Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

উইনচেস্টার মিস্ট্রি হাউজ: অতিপ্রাকৃতিক রহস্যে ঘেরা যে বাড়ির নির্মাণকাজ কখনো শেষ হয়নি

ভিক্টোরিয়ান মডেলের একটি প্রাসাদোপম বাড়ি বানাতে কতদিন সময় লাগতে পারে? ৩ বছর? ৫ বছর? ১০ বছর? শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও সত্য, ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোসেতে অবস্থিত উইনচেস্টার হাউজের (যা এখন উইনচেস্টার মিস্ট্রি হাউজ নামেই পরিচিত) নির্মাণকাজ চলেছিল টানা ৩৮ বছর ধরে! ১৯০৬ সালে লস অ্যাঞ্জেলসের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বন্ধ থাকা ছাড়া পুরো সময়ই এর কাজ চলেছিলো একনাগাড়ে, কোনো যুদ্ধ-বিগ্রহ কিংবা শ্রমিক বিক্ষোভের কবলেও পড়েনি। কীভাবে নির্মিত হলো (কিংবা হলো না) প্যারানরমালিস্টদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় এই বাড়িটি, সে বিষয়ে জানতে গেলে যেতে হবে একটু পেছনে।

১৮৯৮ সালের উইনচেস্টার রাইফেলের বিজ্ঞাপন; © Winchester Mystery House

ওয়েস্টার্ন উপন্যাস কিংবা চলচ্চিত্রে প্রায়ই উইনচেস্টার রাইফেলের নাম পাওয়া যায়। তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে অষ্টাদশ দশকের শেষের দিকে এর ডাকনাম দেয়া হয় ‘The gun that won the west’। আমেরিকান গৃহযুদ্ধ সহ আরো বিভিন্ন যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা রাখা এই রাইফেল এখনো পর্যন্ত ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর মধ্যে একটা বলে ধরা হয়। উইনচেস্টার রিপিটিং আর্মসের জনক অলিভার উইনচেস্টারের ছেলে ছিলেন উইলিয়াম ওয়ার্ট উইনচেস্টার, যিনি পারিবারিকভাবেই পরিণত হয়েছিলেন আরেক বিশাল ধনী অস্ত্র ব্যবসায়ীতে। উইলিয়াম এবং তার স্ত্রী সারাহ লকউড উইনচেস্টারের মাত্র ৬ সপ্তাহ বয়সী শিশুকন্যা অ্যানি মারাসমোস নামক এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ১৮৬৬ সালে মৃত্যুবরণ করে। তার ১৫ বছর পরে উইলিয়াম নিজেই যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে তার কানেক্টিকাটের বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।

উইনচেস্টারদের পারিবারিক গোরস্থান © Winchester Mystery House

উইলিয়াম ওয়ার্ট উইনচেস্টার মারা যাবার পরে, সারাহ উইনচেস্টার উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক হন ২০.৫ মিলিয়ন ডলারের (যা কিনা বর্তমান ৫২০ মিলিয়ন ডলারের সমকক্ষ)। উইনচেস্টার কোম্পানির মালিকানার জন্য তিনি দিনে পেতেন ১,০০০ ডলার (বর্তমান সময়ে ২৫,০০০ ডলার)। এত প্রাচুর্য সারাহকে স্পর্শ করেনি, তিনি সারা জীবনই স্বামী-সন্তানের জন্য শোক পালন করে গেছেন। ইউরোপ থেকে স্পিরিচুয়ালিজমের প্রচলন ভালোভাবেই ছড়িয়েছিল গৃহযুদ্ধ পরবর্তী আমেরিকায়। লোকমুখে শোনা যায়, বোস্টন থেকে আসা এক মিডিয়ামের মাধ্যমে সারাহ তার মৃত স্বামীর আত্মার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। তারপরে থেকেই তার মনে বদ্ধমূল ধারণা হয় যে, উইনচেস্টার রাইফেলের গুলিতে নিহত মানুষের অতৃপ্ত আত্মারা তাদের সকল বৈষয়িক সম্পত্তিকে অভিশপ্ত করে রেখেছে। সেই মিডিয়াম নাকি তাকে পরামর্শ দিয়েছিলো পশ্চিম থেকে দূরে কোথাও গিয়ে ক্রমাগত বাড়ি নির্মাণ করতে থাকলেই কেবল এই অভিশাপ থেকে বাঁচা যাবে।

২০১৮ এর মার্চে প্রকাশিত উইনচেস্টার হাউজের একটি অপ্রকাশিত ছবি © History of San Jose

১৮৮৪/৮৫ সালের দিকে কানেক্টিকাট থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে সান্তা ক্লারা ভ্যালির মাত্র আট কক্ষবিশিষ্ট একটি অসমাপ্ত ফার্মহাউজ কিনে সারাহ উইনচেস্টার তার প্রাসাদ বানানো শুরু করেন। তখন এই বাড়িটির নাম ছিল লানাডা ভিলা। সব মিলিয়ে এই বাড়ির পেছনে তিনি খরচ করেন প্রায় ৫.৫ মিলিয়ন ডলার (বর্তমানে ৭০ মিলিয়ন ডলার), যদিও তার মৃত্যুর পরে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িটির বাজারদর ছিল মাত্র ৫,০০০ ডলার। পরে থমাস বারনেট নিলামে বাড়িটিকে ১৩৫,৫৩১ ডলার দামে কিনে নেন, যা কিনা বাড়িটির জমির মূল্যের থেকেও কম।

ভিক্টোরিয়ান স্টাইলে বানানো এই প্রাসাদোপম বাড়ির পেছনে ২০,০০০ গ্যালনেরও বেশি রঙ ব্যবহৃত হয়েছিলো। ১৯০৬ সালে ভূমিকম্পের আগ পর্যন্ত বাড়িটি ছিল ৭ তলা থাকলেও এখন বাড়িটি ৪ তলা। কারণ ভূমিকম্পে বাড়িটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উপরের ৩ তলা ভেঙে ফেলা হয়। সারাহ নিজেও ভূমিকম্পের সময় তার ডেইজি বেডরুমে (ফুলেল নকশার কারণে এমন নামকরণ) আটকা পড়েছিলেন, পরে তাকে দেয়াল ভেঙে উদ্ধার করা হয়। ফ্লোটিং ফাউন্ডেশনের কারণে বাড়িটি কোনোমতে টিকে যায়। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালের ভূমিকম্পেও বাড়িটির তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।

কুইন অ্যান ধাঁচে নির্মিত বাড়িটির এক্সটেরিয়র © Winchester Mystery House

২৪,০০০ বর্গ ফুটের বাড়িটিতে আছে সর্বমোট ১৬০টি (মতান্তরে ১৬১টি) রুম, যার মধ্যে বেডরুম ৪০টি। সারাহ প্রতি রাতেই ভিন্ন ভিন্ন বেডরুমে ঘুমাতেন, কখনো পরপর দু’রাতে একই বেডরুমে ঘুমাতেন না। বাড়িটিতে আরো ছিল ৪৭টি সিঁড়ি, ৪৭টি ফায়ারপ্লেস (কিন্তু তার সাথে তাল রেখে ৪৭টি চিমনি থাকার কথা থাকলেও ছিল মাত্র ১৭টি), ৬টি রান্নাঘর, ২টি বেসমেন্ট, ৩টি এলিভেটর, ৯৫০টি দরজা এবং ১০,০০০টি জানালা (যা এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং এর চেয়েও বেশি)। সিঁড়িগুলো আবার বানানো হয়েছিলো Y অক্ষরের আদলে বানানো, যাতে তিনতলা পর্যন্ত সবাই সহজেই যাতায়াত করতে পারতো। সারাহ ছিলেন দারুণ শৌখিন, তার ছিল বিশাল গ্লাস কালেকশন। ঘরের ডেকোরেশনের কাজে জাপানীদের দ্বারা কিছুটা অনুপ্রাণিত ফায়ারপ্লেসে ব্যবহার করেছিলেন বাঁশ, ছিলো সিরামিকের কারুকাজ। বলরুমের দুটোর জানালায় ছিল শেক্সপিয়রের নাটকের উক্তি।

সারাহর শৈল্পিক গ্লাস কালেকশন ©Winchester Mystery House

সারাহ “১৩” সংখ্যাটিকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতেন। তার দলিল ছিল ১৩ খণ্ড, তাতে তিনি সই করেছিলেন ১৩ বার। বাড়িটির প্রবেশমুখের হলওয়েতে ছিল ১৩টি সিলিং প্যানেল, সারাহর পছন্দের বিশেষ একটি জানালায় ছিল ১৩টি নীল এবং অ্যাম্বার পাথরের কারুকাজ, বিভিন্ন ক্লজেটে ছিল ১৩টি হুক, সিংকে ছিল ১৩টি করে ফুটো। ১৩ নম্বর বেডরুমে ছিল মাকড়সার জালের মোটিফ, যা বাড়ির অন্য কিছু জায়গাতেও পাওয়া যায়। এমনকি পুরো বাড়িতে বাথরুমও ছিল ১৩টি, যদিও শাওয়ার ছিল কেবলমাত্র ১টি! তৎকালীন অন্যান্য নারীদের মতোই সারাহর উচ্চতা ছিল মাত্র ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি। এদিকে আর্থ্রাইটিসের কারণে বাথটাব ব্যবহার করাও সম্ভব ছিল না। তাই শাওয়ারটিকে সারাহর উচ্চতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিশেষভাবে বানানো হয়েছিলো।

১৮৬৫ সালে তোলা সারাহ উইনচেস্টারের ছবি ©History San Jose Research Library

এতক্ষণেও নিশ্চয়ই সবাই বুঝে গেছেন যে, সারাহ উইনচেস্টার চরম কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিলেন। বাড়িতে তার একটি ব্যক্তিগত প্রেতসভার কক্ষও ছিল। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা না থাকা সত্ত্বেও বাড়ির আর্কিটেকচার ডিজাইনটিও সারাহর নিজেরই করা। শোনা যায়, তিনি প্রতিরাতে বাড়ির নীলনকশা নিয়ে ঐ কক্ষে ঢুকে আত্মাদের সাথে আলাপ করতেন পরেরদিনের কনস্ট্রাকশনের ব্যাপারে। পরেরদিনে সেই নকশা ফোরম্যানের হাতে তুলে দিয়ে সেই ঘরটি বানানোর পরে নকশাটি ছিঁড়ে ফেলা হতো। আপাতদৃষ্টিতে খাপছাড়া বলে মনে হলেও বর্তমান যুগের অনেকে বলে থাকেন, সারাহ তার সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা একজন সুচিন্তিত আর্কিটেক্ট ছিলেন। এমনকি ওয়াল্ট ডিজনি নাকি ডিজনিল্যান্ডের ভুতুড়ে বলরুম বানানোর জন্য সারাহর বলরুমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। বাড়ির কিছু দরজা দিয়ে কোনো কক্ষে ঢোকা যেতো না, আবার কিছু সিঁড়ি সরাসরি ছাতে গিয়ে ঠেকতো। প্রেতসভা কক্ষের পাশে একটি ঘরের কোনো ছাত কিংবা মেঝে ছিলো না। অতৃপ্ত আত্মাদেরকে বিভ্রান্ত করে দেবার জন্যই হয়তো সারাহ এই বিশাল এক গোলকধাঁধাটি বানিয়ে যাচ্ছিলেন। বাড়ির আসল নীলনকশাটি অবশ্য কখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

রিসিপশন হল ©Winchester Mystery House

 

খাপছাড়াভাবে বানানো সিঁড়ি আর রেলিং ©Winchester Mystery House

অনেকে অবশ্য এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেন। তাদের মতে, ব্রিটিশ দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকনের কাজে অনুপ্রাণিত হয়েই সারাহ জটিল ধাঁধার মতো ইন্টেরিয়র ডিজাইন করেছিলেন। তাই বাড়িটির হলরুম, শেক্সপিয়র ধাঁচের জানালা আর লোহার দরজার অন্য কোনো রহস্যময় অর্থ থাকতে পারে। তার সাথে আরো ধারণা করা হয় যে, সারাহ রসিক্রুসিয়ান কিংবা ফ্রিমেসন এরকম কোনো গুপ্ত সংঘের সদস্যও হয়ে থাকতে পারেন। কুইন অ্যান ধাঁচের অন্য আর দশটা প্রাসাদের দিকে না তাকিয়ে সারাহ প্রতিদিনই ভিন্ন ভিন্ন কোনোকিছু করার চেষ্টা করতেন, তার উদ্ভাবনী ক্ষমতাও ছিল প্রচুর।

বাড়ির চিলেকোঠার যে প্রেতসভাকক্ষটি হ্যারি হুডিনি ব্যবহার করেছিলেন ©WINCHESTER MYSTERY HOUSE

অনেকে অবশ্য মনে করেন, সারাহ আসলে প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যই এই কাজটি করেছিলেন। কেননা এই নির্মাণকাজের ফলে সান জোসের অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছিলো, আবার তাদের বেতনও নাকি ছিল প্রচলিত বেতনের প্রায় তিনগুণ। এমনকি সারাহ তার স্বামীর নামে একটি হাসপাতালও বানিয়েছিলেন। তবে এই বাড়িটিই তার সবচেয়ে বড় সমাজসেবামূলক কাজ। খামখেয়ালী সারাহ সবার থেকে কিছুটা আলাদা থাকলেও নিঃসঙ্গ ছিলেন না। তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক ১৮ জন ভৃত্য এবং ১৮ জন মালী থাকতেন। সেইসাথে রাজমিস্ত্রিরা তো ছিলই। তিনি বাগান করাও খুব পছন্দ করতেন। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাবার পরে তার প্রবল সুরক্ষিত ভল্টটি খোলা হয়। অনেকেই ভেবেছিলো ভেতরে রাশি রাশি ডলার পাওয়া যাবে। কিন্তু ভেতরে কেবল তার মেয়ের এক গাছা চুল আর স্বামীর ব্যবহার্য কিছু জিনিস বাদে আর কিছু পাওয়া যায়নি।

উইনচেস্টার হাউজের নির্মাণশ্রমিকেরা ©WINCHESTER MYSTERY HOUSE

বিভিন্ন সময়ে দর্শনার্থী এবং কর্মীরা এই বাড়িতে পায়ের আওয়াজ শোনা, নিজের নাম ধরে ডাকা, ঘরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া, গায়ে অদৃশ্য কারো ছোঁয়া লাগার মতো ভুতুড়ে ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন। মিস্ট্রি হাউজের মার্কেটিং চালানো জ্যাকব উইলিয়ামস বলেছেন, বাড়ির সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকার সময় মনে হয়েছে যেন তার ঘাড়ে কেউ হাত রেখেছে। বাড়িটির চতুর্থ তলার করিডরে আবার বসবাস করে “ক্লাইড দ্য হুইলব্যারো ঘোস্ট”। এই ভূত নাকি কারো সাথে দেখা হলে মাথা নেড়ে আবার হুইলব্যারো করে কয়লা টানাটানির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেকে বলে থাকেন, এখানে স্বয়ং সারাহ উইনচেস্টার আর তার ভৃত্যদের আত্মাও বসবাস করে। এক ট্যুর গাইড একবার পা পিছলে পড়ে যাবার পরে কানে কাছে “তুমি কি ঠিক আছো?” এই প্রশ্নটি শুনতে পান। “ঘোস্ট অ্যাডভেঞ্চারস” এবং “মিথবাস্টারস” নামক রিয়েলিটি শো এর টিমও এখানে অলৌকিক কিছু থাকার পক্ষে সায় দিয়েছে। ঘুরে বেড়ানোর সময় দ্বিতীয় কোনো সত্ত্বার উপস্থিতি টের পেলেও আশার কথা হলো সেটাকে বন্ধুত্বপূর্ণ বলেই মনে হয়। অস্বস্তি বোধ করে অনেকেই, কিন্তু কেউই কখনো কোনো প্রকার দুর্ঘটনা কিংবা অসুস্থতার স্বীকার হননি।

ছবিতে সর্বডানের লোকটির আত্মাকে মাঝে মাঝে বেসমেন্টে দেখা যায় বলে জনশ্রুতি আছে, যার নাম ‘ক্লাইড দ্য হুইলব্যারো ঘোস্ট’ ©Gwendolyn Purdom

উইনচেস্টার রাইফেলের ভক্ত আমেরিকান প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্ট একবার বাড়িটি পরিদর্শনে আসলেও তাকে পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকতে বলা হয়। তাই তিনি অপমানিত হয়ে বাড়িটিতে ঢুকেনি। মতান্তরে, রুজভেল্টকে এখানে আসতে বলার পরেও তিনি আসেননি। বিখ্যাত জাদুকর হ্যারি হুডিনি বাড়িটিকে ঘিরে থাকা সকল কুসংস্কারকে ভেঙে দেবার জন্য এখানে এক রাত থাকতে রাজি হন। এটা তার ১৯২৪ সালে দেশব্যাপী স্পিরিচুয়ালিজম বিষয়ক ট্যুরের অংশ ছিল।

হুডিনি মনে করতেন সকল মিডিয়াম বা সাইকিকই এক প্রকারের ঠগ। প্রেতসভাকক্ষে বসে তিনি প্ল্যানচেটের আয়োজনও করেছিলেন। কিন্তু চলে যাবার সময় হুডিনি জোর দিয়ে বলতে পারেননি যে বাড়িটিতে কোনো আত্মার অস্তিত্ব নেই। এমনকি “উইনচেস্টার মিস্ট্রি হাউজ” নামটিও দিয়েছিলেন তিনিই। এই নামেই পরবর্তীতে বাড়িটির ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়তে থাকে। অদ্ভুত বাড়িটির ততধিক অদ্ভুত মালেকীন ১৯২২ সালে মারা যাবার পরে এ পর্যন্ত প্রায় ১.২ কোটি দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে বাড়িটিতে। ১৯৭৪ সালে একে ল্যান্ডমার্ক স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। হ্যালোউইনের দিনে বাড়িটির ভেতরে মোমবাতির আলোয় বিশেষ ট্যুরের ব্যবস্থা করা হয়। টাইম ম্যাগাজিনের “Top 10 most haunted places”এর তালিকায় উঠে এসেছে উইনচেস্টার মিস্ট্রি হাউজের নাম। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একে ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যজনক কনস্ট্রাকশন প্রজেক্টগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

অরিগন ডেইলি পত্রিকায় হুডিনির উইনচেস্টার হাউজ পরিদর্শনের খবর Source: www.historychannel.com

আধুনিক প্রযুক্তির স্বর্গ সিলিকন ভ্যালির মধ্যে অবস্থিত হলেও গথিক এই বাড়িটি সবসময় যুক্তির বাইরেই থেকে গেছে। রহস্য এবং অনন্য ইন্টেরিয়র দুই মিলিয়েই এটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে বহুদিন ধরে। এমনকি এর সামনে বিয়ের অনুষ্ঠানও করা হয়। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই বাড়ির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে হরর সিনেমা “উইনচেস্টার”। সারাহ উইনচেস্টারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী হেলেন মিরেন। মুভির ট্রেলারে পৈশাচিক ব্যাপারগুলো যথেষ্ট চটকদার করে উপস্থাপন করা হলেও আসলে এর কতখানি প্রকৃত সত্য, তা নিয়ে রহস্য হয়তো সবসময়ই থেকে যাবে।

মিস্ট্রি হাউজের সামনে বিয়ের অনুষ্ঠান ©Winchester Mystery House

 

Thia article is in Bengali Language. It is about Winchester Mystery House, one of the most infamous haunted places of the worldFor references please check the hyperlinked texts in the article.

Featured Image: DirectExpose

Related Articles