুদ্ধারের। পারবে কি তারা ১৫ই জুলাই পুনরায় সোনালি ট্রফিটি উচিয়ে ধরতে?

ফিচার ছবিসত্ত্ব: goal.zorlupsm.com

Related Articles