Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

স্পেন আগের ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে উঠেছে সত্য, কিন্তু ফিনিক্স হতে পারবে কি?

২০০৮ সালের আগপর্যন্ত ফুটবল বিশ্বে স্পেনের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাটা ছিল মেধাস্থান না পাওয়া এক মেধাবী ছাত্রের মতো! তাদের না ছিল খেলোয়াড়ের অভাব, না ছিল ফুটবলীয় সংস্কৃতির অভাব, কিন্তু কোনো ট্রফি আসছিল না। ২০০৮ ইউরোতে লুইস আরাগোনেসের স্পেন সেই জুজু ভেঙে দীর্ঘখরা ঘুচিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে। এরপর শুরু চার বছরের একাধিপত্যের। প্রত্যাশিত দল হিসেবেই ২০১০ বিশ্বকাপ ও ২০১২ ইউরো জিতে নেয় পরাক্রমের সাথে। এরপর ২০১৩ কনফেডারেশন কাপে ব্রাজিলের কাছে ৩-০ তে হেরে পতনের শুরু, যার পূর্ণতা প্রাপ্তি হয় ২০১৪ বিশ্বকাপে হল্যান্ডের কাছে ৫-১ এ হারের পর। ২০১৬ ইউরোতে আধিপত্যের পূর্ণাবসানের পর এই স্পেন আবার উঠে দাঁড়িয়েছে অন্য আঙ্গিকে। আজ ২০১৮ বিশ্বকাপের জন্য স্পেনের আদ্যোপান্ত দেখে নেয়া যাক।

দর্শনের পরিবর্তন

স্পেনের বিশ্বকাপ জয়ী কোচ দেল বস্ক; Image Source:Goal.com

২০০৮ ইউরো জয়ের পর যখন দায়িত্বে আসেন সর্বজয়ী সাবেক রিয়াল কোচ দেল বস্ক, তখন ইউরোপে পেপ গার্দিওলার বার্সার আধিপত্য, স্পেন জাতীয় দলেও বার্সার খেলোয়াড়ের আধিক্য। দেল বস্ক ঘাড়ত্যাড়ামি করলেন না, উল্টো নিজের কৌশলেই আনলেন পরিবর্তন। বার্সার পাসিং স্টাইলই স্পেনে নিয়ে এলেন এবং পরাক্রমশালী এক দল চেনালেন বিশ্বকে। কিন্তু সব দর্শনেরই পতন থাকে। স্পেনের তথা বার্সার এই পাসিং গেমের প্রতিষেধক অনেক দলই তৈরি করে ফেলে। সমস্যা হলো, দেল বস্ক বদলাননি। মোটামুটি একই খেলোয়াড় ও দর্শন ধরে রাখলেন ২০১৪ বিশ্বকাপ ও ২০১৬ ইউরোতে। ফলাফল শোচনীয় বিদায়। দেল বস্কের তুলনায় মোটামুটি আনকোড়া কোচ লোপেতেগুই নিয়োগ পেয়েই স্পেনের পাইপলাইনে থাকা অনেক তরুণ খেলোয়াড়কে দলে ডাকলেন। এই দলের অধিকাংশ তরুণ খেলোয়াড়ের সাথে তিনি যুব পর্যায়ে কোচিং করিয়েছেন স্পেনের হয়ে। কিন্তু আগের পাসিং গেমকে একদম ঝেটিয়ে বিদায় করেননি। উল্টো গতিশীল পাসিং ও প্রয়োজনে লং পাসে খেলার মানসিকতাও এনে দিলেন এই দলে। ২০১৬ ইউরোতে ধুঁকতে থাকা স্পেন আবারো অগোচরেই হয়ে উঠেছে এই আসরের বড় এক ফেভারিট। একনজরে দেখে নেয়া যাক স্পেন দলের বিভিন্ন অংশের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা।

রক্ষণ

টুইটারের লড়াই ভুলে স্পেনের হয়ে একসাথেই লড়েন পিকে-রামোস; Image Source:Marca

গোলরক্ষককে বলা হয় ‘ফার্স্ট লাইন অব ডিফেন্স’। আর সেই ডিফেন্সে স্পেন নিঃসন্দেহে সেরা দুই দলের একটি। দলের প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়া নিঃসন্দেহে গত কয়েক মৌসুমের সবচেয়ে বেশী ধারাবাহিক ও তর্কযোগ্যভাবে সেরা। ডি গিয়ার কিছু সেভের কোনো বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা হতে পারে না, কেবল ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভাই হতে পারে। ব্যাক আপ হিসেবে থাকছে বিলবাও এর কেপা, যাকে কেনার জন্য রিয়াল মাদ্রিদ ব্যাকুল ছিল। এই পজিশনে স্পেনের শক্তিমত্তা এককথায় অতুলনীয়।

কাগজে কলমে স্পেনের রক্ষণভাগ এবারের বিশ্বকাপের সেরা। রাইটব্যাকে থাকছেন এই মুহুর্তে বিশ্বের সেরা দুই রাইটব্যাকের একজন রিয়ালের কারভাহাল। বয়স ২৬ হলেও অভিজ্ঞতার ভান্ডারে আছে চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। তার ব্যাকআপ হিসেবে আছেন চেলসির আজপিলিকুয়েটা, যাকে নিয়ে মরিনহো বলেছিলেন, “আমার দলের আর দশজন ওর মতো খেললে আমরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততাম!” রাইটব্যাক, সেন্টারব্যাক, লেফটব্যাক সর্বত্রই খেলতে দক্ষ এই চেলসি ডিফেন্ডারের মাঠে উদগ্রতা বিশ্বে যে কাউকে হার মানাবে। রাইটব্যাকে খেলার জন্য আরো আছেন সোসিয়েদাদের উঠতি অড্রিওজোলা, আক্রমণে কারভাহালের দক্ষ এই খেলোয়াড় আগামী মৌসুমে যেতে পারেন রিয়াল মাদ্রিদে, যদিও তার রক্ষণের কাজে রয়েছে বড় দুর্বলতা। লেফটব্যাকে থাকছেন বার্সার জর্দি আলবা। ২০১২ ইউরোর পর থেকে স্পেনে এই জায়গাটি নিজের নামেই করে রেখেছেন। মুহুর্মুহু ওভারল্যাপে উঠে আসা এই বার্সা ডিফেন্ডারের সাথে ক্লাব সতীর্থ ইনিয়েস্তা ও সিলভাদের বোঝাপড়া অন্য পর্যায়ের। অনেক শক্তিশালী দেশই যেখানে উইংব্যাক নিয়ে চিন্তায়, স্পেন সেখানে একদম নিশ্চিন্ত।

লেফট উইং এ ইনিয়েস্তা-আলবা জুটি খুবই গুরুত্ববহ; Image Source:Scoopnest.com

সেন্টারব্যাকে প্রথম পছন্দ পিকে-রামোস। টুইটারের দুই যোদ্ধা স্পেন দলে কিন্তু কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেন! রিয়াল সমর্থকদের চক্ষুশূল পিকে আর বার্সার সমর্থকদের চক্ষুশূল রামোসকে যে যতই ঘৃণা করেন না কেন, এটা অনস্বীকার্য যে দুজনই ‘টাস্কম্যান’। রামোস ও পিকের একটি ব্যাপার ক্লাবে কমন, তারা যদি ইচ্ছে করেন বা টার্গেট করেন একজন ফরোয়ার্ডকে আটকাবেন কোনো ম্যাচে, ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই তারা করে দেখান। একসময় এ দুজনের জুটি নড়বড়ে হলেও, সময়ের সাথে সাথে একে অপরকে কমপ্লিমেন্ট দিতে শিখে গেছেন। ২০১৬ ইউরোর তুলনায় এই জুটি অনেক পরিণত। এই জুটির কাগজে কলমে শক্তির প্রয়োগ মাঠে হলে স্পেনের রক্ষণ বলার মতো এক ইউনিটে পরিণত হবে।  এছাড়াও আছেন রিয়ালের নাচো। নাচোকে নিয়ে রিয়ালে বলা হয় যে, তাকে নাকি দরকারে গ্লাভস পরিয়ে দিলে সেই কাজও সেরে ফেলতে পারবেন! ডিফেন্সের সব পজিশনে খেলে অভ্যস্ত এই নাচো যেকোনো কোচের কাছেই এক রত্ন। কিন্তু সমস্যা হলো পিকে-রামোস বাদে স্পেনের স্পেশালিষ্ট কোনো সেন্টার ব্যাক নেই। নাচো-আজপিলিকুয়েটা তাদের ক্লাবের হয়ে সেন্টার ব্যাক হিসেবে বহু বড় ম্যাচ খেললেও আদতে তারা কেউ জাত সেন্টার ব্যাক না। কখনো পিকে-রামোসের কেউ ছিটকে গেলে স্পেন ভুগতে পারে এই একটি ব্যাপারে।

আক্রমণভাগ ও মাঝমাঠ

স্পেনের মাঝমাঠের মূল কারিগর; Source:Marca

অন্য যেকোনো দলের আলোচনায় দুটো আলাদা অংশ করা হয় আক্রমণ ও মাঝমাঠ নিয়ে, কিন্তু স্পেনের সময় তা করা হলো না কিছু যুক্তিসঙ্গত কারণে। স্পেনের খেলোয়াড়রা এতটাই মৌলিক যে তাদের অধিকাংশই মাঠের উপরের অর্ধের যেকোনো জায়গায় খেলতে পারেন। স্পেনের মৌলিক ফর্মেশন ৪-৩-৩। প্রথম যিনি নিশ্চিতভাবে দলে থাকবেন তিনি বার্সার সার্জিও বুস্কেটস। বার্সার এই স্বল্পনন্দিত কারিগরকে নিয়ে এই লেখায় বার্সা ও স্পেনের অতীত সাফল্যে তার অবদান বলা আছে, কেবল সংক্ষেপে এতটুকু বলা যায়, বুস্কেটস বাজে খেলা মানে স্পেনের জয়ের সম্ভাবনা ৪০ ভাগ কমে যাওয়া, কারণ কোচের মাঝমাঠের মূল খেলোয়াড়টিই এই বুস্কেটস। স্পেনের মাঝমাঠের গভীরতা কতটুকু তা বোঝা যাবে এখনই। স্পেনে বুস্কেটসের ব্যাকআপ হিসেবে থাকবেন বায়ার্নের থিয়াগো আলকান্তারা, যিনি সহজেই বিশ্বকাপে খেলা যেকোনো দলের মূল একাদশে ঢুকে যাবেন। থিয়াগোর মূল একাদশে খেলা এখনো নিশ্চিত নয়, তবে বুস্কেটসের জায়গায় জার্মানি ও আর্জেন্টিনার সাথে দারুণ খেলেছেন এই তারকা, বুঝিয়ে দিয়েছেন বুস্কেটসের বদলি হিসেবে তিনি প্রস্তুত। এরপর মাঝমাঠের বাঁ পাশে খেলবেন ইনিয়েস্তা। ইনিয়েস্তাকে নিয়ে নতুন কিছু বলার আছে কি? বয়সের সাথে সাথে ইনিয়েস্তা নিজেকে বদলেছেন, এখন সেই নজরকাড়া স্কিলের চেয়ে দলের হয়ে খেলা গড়ে দেয়াতেই তার মনোযোগ। যদি কখনো বিশ্বকাপ চলাকালীন ইনিয়েস্তাকে ক্লান্ত মনে হয়, তবে সেই পজিশনে খেলতে নামবেন থিয়াগো বা একটু নিচে নেমে সেই রোলে খেলবেন ইস্কো। মাঝমাঠের ডানপাশে খেলার জন্য কোকে কোচের প্রথম পছন্দ। কোকে এটলেটিকো মাদ্রিদের প্রধান প্লেমেকার। শারীরিকভাবে প্রচন্ড শক্তিশালী এই খেলোয়াড়ের গোল বানিয়ে দেয়ার ক্ষমতা, বল ছাড়া ওয়ার্করেট তাকে দলে খেলানোর নিশ্চয়তা দিতে বাধ্য। রয়েছেন এটলেটিকোর আরেক তারকা সাউল যার মাঝে কোকের প্রায় সব কিছুই বিদ্যমান। সাউল একাধারে কোকে, ইনিয়েস্তার বদলি বা রাইট উইংয়েও খেলতে পারেন স্বচ্ছন্দে। অর্থাৎ স্পেনের মাঝমাঠে কোনো খেলোয়াড়ের চোট বা নিষেধাজ্ঞা কোনো বড় ভূমিকা ফেলবে না, কেননা প্রত্যেক পজিশনে রয়েছে ওয়ার্ল্ডক্লাস সব ট্যালেন্ট, তা-ও ব্যাকআপ হিসেবে!

স্পেনের হয়ে ইস্কো এককথায় দুর্দান্ত; Source:eurosport.fr

আক্রমণের বাম পাশে খেলবেন ইস্কো। আসলে স্পেনের এই দলে ইস্কোর রোলটা ফ্রি-রোল। রিয়ালে ইস্কোর ডানা বাঁধা থাকলেও স্পেন দলে ইস্কো আক্রমণ ও মাঝমাঠের প্রধান যোগসূত্র। কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়েই চলছেন সেই ২০১৬ থেকে। স্পেনের হয়ে ফ্রি-কিক, ক র সব কিছুতেই ইস্কো। যদি ইস্কো তার স্পেনের হয়ে যে ফর্মে খলে থাকেন, সেই ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপে আসতে পারেন তবে নিঃসন্দেহে স্পেনের খেলা হবে ভয়ঙ্কর। ডানপাশে আছেন ম্যানসিটির ডেভিড সিলভা। আদতে মিডফিল্ডার হলেও গোল করা, বানিয়ে দেয়া, বিল্ডআপে অংশ নেয়া সহ সব কিছুতেই সমান দক্ষ। রয়েছেন রিয়ালের আসেনসিও ও লুকাস ভাজকেজ। আসেনসিও সন্দেহ ছাড়াই স্পেনের সেরা উঠতি খেলোয়াড়। ২১ বছর বয়েসেই রিয়ালের হয়ে দু’বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে নিয়েছেন। বার্সা বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বড় বড় ম্যাচে গোল করার রেকর্ড আছে তার। বদলি হিসেবে নেমে তার অধিকাংশ গোলই গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে। ঠিক একই অবস্থা লুকাস ভাজকেজের। আক্রমণ বা রক্ষণ- যখন যা চাওয়া হয় তা-ই করতে রাজি লুকাস ভাজকেজের ওয়ার্করেট যেকোনো কোচের জন্য বহুল আকাঙ্ক্ষিত! ৬০ মিনিটের পর প্রতিপক্ষের ডিফেন্সের ক্লান্ত পায়ের উপর ত্রাস ছড়াতে রিয়াল প্রায় সময়ই এই দুই খেলোয়াড়কে নামায়। স্পেনের তূণে থাকা এই দুই অস্ত্র মোক্ষম সময়ে কাজে লাগানোর মতোই জিনিস।

৪-৩-৩ তে স্পেন মূলত পাঁচজন বল-প্লেয়ার নিয়ে খেলবে যারা একা ২০ মিনিট করে দলকে খেলানোর ক্ষমতা রাখেন। প্রশ্ন হচ্ছে, কে হবেন স্পেনের স্ট্রাইকার? যদি কোচ পুরোদস্তুর একজন নাম্বার নাইন চান তবে ডিয়েগো কস্তা। আপাদমস্তক শারীরিক শক্তিতে খেলা এই ডিয়েগো কস্তা একজন ‘পিওর’ স্ট্রাইকার হিসেবে দারুণ কার্যকরী। লং বল, ক্রস ভিত্তিক খেলায়ও কস্তা দারুণ। আর যদি কোচ ‘ফলস নাইনে’ খেলাতে চান তবে আসপাস বা রদ্রিগোর কাওকে খেলাবেন। ‘ফলস নাইন’ হলো এমন এক খেলার ধরন যেখানে স্ট্রাইকার পজিশনে যিনি থাকবেন, আদতে তিনি স্ট্রাইকার না, উইঙ্গার; তবে গোল করায় দক্ষ। দলের হয়ে খেলা গড়ায় অংশ নেবেন, আবার হঠাৎ ডি বক্সে ঢুকে যাবেন। খুব সম্ভবত স্পেন এই কৌশলই গ্রহণ করবে। স্পেনের মাঝমাঠের খেলোয়াড়রা স্ব-স্ব ক্লাবে বা জাতীয় দলের হয়ে বেশ ভালো সংখ্যায় গোল করেছেন, তাই কোচ এই কৌশলই নেবেন বলে মনে হয়। সে যা-ই হোক, মাঝমাঠ বিবেচনায় স্পেনের মাঝমাঠ এবারের সবচেয়ে ক্লাসিক। 

খেলার ধরন

দলে মোরাতার জায়গা না হলেও আছেন কস্তা; Image Source:AS English – Diario AS

স্পেন কেবল পাসিং ভিত্তিক টিকিটাকা থেকে সরে এসেছে বর্তমান কোচের অধীনে। তাই বলে পুরো ধারণাটা ফেলে দেয়নি। যে দলে ইনিয়েস্তা, বুস্কেটস, ইস্কো, সিলভারা আছেন না চাইলেও সে দল পজিশন-নির্ভর খেলা খেলবে। কিন্তু স্পেনের বর্তমান খেলার স্টাইলে রয়েছে বেশ গতি। দুই উইং ধরে কারভাহাল-আলাবার ওভারল্যাপিং, আসেনসিও ও ইস্কোর রান সব মিলিয়ে বৈচিত্র আছে। স্পেন যদি অবস্থাদৃষ্টে চায় কোনো ম্যাচে পাওয়ার ফুটবল খেলবে, মাঝমাঠে কোকে-ইস্কোর দ্বারা পারবে, সামনে কস্তাকে রেখে লং-বলও খেলাতে পারবে। যদি চায় শেষ ২০ মিনিট বল পায়ে রেখে খেলা শেষ করে দেবে, তবে বুস্কেটস-ইনিয়েস্তা-সিলভাদের দ্বারা তা-ও পারবে। এককথায়, স্পেনের তূণে সব রসদই আছে যা দ্বারা যেকোনো কৌশলে যাওয়া যায়।

দুর্বলতা

কিছু বলার মতো দুর্বলতাও আছে। কোনো কারণে বুস্কেটসকে না পেলে থিয়াগোকে দিয়ে রিপ্লেস করতে পারবে, কিন্তু বুস্কেটসের ডিফেন্সিভ কাজ কি কারো দ্বারা করা যাবে? বুস্কেটসের মতো ডিফেন্সকে রক্ষাকবচ দেয়ার কাজটা কে পারবে এই দলে? আবার পিকে-রামোসের সরাসরি কোনো বদলি নেই, যতই নাচো বা আজপিলিকুয়েটা থাক। কোনো ম্যাচে একই সাথে বুস্কেটস ও পিকে বা রামোসের কেউ না থাকলে স্পেন কি তা একবারে সামাল দিতে পারবে? দুই সেন্টার ব্যাক ও এক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার পজিশনে দলে নেয়া হয়েছে স্পেশালিষ্ট মাত্র তিনজনই। বিশ্বকাপ এমন এক মঞ্চ যে মঞ্চে প্রতিটা ক্ষুদ্র ভুলেরও চরম মাশুল দেয়া লাগে, সারা ম্যাচ নিরেট খেলা জাবালেতার এক মূহূর্তের অমনোযোগিতায় গোল হজম করেছিল আর্জেন্টিনা। আর সেখানে স্পেন পুরো মূল রক্ষণ কাঠামোর জন্য কোনো স্পেশালিষ্ট ব্যাক আপ খেলোয়াড় রাখেনি।

যদিও স্পেনের ট্যাকটিক্সে স্ট্রাইকারের ভূমিকা কম, তবুও মাত্র একজন পিওর স্ট্রাইকার নিয়ে খেলাটাও ঝুঁকিপূর্ণ বিশেষত এই বিবেচনায় যে, ডিয়েগো কস্তা খেলা গঠনে অংশ নেন না। স্পেন কস্তাকে খেলালেও কস্তা প্রায়ই নিষ্প্রভ থাকেন, মাঝমাঠের সাথে তার বোঝাপড়া কম। আবার ফলস নাইনে খেললেও আসপাস-রদ্রিগোর কেউ প্রমাণিত গোলস্কোরার নন! 

স্বল্প সময়ে স্পেনকে বদলে দেয়ার কৃতিত্ব পেতেই পারেন লোপেতেগুই; Image Source:beIN SPORTS

এছাড়াও মোরাতাকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত ভোগাতে পারে স্পেনকে। কস্তা পুরোদস্তুর স্ট্রাইকার, আসপাস ফলস নাইন। কিন্তু মোরাতা ছিলেন সব কিছুর মিশ্রণ। যত বাজে ফর্মেই থাকুন, কিছু খেলোয়াড় জাতীয় দলের জন্য সবসময়ই কার্যকর। মোরাতা ইউরো ও বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার মিলিয়ে স্পেনের সেরা গোলস্কোরার, তাকে বাদ দেয়াটা স্পেনকে ভোগাতে পারে। সুতরাং প্রচন্ড শক্তিশালী এই স্কোয়াডেও কিছু বলার মতো দুর্বলতা রয়েই গেছে।    

সম্ভাব্য একাদশ

ডি গিয়া
কারভাহাল-পিকে-রামোস-আলবা
কোকে-বুস্কেটস-ইনিয়েস্তা
সিলভা-আসপাস/কস্তা-ইস্কো

সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ

(ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম ও উরুগুয়েকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ধরে)

গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে: রাশিয়া (শেষ ১৬), আর্জেন্টিনা (কোয়ার্টার ফাইনাল), জার্মানি (সেমি)

গ্রুপ রানার্স আপ হলে: উরুগুয়ে (শেষ ১৬), ফ্রান্স (কোয়ার্টার), ব্রাজিল (সেমি)

 স্পেনের খেলার সময়সূচী

পর্তুগাল-স্পেন (১৫ই জুন, রাত ১২.০০)

ইরান-স্পেন (২০ জুন, রাত ১২.০০)

স্পেন-মরক্কো (২৫ জুন, রাত ১২.০০)

দুই বছরের কম সময় হলো দায়িত্ব নেয়া কোচ লোপেতেগুই বিষণ্নতা কাটিয়ে যেভাবে স্পেনকে জাগিয়ে তুলেছেন তা দারুণ। বাছাইপর্বে ৯ জয় ও ১ ড্র-তে অপরাজিত স্পেন করেছে ৩০ এর বেশী গোল। উড়িয়ে দিয়েছে ইতালি, আর্জেন্টিনার মতো দলকে। সম্ভাবনার স্বাক্ষর রেখেছে জার্মানির সাথেও। ২০১৬ সালে কাউকে জিজ্ঞাসা করলে স্পেনকে ২০১৮ বিশ্বকাপের জন্য একশব্দে বাদ দিয়ে দিতো। আজ এই অবস্থায় নেই। স্পেনকে হিসেবের বাইরে রাখা যাবে না। ভুলে গেলে চলবে না, এই দলে এখনো চারজন এমন খেলোয়াড় আছেন যারা ২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালে পুরোটাই খেলেছেন। অভিজ্ঞ-নবীণ, নতুন ধাঁচ-পুরাতন দর্শনের মিশেলে স্পেন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। স্পেনকে তাই হিসেবে রাখতেই হবে ফেভারিট হিসেবে।

ফিচার ছবিসত্ত্ব: Daily Vedas  

Related Articles